এক শহর ভালোবাসা পর্ব ৩৯+৪০

#এক_শহর_ভালোবাসা
#পর্ব_৩৯
#সুরাইয়া_নাজিফা

আমি সব মেয়েদের সাথে গিয়ে বসেছি। আমি উঠে যাওয়াতে শান কিছুক্ষন আমার দিকে তাকিয়ে ছিল তারপর হুট করে উঠে বাড়ির বাহিরে চলে গেল। আমি একটু অবাক হলাম” আশ্চর্য রাগ করে চলে যাচ্ছে নাকি?”

আমি উঠতে যাবো তখনই কাজিনরা আমাকে আটকে ধরল। আমি আবার চুপচাপ বসে রইলাম। কিন্তু মনের ভিতর অস্থির অস্থির লাগছিলো শানের জন্য।তাই অন্যমনষ্ক হয়ে এদিক ওদিক দেখছিলাম শানকে খুঁজছিলাম হয়তো যদি আসে।

কিছুক্ষন পর পুষ্প কোথায় থেকে দৌঁড়ে এসে বললো,
“মিষ্টি চলো আমার সাথে। ”
আমি অবাক হয়ে বললাম,
“কোথায়? ”
“উফ চলোই না দেখতে পাবে। ”

বলেই পুষ্প আমার হাত ধরে টানতে লাগলো। মানে এতো রাতে কোথায় যাবে এই মেয়ে আবার,সেটাই বুঝতে পারছিলাম না।আমি হেসে বললাম,
“না সোনা এতরাতে কোথাও যেতে হবে না। এখন তুমি এখানে বসো আর আমাদের সাথে গল্প করো। ”
পুষ্প বায়না ধরে বললো,
“না না তুমি যাবে আর এখনি তোমাকে যেতে হবে। ”
তখনই আপু পাশ থেকে ধমক দিয়ে বলে উঠলো,
“ও যখন যেতে চাইছে যা না নিয়ে। বাড়ির ভিতরেই তো থাকবি। ”

পুষ্পর টানা হেচড়া আর আপুর ধমক শুনে উঠতে বাদ্ধ হলাম। পুষ্প আমার হাত ধরে বাড়ির বাহিরে নিয়ে আসলো। চারদিকে লাল নীল আলোতে আলোকিত হয়ে আছে চারপাশ। বাহিরে চারদিকে দেখতেও ভালো লাগছে। কিন্তু মনটা খারাপ হয়ে গেল তখন যখন বাহিরে বেরিয়েও শানকে দেখতে পেলাম না। তাহলে কি তখন উনার পাশ থেকে উঠে গেলাম এজন্য উনি রাগ করে চলে গেল? অদ্ভুত এইটুকু বিষয়েও কারো রাগ করতে হয়।

পুষ্প আমাকে টেনে বাড়ির পিছনের দিকে নিয়ে এলো। এখানে তেমন একটা আলো নেই,অন্ধকারাচ্ছন্ন। বাড়ির পেছনটা একটু গাছপালা দিয়ে ভর্তি তাই একটু জঙ্গলের মতো লাগে রাতে তবে দিনে ভালোই লাগে। দিনদিন শহরে গাছপালা যে হারে কাঁটা হচ্ছে তাতে মনে হয় না কয়েক বছর পর গাছপালার দেখা পাওয়া যাবে।গাছপালা প্রায় বিলুপ্ত হওয়ার উপক্রম। তাই বাবা আমাদের বাড়ির পিছনেই অনেক ধরনের গাছ লাগিয়ে রেখেছেন। রাতে এদিকে আসতে একটু ভয় লাগে আমার তাই আসি না।মূল কারণ হলো এখানে একটা তুলা গাছ আছে। আর আমি শুনেছি তুলা গাছে নাকি রাত হলে ভুত থাকে এটা ভাবতেই শরীরের পশম গুলো দাঁড়িয়ে গেল। কিন্তু হঠাৎ পুষ্প এখানে নিয়ে আসলো কেন বুঝলাম না।

“মিষ্টি তুমি থাকো আমি একটু পর আসছি। ”

কথাটা বলেই পুষ্প দৌঁড়ে চলে গেল। আরে আমাকে একা ফেলে চলে গেলো মেয়েটা। চারদিক থেকে ঝিঁঝিঁ পোকার ডাকের শব্দ আসছে। হিম শীতল বাতাস এসে গায়ে লাগছে আর ভয়ের মাত্রাটা দ্বিগুন বাড়ছে।আমি নিজের নখ কাঁটতে কাঁটতে চারদিকে একবার তাকিয়ে দেখলাম।মনে হচ্ছে কিছু আমার দিকে এগিয়ে আসছে গোল গোল চোখে তাকিয়ে আছে। আমি চোখ বন্ধ করে নিলাম। অসম্ভব এখানে আমি একা আরো কিছুক্ষন দাঁড়ালে আমি নির্ঘাত হার্টএট্যাক করবো। এখনই আমার পা কাঁপতে শুরু করেছে।

আমি কাঁপা কাঁপা কন্ঠে বললাম,
“সোনা আমাকে ফেলে কই যাচ্ছো দাঁড়াও আমিও যাবো। ”

কথাটা বলেই আমি পা বাড়াতে নেবো তখনই কারো শীতল হাত আমার হাত স্পর্শ করতেই আমার হৃদস্পন্ধন বন্ধ হয়ে যাওয়ার উপক্রম।আমার আবার মনে হলো ভুত নয়তো। আমি কিছু বুঝার আগেই আমাকে টেনে ঝোপঝাড়ের আড়ালে নিয়ে গেল। ভয়ে আমি চোখ বন্ধ করে চিৎকার করতে শুরু করলাম,
“ভুত ভুত বাঁচাও কেউ আমাকে ভু…।”

আর কিছু বলার আগে সে আমার মুখ চেপে ধরল আর ধমক দিয়ে বললো,
“ইউ স্টুপিড জাস্ট শাট ইউর মাউথ। এখানে ভুত কোথায় দেখলে তুমি?এভাবে চেঁচাচ্ছো কেন এখনি সবাই চলে আসবে। ”

হঠাৎ কন্ঠটা শুনে আমার কেমন জানি চেনা চেনা লাগলো। আমি মনে মনে দোয়া দুরদ পড়তে লাগলাম আর আওড়াতে লাগলাম, “আল্লাহ প্লিজ এবারের মতো বাঁচিয়ে নেও ভুত যেন নাহয়। ”

এসব ভাবতে ভাবতে আস্তে আস্তে প্রথমে নিজের একচোখ খুলে সামনের মানুষটাকে দেখতে চেষ্টা করলাম।একটু দেখে আঁতকে উঠলাম। শান? আমার সামনে শান দাঁড়িয়ে আছে। আমি দ্রুত দুইচোখ খুলে নিলাম। আর ভিত কন্ঠে বললাম,
“আপনি সত্যি শান তো?”

শান অবাক হয়ে বললো,
“মানে? ”
“মানে কোনো ভুত নন তো যে আমার বরের ছদ্মবেশ নিয়ে এসেছেন। ”

শান রেগে দাঁতে দাঁত চেপে বললো,
“আমি স্টুপিড দেখেছি কিন্তু তোমার মতো এক পিসও দেখিনি। এখানে ভুত আসবে কোথা থেকে ছাগল আমিই দাঁড়িয়ে আছি তোমার সামনে। ”

উনার এই কর্কশ কন্ঠ শুনে তো এইবার আমি হান্ডেড পার্সেন্ট শিউর এটা আমার মিস্টার এ্যারোগেন্ট বর। আমি রেগে বললাম,
“বেশ আমি ছাগল। আমি ছাগল হলে আপনি কি পাগল কোথাকার। কেউ এমন ব্যবহার করে কারো সাথে। আমি কতটা ভয় পেয়ে গেছিলাম। এখনই ভুতের ভয়ে হার্টএট্যাক করতাম আমি। ”

শান নিজের প্যান্টের পকেটে হাত দিয়ে কিছুটা ব্যাঙ্গ করে বললো,
“সেই তোমার এই গোবর পড়া মাথায় এসব ছাড়া আর কি কিছু ঢুকবে নাকি?তুমি জানো তোমাকে একটু কাছে পাওয়ার জন্য কত কাট খড় পোড়াতে হচ্ছে আমাকে আর উনি আছে ভুত নিয়ে। পৃথিবীর সব মানুষের হেল্প করে বেড়াও শুধু নিজের ঘরের মানুষেরই কোনো খবর নাই। ”

আমি চোখ বড় বড় করে বললাম,
“কি মিথ্যুক সারাদিন তো আপনার সাথেই কথা বলে কাঁটালাম তারপরেও বলে খবর নেই না।”

“ও হো ঐ কথা বলা পর্যন্তই সীমাবদ্ধ তাও যদি নিজ থেকে ফোন দিয়ে খবর নিতে প্রত্যেকবার তো আমিই নিয়েছি না। ”

আমি চুপ করে রইলাম কথা ভুল না। কিন্তু আমারই বা কি দোষ যতবার ফোন দিতে গেছি ততোবার উনিই আগে দিয়েছে। হঠাৎ শান আমার কোমড়ে হাত দিয়ে আমাকে উনার কাছে টেনে নিলেন।

আমি উনার দিকে তাকিয়ে একটু তুতলিয়ে বললাম,
“ক ক কি হ হয়েছে? ”
উনি মুচকি হেসে বললো,
“এখনো কিছু হয়নি তবে এবার হবে। ”
আমি ভ্রু কুচকে বললাম,
“মা মানে?”
“মানে কালকে থেকে তোমাকে কাছে না পেয়ে আমি যতটা কষ্ট পেয়েছি সেই কষ্টের ক্ষতিপূরণ দেও এখন। ”
আমি কপাল কুচকে বললাম,
“কষ্টের আবার ক্ষতিপূরণ হয় নাকি? ”
“হয় শুধু দিতে জানতে হয়। ”
আমি অবাক হয়ে বললাম,
“সেটা কেমন? ”
“কালকে সারাদিন তোমাকে যতটা মিস করেছি সেই হিসাব মতো তুমি এখন আমাকে দশটা কিস করবে। ”
আমি আঁতকে উঠে বললাম,
“হোয়াট দশটা? ”
“কেন কম বললাম নাকি ওকে তুমি চাইলে আরো বেশীও দিতে পারো আমি কিছু মনে করব না। ”
“ছাড়ুন তো আমাকে আপনার মাথা খারাপ হয়ে গেছে বাড়ির সবাই একটু পরেই আমার খোঁজ শুরু করবে কাউকে বলে আসিনি।”
“উহুম কেউ খোঁজ করবে না আর যদি করেও তাহলে আমার শালিসাহেবা সামলে নেবে। ”
আমি চোখ বড় বড় করে বললাম,
“তারমানে পুষ্প আর আপু আপনাকে হেল্প করেছে এইকাজে কি বিচ্ছু সবগুলা ভাবা যায়। ”
শান একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললো,
“সবাই আমার অনুভুতি গুলো বুঝতে পারে তাই হেল্প করে শুধু যার বুঝার কথা সেই আজ পর্যন্ত বুঝতে পারল না আমাকে। ”

“আচ্ছা অনেক সময় হয়েছে ছাড়ুন আমাকে। ”
“নো সুইটহার্ট আগে আমার পাওনা মিটাও তারপর ছেড়ে দিবো। ”
“কোনো দেনা পাওনা নেই ছাড়ুন আমাকে। ” আমি ছোটার চেষ্টা করে বললাম।
“কোনো লাভ হবে না আগে যেটা চেয়েছি সেটা দেও তারপর ছাড়ব আর তুমি জানো আমি যেটা বলি সেটাই করি। ”
আমি লজ্জায় মাথা নিচু করে বললাম,
“পারবো না আমি। ”

শান আমাকে আরেকটু কাছে টেনে আমার মাথার পেছনে হাত রেখে আমাকে উনার একদম কাছে নিয়ে গেল। উনার নিঃশ্বাস এসে আমার মুখের উপর পড়ছে। শান আমার চুলের মধ্যে হাত বুলিয়ে স্লো ভয়েসে বললো,
“ওকে তোমাকে পারতে হবে না যা করার আমিই করছি। ”
আমি কাঁপা কাঁপা কন্ঠে বললাম,
“নো। ”
শান এগিয়ে আসলো,
“ইয়েস। ”
“নো।”
“ইয়েস। ”
“ন…।”
আমি আর কিছু বলবো তার আগেই উনি আমার মুখ বন্ধ করে দিলো। আর নিজের কাজে ব্যস্ত হয়ে গেল।


কিছুক্ষন আগেই শানরা সহ আশেপাশের গেস্টরা চলে গেছে। শুধু আমাদের আত্মীয়-স্বজনরা থেকে গেছে আর বিয়ে পর্যন্ত সবাই এখানেই থাকবে। তাই আমাকে আর আপুকে ঘর থেকে বের করে দিয়েছে। মানে বিয়ে বাড়ি হলে যা হয় আর কি। আমাদের রুমে আমাদের কাজিন সিস্টাররা সহ আমরা দুই বোন থাকতেছি। কিন্তু এতো মানুষের মধ্যে আমার ঘুম আসছিলো না। তাই আমি আর আপু গিয়ে বেলকনিতে বিছানা করে কিছুক্ষন বসে রইলাম।

হঠাৎ কথায় কথায় আপু বলে উঠলো,
“জানিস সোহা আমার কারণে তোর এই হঠাৎ বিয়েটা হওয়ায় নিজেকে অনেক অপরাধী মনে হতো। ভাবতাম আমি তোর জীবনটা নষ্ট করেছি। আমার জন্য তুই একটা জোর-জবরদস্তির সম্পর্কে আঁটকে পড়েছিস। কিন্তু তোদের দুজনকে কাছ থেকে দেখে বুঝেছি ইউ আর মেড ফর ইচ আদার। শান ভাইয়া তোকে এতটা ভালোবাসে যে তুই কল্পনাও করতে পারবি না। তোকে ছোটবেলায় বলতাম না সবসময় আমার ছোট বোনের জন্য আমি রাজপুত্র এনে দিব। আজ আমি বলছি সেদিন বিয়েটা যদি ওভাবে না হতো তাহলে হয়তো পুরো পৃথিবী ঘুরেও আমি তোর জন্য এমন রাজপুত্র খুঁজে পেতাম না। আজ আমি সত্যিই অনেক খুশি তোর জন্য বাট তুই খুশি তো নাকি আমাদের সবার কথা ভেবে মানিয়ে নিচ্ছিস কোনটা? ”

আপুর কথা শুনে আমি মিষ্টি করে হেসে বললাম,
“আপু তোর কোনো দোষ নেই। কোনো অপরাধ করিসনি তুই। আমি তো তোর কাছে কৃতজ্ঞ যে সেদিন তুই পালিয়েছিলি তোর সেই ঋণ আমি কখনো শোধ করতে পারবো না।শুধু বলতে পারি তুই সেদিন না পালালে আমি হয়তো আমার ভালোবাসার মানুষ আমার বেঁচে থাকার কারণটাই হারিয়ে ফেলতাম। আর মানিয়ে নেওয়া সেটাকে বলে যেই সম্পর্ক আমাদের ইচ্ছার বিরুদ্ধে হয় কিন্তু ভালোবাসার মানুষের সাথে মানিয়ে নেওয়ার কোনো প্রশ্নই আসে না। আমি অনেক খুশি যে আমি শানকে সারাজীবনের জন্য আমার জীবনে পেয়েছি আর সেটা শুধু তোর জন্য তাই এইসব কথা আর কখনো বলবি না। ”

আপু আমাকে জড়িয়ে ধরল।
“এতদিনে আজ একটু শান্তিতে ঘুমাতে পারবো আমি এই কথাগুলোই অনেকদিন থেকে তোর মুখ থেকে শুনতে চাইছিলাম আজ আমার মনের বোঝাটা নামল। ”

আমি হালকা হেসে আপুকে জড়িয়ে ধরলাম। আসলে বোনেদের ভালোবাসাটাই এমন হয়। একে অপরের অবিচ্ছেদ্য অংশ। তারপর আরো কিছুক্ষন কথা বার্তা বলে ঘুমিয়ে পড়লাম।


এ্যানগেইজমেন্টের দুইদিন পর বিয়ের সমস্ত আয়োজন করা হয়েছে। এরমধ্যে যাদের দাওয়াত দেওয়া হয়নি তাদেরকেও নিমন্ত্রণটা সেড়ে নেওয়া হয়েছে সাথে বিয়ের সমস্ত শপিং, জুয়েলারি সব কিছু কেনাকাটাও হয়ে গেছে। তবে এই দুইদিন একদমই সময় পাচ্ছি না শানের সাথে কথা বলার। বিয়ে বাড়ি এতো কাজ তারমধ্যে যখনই একটু সময় পেলে যা একটু ফোন করব তা আবার খালা, মামি, ফুফি, চাচিরা এসে হাজির হয়ে যায় আর এটা ওটা নিয়ে গল্প জুড়ে দেয়। এজন্য যদিও শান প্রচুর রেগে যায় মাঝে মাঝে। তারপর অনেক বুঝিয়ে শুনিয়ে রাগ ভাঙাতে হয়। এসব করতে করতেই দুইদিন কিভাবে কেঁটে গেছে বলতেও পারবো না।

আজকে মেহেদী অনুষ্ঠান আমার আর আপু। এরই মধ্যে আগে যারা ছিল তারা তো ছিল আরো আত্মার-স্বজন এসে বাড়িতে মানুষে পুরো গিজগিজ অবস্থা। কোথাও একটু একটা শান্তিতে বসার উপায় নেই সাথে বাচ্চাদের চিৎকার চেঁচামেচি তো আছেই। যেই আমি দুপুরের আগে ঘুম থেকেই উঠতামই না সেই আমার ভোর ছয়টার দিকেই ঘুম ভেঙে যায়। তারপর সারাদিন তো আর ঘুমানোর সুযোগ নেই সন্ধ্যা হতে না হতেই চোখে ঘুমের ঢল এসে নামে।তাই আজও এর ব্যাতিক্রম হলো না। একদিকে আমাকে সাজানো হচ্ছে অন্যদিকে আমি ঘুমে ঝুরছি তখনই আমার ফুফি রেগে বললো,

“বিয়ের সময় শুনেছি মেয়েদের ঘুম উদাও হয়ে যায় কিন্তু তোর এতো ঘুম কোথা থেকে আসে।বারবার সাজানো হচ্ছে আর তোর জন্য সব নষ্ট হচ্ছে। ”

আমি বিরক্ত হয়ে বললাম,
“প্লিজ আজকে দুদিন ধরে শান্তিতে ঘুমাতে পারছি না আমি একটু শান্তিতে ঘুমাতে চাই কেউ একটু ঘুমাতে দিবা আমাকে? বিয়ে এতো প্যারা কেন ভাই? ”

কথাটা বলেই আমি ড্রেসিনটেবিলের উপরে মাথা রাখলাম। সবাই রাগি চোখে আমার দিকে তাকিয়ে আছে। তাতে আমার কি আমার কাছে এখন ঘুমটা ইমপরটেন্ট।তখনই ফুফি আবার জোর করে আমাকে ধরে মাথা উঠিয়ে দিলো। আমার মাথা আচড়ে দিচ্ছে আর আমি বিরক্তি নিয়ে বসে আছি।

তখনই আম্মু দৌঁড়ে আসলো রুমে,
“কিরে এখনো সাজানো হয়নি নাকি?”
ফুফি রেগে বললো,
“স্মৃতিকে তো সাজানো শেষ কিন্তু তোমার এই গুনোধর মেয়েকে তো কিছুতেই সাজানোই যাচ্ছে না ওর ঘুমের তাড়ণায়। ”
আম্মু রেগে বললো,
“কি বলিস কিছুক্ষন পর মেহেদি অনুষ্ঠান শুরু হবে শানরা অর্ধেক চলে এসেছে এখনো সোহাকে সাজানো হয়নি এটা বললে হবে নাকি। ”
কথাটা বলতেই আমি চোখ বড় বড় করে বললাম,
“শানরা আসবে মানে? এমন কথা কখন হলো আমাকে বলেনি তো কেউ”
“আজকে বিকালেই হয়েছে। শান বলেছে মেহেদি অনুষ্ঠান হলে একসাথে হবে নাহলে অনুষ্ঠান ও করবে না। তাই সবাই সিন্ধান্ত নিয়েছে অনুষ্ঠান একই সাথে হবে। তুই তো ঘুম নিয়ে ব্যস্ত কে বলবে তোকে।”

কথাটা শুনে আমি খুশি হয়ে গেলাম। আজকে সারাদিনেও শানের সাথে একবারও কথা হয়নি তাই হয়তো বলা হয়নি আমাকে।তবে যাই হোক শানকে দেখতে পাবো এটাই আমার কাছে অনেক। আয়নার দিকে তাকিয়ে জামা কাপড় ঠিক করতে করতে বললাম,
“আচ্ছা দাঁড়িয়ে আছো কেন সবাই এতক্ষন তো আমার পিছনেই পরে ছিলে এবার সাজাও। ”

আমার কথা শুনে ফুফি একগালে হাত দিয়ে অবাক ভঙ্গিতে বললো,
“এই কথাটা শুনলেই যদি তোর ঘুম ভেঙে যাবে জানতাম তাহলে আমিই বলে দিতাম অন্তত এতক্ষন তোর পিছন পিছন ঘুরতে হতো না। ”

ফুফির কথা শুনে সবাই খিলখিলিয়ে হেসে উঠলো আর আমি লজ্জা পেয়ে নিজের মুখ ঢেকে নিলাম।

সব ফার্ণিচার সরিয়ে বাড়ির ভিতরেই মেহেদি অনুষ্ঠানের ব্যবস্থা করা হয়েছে। আমাকে আর আপুকে এনে নিচে হল রুমে বসিয়ে দিলো। সাথে কাজিনদের নাচ গান তো আছে।অনেক সুন্দর সবকিছুর আয়োজন করা হয়েছে। বেশ সময়টা উপভোগ করছি। আর অপেক্ষা করছি সদর দরজার দিকে তাকিয়ে কখন শানরা আসবে। কিছুক্ষন পর অপেক্ষার অবশান হলো শানকে দেখতে পেলাম। শান সহ আমার পুরো পরিবার এদিকেই এগিয়ে আসছে।শানকে দেখে আজ নতুন ভাবে আমি আবার ক্রাস খেলাম। কি সুন্দর লাগছে সবুজ পাঞ্জাবীতে।মুখে সবসময়ের মতো একটা মিষ্টি হাসি লেগে আছে। কোনো রাজপুত্রের চেয়ে কম না। আর উনার হাসিটা উফ এই একটা জিনিসই আমাকে ঘায়েল করার জন্য যথেষ্ঠ। আমি আর আপু উঠে বড় সবাইকে সালাম করলাম। শান এসে আমার পাশে বসল। এখানে আমরা সবাই ছোটরা ছোটরা আছি। বড়রা অন্যদিকে আছে।

শান আমার পাশে বসতেই আমি ফিসফিস করে বললাম,
“কি ব্যাপার বলুন তো আমার সাথে কালার ম্যাচিং করলেন কি করে? ”

শান একটা ভাব নিয়ে বললো,
“জানি ম্যাম সব জানি কখন কি করো, কই যাও, কি পড় আমার পাওয়ার সম্পর্কে তো আর তুমি অজানা নও সুইটহার্ট। ”

আমি মুখ ভেঙিয়ে বললাম,
“হুম ঐ তো পাওয়ার বাড়ির মধ্যে গুপ্তচর লাগিয়ে দিয়েছেন সেটা কি জানি না ভেবেছেন। ”

আমার কথা শুনে শান হাসল। বড়রা বললো এখন মেহেদি পড়ানোর অনুষ্ঠানটা শুরু করা হোক।মেহেদি পড়ানো শুরু হলো। আগে আমার আর আপুর হাতে পড়ানো হবে তারপর বাকি সবাই। আমার হাতে মেহেদি পড়ানোর সময় শান বলে উঠলো,

“মেহেদি পড়াতে হলে আমার একটা শর্ত আছে। ”

শানের কথা শুনে আমি সহ উপস্থিত সবাই অবাক হলো। আমার একজন কাজিন তিয়াশা বলে উঠলো,
“শর্ত মানে কিসের শর্ত জিজু? ”

শান মুচকি হেসে বললো,
“তেমন কিছু না সিম্পল একটা শর্ত।”
তিয়াশা বললো,
“বলো শুনি তাহলে। ”
শান আমাকে ইঙ্গিত করে বললো,
“সোহার হাতে মেহেদি পড়ানোর সময় অর্ধেক ডিজাইন আমার হাতে করতে হবে অর্ধেক ডিজাইন সোহার হাতে যেনো পরবর্তীতে দুটো হাত পাশাপাশি রাখলে ডিজাইনটা পরিপূর্ণ হয়।আর এর মানে হলো আমরা দুজন দুজনের সাথে পরিপূর্ণ। একজন ছাড়া অন্য জনের কোনো অস্তিত্ব নেই। ”

উনার কথা শুনে আমার সব কাজিনরা একসাথে বলে উঠলো,
“ওহো এতো ভালোবাসা। হায় কারো নজর না লাগে। ”

উনার দিকে আমি একদৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলাম এতো ভালোবাসে কেন উনি আমাকে? আসলেই কি এতো সুখ আমার কপালে জুটবে। এসব ভাবতে ভাবতেই আমার চোখে পানি চলে আসলো। শান ইশারায় বললো,
“কি হয়েছে? ”
আমি মুচকি হেসে মাথা নাড়ি বললাম, “কিছু না। ”

উনার কথা মতো মেহেদি আর্টিস্টরা আমার আর শানের হাতে মেহেদি পড়িয়ে দেয়। আমাদের পড়ানো হলে আস্তে আস্তে সবাই পড়ে নেয়। হঠাৎ আমার কাজিনরা বায়না করে বললো,
“জিজু শুনেছি আপনি অনেক সুন্দর গান করেন প্লিজ আমাদের একটা গান শোনা প্লিজ প্লিজ। ”
শান অবাক হয়ে বললো,
“তোমাদের কে বললো সোহা? ”
” না আরশ জিজু। ”
“আরশও অনেক সুন্দর গান করে তোমরা বরং ওকেই গাইতে বলো। ”
আরশ বললো,
“দিস ইজ নট ফেয়ার ভাইয়া ওরা তোকে গাইতে বলেছে তুই আমাকে ফাঁসিয়ে দিচ্ছিস কেন?”
তখনই সবাই বায়না ধরে বললো,
“প্লিজ জিজু তুমি গাও না আমরা তোমার গান শুনতে চাই। সোহা তুই বলনা প্লিজ তুই বললে ঠিক গাইবে। ”
সবার এতো জোরাজুরি দেখে আমি শানকে বললাম,
“সবাই এতো করে বলছে যখন একটা গান গেয়ে দিন না তাহলেই তো হয়। ”

আমার কথা শুনে শান বললো,
“ইশ এখন তো আর চাইলেও না করতে পারবো না। ”

কথাটা বলতেই সবাই খুশিতে চিৎকার দিয়ে উঠলো আর আমি মুচকি হাসলাম। শানের হাতে একটা গিটার তুলে দেওয়া হলো। শান গিটারে টুংটাং সুর তুলে বললো,

“আমার বেখেয়ালি এই গানটা শুধু তোমার জন্যই ডেডিকেট করলাম। ”

বলেই উনি গাইতে শুরু করলেন,
“হয়তো আমি এখনও আধারে,
তোমায় হাতরে বেড়াই
এখনও যেন স্বপ্নলোকে,
তোমাকেই ফিরে পাই
হয়তো এখনও বেহায়া এ মন,
লুকিয়ে আলতো করে
ভাবছে তোমায় আঁকছে ছবি
নিজেরই অজানায়
সবটুকুই হোক তোমার,
যেন সূর্য ও চাঁদের মাঝে
লেখা থাক এ গল্পের ইতি নতুনের শব্দে
আমি হাঁটতে চাই,
তোমার সাথে শুরু থেকে এই পথের শেষে
হঠাৎ থমকে দিয়ে বলতে চাই,
ধন্য তোমায় ভালোবেসে

উনি পুরোটা গান খুব সুন্দর করে শেষ করলেন আমি মুগ্ধ নয়নে ওনার দিকে তাকিয়ে ছিলাম। এমন মনে হলো গানটার প্রতিটা কথাই যেন উনার মনের কথা যে স্বপ্নগুলো উনি আমাকে নিয়ে বুনেছিলেন তার এক বাস্তব রূপ। যেটা শুধু আমাদের জন্য তৈরী।

গানটা শেষ হতেই সবাই হাত তালিয়ে দিয়ে উঠলো সবাই ওনার প্রশংসায় পঞ্চমুখ। আসলে উনি মানুষটাই এমন যে মানুষ প্রশংসা না করে থাকতে পারবে না।

উনি আমার একদম কাছে এসে বললো,
“তুমি কিছু বললে না? ”
“কি ব্যাপারে? ”
“গানের ব্যাপারে। ”
“সবাই বললো তো। ”
“সবার বলা আর তোমার বলা এক হলো। আমি তোমার মুখে শুনতে চাই। ”

আমি উনার থেকে চোখ সরিয়ে অন্যদিকে তাকিয়ে চুপ করে রইলাম উনি কিছুক্ষন উত্তরের আশায় ছিল কিন্তু উত্তর না পেয়ে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে আমার পাশ থেকে উঠতে নেবে তখনই আমি বললাম,

“গানটা কেমন হয়েছে জানি না। তবে আপনার গান শুনে এটা বলতে পারি আজ আবারও নতুন করে আমি আপনার প্রেমে পড়েছি। ”
.
.#এক_শহর_ভালোবাসা
#পর্ব_৪০
#সুরাইয়া_নাজিফা

“দেখি তোমার হাতে মেহেদির রং কেমন হয়েছে।”
“দেখে কি করবেন?”
“মানুষ বলে মেয়েদের হাতে মেহেদির রং গাড় হলে নাকি স্বামী বেশী ভালোবাসে তাই দেখতে চাইছি। ”
আমি মুখ ভেঙিয়ে বললাম,
“কেন নিজেই নিজের ভালোবাসার উপর বিশ্বাস রাখতে পারছেন না নাকি?”
শান ভ্রু কুচকে বললো,
“আমি সেটা কখন বললাম? ”
“তাহলে দেখে কি করবেন? ”
শান হালকা হেসে বললো,
“শুধু নিজে জানলে তো হবে না পৃথিবীর সব মানুষেরও তো জানা প্রয়োজন আমি আমার বউকে কতটা ভালোবাসি তাই না। ”

উনার কথা শুনে আমি একপলক আমার হাতের দিকে তাকালাম তারপর মুচকি হেসে বললাম,
“তাই নাকি তাহলে দেখেন আপনার ভালোবাসার রং।”

কথাটা বলেই আমি আমার হাত দুটো উঁচু করলাম। আমার হাতে মেহেদির রং অনেক সুন্দর হয়েছে। এই নিয়েও এতক্ষন বড়রা প্রচুর মজা করেছে আমার সাথে।বর নাকি আমাকে চোখে হারায় তাই মেহেদির রং এতটা গাড় হয়েছে।

“বাহ দেখেছো আমি তোমাকে কতটা ভালোবাসি এখন তো প্রমাণও আছে। ”
আমি উনাকে পাত্তা না দিয়ে বললাম,
“ইশ আমার হাতে মেহেদি এমনিতেই লাল হয় বুঝলেন তাই এতো ক্রেডিট নেওয়ার প্রয়োজন নেই। ”
শান আমাকে টোন কেঁটে বললো,
“আচ্ছা জ্বলছে না আমি বেশী ভালোবাসি দেখে তুমি তো মোটেও আমাকে ভালোবাসো না এজন্যই আমার হাতে মেহেদির রং হয়নি। ”
শানের কথা শুনে আমি চোখ বড় বড় করে বললাম,
“কি মিথ্যা কথা আপনি গান গাইবেন বলে গিটার বাজানোর জন্য নিজের মেহেদি ধুয়ে ফেলেছেন। মেহেদিটা হাতে সম্ভবত দশমিনিট ছিলো এই দশমিনিটে কি রং আশা করেন আপনি? ”
“তাতে কি মানুষ তো এটাই বলবে তাই না যেটা আমি বলেছি। ”

শানের কথা শুনে আমি মুখ ফুলালাম মনে মনে ইচ্ছা মতো গালাগালি করতে থাকলাম কি খারাপ লোক নিজেই তো গান গাওয়ার জন্য হাত ধুয়েছে এখন আমার দোষ দিচ্ছে।

“আমার হাতে রং কেমন হয়েছে দেখতে চাইবে না।”
আমি অভিমান নিয়ে বললাম,
“দেখার কি প্রয়োজন আপনি তো বলেই দিয়েছেন। ”
শান নিজের নিচের ঠোঁট কামড়ে বললো,
“ইশ মুখটা এমন কালো মেঘে ছেয়ে গেছে কেন বৃষ্টি নামবে বুঝি। ”

আমি কথা না বলে মুখটা অন্যদিকে ফিরিয়ে নিলাম।শান নিজের হাত সামনে এনে বললো,
“আচ্ছা দেখো তো কেমন হয়েছে। ”
আমি তাকালাম না শান বললো,
“আহা এসব মান অভিমান বিয়ের পর করো যাতে আদর ভালোবাসা দিয়ে ভাঙাতে পারি এখন আমার দিকে তাকাও। ”
আমি তারপরও তাকালাম না। কেন তাকাবো সামান্য একটা মেহেদি দিয়ে উনি আমার ভালোবাসার পরিমাপ করছে কিভাবে।
শান আবারও বললো,
“সুইটহার্ট তাকাও। ”

এতবার বলার পরেও যখন সোহা তাকালো না শানের রাগ উঠে গেলো। শান ধমক দিয়েই বললো,
“সোহা লুক অ্যাট মি। ”

হঠাৎ মিষ্টি কন্ঠের পরিবর্তে কর্কশ কন্ঠে তাজা ধমক শুনে আমি দ্রুত ফোনের দিকে তাকালাম আর তাকাতেই অবাক হয়ে গেলাম উনার হাতে গাড় লাল রং হয়েছে মেহেদির। আমি বড় বড় চোখ করে তাকিয়ে রইলাম,

“এই আপনার হাতে এতো রং হলো কি করে আপনি তো….।”
পুরো কথা বলার আগে শান বললো,
“আমার বউয়ের উপর কেউ আঙ্গুল তুলবে সেটা কি আমি হতে দিতে পারি নাকি। সবাই জানুক আমি তাকে যতটা ভালোবাসি সেও আমাকে ঠিক ততটাই ভালোবাসে কি তাই তো?”

উনার কথা শুনে আমার রাগ গলে জল হয়ে গেল। প্রত্যেকবার উনি এমন এমন কান্ড করে যে আমি বাধ্য হই উনার ভালোবাসার কাছে হারতে।

আমি ছলছল চোখে তাকিয়ে বললাম,
“এটা কিভাবে সম্ভব? ”
শান হেসে বললো,
“সম্ভব কারণ আমি পরিবর্তীতে আবার সেই ডিজাইনের উপর মেহেদি দিয়েছিলাম কিছুক্ষন আগেই সেই মেহেদি শুকিয়েছে এজন্যই তো ফোন দিতে লেইট হলো। ”

আমি একদৃষ্টিতে শানের দিকে তাকিয়ে রইলাম শান বললো,
“এখন অভিমান ভেঙেছে কি?”
আমি নাকের পাটা ফুলিয়ে বললাম,
“কেন ভাঙবে আমি তো আপনাকে ভালোবাসি না রং তো এমনিতেই হয় মানুষের হাতে তাতে কি আসে যায়। ”
শান চোখ দিয়ে ইশারা করে বললো,
“ওহ তাহলে ভালোবাসো বুঝি। ”
আমি চোখ ছোট ছোট করে গলা উঁচিয়ে বললাম,
“আপনার থেকেও বেশী। ”
“নো সুইটহার্ট তুমি ভালোবাসতে পারো বাট আমার থেকে বেশী না। ”
আমি রেগে বললাম,
“বলেছি তো আপনার থেকে আমি বেশী ভালোবাসি। ”
“আমি বেশী ভালোবাসি। ”
“আমি বেশী।”
“আমি। ”
“বললাম না আমি বেশী এখন কিন্তু কান্না করব না মানলে। ”
শান হেসে বললো,
“ব্লাকমেইল করে কিছু আদায় করতে হয় কি করে কেউ তোমার থেকে শিখুক। ”
আমি উনাকে চোখ টিপে বললাম,
“বেশ করেছি। যেমন বর তেমন তো বউকে হতোই হতো তাই না। ”
শান হালকা বললো,
“হুম বুঝতে পারছি আমার বোকা বউটা দিনদিন চালাক হয়ে যাচ্ছে। ”


সারারাত বসে বসে গল্প করা আর দিন হলে পড়ে ঘুমানোটাই এই কয়দিনের রুটিন হয়ে গেছে আমার। কারণ সারাদিন পুরো বাড়ি ভর্তি এতো মানুষ থাকে যে কথার বলার সুযোগই হয় না।বলা তো যায় না কে আবার কখন বলে উঠে মেয়েটা কি বেহায়া বিয়ের আগেই স্বামীর সাথে প্রেম আলাপ করছে বিশেষ করে বেশী বয়স্ক যারা তাদের একটু সামলে চলতেই হয়।

সন্ধ্যাবেলা হলুদের অনুষ্ঠান। পুরো বাড়ি বিভিন্ন রঙের ফুলের সাথে মরিচ বাতি দিয়ে সাজানো হয়েছে। একদম ঝলমল করছে বাড়িটা। আম্মু আমাকে আর স্মৃতি আপুকে শাড়ী আর জুয়েলারি দিয়ে গেছে। জুয়েলারি বলতে ফুলের গয়না। অন্যদিনের মতো আমার কাজিন আর ফুফি মামিরা মিলে আমাদের সাজিয়ে দিয়েছে। সাজানো হয়ে গেলে বড়রা বাকি আয়োজন দেখার জন্য বেরিয়ে যায়। তখনই আমার ফোনটা বেজে উঠে। ফোনের স্ক্রিনে একদম স্পষ্ট উঠে আছে “শান ইজ কলিং” বাট এখন চাইলেও আমি এই বিচ্ছু গুলার সামনে ফোন রিসিভড করতে পারবো না তাহলে শুরু হয়ে যাবে এদের পঁচানো। আমি হাতটা বাড়িয়ে ফোনটা কাঁটতে যাবো তখনই আমার কাজিন ঝুম আমার হাত ধরে বসল।

আমি চোখ বড় বড় করে বললাম,
“কি হয়েছে? ”
ঝুম একটা শয়তানি হাসি দিয়ে বললো,
“দাঁড়া শুধু তুই কথা বললে হবে জিজুর সাথে আমাদেরও একটু সুযোগ দে। ”
আমি ভ্রু কুচকে বললাম,
“মানে? ”
“মানে হলো তিয়াশা এখন তুই হয়ে ভাইয়ার সাথে কথা বলবে আমরাও দেখি ভাইয়া তোকে কতটা ভালোবাসে তুই আর তিয়াশার কন্ঠের মধ্যে পার্থক্য করতে পারে কিনা। ”
আমি আঁতকে উঠে বললাম,
” ঝুম আপু এটা ঠিক না তিয়াশা তো আমার কন্ঠ নকল করতে পারে তাহলে উনি বুঝবে কিভাবে? ”
“কন্ঠ নকল করলেই তো হলো না কথা বলার ভঙ্গি তো অবশ্যই আলাদা হবে তাই না দেখাই যাক তোদের ভালোবাসা কতটা স্ট্রং। ”

ঝুম আপুর কথা শুনে আমিও ভাবলাম দেখি খানিকটা বাজিয়ে দেখি কি হয়। আমি সম্মতি দিলাম। প্রথমবার এসব তর্ক করতে করতে ফোনটা কেঁটে গেল দ্বিতীয়বার ফোন দিতেই তিয়াশা রিসভড করল। আমার বুকের ভিতর ডিপ ডিপ করতে লাগলো বুঝতে পারবে তো শান?ফোন স্পিকারে দেওয়া হলো।

ওপাশ থেকে শান বললো,
” হ্যাঁলো। ”
তিয়াশা চুপ করে রইল শান আবার বললো,
“কথা বলো। কি করছো এখন?”
তিয়াশা আমার মতো মিনমিনে গলায় বললো,
“এই তো সবাই সাজিয়ে দিয়ে গেলো বসে আছি চুপচাপ। ”
“খেয়েছো তো?”
“হুম। ”
“ওহ বাসার সবাই ভালো? ”
তিয়াশা একবার সবার দিকে তাকিয়ে বললো,
“হুম ভালো। ”

আমি অবাক হয়ে তাকিয়ে আছি। সচারাচর তো শান আমার সাথে এভাবে কথা বলে না। সবাই গোল গোল চোখে তাকিয়ে আমাদের চারপাশে ঘিরে আছে। এদিকে ঝুম আপু মিনমিনিয়ে বলছে,
“কিরে সোহা তুই বুঝি ঘন্টার পর ঘন্টা এমন নিরামিষ আলাপ করিস। ”

আমি ভ্রু কুচকে আপুর দিকে তাকালাম।ব্যাপারটা বুঝার জন্য তিয়াশা কে ইশারায় জিজ্ঞেস করতে বললাম যে আজ হঠাৎ আপনি এভাবে কথা বলছেন কেন? তিয়াশা আমার ঠোঁটের নাড়ানো চাড়ানো দেখে সেভাবেই শানকে বললো,

“আচ্ছা আপনি আজকে এভাবে কথা বলছেন কেন?”
“কিভাবে?”
“এই যে কেমন নিরামিষ নিরামিষ সচারাচর এভাবে তো বলেন না। ”
শান একটু হেসে বললো,
“কারণ আমি জানি বউয়ের সাথে কি করে কথা বলতে হয় আর শালীদের সাথে কিভাবে।”

শানের কথা শুনে আমি বিষম খেয়ে কাঁশতে লাগলাম আর তিয়াশা কন্ঠে বিষ্ময় নিয়ে বললো,
“মানে? ”
“মানে পরে বুঝাচ্ছি আগে কেউ আমার বউটাকে একগ্লাস পানি এগিয়ে দেও। ”

কথাটা শুনে আমার কাশি বন্ধ হয়ে গেল।সবাই থম মেরে বসে রইল। স্মৃতি আপু আমাকে পানি এগিয়ে দিতেই আমি এক ঢোকে পানিটা খেয়ে নিলাম। আমার মুখে বিশ্ব জয়ের একটা হাসি ফুঁটে উঠলো।

শান আবারও বললো,
“আমি জানি ফোনটা স্পিকারে দেওয়া তুমি আমায় শুনতে পাচ্ছো সুইটহার্ট তোমার নিঃশ্বাসের শব্দটাও আমি খুব ভালো করে চিনি সেখানে তুমি ভাবলে কি করে যে আমি অন্যকেউকে তুমি ভেবে ভুল করব। এতোটা অবিশ্বাস আমার প্রতি। ”

আমি তিয়াশার হাত থেকে ফোনটা কেড়ে নিয়ে বললাম,
” ছি ছি এটা কি বললেন আসলে এটা ঝুম আপু আর তিয়াশা মিলে আপনাকে পরীক্ষা করার জন্য করেছে আমি এসবের কিছু জানি না। ”

ঝুম আপু লজ্জা পেয়ে বললো,
“স্যরি জিজু আমরা একটু মজা করার জন্যই এটা করেছি প্লিজ কিছু মনে করো না। ”

“না আমি কিছু মনে করছি না শালী হিসেবে এতটুকু মজা তোমরা করতেই পারো।”

তখনই তিয়াসা বলে উঠলো,
“ওয়াও জিজু সো সুইট অফ ইউ। আর কি কি গুন আছে তোমার কালকে গান শুনে ফিদা হয়ে গেছিলাম আর আজকে তো তোমার উপর ক্রাশই খেয়ে গেলাম। ”

শান হেসে বললো,
“সো স্যাড শালীসাহেবা এখন তো ক্রাস খেয়েও কোনো লাভ নেই কজ আমি অলরেডি একজনের হয়ে গেছি সো আমি তাকে ছাড়তে পারবো না। ”

তিয়াশা আফসোস করে বললো,
“ইশ কেন যে সোহার আগে আমার সাথে তোমার দেখা হলো না। ”

শান সোহাকে জ্বালানোর জন্য মজা করে বললো,
“রিয়েলি তাহলে তোমার বোনকে বলো আমাকে ছেড়ে দিতে তাহলে কিছু একটা হলেও হতে পারে।”

শানের কথা শুনে আমার চোখ গুলো স্বাভাববিকের তুলনায় বড় হয়ে গেল।রাগান্বিত কন্ঠে তিয়াশার মাথায় গাট্টা মেরে বললাম,
“আর কত ক্রাশ খাবিরে তুই। পৃথিবীতে এমন কোনো ছেলে বাকি আছে যে ক্রাশ খাশ নাই। ”

তিয়াশা ঠোঁট ফুঁলিয়ে বললো,
“এখন পৃথিবীর সব ছেলেকে যদি ভালো লাগে আমার কি করার আছে। ”

তিয়াশার কথা শুনে সবাই একযোগে হাসতে লাগলো শান ওপাশ থেকে বললো,
“আহা বেচারী বাচ্চা একটা মেয়ে এতো সিনক্রিয়েট করছো কেন?”

শানের কথা শুনে রাগ আরো সপ্তমে উঠে গেল,
“এই বের হো সবগুলো এখনি রুম থেকে বের হো বলছি। ”

সবগুলোকে কান ধরে বের করে দিয়ে ধরাম করে দরজা বন্ধ করে দিলাম,
“আমাকে ছেড়ে দেওয়ার এতো তাড়া দেখছি ভালোবাসা সব পালিয়েছে নাকি? ”

“তোমার কিছু যায় আসে নাকি তাতে তুমিই তো এইমাত্র অন্যকে ধরিয়ে দিয়েছো কথা বলতে আমার থেকে পিছু ছাড়াতেই। ”

“আমি কতবার বলবো আমি কিছু করিনি এগুলো সব ওদের কারসাজি। ”

“হুম কিন্তু যদি বুঝতে না পারতাম কেসটা তো আমিই খেতাম তখন তো তুমিও উল্টাই বুঝতে তাই না। ”

“আমি জানতাম আপনি ঠিক বুঝতে পারবেন। ”
“এতো বিশ্বাস?”
“হুম। ”
“ওকে এইবার ঝটপট হলুদের সাজে আমাকে কয়েকটা পিক দেও তো আর ভিডিও কল দিচ্ছি। ”
“না।”
“না মানে?”
“না মানে না। না পিক পাবেন আর না ভিডিও কলে কথা বলবো এটা আপনার শাস্তি আমাকে কষ্ট দেওয়ার। ”
“এখন দোষটা তুমি করলে আর শাস্তিটা আমি পেলাম এটা কেমন নীতি আমি কিন্তু চাইলেই রাগ করতে পারতাম। ”
“করেন রাগ তাতে আমার কি আমি তো দিবো না পিক। ”
“ওকে দিতে হবে না আমার জিনিস আমিই জোগার করে নিবো। ”
আমি চোখ বড় বড় করে বললাম,
“কি করবেন আপনি? ”
“সময় হলেই দেখতে পাবে।”

আমি কিছু বলার আগেই উনি ফোনটা কেঁটে দিলো। কি করতে চাইছে উনি?আচ্ছা সত্যি সত্যি রাগ করেনি তো। আমি কয়েকবার ফোন করলাম বাট রিসিভড করল না।

কিছুক্ষন পর এসে আমাকে নিচে নিয়ে যাওয়া হলো।হলুদ লাগানোর আগে ভূমিকা আপু আমার অনেক গুলো ছবি তুলে নিলো।পরে বড়রা মিলে শানের গায়ের হলুদ আমার গায়ে ছোঁয়ালো। সবাই একটু একটু করে আমার আর আপুর গায়ে হলুদ মাখালো অনেক রাত পর্যন্ত হলুদ প্রোগ্রাম হলো। তারপর আমাকে আর আপুকে গোসল করার জন্য রুমে পাঠিয়ে দিলো।আজকে আমাদের রুমে কেউ থাকবে না ওদের জন্য অন্যরুমের ব্যবস্থা করা হয়েছে এটা শুনে ভালো লাগলো।আমি রুমে এসেই ফ্রেস হতে চলে গেলাম আর আপু অন্য ওয়াসরুমে। ফ্রেস হয়ে এসে চুল মুছতে মুছতে আমি এসে বেডের উপরে বসলাম। আপুও ফ্রেশ হয়ে আসলো।আমি বিরক্তি নিয়ে বললাম,

“উফ এই মিষ্টি খেতে খেতে একদিনে মোটা হয়ে যাবো আমি। ”
আপু হাসলো,
“আচ্ছা ভাইয়া তখনের কাজে রাগ করেনি?”
“করেনি আবার তোদের জন্য সব ঝড় আমার উপর দিয়েই গেলো। ”
আপু বেডের অন্যপাশে এসে বসে বললো,
“এজন্যই বিয়ের এই কয়দিন আরশকে বলেছি তেমন একটা কথা না বলতে জানি তো সুযোগ পেলেই এরা এভাবে মজা নেবে। ”

আপু হাসল। আমি মুখ ফোলালাম। তখনই আমার ফোনের ম্যাসেজ টিউনটা বেজে উঠলো। ওপেন করতেই দেখলাম আমার হলুদ ফাংশনের কিছু ছবি শান পাঠিয়েছে মানে কেমনে সম্ভব। উনি কোথায় পেলো ছবি গুলো।
ছবি গুলোর নিচে লেখা ছিল,
“আমার পরীকে হলুদ শাড়ীতে একদম হলুদপরী লাগছে। ”

ছবি গুলো দেখে আমি শানকে কল করলাম,
“এই ছবি আপনি কই পেলেন। ”
শান কিছু না বলে শুধু হাসল।
“আমি আপনাকে হাসতে বলিনি। ”
“শুধু ছবি? আমি তো তোমার পুরো হলুদ অনুষ্ঠান লাইভ দেখেছি। ”
আমি অবাক হয়ে বললাম,
“কেমনে?”
“তোমাকে বলবো কেন তুমি তো আর দেওনি আমি কালেক্ট করে নিয়েছি। ”
“কে দিয়েছে আজকে তো সবাই কম বেশী বিজি ছিল বাড়ির আর আপনার গুপ্তচরেরও তো সেই টাইমে গায়ে হলুদ ছিল তাহলে? ”
শান আবারও হাসলো,
“তুমি অনেক বোকা সুইটহার্ট আমার জন্য এটা কোনো ব্যাপারই না।তোমার যেখানে হলুদ প্রোগ্রাম হয়েছিল সেখানে সিসি ক্যামেরা লাগানো ছিল। আজকের মতো টাটা কালকে দেখা হবে প্রিয়া ফুলের বাসরে। ”

কথাটা বলেই উনি একটা ভাব নিয়ে ফোনটা কেঁটে দিলো অদ্ভুত।আমি হা করে রইলাম। কি ফাজিল লোক। তারপরই উনার পরের কথাটা মনে পড়তেই লজ্জা পেয়ে গেলাম।

হঠাৎ দরজায় টোকা পড়তেই আমি আর আপু ঘাবড়ে গেলাম এতো রাতে কে? আপু গিয়ে দরজা খুলে দিলো আব্বু, আম্মু দাঁড়িয়ে আছে হাতে খাবার নিয়ে।
আপু বললো,
“বাবা,মা তোমরা এত রাতে?”

বাবা একটু হাসার চেষ্টা করে বললো,
“তোরা তো খাসনি কিছু তাই ভাবলাম খাইয়ে দি কে জানে আজকের পর আর কখনো সুযোগ হয় কিনা। ”

বাবার কথা শুনে আমাদের দুই বোনের চোখে পানি চলে আসল। তারপর আমাদের খাইয়ে দিল বাবা আর মা পাশেই বসে ছিল।

খাওয়ানো শেষে বললো,
“জানিস পৃথিবীতে সব থেকে কঠিন কাজ হচ্ছে মেয়েকে বিদায় দেওয়া। এতগুলো বছর লালন-পালন করে তারপর হুট করেই একজনের হাতে তু্লে দেওয়াটা কতটা কষ্টের সেটা একজন বাবা মাই জানে। ভাবতেই পারছি না আমার ছোট মেয়ে দুটো কবে এতো বড় হয়ে গেল যে কালকে আমার পুরো বাড়িটা ফাঁকা করে চলে যাবে।”

বাবা মায়ের চোখে পানি আমরা দুই বোন গিয়ে বাবা মাকে জড়িয়ে ধরে কান্না করে দিলাম।চারজনই চারজনকে জড়িয়ে কাঁদতে থাকলাম। ভাবতেই পারছিনা মেয়েদেরকেই সবসময় কেন এতো ত্যাগ স্বীকার করতে হয়। তারপর মা বাবা আমাদের দুজনের মাথায় হাত বুলিয়ে ঘুম পাড়িয়ে দিল।


আজকে খুব সকাল সকাল ঘুম ভেঙে গেল।সত্যি বলতে কাল রাতে ঘুমই হয়নি এতো কান্নাকাটির মাঝে।তারউপর বিয়ে নিয়ে এতো টেনশন হচ্ছে। কি একটা টান টান উত্তেজনা। মনের মধ্যে একদিকে আনন্দ লাগছিলো অন্যদিকে ভয় সব মিলিয়ে একটা অসাধারণ অনুভুতি। আজকে আমাদের সবার এতোদিনের অপেক্ষার প্রহর শেষ হলো নিজের ভালোবাসার মানুষের সাথে মিলিত হওয়ার। হুম আজ আমাদের বিয়ে। বিয়ে কথাটা মনে পড়লেই লজ্জা, ভয়, খুশি সবকিছু একসাথে এসে মিলিত হয় মনের কোনে।

আজকে কেউ তেমন একটা বের হতে দেয়নি আমাদের রুম থেকে। পার্লার থেকে মেয়ে নিয়ে এসে সাজানো হয়েছে। কারণ বাবা এর আগের বারের মতো রিস্ক নিতে চায়নি। আপু তো পার্লার থেকেই পালিয়ে ছিল। আবার না কোনো অঘটন ঘটে তাই পার্লারই ঘরে বসিয়ে দিয়েছে। আমার আর আপুর দুজনেরই একসাথে সাজ কমপ্লিট হয়ে গেল।আমি একটা লাল বেনারসি পড়েছি তার সাথে গোল্ডের জুয়েলারি। নিজের দিকে নিজেই ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে আছি। প্রথমবারের বিয়ের থেকে এই বিয়ের কত পার্থক্য প্রথমবার তো এই ফিলিং গুলোই কাজ করছিলো না আর এখন কত সুন্দর করে প্রতিটা মুহূর্ত অনুভব করতে পারছি।

আপু আমার সামনে দাঁড়িয়ে বললো,
“আমার ছোট্ট বোনটা কবে এতো বড় হয়ে গেল বলতো যে সে আজকে আমার সামনে লাল বেনারসি পড়ে দাঁড়িয়ে আছে শুধু তাই নয় সম্পর্কে তো আমার থেকে বড় হয়ে গেল।”

আমি আপুকে জড়িয়ে ধরলাম,
“প্লিজ এতো ইমোশনাল কথা বলিস না নাহলে আমার মেকাপটা নষ্ট হয়ে যাবে। ”

আমার কথা শুনে আপু হেসে দিল। কিছুক্ষন পর শুনতে পেলাম বর এসেছে বর এসেছে বলে সবাই ছুটে যাচ্ছে। বুকের মধ্যে ধুকপুক শব্দটা যেন আরো বেড়ে গেল। আমাদের স্বপ্ন থেকে আর কিছুটা দূরত্ব আমাদের।

শান স্টেজে বসে আছে আর অপেক্ষা করছে সোহার জন্য। তখনই স্মৃতি সোহা দুজনকেই নিয়ে আসা হলো। শান মুগ্ধ চোখে তাকিয়ে রইল। এই রূপে হয়তো পৃথিবীর সব মেয়েকেই সবচেয়ে বেশী সুন্দর লাগে। সোহাকে শানের পাশে আর স্মৃতিকে আরশের পাশে বসানো হলো। তারপর বিয়ে পড়ানোর কাজ শুরু হলো। তিনবার কবুল পড়ে দ্বিতীয়বারের মতো শানের হয়ে গেলাম সারাজীবনের জন্য। সবাই আলহামদুলিল্লাহ বললো। শান কানে কানে বললো,
“কনগ্রাচুলেশন সুইটহার্ট অবশেষে দ্বিতীয়বারের মতো তুৃমি আমারই হলে। ”

আমি শানের দিকে তাকিয়ে একটা ছোট্ট হাসি উপহার দিলাম। তারপর একে একে সবাই আসলো ছবি তোলার জন্য।

কিছুক্ষন পর একজন দম্পত্তি এসে বললো,
“কনগ্রাচুলেশন তোমাদের দুজনকেই। ”

এতো মানুষের মধ্যেও তাদের চিনতে আমাদের অসুবিধা হলো না। আমার আর শানের মুখে হাসি ফুটে উঠলো শান আর আমি হেসে বললাম,
“তোমাদেরকেও অভিনন্দন এবং ধন্যবাদ। ”

তিমির আর ঐশী হাসল। আমি একটু অভিমান করে বললাম,
“এতগুলো প্রোগ্রামে এলে না কেন?কত অপেক্ষা করেছি তোমাদের জন্য। ”

ঐশী বললো,
“আসলে বাবার শরীরটা অনেক অসুস্থ ছিল তাই বাবাকে দেখতে গিয়েছিলাম বাবার টেক কেয়ারের প্রয়োজন ছিল তাই বাবার পাশেই ছিলাম তবে আজকে বিয়ে দেখে ছুটে চলে এলাম আমার দুটো প্রিয় মানুষের কাছে। ”

ঐশীর চোখে জল চলে এলো। আজও ঐশী শানকে দেখলে নিজের চোখের পানি আটকাতে পারেনা। তবে আগের মতো ফিলিংস গুলো আর কাজ করে না। এখন মনে যত অনুভুতি, প্রেম, ভালোবাসা আছে সব তিমিরের নামে।

তিমির শানকে উদ্দশ্যে করে বললো,
“শুনেছি ন্যাড়া বেল তলায় একবারই যায় কিন্তু তোর এতোবার যাওয়ার ইচ্ছা হলো কেন বলতো আমার জীবনতো একবারই তেজপাতা হওয়ার উপক্রম।”

কথাটা বলতেই ঐশী অগ্নি দৃষ্টিতে তাকালো তিমিরের দিকে। তিমির ঐশীর দিকে তাকিয়ে হাসার চেষ্টা করে বললো,
“না ঐ শানকে বলছিলাম যে একটু সাবধানে থাকতে। ‘
“আমি তোমার জীবন তেজপাতা করেছি তাই না আজকে বাসায় চলো হচ্ছে তোমার। ”
তিমির কান্না কান্না মুখ করে রইল শান মজা নিয়ে তিমিরের পিঠ চাপড়ে বললো,
“ইশ ভাই আমাকে সাবধান করতে গিয়ে নিজেই ফেসে গেলি বেষ্ট অব লাক ওকে। ”

“ভাইরে ভাই এটাকেই বউ বলে।তবে সোহা ভাবী আপনার কিন্তু আমার তরফ থেকে একটা স্পেশাল গিফট পাওনা আছে। ”
আমি অবাক হয়ে বললাম,
“কেন?”
“কেন আবার আপনার মনে আছে যেদিন আপনার সাথে আমার প্রথম দেখা হয় সেদিন কি বলেছিলেন আপনাদের বাসায় দাওয়াত দিয়ে যাতে যখনই আপনাদের বাড়িতে আসি যেন বউকেও নিয়ে আসি আপনার ভবিষ্যৎ বাণীটা তো সত্যি হয়ে গেল। ”

তিমিরের কথা শুনে আমি, শান, ঐশী তিনজনই হেসে দিলাম। আসলেই জীবনটা কতো অদ্ভুত তিন-চারমাসে জীবনের মানেটাই বদলে গেছে সবার। ভালোবাসার মানুষ, নিজের ঠিকানা সব সবটা বদলে গেছে। ঐশীর দিকে তাকিয়ে মনে একটু প্রশান্তি পেলাম। মেয়েটা জীবনে নিজের জন্য একজন সত্যিকারে ভালোবাসার মানুষ পেয়েছে। সবাই সবার মতো সবার জীবনে ভালো আছে এরচেয়ে আর বেশী কি চাই জীবনে।
.
.
চলবে
চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here