এক ঝাঁক জোনাকির আলো পর্ব ৭

#একঝাঁক~জোনাকির~আলো🍁
#writer~হাফসা~আলম 🍂
.
.
৭.
নিভ্র নদীর পাড়ে বসে আছে।গায়ে তার আকাশি শার্ট ইন ছাড়া সাথে সাদা প্যান্ট।ফোটোগ্রাফাররা নানা ভঙ্গিতে ছবি তুলছে তার।আজ নদীর পাড়ে মডেলিং এর শুটিং চলছে।কখনো গাছের গুটিতে তো কখনো নদীর পাড়ে উঁচু টিলাতে উঠে ছবি তুলতে হচ্ছে। নিভ্র এবার বিরক্ত হলো।আরিফকে কাছে ডেকে আজকের জন্য সমাপ্তি ঘোষণা করল।নিভ্র যেহেতু নিষেধ করেছে তবে আজকের জন্য এখানেই শেষ।তাই সবাই লাইট ক্যামেরা গাড়িতে তুলছে।নিভ্র আশেপাশে চোখ বুলাচ্ছে।নদীর পাড় মানেই বাতাস।গোধূলি বেলার রোদটা ঝুঁকে পড়েছে।গায়ে এসে বাড়ি খাচ্ছে। নদীর পানির সাঁ সাঁ বহমানের শব্দে চারপাশে একটা অদ্ভুত পরিবেশ সৃষ্টি করছে।দূরে দূরে পাহাড় দেখা যাচ্ছে। মন কাড়া সৌন্দর্যে আবৃত্ত পাহাড়ের সবুজ রং।নিভ্র একদৃষ্টিতে চারপাশ দেখছে।ছোট ছোট কয়েকটা নিশ্বাস নিলো সে।শার্টের হাতা ভাজ করে নিয়ে পিছনে ঘুড়ে দাঁড়াতে যাবে তার আগেই চোখ আটকা পড়ল নীল শাড়ি পড়া একটা মেয়ের দিকে।মেয়েটা পিছন ঘুড়ে বাচ্চাদের সাথে কথা বলতে বলতে উল্টো হাঁটছে। খোলা চুল।হাটুর নিচ গড়িয়ে আরো বহুদূর সে চুলের গতি পথ।নিভ্র ভ্রু তুলে অবাক হল।এত সুন্দর আর কালো চুল সে আগে দেখেনি।সরু চুলগুলো নিচের দিকে এসে বেকে গেছে।বাতাসের ঝনকানিতে ডান বাম দুলছে।যার চুল এত সুন্দর সে না জানি কত সুন্দর??প্রশ্নটা নিজের মনে আসতেই নিভ্র নিজের প্রতি বিরক্ত হয়।সে কখনো একটা মেয়ের তারিফ করতে পারেনা।তাই এসব ভাবাও উঁচিত না।আরিফ দৌড়ে এসে বললো…..
—স্যার সবাই চলে গেছে।শুধু আপনি আর আমি।আপনাকে আমি বাসায় দিয়ে আসব???
—লাগবে না।গাড়ির চাবি দিয়ে যাও।আর তুমি চলে যাও।
.
আরিফ চাবি দিয়ে দিল।সে নিজের গাড়ির দিকে যাচ্ছে আর মনে মনে বালতি ভরা আফসোস নিয়ে ঘুড়ছে।তার ধারনা মতে এই নিরামিষ স্যারের চাকরি করা তার উঁচিত না।কখনো উঁচিত না।কেমন লোক নিজেও প্রেম করে না তাকেও করতে দেয়না।যদিও নিষেধ করেনি কখনো তবুও স্যার যদি একটা করত তবে সেও চাঞ্জ পেত।কত মেয়েরা যে এই নিভ্রনীলের জন্য পাগল কিন্তু বেচারা সে। তার জন্য কেউ পাগলই না।কথাটা ভাবতেই বেচারার মন খারাপ হয়।বালতি বালতি আফসোস তাকে আঁকড়ে ধরে।মনে শুধু দুঃখ আর দুঃখ লাগে।কত মেয়ে যে দিনে তাকে কল করে হিসাবের বাইরে।এক এক দিন তো মোবাইল বন্ধ করে রাখতে হয়।প্রথম প্রথম তার দারূন লাগত কিন্তু প্রতিদিনই সবার একটাই চাওয়া নিভ্রনীলকে পাওয়া যাবে।আরে শালি সারা দিন ওই নিরামিষের পিছনে ঘুড়স কা আমি ওতো কম না। কথাটা বলতে চেয়েও বলে না।আহারে মনে তার কত দুঃখ।তবে সে নিভ্রকে খুবই ভালোবাসে। বয়সে সে এক বছরের বড় তাই নিভ্ররকে ছোট ভাই হিসেবে দেখে।তার ধারনা একদিন এমন কেউ আসবে যে এই নিভ্রনীলকে ভিতর থেকে নাড়িয়ে দিবে।নিভ্রনীলের সব তেজ নিভিয়ে দিবে নিজের কোমল হাওয়া দিয়ে।কথাটা ভেবে সে হেসে উঠে।তখনই তার সাফার কথা মনে পড়ে।ভয়ে তার চোখ গোলগোল হয়ে যায়।সাথে রাগও হয় মেয়েটা তাকে ক্যাবলাকান্ত বলেছে।তাকে কি ক্যাবলাকান্তের মত দেখতে নাকি??আজিব।সবাই তো হ্যান্ডসাম বলে।দুর বলে সে গাড়িতে উঠে বসে।
.
নিভ্র গাড়ির চাবিটা ঘুড়িয়ে সামনে আগাতে যাবে তার আগেই ধাক্কা লাগে।পিছিয়ে ঘুরে তাকাতেই সে প্রচন্ড ভাবে অবাক হয়।সাফা মাথার পিছনের অংশ হাত দিয়ে ঘোষছে আর চোখ মুখ কুঁচকে আছে। তার আশেপাশে বাচ্চাদের একটা দল দাড়িয়ে আছে।তারা ব্যস্ত হয়ে বলছে……..
—সাফাপু ব্যথা পেয়েছ??
—আরে পাবনা?? কোন খাম্বা এখানে
.
বলে তাকিয়ে দেখে নিভ্র।সাথে সাথে তার রাগ প্রকট আকার ধারণ করে।কোমড়ে দু হাত দিয়ে নাক মুখ ফুলিয়ে বলে…..
—আপনি আবার??এই সব সময় আমার পিছনে পিছনে কি করেন বলেন তো??ফলো করেন আমাকে??সাহসত কম না??মেয়ে দেখলেই শুধু পিছন পিছন ঘুড়া না??আমি তো জানতাম আপনার পিছনে নাকি মেয়েরা ঘুড়ে আসলে ওগুলো ভুয়া কথা আপনিই মেয়েদের পিছনে ঘুরেন।আবার যখন তখন গায়ে পড়ে মারামারি করেন।আপনি কি মনে করেছেন থাপ্পড়ের কথা ভুলে যাব?? না ভুলিনি। আর এটাও মনে আছে পাঁচ টাকা পাবেন।দিব না। একদম দিব না।থাপ্পড় দিলেন যে মনে আছে মি.মডেল ফডেল আবার ভিলেন।আর এখন আবার মেয়ে বাজ।হুম…
.
সাফা মুখ ঘুড়িয়ে ভেংচি কাটে।নিভ্র হতভম্ব নজরে দেখছে।নীল শাড়িতে মেয়েটাকে অপ্সরি লাগছে।খোলা চুলগুলো অবাদ্ধ হয়ে চোখে মুখে আছড়ে পরছে।লাল ঠোঁট জোড়ার একটা ঠোঁট উপড়ে তুলে মুখ দিয়ে ফু মেড়ে চুল সরাচ্ছে মুখের সামনে থেকে।নিভ্র মনযোগ দিয়ে তা পর্যবেক্ষণ করছে।সাফার বলা একটা কথাও তার কানে গেল না।নিভ্রকে এভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে সাফা ভ্রুকুঁচালো।গোধূলি বেলার একপশলা রোদ সাফার মুখে পড়েছে।কপালের চুলের খাঁজে খাঁজে চিকচিক করছে ঘাম।নাকটা লাল হয়ে আছে তার সাথে নাকের উপড়ের বিন্দু বিন্দু ঘাম গুলো মুক্তর মত চিকচিক করছে।নিভ্র অপলক তাকিয়ে দেখছে সব।তার মনে হচ্ছে মেয়েটার তুচ্ছ জিনিস গুলো যেগুলো কারো সচরাচর চোখে পরেনা সেগুলোও অসাধারণ। পৃথিবীতে এই প্রথম সে কোনো মেয়ের ঘামে জড়িয়ে থাকা নাকটাও প্রশংসা করতে ইচ্ছুক।একজন মডেল হিসেবে তার রুচি বোধ মোটামুটি বেস্ট হিসেবেই সে জানে।সবাই তাই বলে।তার ফ্যাশনের ফ্যান সবাই।তার যেহেতু ঘাম জড়ানো নাক বেস্ট মনে হচ্ছে নিশ্চুই এতে মারাত্মক কিছু লুকিয়ে আছে।চকিতেই নিভ্র নিজেকে সামলাতে লেগে পড়ে।একটা মেয়েকে সে এতটা নিখুঁত ভাবে কিভাবে দেখতে পারে???এটা সম্পূর্ণ বাজে ব্যাপার।মনে মনে নিজেকে নিজেই শ্যাম অন ইউ বলে উঠে।চোখ নামাতেই তার মনে পড়ে আগের বার যখন দেখা হয়েছে তখন সে সাফাকে থাপ্পড় দিয়েছিল।তার মানে এই মেয়ে এখন তাকেও একটা থাপ্পড় অনায়াসে দিয়ে দিবে।তাই আগে থেকে সে পিপারেশন নিয়ে রাখছে।সেও একটা দিবে।মেয়েটা তাকে চিনে না। সে হচ্ছে নিভ্রনীল।সাফা তেমন কিছুই করলো না।পায়ের জুতোজোড়া নদীর পাড়ের বালির উপড় খুলে রেখে দাপদাপ করে পা ফেলে হাঁটা দেয়।আর বলে উঠে…..
—-ওওও কি গরম বালি!!
.
সাফা সোজা নিভ্রের কালো গাড়ির উপড়ে উঠে পড়েছে।নিভ্র অবাক হয়ে দেখছে।সাফার সাথে সাথে বাচ্চাগুলোও গাড়ির সামনে দাড়িয়ে পরে কিন্তু উঠে না।সাফা ডান হাত বাড়িয়ে ইশারা করে নিভ্রকে নিজের কাছে ডাকে।নিভ্র হতভম্ভ হয়ে দাড়িয়ে থাকে।সাফা বার বার কাছে আসার ইশারা করায় নিভ্র এগিয়ে গিয়ে সাফার সামনে দাড়িয়ে পড়ে।সাফা নিভ্র থেকে বেশ লম্বা হয়ে গেছে।আগে তো বুকের কাছে পড়তো।নিভ্র এটা বুঝতে পারছে না।সাফা আসলে কি করতে চাচ্ছে। তবে সে এটা বুঝতে পারছে থাপ্পড় একটা যে কোন সময় পড়তে পাড়ে।তাই প্যান্টের পকেট থেকে সে হাত গুলো বেড় করে নেয়।সাফা তাকে থাপ্পড় দিলে সেও একটা দিবে বলেই ঠিক করে।যদিও সে যানে না দিতে পারবে কি না।সাফা খুশিতে গদগদ হয়।এটা ভেবে যে নিভ্রর চাইতে সে লম্বা হতে পরেছে।সাফ এবার খুশিতে গদগদ গলায় বলে উঠে……………..
—-একটা চড় দি আপনাকে???
.
নিভ্র বিষম খায়।বিস্ময়ের সাথে তাকায়।তার সামনের চুলগুলো যে তার চোখের কাছে এসে পড়েছে সেদিকেও তার খবর নাই।সে একদৃষ্টিতে সাফাকে দেখছে।তার এই ২৭ বছর ২মাসের জীবনে সে এত ঘটা করে থাপ্পড়ের প্রপোজাল দিতে কাউকে দেখেনি।হলিউড,বলিউড, টলিউড এমন কি বাংলা মুভিতেও মনে হয় না এমন কিছু হয়েছে।অদ্ভুত এক মেয়ে এই সাফা।কথাটা মনে মনে কয়েকবার আউড়াতে লাগল নিভ্র।সাফ এবার দু হাত নিভ্রর দিকে এগিয়ে দিতেই নিভ্র বরফের মত জোমে দাড়িয়ে যায়।নিভ্র চোখ বুজতে যাবে তার আগেই সাফা নিজের দু হাত দিয়ে নিভ্রর গাল গুলো টেনে দেয়।আর চোখ মুখ খিঁচে দাঁত বেড় করে হেঁসে উঠে।নিভ্র এবার চরম বিস্মিত।একটা মেয়ে তাকে বাচ্চাদের মত গাল টেনে দিয়েছে হি কান্ট বিলিভ দিস।সে চোখ ফাটাফাটা করে তাকিয়ে আছে।সাফা নিভ্রকে এভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে খিলখিল করে হেঁসে উঠে।তার হাসিতে যেন সূর্যও তার মুখের উপড় ডুলে পড়ে। যাতে সাফা বিরক্ত হয়।তাই চোখমুখ খিঁচে মুখের উপড় পাঁচ আঙ্গুল মেলে হাত দেয়।নিভ্র এবার যেন পৃথিবীর সবচাইতে সুন্দর জিনিসটা আবিষ্কার করল।নিভ্র একটু সামনে ঝুঁকে সেই সুন্দর আরো কাছ থেকে দেখতে চাইল।সাফা যে চোখমুখ খিঁচলে তার ডান গালে একটা টোল পড়ে এটা এই প্রথম নিভ্রর দৃষ্টি কেড়েছে।নিভ্র জাস্ট স্পিস লেস হয়ে দাড়িয়ে আছে।তাকে দেখে মনে হচ্ছে সে অদ্ভুত ভয়ঙ্কর কিছুর সাথে পরিচিত হয়েছে।যা তার দেখা সবচাইতে ভয়ঙ্কর বস্তু।নিভ্র পালকই ফেলছেনা।সবুজ চোখ গুলোর দুপাশে লাল লাল আভা হয়েছে। একদৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকার জন্যে তার চোখও জ্বালা করছে তবুও সে চোখ ফিড়াতে চেয়েও পারছেনা।সাফা ঝাপাং করে লাফিয়ে গাড়ি থেকে নেমে পড়েছে।বাচ্চাগুলো একবার ইয়ে করে চেঁচিয়ে উঠেছে।বাচ্চাদের চেঁচামিচি শুনেই নিভ্র নিচের দিকে তাকিয়ে মনে মনে বিড়বিড় করে নিজেকে কিছুক্ষণ ঝাড়ি দিয়ে উঠে।আবার সাফার দিকে তাকাতেই সাফা গম্ভীর হয়ে বলে উঠে………
—যদি ভেবে থাকেন আমি আপনাকে থাপ্পড়ের জন্য মাফ করে দিয়েছি তবে বিশাল এক সমবেদনা আপনার জন্য।কারন আমি আপনাকে এখনো মাফ করিনি।বুঝলেন??তবে একটা শর্তে মাফ পাবেন??যদি রাজি থাকেন বলেন??ফাস্ট।
.
নিভ্র কিছু বলছেনা।তার মাথায় কিছুই কাজ করছেনা।তবে এটা বুঝতে পেড়েছে থাপ্পড় একটা পড়ার সম্ভনা আছে।তাই সবার দিকে একবার চোখ বুলিয়ে পকেটে হাত ডুকিয়ে গলা উঁচু করে বললো…….
—কি শর্ত???
—এই না হল গুড বয়।তা আপনি কি শুধু শর্ত শুনবেন নাকি রাখবেনও???
—রাখবো কি না তা শুনার পড়েই বলতে পারবো।তাই বলো আগে??
—এই আপনি কি মনে করছেন এখানেও আপনার পাওয়ার খাটাবেন। ইম্পসিবল। কারন আর যাই হোক এরা আপনাকে চিনেনা।দেখবেন???এই এনাকে চিনিস????(একটা বাচ্চাকে ইশারা করে)
—না সাফাপু।
—দেখলেন এরা চিনে না।কারন এরা রাস্তায় ঝুলানো বিশাল পোস্টারের দিকে তাকিয়ে থাকার মত মানুষ না।তবে রাস্তার পাশের খাবারের দোকানের প্রতি এদের আগ্রহ আছে।তাই এরা আর যাই হোক আপনাকে তেমন চিনে না।তাই আপনি আমার শর্ত না মানলে আমি কিন্তু এদের সামনেই আপনার কিউট গাল আরো কিউট করে দিব।
.
নিভ্র তাকালো।বেশ আগ্রহ নিয়েই তাকালো।তারপর বলে উঠে…………….
—-ঠিক আছে আমি রাজি।বল???
.
কথাটা শুনামাত্রই সাফা লাফিয়ে উঠে।সাথে তার জামদানি নীল শাড়িটাও।আর চুলগুলো দোল খেতে লাগে।নিভ্র চোখ ছোট করে তাকিয়ে ভাবে কি আর চাইবে টাকা গাড়ি সর্বোচ্চ একরা দামি বাড়ি এগুলো তো নিভ্রনীলের কাছে তেমন বড় ব্যাপার না।সাফা এবার খুশিতে গদগদ হয়ে বলে…….
—এই যে দেখছেন ঝালমুড়ি ওয়ালা!!উনার থেকে আমাদের সবাইকে ঝালমুড়ি খাওয়াতে হবে সাথে আবার বেলুন আর আইসক্রিমও খাওয়াতে হবে।এবার বলেন কি করবেন???
.
নিভ্র হতভম্ভ নয়নে দেখছে মেয়েটাকে।সেও তো মনে মনে ভেবেছে তার থেকে তিনটে জিনিস চাইবে ঠিকই চেয়েছে কিন্তু এমন কিছু চাইবে এটা সে ভাবে নি।সে একবার ঝালমুড়ি ওয়ালা আবার একবার সাফার খুশিতে চকচক করা মুখটা দেখছে। মেয়েরা ভয়ঙ্কর কিছু হয় এটা সে যানে আজ নতুন করে এই জাতির ভয়ঙ্কর আবেগ দেখছে সে।এমনও হয় নাকি???বাচ্চারাও সাফার সাথে লাফালাফি করছে।সাফা এবার করুন গলায় বলে উঠে……
—কি হল।শর্ত মানবেন না??আসলে আমি ব্লাকমেইল করতে চাইনি আসলে ব্যাগ বাসায় রেখে এসেছি তাই এটা এপ্লাই করতে হয়েছে।যান ব্লাকমেইল ক্যান্সেল। রিকুয়েস্ট করছি প্লিজজ খাওয়ান।
—দাড়িয়ে থাকলে খাবে কিভাবে??? ওখানে যেতে হবে তো চলো বাচ্চারা।
.
একটা পিচ্চি মেয়ে দৌড়ে নিভ্রর হাত ধরে নেয়।নিভ্রর সাথে সাথে কলিজায় এক অদ্ভুত ব্যাথা হয়।মেয়েটাকে সে অদ্ভুত নজড়ে দেখা শুরু করে।সাফাকে অবাক করে দিয়ে মেয়েটাকে কোলে তুলে নেয়।সাফা হা করে কিছুক্ষণ তাকিয়ে এ দৃশ্য দেখে।কিন্তু কিছু বললো না।ঝালমুড়ি ওয়ালা থেকে সবাইকে ঝালমুড়ি খাওয়ানো হলো সাথে আইসক্রিম। আর সবাইকে নীল বেলুন কিনে দিলো।কিন্তু বিল প্যামেন্ট করতে পাড়লো না।নিভ্র চিন্তায় পড়ে গেছে কিভাবে দিবে তার তো সব কার্ড।হঠাৎ আরিফের কথা মনে পড়ায় নিভ্র তাকে কল করে বলে উঠে……..
—-আরিফ নদীর পাড়ে ব্যাক করে এসো আর নগদ টাকা নিয়ে আসবে।কাম ফাস্ট…..
.
নিভ্র মোবাইল পকেটে রেখে পিছনে তাকাতেই অবাক হয়।সাফার ঠোঁট জোড়া আগের থেকে বহু গুনে লাল হয়ে আছে।সে এক ঠোঁট তুলে আইসক্রিম হাতে দাড়িয়ে আছে।চোখ তার নিভ্রতে সীমাবদ্ধ। নিভ্র ভ্রু নাচিয়ে ইশারায় জিগ্যেস করে.. কি হয়েছে।সাফা এই সুযোগেরই অপেক্ষায় ছিল এমন ভাব নিয়ে বলে উঠে……..
—এত খারাপ কেনো আপনি???বলেন?? এত এত খারাপ মানুষ হয়??মন চাচ্ছে নদীতে ফেলে দি।খারুস একটা।হুম…
.
নিভ্র নিজের ভাব থেকে একদম সরে গেছে।আদুরে গলায় নরম সুরু বলে উঠে……
—কেনো কি হয়েছে???আমি আবার কি ভুল করেছি???
—ভুল করেনি।মহান ভুল করেছেন।হুম..(মুখ ডান দিকে ঘুড়িয়ে)
—-ধরিয়ে দেও।আমাকে কেউ কখনো ভুল ধড়িয়ে দেয় নি।(আন মোনেই বলে উঠে)
—এই যে আপনি সবাইকে নীল বেলুন কিনে দিলেন আর শুধু আমাকেই লাল কিনে দিলেন।এটা মোটেও ঠিক না।আমার শাড়িটার সাথে মেচিং করেও তো কিনে দিতে পাড়তেন??(মুখ ফুলিয়ে বলে উঠে)
—ওখানে নীল বেলুন শেষ হয়েগেছে তাই লালটাই দিতে পেড়েছে উনি।সো এখানে আমার কি করার আছে???
.
সাফা এবার বেলুন ওয়ালা লোকটার দিকে একবার তাকিয়ে মনে মনে খুশি হয়ে হেঁসে উঠে।নিভ্রও মনে মনে হাসে।আর মনে মনে বলে…বাচ্চা একটা মেয়ে।সাফা বাচ্চাদের সাথে দৌড়াদৌড়ি করছে।নদীর পাড়ে বালির উপড়।নিভ্র গাড়ির সাথে ঠেস দিয়ে দাড়িয়ে আছে।আরিফ এখনো এলো না।কিছুক্ষণ পড়েই আরিফকে দেখতে পেলো।আবার কল করে নিভ্র বলে উঠে……
—-সামনের আইসক্রিম, ঝালমুড়ি, আর বেলুন ওয়াদেরকে যত এমাউন্ট চায় দিয়ে যেদিকে এসেছ সেদিকে হাটা দিবে পিছনে একদম ঘুড়বে না।মাইন্ড ইট।
.
আরিফ হতভম্ভ হয়ে ভাবছে পৃথিবী এদিক থেকে ওদিকে হয়েগেলেও নিভ্রনীল সাখাওত চৌধুরী এইসব খাওয়ার মানুষ না তবে কে খেয়েছে।আর পিছনে তাকাতে নিষেধ কেন করেছে??নিষিদ্ধ জিনিসের প্রতি মানুষ জাতির বরাবরি বেশি আগ্রহ ঠিক একুই ভাবে আরিফেরও ইচ্ছে করছে একনজর দেখতে আসলে কি আছে পিছনে যার কারনে তাকে নিষেধ করা হয়েছে।কিন্তু সে তাকালোনা।শয়তান এই যাত্রায় তাকে কাবু করতে পাড়লো না।বিল দিয়ে সে গাড়িতে উঠে চলে গেলো।নিভ্র চায়নি আরিফ তাকে এভাবে মেয়ের সাথে দেখুক এটাকে সে তিল থেকে তাল বানিয়ে শুধু প্রশ্ন করবে আর নিভ্রর প্রশ্ন করা বা শুনা দুটোই অপছন্দ। সাফা এবার হাঁপাতে হাঁপাতে নিভ্রর সামনে এসে দাঁড়িয়ে পড়ে।বেলুন গুলো তার এক হাতে বাধা।নিভ্র একখনই গাড়ি করে চলে যেতো এতক্ষণ থাকার কারন টাকা।ওদের বিল না দিয়ে তো সে যেতে পাড়েনা।সাফা বড় বড় কয়েকটা দম নিয়ে বলে…..
—-আপনি আরো দুরে গিয়ে দাঁড়ান তো।(মুখ খিঁচে)
—কেনো??(বিরক্তি নিয়ে বলে উঠে)
—আমি বলেছি তাই।যাবেন মানে যাবেন।আরে বাবা যান না।(বলেই ঠেলতে ঠেলতে নিয়ে গেল)
.
সাফা দৌড়ে আবার আগের জায়গায় গিয়ে দাঁড়িয়ে পরে।সে একা না তার সাথে বাকি বাচ্চারাও মনে হচ্ছে দৌড় প্রতিযোগতা হবে।নিভ্র এবার ঝঙ্কার লাগানো চেখে তাকায়।সে বুঝতেই পাড়ছেনা এই মেয়ে আসলে কি করতে চায়।নিভ্রকে বেশি ভাবতে হয় নি।সাফা এক,দুই,তিন….
বলে দেয় এক দৌড় সাথে তার আশেপাশের বাচ্চারা।নিভ্র পকেট থেকে হাত বাহিরে করে চোখের উপড়ের চুলগুলো হাত দিয়ে পিছনে সেট করে দেয়।আর অবাক হয়ে দেখে।সাফা নিজের শাড়ি পায়ের কিছু উপড়ে তুলে কোমড়ে গুঁজে দিয়েছে।চুলগুলো আগের মতই ছাড়া।হাতের বেলুনগুলো আগের মতই বাধা হাতে।সাফা খিলখিল করে হাসছে সাথে বাচ্চারা।সাফাকে দেখে মনে হচ্ছে সে আনন্দের দুনিয়ায় ভাসছে।সাফার দৌড়ের সাথে সাথে তার শাড়ি ক্রমশ দুলছে।চুলগুলো একবার সামনে আসছে আবার পিছনে যাচ্ছে তবে সব না শুধু সামনের গুলো।নিভ্র মুগ্ধ হয়ে এই দৃশ্য দেখছে।নিভ্র তাকিয়ে আছে তো আছেই।ওরা কখন যে নিভ্রর কাছে এসে গেছে এটা নিভ্রর খেয়ালই নেই।বাচ্চাগুলো দৌড়ে নিভ্রকে জড়িয়ে ধরে।কিন্তু সাফা পিছনে পড়ে যায়।শাড়ি পরে তো দৌড়ানো যায় না।তাই সে হেরে গেছে।দুঃখ ভারাক্রান্ত হৃদয় নিয়ে বলে উঠে……
—-আমি হেরে গেলাম।
.
চকিতেই নিভ্র জবাব দেয়…..
—হারকে জিতনে ওলা কো বাজিগার কেহতা হে।
.
সাফা মুচকি হাসল।যে হাঁসিতে রহস্য ছিল।আর রহস্য হল সে আসলেই বাজিগার।এদের তো সে ইচ্ছে করেই জিতিয়েছে।এদের এই অসাধারণ হাসি দেখবে বলে।
.
সাফা হাঁটছে সাথে নিভ্রও বাচ্চাদের নিভ্রকে খুব পছন্দ হয়েছে।তাই তারা নিভ্রকে রেখে দিয়েছে।তাদের দাবি তাদের সাথে ঘুড়তে হবে।গোধূলি বেলা প্রায় শেষ।আলো আছে এখনো চারপাশে। নিভ্র বাচ্চা পছন্দ করে একটা বিশেষ কারনও আছে।যেটা তার জীবনে দাগ কাটার মতো।সাফা হাঁটছে বাতাস হচ্ছে খুব।নিভ্রর কি হলো সে যানে না হঠাৎ প্রশ্ন করে উঠে…..
—কিসে পড় তুমি???
—ডিজাইনিং নিয়ে পড়ি ফাস্ট ইয়ার।
—বাচ্চা মেয়ে(নিভ্র সামনের দিকে তাকিয়ে বলে উঠে)
—এই এই একদম বাচ্চা বলবেন না।আমি কি বাচ্চা নাকি??আজব।আমি কিন্তু অনেক বড়।বুঝলেন
—বুঝলাম।
.
মনে মনে নিভ্র বলে উঠে…যে নিজেকে বলে আমি বড় সে কত বড় যানা হয়েগেছে।নিভ্র হালকা হাসলো।তবে দেখা যাওয়ার মত না।সাফা আবার চেঁচিয়ে উঠলো।নিভ্র বুকে হাত দিয়ে চকিতেই সাফার দিকে তাকালো।সাফা খুশিতে বাকবাকুম হয়ে নদীর পাশের ছোট পাহাড়টা দেখিয়ে বলে………..
—-ফুল ফুল ফুল..আমার লাগবে।জবা ফুল ওয়াওওও..
.
নিভ্র চোখ বাঁকিয়ে একবার তাকালো।তারপর অদ্ভুত ভঙ্গিতে কিছুক্ষণ ভাবলো।আবার সাফার দিকে তাকালো।কিন্তু ততক্ষণে সাফা নেই সাথে বাচ্চারাও।সাফা শাড়ি তুলে পাহাড়ে উঠেগেছে তবে বেশি দূর না একটু উঠেই ফুল ছিঁড়তে শুরু করলো।আর নিভ্র মনে মনে ভাবছে এই মেয়ে তাকে অবাক হওয়ার মত আর কোনো রাস্তায় রাখবে না।দুনিয়ার সব অদ্ভুত জিনিস তাকে এ দেখিয়েই ছাড়বে।সামান্য আগাছাড় ফুল নিয়ে এত নাচানাচি। হঠাৎ তার মনে হচ্ছে মেয়েটা আসলেই ভিন্ন প্রাকৃতির।অদ্ভুত ভয়ঙ্কর মাতাল করা মেয়ে।আবার নিজে নিজেই বলে সব মেয়েই এক। মা যেখানে এমন সেখানে এই দুনিয়ার সব মেয়েই সেম হবে।সার্থপর।নিভ্র নিজের অদ্ভুত ভাবে তাকিয়ে থাকা চোখজোড়া নামিয়ে নিল।সাফার হাত পা ছিঁড়ে গেছে তবুও সে মহা খুশি ফুলগুলো নিতে পেড়েছে ভেবে।সাফা হাপিয়ে হাপিয়ে নিভ্রর সামনে দাড়িয়ে পড়লো।নিভ্র ভ্রুকুঁচকে ভাবছে আবার নাজানি কি করে এই মেয়ে।তার দাড়নাই ঠিক তাকে অবাক করে দিয়ে সাফা ফুল গুলো তার হাতে ধরিয়ে দিলো।নিজের ডান হাত দিয়ে পেঁচিয়ে মাথার চুলগুলো হাত খোঁপা করলো।একবার ঝাঁকিয়ে মজবুত হয়েছে কিনা দেখে নিলো।এবার নিভ্রর সামনে দাড়িয়ে পড়লো।নিভ্র ভ্রু জোড়া উপরে তুলে চোখ ছোট ছোট করে বলে……
—”হোয়াট “”???
—আরে একটা মেয়ে আপনার সামনে খোঁপা করে দাড়িয়ে আছে আর আপনার হাতেও ফুল আছে তাহলে এভাবে হা করে না থেকে খোঁপায় গুঁজে দেন???
.
নিভ্র আহাম্মকের মত বললো…
—‘আমি”
সাফা বিরক্তি নিয়ে বলে উঠে….
—না আপনার বাবা আছে পাশে উনাকে বলেন লাগিয়ে দিতে।কি হল বলেন???
নিভ্র বিষম খেলো।চোখজোড়া একটু বড় করে নিল।আবার নিচের দিকে একবার তাকিয়ে নিজেকে ঠিক করে নিল।তার জীবনে এই প্রথম সে একটা মেয়ের চুলে ফুল গুঁজে দিতে যাচ্ছে। মানুষের করা প্রথম কাজটা তারা যতটা শুদ্ধ ভাবে করে ততটাই তাদের মাঝে ভীতি কাজ করে।নিভ্রর বেলায়ও তাই হচ্ছে। সামান্য ফুল গুজঁতে তার হাত কাপঁছে। নিভ্র কাঁপা হাতে আগ্রহিত হয়ে সাফার খোঁপার সাইডে ফুলগুলো গুঁজে দেয়।সাফা এবার নিভ্র বরাবর দাড়িয়ে বলে উঠে…….
—কেমন লাগছে??
.
নিভ্র একদৃষ্টিতে তাকিয়ে থেকেই জবাব দেয়….
—এ যেন কালো চুলে লাল মুকুট।
যেন লাল নীলের অপূর্ব মিলন মেলা।
যে মিলন মেলায় হারিয়ে যাওয়া যায় সারা বেলা।
এ যেন নিস্পলক দেখার আকর্ষীক দৃশ্য।
যেন হাড়িয়ে যাওয়ার মন কাড়া মাধূর্য্য।
যাতে চাদঁও ডুবতে চায় বহুবেলা।
হাজার শতক।
আমি তো ডুবে গেছি প্রথম প্রহলিকায়।
লালের সৌন্দর্যের মাতালতায়।
.
সাফা বেশ লজ্জা পেলো।লজ্জা কাটাতে বলে উঠে….
—আপনি তো দেখছি কবিতাও তৈরি করতে পাড়েন।তাও মিনিটে।ওয়াওওওও তবে এত এত গুন রাখেন কোথায় বলবেন???একটা মানুষ এত দিক দিয়ে এত পারদর্শী। ভাবা যায়??এই তোরা ভাবতে পারস??
.
বলে হেঁসে উঠে সাফা।হাসি আসলে লজ্জাকে আড়াল করার একমাত্র হাতিয়ার ছিলো তার কাছে তাই সেটা ইউস করেছে।কিন্তু কাজ তেমন হলো না।কেউই তার সাথে হাসলো না।সাফা হাসি থামিয়ে তাকিয়ে ছিল কিছুক্ষণ সবার দিকে।তারপর আবার হাটাঁ ধরে।নিভ্র নিজের মনকে একটা বাজে গালি দিয়ে বসে।কবিতা বলা বা লেখা তার নিজের একান্ত ব্যক্তিগত ব্যাপার আর সে কিনা মেয়েটাকে একটা আজাইরা কবিতা শুনিয়ে দিল। ফাউল একটা কাজ করেছে ভেবে নিভ্র নিজের মাথার পিছনে গাডা মরলো।……………..
.
#চলবে……..🍁
.
.
ভুলগুলো আল্লাহর দেওয়া মহান গুন ক্ষমার চোখে দেখবেন………🍂

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here