ঋতুস্রাবের মতো অসহ্য যন্ত্রনা আর মনের ক্ষত নিয়ে দ্বিতীয়বারের মতো নিজের বেস্ট ফ্রেন্ডের প্রেমিকের বউ সেজে বাসর ঘরে বসে আছে রোদেলা। সে বেশ বুঝতে পারছে তার আগামী দিন গুলো খুব একটা সুখকর হবে না। যদিও বা অতীতে শেষ কবে হেসেছিল সেটা রোদেলার মনে নেই বললেই চলে।
রোদেলার পাশেই নিশ্চিন্তে ঘুমিয়ে আছে তার এক মাসের নবজাতক ছেলে। কবুল বলার আগ মূহুর্তে সে আর ছেলেকে ফিড করাচ্ছিল। রোদেলাই বুঝি প্রথম কোন মেয়ে যে বউ সেজে নিজের হবু বরের সামনে বাচ্চাকে বুকের দুধ খাওয়াচ্ছিল। অবাকজনক হলেও এটাই সত্য! এমনটাই ঘটেছে তার সাথে৷
পরনে তার লাল শাড়ি আর ঘোমটা। গলায় আর হাতে খুবই চিকন সোনার একটা চেইন আর চিকন চুরি। বাসর ঘরের ছিটেফোঁটা ও নেই। কেউ বলবেই না এটা বাসর ঘর।আজকে রোদেলার বিয়ে সম্পন্ন হলো তারই মামাত ভাইয়ের সাথে। যে কিনা এতো দিন তার বান্ধবির প্রেমিক ছিল। ভাইয়া যদিও তার চেয়ে সাত বছরের বড়। তবুই ভাইয়া ছিল আনম্যারিড। কিন্তু রোদেলা? সে তো বিবাহিত ছিল! তারপরও ভাগ্যের পরিহাসে দ্বিতীয়বারের মতো বউ সেজে আবারো একবার বিয়ের পীড়িতে বসতে হলো তাকে।
রোদেলা তার ছেলেকে কোলে দিয়ে বুকের সাথে মিশিয়ে নিল। কেন যেন তার ভাগ্যে এতো যন্ত্রনা লেখা আছে। কে জানে কবে এই কষ্ট থেকে পরিত্রান পাবে সে?
রোদেলা কাদছে। থেকে থেকে কেদে উঠছে সে। সে তো এমন কিছু কোন দিন ই চায়নি। তবুও কেন সৃষ্টিকর্তা তার ভাগ্যেই এতো যন্ত্রণা লিখে রেখেছে?
সে ডুকরে ডুকরে কেদে বলে, কেন আমার সাথেই এমন হলো? ভাইয়াকে তো আমি বিয়ে করতে চাই নি! আর রিশাদ! ছিঃ! একটা মানুষ কতোটা জঘন্য কিভাবে হতে পারে! যে কিনা নিজের সন্তানের দায়িত্ব নিতে চায়না। সন্তান আর মৃত প্রায় বউকে রেখে অন্য কারো কাছে চলে গেল।
রোদেলা হুহু করে কেদেই চলেছে। তার চোখের পানি যেন কোন বাধই মানছে না।প্রতিটা চোখের জল অশ্রমালা হয়ে টপটপ করে গাল বেয়ে পড়ছে।
এখন রাত দেড়টা বাজছে।কিন্তু রোদেলার বর্তমান স্বামীর আসার কোন নাম নেই।রোদেলা তার ছেলে বাবুকে বুকের সাথে শক্ত করে জড়িয়ে আছে। রোদেলার ছেলে মায়ের বুকে পরম শান্তিতে ঘুমিয়ে আছে। সে তো আর জানে না তার মায়ের উপর দিয়ে কি ঝড় বয়ে যাচ্ছে!
এরইমধ্যে রোদেলা রুমের গেট খোলার আওয়াজ পেল। সে নড়েচড়ে বসে নিজের ছেলেকে শক্ত করে বুকের মধ্যে জড়িয়ে রাখে।
★★★
এদিকে আবেগ তার বাসর ঘরে ঢুকল। ঢোকার কোন ইচ্ছা ছিল না। তাকে জোড় করে ঢোকানো হয়েছে। হাতে জলন্ত সিগারেট!
আবেগ ধীর পায়ে রুমে ঢুকল। ঢুকতেই রোদেলার মুখটা দেখতে পেল। তাতেই রেগে উঠে আবেগ। কিন্তু রাগ করেই না কি লাভ? আবেগ সিগারেট টানতে লাগে।
আবেগ দেখল, রোদেলা তার ছেলেকে কোলে নিয়ে বসে আছে।
আবেগ রেগে থাকলেও নিজেকে সামলে নিয়ে, ভেতরে ঢুকে।
রোদেলা তাকে দেখে বাবুকে বিছানায় শুইয়ে ছেলের কপালে চুমু দিয়ে উঠে দাড়ালো এবং ঘোমটা ঠিক করে আবেগের সামনে গেল৷
রোদেলা গুটিগুটি পায়ে আবেগের সামনে গিয়ে দাড়ালো। আবেগ তখনো ভাবলেশহীন ভাবে সিগারেট ফুকছে৷
যেই না রোদেলা ঝুকে আবেগের পা ছুইয়ে সালাম করবে, ওমনি আবেগ সরে এসে কর্কশ কন্ঠে বলে,
আমার পায়ের নখের সমান যোগ্যতাও তোমার নেই। বুঝছো? আর এইসব নাটক বাদ দাও।আমি জাস্ট এসব নিতে পারছিনা।
রোদেলা ছলছল চোখে আবেগের দিকে তাকালো।
রোদেলাকে কাদতে দেখে আবেগ তাচ্ছিল্যের হেসে বলে, যা চেয়েছো তা তো হাসিল করেই ফেললে তো এখন কান্না করার কি আছে? তোমার তো হাসা উচিত। হাসো না! (রাগী গলায়)
রোদেলা চোখ তুলে তাকালো। তারপর শান্ত স্বরে বলল,
“আবেগ,আমি মোটেও তোমাকে বিয়ে করতেই চাই নি৷ সেটা তুমিও ভালো করে জানো আর আমিও জানি।”
আবেগ যেন একথা শুনে রেগে ফেটে পড়ল।সে রোদেলার দুই কাধ ধরে খানিকটা জোড়ে ঝাকুনি দিয়ে হুংকার দিয়ে বলে, তুমি আমাকে ভালোবাসতা না? আমার জন্য পাগল ছিলা তাই না? আমাকে ছাড়া নাকি বাঁচবা না এমন কথাও তো বেশরমের মতো সবার সামনে মুখ ফুটে বলেছিলে এক সময়। সো হু নোস? তুমিই বাবাকে বাধ্য করিয়েছো আমাকে বিয়ে করার জন্য!
রোদেলা আবেগের গা থেকে মদের বুদবুদ গন্ধ পেতে লাগে৷ তার নাকে এই ব্রিশি গন্ধ যেতেই গা গুলিয়ে এলো। মনে হচ্ছে মুখভর্তি বমি করে দিবে৷ এমনি রোদেলার শরীর খুব দুর্বল। এমনি উটকো গন্ধ সে আগে থেকেই নিতে পারেনা। কিন্তু কথা হচ্ছে আবেগ মদ কেন খেয়েছে? রোদেলা যতোদূর জানে আবেগ নামাজ পড়ে। যে ছেলে নামাজ পড়ে সে কিভাবে এসব খায়?
আবেগ রোদেলার গাল চেপে ধরে বলে, এই বিয়ে আমি মানি না। অসম্ভব! তোমার আর তোমার বাচ্চার দায়িত্ব নেয়া আমার পক্ষে সম্ভব না। আমি নেহাকে ভালোবাসি! তোমাকে বউ হিসেবে মানা পসিবল না। সর্যি আমি পারব না।
রোদেলা আবারো ছলছল চোখ আবেগের দিকে তাকালো।
আবেগ আবার একটা জোড়ে ঝাকুনি দিল রোদেলাকে।
এতে রোদেলা আহ করে চেচিয়ে উঠে।
আবেগ রোদেলার দিকে তাকিয়ে দেখে রোদেলা পেটে হাত দিয়ে দাড়িয়ে আছে৷
সে তো বেমালুম ভুলে গিয়েছিল রোদেলার মাত্র একমাস আগে অপারেশন হয়েছে। সিজারের কাচা সেলাই বোধহয় শুকায় নি এখনো।
রোদেলা মাটিতে বসে পড়ে। আর গোঙাতে লাগে। মনে হয় খুব ব্যথা পাচ্ছে৷
আবেগ রাগী চোখে তাকিয়ে থেকে কিছু বলবে,,,,,,,, তার আগেই তার কানে রোদেলার গোঙানোর আওয়াজ ভেসে উঠে। মেয়েটার কিছু হয়ে গেল নাতো আবার!
চলবে৷
#অশ্রুমালা
Part–1
#Arishan_Nur
[ আসসালামু আলাইকুম। সবাই কেমন আছেন? আশা করি সকলেই ভালো আছেন। পাঠকপ্রিয়তার উপর ভিত্তি করে আগামী পর্ব পাবলিশ করা হবে। ধন্যবাদ সকলকে আর প্রথম পর্ব কেমন লাগলো সবাই জানাবেন দয়া করে। ]