“ইশারায়_ভালোবাসার_প্রকাশ 🌸❤ পর্ব_২

0
504

#ইশারায়_ভালোবাসার_প্রকাশ 🌸❤
#লেখিকা_আয়েশা (কোয়েল)
#পর্ব_২
.
🌸
.

[ গল্পের শুরুতে কিছু কথা বলে রাখছি কারণ গল্পের শেষের অংশ আপনারা পড়েন না,,,আপনারা অনেকেই বলেছেন যে ২০ বছর বয়সে ইশারা কি করে অনার্স শেষ বর্ষে পরে তাদের কে মনে করিয়ে দি আমি ইন্ডিয়ান,,,আমাদের ইন্ডিয়া তে ১৭ বছর বয়সে ছেলে-মেয়েরা ক্লাস ১২ এ পরে আশা করি বাকি টা হিসেব করে নেবেন এমনকি আমি ও ১৭ বছর বয়সে ক্লাস ১২ এ পড়ছি আর ২০ বছর বয়সে অনার্স থার্ড ইয়ারে পরব,,,কিন্তু এর ব্যতিক্রম ও আছে অনেকে ২১/২২ বছর বয়সে থার্ড ইয়ার দেয় কিন্তু ২০ বছর পারফেক্ট বয়স,,,আমি প্রথম যে পর্ব টা দিয়েছি সেটা সূচনা পর্ব (trailer part) ছিলো,,,আস্তে আস্তে জানতে পারবেন প্রেম কি করে হলো ]
.
🌸
.
প্রকাশ: ইশারা!!!! (চিৎকার করে) পস্তাতে হবে তোমাকে এর জন্য!! তুমি কি ভাবছো এভাবে পালিয়ে বাঁচতে পারবে তুমি আমর থেকে?? নাহহহহ!! কক্ষনো নাআআ!! তুমি শুধু আমার,,,তোমাকে নিজের তো আমি করেই ছাড়ব!!!

এই বলেই প্রকাশ দ্রুত পায়ে নীচে নেমে গেলো আর ড্রয়িং রুমে গিয়ে দেখলো কেউ নেই,,,প্রকাশের চোখ গেলো সদর দরজায় সেদিকে তাকিয়ে প্রকাশ অবাক হয়ে যায় কারণ সদর দরজা যেমন ভাবে ভিতর দিয়ে বন্ধ করে রেখেছিল ঠিক তেমনই আছে তাহলে ইশারা কোথায় গেলো??

প্রকাশ: ইশারা যদি বাইরে না যায় তাহলে কোথায় গেলো?? ঘরে লুকিয়ে আছে নাকি?? ইশ…

প্রকাশ যেই ডাকতে যাবে কোথা থেকে ইশারা এসে ওকে পিছন থেকে ডাকলো,,,

ইশারা: আঁ আঁ (প্রকাশের পিঠে হাত দিয়ে ডেকে)

প্রকাশ পিছন ফিরে ইশারা কে দেখেই ইশারা কে জড়িয়ে ধরলো আর বলতে লাগলো,,

প্রকাশ: ইশারা কোথায় গেছিলে তুমি এভাবে? তোমার কিছু দরকার হলে আমায় বলতে এভাবে কেনো এলে তুমি? জানো আমি কতটা ভয় পেয়ে গেছিলাম??

ইশারা: আঁ আঁ (প্রকাশ কে নিজের থেকে ছাড়িয়ে ওর হাতে একটা কাগজ দিয়ে পরতে বললো)

প্রকাশ: এটা কি ইশারা??(কাগজ টা হাতে নিয়ে)

ইশারা: উম উম (আঙুল দিয়ে ইশারা করে পরতে বললো)

প্রকাশ লেখাটা পরে ইশারার দিকে তাকাতেই দেখলো ইশারা হাত জোর করে ওর দিকে তাকিয়ে রয়েছে আর কাঁদছে,,,সেটা দেখেই প্রকাশ জোরে চিৎকার করে একটা গার্ড কে ডাকলো,,,

প্রকাশ: গার্ড!!!

প্রকাশের চিৎকারে ইশারা কেঁপে উঠলো আর কানে হাত দিলো যা দেখে প্রকাশ শান্ত হয়ে ইশারার হাত ধরলো আর গার্ড কে আসতেই তাকে আস্তে করে বললো,,

প্রকাশ: গাড়ি বার করো এক্ষুনি আমি আর তোমার ম্যাডাম বেড়াবো

গার্ড: ওকে স্যার

ইশারা প্রকাশের দিকে অবাক চোখে তাকিয়ে রয়েছে সেই দেখে প্রকাশ ইশারার কাছে এসে ইশারার চোখের জল মুছিয়ে ইশারা কে কোলে তুলে নিলো আর বাইরের দিকে হাঁটা ধরলো,,

ইশারা কে গাড়িতে বসিয়ে প্রকাশ নিজে ড্রাইভিং সিটে বসে গাড়ি স্টার্ট করে বেরিয়ে গেলো,,,উদ্দেশ্য হলো নার্সিংহোম,,,

🌸 🌸 নার্সিংহোম ❤ ❤

নার্সিংহোমের সামনে প্রকাশ গাড়ি থামাতেই ইশারা বেরিয়ে গেলো আর ছুটে নার্সিংহোমের ভিতরে ঢুকে গেলো আর প্রকাশ গাড়ি টা পার্ক করতে গেলো,,,ইশারা একবারে ও.টির সামনে চলে গেলো গিয়ে দেখলো ওর মামা মামি মুখ কালো করে দাঁড়িয়ে রয়েছে,,,এবার ইশারার ভয় লাগছে কি ভাবে যাবে ও ওর মামা মামির সামনে?

ইশারা: গতকাল যা হলো তারপর আমি কি মুখ নিয়ে যাবো মামা-মামির কাছে? এখন যদি না যাই তাহলেও তো হবে না,,,কি করবো আমি?? আচ্ছা টাকা টা নিশ্চয় জোগার হয়নি?? এবার কি করে আমার ভাইয়ের অপারেশন হবে?? নাহ ভাই কে নিশ্চই ডাক্তার বাবু কেবিনে রেখেছে অন্তত ভাইয়ের সাথে দেখা করতে আমায় যেতে হবে,,,[ মনে মনে ]

ইশারা মামা-মামির দিকে আসতেই ওর মামা মামি তেড়ে এলো ওর দিকে,,,

মামি: কি রে মুখপুড়ি কোথা থেকে মুখ কালো করে এলি হ্যাঁ?? কই ছিলি সারারাত?? নিজের মুখ কালো তো করলিই তার সাথে আমাদের মুখে ও চুনকালি মাখালি,,,

ইশারা: আমার ভাইয়ের অপারেশন কি হবে না মামি?? ( ইশারায় )

মামা: ইসস শখ কতো! তুই কি মনে করিস তুই আমাদের মুখে চুন কালি দিবি আর আমরা তোর ভাইয়ের চিকিৎসা করাবো?? মরুক তোর ভাই,,

ইশারা: আঁআআআ! (চিৎকার করে)

মামি: ওরে বাহবা ভুল কাজ করে আবার চোপা করা হচ্ছে??

এই বলেই মামি ইশারা কে চড় মারতে নিলো,,,কিন্তু মারতে পারলো না কারণ ওর মামির হাত প্রকাশ ধরে ফেলেছে,,,মামি প্রকাশের দিকে তাকাতেই এক প্রকার ভয় পেয়ে গেলো কারণ প্রকাশের চোখ লাল হয়ে রয়েছে,,,আর মামির হাত টা প্রকাশ এতো শক্ত করে ধরেছে যে ওর মামি হাতটা ছাড়াতে চেয়েও ছাড়াতে পারছে না,,,প্রকাশ চোখ মুখ গরম করে মামির হাত টা ঝাড়া মেরে ছেড়ে দিলো আর বললো

প্রকাশ: ইশারার গায়ে হাত তোলার কোনো অধিকার আপনাদের নেই!

মামা: মানে! কি বলতে চাইছো তুমি??

প্রকাশ: এইটাই যে ইশারার ওপর শুধু আমার অধিকার,,আমার সম্পত্তি ইশারা সি ইস মাই লিগ্যাল ওয়াইফ! (জোরে)

মামি: তার মানে তোমরা বিয়ে করেছো??

প্রকাশ: হ্যাঁ কিছুক্ষণ আগেই আমরা বিয়ে করেছি,,,দরকার পরলে রেজিস্ট্রি পেপার আপনাদের দেখিয়ে দেবো,,,আর এবার থেকে ইশারার গায়ে হাত তোলার কথা স্বপ্নেও ভাববেন না,,,আপনাদের জন্য সেটা ভালো হবে না (শার্টের হাতা ফোল্ড করতে করতে)

ইশারার মামা-মামি এবার একটু ভয় পেয়ে গেলো,,,ওদের ধারণা আছে প্রকাশের ক্ষমতা আর রাগ সম্পর্কে,,,প্রকাশ কোনো ভুল কাজ কে কোনদিন প্রশ্রয় দেয়না তাই ইশারার মামা-মামি আর কিছু বললো না এদিকে ইশারা এতক্ষণ অবাক হয়ে প্রকাশের কথা গুলো শুনছিল,,,

প্রকাশ: এবার বলুন ইশান কোথায়?

মামা: ঐ তো ও.টি.র পাশের কেবিনে আছে,,,

ইশারা কথাটা শুনেই দৌঁড়ে ঐ কেবিনে চলে গেলো আর পিছন পিছন প্রকাশ ও গেলো,,,ইশারা কেবিনে ঢুকতেই দেখলো ইশান শুয়ে রয়েছে আর ওর মুখে অক্সিজেন মাস্ক লাগানো,,,ইশারা গিয়ে ইশানের মাথায় হাত রাখতেই ইশান চোখ খুলে ইশারার দিকে তাকিয়েই উঠে বসলো মাস্ক খুলে,,,

প্রকাশ: আরে আরে কি করছো মাস্ক খুলছো কেনো?

ইশারা: মাস্ক কেনো খুলছিস ভাই? [ইশারায়]

ইশান: ওহ হো আমি ঠিক আছি এখন আমি তোমাদের সাথে কথা বলবো এখন সেই কখন থেকে ওয়েট করছি তোমাদের,,,আর তোমরা কি না কতো দেরী করলে,,আড়ি তোমাদের সাথে (মুখ ফিরিয়ে নিলো)

প্রকাশ: আড়ি তো আমি করবো তোমার সাথে,,,

ইশান: কেনো কেনো??

প্রকাশ: কেনো নয়? তোমার দিদিয়ার বিয়ের খবর টা জানাতে পারলে আর তোমার অপারেশনের কথাটা জানাতে পারলে না??

ইশান: সরি ভাইয়া!

ইশারা: মানে!? (ইশারায়)

ইশান: আরে মামা-মামি যখন তোর বিয়ে বুড়ো দাদু টার সাথে ঠিক করলো দুপুর বেলায় তখনি আমি বাড়ি থেকে বেরিয়ে যাই আর প্রকাশ ভাইয়া কে খুঁজতে থাকি কিন্তু পাই না তাই বিকেল বেলা আবার বেরিয়েছিলাম তখন প্রকাশ ভাইয়া কে চায়ের দোকানে পাই আর সব বলি তখন ভাইয়া আমায় বাড়ি ফিরতে বলে আর আমি বাড়ি ফিরে আসি আর তোর ঘরে যাই,,,তারপরেই তো প্রকাশ ভাইয়ার একটা হিরোর মতন এন্ট্রি হয় হিহিহিহি

ইশানের হাসি দেখে প্রকাশ ও ফিক করে হেসে দিলো আর ইশারা ও,,

ইশান: কিন্তু তোমাদেরকে কে খবর দিলো যে আমি এখানে??

প্রকাশ: তোমার দিদি আমাকে কাগজে লিখে জানায় যে আগামিকাল তোমার অপারেশন আর এই অপারেশনের সব টাকা ঐ লোক টা দেবে যাকে তোমার দিদি বিয়ে করছিল,,,বিয়ের শর্তই এমন ছিলো যে ইশারা বিয়ে করলে তোমার অপারেশন হবে কিন্তু বিয়েটা যখন হয়নি তাহলে অপারেশনের কি হবে?? তোমার মামা-মামি তো আর অপারেশন করাবে না,,, এটা পরেই আমি তোমার দিদি কে নিয়ে আগে তোমাদের বাড়িতে যাই সেখানে দারোয়ান জানালো যে তুমি হঠাৎ করেই অজ্ঞান হয়ে গেছো,,,বাড়িতে লোকজন থাকায় তারা তোমায় এই নার্সিংহোমে ভর্তি করে,,আর সেই ঠিকানা নিয়ে আমরাও চলে আসি,,,দারোয়ান দাদা বলছিল তোমার অপারেশন নাকি আজ্কেও হতে পারে তাই তো ও.টির সামনে এসেছিলাম আমরা,,,

ইশান: ওও! কিন্তু আমার তো আর অপারেশন হবে না দিদিয়া তো বিয়ে করেনি,,,

প্রকাশ: বিয়ে করেনি তো কি হয়েছে?? আমি তো আছি,,,আমি করাবো তোমার অপারেশন বুঝলে?

ইশান: তাই? জানো ভাইয়া মামা মামি দিদিয়া কে ভীষণ কষ্ট দেয়! আমার দিদিয়া কে পড়াশোনা করতে দেবে না বলে কলেজের সময় বাড়ির কাজ করায় আর বিকেলে পরতে বসলে এটা ওটা কাজ দেয় রান্না করায় ভুল করলে গরম খুঁটি দিয়ে ছ্যাকা দিয়ে দেয়,,,আর এই যে গয়না গুলো পরে আছে এগুলো সব নকল গয়না,,,আমার মায়ের সোনার গয়না গুলো কেড়ে নিয়েছে দিদিয়ার থেকে,,,তুমি দিদিয়া কে কোনো কষ্ট দিয়ো না প্লিজ (কাঁদতে কাঁদতে)

প্রকাশ ইশান কে বুকে জড়িয়ে নিলো আর ছলছল চোখে ইশারার দিকে তাকালো দেখলো ইশারা ঠোঁট কামড়ে ধরে নিজের কান্না আটকানোর চেষ্টা করছে,,প্রকাশ বাম হাত দিয়ে হেঁচকা টান মেরে ইশারা কেও বুকে টেনে নিলো আর জড়িয়ে ধরে মাথায় চুমু দিয়ে বললো,,

প্রকাশ: আজ থেকে তোমার দিদিয়ার কোনো কষ্ট হবে না,,,আর না তোমার হবে,,

প্রকাশ বাইরে বেরিয়ে এসে ডাক্তারের সাথে কথা বলে নিলো অপারেশনের ব্যাপারে আর ইশারা গিয়ে বসার জায়গায় বসে পরলো,,,আর ইশারার পাশে গিয়ে ওর মামি বসলো আর ইশারা কে কিছু কথা বললো,,,এটা প্রকাশের চোখে পরতেই প্রকাশ ইশারার কাছে এগিয়ে গেলো,,,ইশারার মামি প্রকাশ কে এগিয়ে আসতে দেখেই উঠে গেলো,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,
.

.
[ফিরে_আসবো_আগামী_পর্বে 🥀]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here