কথা দিলাম পর্ব -০৮+৯

কথা দিলাম 🌸❤️
||পর্ব ~ ৮||
কোয়েল ব্যানার্জী আয়েশা

“সিয়া হঠাৎ করে কি হলো বল তো তোর? এভাবে চলে আসলি কেন? শরীর খারাপ করছে না তো?”

“না। এমনিই ভালো লাগছিলো না আমার।”

“কি হয়েছে বল তো তোর? এতো কেন মন খারাপ করে আছিস সকাল থেকে? আমাকে কি বলা যায় না?”

“কিছু হলে তো বলবো? আমি নিজেই জানি না আমার কি হয়েছে। তুই বাড়ি চল প্লিজ।”

“বাড়ি যাবো? লং ড্রাইভে গেলে হয় না? তোর পছন্দের বাগবাজার ঘাটে?”

“বাগবাজার ঘাট?”

“আজ্ঞে। যাবেন?”

“হম, যাওয়া যেতেই পারে।”

কথাটুকু বলে সিয়ারা জানলায় মাথা ঠেকা দিয়ে বাইরের দিকে তাকিয়ে রইলো। আধভিককে নিজের বোনের সাথে বসে থাকতে দেখে কেন জানো খুব কষ্ট হচ্ছিলো তাঁর। তাই সে ওখান থেকে বেরিয়ে গাড়িতে উঠে বসে। দেবাংশু ওই মুহূর্তে কথা না বাড়িয়ে দৃভ করার সময় জেনে নেবে ঠিক করে গাড়ি স্টার্ট দেয়। সিয়ারা এখন নিজেই নিজেকে প্রশ্ন করছে, “কেন এত কষ্ট পাচ্ছে সে? সে তো এটাই চেয়েছিলো তাই না? তাহলে?” উত্তর পায় না সিয়ারা। ঠিক এইসব জিনিস চোখের সামনে দেখতে হবে বলেই সে এতগুলো দিন নিজেকে আড়াল করে রেখেছিলো। কিন্তু কতদিন আর পালিয়ে বেড়াবে? নিজের ভুলের শাস্তি হয়তো এভাবেই লেখা ছিলো ওর কপালে। নিজের ভালোবাসাকে বলিদান দেওয়ার পর তাঁকে নিজের চোখের সামনে কষ্ট পেতে দেখার থেকে বড়ো শাস্তি কি বা হতে পারে? সে নিজেও কষ্ট পাচ্ছে, আধভিককে কষ্ট দিচ্ছে যাতে নিজে নিজের কাছে অপরাধী হয়ে উঠছে। সাথে হয়তো বোনের জীবনটাও শেষ করে দিয়েছে সে।

“দেব? জানলাটা খুলে দে না। দেখ বাইরে আকাশ মেঘলা করেছে। নিশ্চয় ঝোড়ো হাওয়া বইছে।”

দেবাংশু সিয়ারার কথা মতো এসি অফ করে গাড়ির কাঁচ নামিয়ে দেয়। সাথে সাথে সিয়ারার মুখে এসে ঝোড়ো হাওয়া ছুঁয়ে যায়। চুলগুলো এলোমেলো হয়ে পরে। সিয়ারা দু হাতের উপর নিজের মুখ রেখে পরিবেশটা উপভোগ করে। দেবাংশু ভাবে সে ভুল করেনি ঘাটে যাবার কথা বলে। ওই জায়গাটায় এই সময়টায় গেলে আরো বেশি ভালো লাগবে সিয়ারার। ঘাটে এসে পৌঁছতেই সিয়ারা ঘাটের সিড়িতে গিয়ে বসে। এই ঘাটে খুব একটা লোক নেই, আগের ঘাটে অনেকে বসে আছে। কিছুক্ষণ পর দেবাংশু সিয়ারার সামনে চায়ের ভাঁড় ধরলে সিয়ারা দেবাংশুর দিকে তাকিয়ে হেসে চায়ের ভাঁড়টা নিয়ে নেয়, তারপরে দেবাংশু ওর পাশে বসে। কেউ কোনো কথা বলছে না, নীরবতা বিরাজ করছে ওদের মধ্যে। কিন্তু পরিবেশের নীরবতা পালন করার জো নেই। আকাশে কালো মেঘ এসে জড়ো হয়ে বিদ্যুতের ঝলক দেখা দিচ্ছে। তারপরেই বিকট শব্দ হচ্ছে। এসবের মাঝে পাখির কিচির মিচির আর জলের কলকল শব্দ তো আছেই।

“দেখ দেব! কি সুন্দর লাগছে দুজনকে একসাথে? ভালো মানিয়েছে তাই না?”

সিয়ারার কথা শুনে দেবাংশু সিয়ারার দিকে তাকিয়ে সিয়ারার চাহুনি অনুসরণ করে একজোড়া কপোত কপোতীর দিকে তাকায়। তাঁরা বিবাহিত সেটা মেয়েটার হাতের শাখা পলা দেখেই বোঝা যাচ্ছে।

“হ্যাঁ। বেশ মানিয়েছে।”

দেবাংশু অন্যদিকে তাকালেও সিয়ারা ওদের দিকেই তাকিয়ে থাকে। ওদের মধ্যে কথপোকথন দূর থেকে ওদের অঙ্গভঙ্গির দ্বারা আন্দাজ করতে পারে। মেয়েটি ছেলেটির উপর রাগ দেখাচ্ছে তাঁর হাতে চায়ের সাথে সিগারেট দেখে। সিয়ারার ঠোঁটে হাসি ফুটে ওঠে এবং সে কিছু মুহুর্তের জন্য হারিয়ে যায় অতীতে।

ফ্ল্যাশব্যাক………………..

“এই শুনুন? আমার এই রেস্টুরেন্টে বসে থাকতে ভালো লাগছে না। চলুন না অন্য কোথাও যাই?”

আধভিক নিজের ফোনে কিছু একটা দেখছিলো। সিয়ারার কথা শুনে অবাক না হয়ে হেসে জিজ্ঞেস করলো,

“আমি জানতাম তোমার এই জায়গা পছন্দ হবে না। তাই জন্যেই নিয়ে এলাম।”

“আপনি বড্ড বাজে তো? আমার যে জায়গা পছন্দ হবে না আপনি ইচ্ছা করে আমাকে সেই জায়গায় নিয়ে এলেন? এমন বদ লোকের সাথে আমি বিয়ে তো কি প্রেমও করবো না। হুহ! চললাম আমি।”

“আরে আরে! পুরো কথাটা তো শুনবে নাকি? কিছু বললেই খালি কথায় কথায় ভয় দেখাও কেন?”

আধভিক সিয়ারার হাত ধরে টেনে বসিয়ে দেয় চেয়ারে। সিয়ারা ভেংচি কেটে মুখ অন্যদিকে ফিরিয়ে নিলে আধভিক বলে,

“আমি তোমাকে আগে যখন জিজ্ঞেস করলাম তুমি কিছুই বললে না। তাই আমি ভাবলাম তোমাকে তোমার অপছন্দের জায়গায় নিয়ে আসলেই তুমি নিজের পছন্দ মত জায়গায় যেতে চাইবে। তুমি যে বদ্ধ পরিবেশে, অনেক মানুষের মাঝে থাকতে পারো না এটা আমি খুব ভালো ভাবেই জানি। আই অ্যাম সরি! আমার এমন করা উচিত….

“হয়েছে হয়েছে। এবার চলুন। আমি যেখানে বলবো সেখানে যাবেন তো?”

“নরকে যেতে বললে নরকে যেতেও রাজি আছি।”

“আমাকে দেখে আপনার কি জমরাজের বউ মনে হয়? যে আপনাকে নরকে নিয়ে যাবো?”

“উহুম, তুমি তো আমার অপ্সরা! যে আমাকে স্বর্গে নিয়ে যাবে।”

সিয়ারা লাজুক হেসে মুখ নামিয়ে নেয় আধভিকের চাহুনি দেখে। এই ছেলেটার চাহুনি বড্ড মারাত্মক! যেভাবেই তাকাক না কেন, বুকে এসে লাগে সিয়ারার।

“ধুর, আপনি বড্ড বাজে বকেন। চলুন তো!”

সিয়ারা কোনো মতে কথা ঘুরিয়ে আধভিকের গাড়ির দিকে এগিয়ে যায়। আধভিককে নিয়ে আসে নিজের পছন্দের জায়গা বাগবাজার ঘাটে।

“মিস্টার আর.সি. কোলা? চা খাবেন?”

“সিয়ারা প্লিজ? পাবলিক প্লেসে এভাবে এই নামে ডাকাটা কি খুব জরুরী? আমি কি তোমাকে সিঙ্গারা বলে পাবলিক প্লেসে ডাকি?”

“ঠিক আছে ঠিক আছে। হুহ! বেশি চালাকি করতে হবে না। সেই তো ডেকেই ফেললেন। বদ লোক একটা! নিন ধরুন।”

সিয়ারা আধভিকের হাতে চায়ের ভাঁড় ধরিয়ে দিয়ে একটা সিঁড়িতে গিয়ে বসলো। এক চুমুক দেওয়ার পর সাথে সাথে আধভিকের দিকে তাকাতেই দেখলো সেও চুমুক দিয়ে সামনের দিকে তাকিয়েছে। ও তাকাতেই ওর দিকে তাকিয়ে ভ্রু কুঁচকে জিজ্ঞেস করলো,

“কি দেখছো?”

“আপনার কি অভ্যেস আছে এভাবে চা খাওয়ার? না মানে আপনি তো…

“ওই আর কি! তুমি তো প্রায় আসো আর অভ্যেসও আছে কিন্তু তুমিই ছ্যাঁকা খেলে।”

আধভিক হাসলে সিয়ারা লজ্জায় পরে যায় কিন্তু কিছু বলে না। কিছুক্ষণ পর আধভিককে সিগারেট ধরাতে দেখে সাথে সাথে ওর হাত ধরে বাঁধা দিয়ে বলে,

“এই! আপনার সাহস তো কম বড়ো নয়? আপনি আমার সামনে আবার সিগারেট ধরাচ্ছেন? আমি কিন্তু আপনাকে…

“ফেলে দিচ্ছি। আর ভয় দেখতে হবে না। কিন্তু, চায়ের সাথে সিগারেট না হলে ব্যাপারটা ঠিক জমে না। একটা খেলে কি…এই তো ফেলে দিয়েছি।”

“হম, গুড বয়। আর কখনো জানো না দেখি আমার সামনে এসব। আমার অগোচরে যা খুশি তাই করবেন, জানবোও না কিছু বলবোও না।।”

“না সিয়ারা। তোমার অপছন্দের কাজ আমি কখনোই করবো না।”

“আমি আপনার জীবনে এভাবে হস্তক্ষেপ করতাম না যদি না আপনি এতটা অগোছালো হতেন। আপনি যে হারে ড্রিংক আর স্মোক করেন সেটা শরীরের জন্য ক্ষতিকারক। তাই বন্ধ পুরো, এমনটা না করলে চায়ের সাথে সিগারেট আর অকেশানে ড্রিংকে ছাড় দিতাম। কিন্তু আফটার অল এটা আপনার জীবন, আপনি যেটা চান সেটা করতেই পারেন।”

“আমি তো এটাই চাই সিয়ারা। আমার এই অগোছালো জীবনটাকে তোমাকে সাথে নিয়ে, তোমার দ্বারা গুছিয়ে নিতে।”

“তাহলে কথা দিন এখন থেকে আর সিগারেট, মদ ছুঁয়ে দেখবেন না?”

সিয়ারা নিজের হাত আধভিকের দিকে এগিয়ে দিলে আধভিক সেদিকে তাকিয়ে সিয়ারাকে জিজ্ঞেস করে,

“দেবো! তার আগে তুমি বলো। তুমি আমার অগোছালো জীবনটাকে গুছিয়ে দেবে?”

সিয়ারা আধভিকের কথা শুনে মুচকি হাসলে আধভিক সিয়ারার হাতের উপর হাত রাখলো এবং কাকতালীয় ভাবে একসাথে বলে উঠলো,

“কথা দিলাম।”

বর্তমান……………………

“সিয়া! সিয়া ওঠ এবার। বৃষ্টি আসবে মনে হয়।”

দেবাংশুর ডাকে হুঁশ ফেরে সিয়ারার। খেয়াল করে আকাশ কালো থেকে ঘন কালো বর্ণ ধারণ করেছে। বিদ্যুতের ঝলক এখন মাঝে মাঝেই দেখা যাচ্ছে। সিয়ারা উঠে দাঁড়ালো, দেখলো কপোত কপোতী দুজন একে অপরের হাত ধরে উঠে চলে গেলো।

“চল।”

সিয়ারা আর দেবাংশু গাড়ির দিকে এগিয়ে যায়। দেবাংশু গাড়িতে উঠে বসলেও সিয়ারা উঠতে গিয়েও থেমে যায়। শরীরের উপর বিন্দু বিন্দু জলের ফোঁটা অনুভব করে। বিন্দু বিন্দু ফোঁটা গুলো মুহূর্তের মধ্যে বড়ো আকার ধারণ করে অঝোরে ঝরে পরতে শুরু করে। গাড়ির ভিতর থেকে দেবাংশু আওয়াজ দেয়,

“সিয়া, উঠে আয়। ভিজে যাবি নাহলে।”

কে শোনে কার কথা। সিয়ারা গাড়ির থেকে পিছিয়ে গিয়ে নিজের মনে বৃষ্টিতে ভিজছে চোখ বন্ধ করে। মুষলধারে বৃষ্টি পড়ায় নিমিষেই পুরোপুরি ভিজে গেছে সিয়ারা। দূর থেকে কেউ একজন যে ওকে নিখুঁত ভাবে পর্যবেক্ষণ করছে, ওর বর্ণনা দিচ্ছে সেটা ও জানে না। দূর থেকেই সে ভাবছে,

“কোথায় সেই প্রাণ উচ্ছ্বল সিয়ারা যার প্রেমে আমি পরেছিলাম, এমনই এক বৃষ্টির দিনে? এই সিয়ারার মধ্যে শুধুই নীরবতা, শূন্যতা বিরাজ করছে। ভীষণ ভাবে অসম্পূর্ণ এই সিয়ারা। মানায় না তোমাকে এইরকম নিস্তেজ ভাবে।” ভিজতে ভিজতে সিয়ারা একটা সময় নিজের দু হাত দুদিকে ছড়িয়ে দিয়ে উপরে দিকে মুখ করে চোখ বুঁজে থাকে। চোখের কোণ দিয়ে জল গড়িয়ে পরছে অনবরত কিন্তু কেউ তা বুঝতে পারবে না। বৃষ্টির জলে সাথে তা মিশে যাচ্ছে। নিজের ক্লান্ত হয়ে পরা মনের ক্লান্তি মিটাচ্ছে জানো সে এই বৃষ্টির মাধ্যমে। তৎক্ষণাৎ দ্রুত গতিতে কেউ তাঁকে নিজের শরীরের সাথে জড়িয়ে নেয়।

“আধভিক?”

“ভিজছেন ভালো কথা। একটু চোখ খোলা রেখে ভিজুন। এক্ষুনি তো একটা বড়ো দুর্ঘটনা ঘটে যেতো।”

সিয়ারা তাকিয়ে থাকে আধভিকের দিকে ক্লান্ত চাহুনি দিয়ে। বড্ড ক্লান্ত লাগছে আজকে তাঁর। হয়তো এতদিন পালিয়ে বেড়ানোর পর বাস্তবতার মুখোমুখি হওয়া এই ক্লান্তির কারণ। পালিয়ে বেরানোর সময়ও তাঁর মনে যে পরিমাণ যন্ত্রণা ছিলো আজ তা দ্বিগুণ হয়ে গেছে। আধভিকও কেমন একটা দমে যায় সিয়ারার চাহুনি তে। এমন সময় দেবাংশু এসে সিয়ারাকে নিজের অধীনে নিতে চাইলে আধভিক সিয়ারাকে চট করে কোলে তুলে নেয়।

“আপনি চলে যান। আমি পৌঁছে দেবো ওনাকে।”

সিয়ারাকে নিজের গাড়িতে বসিয়ে দিয়ে দেবাংশুর দিকে তাকালে দেখে দেবাংশু নিজের গাড়িতে উঠে গেছে। আধভিকও গাড়িতে উঠে বসে। গাড়ি স্টার্ট দেওয়ার পর আড় চোখে সিয়ারার দিকে তাকালে দেখে সিয়ারা সিটে মাথা এলিয়ে বাইরের দিকে তাকিয়ে আছে।

“মাঝ রাস্তায় চলে গেছিলেন ভিজতে ভিজতে। আপনার দিকে যে একটা গাড়ি ছুটে আসছিলো তার খেয়াল ছিলো?”

“খেয়াল থাকলে তো আর আপনাকে কষ্ট করতে হতো না এ.ভি.আর.? কষ্টটা না করলেই পারতেন।”

আধভিকের চোয়াল শক্ত হয়ে আসে সিয়ারার কথার মানে বুঝতে পেরে। আর কোনো কথা না বাড়িয়ে সে সিয়ারাকে বাড়ি পৌঁছে দেয়। গাড়ি দাঁড় করাতেই সিয়ারা নামতে যায়, কিন্তু আধভিকের কথা থেমে যায়।

“স্যরি! আমি তখন কাজের প্রেসারে আপনার কথা শুনে অনেক আজে বাজে কথা শুনিয়ে ফেলেছি আপনাকে। ইম্পর্ট্যান্ট ছিলো ডিলটা তাই মাথার ঠিক ছিলো না।”

“প্রয়োজন নেই স্যরি বলার। ভুল কিছু বলেছেন কি? আমি তো জানতাম আধভিক রায় চৌধুরী কখনও ভুল কথা বলেন না। যথেষ্ট বিশ্বাস আছে তাঁর নিজের উপর। আজ যে বড়ো ক্ষমা চাইছেন নিজের কথার জন্য? অন্যের উপর না হয় বিশ্বাস হারিয়েছেন, নিজের উপর বিশ্বাসের ভীতও কি নড়ে গেছে?”

“আমার পুরো পৃথিবীটাই নড়ে গেছে। ওলোট পালোট হয়ে গেছে, সেখানে বিশ্বাস তো সামান্য বিষয়।”

সিয়ারা নিজের প্রশ্ন আধভিকের দিকে ছুঁড়ে দিয়ে অপেক্ষা না করেই চলে যাচ্ছিলো। আধভিকের উত্তরে সে দাঁড়ায়।

“যার জন্য আপনার জীবন শেষ হয়েছে, সে নিজেও তিলে তিলে শেষ হয়ে যাচ্ছে। বলতে পারেন, যে আপনার সর্বনাশের কারণ! তাঁর নিজের সাড়ে সর্বনাশ হয়ে গেছে।”

সিয়ারা চলে যায় কিন্তু তাঁর বলা শেষ কথাগুলো আধভিকের জন্য রেখে যায়। যা আলোড়ন সৃষ্টি করে আধভিকের মস্তিষ্কে, মনে।

“আমি জানি তুমি ঠিক নেই। তোমাকে ছাড়া আমি যেমন অসম্পূর্ণ, আমাকে ছাড়া তুমিও তেমন অসম্পূর্ণ।”

ছয় মাস পর,

সিয়ারা নিজের ডেস্কে বসে ডিজাইন ড্র করছিলো এমন সময় কল এলো সিয়ারার ফোনে। সিয়ারা রিসিভ করে বললো,

“আমার আর দুটো ডিজাইন ড্র করা বাকি আছে এ.ভি.আর.। কিছুক্ষণের মধ্যেই দিয়ে দেবো।”

“ডিজাইনটা আগামীকাল দেবেন। উইদিন আ থার্টি মিনিটস, রেডি হয়ে নীচে আসুন। আমি অপেক্ষা করছি।”

সিয়ারা ড্র করছিলো ডান হাত দিয়ে আর বাঁ কাঁধ দিয়ে ফোনটা কানের সাথে চেপে রেখেছিলো। আধভিকের কথা শুনে মাথা তুলে ফোনটা হাতে ধরে জিজ্ঞেস করলো,

“মানে? আমি নীচে যাবো কেন?

“আমি অপেক্ষা করছি তাই।”

“আপনি অপেক্ষা করছেন কেন?”

“দরকার আছে। আমি কথা বাড়াতে চাই না। আপনাকে ডেডলাইন দিয়ে দিয়েছি, এবার আপনার উপর।”

আধভিক ফোন রেখে দেয়। সিয়ারা উঠে গিয়ে ব্যালকনি দিয়ে দেখে আধভিক সত্যি গাড়ি নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। সিয়ারা দেরী না করে রেডি হয়ে নেয়। রেডি হয়ে ঠিক সময়ে আধভিকের কাছে গিয়ে দাঁড়ালে আধভিক গাড়িতে উঠতে বলে। যাওয়ার পথেও কোনো উত্তর দেয় না আধভিক। গাড়ি দাঁড় করায় ওদের নিজেদের মাল্টিপ্লেক্সে সামনে।

“আমরা মুভি দেখতে এসেছি?”

“হ্যাঁ। চলুন।”

আধভিক আর সিয়ারা একটা অডিওটরিয়ামে ঢুকে বসে। পুরো অডিওটরিয়াম ফাঁকা দেখে সিয়ারা ঘাবড়ে যায়। আধভিক সামনের দিকে তাকিয়ে আছে, শান্ত ভাবে। আধভিকের এই শান্ত রূপ সম্পর্কে সিয়ারা অবগত। সে বুঝতে পারছে আধভিকের মনে এমন কিছু চলছে যা ঝর তুলবে তাই সে বাইরে থেকে এতটা শান্ত।

“আমরা ছাড়া আর কেউ নেই কেন?”

“কারণ এই মুভিটা শুধু আপনার জন্য মিসেস সিয়ারা। আহ! আর কথা নয়। শুরু হয়ে গেছে।”

সিয়ারা কিছু বলতে গেলে আধভিক ওকে থামিয়ে দিয়ে সামনে তাকানোর জন্য ইশারা করে। সিয়ারা চোখ বন্ধ করে একটা বড়ো শ্বাস নিয়ে সামনের দিকে তাকায়। মুভি শুরু হতেই যেই সিনটা দেখায় তাতেই সিয়ারার চোখ বড়ো হয়ে গিয়ে, বুকের ভিতরটা মোচড় দিয়ে ওঠে।

[#ফিরে_আসবো_আগামী_পর্বে 🥀]কথা দিলাম 🌸❤️
||পর্ব ~ ৯||
@কোয়েল ব্যানার্জী আয়েশা

হাতে গোনা কয়েকটা মানুষের উপস্থিতিসহ রাস্তার মাঝখান দিয়ে একজন দৌঁড়াচ্ছে, নিজের সর্বস্ব শক্তি দিয়ে। বলা যেতে পারে সে নিজের জীবন হাতে নিয়ে ছুটছে। কারণ তাঁর পিছনে আরও দুজন ছুটছে তাঁকে ধরবে বলে। একটা সময়ে ব্যক্তিটিকে সেই দুজন ধরে ফেললো এবং নীচে ফেলে দিলো মারবে বলে। দুজনের মধ্যে দিয়ে একজন বন্দুক বার করে তাক করতেই কেউ জানো হাতে পাথর ছুঁড়ে মারলো। ব্যক্তিটির হাত থেকে বন্দুক পরে গেলো এবং সে হাত দিয়ে চিৎকার করে উঠলো।

“আপনাদের সাহস তো কম না যে এরকম লোকালয়ে একজন কে খুন করতে এসেছেন?”

লোকগুলি একটি মেয়ের কণ্ঠস্বর শুনতে পেলো। মেয়েটি রেগে ওদের দিকেই তাকিয়ে আছে। মেয়েটিকে দেখে ওরা দুজন একে অপরের দিকে তাকিয়ে কিছু বলতে গেলে মেয়েটি আশে পাশে যে কয়েকজন লোক আছে তাঁদের কে উদ্দেশ্য করে চিৎকার করে বললো,

“আপনারা কি মানুষ? আপনাদের চোখের সামনে একজনকে এরা খুব করতে যাচ্ছিলো আর আপনারা দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে মজা দেখছিলেন? আমাকেই পুলিশে ফোন করতে হবে দেখছি।”

মেয়েটি পুলিশকে ফোন করতে গেলেই দেখে ওর সম্মুখে একজন ব্যক্তি এসে দাঁড়ালো। ব্যক্তিটিকে পা থেকে দেখা করা শুরু করে মাথা অবধি দেখতেই বুঝলো কম বয়সী একটি ছেলে। কিন্তু এমনভাবে ওর সামনে এসে দাঁড়িয়েছে জানো বাঁধা দিতে চাইছে।

“দেখে তো আপনাকে জেন্টেলম্যান মনে হচ্ছে কিন্তু আমার মনে হয় আপনি এদের লিডার। তাই এদেরকে না আটকে আমাকে আটকাতে এসেছেন।”

মেয়েটি লক্ষ্য করলো ছেলেটি একভাবে মেয়েটিকে দেখছে। মেয়েটি একটু ভয় পেয়ে পিছিয়ে গিয়ে বললো,

“দেখুন? আমি কিন্তু পুলিশে ফোন করছি। এদের সাথে সাথে.. এ কি?”

মেয়েটি নিজের প্রথম বাক্য শেষ করার পর দেখলো ছেলেটি হাত তুলে থানার ইশারা করলো। সেই জন্য পিছন দিকে মেয়েটির নজর গেলে সে দেখে যেই ব্যক্তিটিকে ধাওয়া করা হচ্ছিলো সেই ব্যক্তিটি বন্দুক হাতে থাকা ব্যক্তিটির হাত ধরে দেখছে কোথায় লেগেছে। মেয়েটি অবাক হয়ে গেলো এটা দেখে। কিছু বলতে যাবে ঠিক তখনই একজনের গলার আওয়াজ পাওয়া গেলো,

“কাট, কাট, কাট! এরকম কোনো সিন কি ছিলো নাকি স্ক্রিপ্টে? আমার তো মনে পরছে না। আভাস বাবু? আমি কি কোনো সিন ভুলে গেছি?”

“আপনি কিছুই ভোলেননি মিস্টার সেন। এই মেয়েটি! এই মেয়েটি হুট করে শুটের মাঝখানে চলে এসেছে।”

“শ..শু..শুট?”

“হ্যাঁ গো মেয়ে। এখানে সিনেমার শুটিং চলছে। তাই তো আমরা দেখছিলাম সবাই। তুমিই তো তখন থেকে এসে যা নয় তাই বলে গেলে।”

একজন মধ্যবয়স্ক মহিলা মেয়েটিকে উত্তর দিলে মেয়েটির মুখ একদম শুকিয়ে কাচুমাচু হয়ে যায়। ওর সামনে দাঁড়িয়ে থাকা ছেলেটির দিকে তাকিয়ে দেখে ছেলেটি নিজের ব্লেজার বাম হাতের বাহুতে ভাঁজ করে রেখে, ডান হাত পকেটে গুঁজে ওর দিকে একভাবে তাকিয়ে আছে। ছেলেটির চাহুনি দেখে মেয়েটি আরও লজ্জায় পরে গেলো। আমতা আমতা করে বললো,

“আ..আসলে আমি বুঝতে পারিনি। স..স্যরি!”

ছেলেটির কোনরকম কোনো প্রতিক্রিয়া নেই। মেয়েটি ছেলেটির দিকে একবার তাকিয়ে আবারও বললো,

“পুরো বিষয়টা একদম বাস্তব মনে হচ্ছিলো। বোঝাই যাচ্ছিলো না এটা একটা সিনেমার শুটিং। হিহি, তাই তো আমি বুঝতে পারিনি। ও ডিরেক্টর কাকু! আপনি দারুন ডিরেক্টর বুঝলেন? আপনার এই সিনেমা ভীষণ হিট খাবে, যাকে বলে সুপার ডুপার হিট!”

ছেলেটিকে পাশ কাটিয়ে মেয়েটি ডিরেক্টরের উদ্দেশ্যে কথাটা বলার জন্য এগিয়ে গেলে, ছেলেটি মেয়েটির দিকে ঘুরে যায়।

“বলছো মামনি? সুপার ডুপার হিট হবে?”

“আজ্ঞে হ্যাঁ! বলছি মানে? লিখে দিচ্ছি আমি। আব, স্যরি দাদা! আমি না একদম বুঝতে পারিনি আপনারা অ্যাক্টিং করছিলেন। আপনাদের হাবভাব পুরোই অরিজিনাল মনে হচ্ছিলো, অ্যাক্টিং ভাবার অবকাশ পাইনি। আপনি হাতে একটু বরফ লাগিয়ে নিন প্লিজ।”

“আরে না, না ঠিক আছে বোন। বুঝতে পেরেছি তুমি বুঝতে পারনি।”

অন্যদিকে আভাস বাবু মেয়েটিকে দেখছেন এবং ওর দিকে তাকিয়ে মনে মনে ভাবছেন,

“ব্যাস! হয়ে গেলো আমার ছেলেকে এদেশে রাখার পরিকল্পনা। সব ভেস্তে দিলো এই মেয়েটা। এক্ষুণি আমাকে বলবে, “ড্যাড! হোয়াট দ্যা হেল ইজ দিজ? ইন্ডিয়াতে এরকম শুটিংয়ের মাঝখানে লোকজন ঢুকে পরে? ওহ গড! অ্যাব্রড এর থেকে অনেক অনেক বেটার। আমি এখানে থাকছি না।” ধুর! কতো কষ্ট করে ছেলেটাকে মানালাম এখানে থাকার জন্য, কিন্তু নাহ! এই রে, এই আসছে এবার আমাকে কথা শোনাতে।”

“ড্যাড!”

“আমি তোমার জন্য আজকেই ক্যালিফোর্নিয়ার ফ্লাইট বুক করতে বলে…

“হু ইজ শি ড্যাড?”

“হ্যাঁ কি?”

“হু ইজ শি ড্যাড?”

আভাস বাবু লক্ষ্য করলেন তাঁর ছেলে কথা তাঁর সাথে বলছে ঠিকই কিন্তু তাকিয়ে আছে ওই মেয়েটির দিকে। নিজের ছেলের চাহুনির মধ্যে তিনি মুগ্ধতা দেখতে পাচ্ছেন।

“একবার ওর চোখের দিকে দেখো, ও ঠিক কেমন সেটা ওর চোখ বলে দিচ্ছে। আর ওর ঠোঁট দুটো? ওর চুল যত না নড়ছে ওর ঠোঁট দুটো নড়ছে অনবরত।”

মেয়েটি হঠাৎ করেই হেসে ওঠে আর ছেলেটির চোখ, গলার আওয়াজসহ হৃদস্পন্দনও মনে হয় স্থির হয়ে যায়। সে সাথে সাথে বুকের বাম পাশে হাত রাখলে অনুভব করে, তাঁর হৃদস্পন্দন স্থির হয়নি। বরং চিতার গতিকেও হার মানাতে বসেছে। আভাস বাবু এইসব কিছুই লক্ষ্য করছেন। একবার নিজের ছেলের দিকে তাকাচ্ছেন আর একবার মেয়েটির দিকে। সে সময়ই মেয়েটি সবাইকে বলে দৌঁড়ে ওখান থেকে চলে গেলে ওনার ছেলেও মেয়েটির পিছু নিতে যায় কিন্তু আভাস বাবু ওর হাত টেনে ধরে,

“ভিকি? কোথায় যাচ্ছো তুমি?”

“আই ওয়ান্ট টু নো অ্যাবাউট হার ড্যাড! আই ওয়ান্ট টু নো হু শি ইজ?”

“ভিকি! তুমি কি ভুলে যাচ্ছো তোমার পরিচয়? তুমি “আধভিক রায় চৌধুরী!” আমার ছেলে, আভাস রায় চৌধুরীর ছেলে। আমার ছেলে হয়ে তুমি একটা মেয়ের…

“পরিচয় জানতে চাই। আমি নিজের পরিচয় জানি ড্যাড, তাই আমি ওর পরিচয় জানতে চাই। ও, ও এখনও যাইনি।”

আধভিক এগিয়ে গেলে দেখে মেয়েটি মোড়ের মাথায় পৌঁছেছে। মোড়ের মাথায় পৌঁছে অন্য রাস্তায় ঘুরে যাওয়ার আগে একবার পিছন ফিরে তাকিয়ে হালকা শব্দবিহীন হেসে সামনে ফিরে গেলে আধভিকের হৃদস্পন্দন আবারও বেড়ে গেলো। সে তো এটাই চাইছিলো, যে একবার মেয়েটি পিছন ফিরে তাকাক কিন্তু হাসিটা? ওটা উপরি পাওনা। আধভিক সাথে সাথে হাক দিলো,

“সোহম! এই মেয়েটা সম্পর্কে সমস্ত তথ্য আমার চাই। অ্যাট এনি কস্ট!”

আভাস বাবু অবাক হয়ে নিজের ছেলের দিকে চেয়ে আছেন। উনি ভাবছেন এটা কি সত্যি তাঁর ছেলে আধভিক রায় চৌধুরী? যেই ছেলেকে উনি কখনও কোনো মেয়ে সম্পর্কে কথা বলতে শোনেননি সেখানে একটা মেয়ের সৌন্দর্যর বর্ণনা দিয়ে ফেললো? এও কি সম্ভব?

“ভিকি তুমি এখন বাড়ি চলো। আজকের জন্য প্যাক আপ!”

সবাই গোছগাছ শুরু করে গাড়িতে উঠে বসলেও আধভিক এখনও মেয়েটির যাওয়ার দিকে তাকিয়ে আছে। আভাস বাবু আধভিককে বললেন,

“এখন ফিরে চলো ভিকি। সোহম মেয়েটির পরিচয় ঠিক খুঁজে বার করবে।”

আধভিক চলে যায় আভাস বাবুর সাথে। বাড়িতে যাওয়ার পরেও চোখের সামনে মেয়েটির মুখ, তাঁর কথা বলা, হাসি সব কিছু চোখের সামনে ভাসছে আধভিকের।

“ওহ গড! এটা কি হচ্ছে আমার সাথে? চোখ খুলে রাখছি তাতেও আমার ওর কথা মনে পরছে আর চোখ বন্ধ করলেও। কেন হচ্ছে এমন?”

আধভিক কিছুক্ষণ চুপ করে থাকার পর নিজে নিজেই মুচকি হাসলো আর বললো,

“কি মিষ্টি ছিলো হাসিটা। আর ওর তাকানো? মাই গুডনেস বুকে এসে লেগেছে পুরো। ওহ নো আমি আবারও ওর কথা ভাবছি? উফ, কি করবো আমি এখন? পাগল হয়ে যাচ্ছি মনে হচ্ছে।”

আধভিক ধপাস করে পিছন দিকে শুয়ে পরে নিজের বিছানায় হাত ছড়িয়ে। মেয়েটির কথা বলা, হাসি, মেয়েটিকে নিয়ে ভাবতেই ভাবতেই সে ঘুমিয়ে পড়লো, ঠোঁটের কোণে মৃদু হাসি নিয়ে। এদিকে আভাস বাবু ছেলের এহেন অবস্থায় সত্যি চিন্তিত হয়ে পরলেন। নীচে নেমে এসে সোহমকে তলব করলেন।

“স্যার ডেকেছিলেন?”

“সোহম? হ্যাঁ, ডেকেছিলাম। বলছি, মেয়েটির খোঁজ পেলে?”

“না স্যার। এভাবে খোঁজ কীভাবে নেবো বলুন তো? না নাম জানি, না কোনো ছবি আছে।”

“কে বলেছে ছবি নেই? ও যখন শুটিংয়ের মধ্যে ঢুকে পড়েছিলো তখন ক্যামেরা চলছিলো। আমি বলছি মিস্টার সেনকে একটা স্টিল ছবি পাঠাতে।”

“হ্যাঁ স্যার এমনটা করলে তো খুবই ভালো হয়। কিন্তু স্যার বলছিলাম যে…আপনিও ব্যস্ত হয়ে উঠেছেন যে?”

সোহমকে আমতা আমতা করতে দেখলে আভাস বাবু অবাক না হয়েই বলেন,

“কি করবো বলো? আমার ছেলে যে একটা মেয়ের জন্য এরকম পাগলামি শুরু করবে আমি ভাবিনি।”

“পাগলামি?”

“আজ্ঞে হ্যাঁ পাগলামি। যাও, উপরে গিয়ে দেখে আসো একবার ওর অবস্থা। একা একা খালি মেয়েটার সৌন্দর্যের বর্ণনা দিচ্ছে আর হাসছে।”

“যাই বলুন স্যার, মেয়েটা কিন্তু দেখতে ভীষণ সুন্দর। তাই না? মনে হচ্ছিলো জানো কোনো স্বর্গের অপ্সরী নেমে এসেছে।”

“এইবার তুমিও শুরু করলে?”

“আব, না না। এমনি বলছিলাম। তবে স্যার আমার মনে হয়, আধভিক স্যার বোধ হয় প্রেমে পরেছেন। ওই যে বলে না? লাভ অ্যাট ফার্স্ট সাইট? ঐটাই।”

আভাস বাবু এইবার সোহমের দিকে কটমট করে তাকালে সোহম সুরসুর করে সরে যায় ওখান থেকে। সোহম চলে গেছে কি না সেটা আভাস বাবু আরেকটু ভালো ভাবে দেখে নিয়ে নিজে বিড়বিড় করে বলেন,

“সত্যি মেয়েটা দেখতে ভারী সুন্দর। হাসিটা খুব মিষ্টি। একবারে রূপে লক্ষ্মী যাকে বলে। আমার ছেলের সাথে ভালোই মানাবে। এতদিন যেমন পছন্দ করেনি তেমন যখন করেছে তখন যে সে মেয়ে পছন্দ করেনি আমার ছেলে। এবার শুধু দেখতে হবে শুধু রূপে যেমন লক্ষ্মী গুণে কি সরস্বতী? যাই আর দেরী না করে মিস্টার সেনকে ফোন করি। নাহলে মনে হয় লক্ষ্মীকে না পেয়ে নারায়ণ পাগলই হয়ে যাবে।”

দুদিন পর,

সোহম চুপ করে গাড়িতে সামনের সিটে বসে আছে মাথা নীচু করে। আড় চোখে আধভিককে দেখছে আবার চোখ নামিয়ে নিচ্ছে। আধভিক গুরু গম্ভীর ভাবে মাথা সিটে হেলিয়ে চোখ বন্ধ করে আছে। সোহম সাহসও পাচ্ছে না কিছু বলার। সাহস পাবে কীভাবে? তাঁকে যেই কাজটা দেওয়া হয়েছিল সেটা এখনও করে উঠতে পারেনি। সে পারেনি মেয়েটির পরিচয় জেনে উঠতে।

“একটা কাজ দিলাম সেটাও ঠিক ভাবে করতে পারলে না। এখন আমার মুখের দিকে বারবার আড় চোখে তাকিয়ে কোনো লাভ আছে? তুমি কি করে বুঝবে আমার মনের অবস্থা।”

“কি করবো বলুন স্যার? আমি খোঁজ চালিয়ে যাচ্ছি এখনও। এতো বড়ো একটা শহর খুঁজতে তো সময় লাগবে বলুন? নামটা জানলে অসুবিধা ছিলো না।”

“থাক! আর সাফাই গাইতে হবে না আমার কাছে।”

“বলছি স্যার, একটা কথা বলবো?”

“হম।”

“আপনি কি মেয়েটাকে ভালোবেসে ফেলেছেন? মানে বিষয়টা কি লাভ অ্যাট ফার্স্ট সাইট?”

সোহমের প্রশ্নে আধভিক উঠে বসে। এক গালে শব্দবিহীন হেসে বলে,

“ভালোবাসা? এই শব্দটার অর্থ আমি বুঝি না সোহম। আমি শুধু জানি ওই মেয়েটার তাকানোর কথা মনে পরলে আমার বুকে এসে লাগে। ওই মেয়েটার কথা বলার শব্দ আমার কানে বাজে। ওই মেয়েটার হাসি আমায় তৃপ্তি এনে দেয়। ওই মেয়েটার মুখটা আমার চোখের সামনে যখনই পুরোপুরি ভেসে ওঠে আমার হৃদস্পন্দনের গতি বেড়ে যায়। আমি জানি না এই অনুভুতির নাম কি? আবেগ, মোহ, ভালোবাসা, এতো কিছুর মানে বুঝি না আমি আর বুঝতেও চাই না। আমি শুধু জানি ওই মেয়েটাকে পেলে আমি নিজেকে খুঁজে পাবো। আমি নিজের শেষ নিশ্বাস অবধি বাঁচতে চাই ওই মেয়েটার সাথে।”

সোহম হাসলো আধভিকের অবস্থা দেখে। খুব স্বাভাবিক আধভিকের এহেন আচরণ। প্রেম, ভালোবাসার অর্থ যে ছেলে বোঝে না সে তো এমন কথা বলবেই যখন সে সত্যি কাওকে ভালোবাসবে। এখন এই মেয়েটিই পারবে আধভিককে ভালোবাসার অর্থ বোঝাতে। জোরে বৃষ্টি নেমেছে বেশ কিছুক্ষণ হলো। এখন ঝোড়ো হাওয়া বইছে তাই সোহম ড্রাইভারকে বললো গাড়ির কাঁচ তুলে দেওয়ার জন্য। তৎক্ষণাৎ আধভিক আদেশ করলো,

“কাঁচ তুলবে না। গাড়ি থামাও এক্ষুণি! আই সেইড স্টপ দ্যা কার রাইট নাও!!”

ড্রাইভার তড়িঘড়ি গাড়ি সাইড করে দিলো। আধভিক জানলা দিয়ে দেখছে, মুষলধারে ঝরে পরা বৃষ্টির ছন্দের সাথে ছন্দ মিলাচ্ছে তাঁর মস্তিষ্ক, মন জুড়ে থাকা সেই রমণী। যাকে সে একবার দেখাতেই ঘায়েল হয়ে গেছে। আধভিকের দ্বারা তাঁকে চিনতে ভুল হওয়ার কোনো প্রশ্নই ওঠে না।

“আমি পেয়েছি সোহম! আমি পেয়েছি আমার মানসিক তৃপ্তিকে খুঁজে নিতে। কতোটা স্নিগ্ধ সে, কতোটা প্রাণোচ্ছ্বল।”

আধভিক নেমে যায় গাড়ি থেকে। সোহমও ভালোভাবে চেয়ে দেখে এটা সেই দিনের মেয়েটিই। ড্রাইভার আধভিককে বাঁধা দিতে গেলে সোহম আটকে দেয়। আধভিক ধীরে ধীরে এগিয়ে যায় মেয়েটির দিকে।

[#ফিরে_আসবো_আগামী_পর্বে 🥀]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here