একগুচ্ছ_কালো_গোলাপ🖤
লাবিবা_তানহা_লিজা
#পর্ব_৪১+৪২+৪৩+৪৪
🍁
রাস্তার মাঝে বাথরুম+স্ন্যাক খাওয়ার জন্য একটি হোটেলের সামনে গাড়ি দাড় করায় । লাবিবা শারমিনকে টানতে থাকে বাস থেকে নামার জন্য । কিন্তু শারমিন ভিভোরে ঘুমুচ্ছে । এতো ডাকার সত্বেও না উঠলে লাবিবা রাগ পেয়ে জোরে হাতে চিমটি দিতেই শারমিন ওমাগো বলে চিল্লিয়ে উঠে । এদিক ওদিক তাকিয়ে হন্তদন্ত হয়ে বলে
–দোস্ত দোস্ত আমারে পোকা কামড় দিছে । এই সিটে আমি আর বসবো না । চল আমরা অন্য সিটে চলে যাই । লাবিবা রেগে এক হাত কোমড়ে রেখে বলে –কিহহ!!!তুই আমাকে পোকা বললি এত্তো বড় সাহস তোর ?
–ওহ সরি পোকা বলেছি তোকে না? সরি আর বলবোনা। আমার পোকি বলার উচিৎ ছিলো তোকে । মিসটেক দোস্ত।
–তবেরে….
বাসে দৌড়া দৌড়ি করতে করতে নিচে নেমে দৌড়া দৌড়ি শুরু করে । তানভীর দুটোকে এভাবে দেখে এক ধমকে দাড় করিয়ে দেয় । শারমিন লাবিবা সুর সুর করে হোটেলে ঢুকে কর্ণারের একটা টেবিলে গিয়ে বসে পড়ে । শারমিন টেবিলের উপর মাথা রেখে বলে –একটু ঘুমাইতাম আমি তোর জন্য পারলাম না । সারা রাস্তা ঝাকিতে ঝাকিতে কোমড় ব্যথায় আর নড়তে পারছি না । ঝাকি কমাতে ভাবলাম একটু ঘুমোই তোর জন্য তাও পারলাম না ।
লাবিবার মুখ হা হয়ে গেছে কথা শুনে । সারা রাস্তা লাবিবার কাধে শুয়ে নাক ঢেকে ঘুমোলো আর বলছে ঘুমোই নি । অথচ ওর জন্য লাবিবাই জেগে ছিলো । ঝাকিতে ঝাকিতে শরীর বেশ খারাপ লাগছে এবার ।
ওয়েটার খাবার দিয়ে যায় । লাবিবা হাত দিতে নিলে তানভীর এসে হাতে একটা জুসের গ্লাস ধরিয়ে দিয়ে চলে যায় । চুমুক দিতেই বুঝে যায় এটা তেতুলের জুস । এত্তো ইয়াম্মি বলেই পুরোটা শেষ করে দেয় । একজন ওয়েটার কে ডেকে বলে
–এক্সকিউজ মি এক গ্লাস তেতুলের শরবত প্লিজ ।
–সরি ম্যাম । আমাদের কাছে তেতুলের জুস অথবা শরবত নেই ।
ওয়েটার চলে যেতেই লাবিবা ভাবতে লাগলো এখানে তো অন্য কোন দোকান নেই যে তেতুলের জুস এনে দিবে আমাকে । তাহলে কোথায় পেল স্যার ?
একটু পর তানভীর হাতে কোকা কলা এনে লাবিবাকে দিয়ে বলে
–অন্যকিছু খেও না । বাসে উঠে বমি বমি ভাব আসলে এটা খাবে ভালো লাগবে ।
–স্যার আপনি তেতুলের জুস কোথায় পেলেন ?
–হাতে বানিয়ে দিয়েছি তোমাকে । এমনিতেই ফাস্ট লং টাইম বাসে । তার মধ্যে আবার একা । শারমিন তো ঘুমালোই দেখলাম । জেগে থাকলে বমি আসবেই।
খাওয়া শেষ হলে যাও গিয়ে বাসে উঠো ।
জাহাঙ্গীর স্যার এসে ইতস্তত বোধ করে দাড়িয়ে আছে । এভাবে দাড়ানো দেখে তানভীর বলে
–স্যার যা বলার নির্ধিধায় বলতে পারেন । জাহাঙ্গীর স্যার সোজা হয়ে বলে
–স্যার কাছেই আমার শশুর বাড়ি । আমার স্ত্রী ও মেয়ে এখানেই ছিলো । সীতাকুন্ডে যাওয়ার নাম শুনে আমাদের সাথে যাবার জন্য চলে এসেছে । এখন বাসে সীট নেই বললেই চলে । আপনার গাড়ি তো ফাকা যদি কাইন্ডলি …..
তানভীর কিছুক্ষন চুপ থেকে বলে
–স্যার ম্যাডাম আমার কারে থাকবে আর আপনি বাসে থাকবেন সেটা তো ঠিক হচ্ছে না । আমি বরং দুজন ছাত্রীকে গাড়ি তে নিয়ে আপনাকে মেডামের সাথে ইনজয় করার সুযোগ করে দিয়ে একটু সওয়াব আদায়ের চেষ্টা করি । জাহাঙ্গীর স্যার কৃতঙ্ঘতার হাসি হাসে ।
মিলনকে দিয়ে শারমিন লাবিবাকে গাড়িতে আনা হয় । লাবিবা সামনের সিটে বসে আর শারমিন পেছন সিটে। লাবিবা বসেই গা এলিয়ে দেয় সিটে । এতোক্ষনে যেনো শান্তি পাচ্ছে। মাথা ঘুরিয়ে তাকাতেই দেখে তানভীর তাকিয়ে আছে । অল্প আলোতে খোচা খোচা দাড়ি গুলো নেশাময় চোখে দেখছে । একটু ছুয়ে দিতে ইচ্ছা করছে । পেছন ঘুরে দেখে শারমিন কাচুমাচু করে শুয়ে বিভোর ঘুমে ছেয়ে আছে । মিস্টি একটা হাসি দিয়েই লাবিবা তানভীরের দিকে ঝুকে দু গালের চাপ দাড়িতে মন ভরে একটু ছোয়ে দিয়ে সোজা হয়ে যায় । মুখ এমন করে যেনো কিছুই হয়নি । তানভীর এমন ব্যবহারে কিছুই বললো না । গাড়ি স্টার্ট আকরে দিলো । লাবিবা চোখ বুঝে আছে । তানভীর না তাকিয়েই বলে
–ঠিক আছো ?
লাবিবা চোখ খুলে তানভীরের দিকে তাকিয়ে গাল দুটো ফুলিয়ে বলে
–কিছুক্ষন আগে বাসে থাকার থেকে ভালো । আপনি খুব খারাপ । আমাকে বাসে পাঠিয়ে একাই কিভাবে ছিলেন আপনি ? আমাকে ছাড়া থাকতে পারেন জানতাম না আগে কখনো । আমাকে ছাড়া এর পর থেকে আর কখনো থাকলে খুব কাদবো আমি ।
–না জানার কি আছে ? তোমাকে ছাড়াই তো থাকি । দিনে দেখা হয় কতোক্ষন আমাদের ? হাইস্ট এই পর্যন্ত পাচ ঘন্টা থেকেছো আমার সাথে বাকি উনিশ ঘন্টাতো দুরেই থাকো ।
–এবার থেকে সারাদিন থাকার ট্রাই করবো ।
–রাতে কি আমার আরেকটা বউ থাকবে ?
লাবিবা উত্তরে কিছুই বলে না । চোখ দুটো বন্ধ করে নেয়।তানভীর একটানে নিজের বুকে সাথে মিশিয়ে নেয় লাবিবাকে । মাথাটা কাধে রেখে বলে
–ঘুমোতে অসুবিধা হচ্ছে বলতে হবে । আমি ড্রাইভ করছি । তোমার মতি গতি বুঝার ট্রাই করছিনা । স্টুপিড একটা । এবার ঘুমোও ।
কিছুক্ষন পর লাবিবার দিকে তাকাতেই চার চোখ এক হয়ে যায় । তানভীর নাকে নাক ঘসে বলে
–ঘুমোও আপাদতো । অনেক টাইম পাবে আমাকে দেখার ।
— বসে থাকতে থাকতে কোমড় ব্যথা হয়ে গেছে । ঝাকিতে ঝাকিতে ক্ষুধা পেয়ে গেছে । পচা গন্ধে বমি চলে এসছে । শারমিনকে কাধে রেখে কাধ ব্যথা হয়ে গেছে । মাথা ভোন ভোন করে ঘুরছে।
–ঐটা বাসে হয়েছিলো । এখন খবর কি ?
–সেগুলোর প্রতিফলন হচ্ছে ।
–ওকে ঘুমোও । চোখ বন্ধ করো ।
সকালের দিকে সীতাকুন্ড পৌছে তারা । থাকার জন্য ভালো হোটেল মোটেল নেই বললেই চলে । খোজাখুজি করার পর হোটেল সাইমুনে থাকার ব্যবস্থা করা হয় ।স্টুডেন্টদের ফ্রেশ হয়ে নিতে বলা হয় তারপর হোটেল ভোজ এ খাওয়ার জন্য নিয়ে যাওয়া হয় । লাবিবার পাশ দিয়েই বাবু হাটছে । সময় সময় হাত ও লাগাচ্ছে । লাবিবা ছোয়া পেয়ে শারমিনকে নিজের পাশে দিয়ে অপর পাশে চলে আসে । বাবু কিছুটি না বলেই চলে যায় । লাবিবা অবাক হয় এভাবে চলে যাওয়াতে । অন্যদিন তো বাবু একটা কিছু খারাপ কথা বলতোই আজ কেনো বললোনা ? খেতে বসে যায় সবাই । সবার জন্য ভাত কিন্তু লাবিবার জন্য ডুডুলস । লাবিবা খেতে খেতে তানভীরকে দেখতে থাকে । তানভীর দাড়িয়ে দাড়িয়ে স্টুডেন্টদের খাওয়ার তদারকি করছে আর স্যার দের সাথে কথা বলছে । খাওয়া শেষে হোটেলে ফিরে তিনঘন্টা রেস্ট নেয় স্টুডেন্টরা । তারপর বেরিয়ে পড়ে চন্দ্রনাথ মন্দিরে যাওয়ার উদ্দেশ্যে। উচু সিডি গুলোতে উঠতে উঠতে প্রথমে যেমন স্টুডেন্টদের মাঝে হৈ হুল্লোড় ছিলো এখনি তেমনি বিরক্তির ছাপ ।লাবিবা জিবনে প্রথম এমন হাটা হাটছে । পা ব্যথা হয়ে গিয়েছে । রাস্তাটায় তারা ছাড়া অন্য জনমানব খুবি কম । এখানে খুব কম মানুষ ই উঠার ইচ্ছে করে । পা ব্যথা হলেও সরু রাস্তার পাশে চন্দ্রনাথ পাহাড়ের মন কাড়া সৌন্দর্য মন কাড়ে সবার । লাবিবা শারমিনকে ধরে এগিয়ে যাচ্ছে । মাঝে মাঝে আবার দাড়িয়ে পড়ছে হাটুতে ভর করে । রোদের তাপ অনেক থাকায় বার বার ব্যাগ থেকে পানি বের করে খাচ্ছে । তানভীর পেছন থেকে ঠিকই খেয়াল করছে লাবিবার গতিপথ । টিচার হওয়াতে এই একটা সমস্যা স্টুডেন্ট এর কাছাকাছি থাকলেও অনেকের মধ্যে থাকতে হয় স্পেশাল একজনের সাথে আলাদা থাকা যায় না । অনান্য টিচার দের সাথে গল্প করতে করতে হাটছিলো তানভীর । হটাৎ ই সিডিতে উঠতে গিয়ে পা মচকে যায় লাবিবার । পা ধরে চিল্লিয়ে বসে পড়ে ওখানেই । স্টুডেন্টরা ছুটে আসে দেখার চেষ্টা করে ব্যথা পেয়েছে কোথায় । লাবিবা স্যার স্যার বলে কাদতে থাকে । শারমিন বার বার বলে চুপ কর পা মচকে গেছে আর কিচ্ছু হয়নি । তানভীর পেছনে পড়ে গিয়েছিলো একটু । লাবিবার চিৎকার শুনে ছুটে এসে দেখে পা ধরে বসে চিল্লাচ্ছে । তানভীর হাটু মুড়ে বসে পা নিজের দিকে টেনে নিয়ে দেখতে থাকে কোথাও ইনজুরি হয়েছে কিনা । লাবিবা কাদতে কাদতে বলে –চামড়া উঠে নি । মচকে গেছে । পা দুটো কোলে উঠতে চায় ।
লাবিবার মুখের এমন কথায় অবাক সবাই । তানভীর এদিক ওদিক উপরে একবার চোখ বুলিয়ে ঢুক গিলে । এই মুহুর্তে কোলে নিলে সবার চোখে অন্যরকম হয়ে যাবে সে । একজন প্রিন্সিপাল হয়ে স্টুডেন্টের প্রতি এতোটা কনসান কেউ স্বাভাবিক নেবে না । লাবিবার চোখের জলের দিকে তাকিয়ে মনে মনে বলে
–আই এম সরি দুষ্টু পুতুল । বাস্তব জীবন অনেক কঠিন । একটু শক্ত তো তোমাকে হতেই হবে । চেয়ারম্যান স্যার বলে
–এই শারমিন এলিজাকে ধরে ধরে নিয়ে যেতে পারবে না? ..জবাও ধরো । হয় ফিরে যেতে হবে নয়তো আমাদের সাথে যেতে হবে। শারমিন জবা ধরে উপরে তুলে দাড় করায় । লাবিবাকে নিয়ে হাটতে থাকে । লাবিবা ব্যথায় খুড়িয়ে খুড়িয়ে হাটতে থাকে । এমনিতেই পা ব্যথা হয়ে গেছে তার উপর একটা মা মচকেও গেছে। চোখ থেকে অনবরতো জল পড়ছে । তানভীরের সহ্য না হলেও সহ্য করতে হচ্ছে । লাবিবা মনে মনে গভীর কষ্ট পাচ্ছে । ব্যথা পেয়ে কাদছে তাও স্যার একটুও ধরলো না তাকে । এটা মানতেই কষ্ট হচ্ছে ।পথে একটা ছোট্ট দোকান দেখতে পায় । দোকানের সামনে বাশ পাওয়া যাচ্ছে। পাহাড়ের চূড়ায় উঠতে গেলে বাশ তো লাগবেই । সবাই একটাকরে বাশ কিনে নেয়। লাবিবা এবার বাশে ভর দিয়েই হাটতে থাকে কারো হেল্প ছাড়াই । যারা ট্র্যেকিং করতে পারে তাদের ই এই সাহস টা দেখানো উচিৎ । গরমে গুহার মতো সিড়ি বেয়ে উপরে উঠতে উঠতে সবার ঘাম ছুটে যায় । বিশ্রাম নেওয়ার জন্য একটা ছাওনি পাওয়া গেলে সবাই গিয়ে ওখানে । পাশে দোকান থাকায় সবাই একটাকিছু কিনে খাচ্ছে। লাবিবা চুপ চাপ বসে আছে । কি আর কিনবে সে ? যা যা সবাই কিনে খাচ্ছে তা তো তার ব্যাগেই আছে । পেছন থেকে হাত দিয়ে সামনে ডাব ধরে । লাবিবা চমকে পিছু তাকাতেই দেখে তানভীর কোট খুলে হাতে নিয়ে দাড়িয়ে আছে । শার্টের সামনে দুটো বোতাম খুলা । লাবিবার চোখ উপরে উঠে যায় । উঠে ঘুরে দাড়িয়েই পটাপট শার্টের বোতাম গুলো লাগিয়ে আবার বসে পড়ে । এটা কি হলো ? তানভীর অবাক । ঘুরে এসে লাবিবার পাশে বসে বলে
–হাতে ধরো ডাবটা । খাও ভালো লাগবে । এমনটা কেনো করলে হুটহাট ?
লাবিবা ডাকটা নিয়ে চুমুক দিয়ে বলে
–এমনিতেই মানষের বউ গুলো আপনাকে চোখ দিয়ে গিলে খায় । আজ আপনি ঘেমে শার্ট ভিজে লেপ্টে আছে । তার মধ্যে আবার বুক দেখিয়ে রেখেছেন । ভাবতে পারছেন কি সাংঘাতিক ব্যপার ?
–কেনো ? দেখলে দেখবে । তুমি কি জেলাস ফিল করছো? আমার গরম লাগছে আমি পুরো শার্ট ই খুলে দেবো এখন ।
তানভীর শার্টের বোতাম উপরের টা খুলে ফেলে । আঢ় চোখে মেকি হাসি দিয়ে লাবিবাকে দেখতে থাকে । তানভীর চাইছে লাবিবা আবারো শার্টের বোতাম গুলো লাগিয়ে দিক । একটু আগে কেমন যেন নিজেকে মেরিড মেরিড ভাব আসছিলো । দ্বিতীয়টা খুলতে যাবে সাথে সাথেই লাবিবা ওড়নার পিন খুলে ফেলে।তানভীরের চোখ বড় বড় হয়ে যায় । তাড়াতাড়ি করে লাবিবার হাত ধরে ফেলে । লাবিবা ছাড়ানোর চেষ্টা করে বলে
–ছাড়ুন । আমার গরম লাগছে । আমি খুলে ফেলবো ।
–দুষ্টু পুতুল আমি খুলবোনা বোতাম প্রমিজ । পাগলামো করোনা । সবাই দেখে ফেলবে। আমার জিনিস আমি কাউকে দেখতে দিবো না ।
লাবিবা হাত ছাড়িয়ে চোখে চোখ রেখে বলে
–আমিও আমার জিনিস কাউকে দেখতে দিবো না । এলিজার চোখ জহুরির চোখ । আজে বাজে দিক চোখ পড়ে না । আপনি নিজেও জানেন না আপনার বুক কতোটা মাদকীয়। সেই মাদকে শুধু আমিই মাতাল হবো অন্যকেউ না ।
ওড়নার পিনটা আবার লাগিয়ে কোর্ট হাতে নিয়েই হাটতে থাকে । তানভীর থ খেয়ে বসে থাকে । মাঝে মাঝে তার দুষ্টু পুতুলকে চেনা বড় দায় হয়ে পড়ে তার ।
মন্দিরের সামনে বসে পাহাডের সৌন্দর্য উপভোগ করতে থাকে সবাই । লাবিবা একপাশে বসে পাহাড় কন্যের রুপ লুটতে থাকে । হাতে তার চকলেট । একটা করে কামড় দিচ্ছে আর উপরের দিকে তাকিয়ে মেঘ দেখছে। তানভীর দুর থেকে ঝটপট কয়েকটা ছবি তুলে নেয় । শারমিন এসে হাত ধরে টেনে তুলে লাবিবাকে । লাবিবা পায়ে ব্যথা পায় আবার ।রেগে মেগে শারমিনকে বলে –কুত্তি আমার পায়ে ব্যথা জেনেও তুই টানছিস আমাকে । বেশি ব্যথা পেলে কি তোর জামাই এসে কি কোলে নিয়ে নামাবে আমাকে ?
–দোস্ত ঐ দিকে সেই লেভেলের এক ক্রাস দাড়িয়ে আছে । চল চল আগে আমার সাথে কথা বলিয়ে দে । তারপর আমার জামাই হবো হবো ভাব দেখা গেলে তুই শালী হবি । তখন তোকে কোলে করে নামাবে।
–তুই আবার মাইনষের জামাইয়ের দিক নজর দিছস?
–দোস্ত এইটা আমারি জামাই হবো দেখিস । তুই একবার আয় আমার সাথে ।
লাবিবাকে টানতে টানতে নিয়ে যায় । ছেলেটা পিছু ঘুরতেই দেখে দুটো মেয়ে সটান হয়ে দাড়িয়ে । দু পা পিছিয়ে যায় । কাপা গলায় বলে –কিছু বলবেন ?
লাবিবা শক্ত করে শারমিনের হাত ধরে বলে –আসসালামুয়ালাইকুম । আপনার সাথে একটু কথা বলতে পারি ?
–ওয়ালাইকুম আসসালাম । জী অবশ্যই । হেই এক মিনিট.. আপনাকে চেনা চেনা লাগছে । আপনার মতো আমার একজন জুনিয়র ছিলো । আপনার মতোই হাতে চকলেট নিয়ে থাকতো ।
–নাম কি ?
–লাবিবা।
–ওমা আপনি আমাকে চিনেন😱 আর এদিকে আপনাকে না চেনা এই নিরিহ লাবিবা আমি ।
–ও রিয়েলি লাবিবা। ও মাই গড । তুমি !! আমি তুমার মুইন ভাই । চিনতে পেরেছো ??
–মুইন ভাই । আপনাকে চিনাই যায় না । এত্তোদিন পর ।
মুইনের ফ্রেন্ড এতোক্ষন শারমিনের দিকে তাকিয়ে ছিলো । এগিয়ে এসে হাত বাড়িয়ে বলে
–হাই আই এম নাজমুল হাসান । ইউ ?
শারমিন নাজমুলের দিকে তাকিয়ে হা হয়ে যায় । আগের ক্রাসের সাথে এই ক্রাসের তুলনাই করা যায় না । কাপতে কাপতে হাত এগিয়ে দিয়ে বলে
–সাফিয়া শারমিন।
একটা পিচ্চি এসে লাবিবার উড়না টেনে বলে আপু তোমাকে ঐদিকে নিচে ভাইয়া ডাকছে । ভাইয়া শুনে লাবিবার আত্মা শুকিয়ে যায় । মুইনের সাথে ফোন নাম্বার বিনিময়ের সময় কড়া চোখে তাকিয়ে ছিলো । আল্লাগো মেরে ফেলবে নাকি এবার ? মরলেও যেতে বাধ্য । পাহাড় থেকে নেমে বাচ্চাটার দেখানো জায়গায় পৌছে ভয়ে বুক কেপে উঠে লাবিবার । কাপা গলায় বলে — বাববাববাবু ভাই….।
To be continue______
#একগুচ্ছ_কালো_গোলাপ🖤
#লাবিবা_তানহা_লিজা
#পর্ব_৪২
🍁
তানভীর কোর্ট নেওয়ার জন্য লাবিবাকে খুজছে। পুরো এরিয়া খুজেও না পেয়ে শারমিনকে জিজ্জাসা করে । কেউ কোনো খবর দিতে পারে না । তানভীর মুইনকে খোজতে থাকে । কিন্তু মুইনরা তখন ওখান থেকে বেরিয়ে গেছে । স্যার স্টুডেন্টরা চিন্তায় পড়ে যায় । হটাৎ উধাও কি করে হবে ? আর কেউই দেখবেনা সেটা কি করে হয় ? শারমিন ফেস ফেস করে কেদে দিয়েছে । লাব্বু কই গেলি তুই আমাকে রেখে ..কোথায় খুজবো তোকে বলে ফুফাতে লাগে । আধঘন্টা একঘন্টা অতিবাহিতো হওয়ার পর তানভীর পাগল প্রায় ।চিৎকার দিয়ে বলে
–হ্যালো এভরিওয়ান… আপনারা কেউ দেখেছেন একটা নীল গাউন আর গোলাপী হিযআপ পড়া মেয়ে ছিলো । উজ্জল শ্যামলা মায়াবী চেহারার । ওকে পাওয়া যাচ্ছে না ।
ফিসফাস গুন গুন শুরু হয়ে গেছে ইতোমধ্যে । নানান জনে নানান কথা বলছে । কেউ বলে উঠে পাহাড় থেকে পড়ে টড়ে যায় নি তো আবার ?? তানভীরের বুকটা ছ্যাৎ করে উঠে । একটা পিচ্চি এসে সামনে দাড়িয়ে বলে
–আমি দেখেছি । আপুটাকে তো একটা ভাইয়া ঐ দিকটায় গুহার কাছে যেতে বলেছিলো ।ঐ দিকেই গেছে ।
তানভীরের মাথা কাজ করা বন্ধ করে দেয় । কে ডাকবে দুষ্টু পুতুলকে আর কেনো ডাকবে গুহার কাছে ?
বাবু তেড়ে এসে লাবিবার হাত ধরে টেনে পাহাড়ের ভিতর দিকে নিয়ে যেতে থাকে । লাবিবা হাত এআড়ানোর ট্রাই করছে আর বলছে ” বাবু ভাই হাত ছাড়েন আমার । আমার পায়ে ব্যথা । স্যার কোথায়? আমি স্যারের কাছে যাবো । ” বাবু এক ধাক্কাতে ফেলে দেয় লাবিবাকে । লাবিবা টিলায় ধাক্কা খেয়ে মাটিতে পড়ে যায় । বাবু তেড়ে এসে হিযআপের উপর দিয়েই চুলের মুষ্টি ধরে মুখের সামনে মুখ এনে বলে ” স্যার স্যার করা হচ্ছে তাই না ? এতো বছর থেকে তোর পেছনে ঘুরছি আর তুই আমাকে পাত্তা না দিয়ে প্রিন্সিপালের পেছনে পড়েছিস । কোনটা নেই আমার যা ঐ প্রিন্সিপালের আছে ? সুন্দর চেহারা বাড়ি গাড়ি সবই আছে আমার । তোকে সব দিতে পারি তা রেখে তুই ঐ প্রিন্সিপালের গলায় ঝুলেছিস । কারে করে এসেছিস তাইনা ? প্রিন্সিপালের কাধে মাথা রেখে ঘুমিয়েছিস । পায়ে ব্যথা নামে কোলেও উঠার ধান্দা করিস । কতো টাকা পয়সা দিয়েছে তোকে যে এভাবে ঘেসাঘেসি করিস ? কয় রাতে সুখ দিয়েছে তো…..
বলার আগেই লাবিবা বাবুর মুখে থু থু দেয় । বাবু হাত দিয়ে মুখ মুছে জোরে এক থাপ্পর বসিয়ে দেয় লাবিবার গালে । লাবিবা গাল ধরে জোরে কেদে উঠে । চিৎকার দিয়ে বলে
–কুত্তা তুই মানুষ না । তোর মতো একটা নোংরা গোবরপচা কুত্তাকে আমি কোনদিন পাত্তা দিবো ভাবলি কি করে ? তোর অনেক আগেই স্যার আমার জীবনে এসেছে । আমি শুধু মাত্র স্যারের । আজকের ঘটনা স্যার জানলে তোকে এই পৃথিবী থেকেই আউট করে দিবে ।
“বাবু লাবিবার হাত ধরে আরো ভিতরের দিকে টানতে থাকে ।
” কতো বড় সাহস তোর আমার মুখে থু থু দেস। যেখানে সব মেয়ে আমার জন্য পাগল । আজ আমি তোর আর তোর স্যারের সমস্ত অহংকার গুডিয়ে দিবে । কলেজে দাড়িয়ে সেই চড়ের কথা ভুলিনি আমি । তোর রুপ আর তোর স্যারের চড় ঘুমোতে দেয়না আমাকে । এর প্রতিশোধ তুলবো আজ আমি । তোর হাল বেহাল করে বুকের আগুন মেটাবো আমি । এখানে কেউ আসবেনা তোকে বাচাতে । ”
লাবিবা বাবুর হাতে কামড় বসাতেই বাবু হাত ছেড়ে দেয় । লাবিবা দৌড়াতে থাকে । ব্যথা পা নিয়ে আর বাবুর মতো একটা ছেলের সাথে উচু নিচু সিড়িতে দৌড়ে এগিয়ে সফল হওয়া খুবই দুর্লভ । বাবু পেছন থেকে লাবিবা উড়না ধরে ফেলে । টান দিতেই পিন দিয়ে কাধে ছিড়ে যায় একটু । লাবিবা উড়না রেখেই দৌড় । হিযআপ নষ্ট হয়ে খুলে খুলে যাবে এমন । পিনের জোরে আটকে আছে মাথায় কিন্তু গায়ের উপরে নেই । বাবু আবার হাত ধরে ফেলে লাবিবার । লাবিবা এক চিৎকারে নিচে বসে বাবুর জায়গামতো লাথি মারে । বাবু আবারো হাত ছেড়ে দিতেই আবার খুড়িয়ে খুড়িয়ে সামনের দিকে পেছন ফিরে দৌড়াতেই থাকে । সামনে ধাক্কা খেয়ে ছিটকে পড়ার আগেই বন্ধনে আবদ্ধ হয় । তাকিয়ে তানভীরকে দেখেই ভয়ানক কান্নাটা কেদে উঠে । বিদ্ধস্ত চেহারায় গালে আঙ্গুলের লাল দাগে ছেড়া জামায় উড়না বিহীন নষ্ট হিযআপে দু চোখ ভরা কান্নায় দুষ্টু পুতুলকে দেখে ভয়ে চোখ বন্ধ করে ফেলে তানভীর । গাল মুখ শক্ত করে নিজের সাথে চেপে ধরে । পেছনে স্যার স্টুডেন্ট সবাই এসে এ দৃশ্য দেখে অবাকের চরম পর্যায়ে । বাবু ব্যথায় ধরে কোন মতে উঠে তানভীরের সাথে লাবিবাকে দেখে রেগে গিয়ে বলে
–প্রিন্সিপাল হয়ে ছাত্রীর সাথে নষ্টামী হয় । এমন ভাবে ধরেছে যেন জি এফ না বউকে ধরেছ। রেগে তানভীরের চোখ লাল হয়ে যায় মুহুর্তে । লাবিবাকে আরো শক্ত করে ধরে বলে চিৎকার করে বলে –হারামজাদা বউকেই ধরেছি । বিয়ে করা বউ আমার । সবাই শোনে রাখো এই ফ্লাউয়ার টা আমার বউ।
পাহাড়ে চারিদিকে আমার বউ কথাটি বার বার প্রতিফলিত হতে থাকে । সবাই একথা শুনে তাজ্জব বনে যায়। বাবু তাচ্ছিল্যের হাসি দিয়ে বলে
— ফ্লাউয়ার টা তাহলে আমার হাতেই কলঙ্কিতো। একথা শোনা মাত্র লাবিবাকে জোরে সরিয়ে দিয়ে বাবুর দিকে এগোতে থাকে । শারমিন লাবিবাকে ধরে নেয় । তানভীর সোজা গিয়ে এক লাথিতে ফেলে দেয় । কলার ধরে তুলে বলে
–আমার ফুলে টাচ করার সাহস কে দিলো তোকে ? তুই কি করেছিস তা তুই নিজেও জানিস না । তোর মৃত্যু আমার হাতেই লেখা। বোট জুতো দিয়ে একের পর এক আঘাত করতে থাকে বাবুকে । মুষ্টি বন্ধ করে নাকে পাঞ্চ করতে থাকে । ব্যথায় বাবু কোন প্রতিক্রিয়া দেখাতে পারে না । স্যাররা মরে যাবে মরে যাবেতো বলে এগিয়ে যেতেই মামুন আটকে দেয় । স্যার ছাত্রদের বলে
–আপনারা এগিয়ে গিয়ে শুধু শুধু আহত হবেন না । বাবুর শাস্তি বাবু পাচ্ছে । আপনারা কে বাবুকে প্রটেক্ট করার ?
বাবুর প্রিয় বন্ধুর কথা শুনে আরো অবাক হয়ে যায় । বুঝতে পারে সবাই । লাবিবা তানভীরের এমন রুপ দেখে ভয়ে শারমিনের কাছে গুটিশুটি হয়ে থাকে । বাবুকে শুটিয়ে রক্তাক্ত করে রেগে ফেলে চলে আসে । আর যাই হোক প্রাণ নিতে পারে না সে। তবে এর ভবিষৎ একেবারে নষ্ট । জীবনে উঠে দাড়াতেও পারবে না । যাওয়ার সময় লাবিবার দিকে একবার তাকায়ও না । এতে লাবিবার হাত পা কাপতে থাকে ।
________________
হোটেলের দেয়ালে একের পর এক ঘুসি দিচ্ছে তানভীর ।রাগ কন্ট্রোল না করতে পারলে এইটা স্বাভাব তার । দেয়ালের ধুপ ধাপ শব্দ শুনে দরজায় দাড়িয়ে দাড়িয়ে কাদছে লাবিবা । অনেক বার ডাকার পর ও দরজা খুলেনি তানভীর । চোখ মুছে ভাবে এই লাস্টবার ডাকবে আর ডাকবে না । যেই ভাবা সেই কাজ । দরজায় হাত দিয়ে দুবার বারি দিয়ে বলে –স্যার আপনি প্লিজ দরজাটা খুলুন । আমি আর ডাকবোনা আপনাকে । আই প্রমিজ একবার খুললেই চলে যাবো আর বিরক্ত করবোনা ।
চলে যাবার কথা শুনে তানভীরের আরো রাগ হয় । দেয়াল ছেড়ে বেডে এসে বসে ফুসফুস করতে থাকে । স্যাররা আর কয়েকজন ছাত্র ছাত্রী এসে জমা হয় এখনো দরজা খুলেনি শুনে । প্রফেসর দের ডাক প্রত্যাক্ষান করতে পারে না এবার ।হাজার হলেও সে প্রিন্সিপাল ।দরজা খুলেই লাবিবা সহ সবাই ঢুকে পড়ে । না এগিয়ে দরজায় হেলান দিয়ে চোখ জোড়াকে শান্ত করে । আমিনুল স্যার তানভীরের দিকে তাকিয়ে বলে –স্যার যা হয়েছে তা অত্যন্ত খারাপ কিছু হয়েছে। এর আগে এমন কিছু কখনোই ঘটে নি । ছাত্রদলের বিচক্ষন ছেলে ছিলো । আর কোন মেয়েকে ডিস্টার্ব অব্দি করে নি কারন অনেক মেয়েই তার জন্য পাগল ছিলো । আপনি মেরেছেন এখন আপনার বিরুদ্ধে একটা মুভমেন্ট হতেই পারে । যেহেতু পাওয়ার আছে । ভার্সিটিতে এমন কিছু ঘটবে জেনে আপনাকে সতর্ক করা আমাদের দায়িত্ব । ট্রেন্সফার পর্যন্ত হতে পারে ।
তানভীর একহাতে চুল গুলো ঠিক করে বলে
–আমি ঐ ছেলেটার কথা শুনতে চাই না আমিনুল স্যার । আমার কিছুই হবে না । আপনাদের একটা কথা জানানো হয়নি । আমার পাওয়ার সম্পর্কে আপনাদের কোন ধারনাই নেই।আমি আপনাদের মন্ত্রী ফিরোজ খানের একমাত্র সন্তান ড.তানভীর খান ।
সবার মুখ নিমেষেই হা হয়ে যায় । মন্ত্রীর ছেলে তাদের প্রিন্সিপাল এতো বড় কথাটা অজানা তাদের । জাহাঙ্গীর স্যার তানভীরের হাত ধরে বলে
–স্যার আপনি আপনার পাওয়ার কাজে লাগাতে পারেন কিন্তু আমাদের লজ্জা করছে এটা ভেবে যে আপনার সম্পর্কে আমরা কিছুই জানতে চাইনি । ইভেন আপনার ওয়াইফ যে আমাদের এই দুষ্টুমিস্টি স্টুডেন্ট টা তাও জানি না । আর বেছে বেছে ওর সাথেই এমনটা ঘটলো ।
–স্যার আমি চাইনা অন্যদের মজা নষ্ট হোক । আপনারা ট্রিপ শেষ করেই ফিরবেন । বাট আমি কাল সকালে এলিজাকে নিয়ে ব্যাক করবো ।
–স্যার…
— এইটা আমার ডিসিশন। আপনারা নিজেদের রুমে গিয়ে রেস্ট নিতে পারেন।
সবাই একে একে বের হতে থাকে । লাবিবা বের হতে নিলে নিচের দিকে তাকিয়েই বলে
–শারমিন তুমি একাই যাও । তোমার ফ্রেন্ড থাকবে এখানে ।
লাবিবার আত্মা শুকিয়ে যায় । এখানে থাকবে মানে কি ? শারমিনের হাত ধরে রেখেছে । শারমিন সরাতে নিলে আরো জোরে টেনে ধরে । শারমিন রাগ দেখিয়ে বলে
–হাজবেন্ডের কাছে থাকবি ভয় পাচ্ছিস কেনো ?
এমনিতেও তোর সাথে আড়ি । তুই স্যারের বউ বলেছিস কখনো আমাকে ?
–দোস্ত আমি যে স্যারের বউ আমিই তো আজ জানলাম ।
দুই বান্ধুবি চোখে চোখে কথা বলে বুঝতে পারে সত্যিই বলছে । শারমিন একটু জোরে শ্বাস ফেলেই বলে –এবার কি করবি ?
–দোস্ত আমার সাথে থাক না তুই ।
–তোদের মাঝে দাড়িয়ে দাড়িয়ে কি তোদের বাসর দেখমু আমি ?
বাসরের কথা শুনে আত্মা উড়ে যায় লাবিবার । তানভীর গলা তুলে বলে
–শারমিন তুমার কি পা লুলা হয়ে গেছে যে মুভ করতে পারছো না ?
শারমিন লাবিবার দিকে অসহায় দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলে –অল দ্যা বেস্ট দোস্ত। স্যারের যে রুপ দেখলাম যদি বেচে থাকিস আমাদের আবার দেখা হবে । মরে গেলে মাফসাফ করে দিস ।
শারমিন চলে যাওয়ার পর লাবিবা দরজা লক করে । তানভীরের পাশে এসে দাড়ায় । বুক ধূক ধূক করছে তার । গলা খাকারি দিয়ে বলে
–স্যারররর…..
তানভীর রেগে মেগে উঠে ঠাস করে দেয় এক থাপ্পর লাবিবার গালে । লাবিবাকে ধাক্কা দিয়ে বসিয়ে দিয়ে বলে
–লাস্ট কয়েক মাস থেকে আমি আছি । এতোটা খারাপ বিহেভ করে ঐ বাবু তোর সাথে বলেছিস কখনো আমাকে ? একটা বার বললে আজ এই ঘটনাটা ঘটতো না । আমি তো ভেবেছিলাম এমনি তোকে পটাতে চায় একটা চড় থাপ্পর দিলেই ঠিক হয়ে যাবে । কিন্তু না এতোটা এগিয়ে ব্যপারটা কেনো জানাসনি আমাকে 😡।
–আমি ভেবেছিলাম ঐ বাবু আপনার পিছু নিবে পরে আপনার ক্ষতি করার ট্রাই করবে । আপনাকে যদি ট্রান্সফার করানোর ব্যবস্হা করতো তখন..
–চুপ একদম চুপ । গন্ডমূর্খ ফুল কথাকার । আমি যদি চাই এই ভার্সিটিতে রিটেয়ার করে যেতে পারবো কারো ক্ষমতা নেই আমাকে বের করার । তোর জন্য কুমিল্লায় জয়েন করার একমাসের মধ্যেই এখানে চলে আসছি । কিভাবে কি করে যে আসছি আমি নিজেও জানি না । আর তুই আমার ট্রান্সফার নিয়ে ভয় পাস গাধী কথাকার ।
To be continue____
#একগুচ্ছ_কালো_গোলাপ🖤
#লাবিবা_তানহা_লিজা
#পর্ব_৪৩
🍁
সোফায় বসে গাল ধরে ফেস ফেস করে কাদছে লাবিবা। হিক তুলতে তুলতে বলে
–কেউ ভালুপাসে না । একজন গালে থাপ্পর দিয়ে পগারপার আরেকজন সেই গালেই থাপ্পর দিয়ে ভালোমানুষের রুপ নিয়ে বেডে কপালে হাত ঠেকিয়ে বসে আছে । আব্বু.. আমায় নিয়ে যাও..এই পচা ডলফিনটা মেরেছে আমাকে । তানভীর আড় চোখে একবার লাবিবাকে দেখে আবার অন্যদিকে ফিরে যায় । রাগে তার গা এখনো কাপছে । চিৎ হয়ে বিছানায় শুয়ে চোখ বন্ধ করে থাকে । লাবিবা কেদেই চলেছে । তানভীর আর থাকতে না পেরে উঠে লাবিবার কাছে এসে পাশে বসে গাল থেকে হাত সরিয়ে দেয় । লাল হয়ে থাকা গাল দেখে বলে
–দুষ্টু পুতুল… কোথায় ছুয়েছে তোমার ? বলো আমাকে ? কোথায় কোথায় হাত দিয়েছে তোমার ? হাতে পেটে গালে গলায় হাত দিয়ে বলে এখানে ছুয়েছে ..নাকি এখানে ? বলো আমাকে ? সেদিন ও তোমাকে ছুয়েছিলো তাইনা ? তারজন্য আমার কাছে এসেছিলে তুমি ? একবারো বলোনি কেনো তোমার মুখে ছুয়েছে ঐ রাসকেলটা ..বলো আমাকে তাকাও আমার দিকে। কোথায় ছুয়েছে বলো। লাবিবার গালে ঠোটের স্পর্শ দেয় । দু গাল চেপে ধরে একের পর এক চুমু দিতে থাকে। কোমড় ধরে নিজের কাছে টেনে আনে। কঠিন ভাবে জড়িয়ে ধরে ঠোটে ঠোট মিশিয়ে দেয়। এদিকে লাবিবার দম বন্ধ হয়ে আসছে । তানভীরের পাগলামো তার বুকে ক্ষতো করে দিচ্ছে। ধাক্কিয়ে সরিয়ে দিতে গিয়েও সরাতে পারছেনা।শেষমেষ নিজেই ঠোটে কামড় বসিয়ে দিয়ে তানভীরকে ছেড়ে উঠে দাড়ায় । এদিক ওদিক পালানোর রাস্তা না পেয়ে খাটের নিচে ঢুকে পড়ে । পিছু পিছু তানভীর এসে ধরতে গেলে লাবিবা আরো পিছিয়ে যায় । তানভীর রাগ দেখিয়ে বলে
–দুষ্টু পুতুল বেরিয়ে আসো । ওখানে গেলে কেনো বেরিয়ে আসো বলছি । খাটের নিচে অনেক পোকা মাকড় থাকে কামড়াবে তোমাকে । বেরিয়ে আসো ।
–না আমি বেরোবো না । এখানে একদম পরিষ্কার । আমি আজ এখানেই ঘুমাবো । এতো ছোট জায়গায় ডলফিনের মতো শরীর নিয়ে আপনি আমি অব্দি পৌছতেই পারবেন না আমি জানি ।
তানভীর আশাহত হয়ে ফ্লোরেই বসে পড়ে । দীর্ঘশ্বাস নিয়ে বলে
–দুষ্টু পুতুল..বেরিয়ে আসো শেষ বারের মতো বলছি ।
–একটা বালিশ দিননা। আমার ঘুম পাচ্ছে । আরেকটা কাজ করে দিন প্লিজ । আমার রুমে গিয়ে দেখবেন আমার ব্যাগে চকলেট বক্স আছে । একটু নিয়ে এসে দিননা প্লিজ । খুব ক্ষিধে পেয়েছে ।
–আমি ছোবো না তোমাকে হেপি ? এখন বেরিয়ে আসো ।
–আপনার বিশ্বাস নেই । ওমাগো মেরেই দিচ্ছিলো আমাকে । ওভাবে কেউ কাউকে ধরে নাকি ? আমার ছোট্ট কলিজার জীবনটা ফুরুৎ করে উড়ে যাচ্ছিলো । সেদিন কোয়ির্টারের রাতে কথা কি আমি ভুলে গেছি ? তখন তো বলেছিলেন আপনি আমাকে ভালুপাসেন । তাই বাসর করতে চেয়েছিলেন । আর আজ হুটহাট বলে দিলেন আপনার আমার বিয়েও হয়ে গেছে । এখন তো বাসর ষ্কয়ার করবেন আপনি । আমার জীবনের মূল্য আছে আমার কাছে । আপনার চিপায় পড়ে ছোট্ট কলিজাটা হাওয়ায় উড়িয়ে দিয়ে শহীদ খাইতে না চাওয়া আমার এই নিষ্পাপ মন ।
–তোমার বক বক শেষ হয়েছে ? এবার বের হও।দুষ্টু পুতুল এদিকে আসোতো মাথাটা ব্যথা করছে একটু চুল গুলো টেনে দাও আমি ঘুমাবো ।
লাবিবা শুনেও না শুনার ভান ধরে আছে । ঠেকা পড়েছে তার চুল টেনে ঘুম পাড়িয়ে দিবে ।
লাবিবার কোন হেলদোল দেখা যায় না । তানভীর এবার খাটের তলায় মাথা ডুকিয়ে দিয়ে দু হাত ধরে টেনে লাবিবাকে বের করে । লাবিবা চিল্লাতে থাকে । মুখে হাত দিয়ে চুপ করিয়ে দেয় লাবিবাকে । কোলে নিয়ে খাটে ধপ করে ছেড়ে দেয় উপর থেকে । লাবিবা পা আর কোমড় ধরে আবার চিল্লিয়ে উঠে । ঘাবড়ে যায় তানভীর । পা ধরে বলে
–ব্যথা পেয়েছো আবার । তখনকার ব্যথা কমেনি এখনো ? কোমড়ে হাত দিতেই লাবিবা সরে যায় । পা ছেড়ে দিয়ে দাড়িয়ে পড়ে তানভীর । মুখে বিরক্তির ছোয়া টেনে বলে
–এতো কিসের চেচামেচি তোমার ? আজ হোক কাল হোক আমারি হবে । শুধুশুধু মেজাজ খারাপ করে দাও আমার । চুপসে যায় লাবিবা । চেচামেচি করা যে তার স্বভাবে পরিনত হয়েছে এটা যে কারো বিরক্তির কারন হতে পারে সেটা ভুলেই গিয়েছিলো । তানভীর কিছু না বলেই বাইরে বেরিয়ে যায় ।মিনিট বিশেক পর হাতে খাবারের বক্স নিয়ে ফিরে আসে । বাথরুম থেকে হাত ধুয়ে এসে বক্স খুলে লাবিবার সামনে বসে । আনবক্স করতেই বিরিয়ানির মিস্টি একটা স্মেল বেরিয়ে আসে । লাবিবা এক মিনিট বলে নাক ডুবিয়ে স্মেল নেয় । তা দেখে তানভীর মুচকি হাসে । লুকমা নিয়ে লাবিবার মুখের সামনে ধরতেই লাবিবা মুখে পুরে নেয়। লাবিবাকে খাইয়ে নিজেও খেয়ে নেয় । প্যাকেট ঝুড়িতে ফেলে এসে দেখে লাবিবা পানি খাচ্ছে । মামপট হাতে নিয়ে টেবিলে রেখে লাবিবার গা ঘেসে বসে পড়ে । এবার আর চেচামেচি করছে না লাবিবা । পকেট থেকে ছোট্ট একটা মলম বের করে । আঙুলে নিয়ে আলতো করে লাবিবার গালে লাগিয়ে দেয় । লাবিবার গাল বেয়ে দু ফোটা জল বেয়ে পড়ে । একহাতে বুকে জড়িয়ে নিতেই লাবিবা দু হাতে গলা জড়িয়ে নেয় । ঘাড়ে ছোট্ট করে চুমু দিয়ে বলে
–আল্লাহর অশেষ রহমতে তোমার কিছু হয়নি দুষ্টু পুতুল । আজ যদি তোমার কোনো ক্ষতি হয়ে যেতো আমি নিজেকে কোনদিন ক্ষমা করতে পারতাম না । তুমি তোমার বাবার সম্পদ । সেই সম্পদ তিনি আমার হাতে ভরসা করে হস্তাস্তর করেছে । এখন তুমি আমারো সম্পদ । আমি যদি আমার সম্পদকে রক্ষা না করতে পারি তাহলে আমিতো এই সম্পদ ভোগের অযোগ্য । আমি মরে যেতাম দুষ্টু পুতুল তোমার কিছু হলে । খুব ভালুপাসি খুব । তোমার পশম গুলো পর্যন্ত শুধুই আমার । আর কাউকে আমি ভাগ দিতে নারাজি।
–বাবু আমার হাত ছুয়েছে আর কোথাও ছুইতে পারেনি।
–আর কখনো পারবেও না । তুমি শুধু আমার । এখন রুমে যাও। এখনি ঘুমোবে সকাল সকাল বেরিয়ে পড়বো ।
লাবিবা আরো জোরে জড়িয়ে ধরে । তানভীর হেসে ফেলে ।
–এবার আমাকে চিপকাইয়া শহীদ খাওয়াতে চাও নাকি ?
–উহু। একটু থাকি না এভাবে..ভালো লাগছে । –আচ্ছা তাই নাকি !! ফুল এনার্জিতে আছি । বাসরটা সেরেই ফেলি কি বলো? লাবিবা চট করে ছেড়ে ফট করে দৌড়ে নিজের রুমে চলে আসে । শারমিন লাবিবাকে দেখেই জড়িয়ে ধরে ।
–দোস্ত তুই বেচে আছিস? আল্লাহ তোমার দরবারে লাখ লাখ শুকরিয়া । লাবিবা বিছানায় গিয়ে কম্বল গায়ে টেনে নিয়ে বলে
–একটা কথা কিন্তু সত্য ..কিছু কিছু সময় মানুষ না মরতে পারলেও ঠিকি মরে যায় ।
শারমিন কিছুই বুঝতে পারে না । আবার বুঝতেও চায় না । হা করে তাকিয়ে থাকে ।
সকালে ভোরে উঠে তানভীর লাবিবাকে নিয়ে বাসায় চলে আসে । লাবিবাকে বাসায় রেখে ফিরোজের অফিসে চলে আসে । ফিরোজ ছেলেকে দেখে অবাক হয় । বসতে বলে । তানভীর বসতেই ফিরোজ বলে –টুর রেখে এখানে কি করছো ? এনি প্রবলেম ? গত পরশুইতো সীতাকুন্ডে গেলে ।
–পাপা একটা ছেলেকে মেরেছি । বাবু নাম ।আমার পথে সমস্যা করতে পারে ।
–ঐদিকটা আমি সামলে নিবো টেনশন নিও না । কিন্তু অপরাধ টা কি ছেলেটার?
–তোমার বউমার দিকে হাত বাড়িয়েছে।
–বাচিয়ে রাখলে কেনো ? আমি চাইনা আর বেচে থাকুক ।
–বাচলেও মরার মতোই বাচবে । পাপা লাবিবার থার্ড ইয়ারের পরিক্ষা কয়েকদিন পরেই । শেষ হওয়া মাত্রই আমি আমাদের বাসায় নিয়ে আসতে চাই।
–আমি তো এখনি আমার ঘরের লক্ষীকে চাই । তুমার জন্যেই লেইট হচ্ছে । ড্রাইভ করে এসেছো । বাসায় গিয়ে রেস্ট নাও ।
___________
বিছানায় পা মুড়িয়ে বসে সামনে বই খাতা ছড়িয়ে গভীর ভাবে পড়াশুনা করছে লাবিবা। দরজা খুলে এক দৌড়ে লাবিবার উপর ঝাপিয়ে পড়ে জাননু বলে ।দুজনের চিৎকারে কিচেন থেকে দৌড়ে আসে সাবিনা । দরজায় আসতেই দেখে নুপুর লাবিবা খাটে গড়াগড়ি খাচ্ছে । হাসতে হাসতে বলে পাগলীটার কই থেকে উদয় ঘটলো বলোতো ? নুপুর উঠে বসে বলে
–আন্টি আমার তো পরশু দিন আসার কথা ছিলো কিন্তু ভাইয়াকে বুঝিয়ে আজি চলে এসেছি সকালে ।
–রান্না বসাচ্ছি আমি ।
–আন্টি বেগুন চচ্চড়ি খাবো কিন্তু ।
সাবিনা হাসতে হাসতে চলে যেতেই লাবিবা উড়া ধুড়া চড় শুরু করে দেয় ।
–কুত্তি তুই আজ আসবি বললিনা কেনো আমাকে ? –আরে ছাড় ছাড় । সারপ্রাইজটা কেমন দিলাম বলতো ?।
–ভুরি ভুরি । দুই বান্ধবীতে মিলে গল্প শুরু করে দেয় । কিন্তু মুইনের সাথে দেখা হয়েছে এটা বলেনি লাবিবা । বলবে কোথা থেকে!!গোবর পচা মাথায় মনে থাকলে তো বলবে ।
কয়েকদিন পর শারমিন ফোন দেয় লাবিবাকে । ফোন ধরতেই শারমিন বিদুৎ এর গর্জনের মতো চিল্লিয়ে কেদে উঠে । এদিকে লাবিবা কি হয়েছে কি হয়েছে বলতে বলতে অস্থির । কিন্তু শারমিন কন্টিনিউয়াসলি কেদেই যাচ্ছে । উপায় না পেয়ে লাবিবা চুপ করে থাকে । প্রায় আধা ঘন্টা পর কান্নার গতি কমলে বলে
–দোস্ত।
–বল।
–আমার বিয়ে । চলে আয় ।
–ও আমার আল্লাহ । এতো খুশির খবর । তুই কাদছিস কেনো তাহলে মরার মতন ?
–কাদবোনা আমি ??আমার এত্তোগুলা ক্রাসের কি হপ্পে ? ওরা যে সাইসুইড খাবে । তার জন্য তাদের কষ্টে কষ্টিতো হয়ে আমি জল ঝরাচ্ছি মোর অক্ষি দিয়ে।
–দোস্ত এখন তো আমিও কষ্টিতো হয়ে গেলাম তোর কষ্টে । তোর একটা ক্রাস ও জানতে পারলোনা যে তুই তার উপর ক্রাশ খাইছিস । আফসোস । তো জামাইয়ের উপর কি খাইছিস ক্রাস?
–তারে তো অক্ষি দারা দর্শন করিতে পারিলাম না আদৌ। হুটহাট আব্বু বলিতেছে ছেলে আসিয়াছে আজি বিবাহ হইবে ।
–তুই কষ্টে কষ্টিত হয়ে আমাকে ইকোনোমিক্স ডিপার্টমেন্টে রেখে বাংলা ডিপার্টমেন্টে এন্ট্রি নিচ্ছিস নাকি দোস্ত! এতো বড় বড় অংক গুলা আমাকে তুই হীনা একাই করতে হবে এবার?
–শুনিয়াছি আমার উনি নাকি বাংলা ডিপার্টমেন্টের স্টুডেন্ট ছিলেন । তাই এখন থেকে অভ্যস্ত হচ্ছি সাধু ভাষায় কথা বলিতে । স্যারকে নিয়ে তাড়াতাড়ি চলে আয় ।
–কোন স্যার?
–দুলাভাই স্যার।
–স্যার কেনো যাবে ? আমি একাই যাবো । নুপুরো যাবে আমার সাথে ।
–কেনোরে..তোর একাই হক আছে নাকি ? আমার দুলাভাই স্যারের ও হক আছে । আমি বলে দিয়েছি । তুই রেড়ি হ তারাতারি স্যার তোকে পিক করবে । রাখছি ।
তানভীর লাবিবার বাসার একটু সামনে এসে ফোন দেয় । লাবিবা ফোন ধরে বলে
–স্যার এক মিনিটে দাড়ান আমি তিন মিনিটে আসছি বলেই ফোন কেটে দেয় ।
দশ মিনিট পর লাবিবা বের হয়ে আসে । লাবিবাকে দেখে তানভীর বড় সড় একটা ক্রাস খায় । মুখ থেকে বের হয়ে আসে –এই এত্তো কেনো সুন্দর লাগছে তোমাকে ? তোমার বিয়ে বাড়ি যাওয়া ক্যান্সেল ।
লাবিবা গাড়িতে উঠে বসে বলে –আপনি কেনো সব সময় এত্তো সুন্দর ? আপনার ঘর থেকে বাইরে বেরোনো ক্যান্সেল । বলেই খিল খিল করে হেসে উঠে । সেই হাসির সুরে হৃদয়ে গান গেয়ে উঠে ।
গাড়ি স্টার্ট দেয় । লাবিবা মুখে হাসি ফুটিয়ে তানভীরের দিকে তাকিয়ে থাকে । তানভীর ও আড় চোখে বার বার দেখছে ।
–গোলাপী রানী আমার শালিকার জন্য গিফ্ট কি নিবে ?
–সেটা আপনি জানেন । আপাদত সামনের মোর থেকে আপনার আরেক শালিকাকে পিক করেন ।
মোরে এসে গাড়ি থামতেই নুপুর এক দোকান থেকে বেরিয়ে আসে । তানভীর কে সালাম দিয়ে গাড়িতে উঠে বসে । তানভীর গাড়ি চালাতে চালাতে বলে –নুপুর এতোদিন পর গ্রামে…ব্যপার কি? গ্রাম কি এখন ভালো লাগে না ?
–না স্যার তেমন কিছু না । আব্বু আসতে দেয় না ।
–কেনো ?
নুপুর লাবিবার দিকে তাকাতেই লাবিবা চোখে ইশারা করে ।
–আসলে ভাইয়া । মুইন ভাইয়ের নাম তো শুনেছেন। ভাইয়াটা আমাকে পছন্দ করে অনেকদিন থেকে। আব্বু বিয়ের জন্য ছেলে দেখছিলো । তখন আমি আব্বুকে বলেছিলাম মুইন ভাইকে পছন্দ করি । তারপর থেকে আমার গ্রামে আসা বন্ধ। মজার ব্যপার কি জানেন ভাইয়া ? মুইন ভাই মনে হয় সাত বছর থেকে গ্রামেই আসে না । আমিও দেখিনি । আব্বুও কোন খোজ জানেনা মুইন ভাইয়ের । তবুও আমার গ্রামে আসা বন্ধ।
–বুঝলাম । বাবা মার কথা শুনবে সব সময় । আর মুইনের ব্যপারে কিছু জানলে জানিও । আমরা হেল্প করতে পারি ।
লাবিবা মিটি মিটি হাসছে দেখে তানভীর ও হাসে । চন্দ্রনাথ মন্দিরে তার সামনেই লাবিবা মুইনের সাথে কথা বলেছে । নাম্বারো নেওয়া আছে ।
একটা মলের সামনে গাড়ি দাড় করায় । নুপুরকে আসতে বললে নুপুর গাড়িতেই থাকবে জানায় । মুইনের কথা মনে হতেই মন খারাপ হয়ে গেছে তার । মুইনের সেই পাগলামি গুলো হাসির হলেও আজকাল মন খারাপ করায় তার । মুইনের মতো একটা পাগলের খুবই প্রয়োজন তার জীবনে । এতো এতো ছেলের মাঝেও ঐরকম পাগল একটা ছেলের সন্ধ্যান মেটাতে পারেনি আজো । লাবিবাকে নিয়ে একটা গোল্ডের দোকানে ডুকে তানভীর । শারমিনের জন্য ইয়ারিং দেখছে লাবিবা । তানভীর দোকানদারকে দেখিয়ে নোজ পিন আর কাকন বের করায় । লাবিবা কাকন গুলো হাতে নিয়ে বলে
–ওয়াও । এগুলো নিবেন ? শারমিনের হাতের মাপ এর থেকে বড় হবে মনে হচ্ছে । তানভীর মুচকি হেসে লাবিবার হাত ধরে কাকন পড়িয়ে দেয় । লাবিবা অবাক হয়ে তানভীরের দিকে তাকিয়ে থাকে । তানভীর দোকানিকে বলে
–আপু ডায়মন্ড হবে ?
–কি নিবেন ?
–নোজ পিন ।
–ওয়েট স্যার । দোকানি ভিতর দিকে চলে যায় । লাবিবা হাতের দিকে তাকিয়ে বলে
— আমি নোজ পিন পড়িনা।
–আজ থেকে পড়বে ।
–এসব কি !!
— সেইফটি । আমার বউ সব সময় বউয়ের মতোই থাকবে ।
দোকানি নোজ পিন আনলে একটা চুজ করে পড়িয়ে দেয় নাকে । ঘামে ভেজা নাকে ডায়মন্ড চিক চিক করে উঠে । ঘাম গুলোকেও ডায়মন্ড মনে হচ্ছে । দোকানিরা অন্য দিক তাকাতেই নোজপিনের উপর চুমু দিয়ে দেয় । লাবিবার গাল দুটো লাল হয়ে যায় ।
To be continue_____
#একগুচ্ছ_কালো_গোলাপ🖤
#লাবিবা_তানহা_লিজা
#পর্ব_৪৪
🍁
সল্প সময়ে মোটামুটি ভালোই আয়োজন করা হয়েছে । এতো তাড়াহুড়োর কি আছে সেটাই বুঝতে পারছেনা লাবিবা । বাসার ভিতরে ডুকতেই শারমিনের কান্নার আওয়াজ পায় । ড্রয়িংরুমে দাড়িয়ে এদিকে ওদিকে তাকাতে থাকে । এই বাসায় আজি প্রথম এলো আরো লোকজনের ভিড়ে কোনদিক থেকে কান্নার আওয়াজ আসছে সেটাই বুঝতে পারছে না । তানভীর নুপুর এসে লাবিবাকে দেখে একজনকে জিজ্জাসা করে শারমিনের রুমটা কোনদিকে?দেখিয়ে দিলে এসে রুমে ঢুকে দেখে মাঝখানে শারমিন বসে কাদছে আর চারিদিকে কয়েকজন মেয়ে বসে বসে কান্না দেখছে । লাবিবা শারমিনের কান্না দেখে নিজেও কেদে ফেলে । দু বান্ধুবী গলা ধরে কাদতে বসে। তা দেখে নুপুরো ফুপিয়ে ফুপিয়ে শারমিন লাবিবার গলা ধরে কাদতে থাকে । তানভীর প্রথমে বিরক্ত হলেও পর পর ই মনে পড়ে যায় সে যে একটা পাগলকে বিয়ে করতে চলেছে । পাগলের বান্ধুবী গুলা তো পাগল ই হবে । ওহ সরি পাগলী হবে ওটা । ভেবেই হেসে ফেলে । মেয়ে গুলাকে বলে
— এইযে আপুরা তোমরা অনেক কান্না দেখেছো এবার বের হও তো । বসে বসে মুখ না দেখে বাইরে গিয়ে কাজ করো । বিয়ে বাড়ি অনেক কাজ পড়ে আছে । ওদের মধ্যে একজন বলে উঠে
–আমাদের পাহারা দিতে বলেছে । আপুমনি রাজি হচ্ছিলো না । যদি পালিয়ে টালিয়ে যায় ..
–পালাবে কিভাবে ? আমাদের তো আংকেল পাহারা দেওয়ার জন্য পাঠালো । তোমাদের অন্য কাজে ঢেকেছে ।
মেয়ে গুলো মুখ চাওয়াচাওয়ি করে উঠে চলে গেলো । তানভীর দরজা লক করে সোফায় গিয়ে আয়েশ করে বসে । আপাদত তার কাজ এদের নেকাকান্না দেখা। শারমিনের চোখ থেকে জল মুছে বলে
–দোস্ত তুই কি বিয়ে করতে চাস না ? চল তোকে নিয়ে পালিয়ে যাই ।
ফট করে শারমিনের কান্না স্টপ হয়ে যায় । লাবিবার দিকে কিছুক্ষন তাকিয়ে থেকে আবার কান্না শুরু করে । নাক টানতে টানতে বলে
–তুই আমার বন্ধু নাকি শত্রু বলতো ? পালিয়ে গেলে বিয়ে হবে কার ? লোকজন শুধু শুধু খেয়ে চলে যাবে নাকি ? আমার বাপকে কি তোর এতো বড় দিলওয়ালা মনে হয় ?
–তাহলে তুই কাদছিস কেনো ? ছেলে পছন্দ হয়নি ? চেঞ্জ করে দিবো ?
–ও মা গো ! আবার কি কস! যে ছেলের সাথে বিয়ে হচ্ছে সেই ছেলের প্রতি লাস্ট ক্রাসটাই খাইছি দোস্ত। নাজমুল হাসান নাম। পাহাড়ে একবার দেখেই ক্রাশ খাইছিলাম । একটু আগেও জানতামনা যে এতো ভালো ভাগ্য আমার । আব্বুকে না করে দিয়ে তো কান্না শুরু করছি তাই বাধ্য হয়ে এখনো ক্রাশ কে দেখে খুশি হয়েও কাদতে হচ্ছে আমাকে। এখন হাসলে তো সবাই সন্দেহ করবে । পরে যদি বিয়ে টা না দেয় তখন তো আর আমার ক্রাশকে পাওয়া হবে না আর ।
–তাই বলে বিয়ে বাড়িতে মরা বাড়ির মতো কাদবি 🙄
এইভাবে কেউ কাদে?
–কেনো দোস্ত ভালো দেখাচ্ছেনা আমাকে কেদে ? কিভাবে কাদবো একটু দেখিয়ে দে না ..তুই কত স্টাইল করে কাদিস কত্তো চুইট লাগে ।
দৌড়ে আয়নার সামনে দাড়ায় ।
–দোস্ত আমি একেকটা স্টাইল করে কাদবো তুই বলবি কোনটাতে আমাকে চুইট লাগে ।
তানভীর হা করে এদের কান্নার ট্রায়াল দেখতে থাকে। একটা প্রশ্নের উত্তর কিছুতেই মেলাতে পারে না । এদের তৈরী করার সময় টা এক ছিলো নাকি লাবিবার সাথে মিশে এরা এমন হয়েছে 🤔
সন্ধ্যা হওয়ার সাথে সাথে পুরো বাড়িতে লাইট জলে উঠে । লাল নীল লাইট দেখে লাবিবা নুপুর ওখানেই লাফ দিতে থাকে বাচ্চাদের মতো। তানভীর ধমক দিয়ে লাফানো বন্ধ করে। নুপুর গাল ফুলিয়ে বলে –দোস্ত চল নতুন দুলাভাই দেখে আসি । বলা মাত্রই বরের কাছে দৌড় । সেখানে গিয়ে দেখে বরের শালীরা বরকে খাওয়াচ্ছে আর বরের বন্ধুরা বেয়াইনদের নিয়ে মজা করছে । লাবিবা রেগে নুপুরকে বলে
–এখানে দুলাভাইয়ের আসল শালিকা কে ?
–আমরা ।
–তাহলে ওরা কে ?
–নকল শালিকা ।
–নকল আউট হয়ে আসল ইন হপ্পে এবার ফলো মি ।
হাটতে নিতেই নুপুর ইটে উষ্টা খেয়ে সামনের দিকে পড়ে যেতে নেয় ওমনি একটা ছেলে ধরে ফেলে । লাবিবা পেছন ফিরে তাকিয়ে দেখে হুয়াট এ রোমান্টিক দৃশ্য😱 নায়িকা পড়ে যেতে নিলে নায়ক ধরে ফেলে । নায়কের হাতের উপর নায়িকার পিঠ । নায়িকার চোখের দিকে নায়কের চোখ । নায়কের শার্টের কলারের এক অংশ নায়িকার হাতের মুঠোয় । নায়ক নায়িকা দুজনেই কিছুক্ষনের জন্য এডাম স্মিথের স্ট্রেচু হয়ে গিয়েছে । জানালা দিয়ে এই দৃশ্য দেখে কনে তারাহুরো করে বেড়িয়ে আসে । নুপুরকে একটানে সরিয়ে দিয়ে বলে
— ভাইয়া আপনি তো ভারি বজ্জাত লোক । মাইনষের বউয়ের হাত ধরেন ।
লাবিবা দৌড়ে এসে বলে
–আরে ভাইয়া আপনি যে । কি সমস্যা বলেন তো ..ধরতেই পারেন । নিজের জিনিস নিজেই তো ধরবেন । এই শারমিনটা বেশি কথা বলে । নুপুরের সব মাথার উপর দিয়ে যাচ্ছে। লাবিবার দিকে কাদো কাদো ফেইস করে বলে
–জানু তুই কি আমাকে বেচে দিচ্ছিস নাকি ? ঐ লোকটার জিনিস হয়ে যাবো আমি । তাহলে আমার মুইনের কি হপ্পে 😭 । এই কাথা শুনে মুইন হাসতে হাসতে অবস্হা খারাপ । নুপুর কে চোখ টিপ দিয়ে বলে
–তোমার জানু তোমাকে বেচেই দিয়েছে আমার কাছে । এবার থেকে তুমি আমারি জিনিস । মুইন কে ভুলে টুইনের মম হওয়ার কথা ভাবো ।
–একি এতো সরাসরি টুইনে চলে গেলো শাদী করার আগে । এত্তো ফাস্ট!!
তানভীর লাবিবাকে খুজতে গিয়ে কনেকে নিয়েই স্টেজে বসিয়ে দেয় বরের পাশে । নতুন দুইটা ভাইরা ভাই পেয়ে জমপেশ আলাপ শুরু করে দেয় । এদিকে কনে আর লাবিবা চকলেট খেতে খেতে গল্প শুরু করে দিয়েছে । নুপুর হা করে তিন ভাইরার গল্প শুনছে । গল্পের কাস্ট নুপুর আর মুইন । মুইন আর নুপুরের চোখাচোখি হওয়াতে নুপুর বার বার চোখ নামিয়ে নিচ্ছে । বুকের ভেতর এক দমকা হাওয়া বয়ে চলেছে । মুইন তার সপ্নের পুরুষ । দীর্ঘ সাত বছর পর পলকজড়ানো দেখা । অনুভুতিরা সব জড়ো হয়ে আসছে । সেও লাবিবাদের দিকে মনকে ফোকাস করে । কাজি এসে বিয়ে পড়িয়ে দেয় । বিয়ে পড়ানো পর্যন্ত চুপ ছিলো শারমিন । কিন্তু বিদায়ের সময় খেয়াল করে তার গলায় সমস্যা হচ্ছে । লাবিবা হাত ধরে বলে –দোস্ত দেখতো আমার ভয়েজের এসপার ওসপার হয়েছে নাকি ?
— একটু একটু ।
–হায় হায় । বাসর রাতে যদি ভাঙা গলার আওয়াজ শুনে ক্রাস বলে এইটা কাকে বিয়ে করলাম..দেখতে সুন্দর কিন্তু ভয়েজ বেখাপ্পা । তখন কি হপ্পে?
–এখন আর কাদিস না। এক কাজ কর হাত দিয়ে চোখ ধর আর বার বার নাক টান তাহলেই ভাববে বৈ কাদতেছে ।
শারমিন তাই করলো । কনে বিদায়ের পর লাবিবাকে নিয়ে চলে আসবে তখন দেখে একটা বাইকের সামনে মুইন আর নুপুর দাড়িয়ে । তানভীর মুচকি হেসে ডাক ছেড়ে বলে
–শালিকা…পেছনে বসার অভ্যাস করে নাও । আমরা চললাম । বাসায় ফিরে দুষ্টু পুতুলকে জানিও।
বাসায় লাবিবার জন্য বই পাঠিয়ে দিয়েছে তানভীর । দেখতে দেখতে পরিক্ষার সময় চলে আসে । প্রথম পরিক্ষার সময় সবাই একঘন্টা আগেই কেন্দ্রে চলে আসে । সিট খুজতে খুজতে অনেক সময় পার হয়ে যায় । টিচাররাও চলে এসেছে । লাবিবার সিট নাম্বার খুজে বের করে তানভীর । আগেই বলে দিয়েছিল কেন্দ্রে এসেই যেনো অফিস রুমে আসে তানভীরের সাথে দেখা করার জন্য । পরিক্ষার আর আধাঘন্টা আছে তাও লাবিবার দেখা মেলেনি । লাবিবা নয় একটু খামখেয়ালি তাই বলে শারমিন ও কি খামখেয়ালি হবে ! অপেক্ষা করতে করতে বেড়িয়ে যায় গাড়ি নিয়ে । এদিকে শারমিন লাবিবা অটো থেকে নেমে যায় দেড়ি হচ্ছে দেখে। রাস্তায় একপাশে সব গাড়ি দাড়িয়ে অপর পাশ থেকে এদিকে আসছিলো গাড়ি । দেড়ি দেখে নেমে হাটতে থাকে । পাচ মিনিট হাটলেই পৌছে যাবে । ফুটপাতে ভিড়ে একজন লাবিবা জুতোয় পা রাখে । লাবিবা পা তুলতে নিলে জুতোর ফিতা ছিড়ে যায় । জুতোর ফিতা যেনো নয় কলিজা ছিড়ে গেছে । জুতোর দিক তাকিয়েই এক চিৎকার শুরু করে আমার ভালুপাসার জুতা পরানের জুতা বলে । শারমিন পিঠ বুলিয়ে শান্তনা দেওয়ার চেষ্টা করছে কিন্তু লাবিবার চিৎকার থামার নাম নেই । আশে পাশের লোক গুলো ফেল ফেল করে তাকিয়ে আছে ।
–দোস্ত আমার ভালুপাসার জুতা । দুই মাস হয়েছে কিনেছি । আমার তিন হাজার টাকাই জলে গেলো । এবার আমি জুতো ছাড়া হাটবো কি করে ? আমি পরিক্ষা দিবো কি করে ? আমার কি হপ্পে ?
তানভীর রাস্তায় লাবিবাকে এভাবে দাড়িয়ে থাকতে দেখে জানালার গ্লাস নামিয়ে বলে
–শারমিন কি হয়েছে? দুষ্টু পুতুল কাদছে কেনো ?
— জুতো ছিড়ে গিয়েছে তাই আর যেতে পারবেনা পরিক্ষা দিতে ।
তানভীর পায়ের দিক তাকিয়ে বলে
— দুই মিনিট দাড়াও এখানে । আসছি আমি ।
একজোড়া জুতো এনে পায়ে পড়িয়ে দিয়ে বলে –তারাতাড়ি গাড়িতে উঠো । আর পাচ মিনিট টাইম আছে । এতোক্ষনে জ্যাম ও ছেড়ে গেছে ।
পরিক্ষার হলে ডুকিয়ে দিয়ে বের হতে নিয়ে আবারো লাবিবার দিকে ফিরে আসে । বেঞ্চিতে হাত রেখে বলে –এখন তুমি শুধু একজন সাধারন ছাত্রী নও। এখন তুমি ভার্সিটির প্রিন্সিপালের ওয়াইফ। পরিক্ষা দেওয়ার আগে একবার আমাকে স্মরন করে তারপর শুরু করবে । আমার মান সম্মান তোমার রেজাল্টের উপর নির্ভর করছে । অল দ্যা বেস্ট।
পরের পরিক্ষা গুলো নিয়ে লাবিবা খুব ই সিরিয়াস হয়ে পড়ে । মাথায় তানভীরের কথাটি বার বার ঘুরপাক খায় । তানভীর ও খেয়াল করে লাবিবার চেহারার যৌনুস কমে যাচ্ছে । আগে কোন পরিক্ষার সময় এমন চেহারাতো হয়নি । চোখের নিচে কালো দাগ পড়ে গেছে । পরিক্ষা শেষে দাড়াতে বলে লাবিবাকে । লাবিবা ক্যাম্পাসে বসে তানভীরের জন্য ওয়েট করে । শারমিনকে নাজমুল এসে নিয়ে গিয়েছে । কিছুক্ষন পর তানভীর এসে দেখে লাবিবা দুর্বা ঘাসের উপর বসে দুর্বা ফুল তুলছে । ক্যাম্পাস ফাকা দেখে তানভীর ও সামনে গিয়ে বসে । তানভীরের দিকে চুপচাপ তাকায় লাবিবা । তানভীর থুতনি তুলে বলে –দেখি দেখি আমার পুতুল বউটাকে । চেহারার কি অবস্থা করেছে দেখেছো । গাল দুটো শুষ্ক হয়ে আছে । ঠোটের চামড়া উঠে আছে । আই ডার্ক হয়ে গেছে । এই চেহারায় কেউ বিয়ে করবে নাকি ? আমি তো করবোনা ।
–তাহলে আমার থুতনি ছাড়ুন আর দুরে গিয়ে বসুন ।
এমন কথায় মুচকি হাসে তানভীর । এই সময় মেজাজ একটু কড়া থাকবেই ।
–ঐটা কথার কথা বললাম । তুমি যেমনি হওনা কেন আমি তোমাকেই বিয়ে করবো ।
হাত ধরে উঠায় লাবিবাকে । গাড়িতে এনে বসিয়ে একটা রেস্টুরেন্টে এনে বসায় । খাবার অর্ডার করে । লাবিবার হাত দুটো নিজের হাতের মুঠিতে নেয় । চোখে চোখ রেখে বলে
–সকালে খেয়ে আসোনি কেনো ? তুমি এমনিতেই গুড স্টুডেন্ট। এতোটা সিরিয়াস হতে বলিনি আমি । একটু ফোকাস করলেই সবার থেকে ভালো রেজাল্ট করতে পারবে । সেকেন্ড ইয়ারের ইমপ্রুভ দেওয়ার পেছনে যে আমিই দায়ী সেটা অজানা নয় আমার । আর মাত্র দুইটা পরিক্ষা । তুমি কি জানো পরিক্ষা শেষ হওয়ার পর পর ই তুমার বিয়ে হবে ….কনের যদি এই চেহারা থাকে তাহলে কেমন হপ্পে বলোতো ? শারমিনের বিয়ের দিনো কতো সুন্দর লাগছিলো আর তোমার বিয়ের দিন যদি পচা দেখায় কেমন হবে তাহলে ?
–আপনি তো বলেছিলেন বিয়ে এক বছর পর হবে তাহলে এখনি কেনো ?
–যাতে তোমার সপ্ন গুলো খুব তাড়াতাড়ি পূরন করতে পারি । আর আমার পুতুল বউটাকেও আমার করে পাই।
To be continue______