এক মুঠো গোলাপ পর্ব ২৯

এক মুঠো গোলাপ
sinin tasnim sara
২৯
___
কয়েকদিন যাবৎ রাফনিদ গোঁ ধরেছে বাসা চেঞ্জ করবে। এ বাসাটা নাকি কেমন স্যাঁতস্যাতে লাগছে তার কাছে। এদিকে তৌহিদ অফিশিয়াল কাজে চট্টগ্রামে গিয়েছে, আবার ওর নানীও অসুস্থ। সহজে আসতে পারবে বলে মনে হয়না। রাফনিদের ওসবে মাথা ব্যাথা নেই। সব কাজ সে নিজে নিজে করতে পারে। তৌহিদ আসুক কিংবা না আসুক যায় আসে না; সে বাসা চেঞ্জ করবেই।
এদের হাজবেন্ড ওয়াইফের ফ্যাসাদে আটকে পড়েছে বেচারি সুপ্ত। রাফনিদ তো প্রতিদিন ধমকে টমকে বাসা খুঁজতে নিয়ে যায় তাকে, রাত্রিবেলা আবার তৌহিদ কল করে বকা দেয় কেন রাফনিদের পাগলামির সঙ্গী হয়েছে।
কোন দিকে যাবে বুঝতে পারেনা সুপ্ত। আপুকে সাপোর্ট করলে দুলাভাই বকে, দুলাভাইকে সাপোর্ট করলে আপু বকে।
কাজের কাজ তো কিছু হচ্ছে না মাঝখান থেকে ব্ল্যাকমেইলিং আর বকাঝকা সহ্য করতে হচ্ছে তার সাথে যুক্ত পরিশ্রম। পড়াশোনায়ও ফাঁকি দেয়া হচ্ছে খুব। সুপ্ত ভয়ে আছে কোনদিন ওকে বের করে দেয় ভার্সিটি থেকে!
আজও বেলা বারোটার খানিক পর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত টানা এ গলি ও গলিতে গিয়ে বাসা দেখেছে দু বোন।
মোট তিনটে বাসা পছন্দ হয়েছে রাফনিদের। এখন খোঁজ খবর নিয়ে এলাকার পরিবেশ, তৌহিদের ভার্সিটি-অফিস থেকে দূরত্ব সব দেখে একটাতে উঠে যাবে।
বাইরে থেকে এসেই শুয়ে পড়লো সুপ্ত। শরীরটা খুব খারাপ লাগছে। এত ঠান্ডায় এভাবে বেরুনো যায় নাকি! উফফ আপু তো কিচ্ছু বোঝে না। ফোস করে একটা নিঃশ্বাস ছেড়ে
রাফনিদ কে মেসেজ করে দিলো, ও এখন ঘুমোবে ওকে যেন ডিস্টার্ব না করা হয়!
,
একটুখানি ফ্রেশ হয়ে রাফনিদ তৌহিদের সাথে ফোনালাপে ব্যস্ত হয়ে পড়লো। ওদের কথায় মাঝেই ল্যান্ডলাইনে আরেকটা কল এলো। তৌহিদকে হোল্ড করতে বলে ঐ কল রিসিভ করতে গিয়ে দেখা গেলো রংপুর থেকে বাবা কল করেছেন। তৌহিদের ফোন কেটে দিয়ে বাবাকে মোবাইলে কল করলো রাফনিদ।
বলা বাহুল্য উনি সুপ্ত আর নিদ্রর ব্যাপারেই কথা বলছিলেন।
অতীতের কিছু ঘটনা থেকে শুরু করে সুপ্তর জন্ম সত্যতা সহ বিয়ের প্রস্তাব সবটা নিয়েই কথা হলো।
বাবা মা কে অনেক গুরুত্বপূর্ণ বিষয় বোঝাতে হলো রাফনিদের।
বেশ যুক্তি তর্কের পর অবশেষে সব সমস্যার সমাধান পাওয়া গেলো।
কবির সাহেব অতি দ্রুতই তৌহিদ সমেত ওকে রংপুরে ডেকে পাঠালেন।
বাবার সাথে কথা শেষে ফোনটা রাখতে নিয়ে দেখলো নিদ্র মেসেজ দিয়েছে, “ফ্রী হলে একটা মিসড কল দিও রাফনিদ”
ফোনে চার্জের স্বল্পতায় তড়িৎ কল দিতে পারলো না রাফনিদ। ফোন চার্জিংয়ে লাগিয়ে ল্যাপটপ নিয়ে বসলো। সরাসরি ভিডিও কলে-ই কথা বলা যাক।
একবার ভাবলো সুপ্তকেও ডাকবে না-কি! পর মুহুর্তে মনে পড়লো ও তো ঘুমুচ্ছে। ওকে আর না ডেকে নিদ্রকে কল করলো রাফনিদ।
____
সুপ্তর ঘুম ভাঙলো রাত্রি বারোটার দিকে। ব্ল্যাঙ্কেটের ওম থেকে বেরুতে মন চাইলো না ওর। কোনো রকমে হাত বার করে ফোনটা টেনে নিলো কেবল।
এ-কি নিদ্রর এতগুলো মিসড কল?
তড়িৎ উঠে বসলো। এক মুহুর্ত দেরি না করে কল ব্যাক করলো। কয়েক সেকেন্ডের মাথায় রিসিভ হলো এবং ওপাশ থেকে গুরুগম্ভীর স্বর ভেসে এলো_
— নিচে এসো সুপ্ত।
সুপ্তকে কিছু বলতে না দিয়েই কল ডিসকানেক্ট করে দিলো নিদ্র। ওর এমন অদ্ভুত আচরণে ভ্রু কুঁচকে গেলো সুপ্তর।
তীব্র অনিচ্ছা নিয়ে বিছানা ছেড়ে নামলো। কোনো রকমে হাতমুখে পানি দিয়ে পাতলা চাদর টা গায়ে জড়িয়ে বেরিয়ে পড়লো।
বলা বাহুল্য ড্রয়িং রুমের বাতিটাও এ মুহুর্তে নেভানো পেলো সুপ্ত। ভাবলো রাফনিদ শুয়ে পড়েছে। কিন্তু ও না খেয়ে ঘুমিয়ে আছে, রাফনিদ একবারো ডাকতে এলো না?
একটুখানি অস্বাভাবিক লাগলো সুপ্তর কাছে। সংশয় মনে নিয়েই ধীর পায়ে নেমে এলো নিচে।
বাইরে ঠান্ডার প্রকোপ অত্যাধিক। এক মিনিটেই কাঁপা-কাঁপি শুরু হয়ে গেলো সুপ্তর। কুয়াশার কারণে কলাপসিবল গেইটের বাইরে কিছু দেখা যাচ্ছে না। ফোনের ফ্ল্যাশ জ্বালিয়ে বোঝবার চেষ্টা করলো নিদ্র কোথায়!
বোকা বানালো নাকি!
সরু চোখে ক্ষীণ আলোয় যতখানি দেখা যায়, দেখবার চেষ্টা করলো সুপ্ত।
তারপর কি মনে করে খুব সন্তর্পণে কলাপসিবল গেইটটা টেনে হালকা খুললো।
সর্বশেষ সিঁড়িটায় দাঁড়ানো মাত্র চারিদিকের লাইট জ্বলে উঠলো।
সুপ্ত দেখতে পেলো বাসার প্রায় সবাই এখানেই উপস্থিত এমনকি রাফনিদও।
এবং ওর ঠিক সামনেই নিদ্র হাঁটু গেড়ে বসে, হাসি হাসি মুখ করে তাকিয়ে আছে।
সুপ্ত যেন কিছু বুঝতেই পারলো না। প্রশ্নবোধক দৃষ্টিতে সবার দিকে তাকাতে লাগলো।
নিদ্রর পেছনে দাঁড়ানো সকলে সমস্বরে চিৎকার দিয়ে উঠলো_
–“সারপ্রাইজ”
হঠাৎ জোরে শব্দ হওয়ায় সুপ্ত চমকে উঠলো। ঐ মুহুর্তেই নিদ্র মৃদু হেসে একটা রিং ওর দিকে বাড়িয়ে দিয়ে বললো_
— উইল ইউ ম্যারি মি?
সুপ্ত বিস্ময়ে বিমূঢ়।
রাফনিদসহ প্রতিবেশীরা এক যোগে সুপ্তকে উদ্দেশ্য করে বললো_
— সে ইয়েস, সে ইয়েস…
সুপ্ত’র বিস্ময়ভাব কাটছেই না। ও যেন সকলের কথা শুনেই মাথা নেড়ে উত্তর করলো_
— আই উইল।
নিদ্র চমৎকার হেসে সুপ্তর অনামিকায় রিংখানা পরিয়ে দিলো।
তা দেখে সকলে পুনরায় উল্লাসে ফেটে পড়লো ।
রাফনিদ এগিয়ে এসে সুপ্তর বাহু চেপে ধরে আনন্দিত গলায় কংগ্রাচুলেশনস জানালো।
— জানিস, বাবা-মা মেনে নিয়েছে।
— মানে!
— আরে তোদের সম্পর্ক মেনে নিয়েছে। বিয়ের কথা চলছে বাসায়। নিদ্রটা কেমন সারপ্রাইজ দিলো বল?
খুশিতে আত্মহারা হয়ে জড়িয়ে ধরলো ও সুপ্তকে।
সুপ্ত ঝটকার ওপর ঝটকা খাচ্ছে আজ। ও নিদ্রর দিকে তাকিয়ে সত্যতা নিশ্চিতের উদ্দেশ্যে ভ্রু নাচালো।
নিদ্র তার স্বভাবসুলভ হাসিটা দিয়ে মাথা নেড়ে বোঝালো সত্যিই।
সুপ্ত বিশ্বাসই করতে পারছে না ভালোবাসার প্রাপ্তি তার ভাগ্যে আছে।
অতি সুখে তার চোখ দিকে টপটপ করে পানি ঝরে পড়তে লাগলো।
সুপ্তকে কাঁদতে দেখে রাফনিদ ঘাড় ফিরিয়ে নিদ্রকে জিজ্ঞেস করলো_
–এই ছিঁচকাদুনি পাগলটাকে সামলাতে পারবে তো?
— খুব পারবো।
দৃঢ় শোনালো নিদ্রর গলা।
সুপ্ত ফিসফিসিয়ে রাফনিদকে শুধালো_
— আপু আমার না বিশ্বাস হচ্ছে না,আমার জীবনে সুখ আসলেই এতটা সহজলভ্য!

চলবে,

একটুখানি এলোমেলো হচ্ছে সব। আ’মি চেষ্টা করছি এটাকে ফিক্স করার 😑

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here