#এক_শহর_ভালোবাসা
#পর্ব_৩৭
#সুরাইয়া_নাজিফা
ভালোবাসার মানুষটা যতক্ষন আমাদের আশেপাশে থাকে ততক্ষন আমরা তার ভালোবাসাটা বুঝতে পারিনা তবে দূরে গেলেই বুঝা যায় আমরা তাকে কতটা ভালোবাসি। বিচ্ছেদের সময়টা অনেক দীর্ঘ হয়। না তাকে দেখতে পারি না তার কাছে যেতে পারি শুধু অপেক্ষা আর অপেক্ষা। তবে এই অপেক্ষারও আলাদা একটা মজা আছে। যারা কারো জন্য জীবনে একবার হলেও অপেক্ষা করেছে তারাই সেই মজাটা অনুধাবন করতে পারবে।কারণ অপেক্ষা আমাদের অনুভব করতে শেখায় যে আমরা সেই মানুষটাকে কতটা ভালোবাসি। তাকে ছাড়া জীবনটা শূন্য মনে হয়। আর অনুভব করতে পারি বলেই হয়তো আমরা বলি অপেক্ষার প্রহর অনেক দীর্ঘ হয়।
কিছুক্ষন আগেই আমি আমাদের বাড়িতে এসে পৌঁছেছি।এতদিন পর নিজের বাড়ি নিজের ঘরে এসেছি তাতে যে ভালো লাগাটা কাজ করার কথা সেই ভালোলাগা এখন কেন জানি মিসিং মনে হচ্ছে। নিচে যতক্ষন সবার সাথে ছিলাম ভালোই লাগছিলো কিন্তু যখনই রেস্ট নেওয়ার জন্য একটু রুমে আসলাম তখনই চারপাশটা ফাঁকা ফাঁকা লাগছিলো। যেদিকে তাকাই সেদিকেই মনে হয় শানকে দেখতে পাচ্ছি। আগে এই বাড়িতে আসলে ইচ্ছা হতো না যেতে কিন্তু এখন মনে হচ্ছে শান আসত আর খুব দ্রুত আমাকে এখান থেকে নিয়ে যেত। ভাবতেই ধপাস করে বিছানা হাত পা ছড়িয়ে শুয়ে পড়লাম। হঠাৎ মনে পড়ল আমি তো শানের জন্য জায়গা রাখিনি ও কোথায় ঘুমাবে?
আমি সরে এসে একপাশে শুয়েছিলাম।পরক্ষণেই আবার নিজের মাথায় নিজেই একটা বারি মারলাম আর নিজের মনেই বললাম,
“ধ্যাত শান এখানে কি করে আসবে সে তো তার বাড়িতেই আছে আর আমি আমার বাড়ি। ”
ভাবতেই মনটা খারাপ হয়ে গেল। বুঝতে পারলাম এখন আমি কিছুতেই ঘুমাতে পারব না। আমি এসে আয়নার সামনে দাঁড়ালাম চুলগুলো এলোমেলো হয়ে আছে আচড়ানো প্রয়োজন। আমি হাতে চিরুনি নিয়ে চুল সেট করতে শুরু করলাম। চুলটা হাত খোপা করে নিলাম। হঠাৎ আমার চোখ পড়ল শানের লাভ বাইটের দিকে। আমি একটু হাত বুলিয়ে দিলাম। নিজের দিকে নিজে তাকাতেই কেমন লজ্জা পেয়ে গেলাম। আমি দুই হাত দিয়ে নিজের মুখটা ঢেকে নিলাম। প্রতিদিন উনার করা সেই পাগলামি গুলো আমার মনে এমন ভাবে দাগ কেঁটে গেছে যে আমি এখন সেসবই মিস করছি। সবচেয়ে মিস করছি যেটা ওনার “সুইটহার্ট ” এবং “বেখেয়ালি ” ডাকটা। উফ বারবার মনে হচ্ছে কেউ আমাকে বারবার এই নামগুলোতেই ডাকছে। বারবার মাথায় উনার নেশাক্ত কন্ঠে বলা কথা গুলোই ঘুরপাক খাচ্ছে। হায় আমি কি পাগল হয়ে যাচ্ছি। কি হচ্ছে আমার সাথে এসব।
আমি দৌঁড়ে গিয়ে ফোনটা হাতে নিলাম। ফোনটা হাতে নিতেই মনটা খারাপ হয়ে গেল। এখনও একটাও কল করেনি। কি খারাপ ও বাড়িতে আসার সময় যেভাবে বলছিল মনে হচ্ছিল যেন আমাকে কত কল করবে। অথচ এখনও অব্দি একটা মিসকল পর্যন্ত দেয়নি। আমি ফোনটা পাশে রেখে একদৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলাম। উনি কি বুঝতে পারছে না আমি উনাকে কতটা মিস করছি। উনার প্রতিনিয়ত জ্বালানো গুলো মিস করছি। উনার চোখের সেই মাতাল চাহনি মিস করছি। প্রতিটা মুহূর্ত উনাকে অনুভব করছি। উনার আমার প্রতি যত্ন নেওয়া, ভালোবাসা সব সব মিস করছি প্রচন্ড ভাবে। উনি কি আমাকে মিস করছে? তাহলে কেন ফোন করছে না। কিছুক্ষন চোখ বন্ধ করে রইলাম। উনার মুখটা চোখের সামনে ভেসে উঠলো। আমি নিজের চোখ খুলে ফেললাম। আবারও ফোনের দিকে তাকালাম। কি অবস্থা ফোনটা কি নষ্ট হয়ে গেল নাকি? কল আসে না কেন?
হঠাৎ কেউ এসে আমার পিছনে হাত রাখতেই আমি চমকে উঠলাম। দ্রুত পিছনে তাকাতেই দেখলাম আপু। আমি হতাশ হয়ে বললাম,
“তুই?”
আপু ভ্রু নাচিয়ে মুচকি হেসে আমার দিকে তাকিয়ে বললো,
“তাহলে কাকে আশা করেছিলি? ”
আমি মনে মনে বিরবির করে বললাম,
“কাকে আর আশা করব মাথার মধ্যে তো শুধু শানই ঘুরছে। ”
কিন্তু মুখে তোতলাতে তোতলাতে বললাম,
“ক কাকে আ আশা ক ক করব কাউকে না। হঠাৎ পিছনে হাত রেখেছিস তাই ভয় পেয়েছি। ”
আপু একটু টেনে বললো,
“ওহ তাই বুঝি। আচ্ছা যেটা বলতে এসেছি চল নিচে খেতে আম্মু ডাকছে। ”
আমি আবার বিছানায় বসে ফোনের দিকেই তাকিয়ে বললাম,
“তুই যা আমি পরে আসছি। ”
“পরে আসছি মানে কি? সবার খাওয়া হয়ে গেছে শুধু তুই, আমি আর আম্মু বাকি দ্রুত আয়। ”
আমি মন খারাপ করে উঠে দাঁড়িয়ে ইনোসেন্ট ফেসে আপুকে বললাম,
“আচ্ছা আপু আমার ফোনে একটা ফোন দে তো আমার মনে হয় ফোনটা নষ্ট হয়ে গেছে একটা কলও আসছে না। ”
আপু অবাক হয়ে বললো,
“মানে কল আসছে না এজন্য ফোন নষ্ট?”
“উফ এতো কথা বলিস কেন তোকে দিতে বললাম তুই দে না এতো কথা না বলে। ”
আপু ড্রেসিনটেবিলের উপর থেকে নিজের ফোনটা হাতে নিয়ে আমার ফোনে একটা কল দিলো। আমার ফোনে আমার পছন্দের রিংটোন বেজে উঠলো। যাক তাহলে আমার ফোন ঠিকই আছে। তাহলে শান কল করেনি একবারও। আমার অনেক রাগ লাগলো।
আপু বললো,
“শান্তি মোবাইল একদম ঠিক আছে। এবার খেতে চল। ”
আমি তখনও ফোন হাতে নিয়ে ফোনের দিকেই তাকিয়ে রইলাম। আপু নিজের কাঁধ দিয়ে আমার কাঁধে ধাক্কা দিয়ে বললো,
“কি হয়েছে বলতো? ফোনে কোনো ইমপরটেন্ট কল আসবে নাকি যে এভাবে ফোনের উপর পড়ে আছিস। ”
আমি আমতা আমতা করে বললাম,
“না কিসের ইমপরটেন্ট কল আসবে।”
“তাহলে ফোনের মধ্যে কি?”
আমি হাসার চেষ্টা করে বললাম,
“না ওই কাস্টমার কেয়ারে একটা প্রবলেমের জন্য কমপ্লেইন করেছিলাম। ওরা বলেছিল কিছুক্ষন পর ফোন দিবে তাই অপেক্ষা করছিলাম। ”
“আচ্ছা ওরা যখন ফোন দেওয়ার দেবে এখন খেতে চল তুই। ”
আমি হতাশ হয়ে বললাম,
“হুম। ”
তারপর আপুর সাথে নিচে চলে গেলাম ফোন রেখেই। নিচে এসে খেতে বসলাম কিন্তু কি আর খাওয়া মুখে তো দিচ্ছি বাট পেটে যাচ্ছে না। অনেকক্ষন যাবৎ ভাত পাতে নিয়ে শুধু নাড়াচাড়াই করে যাচ্ছি। আম্মু আমার কাঁধে হাত রেখে বললো,
“কি হয়েছে তোর তখন থেকে দেখছি শুধু ভাত নিয়ে নাড়াচাড়াই করছিস খাচ্ছিস না কেন? শরীর খারাপ নাকি? ”
আম্মু অস্থির হয়ে আমার কপালে গলায় হাত দিয়ে দেখল,
“না ঠিকই তো আছে।”
আমি আম্মুকে বললাম,
“তুমি একটু শান্ত হয়ে বসো না।কিছু হয়নি আমার। খাচ্ছি তো আমি। ”
“কই খাচ্ছিস এখনো যেমন খাবার তেমনই। কি হয়েছে তোর। ”
আমি কিছু বলবো তার আগে আপু কিছুটা টোন কেঁটে বললো,
“আহা আম্মু তুমিও না বুঝোনা তোমার মেয়ের গুরুতর অসুখ হয়েছে যেটা এত সহজে ছাড়বে না। ”
আম্মু আঁতকে উঠে বললো,
“অসুখ হইছে মানে? কি অসুখ হইছে যে ছাড়বে না সহজে।এই মেয়ে কি হইছে তোর। ”
আপু আম্মুর কথা শুনে খিলখিলিয়ে হাসতে শুরু করলো। আম্মু রেগে বললো,
“ঐ মেয়ে কি হইছে বলিস না কেন? খালি হাসিস। ”
আপু হেসে বললো,
“কুচ কুচ হোতা হে অসুখ। ”
আমি আপুর দিকে রাগি দৃষ্টিতে তাকালাম।আপু হাসতে লাগলো। আম্মুর দিকে তাকাতেই মনে হলো আম্মু এখনো বিষয়টা ধরতে পারেনি ভ্যাবলার মতো তাকিয়ে আছে।আমি আম্মুকে বললাম,
“উফ আম্মু আপুর কথা ছাড়ো তো তুমি খাও এই দেখো আমি খাচ্ছি। ”
বলেই দ্রুত খাবার মুখে পুড়তে লাগলাম। তখনই উপর থেকে লতা আমার ফোন হাতে দৌঁড়ে এসে বললো,
“আপা আপনার ফোনে কেডায় জানি ফোন দিছে। ”
কথা শুনতেই আমার বিষম লেগে গেল।আমি কাঁশতে আরম্ভ করলাম। আম্মু আমার মাথায় হাত বুলিয়ে পানি এগিয়ে দিয়ে বললো,
“আরে আস্তে খাবি তো। এতো উতলা হওয়ার কি আছে? ”
আমি দ্রুত পানিটা খেয়ে কোনো মতে উঠে গিয়ে দৌঁড়ে ফোনটা হাতে নিলাম। ফোনটা হাতে নিতেই এতক্ষনে আমার মনের মধ্যে যে উড়ু উড়ু করছিলো এক নিমিষে সেটা শেষ হয়ে গেল কারণ সেটা গ্রামীন ফোনের অফিস থেকে ফোন ছিল। ইচ্ছা করছিলো ফোনটা একটা আছাড় মেরে ভেঙে ফেলি। কিন্তু নিজের রাগটা কন্ট্রোল করে নিলাম।
লতার দিকে তাকিয়ে রাগি দৃষ্টিতে বললাম,
“ঐ তোরে এতো পন্ডিতি কে করতে বলছে ফোন আসুক আর যাই করুক তুই কেন ফোনটা আনতে গেলি। ”
লতা মুখ কাচুমাচু করে বললো,
“আমি ভাবছি আফনের দরকারি ফোন হইব এর লাইগাই তো আনলাম। ”
আম্মু আমার দিকে তাকিয়ে বললো,
“কিরে তুই মেয়েটার সাথে এভাবে কথা বলছিস কেন সোহা? ও তো তোর উপকারের জন্যই ফোনটা আনলো। ”
আপু হাত মুছতে মুছতে পাশে দাঁড়িয়ে বললো,
“কিরে সোহা তোর কাস্টমার কেয়ার বুঝি এখনো ফোন দেয়নি। আসলে কি বলতো ওটা কাস্টমার কেয়ার না হয়ে স্পেশাল কেয়ার হলে ভালো হতো তাহলে তোকে এতটা অপেক্ষা করতেই হতো না বল। ”
আপুর কথা শুনে আম্মুও ফিক করে হেসে দিল।হয়তো এতক্ষনের কথায় আম্মুও বুঝে গেছে। উফ এদের হাসি দেখে এতো রাগ হচ্ছে যে আমি আর দাঁড়ালামই না নিচে। হনহনিয়ে আমার রুমে চলে গেলাম। সুযোগ পেয়েছে তো তাই সবাই মজা নিচ্ছে ধ্যাত।
★
★
রাত প্রায় বারোটা আমি বিছানায় শুয়ে পাশে আপু। আপু ঘুমিয়ে গেছে হয়তো। কিন্তু আমার চোখে ঘুম নেই আমি শুধু বিছানায় শুয়ে এপাশ ওপাশ করছি। ফোনটা এখনো হাতে নিয়ে আছি নো কলস, নো মেসেজ। প্রচন্ড বিরক্ত লাগলো। আমি লাফ দিয়ে উঠে বসলাম শোয়া থেকে তখনই আপু চেঁচিয়ে বলে উঠল,
“কি সমস্যা তোর সোহা না নিজে ঘুমাচ্ছিস না আমাকে ঘুমাতে দিচ্ছিস এতো নড়ছিস কেন চুপচাপ ঘুমা না। ”
আমি কর্কশ কন্ঠে বললাম,
“তুই ঘুমা না চুপচাপ কান চেঁপে আমার দিকে মনোযোগ দিচ্ছিস কেন? ”
“পাশে যদি কেউ বসে এতো নাড়াচাড়া করতে থাকে তাহলে কেমনে ঘুমাবো। ”
“ঘুমাতে না পারলে ঘুমাস না জেগে থাক। ”
আমার কথা শুনে আপু কিছুক্ষন চুপ করে রইল। তারপর পাশে লাইট জ্বালিয়ে উঠে বসল। আমি একগালে হাত দিয়ে মন খারাপ করে বসে ছিলাম। আপু আমার দিকে তাকিয়ে বললো,
“এতো মিস করছিস যখন নিজেই ফোন দিয়ে নে। ”
আমি অভিমানের সুরে বললাম,
“কাউকে মিস করছি না আমি। ”
“তুই বললেই হবে নাকি। আমরা তো আর চোখ হাতে নিয়ে হাঁটি না। আমার ছোট্ট বোনটার মনটা যে কারো জন্য জ্বলে পুড়ে যাচ্ছে সেটা তো বুঝতে পারি। ”
আমি ছলছল চোখে আপু দিকে তাকালাম। আপু আবার বললো,
“আরশ যখন মাঝে মাঝে কাজের প্রেসারে ফোন দিতে না পারে তখন আমারও এমনটাই হয় ওর সাথে কথা বলতে না পারলে। যতক্ষন আরশের উপর অভিমানটা ঝাড়তে না পারি ভালো লাগে না। তখন আমি কি করি জানিস নিজ থেকে ফোন করে যত বকা আছে সব দিয়ে দেই মনটা ভালো হয়ে যায়। তুইও ট্রাই করতে পারিস। ”
আমি আপুর দিকে তাকিয়ে বললাম,
“বলছিস এতে আমার মন ভালো হবে? ”
আপু “হ্যাঁ সূচক “মাথা নাড়ালো।
“আচ্ছা তুই ঘুমা আমি আসছি। ”
কথাটা বলেই আমি বেলকনিতে চলে আসলাম। শানের নম্বরে ডায়েল করব কিনা আরো একবার ভাবতে লাগলাম। না একবার বকা না দিলে মনটা শান্তি লাগবে না। তাই উনার নাম্বার ডায়েল করতে লাগলাম। আমি কল দেওয়ার আগেই আমার ফোনে রিং বেজে উঠলো। প্রথমত ভয় পেয়ে গেছিলাম তারপর ভালো করে নম্বারের দিকে তাকাতেই মনটা নেচে উঠলো। আচ্ছা এটা আমার চোখের ভুল না তো। আমি ভালো করে তাকিয়ে দেখলাম না সত্যিই শান কল দিয়েছে। শানের নামটা ফোনের স্ক্রীনে জ্বলজ্বল করছে। একটা চিৎকার দিতে মন চাইল কিন্তু নিজেকে সামলে নিলাম। সবার ঘুম ভেঙে গেলে কেলেঙ্কারি অবস্থা হয়ে যাবে।
আমি ফোনটা একবার রিং হওয়ার সাথে সাথেই ফোন রিসিভড করলাম। ফোন কানে ধরে চুপ করে বসে রইলাম। হঠাৎ শান ওপাশ থেকে বলে উঠলো,
“কি ব্যাপার ফোন করার সাথে সাথেই ফোন রিসিভড হলো আমার ফোনের জন্য কেউ অপেক্ষা করছিলো বুঝি? ”
আমি কথা না বলে চুপ করে রইলাম। এতক্ষনে উনার কন্ঠটা শুনে মনে হয় মনটা শান্তি পেল।মনে মনে কত বকা দেবো বলে ভেবে রেখেছিলাম বাট এখন কিছুই বলতে পারছি না। সব কথাই যেনো গলার কাছেই আটকে আছে।
উনি আবারও বললো,
“কি ব্যাপার ওপাশের মানুষটার কথা কি শুনতে পাবো না এজন্যই কি ফোন দিয়েছিলাম।যদি কথা বলতে ইচ্ছা না হয় তাহলে ফোন রেখে দিচ্ছি। ”
উনি কথাটা বলতেই আমি দ্রুত বলে উঠলাম,
“না। ”
শান হাসল।
“তাহলে কথা বলছো না কেন? ”
আমি অনেকটা অভিমান নিয়ে বললাম,
“কেন কথা বলবো ও বাড়ি থেকে চলে আসার পর তো কেউ একজন বেমালুম আমাকে ভুলে গেছে। অথচ আসার সময় কত বড় বড় কথা বলেছিল ওই কথা গুলো কোথায় গেল? ”
“সুইটহার্ট তোমাকে কি আমি ভুলতে পারি।তোমার কথা মনে পড়লেই ছুটে তোমার কাছে চলে আসতে হয় এজন্যই নিজেকে একটু কাজের মধ্যে ডুবিয়ে নিয়েছিলাম।তবে যেদিন থেকে তুমি আবারও পার্মানেন্টলি চলে আসবে সেদিন থেকে আবারও সব কাজ থেকে ছুটি নিয়ে নেবো।আর পুরোটা সময় শুধু তোমায় ভালোবাসব। ”
আমি লজ্জা পেয়ে চুপ হয়ে গেলাম। শান আবারও বললো,
“এতো রাত হয়ে গেছে এখনও ঘুমাওনি কেন? ”
“আপনিও তো ঘুমাননি। ”
“কি করব একজনকে ছাড়া তো আমার পুরো বিছানা, ঘর সব ফাঁকা ফাঁকা লাগছে কোনোভাবে ঘুমই আসছে না শুধু একটাবার তার কন্ঠটা শুনার জন্য মনটা আনচান করছিল এজন্যই জেগে আছি। কিন্তু সেও কি সেই একই কারণে জেগে আছে? ”
আমি চুপ করে রইলাম কোনো কথা মাথায় আসছে না।
শান আবারও বললো,
“কি হলো বলো চুপ থাকলে তো হবে না। ”
“সব কথা মুখে বলতে হবে কেন? আপনি আমার না বলা কথা গুলো কি বুঝেন না।
”
“বুঝি তো কিন্তু কথা গুলো তোমার মুখ থেকে শুনতেই বড্ড ইচ্ছা হয় আমার মনে অফুরন্ত শান্তি প্রাপ্তি হয় তাহলে ”
আমি আবার চুপ হয়ে গেলাম।
“এই বেখেয়ালি ভালেবাসি তো। ”
উনার এই ডাকটা শুনে আমার পুরো শরীরে কাপন ধরে গেল যেন কতবছর পর শুনলাম এই ডাকটা। আমার মুখে খিল ধরে গেল।
শান আবার বললো,
“কিছু তো বলো? ”
“খেয়েছেন আপনি?”
শানের ভিতর থেকে একটা দীর্ঘশ্বাস বেরিয়ে এলো,
“এটা বলতে বলেছিলাম বুঝি? ”
উনার কথা শুনে আমি ফিক করে হেসে দিলাম। উনি বললেন,
“হাসছো না আমাকে এভাবে জ্বালিয়ে খুব মজা লাগছে না একবার শুধু কাছে পাই সুদ সমেদ সব ফেরত দিয়ে দিবো মনে রেখ। ”
আমি না জানার ভান করে বললাম,
“আমার কি দোষ আপনিইতো কিছু বলতে বলেছিলেন আমি বললাম আমার দোষ কই। ”
উনি দৃঢ় কন্ঠে বললেন,
“আমি আমার কথার উত্তর চাই উত্তর দেও। ”
আমি আবারও চুপ হয়ে গেলাম।শানও চুপ হয়ে থাকল। বাহিরে সুন্দর ফুরফুরে বাতাস বইছে মনে কাপন ধরে যাচ্ছে। এই রাতের নিস্তব্ধতা যেন মনটাকে আরো বেশী উতলা করছে। দুটো মানুষের নিঃশ্বাসের শব্দ ছাড়া কিছুই শোনা যাচ্ছে না। নিশ্চুপ থেকেও যে হাজারও না বলা কথা বলে দিতে পারে তার প্রমাণ হয়তো আমরা দুজনই। মুখে কোনো কথা বলছিনা শুধু দুজন দুজনের কথা গুলো কান পেতে শুনছি আমাদের মনই বলে দিচ্ছে সব না বলা কথা।
হঠাৎ আমি মুখ ফুটে বলে উঠলাম,
“ভালোবাসি। ”
শান স্লো ভয়েসে বললো,
“আবার বলো। ”
“ভালোবাসি খুব বেশী ভালোবাসি মিষ্টার AAS।কখনো আপনাকে হারাতে চাই না।কখনো না। ”
এভাবেই আমাদের মাঝে টুকটাক কথা চলতে থাকলো। সময় কোথা থেকে কোথায় গিয়ে ঠেঁকলো সেটা আমাদের দুজনেরই খেয়াল নেই। উনি আমার কথা শুনছে আর আমি উনার কথা। আমরা যেন দুজন দুজনার মাঝেই হারিয়ে গেছিলাম যে আশেপাশের কোনো চিন্তাই মাথায় আসছিলো না। হঠাৎ দূর থেকে আজানের ধ্বনি ভেসে আসলো। বুঝতে অসুবিধা হলো না ফজরের আজান দিচ্ছে। চারপাশে পাখিদের কিচিরমিচির শব্দ শুনা যাচ্ছে।
আমি একটু হেসেই বললাম,
“যা রাত পাড় হয়ে গেল কিভাবে? এই কিছুটা সময়ই তো হলো কথা বলা শুরু করলাম। ”
শানও হেসে বললো,
“উফ তুমি পাশে না থাকলে সময় কাঁটতেই চায় না আর তোমার সাথে কথা বলা শুরু হতে এতো লম্বা সময় চোখের পলকেই কেঁটে গেল তাহলে কি বলবো সময়ও আমাদের দেখে হিংসা করে। ”
“হয়তো। কিন্তু এখন তো ফোন রাখতে হচ্ছে। নামাজ পড়তে হবে। যান আপনিও গিয়ে নামাজ পড়ে একটু গুমিয়ে নিন। ”
“হুম যেতো তো হবে কিন্তু ইচ্ছা তো করছে না আমার মনে হয় এভাবেই হাজার বছর পার করে দিতে পারবো। ”
আমি একটু লজ্জা মাখা কন্ঠে বললাম,
“রাখছি তাহলে? ”
“হুম তবে আগে এটা বলো আর কত রাত এভাবেই নির্ঘুম কাঁটবে তোমাকে ছাড়া। ”
“এইতো আর কিছুদিন তারপরে শুধু আপনি আমি আর থাকবে আমাদের দুজনের এক শহর ভালোবাসা। ”
“অপেক্ষা করতে খুব কষ্ট হয় জানো তো। ”
“জানি তবে ধৈর্য ধরুন ধৈর্যের ফল মিষ্টি হয়। ”
তারপর আমি ফোন কেঁটে দিলাম। ফোনটা কেঁটে নিজের বুকের মাঝে জড়িয়ে ধরলাম। আর কিছুটা সময় তারপরেই ওনাকে চোখের সামনে দেখতে পাবো ভাবতেই মুখে হাসির রেখা ফুঁটে উঠলো।
.#এক_শহর_ভালোবাসা
#পর্ব_৩৮
#সুরাইয়া_নাজিফা
নামাজ পড়ে ভোরের দিকেই ঘুমিয়েছি। শানের সাথে কথা বলে মনটা আরো ভালো হয়ে গেছিলো তাই বেশ জোরালো একটা ঘুম হলো। ঘুম যেন ভাঙতেই চাইছে না। স্মৃতি সকাল থেকে সোহাকে ডেকে যাচ্ছে কিন্তু কোথায় কি সোহা বারবারই নড়ে চড়ে আবার ঘুমিয়ে পড়ছে।এখন বাজে দুপুর একটা এখনো সোহার উঠার কোনো হেলদোল নেই। আম্মু সকাল থেকে বকাবকি করছে যাতে সোহাকে টেনে তুলি।সন্ধ্যার দিকে আংটি বদলের অনুষ্ঠান। তার আগে একটা পূর্বপ্রস্তুতির তো প্রয়োজন আছে। কিন্তু এই মেয়েকে দেখো পুরা দুনিয়াদারি ভুলে কত সুন্দর ঘুমিয়ে যাচ্ছে। আর ওর জন্য সকাল থেকে স্মৃতি বকা শুনে যাচ্ছে। এখন আম্মুকে কি করে বুঝাবে তার ঘুমকাতুরে মেয়ে যে কাল সারারাত নিজের বরের সাথে কথা বলে সকাল সকাল পড়ে পড়ে ঘুমাচ্ছে সেটা তো আর তারা জানে না। স্মৃতি সোহার হাত ধরে টেনে বসিয়ে বললো,
“এই সোহা উঠ না দেখ কত বেলা হয়ে গেছে। কিছু খেয়ে নে রেডি হতে হবে তো। ”
আমি আবারও বিছানায় শুয়ে পড়লাম,
“উফ আপু যা না কাল সারারাত ঘুৃমাই নি এখন একটু ঘুমাতে দে। ”
“উঠ আর ঘুমাতে হবে না। আজকে তোর এ্যানগেইজমেন্ট না। ”
আমি ঘুমের মধ্যেই বললাম,
“দুর কিসের এ্যানগেইজমেন্ট। আগে ঘুম তারপর বাকিসব কিছু। ”
স্মৃতি অবাক হয়ে বললো,
“বাহ এখন নিজের এ্যানগেইজমেন্টের কথাও ভুলে গেছে।সারারাত কে বলেছে তোকে জেগে থাকতে। ”
কিন্তু কাকে কি বলছে যাকে বলছে সে আবারও ঘুমিয়ে গেছে। স্মৃতি মাথায় হাত দিয়ে বসে রইল তখনই মাথায় একটা প্লান আসলো।
স্মৃতি চিৎকার করে বললো,
“সোহা দেখ কে এসেছে। আরে শান ভাইয়া আপনি! কেমন আছেন? এতো সকাল সকাল আমাদের বাসায়?”
শান নামটা আমার কানের মধ্যে প্রতিধ্বনিত হতেই আমি দ্রুত শোয়া থেকে উঠে বসলাম। আর চারদিকে চোখ ঘুরিয়ে শানকে খুঁজতে লাগলাম। তারপর আপুর দিকে তাকিয়ে বললাম,
“কই শান? ”
আমাকে এভাবে প্রশ্ন করতে দেখে আপু খিলখিলিয়ে হেসে উঠলো। আমি ভ্রু কুচকে বললাম,
“কি হলো হাসছিস কেন তুই। ”
স্মৃতি হাসতে হাসতেই বললো,
“তোর উপর শান ভাইয়া ভালোই জাদু করেছে বলা যায়। নাহলে শান বলতে না বলতে এতক্ষনে যে মানুষটা ঘুম থেকে উঠছিলো না সে এক পলকেই উঠে যায়। ”
আপু আবারও হাসতে লাগলো। আমি ওর কথার আগা মাথা বুঝতে পারলাম না। আমি কপাল কুচকে আবারও বললাম,
“সকাল সকাল মজা করছিস নাকি তুই আমার সাথে কি হয়েছে সরাসরি বলতে পারছিস না। শান কি আসে নি? ”
আপু অবাক হয়ে বললো,
“তোর কি মনে হয় এ্যানগেইজমেন্টের দিন নতুন জামাই সকাল সকাল শ্বশুরবাড়ীতে আসবে? ”
আমি চোখ ছোট ছোট করে বললাম,
“তাহলে তুই বললি কেন?”
আপু ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে বললো,
“আমি তো তোকে উঠানোর জন্য বলেছি। আমার ট্রিকসটা কাজে লাগছে তাতেই আমি খুশি। ”
আমি রেগে আমার পাশে থাকা বালিশটা আপুর দিকে ছুড়ে মারলাম। কিন্তু ততক্ষনে আপু কথাটা বলেই রুম থেকে বেরিয়ে গেছিলো। কি ফাজিল মেয়ে ভাবা যায়। আমার কত সুন্দর ঘুমটা নষ্ট করে দিলো।
আমি বিছানা ছেড়ে আস্তে আস্তে উঠে বসলাম। তারপর আর ফোনটা হাতে নেইনি।সোজা ফ্রেস হয়ে বিছানায় এসে বসলাম তখনই আম্মু হন্তদন্ত হয়ে ছুটে এলো এসেই আমার দিকে উনার ফোনটা এগিয়ে দিলো।
আমি খানিকটা অবাক হয়ে বললাম,
“তোমার ফোন দিয়ে আমি কি করব?”
“কথা বলবি। ”
“কার সাথে? ”
“শানের সাথে। ”
“মানে?”
“কথা বল তাহলেই বুঝবি। ”
আম্মু আমার হাতে ফোনটা ধরিয়ে দিয়ে চলে গেল। আমি ফোনটা কানে দিয়ে বললাম,
“হ্যাঁলো। ”
তখনই ঐ পাশ থেকে কেউ রাগান্বিত হয়ে বলে উঠল,
“এই মেয়ে সমস্যা কি তোমার? নিজের ফোন কোথায়? কোথায় ফোন? ”
এমন জারি শুনে প্রথমে ভয়ে কান থেকে ফোনটা নামিয়ে নিলাম। তারপর আমতা আমতা করে বললাম,
“ফোন তো আমার কাছে নেই। ”
উনি ঝাঁঝালো কন্ঠে বলে উঠলেন,
“বাহ তোমার ফোন তোমার কাছে নেই। কি সুন্দর কথা। ফোন তোমার কাছে নেই মানে কি? সকাল থেকে ফোনের উপর ফোন দিয়ে যাচ্ছি অথচ ফোন তোলার কোনো খবরই নাই।”
উনার কথা শুনে আমি মাথায় হাত দিলাম। হায় রে কাল রাতে কথা বলে ফোনে চার্জ শেষ হয়ে যাওয়ার পরে চার্জে দিয়ে ঘুমিয়েছিলাম। তারপর তো আর ফোন হাতেই নেই নি।আমি দ্রুত ফোনের কাছে গেলাম ফোন হাতে নিয়ে দেখলাম সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত প্রায় একশটা কল পঞ্চাশটা মেসেজ উঠে আছে। আমার চোখ কপালে উঠার উপক্রম।
শান আবারও গম্ভীর কন্ঠে বললো,
“কি হলো কথা বলছো না কেন? ”
আমি আমতা আমতা করে বললাম,
“ঐ ফোন চার্জে দিয়েছিলাম তারপর আর হাতে নেইনি। ”
“আহা কি সুন্দর কথা। তোমার না আমাকে গুড মর্নিং উইশ করার কথা ছিল।এখন দুপুর হয়ে গেছে। কাল যাওয়ার সময় কি কি বলেছি হাতের বাহিরে যাওয়ার সাথে সাথেই সব ভুলে গেছো তুমি? ”
আমি চুপ করে রইলাম। বাবা যে রেগে আছে। কি বলবো বুঝতেছি না।
শান আবারও ধমক দিয়ে বললো,
“কি হলো কথা বলছো না কেন এখন? ”
“আপনি তো চান্সই দিচ্ছেন না আমাকে বলার এতো রাগ করলে হবে?সকালেই তো কথা হলো তাই ভাবলাম…। ”
“তাই ভাবলে পড়ে পড়ে ঘুমানো যাক তাই না। এখানে আমি ঘুমাতে পারছি না আর তুমি বেশ আরামেই ঘুৃমাচ্ছো মনে হচ্ছে। ”
আমি চুপ করে রইলাম। উফ আমার ঘুমটাও না এতো গভীর কেনো বুঝি না। শান বললো,
“ফোন কাঁটো। ”
আমি কান্না কান্না ভাবে বললাম,
“স্যরি স্যরি আর এমনটা হবে না প্লিজ ফোন কাঁটবেন না। ”
ওপাশ থেকে কোনো কথা আসছে না। আমি দুই তিনবার” হ্যাঁলো হ্যাঁলো ” বললাম বাট নো রেসপন্স। শান কোনো কথা না বলে ফোনটা কেঁটে দিলো।আমার চোখ থেকে পানি গড়িয়ে পড়ল।একটা ভুল হয়ে গেছে তাই বলে এতো রাগ করার কি আছে? তখনই আমার ফোনটা বেজে উঠলো। ভিডিও কল দিয়েছে শান। আমার মুখে হাসি ফুটে উঠলো। আমি দ্রুত ফোন রিসিভড করলাম। শানের মুখটা চোখের সামনে ভেসে আসলো।
আমি অভিমান নিয়ে বললাম,
“আপনি না অনেক খারাপ সবসময় এভাবে আমাকে কষ্ট দেন। ”
“আপনিও কিছু কম যান কোথায় ম্যাডাম? ”
আমি মুখ ভেঙালাম। শান হাসল
“আচ্ছা একটা মানুষকে সব রূপেই এতো সুন্দর লাগে কি করে। ”
আমি গাল ফুলিয়ে বললাম,
“জানি না। ”
শান আবারও হাসল। আমি রেগে বললাম,
“আপনাকে বলেছিনা একদিন আমার সামনে এভাবে হাসবেন না।? ”
“কেন?”
“কারণ আমি এখন আপনার উপর রেগে আছি কিন্তু আপনার হাসি দেখলে আমার রাগ কমে যাবে যেটা আমি একদমই চাই না তাই হাসবেন না। ”
শান আমার কথা শুনে আরো জোরে হেসে উঠলো,
“তুমি না আসলেই একটা পাগলি। ”
“ভালো হইছে। আম্মুর ফোনে ফোন দেওয়ার কি দরকার ছিলো আম্মু কি ভাবল। ”
“কি আর ভাববে মনি তো এটা ভেবে খুশি হবে যে তার মেয়েকে তার জামাই কতটা ভালোবাসে যে এক সেকেন্ডও চোখের আড়াল করতে চাইছে না। ”
“হুম এতক্ষন রাগ দেখিয়ে এখন আসছে ভালোবাসা দেখাতে। ”
“ভালোবাসা তো সবসময় দেখাতে চাই কিন্তু তুমি কিছু কাজ এমন করো যে রাগ না দেখিয়ে পারি না। ”
তখনই আম্মু ট্রে ভর্তি খাবার নিয়ে ঘরে ঢুকল। আমার সামনে রেখে বললো,
“সকাল থেকে না খেয়ে আছিস খেয়ে নে তারপর আমার রুমে আসিস। ”
কথাটা বলে আম্মু চলে গেল। আমার চোখ বড় বড় হয়ে গেল।ইশ এখনই কেন আম্মুকে খাবার নিয়ে ঘরে ঢুকতে হলো। এখন কি হবে?আমি আস্তে আস্তে মাথাটা ঘুরিয়ে সামনের মানুষটার দিকে তাকালাম। চোখে মুখে স্পষ্ট রাগ ফুটে আছে। আমি একটু হেসে বললাম,
“ওই খেতে বসেছিলাম তখনই আপনি ফোন করেছেন তাই খাওয়া হয়নি। ”
“কোন সময়ের খাবার খাচ্ছো এটা? বলেছিলাম ঠিক মতো খাওয়া দাওয়া করতে? সকাল থেকে না খেয়ে আছো তুমি? ”
আমি নিজের ঠোঁট কামড়ে চোখ মুখ কুচকে বললাম,
“স্যরি। ”
“তোমার স্যরি তোমার কাছেই রাখো। এখন তো দেখছি তোমার সাথে ভালো করে কথা বলাই যাবে না।অলওয়েজ ধমকের উপর থাকবে তাহলেই সোজা থাকো। ”
আমি মাথানিচু করে রইলাম।শান একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললো,
“তোমার ভাগ্য ভালো আমি তোমার সামনে নেই। দ্রুত খাওয়া শেষ করো পরে কথা হবে রাখছি। ”
আমি মাথা নাড়ালাম শুধু। উনি ফোনটা কেঁটে দিলেন। আমি বুকে হাত দিয়ে লম্বা একটা শ্বাস নিলাম। মানুষ সবসময় এতটা রাগ নিয়ে থাকে কিভাবে কে জানে?
★
★
আমি খাওয়া শেষ করে প্লেট গুলো রান্নাঘরে রেখে আম্মুর কাছে গেলাম। আম্মুর সাথে স্মৃতি আপুও বসে আছে সামনে অনেক গুলো শাড়ী রাখা আছে।আমাকে আপু বললো,
“এতো সময় লাগে আসতে। সেই কখন থেকে অপেক্ষা করছি। ”
আমি বেডে বসতে বসতে বললাম,
“বাবা বিয়ে করার কি শখ আর যেন তরই সইছে না। ”
আপু রেগে আমার দিকে তাকালো। আমি হেসে আপুর গাল টেনে ইনোসেন্ট লুক নিয়ে বললাম,
“আহা বাচ্চা রাগ করে না আমরা আমরাই তো। ”
কথাটা বলতেই আম্মু সহ আপু হেসে দিল।
আম্মু বললো,
“আচ্ছা শাড়ী গুলোর মধ্যে দেখতো কোনটা পছন্দ যার যেটা ভালো লাগে পড়ে নে।”
আমি কিছুক্ষন শাড়ী গুলোর দিকে তাকিয়ে থেকে চোখ ছোট ছোট করে আম্মুকে বললাম,
“সবগুলো শাড়ী নিয়ে যাই? ”
“যাবি জিজ্ঞেস করার কি আছে। ”
তারপর আমি আর আপু মিলে সবগুলো শাড়ী রুমে নিয়ে আসলাম।আপু বেডে বসতে বসসে আমার দিকে তাকিয়ে বললো,
“আরশকে একটা কল দিয়ে জিজ্ঞেস করি কোনটা পড়ব? ”
আমি ফোনে শানের নম্বর কল লিস্ট থেকে বের করতে করতে বললাম,
“করবি কিন্তু দূরে গিয়ে নাহলে আমার ডিসটার্ভ হবে। ”
আপু বসা থেকে হুট করে দাঁড়িয়ে অবাক হয়ে বললো,
“তুইও ভাইয়াকে ফোন করবি তাহলে আমি শাড়ী গুলো আরশকে দেখাবো কি করে?”
“আমার এই লাল, নীল, কালো শাড়ী গুলো পছন্দ হয়েছে বাট ডিসাইড করতে পারছি না কোনটা পড়ব তাই এই তিনটা নিয়ে শানকে জিজ্ঞেস করব। তাই বাকি যেগুলো আছে তুই নিতে পারিস। ”
“কিন্তু এগুলোর মধ্যে যদি একটাও পছন্দ নাহয় তখন? ”
“তখনেরটা তখন দেখা যাবে। ”
“না আগে আমি জিজ্ঞেস করি তারপর তুই।”
আমি আপুর দিকে তাকিয়ে কপাল কুচকে বললাম,
“ছি স্মৃতি তুমি আগের থেকে অনেক বেয়াদব হয়ে গেছো বড়দের সম্মান দিতে ভুলে গেছো। আমি তোমার বড় ঝাঁ হই তাই আমি আগে জিজ্ঞেস করব তারপর তুৃমি। ”
আপু কোমড়ে হাত দিয়ে বললো,
“কি ফাজিল মেয়ে এখন থেকেই সম্পর্কের এডভান্টেজ নেওয়া শুরু হয়ে গেছে ভাবা যায় এগুলা। ”
আমি খিলখিলিয়ে হেসে উঠলাম। আপু আমার জন্য তিনটা শাড়ী রেখে বাকি গুলা নিয়ে চলে গেল। আমি শানকে ভিডিও কল করলাম,
“কি ব্যাপার ম্যাডাম এত তাড়াতাড়ি আবার কল করলে বেশী বেশী মিস করছো মনে হয়।”
“জ্বী না স্যার আমি প্রেম করতে ফোন দেইনি একটা ইমপরটেন্ট কাজের জন্য ফোন দিয়েছি। ”
শান হালকা হাসল,
“ওহ তাই তা বলো কি তোমার ইমপরটেন্ট কাজ? ”
আমি ফোনটা সামনে সেট করে রেখে শাড়ী তিনটা সামনে এনে বললাম,
“দেখুন তো এই তিনটা থেকে কোনটা পড়ব আজকে সন্ধ্যায়। ”
শান কিছুক্ষন শাড়ী তিনটার দিকে তাকিয়ে থেকে বললো,
“কি বলবো বলো সুইটহার্ট তুমি মানুষটাই এমন যেটা পড়বে মানিয়ে যাবে। তাই যা খুশি পড়তে পারো তবে চাইলে কিছু নাও পড়তে পারো তবে সেটা শুধু আমার সামনে। ”
উনার কথা শুনে আমি লজ্জা পেয়ে বললাম,
“ছি ছি আপনার লজ্জা নেই নাকি কখন কি বলতে হয় জানেন না অসভ্য লোক একটা। ”
“লজ্জা নারির ভূষণ তাই ওটা মেয়েদেরই মানায় যেমন এখন তুমি পাচ্ছো। এছাড়াও তোমাকে আমি আগেই বলেছি বউয়ের কাছে লজ্জা পেলে সবসময় লোকশানই হয়। জীবনের অনেক সুন্দর মূহূর্ত উপভোগ করা যায় না আর যেটা আমি হারাতে চাই না। ”
আমি লজ্জায় ফোনের দিকে তাকাতে পারছিনা। চোখ নিচে নামিয়ে বললাম,
“আমারই ভুল হয়েছে কেন যে ফোন করেছিলাম। ”
কথাটা বলেই কেঁটে দিলাম ফোনটা উনার কথা শোনার আর প্রয়োজন মনে করিনি। অসভ্য সবসময় আমাকে আমাকে লজ্জা ফেলার জন্য নতুন নতুন রাস্তা খুঁজে বেড়ায়। তখনই আমার ফোনের মেসেজ টোনটা বেজে উঠলো,
“কালো শাড়ীটা পড়ো। কালো শাড়ীতে একদম তোমায় অপ্সরা লাগে মাই কুইন।”
★
★
সন্ধ্যা হয়ে গেছে।সারাদিন যেই বাড়িটা খালি খালি লাগছিলো এখন সেখানে একটু পা রাখার মতোও জায়গায় নেই। আত্মীয়-স্বজন পাড়া প্রতিবেশী দিয়ে জমজমাট হয়ে গেছে। কিছুক্ষন আগেই আমার সাজ কমপ্লিট হয়েছে। আমাকে আর আপুকে সাজিয়েছে আমাদের কাজিন সিস্টাররা। আমি যেভাবে যেভাবে বলেছি ওরা সেভাবে সেভাবে সাজিয়েছে। একদম শানের মনের মতো করে। গায়ের রং ফর্সা হওয়ার কারণে কালো শাড়ীটা শরীরে আরো ফুটে উঠেছে। নাকে ছোট একটা ডায়মন্ড ব্লাক স্টনের নোজ পিন,এয়ারিং, হাত ভর্তি চুড়ি, চোখে গাড়ো করে কাজল, মুখে হালকা মেকাপ, ঘন কালো চুল গুলো পুরো পিঠে ছড়িয়ে ছিটিয়ে খুলে রাখা আছে একদম শান যেভাবে সাজিয়েছিল সেভাবেই। তখনই কাজিন একটা বলে উঠলো,
“বাহ সোহা তোকে তো খুব সুন্দর লাগছে তোর বর তো চোখ ফেরাতেই পারবে না তোর থেকে। ”
আপু কথার রেশ টেনে বললো,
“চোখ ফেরাবে কি ভাইয়া তো আগে থেকেই ওর উপর ফিদা। আজ তো বেচারা হার্টএট্যাক না করে বসে। ”
ওদের কথা শুনে আমি লজ্জা পেয়ে গেলাম,
“আহা যেভাবে বলছিস যেনো নিজে কিছু কম আছিস। তোকেও কিন্তু কম সুন্দর লাগছে না।বেচারা আরশ ভাইয়া তো অন্ধই হয়ে যাবে তোর রূপের ঝলকে। ”
“তারপরেও আমার থেকে তোকে কিন্তু একটু বেশীই সুন্দর লাগছে বনু। সেটা তুই মানিস আর না মানিস তাই একটু সামলে থাকিস ভাইয়ার থেকে। ”
আমি বিরক্ত হয়ে বললাম,
“উফ কি শুরু করেছিস তোরা যা তো নিচে যা মেহমানদারি কর আম্মুর একটু হেল্প হয়। ”
“কেন কেন বরের সাথে কথা বলবা বুঝি এজন্যই আমাদের তাড়ানোর জন্য পাগল হয়ে গেছ। ”
“দূর কি যে বলিস তোরা। যা খুশি বল আমি কিছু বলবো না। কিছু বললেও দোষ না বললেও দোষ। ”
আমি ওদের থেকে মুখ ফিরিয়ে নিলাম। সাথে সাথে বাকিগুলাও খিলখিল শব্দ করে হেসে দিল।
★
★
শানরা কিছুক্ষন আগেই এসেছে। এসে থেকে শুধু মনটা ব্যাকুল হয়ে আছে প্রেয়সীকে একবার দেখবে বলে কিন্তু কোথায় কি এখনো নিচে নামার কোনো নামই নাই। আরশ শানের পাশ থেকে বলে উঠলো,
“আরে ভাইয়া এত উতলা হলে হবে দুই মিনিট একটু শান্ত হয়ে বসতে পারছিস না।আমারও মন আনচান করছে স্মৃতিকে দেখার জন্য বাট আমি তো ধৈর্য ধরে আছি তাই না। তুই যেভাবে চারদিকে উঁকি ঝুঁকি মারছিস সবাইতো ভাববে তুই বিয়ে না চুরি করতে এসেছিস। ”
আরশের কথা শুনে শান রাগি দৃষ্টি নিয়ে আরশের দিকে তাকালো। আরশ দাঁত কেঁলিয়ে বললো,
“আই অ্যাম জাস্ট জোকিং। তুই চাইলে তাকাতেই পারিস তোর শ্বশুরবাড়ী বলে কথা। আমিও দেখি স্মৃতি কোথায়? ”
কথা বলেই আরশ এদিক ওদিক তাকাতে লাগলো।শান ফিক করে হেসে দিলো।আরশ অবাক হয়ে তাকালো ও বুঝতে পারছে না ও এমন কি বললো যে শান হাসছে। শান নিজের হাসি থামিয়ে আরশের কাঁধে হাত রেখে বললো,
“এই প্রথম তুই মুখ ফসকে সত্যি একটা কথা বলে ফেলেছিস বুঝলি তো। ”
আরশ ভ্যাবলার মতো তাকিয়ে আছে। শান বললো,
“আসলেই আমি এই বাড়ির সবচেয়ে দামি জিনিসটা চুরি করতে এসেছি এই বাড়ির সবার চোখের মনি বাড়ির ছোট মেয়েকে এটা কি বড় বিষয় নয়। ”
আরশ অবাক হয়ে তাকিয়ে রইল
“আসলেই তো এভাবে তো কখনো ভেবে দেখিনি। ”
শান হাসল। তখনই ইমতিয়াজ সাহেব বললেন,
“তাহলে স্মৃতি সোহাকে নিয়ে আসা হোক। ”
“অবশ্যই। ” বাবা সম্মতি দিলেন
মা এসে খবর দিতেই আমাকে আর আপুকে আমাদের কাজিনরা নিচে নিয়ে আসার জন্য উঠে দাঁড়ালো। আমার মধ্য একটু খুশি খুশি অনুভব লাগছে দীর্ঘ চব্বিশ ঘন্টা পর উনাকে চোখের সামনে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখবো ভাবলেই শিহরিত হচ্ছি। আমি গুটি গুটি পায়ে এগিয়ে গেলাম আমার ভবিষ্যতের দিকে।
সিড়ি দিয়ে দুই রাজকন্যা নামছে সবার চোখে তাক লেগে গেছে কেউই কারো চেয়ে কম নয়। প্রথমে স্মৃতি নামছে স্মৃতিকে দেখে আরশের চোখের পলকই পড়ছে না।মেরুন রঙের শাড়ীর সাথে মেচিং সাজগোজ কোনো হুরপরীর চেয়ে কম লাগছে না। ড্যাবড্যাবে নজরে তাকিয়ে আছে।আরশ নিজের বুকের বামপাশে হাত রাখল। আরশের অবস্থা দেখে স্মৃতি মুচকি হেসে চোখ সরিয়ে নিলো। শান শুধু ছটফট করছে সোহাকে দেখবে বলে। স্মৃতি একটু সরতেই সোহার লজ্জা রাঙা মুখটা শানের সামনে ভেসে উঠলো। মনে হচ্ছে কত যুগ পর এই মুখটা দেখলো। শান হা করে তাকিয়ে আছে।
আমি বেশ বুঝতে পারছি শান আমার দিকেই তাকিয়ে আছে। বুকের মধ্যে হৃদপিন্ডের সংকোচন প্রসারণের মাত্রাটা যেন একটু বেশীই বেড়ে গেছে। আমি চোখ তুলে উনার চোখের দিকে তাকাতেই সাহস হচ্ছে না তাই মাটির দিকে তাকিয়ে রইলাম।
হঠাৎ ভূমিকা নিজের দুই দেবরের মাঝে দাঁড়িয়ে বললো,
“আরে এমন ড্যাবড্যাবে নজরে দেখো না তোমরা আমার দেবরানী দুইটার নজর লেগে যাবে। ”
ভূমিকার কথা শুনে আরশ আর শান দুজনেই মাথা নামিয়ে নিলো। আপু আর আমাকে এনে আরশ আর শানের পাশে দাঁড় করিয়ে দিলো।পুষ্প আমাকে দেখে দৌঁড়ে আমার কাছে চলে এলো।
“মিষ্টি তোমাকে পুরো কুইনের মতো লাগছে দেখতে। ”
আমি পুষ্পর গালে একটা চুমু দিয়ে বললাম,
“আর তোমাকে পুরো প্রিন্সেসের মতো। ”
আমরা সবাই পাশা পাশি বসলাম। তখনই শান আমার কানে কানে বললো,
“এভাবে তিলে তিলে না মেরে একবারে তো মেরে দিতে পারো অন্তত প্রতিদিন এতো ছটফট তো করতে হবে না। ”
আমি নিচের দিকেই তাকিয়ে রইলাম মানুষটার মুখে কোনো কালেই কিছু আটকায় না। উনি বুঝতে পারে না উনার এসব কথা শুনলে আমার দম বন্ধ হয়ে আসে।
কিছুক্ষন পর শ্বশুরমশাই বললো,
“তাহলে রিং সিরেমনি শুরু করা হোক?”
আমার বাবা বললো,
“শুরু করো।
শ্বশুরমশাই বললেন,
“যেহেতু শান বড় তাই শান আর সোহার আংটি বদল আগে হবে তারপর স্মৃতি আর আরশের কি বলিস? ”
“হুম। ”
তারপর দুইটা থালায় গোলাপের পাপড়ির মধ্যে সাজিয়ে দুটো আংটি নিয়ে আসা হলো। সেখান থেকে একটা আংটি আমি তুলে নিলাম আরেকটা শান। ভূমিকা আপু বললো,
“আগে সোহা পড়াও।আর শান হাত এগিয়ে দেও। ”
শান হাত এগিয়ে দিলো। আমি আস্তে আস্তে হাতটা এগিয়ে নিতে লাগলাম। আমার হাত ঠকঠক করে কাঁপছে। সাথে হৃদস্পন্ধন তো আছে। কেউ কারো থেকে হারতে নারাজ। এদিকে আমার অবস্থা নাজেহাল। ভূমিকা আপু হেসে বললো,
“বাহ সোহা তোমার অবস্থা দেখে তো এমন ফিলিং হচ্ছে যে তুমি শানকে চিনোই না।আজ প্রথম দেখছো। এতো ভয় পাচ্ছো কেন? ”
ভূমিকা আপুর কথায় আমি লজ্জায় পারিনা মাটির নিচে ঢুকে যাই।সবাই মিটিমিটি হাসছিলো। আমি দ্রুত শানের হাতে আংটিটা পড়িয়ে দিয়ে সরে আসলাম। তারপর শানের হাতে আমার হাত পড়তেই আমি কেঁপে উঠলাম। শান আমার দিকে একদৃষ্টিতে তাকিয়ে আংটিটা পড়িয়ে দিলো। এর মধ্যে আমি ভুলেও একবারও শানের দিলে তাকাইনি। তাকাইনি বললে ভুল হবে সরাসরি তাকাইনি।
আমাদের পরেই স্মৃতি আপু আর আরশ ভাইয়ার পালা। ওদের আংটিটা হাতে দিতেই ওরা দ্রুত আংটি বদল করে নিলো। মানে আমি আর শান যতটুকু সময় নিয়েছি ওরা তার অর্ধেকও নেয়নি। সাম্য ভাইয়া আরশ ভাইয়ার কাঁধে হাত রেখে বললো,
“আরে আস্তে ভাই আস্তে। এতো দ্রুত গেলে হবে। সবাই তাকিয়ে আছে এটলিস্ট একটু তো লজ্জা পাওয়া উচিত। ”
এবার আর কেউ মিটিমিটি না খিলখিলিয়ে হেসে উঠলো। বুঝাই যাচ্ছে আমাদের বলির পাঠা বানিয়ে সবাই মজাই পাচ্ছে বেশ। সবাই সবার মতো বিজি হয়ে গেল কথা বার্তায়।
শান আমার কানে কানে বললো,
“কেউ তো আমার দিকে তাকাচ্ছেই না আজকে দেখতে কি আমাকে এতটাই খারাপ লাগছে হুম? ”
আমি মাথানিচু করেই বললাম,
“ঐদিকে দেখুন মেয়ে গুলো সব আপনার দিকেই তাকিয়ে আছে তাদেরই জিজ্ঞেস করুন বলে দেবে। ”
শান একটু মজা করে বললো,
“বাহ ভালো আইডিয়া তো এটা তো আগে মাথা আসেনি। এখন ঘরওয়ালি যদি না দেখে তাহলে বাহারওয়ালির দিকে তো তাকাতেই হবে। ”
বলে উঠতে নিবে তখনই আমি শক্ত করে উনার হাত ধরে বসলাম আর উনার চোখের দিকে রাগি দৃষ্টিতে তাকিয়ে বললাম,
“একবার ওদিকে পা তো বারিয়ে দেখেন পা একদম ভেঙে রেখে দেবো হুম শখ কতো? ”
শান আমার কানের কাছে ফিসফিস করে বললো,
“শখ তো জীবনে অনেক আছে তোমাকে ঘিরে কিন্তু তুমি পূরণ করতে দিচ্ছো কোথায় সুইটহার্ট। ”
কথাটা বলেই উনি আমাকে চোখ মারলেন।আমার চোখ বড় বড় হয়ে গেল। আমি দ্রুত উনার দিক থেকে চোখ সরিয়ে উনার পাশ থেকে উঠে চলে গেলাম
.
.
চলবে
.
চলবে