#একঝাঁক~জোনাকির~আলো~🍁
#writer~হাফসা~আলম 🍂
.
.
৬.
সাফা ফুচকার দোকানে ফুচকা খাচ্ছে। আজ তার মন খুবি খারাপ। ঝুমার সাথে তার ঝগড়া হয়েছে।যদিও তারা ঘন্টায় দুবার ঝগড়া করে তবুও আজকের ঝগড়া সাফা অনেক দিন স্থায়ী করবে বলে ঠিক করেছে।ঝগড়ার আলাদা কোনো কারন নেই এক কথায় শুধু শুধুই ঝগড়া করা আরকি।তাই আজ একা একাই ফুচকা খেতে এসেছে।সাফা প্রচন্ড ঝাল দিয়ে ফুচকা খাচ্ছে। তার নাক মুখ লাল হয়েগেছে।
.
নিভ্র স্টুডিও থেকে ফিড়ছে।হঠাৎ রাস্তার পাশে সাফাকে ঝালে হাপাতে দেখে গাড়ি থামায়।সাফার কাছে পানির বোতল নেই আর ফুটপাতের দোকান তাই সেখানে পানির বোতলও নেই।সাফার চোখ দিয়ে পানি ঝড়ছে।মুখশ্রী লাল হয়ে গেছে।নিভ্রর তেমন ইচ্ছে ছিলনা সেখানে যাবার তবুও কেন যেন সে গাড়ি থেকে নেমে পড়েছে হাতে তার পানির বোতল।মুখে মাক্স পরেছে। নিভ্র রাস্তা ক্রস করে সাফার সামনে দাঁড়াতেই সাফা অশ্রু সিক্ত চোখে মাথা তুলে তাকিয়ে কাশতে শুরু করে।নিভ্র তার হাতের পানির বোতলটা পাশের বেঞ্চিতে রেখে সাফার মাথায় দুই তিনটা টোকা দিয়ে পানির বোতল তার হাতে দিয়ে বলে উঠে…….
—পানি খাও।
.
সাফা পানি না খেয়ে কাশতে কাশতে বলে উঠে….
—আমাকে মারতে চলে এলেন??দেখেন আপনাকে আগেই বলেছি অন্যায় যে করে এবং সহে দু’জনেই সমান অপরাধী তাই আমি কিন্তু আপনাকে মেরে ভুল কিছু করিনি।সো আমাকে মারলে কিন্তু আপনার খবর আছে।মিস্টার ভিলেন,গুন্ডা
.
নিভ্র বুঝতে পারল মাস্ক পড়ায় তাকে সাফা চিনতে পারছেনা।যদিও চিনেছে তবে তা অন্যভাবে।এদিকে সাফার অবস্থা খারাপ নাক মুখ জ্বলে যাচ্ছে। নিভ্র চারপাশে একবার চোখ বিলিয়ে সাফার আর একটু কাছে এসে নিজের মাক্সের একসাইড খুলে বলে উঠে…….
—ইউ ইস্টুপিট গার্ল আমি নিভ্রনীল।
.
সাফা ভয়ঙ্কর দৃষ্টি নিয়ে তাকালো। আর মুখে বলে উঠল….
—আপনি??? এই আপনি মডেল নাকি ভিলেন বলবেন??দুইটা রোল কিভাবে করছেন???ও মাই গড।আপনি সেই লোক না যে আমার মাথা ফাটিয়েছেন???
—ওটা মিস আন্ডারস্ট্যান্ডিং ছিল। আমি ইচ্ছে করে নির্দোষ মানুষকে মারি না।বাই দ্যা ওয়ে খেলে খাও না খেলে নাই।
.
কথাটা বলেই নিভ্র হাটাঁ ধরে।উপকার করতে এসেছিল যদিও এটা সে খুবই কম করে।কিন্তু কেন যেন এই মেয়েটাকে করতে ইচ্ছে হল।কিন্তু এ যে মৃত্যসজ্জা যাত্রী হয়েও নিজের লেকচার ঝাড়বে এটা তার জানা ছিলনা।সাফা কিছুক্ষণ হা করে তাকিয়ে কাশতে কাশতে এক প্রকার দৌড়ে নিভ্রর কাছে গিয়ে পানির বোতল টেনে নিয়ে আবার বেঞ্চে বসে গডগড করে পানি গিলে নিল।নিভ্র অবাক হল না। পেন্টের পকেটে হাত দিয়ে সটাং হয়ে দাঁড়িয়ে সাফাকে দেখতে শুরু করে।মেয়েটা যে কি সেটা এই নিভ্রনীল বুঝতে পারেনা।ভাবতেই তার অবাক লাগে।যেখানে মানুষের কথা বলা,দৃষ্টি, চেহারার ভাবভঙ্গী দেখেই সে ওই মানুষ সম্পর্কে শর্ট টাইম বায়োডাটা দিয়ে দিতে পাড়বে।সেখানে এই মেয়েটার বেলায় সে কিছুই তেমন বলতে পারবেনা। সাফা পানি খেয়ে লাল লাল চোখে বলে উঠে……
—ওই ভিলেন, মডেল ফডেল আপনি না আমার থেকে পাচঁ টাকা পাবেন??আমার কিন্তু মনে আছে।
.
নিভ্র বিরক্ত হল।মেয়েটার বেশিরভাগ কথায় তার রাগ হওয়ার কথা কিন্তু তা হয় না শুধু বিরক্তিটা অব্বাহত থাকে।নিভ্র হাটাঁ ধরে এখানে বেশিক্ষণ থাকা মানে নিজের বারোটা বাজানো এটা সে জানে তাই হাটাঁ ধরে।কিন্তু সাফাত সাফাই ফুচকার দোকানের বিল দিয়ে সাফা দৌড়ে নিভ্রর হাত ধরে।সাথে সাথে নিভ্র চমকে তাকায়।সাফার দিকে অগ্নিময় দৃষ্টিতে তাকাতেই সাফা পাত্তা না দিয়ে দাঁত কেলিয়ে পাগুলো উঁচু করে নিভ্রর কানের কাছে এসে বলে উঠে….
—সামনে না গুন্ডারা মারামারি করছে।আমার দেখতে ইচ্ছে করছে বুঝলেন কিন্তু ওরা যদি আমাকেও মারে তবে আমি শেষ।তাই আপনার মত মডেল ফডেল আর ভিলেন যদি আমার সাথে থাকে তবে দেখতে মাজা হবে। আপনিও মাজা পাবেন।আরে আপনি তো তেমন মারামারি পারেন না কিন্তু ওই যে গুন্ডাটা আছে না কি যেন নাম রিফাত রিফাত মনে পড়েছে সে হেব্বি মাইর পারে। চলেন না দেখি।তার বিনিময়ে আমি আপনার পাচঁ টাকা বাড়িয়ে বিশ পঞ্চাশও করতে পারি।বিগ অপার।রাজি হলে আপনারই লাভ।লাক্সিমিকো ঠোকরাতে নেহি।
.
নিভ্র অবাক চোখে তাকালো।মারামারি দেখার মাঝে কি মজা হতে পারে??আর তাকে নিয়ে যেতে চাইছে।এই মেয়েত জানেও না ওই রিফাত তারই লোক।আর বলে কিনা মারা মারি পারেনা। কথাটা শুনে নিভ্র মনে মনে বাঁকা হাসে।এই মেয়ে তাকে চিনে না তাই ভয়ও পায় না।সাফা চোখ বাঁকিয়ে বাঁকিয়ে কথাগুলো বলছে।একপর্যায় নিভ্রকে টেনে নিল। নিভ্র বিরক্ত। চরম ভাবে বিরক্ত সে।তবুও কিছু বললোনা। সাফা নিভ্রর এক হাত ধরে রেখেছে।নিভ্র ভাবতেই পারেনি একটা মেয়ে অনায়াসে তার হাত ধরবে।যেখানে তার ধারে কাছে সে মেয়েদের তেমন ঘেঁষতে দেয় না আর এই মেয়ে ডিরেক্ট হাত ধরে নিল।ভায়াবহ ব্যাপার।এখন তো তার রাগ হওয়া উচিত ছিল। কিন্তু রাগ উঠছেনা।এটা ভাবেও সে বিরক্ত। অন্য মেয়েরা গায়ে পরলে তার যেমন রাগ হয় এই মেয়েটার ক্ষত্রে ব্যাপারটা হচ্ছে না।কিন্তু কেনো??এই কেনোর উত্তর নিভ্রর কাছে নেই।সে হাঁটছে।সাফা কেমন বাচ্চাদের মত দুলে দুলে হাঁটছে।আর কত কত অদ্ভুত কথা বলছে।তার যে অদ্ভুত কথার ফুলঝুড়ি আছে এটা নিভ্র যানে।সে সটাং হয়ে হেঁটেই চলেছে।আর সাফা এটা ওটা বলেই চলেছে।রাস্তার একটা জায়গায় এসে সাফা চেঁচিয়ে বলে…..
—সাইডে চলেন বেঞ্চে বসে দেখি।প্লিজজজ প্লিজজজ।
.
নিভ্র চোখ বাঁকিয়ে তাকালো।তার মনে হচ্ছে মারামারি না সিনেমা দেখতে এসেছে সাফা।সাফা তাকে টেনে রাস্তার পাশের বেঞ্চিতে বসাল।নিভ্রত জাস্ট অবাক।সে নিজের এই জীবনে রাস্তার পাশে আসে নি।এমন কি হাঁটেও নি আর এই মেয়ে তাকেই এভাবে বসিয়ে দিল।কিছু বলতে চেয়েও সাফার হাত গুটিয়ে চকচক চোখে তাকিয়ে থাকতে দেখে কিছু বললোনা।সাফা সামনের দিকে তাকিয়ে আছে।রিফাত নামের ছেলেটা অনেক গুলো লোককে মেরে দিয়েছে।হাড্ডা হাড্ডি মারামারি চলছে।নিভ্র মোবাইল বের করে কি যেনো করছে।সাফা এবার চেঁচিয়ে উঠে…..
—-ওয়াওওওও সেই। একদম ঝাকাসসসস।
.
নিভ্র তাকাল না। এমেয়ে যে কি তার জানা হয়েগেছে। সাফা এবার আরো কাছে এগিয়ে গেল তার কারন ভিন্ন। এই ভিড়ের মাঝে একটা বাচ্চা আটকা পড়েছে।এখন বের হতে পাড়ছেনা। তাই কাঁদছে। যে কোন সময় মানুষের পায়ের নিচে পড়তে পারে।তাই সাফা মাঝে ডুকে বাচ্চাটাকে বের করতে চাচ্ছে। ঠিক তখনই গুলির শব্দ শুরু হল।নিভ্র পাশ ফিরে তাকালো।কিন্তু সাফাকে না দেখে দিক ওদিন খুঁজতে লাগল।সাফা যে জায়গায় আছে।ঠিক সে দিকে রিফাতের একটা ছেলেও আছে।তাকে গুলি করতেই সাফার গায়ে লাগবে।নিভ্র দ্রুত বেগে উঠে দাঁড়ালো। সামনে এগিয়ে যেতে লাগল।সাফা বাচ্চাটাকে বের করে।হাসি হাসি মুখে দাড়াঁতেই গুলির শব্দে সে কানে হাত দিয়ে চোখ বুজে দাঁড়াল। অনেকক্ষন পড়ে চোখ খুলে সাফা নিজের সামনে দুই তিনটা লাশ পড়ে থাকতে দেখে চোখ বড় বড় করে তাকালো।নিভ্র হাতের রিভলভার এক পাশে ফেলে রিফাতকে ইশারা দিল।রাস্তা থেকে এগুলো সরাতে।সাফার সামনে এসে নিভ্র ঠাটিয়ে একটা চর বসিয়ে দিল।চড়ের পাচঁটা আঙ্গুলের চারটাই সাফার গালে লাল লাল হয়ে ফুলে উঠেছে।নিভ্র কপাট রাগ নিয়ে বলে উঠে…..
—স্টুপিড লেডি।ফাইজলামির লিমিট থাকে। আন লিমিট ফাইজলামি আই জাস্ট হেট।জাস্ট গো টু ইউর হোম।তা না হলে এখনই গুলি করে এদের মত ফেলে দিব।ইউ ডোন্ট নো হু এম আই।গো……
.
সাফা ভয়ে জোমে সেখানেই দাঁড়িয়ে রইল।তার মাথাটা ভৌ ভৌ করে ঘুড়ছে।রক্তে তার প্রচণ্ড রকমের ফোভিয়া আছে।তার উপড় নিভ্রর ভয়ঙ্কর থাপ্পড়। সাফা তো মাথা ঘুড়ে পড়ে যাবে যাবে ভাব।নিভ্র কথাগুলো বলেই বড় বড় পা ফেলে হাটাঁ দেয়।এই মেয়ের সাথে থেকে মাথা খারাপ করার ইচ্ছে তার বিন্দু মাএ নেই।সাফা ধির পায়ে বেঞ্চিতে বসে পড়ে।সাফার মাথা ঘুড়ছে।নিভ্র গাড়ি নিয়ে মোড় ঘুড়াতেই সাফাকে মাথায় হাত দিয়ে বসে থাকতে দেখে।গাড়ি থেকে নামতে চেয়েও নামল না।সামনের রিকশাওয়ালাকে গ্লাস খুলে সাফার কাছে যেতে বলে।রিকশাওয়ালা সাফার কাছে আসতেই সাফা একবার তাকালো।তারপর ধীর পায়ে উঠে বসল।বাসায় যেতে চায় সে।নিভ্র রিফাতকে কাছে ডাকল।আর বলে উঠে….
—মেয়েটা বাসার গেটে না ঢুকা পর্যন্ত ওর সাথে সাথে থাকবি।বাসায় ডুকলেই কল দিবি।
.
রিফাত অবাক হয়ে বলে উঠে….
—আচ্ছা ভাই।
.
রিফাত নিভ্রর কাজে প্রচণ্ড রকমের অবাক হয়েছে।সে আজ অনেক বছর নিভ্রর জন্যে কাজ করে। কিন্তু কখনো মেয়েদের নিয়ে কথা বলতে দেখেনি।আর আজ কিনা মেয়েটাকে দেখে রাখতে বলছে।তা ছাড়াও মেয়েটার জন্যেই সে এই ভাবে কাটা কাটাঁ গুলি করেছে। তা না হলে আর যাই হোক নিভ্র হুট হাট করে গুলি করার পাত্র না।কথাগুলো ভাবতেই সে অবাক হয়ে কিছুক্ষণ তাকিয়ে ছিল।কিন্তু তার মাথায় এটা এলনা নিভ্র মেয়েটাকে এভাবে চড় দিল কেন??
.
সাফা মাথা চেপে বসে আছে।মাথাটা তার প্রচন্ড ঘুড়ছে।হাতের উল্টো পিঠ দিয়ে কিছুক্ষণ পরপর মাথার ঘাম মুছচ্ছে। মুছার পরেও কপাল চুয়ে চুয়ে ঘাম বেড় হচ্ছে। সাফার সারা শরীর কাঁপছে। আসলে সে যতটা সাহস দেখায় ততটাও নয়।এভাবে তাজা রক্ত দেখে তার এই অবস্থা হচ্ছে।রক্তে প্রচন্ড ভাবে তার ফভিয়া আছে।নিজের মাকে সে রক্তাক্ত হয়ে রাস্তায় পড়ে থাকতে দেখেছে সে থেকেই এই রোগ তার মাঝে প্রবেশ করেছে।সাফার মনে হচ্ছে দুনিয়াদারী ঘুড়ছে।সে রিকশার পাশের হুট টা চেপে ধরে।নিজের ঘোলাটে চোখে চারপাশে চোখ বুলায়।এদিক ওদিক তাকাতে থেকে। বাসা কখন আসবে মনে মনে এটাই দোয়া করছে।রিকশাটা খট খট করে তাদের বাসার সামনে এসে পরে।সাফা কেঁপেকেঁপে রিকশা থেকে নিচে নিমে দাঁড়ায়। একবার ডুলে পরে যেতেও নেয়।রিকশাচালক চিন্তিত ভঙ্গিতে বলে উঠে…..
—খুকি তুই কি অসুস্থ??
—তেমন কিছু না চাচা। এটা আপনার ভাড়া।
.
সাফা ডুল পায়ে হেঁটে ছোট কেচি গেট খুলে ভিতরে ডুকতেই রিফাত গাড়ি থেকে একবার ভালো করে তাকিয়ে নেয়।তারপর মোবাইল কানে নিয়ে নিভ্রকে কল করে আর বলে উঠে…..
—ভাই মেয়েটা গেটের ভিতরে ডুকে গেছে।
.
অপর পাশ থেকে নিভ্র বলে উঠে….
—-ঠিক আছে চলে আয়।
.
মোবাইল পকেটে ডুকিয়ে রিফাত আবার একবার কৌতূহল নিয়ে গেটের দিকে তাকায়।তার মনে এখন একটাই কথা তার জানা মতে নিভ্রনীল কোনো মেয়েদের সাথে তেমন একটা কথা বলে না।সব সময় মেয়ে ফ্যানদের থেকেও দূরে থাকে।কয়েক জন মেয়ে বাদে তাকে আজ পর্যন্ত কোনো মেয়ের সংস্পর্শে যেতে দেখেনি।আর যাদের সাথে একটু আকটু কথা বলে তাও কাজের খাতিলে।এই প্রথম তাকে এমন একটা মেয়ের জন্য নিজের পার্সোনাল রিভলভার ইউজ করতে দেখেছে সে।আবার বাসায় পৌঁছেছে কিনা খবরও নিতে বলেছে কিন্তু কেনো??এই কেনোর উত্তর রিফাতের কাছে নেই।তার ধারনা মতে নিভ্রনীল রহস্যময়, ভয়ঙ্কর, আশ্চর্য, রাগী,তেজি টাইপের ভদ্র ছেলে। যাকে বুঝা মশকিল।কথাটা ভেবে তার ভিতর থেকে একটা দীর্ঘশ্বাস বেড়িয়ে এলো।গাড়ি স্টার্ট দিয়ে সে সামনে এগিয়ে চলে।সাফা বহু কষ্টে নিজের বাসার বেলটা চাপে।কিন্তু দ্বিতীয় বার চাপার শক্তি তার মাঝে নেই।তাই নিচেই বসে পড়ে।চোখ খোলা রাখার চেষ্টায় ব্যর্থ হয়ে সে ক্লান্তি নিয়ে দেয়াল ঘেঁষে চোখবুঁজে।…………
.
.
#চলবে………….🍁
ভুলগুলো আল্লাহর দেওয়া মহান গুন ক্ষমার চোখে দেখবেন………………. 🍂