#এখানে_আকাশটা_ভালবাসার
#লেখিকাঃ নয়নতারা নাতাশা
#পর্বঃ ১৪
.
মানুষের জীবন অনেক বেশি হাসি কান্নাতে পূর্ন, কেউ যখন হাসে দেখা যায় তার বিপরীতে কেউ কাঁদছে।
কখনো সুখের দোলা, আর কখনো দুঃখের ভেলা।
রায়ান জানে সানজানা কেন তাকে ডাকছে অনেকটাই আঁচ করছে পেরেছে সে।
কিন্তু তারপরও ভয় কাজ করছে।
সানজানাকে সে সত্যিই ভালবাসে, সানজানার পরিবার তাদের পরিবার কি মানবে! কেন মানবে না! মনের মাঝেই তর্কবিতর্ক করতে করতে হাজির হলো সানজানার বলা জায়গাতে রায়ান।
“সানজু…”
“হুম রায়ান আয়, বস”
সানজানার পাশে ঘাসের উপর বসে পড়ল রায়ান।
“জায়গাটা খুব সুন্দর তো……”
মৃদু কন্ঠে বলল রায়ান।
“আমার বেশ পছন্দের জায়গাটা”
তারপর দুজনেই চুপ করে রইল। মনে হাজারো শব্দধ্বনি আনাগোনা করলেও সেগুলো কণ্ঠস্বর এর কাছে এসেই পরাজিত সৈনিক এর মতো ফিরে চলে যাচ্ছে।
সৃষ্টি করে যাচ্ছে নীরব অনুভূতিমালা।
ভালবাসি শব্দটা উচ্চারণের সাহস যোগাচ্ছে না কারোর……………..
একসময় নীরবতা ভেঙে রায়ান বলে,
“ডাকলি যে… চুপ করে আছিস”
“আমি ডেকেছি বলে তুইও চুপ করে থাকবি?”
“আরে সেটা না, তুই কিছু বলার জন্য ডেকেছিস কিনা….”
“আচ্ছা রায়ান, তুই কেমন আছিস?”
“এটা শোনার জন্যই ডেকেছিস?”
“বল না…..!”
“হুম আছি…”
“জানি তুই ভাল আছিস, ভাল থাক আমি যাই” সানাজানার ছলছল চোখের চাহনীতে সব কথা বুঝে যাই রায়ান।
সানজানা উঠে চলে যেতে গেলে হাত ধরে ফেলে রায়ান…!
“যেটা বলতে চাইছিস সেটা না বলেই চলে যাবি?, অপরপক্ষের কথা ভাববি না একবার?”
“অপরপক্ষ বুঝেও অবুঝ ছদ্মবেশে থাকতে চাইলে না বলাই কি শ্রেয় নয়?”
সানজানার অভিমানভরা জবাবে মনে মনে কিছুটা হাসল রায়ান।
“এক পক্ষ দ্বিধায় নিশ্চুপ হয়ে যখন অন্যের অপেক্ষায় আছে, আরেক পক্ষ সলজ্জনেত্রে অন্য পক্ষের চোখের দিকে উত্তর খুঁজে ফিরছে….
এখন উপায়?… তবে কি মিলনের শেষ মূহুর্তে বিরহের হস্তক্ষেপ হবে?”
চমকে কেঁপে উঠল সানজানা!
“রায়ান!”
কাঁপা কাঁপা কন্ঠে ডাকে রায়ানকে।
“কি….
অপরপক্ষ কি রণক্ষেত্রে এসে ভয় পেয়ে পিছিয়ে যাবে??”
রসিকতা করে বলে রায়ান।
“ফর্মালিটির পর্দা তুলতে দিবি না তাই না??”
“শুরু তো তুই করেছিস সানজু” হেসে বলে রায়ান।
“বেশ হাত ছাড়,,, চললাম তবে? তুই তোর ফর্মালিটিকে নিয়ে ভালো থাকিস!” অভিমান করে বলে সানজানা।
“যেতে দেওয়ার জন্য তো ধরে রাখিনি সানজু!”
“সত্যি বলছিস? ধরে রাখবি এভাবে?”
“যদি তুই থাকতে চাস”
“যদি চলে যেতে চাই?”
“এক পক্ষ চলে যেতে চাইলে অন্য পক্ষ শক্ত শিকল দিয়ে বেঁধে রাখবে? তখন সেটা সঙ্গত মনে হবে তো সানজু?”
“যেদিন অসঙ্গত মনে হবে সেদিন তোকে না জানিয়েই সবার আড়ালে গিয়ে লুকাবো!”
সানজানার রহস্যময় জবাবের মর্মার্থ বুঝতে অসুবিধা হয়নি রায়ানের। এক মুহূর্তের জন্য অজানা ভয় তার মনকে ছেয়ে ফেলে।
রায়ানের চাহনি চোখ এড়ায়নি সানজানার।
“যাব বলে তো আসিনি রায়ান”
অনেকটাই আশ্বস্ত হলো সানজানার কথায়।
ভালোবাসা এমনই শব্দ যেখানে ‘হারানো’ শব্দের উচ্চারণই যেন ভয়ের সূচনা এনে দিতে যথেষ্ট।
“আজ আমি অনেক খুশি সানজু, আজকের খুশির কারণটা সারাজীবন ধরে রাখতে দিবি সানজু?
“পাশে আছি….. রায়ান”
“জায়গা পেয়েছি”
“ছেড়ে যাবি না তো?”
“না, ইনশাআল্লাহ, মহারানী! আমি পেয়েছি যা তা হারাবার দুঃসাহস আমার নেই”
বলার ভঙ্গি দেখে হেসে ফেলে সানজানা!
এভাবেই শুরু হয় রায়ান সানজানার নতুন পথচলা৷ কেউ কাউকে এখনো একবারের জন্যও বলেনি ‘ভালবাসি’
তবুও ভালবাসে দুজন দুজনকে…!
অব্যক্ত অনুভূতিগুলো প্রতিমূহুর্তে ভালবাসার পঙক্তিমালা জানিয়ে দিয়ে যায়।
রায়ান সানজানা জানেনা কতক্ষণ চুপচাপ বসেছিল, নওশি কল করায় নীরবতা ভাঙে রায়ানের।
সালাম দিয়ে নওশির সাথে কথা বলে রায়ান…
“হ্যাঁ নাশু…”
“ছোট ভাইয়া বাসায় আয়”
“কেন রে, কি হয়েছে?”
“ভাইয়া আজ আমি কবিতা আর ডিবেট ফার্স্ট হয়েছি, তুই তাড়াতাড়ি আয়”
“সত্যি!! আমি এখনি আসছি বাবু”
“হুম আয় ভাইয়া”
কল কাটতেই সানজানা জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকায় রায়ানের দিকে,
“নওশি আজ আবৃত্তি আর ডিবেটে ফার্স্ট হয়েছে, সবাই বাসায় আমাকেও যেতে বলছে”
“ওয়াও, তুই একটা গিফট নিয়ে যা, আর আমার পক্ষ থেকে আরেকটা…”
“ওহ, ঠিক আছে, তুই চল কি কেনা যায়”
“ওকে চল”
যেতে যেতে সানজানা বলে,
“রায়ান সত্যি আমি অনেক খুশি, অনেক…”
সানজানার হাত চেপে ধরে রায়ান…
“আমিও”
তারপর হাত ছেড়ে বলে,
“চল তাড়াতাড়ি… দেরী হলে অভিমানিনী অভিমান করে কথা বলবে না”
“খুব অভিমানী নওশি?”
“হুম, নওশির গল্প তোকে বলব… এখন সব গল্পই বলব” বলে মুচকি হাসে রায়ান।
“বহুত হয়েছে, চল”
.
আজ বাড়িটা আনন্দে ভরে উঠেছে আবার। সবাই খুশি………….
প্রত্যেকের খুশির কারনগুলো ভিন্ন হলেও সাহরাফ সাহেবের বাড়ি আজ আবার খুশিতে ঝলমল করছে।
এক ফাঁকে সায়ান সরি বলতে আসে নওশিকে।
“নওশি?”
“জ্বি ভাইয়া”
“সরি রে, সেদিন আমার ওভাবে রিঅ্যাক্ট করা উচিত হয়নি”
“আরে ভাইয়া সমস্যা না, বাদ দাও”
“হুম, তবে রিদিমা কিন্তু অনেক ভালো মেয়ে, ও-ই আমাকে সরি বলতে বলেছে”
রীতিমতো অবাক হয়ে নওশি, ভাইয়া এগুলো রিদিমাকে বলবে, এখনই, এগুলো তো রিদিমার মনকে তিক্ত করে দেবে!
তবুও এসবে মাথা ঘামায়না নওশি।
“হুম ভাইয়া। আচ্ছা চলো”
“হুম চল”
সবার মাঝে এসে নওশি বলে,
“রুশু তুই আজ আমার জন্য একটা গান গাইবি”
রোশনি উঠে দাঁড়িয়ে মাথা ঝুকিয়ে বলে
“যথা আজ্ঞা, আপুউউউউউউউউউ”
রোশনির কথার ভঙ্গি দেখে হেসে ফেলে সবাই।
এভাবেই আনন্দ আর ভালবাসায় কেটে যায় সময়।
.
কাল বিকালে নিশিকা চলে যাবে।
“জয় আমার না যেতে ইচ্ছে করছে না”
“বুঝতে পারছি রাতপরী, তুমি থাকতে চাইলে থাক কিন্তু দেখ তোমার সাথে সময় কাটাতে ও বাড়ির মানুষেরও ইচ্ছে করে। তুমি কিছুদিন থেকে আবার চলে এসো?”
“হুম”
“তোমার মন খারাপ হতে দিব না কথা দিলাম”
“ইশ…!”
“কি বিশ্বাস হলো না? প্রমাণ দিব?”
“না না না….”
“না বললেই তো হবে না রাতপরী….”
“তুমি না…..!”
হাসতে হাসতে নিশিকাকে জড়িয়ে নেয় জয়। পরম নির্ভরতা খুঁজে পায় নিশিকা।
.
“হাই, কি করো রিদিমা?”
“এইতো শুয়ে আছি”
“অনিক কেমন আছে?”
“আছে ভাল, সায়ান আমার মনে হচ্ছে শেষ পর্যন্ত আমাদের বিয়েটা হবে তো?”
“আরে টেনশন কেন নিচ্ছ? সব কিছু ঠিক আছে রিদিমা”
“তাই যেন হয়”
রিদিমার কথা শুনে সায়ান সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলে রিদিমাকে সে বিয়ে করবেই, যেভাবেই হোক। অনিক থাকুক তাতে কোনো সমস্যা নেই। রিদিমাকে তার চাইই চাই।
এভাবেই প্রত্যেকটা মানুষ এক পরিনত সম্পর্কের দিকে এগিয়ে চলেছে।
বাস্তবতা তাদের কতটা মেনে নেবে আর তারা বাস্তবতার সাথে আমার তারা কতটা তাল মিলিয়ে সেটার উপর নির্ভর করছে তাদের আগামীদিন গুলো…
.
.
(চলবে)