#এক_সায়াহ্নে_প্রেমছন্দ
#নুরুন্নাহার_তিথী
#পর্ব_১৯
বাসায় ফিরে মাশরিফ গম্ভীর হয়ে বসে আছে। মাশরিফকে গম্ভীর মুখে বাসায় ঢুকতে দেখে মহিমা বেগম বেশ চিন্তিত হলেন। ঘরের দরজাও বেশ শব্দ করে লাগিয়েছে। মহিমা বেগম বার কয়েক ডেকে সাড়া না পেয়ে মেয়ে রিতিকাকে ফোন করলেন। রিতিকা তাকে কিছুটা বলল। এবার মহিমা বেগম মাশরিফের ঘরের সামনে গিয়ে কয়েকবার টোকা দিলেন। ভেতর থেকে মাশরিফ বলল,
“মা, যাও। আমি একটু একা থাকতে চাই।”
কপালে হাত রেখে শুয়ে আছে সে। মহিমা বেগম আবারও ডাকলেন। মাশরিফ এবার জবাব দিলো না। এবার মহিমা বেগম বলে ওঠলেন,
“তুই আমার উপর রাগ দেখাচ্ছিস কেন? আমি কি তোকে কিছু বলেছি? দরজাটা খোল না।”
বারবার ডাকাতে মাশরিফ বাধ্য হয়ে উঠে দরজা খোলে। দরজা খুলে দিয়ে বিছানায় গিয়ে বসে পরে। মহিমা বেগমও ছেলের পাশে বসলেন। ছেলের মাথায় হাত রেখে বললেন,
“আমার ছেলে তো এতো রাগে না। রিতিকা বললেই কি তোকে আমি বিয়ে দিব নাকি? অন্য কোনো কারণ আছে কী? বল আমাকে।”
মাশরিফ চোখ-মুখ কুঁচকে নিল। মাকে বলল,
“কিছু হয়নি। তবে এটা মনে রেখো, আমি নিজের পছন্দের বাহিরে বিয়ে করব না। আমার তো তাকেই লাগবে যাকে আমি ভালোবাসি। তা যদি মানতে না পারো তবে আমাকে কখোনো বিয়ের কথা বলবে না। আর তোমার মেয়েকে বলে দিও, কাশফার চিন্তা বাদ দিতে। কাশফার সম্পর্কে আমার কানের কাছে যেনো ঘ্যানঘ্যান না করে। এক জীবনে আমাকে কেউ ভালোবাসলে তাকেও যে আমার ভালোবাসতে হবে এমন তো না। আমি যার কাছে মানসিক শান্তি পাবো, আমি তাকেই ভালোবাসব। তার ত্রুটি গুলোকে নিয়েই তাকে ভালোবাসব। আমাকে যদি শখানেক মেয়ে ভালোবাসে তবে কি আমিও ওই শখানেক মেয়েকেই ভালোবাসব বা বিয়ে করব? আজব তোমার মেয়ে! আপু যে ইমোশোনালি উইক এটা ওই ধুরন্ধর কাশফাও জানে। তোমাকে আগেই বলে রাখলাম, আমাকে যতোই ইমোশোনালি ব্ল্যাকমেইল করো না কেন, আমি নিজের পছন্দ থেকে এক পাও বিচ্যুত হবো না। বেশি বাড়াবাড়ি করলে বাবার মতো চলে যাব! বাবা তো মিশনে শ*হীদ হয়েছেন, আমি সেচ্ছায় চলে যাব।”
মহিমা বেগমের হৃৎপিন্ড ধ্বক করে ওঠল। কলিজাতে যেনো চাপ লাগল। কোনো ভাবনা-চিন্তা না করেই ছেলেকে নিজের দিকে ঘুরিয়ে বাম গালে চ*ড় দিয়ে বসলেন। তারপর কিছু না বলে ছেলের ঘর থেকে বেরিয়ে নিজের ঘরে গিয়ে দোর দিলেন।
মাশরিফ গালে হাত দিয়ে মাথা নিচু করে আছে। তার এখন বোধোদয় হয়েছে, সে যে শেষোক্ত কথাগুলো মোটেও ঠিক বলেনি। এসব তার বলাটা অন্যায় হয়েছে। সে জানে তার মা এখন কাঁদছে। দেয়াল ঘড়িটির দিকে তাকালো। আটটার কাঁটা ছুঁইছুঁই। আর চার ঘণ্টা পর তার জন্মদিন শুরু হবে। জন্মদিনে মা রাগ করে থাকবে তা সে কিছুতেই মানতে পারবে না। তাই প্রথম প্রহরে মায়ের রাগ তাকে ভাঙাতেই হবে।
________
তিতির রিক্তাদের থেকে সন্ধ্যার সময়কার কান্ড শোনে হাসতে হাসতে নাজেহাল অবস্থা। তিতির বলল,
“যাক। শ*য়*তা*ন গুলা বৃহৎ ঢাকা শহরের অলিগলি খুঁজে ফিরুক। তারপর দেখবি না পেয়ে মাথা থেকে এই ভূ*ত নেমে যাবে।”
মৃদুলা, রিক্তা হাসিতে তাল মেলারেও ইতির মন মানছে না। সে চিন্তিত কণ্ঠে বলল,
“এখন ডিজিটাল যুগ। এখন মানুষ অলিগলি পায়ে হেঁটে খোঁজে না। খোঁজ করে ইন্টারনেটে। আর ইন্টারনেট সবাই ব্যাবহার করে। ওরা যদি ফেসবুকে তোর ছবি দিয়ে দেয়? তখন যদি সেটা তোর আশেপাশের কেউ দেখে? তখন? তখন তো তোর খোঁজ পেয়ে যাবে।”
তিতিরও ভাবনায় পরে গেল। কিন্তু অতো দূরদর্শী চিন্তা সুজন, পলাশদের ঘটে আসবে না বলে ভাবল। সে বলল,
“আরে ওরা হচ্ছে ছিঁ*চকে চো*রের মতো। একটা ঘটনা ঘটিয়ে এক-দেড় মাস নিঃখোঁজ থাকে। ওরা সুযোগ সন্ধানী। কয়দিন খোঁজ করে দেখবি থেমে যাবে। ওদের অতো ক্ষমতা নাই। ক্ষমতা থাকলে তো আমরা ফরিদপুর ছাড়ার আগেই আটকাতে পারত।”
রিক্তা ও মৃদুলাও তিতিরের সাথে একমত। ইতি লম্বা নিঃশ্বাস ফেলে বলল,
“জানিনা রে। আচ্ছা বাদ দে। আমি একটু বেশিই দুঃশ্চিন্তা করি। বাসা তো পেয়েছিস। আন্টি, হিয়া ও হায়াত কি কালকেই চলে আসবে?”
“হ্যাঁ। মা বলেছে সকাল সকাল বাসে ওঠবে। হাসিবকে বলব দুইটা খাট, আলমারি, সোকেস, সোফা সেটটা পাঠিয়ে দিতে। ট্রাকের লোকদেরও বলে দিতে বলব যাতে বাসার ভিতরে জায়গামতো সব ঠিক করে রাখে। আমরা তিনটা মেয়ে অতোসব টানাটানি পারব না। কালকেই সব সেট করে উঠে পরব। একটা ভালো চু*লা কিনতে হবে। আগেরটাতে গ্যাস লিক হতো।”
“সেই ভালো। তবে আমার মনে হয় কী, আন্টিদের পরশু আসতে বল। দেখ গোঁছগাছ করতে হবে। হায়াত তো বাচ্চা। ধুলোবালিতে প্রবলেম হবে। তুই গ্যাপের মধ্যে গিয়ে ঘোরদোর ঝা*ড়ু দিয়ে আসলি।”
মৃদুলার কথায় তিতিরেও মনে হলো। সে বলল,
“তাহলে মাকে ফোন করে বলি। মা তো আজকেই চলে আসতে চাইছিল। তার আমাকে নিয়ে নাকি ভয় হয়।”
রিক্তা হেসে বলল,
“হবেই তো। তার সুন্দরী মেয়েকে যদি ডা*কা*ত উঠিয়ে নিয়ে যায়!”
“হইছে থাম। রাখি এখন। মাকে ফোন করে হাসিবকেও ফোন করতে হবে।”
“টাটা সুন্দরী! একটা কথা!”
রিক্তা থামালে তিতির অনুমতি দেয়,
“বল কী কথা?”
“ওই বেটার কী খবর?
তিতির সন্দিহান কণ্ঠে শুধায়,
“কে?”
রিক্তা বাঁকা হেসে বলে,
“আমারে কি ব*ল*দ পাইছিস? আমি তোর ব্যাগ সার্চ করে চিঠিটা পড়ছি। মেজর M.I? কী খবর তার? তার আর কোনো চিঠি আসে নাই?”
তিতির দীর্ঘশ্বাস ফেলে। অতঃপর বলল,
“আমি তার কী হই? সে আমাকে কেনো চিঠি দিবে? প্রথমটা হয়তো অতি আবেগে দিয়েছে তারপর তিক্ত বাস্তবতায় সরে গেছে। অবশ্য তাতে আমার কিছু যায় আসে না।”
রিক্তার চোখ-মুখের উচ্ছাস মুহূর্তেই মুষড়ে গেল। কিছু বলতে নিবে তার আগেই তিতির তাড়া দেখিয়ে কল ডিসকানেক্ট করে দিল।
ফুঁস করে নিঃশ্বাস ফেলে হাসিবকে কল লাগায়। হাসিব ও সাইফের সাথে কিছুক্ষণ কথা বলে জিনিসপত্র পাঠাতে বলে কথা শেষ করে। এখন কথা বলবে মায়ের সাথে। মাকে ফোন করলে তিতিরের চাচাতো বোন তিহানা ফোন রিসিভ করে। রিসিভ করেই সালাম দিয়ে বলল,
“কেমন আছো তিতির আপু?”
তিতিরও সালামের জবাব দিয়ে বলল,
“আলহামদুলিল্লাহ্। তুই কেমন আছিস?”
“আমিও আলহামদুলিল্লাহ্।”
“মা, কইরে তিহু?”
“বড়োমা তো সব গোঁছাচ্ছে।”
“তোর বড়োমাকে ফোনটা দে তো।”
তিহানা গিয়ে ফোনটা নাজমা বেগমকে দেয়। নাজমা বেগম ফোন কানে নিয়ে বলেন,
“হ্যাঁ বল।”
“মা, তোমরা কাল এসো না। পরশু আসো।”
নাজমা বেগম অবাক হয়ে গেলেন। জিজ্ঞেসা করলেন,
“কেনো রে? কালকে আসলে কী সমস্যা? আজকে আসতে চাইলাম, আসতে দিলি না। আবার কালকেও মানা করছিস। কেনো?”
তিতির মাকে বলল,
“ঘর গোঁছাতে হবে না? আর হায়াতকে কিভাবে রাখবে? ধুলোবালিতে ওর তো এ*লার্জি হবে।”
“আমরা আসলে তোর সাহায্য হবে। হায়াতকে হিয়া রাখবে।”
এরইমধ্যে তিতিরের চাচি রোকসানা খানম এসে বললেন,
“ওরে তিতির, তোর মাকে বলে লাভ নেই। সে তোকে নিয়ে খুব দুঃশ্চিন্তায় থাকে। আমি এতো করে বললাম, দুটো দিন আরও থেকে যান। শোনেই না।”
তিতির এবার মাকে অসন্তোষ নিয়ে বলল,
“তুমি কাকির কথা শোনো। পরশু আসবে। আর আমাকে নিয়ে চিন্তার কী হলো? আমি থাকি হোস্টেলে। আমার সাথে কতো মেয়েরাই থাকে। আমি তোমার কোনো কথা শুনতে চাই না। তুমি কালকে আসবে না। আমি কাল সব ঠিকঠাক করব, তারপর আসবে।”
“কিন্তু..”
“কোনো কিন্তু না। সিজন চেঞ্জ হচ্ছে। আবার ধুলোবালিতে হায়াতের ঠান্ডাও লাগবে। হিয়াকে ফোনটা দাও।”
ফোনটা লাউডস্পিকারে ছিল। হিয়া বলল,
“হ্যাঁ বল।”
“তুই কোন সাবজেক্টে পড়বি ঠিক করে রাখ। তোকে এখানকার ন্যাশানাল ভার্সিটিতে ভর্তি করব।”
হিয়া অবাক হয়ে বলল,
“তার কী দরকার? মেয়ে সামলিয়েই সময় পাই না।”
“সময় বের করবি। মা আছে তো হায়াতকে রাখতে। বিয়ে, প্রেগনেন্সির জন্য ভর্তি হয়েও ক্লাস করিস নাই। এখন নতুন করে ভর্তি হবি। তোর নিজের জন্য একটা শক্ত খুঁটি লাগবে। পড়ালেখা করে যাই করিস করবি।”
“আচ্ছা, তুই যা ভালো মনে করিস কর।”
তিতির এবার ওর কাকি রোকসানা খানমকে বলল,
“কাকি, তোমরাও সাথে আসো।”
“না বাবা। পরে যাব নে সময় বুঝে। তোর চাচা ছুটি পাবে না।”
“আচ্ছা পরেই এসো। রাখছি।”
তিতির ফোন রেখে এবার পড়তে বসে। কাল সকালের ক্লাসে ছোটো ক্লাস টেস্ট আছে।
________
ঘড়ির কাঁটায় দশটা। মাশরিফ দেখল ওর মা এখনও ঘরের দরজা খোলে নাই। চুপিচুপি বাহিরে গিয়ে কেক বানানোর প্রয়োজনীয় জিনিসপাতি কিনে আনল। সে এতো সময় কেক বানানোর রেসিপি ইউটিউবে দেখেছে। সবচেয়ে সহজ রেসিপিটা ট্রাই করবে। চকলেট কেক বানাবে। বাজার থেকে কেক মোল্ড ও কাপকেক মোল্ড সবই নিয়ে এসেছে। চকলেট সিরাপ, ডার্ক চকলেট, কোকো পাইডার, বেকিং পাউডার, সোডা সব। এখন সব নিয়ে রান্নারে গিয়েছে। ছোটোবেলায় একবার কেক বানিয়ে মায়ের জন্মদিনে মায়ের রাগ ভাঙিয়েছিল। অতো ভালো না বানালেও মোটামোটি হয়েছিল। কিন্তু সেসব রেসিপি ভুলেই বসেছে আর কেক মোল্ড যে কই আছে তা খুঁজবে কতোক্ষণে!
সবকিছু পরিমাপ মতো মিশিয়ে মিশ্রণ তৈরি করেছে। কেক মোল্ডে বেটার দিয়ে দেখল কিছু পরিমান রয়ে গেছে। মোল্ডটা ছোটো সাইজের তো। তাই ভাবল, কাপকেক বানিয়ে নিবে। এবার ওভেনে রেখে টাইম সেট করে দিয়ে রান্নাঘরের দিকে নজর দিলো। কী নাজেহাল অবস্থা! ফ্লোরে আটা-ময়দা পরে মাখামাখি অবস্থা। কেকের বেটারও একটু পরেছে। তেলও পরেছে! এসব দেখে তো মাথায় হাত। মা দেখলে মা*র একটাও মাটিতে পরবে না। দ্রুত ঝা*ড়ু এনে আটা-ময়দা পরিষ্কার করে ঘর মোছার লা*ঠি দিয়েও রান্নাঘরটা মুছে নিলো। এরপর কেক হওয়ার অপেক্ষা করতে লাগল।
মাশরিফ ভাবল, কাল যখন ময়মনসিংহ যাবে তখন কেকের পিস নিয়ে যাবে। মা তো এক পিসের বেশি খাবে না। তাই বন্ধুদের ও তিতিরের জন্য নিয়ে যাবে। কালকে সাত বন্ধু একত্রে হবে। সে জানে তার পকেট খালি হবে কিন্তু ব্যাপার না। বন্ধুদের জন্মদিনে ওদের পকেট ফাঁকা করতেও সে ওস্তাদ।
কেক হয়ে গেলে ওভেন থেকে নামিয়ে ঠান্ডা করতে রুম টেম্পারেচারে রাখে। এবার সে আবার বাসার বাহিরে গেল। মায়ের পছন্দের সাদা গোলাপ আনতে সে ভুলেই গিয়েছিল। তাই এখন চু*রি করা ছাড়া উপায় নাই! ক্যাডেট কলেজের বাগানে সব রকমের গোলাপ ফুলের বাহার। এখন গার্ডদের নজর এড়িয়ে প্রথমে একটা সাদা গোলাপ নিবে। তারপর ভাগ্য সহায় হলে বাকি জাতের থেকেও একটা করে নিবে।
মাশরিফ হাঁটার বাহানায় পেছোন দিয়ে গেলো। তাদের কোয়াটারের সামনে সাদা গোলাপ ফুল ফোটেনি। ক্যাডেট কলেজের একাডেমিক ভবনের পেছোন সাইড দিয়ে সামনে গেলো। তারপর গার্ড নেই, এই সুযোগে ফটাফট সাদা, কমলা, লাল গোলাপ ছিঁড়ে। বাকিগুলো নিলো না। তারপর সময় নষ্ট না করে দ্রুত চলে আসে। এখন ঘড়িতে দেখল সাড়ে এগারোটা বাজে। আর আধাঘণ্টা। কেকে ডেকোরেশনের কাজে লেগে পরে। কেকটা মোল্ড থেকে তুলে তার উপর ডার্ক চকলেট গলিয়ে ডেকোরেশন করে নেয়। এবার কিছু চকলেট গ্রেটার দিয়ে গুঁড়ো করে নিয়ে উপর দিয়ে ছিঁটিয়ে এবার কেকটা দশ মিনিটের জন্য ফ্রিজে রাখে। নিজে যায় তৈরি হতে। একটা নীল পাঞ্জাবি পড়ে আসে। ফুলোগুলোর পাতা সুন্দর করে ছেঁটে কেকটা বের করে একটা ট্রেতে ছুঁ*ড়ি সহ রাখে। মায়ের ঘরে চলল এবার।
দুইবার নক করার পরেও মহিমা বেগম দরজা খুললেন না। মাশরিফ এবার বুদ্ধি করে পাশে থাকা স্টিলের বড়ো ফুলেন স্ট্যান্ডটা ফেলে দিল। ঝনঝন শব্দে মহিমা বেগম ভড়কে ওঠেন। মাশরিফ মৃদু আর্তনাদ করে বলল,
“আহ্! পা টা কে*টে*ই গেলো গো। কী ব্যাথা লাগছে। উফ!”
মহিমা বেগম দ্রুত খাট থেকে নেমে দরজা খুলে দেখেন, তার ছেলে হাঁটু গেড়ে বসে মাথা নিচু করে এক হাতে ফুল ও অন্য হাতে কেকের ট্রে। মাশরিফ বলল,
“হ্যাপি বার্থডে টু মি মা। সরি ফর এভরিথিং। আই লাভ ইউ মা।”
মহিমা বেগম হতবাক দৃষ্টিতে ছেলের দিকে কিছু সেকেন্ড তাকিয়ে থাকলেন। এতক্ষণ টুকটাক শব্দ শুনছিলেন কিন্তু নিজের জেদের জন্য উঠে যাননি। এবার বুঝতে পারলেন কেনো! মহিমা বেগম ঘন নিঃশ্বাস ফেলে ছেলেকে ওঠান। ঘরের ভিতরে নিয়ে যান। মাশরিফ খুশিতে মাকে জড়িয়ে ধরে তারপর মায়ের সাথে মিলে কেক কা*টে। মাকে একটু খাইয়ে নিজেও খায়। তারপর মায়ের হাত ধরে বলল,
“সরি। রেগে ছিলাম। তাই ভুল-ভাল বলে ফেলেছি।”
মহিমা বেগম গম্ভীর স্বরে বললেন,
“তোমাকে আমি কখোনো কোনো কিছু নিয়ে জোড় করিনি আর বাঁধাও দেইনি। তোমাকে রুলস, রেগুলেশনের জন্য ক্যাডেটে ভর্তি করে দিয়েছি। কীভাবে জীবনে চলতে হবে তা তুমি পরিস্থিতিতেই শিখে গেছ। এতো আবেগী হয়ো না। তোমার বাবার মৃ’ত্যুর পরও কিন্তু আমি বেঁচে আছি। মানুষটাকে ভালোবেসেই তো সব ছেড়েছিলাম। তাও তোমার সাথে হাসছি। জীবন এমনি। কারও প্রস্থানে কেউ থমকায় না। তোমাকে এতো মিশনে যেতে কী আমি বাঁধা দেই? দেই না তো। যেই মিশনে স্বামী হারিয়েছি, সেই মিশনে ছেলেকেও যেতে দিচ্ছি। তাহলে বুঝো। তোমার বুঝে শুনে কথা বলা উচিত।”
মাশরিফ নিরব রইল। মায়ের কোলে চুপচাপ শুয়ে রইল।
চলবে ইনশাআল্লাহ,