কর্নেল_সাহেব পর্ব ২৪+২৫

#কর্নেল_সাহেব
লেখিকা সুরিয়া মিম
পর্ব- ২৪

“শালার ব্যাটা,শখ কতো? আমার বউকে বিয়ে করতে এসেছে।” মিম হাসতে হাসতে পেছন থেকে এসে ইমানের গলা জড়িয়ে ধরে বলে,
– হ্যাঁ গো শুনছ? কোথা থেকে যেন পোড়া পোড়া গন্ধ ভেসে আসছে আমার নাকে? ইমান ওকে জড়িয়ে ধরে বলে,
– একদম তুমি মজা নেবে না আমার সাথে।বিহানের কথা ভাবলেও এখন আমার রাগে পুরো শরীর জ্বলে যাচ্ছে।কালকে অনুষ্ঠানে ও তোমার দিকে তাকিয়ে ছিল খুব বাজে ভাবে।
– ছেড়ে দাও না কর্নেল সাহেব,ঠিক আছে? এতো ভেবো না।এ নিয়ে মন খারাপ করার কি?
– তুমি বুঝতে পারছনা গো,ও সারাজীবন এটা-সেটা নিয়ে কম্পিটিশন করে গেছে আমার সাথে।এক স্কুলে এবং এক কলেজে আমরা লেখাপড়া করেছি।ও কেন যেন? সবসময় নিজেকে বেস্ট প্রমাণ করার চেষ্টা করতো সবার কাছে।আমি ওকে কখনো সেভাবে সিরিয়াসলি নেইনি,তবে এই ব্যাপার টা আজ খুব কষ্ট দিচ্ছে আমাকে।মিম ওর কপালে চুমু খেয়ে বলে,
– ফরগেট ইট মাই লাভ,আই এম অলওয়েজ উইথ ইউ ওকে? ইমান সাথেসাথে দু’বাহু প্রসারিত করে আষ্টেপৃষ্টে মিমকে জড়িয়ে ধরে নিজের বুকে।

দুপুরে,একটা জরুরী কাজে ইমান বেরিয়ে যায় বাসা থেকে।মিম একতলার সিড়িতে বসে পায়ে আলতা পরছিল আর এমন সময় ওর বড় ফুঁপি শাশুড়ির ছেলে আয়ান আসে বাড়িতে।মিমকে দেখে এগিয়ে এসে ভদ্রলোক বলেন,
– আপনি আসলেই অনেক মিষ্টি,আপনার কথা আমি অনেক শুনেছি আমার দুই মামার কাছে।মিম ওকে গ্রাহ্য না করে এক ধ্যানে আলতা পরছে নিজের দু’হাতে।আয়ান মনেমনে বলে,”এতো মেয়ে আমাকে দেখে পাগল হয় আর এর কোনো হেলদোল নেই আমাকে দেখে?” রান্নাঘর থেকে গুলজার বেগম সব শুনে নিপা কে এসে বলেন,
– বউ মা, আপনের ওই লুচ্চা দেওর (আয়ান) টা এসে কথা বলছে আমাদের ছোটো বউ মায়ের সাথে।অধরা সে সব শুনে হাসতে হাসতে বলে,
– চিন্তা করে লাভ নেই গো গুলজার খালা।ছোটো (মিম) কে চেনো না? একদম ধুয়ে দেবে ওকে।মিম কিছুটা বিরক্ত হয়ে বলে,
– ভাইয়া আমার পিছনে সময় নষ্ট করে লাভ নেই।আপনি বরং গিয়ে দেখা করে আসুন বাবা-মায়ের সাথে।আয়ান খানিকটা রেগে গিয়ে বলে,
– আপনি কিন্তু অপমান করলেন আমাকে?
– আরে ভাই আমি কতদিন ধরে চিনি আপনাকে? আপনি একজন অজানা আগন্তুক ছাড়া আর কিছু নন আমার কাছে।তাই দয়া করে কোনো মাখোঁ মাখোঁ কথা বলার প্রয়োজন ঠিক আছে? আয়ান শেষমেশ নিজের মান সম্মান বাঁচাতে মিমের পাশ কাটিয়ে আহমেদ সাহেবের ঘরে চলে আসে।মিম ঘরে এসে নিজের চুল ঠিক করছিল তখন অধরা আয়ান কে নিয়ে এসে বলে,
– ছোটো ও আমাদের বড় ফুঁপি আম্মার ছোটো ছেলে।
– ঠিক আছে,প্লিজ ভাইয়া একটু আগের ব্যবহারের জন্য আমি ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি।
– না না ব্যাপার না ঠিক আছে,তবে আপনি কিন্তু মাশাল্লাহ দেখতে খুব সুন্দর।আমার খুব ভালো লেগেছে আপনাকে।মিম মনেমনে বলে,”শালার ব্যাটা তো ভালোই? জেনে-বুঝে লাইন মারার চেষ্টা করছে আমার সাথে?” অধরা মিটিমিটি হেসে মিমকে বলে,
– ছোটো আমি গেলাম? তুই বসে গল্প কর আয়ান ভাইয়ের সাথে মানুষ টার মনে না অনেক দুঃখ্য।সেসব শুনে তোর মন ভরে যাবে।আয়ান কথায় কথায় মিমকে বলে,
– বুঝলেন ভাবি? কষ্টের কথা কি আর বলবো? পাঁচ বার বিয়ে করেছি অথচ সংসার করা হয়ে ওঠেনি কারো সাথে।মেয়ে গুলো এমন দুশ্চরিত্র ছিল,এমন দুশ্চরিত্র ছিল যে শেষমেশ আমি ডিভোর্স দিতে বাধ্য হই সব গুলো কে।মিম হাসি সামলে নিয়ে বলে,
– আরে ভাই আমি যে শুনলাম,বিয়ের পরে ও আপনার মেয়ে ঘটিত ব্যাপার স্যাপার আছে? না মানে এটা শুনেছি যে আপনার পাঁচ বউ নিজে থেকেই ডিভোর্স দিয়েছে আপনাকে? আয়ান পাঁচ মিনিট তব্দা খেয়ে তাকিয়ে আছে মিমের মুখে দিকে।মিম ওকে বলে,
– শুনুন ভাইয়া,
আগে নিজের চরিত্র ঠিক করে তারপর অন্যের মেয়ে কে দোষ দেবেন ঠিক আছে? না মানে আজ সকালে নিউজে দেখলাম যে আপনার ওপরে কাজের মেয়ে কে জোর পূর্বক ধর্ষন করার অভিযোগ আছে? বেচারা আয়ান এতো প্রশ্নের মুখে পরে কোনো মতে পালিয়ে আসে সেখান থেকে।তারপর রায়হান কে দেখে বলে,
– ছোটো মামা, ছেলের (ইমান) বিয়ে দিয়েছ ভালো কথা।ডিটেকটিভ বউ কেন এনেছ বাড়িতে? রায়হান সাহেব হাসতে হাসতে বলেন,
– কিছু মনে করিসনে বাবা,আমার মেয়ে (মিম) টা অমন ঠোঁটকাটা।কিচ্ছু আটকায় না ওর মুখে।

এদিকে,আড়ালে বসে নিপা ও অধরা হাসতে হাসতে শেষ।ইমান আসতেই ওরা সবটা খুলে বলে ওর কাছে।ইমান অট্টহাসি দিয়ে বলে,
– ছ্যাঁচরা (আয়ান) টা কি ভেবেছিল ভাবি? আমি যেমন তেমন মেয়ে বিয়ে করে এনে তুলেছি বাড়িতে।আমার বউ,আমার মতো খুব ভালো হয়েছে।সন্ধ্যায় সবার নাস্তা শেষে হঠাৎ মিহার গা গুলিয়ে বমি আসে।মিম ওর মাথা টা যত্ন করে চেপে ধরে বলে,
– আপু আমি যা ভাবছি,তুমি ও কি তাই ভাবছ? এতে মিহা বেশ লজ্জা পেয়েছে।মিমকে এতো খুশি হতে দেখে ইশান জিজ্ঞেস করে,
– ব্যাপার কি হঠাৎ করে কি হয়েছে? মিম হাসতে হাসতে বলে,
– আমার কেন যেন মনে হচ্ছে বাড়িতে আরেকটা ছোট্টো সোনা আসতে চলেছে? মিমের কথা গুলো শুনে মিহার দু’চোখ খুশিতে ছলছল করতে শুরু করেছে।ইশান রেগে গিয়ে বলে,
– সেটা কি করে সম্ভব? তুমি (মিম) কি মজা করছ আমার সাথে? মিহা ইশানের হাত বুকে জড়িয়ে ধরে বলে,
– তুমি কি খুশি হবে না? আমার খুশিতে? ইশানের কাঠকাঠ জবাব,
– তাহলে আমি আজি অ্যাবরশান করতে নিয়ে যাবো তোমাকে।মিম তেড়ে গিয়ে ইশান কে বলে,
– এই যে আমার মেঝো ভাসুর? আপনার কি মাথা ঠিক আছে? ইশান দু’হাত দিয়ে মিমের মুখ টা চেপে ধরে বলে,
– হ্যাঁ সোনা ঠিক আছে,
তোমার মতো বুদ্ধিমতী এবং যুক্তিবাদী মেয়ের কাছে আমি এটা আশা করিনি ঠিক আছে? আগে তোমার বোন প্রেগন্যান্ট তো হোক? পরের টা না হয় পরে ভেবে দেখা যাবে? ডক্টর সাদিক এসে মিহার চেক-আপ করে বলে,
– ভয়ের কোনো কারণ নেই পেসেন্ট একদম ঠিক আছে।মিহা ভয়ে ভয়ে জিজ্ঞেস করে,
– ডক্টর আমার বাচ্চা কেমন আছে?
– “সরি?” বাচ্চা তো না।আপনার গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা হয়েছে।মিহা ফ্যাল ফ্যাল করে ডাক্তারের দিকে তাকিয়ে আছে।সবাই ওর ঘর থেকে চলে যাওয়ার পর ও মিম কে জড়িয়ে ধরে বলে,
– বোন এই বোন? লক্ষী বোন আমার।তুই কি অভিশাপ দিয়েছিলি আমাকে?
– শান্ত হও আপু,তুমি কেন পাগলের মতো আচরণ করছ এভাবে? সন্তান দেওয়া বা না দেওয়া সেটা আল্লাহ তাআ’লার ইচ্ছে।আমার কোনো হাত নেই তাতে।তুমি যা করেছ,তার জন্যে আমি অনেক আগেই ক্ষমা করে দিয়েছি তোমাকে।
– শোন,
আমার বাচ্চা না হলে,তোর বাচ্চাকে ও আমি এই পৃথিবীতে আসতে দেবে না।শুনে রাখ ঠিক আছে? নিপা এসে মিমকে জড়িয়ে ধরে বলে,
– তুমি যা করার করতে পারো মিহা।আমরাও দেখে নেবো তোমাকে।আর ছোটো? তুই কি ওকে এখনো দয়া দেখাবি নাকি? চল এখান থেকে।বিছানায় শুয়ে মিম ইমানের বুকে মাথা রেখে কাঁদতে কাঁদতে বলে,
– আমার খুব কষ্ট হচ্ছে আপুর কথা ভেবে।ইমান ওর চোখের জল মুছে দিতে দিতে বলে,
– সন্তান দেওয়া না দেওয়া আল্লাহ তাআ’লার ইচ্ছে।আমাদের কোনো হাত নেই তাতে।তবে সোনা এবার ও বারাবাড়ি করলে কিন্তু আমি আমার ভাইয়ের কথা ভেবে ছেড়ে দেবো না ওকে।
– খুব ভালোবাসো আমকে?
– হ্যাঁ অবশ্যই ম্যাডাম কোনো সন্দেহ আছে?
– না গো,তোমার ছেলে চাই না মেয়ে? সেটা তো আর বললে না আমাকে? ইমান ওর পেটের ওপর চুমু খেয়ে বলে,
– আল্লাহ তাআ’লা যাই দিবেন আমি খুশি হবো তাতে।সন্তান সন্তান হয় ছেলে বা মেয়ে দিয়ে আমি ভেদাভেদ করতে চাই না তাদের মাঝে।মিম সাথেসাথে ওর মুখমণ্ডল আঁকড়ে ধরে নিজের দু’হাতের মাঝে।ইমান এগিয়ে এসে আলতো করে চুমু খায় ওর ঠোঁটে।#কর্নেল_সাহেব
লেখিকা সুরিয়া মিম
পর্ব- ২৫

ইমান এগিয়ে এসে আলতো করে চুমু খায় ওর ঠোঁটে।মিম ওর গলা জড়িয়ে ধরে বলে,
– শোনো না আমার একটা আবদার আছে তোমার কাছে? ইমান মৃদু হেসে ওর দু’হাতে চুমু খেয়ে বলে,
– বিয়ের আটমাস চলছে অথচ তুমি আজ অব্ধি এই “আবদার” জিনিস টা করোনি আমার কাছে।বলো না কি চাই? এখুনি হাজির করে দেবো তোমার হাতের কাছে।মিম আমতা আমতা করে বলে,
– জানো তো কাল বাবার (আদিব) বার্থডে।আমাকে কি সকালে একটু নিয়ে যাবে তার কাছে? যতোই রাগ ঝাল করি না কেন আমি খুব ভালোবাসি মানুষ টা কে।আর মা ও চায় ভাইয়ারা বাবার সাথে কোনো সম্পর্ক না রাখলে ও অন্তত আমি যেন সম্পর্ক রাখি তার সাথে।ইমান হাসতে হাসতে ওকে বুকে জড়িয়ে ধরে বলে,
– আমি তো সেটা জানি সোনা,তুমি একদম চিন্তা করো না।
– ঠিক আছে।

সকাল আট টা,
মিম ঘুম থেকে উঠে দেখে ইমান অনেক গুলো শপিং ব্যাগ নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে ওর পায়ের কাছে।ও কিছু বুঝে ওঠার আগেই ইমান বলে ওঠে,
– দেখতো এই পাঞ্জাবি দু’টোয় মানাবেনা বাবাকে? আর এই কমপ্লিট সুটটা কেমন হয়েছে পারলে দেখতে ভালো লাগবে না বাবাকে? মিম মৃদু হেসে খপ্প করে ওকে জড়িয়ে ধরে বলে,
– হয়তো কোনো ভালো কাজ করেছিলাম? তাই আজ স্বামী হিসেবে পাশে পেয়েছি তোমাকে।ইমান মৃদু হেসে বলে,
– মা যে বলেছে তুমি তাহাজ্জুদের নামাজ পরে চাইতে আমাকে? মিম লজ্জা পেয়ে বলে,
– নির্দিষ্ট করে চাইতাম না,তবে চাইতাম আপনাকে।আপনি ও তো প্রথমবার আমাদের বিয়ে টা ভেঙ্গে যাওয়ার জন্য নাকি নাওয়াখাওয়া ছেড়ে দিয়েছিলেন? সে খবর ও আছে আমার কাছে।ইমান ওকে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরে কানের পেছনে চুমু খেয়ে বলে,
– হয়েছে বুঝেছি? যাবে না বাবার কাছে? চলো গোসল করিয়ে দিচ্ছে তারপর খেয়ে না হয় বেরোনো যাবে।ঠিক আছে?
– শোনো,
আমি না বাচ্চা নই।তোমার উদ্দেশ্য টা কিন্তু স্পষ্ট আমার কাছে।ইমান এগিয়ে এসে নিজের গাল টা মিমের কাছে পেতে দিয়ে বলে,
– চুমু খাও,নয়তো নিয়ে যেতাম না বাবার কাছে।মিম হাসতে হাসতে নিজের ঠোঁট ইমানের গালে ছুঁয়ে দিয়ে বলে,
– উমমমমম্মাহহহহহ,উমমমমম্মাহহহহ হ্যাপি? এবার অন্তত ছেড়ে দাও আমাকে?

এদিকে,
সকাল গড়িয়ে সন্ধ্যা হতে চলেছে অথচ আদিব সাহেব এখনো বসে আছে ফোনের কাছে,তবে মিম বা মিহা কেউ ফোন করে জন্মদানে শুভেচ্ছা জানায়নি তাকে।মনেমনে বলে,”লোকে ঠিক বলে,বিয়ের পরে মেয়ে দু’টো আমার পর হয়ে গেছে কিন্তু মিহা? ও কি এতোই ব্যস্ত যে ওর একটু ফোন করার সময় হয়নি বাবাকে? মাহির কাছ থেকে এখন আশা করা টা ভুল সে যে আজ অন্য কারো সহধর্মিণী হয়ে গেছে।ছেলেদের কথা বাদদিলাম।তারা তো মানুষ বলে ও মনে করে না আমাকে।” তখন হঠাৎ ফুলকলি চেঁচিয়ে চেঁচিয়ে বলে,
– বড় সাহেব বড় সাহেব দেখে জান কারা এসেছে? আদিব সাহেব ছুটে নিচে এসে দেখে মিম ও ইমান দরজার কাছে দাঁড়িয়ে আছে।সায়েরা বানু ওদের দেখে রেগে গিয়ে বলে,
– তোমরা আবার কেন এসেছ এই বাড়িতে? মিম তাকে তোয়াক্কা না করে ছুটে গিয়ে আদিব সাহেব কে জড়িয়ে ধরে বলে,
– জন্মদিনের অনেক অনেক শুভেচ্ছা বাবা তোমাকে।আদিব সাহেব মুখ ফসকে বলে ফেলেন,
– আমি ভেবেছিলাম মা তুই এখানে আসবি না আমার কাছে।ইমান হাসতে হাসতে এগিয়ে এসে আদিব সাহেবের হাত ধরে বলে,
– আগেই বলেছিলাম বাবা মুখে যাই বলুক না কেন? মনেমনে ঠিক ভালোবাসে আপনাকে।সায়েরা বানু এগিয়ে এসে নাতনিকে চোখ রাঙিয়ে বলে,
– কি জিজ্ঞেস করলাম? কেন এসেছ এই বাড়িতে?
– শুনুন,
এটা আমার বাপের বাড়ি,তাই আমি যখন তখন আসতে পারি তার কাছে আর এর জন্য বোধহয় আমার কোনো কৈফিয়ত দেওয়ার প্রয়োজন নেই কূটনী দাদি আপনাকে? সায়েরা বানু রেগে গিয়ে বলেন,
– ঠাটিয়ে একটা চড় মারবো তোমাকে।
– মা ও আমার সন্তান,ও কেন আসতে পারে না আমার কাছে? আদিব সাহেবের মুখে এমন কথা শুনে সায়েরা বানু অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে তার দিকে।রাগে কটকট করতে করতে বলেন,
– যা পারো তাই করো,আমি কিচ্ছু বলবো না তোমাকে।তুমি কি ভুলে গেছো? ও কি করেছে মিহা দিদি ভাইয়ের সাথে?
– তুমি ও ভুলে যেও না মা।মিহা খুব নোংরা একটা কাজ করেছিল ছ’মাস আগে।যাই হোক মিহা যেমন আমার সন্তান,মিম ও আমার সন্তান।তুমি প্লিজ এসে ঢুকতে যেও না আমাদের বাবা মেয়ের মাঝে।মিম হাসতে হাসতে বলে,
– বাবা প্লিজ ওই কূটনী বুড়ির কথা বাদদেও।আমি কিন্তু আজ নিজের হাতে ভাত মেখে খাইয়ে দেবো তোমাকে।ইমান হাসতে হাসতে বলে,
– জানেন বাবা? গতকাল রাত থেকে শুরু করেছে।আমাকে কিন্তু নিয়ে যেতেই হবে বাবার কাছে।আদিব মৃদু হেসে বলেন,
– আমার ছোটো মেয়ে টা বরাবরি পাগলি,কিছু বলে লাভ নেই তাকে।মিম তেড়ে এসে ব্রু কুঁচকে আদিব সাহেব কে বলে,
– ওই ওই তুমি পাগলি বললে কাকে?
– কাকে আবার? তোমাকে?
– চলো খেতে চলো বাবা দাঁড়িয়ে থেকো না।ঠিক আছে?
– আচ্ছা মা খাবার গুলো কি তুমি রেঁধেছ নিজের হাতে?
– কোই না তো? তোমার বউ থুক্কু মানে আমার মা রান্নায় সাহায্য করেছে আমাকে।
– আচ্ছা মা তোমার আম্মু কেমন আছে?
– আলহামদুলিল্লাহ্ ভালো,আব্বু (আদিব) ভালো রেখেছেন তাকে।জানো আমার নতুন দাদি তোমার মায়ের মতো না।খুব যত্ন করে আমার মা কে।আদিব সাহেব মেয়ের হাতে খেতে খেতে বললেন,
– আমি খুব মনে করি তোমার মাকে।
– শোনো বাবা,আমার মা (মাহি) ও কিন্তু ভুলো যায়নি তোমাকে।নূর জাহান রান্নাঘর থেকে এসে মিমকে বলেন,
– মা রে আমি না তোর জন্যে একটু কলিজা ভুনা করেছি।খাইয়ে দেবো তোকে? ইমান মৃদু হেসে বলে,
– চাচিআম্মা যখন বলছে তুমি একটু খেতেই পারো তার সাথে।মিম আর না করেনি কারণ ও বাড়িতে পা রেখেই বুঝতে পেরেছে স্বামী ও স্ত্রীর কোনো সম্পর্ক নেই তাদের দু’জনের মাঝে এবং মিসেস মাহি নিজে ওকে বলেছেন তাদের দু’জন কে ক্ষমা করে দিতে।তখন হঠাৎ মিহা এসে খাবারের প্লেট টা ছুড়ে ফেলে দেয় মিমের সামনে থেকে।ও কিছু বুঝে ওঠার আগেই মিহা ওকে দুটো’ থাপ্পড় মেরে বলে,
– আমার শশুড় বাড়িতে অশান্তি করে শান্তি হয়নি? এখন আবার এসে জুটেছিস আমার বাপের বাড়িতে? আদিব সাহেব রেগে বলেন,
– তুমি আমার সামনে দাঁড়িয়ে এমন করছ কেন মিহা তোমার ছোটো বোনের সাথে?
– মিম ওঠে দাঁড়াতেই মিহা হঠাৎ করে ধাক্কা মেরে ফেলে দেওয়ার চেষ্টা করে ওকে।আদিব সাহেব ছোটো মেয়ে (মিম) কে সামলে নিয়ে ঠাসঠাস করে দু’টো চড় মারে বড় মেয়েকে।মিহা বেশ অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে তার বাবার মুখের দিকে।কাঁপা কাঁপা গলায় তাকে প্রশ্ন করে,
– তুমি মারলে আমাকে?
– তুমি কি জানো না মিহা? তোমার বোন সন্তান সম্ভবা আর ও মা হতে চলেছে? সায়েরা বানু ছুটে এসে বলেন,
– তাই বলে তুই মারবি মেয়ে টা কে?
– তুমি কি দেখতে পাওনি মা? ও মিমকে ধাক্কা মেরেছে?
– তুই আমার কথা শোন বাবা?
– তুমি কি মিহা কে ডেকে পাঠিয়েছ এই বাড়িতে? সারাদিন তো ওর কোনো খবর ছিল না? ফোন করে ও আমি পাইনি তাকে।তুমি কি চাও মা? একটু ও কি শান্তিতে কি বাঁচতে দেবে না আমাকে? সায়েরা বানু এতো প্রশ্নের মুখে পরে কাঁদতে কাঁদতে এসে ঘরের খিল দেয় সাথেসাথে।আদিব সাহেব মিহা কে বেশি কিছু বলেননি,শুধু বলেছেন শুধুশুধু কোনো ঝামেলায় না জাড়াতে।তারপর ডক্টর ইব্রাহিম কে ডেকে পাঠিয়ে মিমের চেক-আপ করান তার কাছে।ডক্টর ইব্রাহিম তাকে অভয় দিয়ে বলেন,
– ভয় পাওয়ার কোনো কারণ নেই আপনার মেয়ে ও নাতি দু’জনেই সুস্থ আছে।ইমান ফিক করে হেসে দিয়ে মিমের কপালে চুমু খেয়ে বলে,
– জুনিয়র ইমান ইজ লোডশেডিং।কান্না করো না ঠিক আছে? আদিব সাহেব মেয়ের হাতে চুমু খেয়ে বলেন,
– তোর ইব্রাহিম আঙ্কেল বললো তো মা।নানুভাই একদম ঠিক আছে।মিম কাঁদতে কাঁদতে আদিব সাহেবের বুকে মাথা রেখে বলেন,
– জানো বাবা? আমি যতোই আপুর সাথে সম্পর্ক ভালো করার চেষ্টা করছি,ও ততই ভুল বুঝছে আমাকে।আদিব সাহেব দীর্ঘ নিশ্বাস ফেলে বলেন,
– বুঝেছি তোমার দাদি টা ওর মাথা টাও খেয়ে ফেলেছে।ইমান মৃদু হেসে বলে,
– বাবা এখন আমাদের যেতে হবে।প্লিজ কষ্ট পাবেননা ঠিক আছে? মা (হৃদিকা) বারবার আমাকে ফোন করছে।ব্যস্ত হয়ে পরেছে আমাদের এতো দেরি হচ্ছে দেখে।আদিব সাহেব মুখ ফুটে রাতটুকু থেকে যাওয়ার কাথা টা বলে উঠতে পারলোননা ছোটো মেয়ে জামাইয়ে কাছে।কারণ ওনার ভয় হচ্ছে সায়েরা বানু যদি মিমের ক্ষতি করার জন্য কোনো কুৎসিত ফন্দি আঁটে? তাই নিজেই ধরে নিয়ে গিয়ে মেয়ে কে বসিয়ে দিলেন গাড়িতে।মিম এবং ইমান মৃদু হেসে বলে,
– বাবা আমরা সময় করে এসে আবার দেখে যাবো তোমাকে।আদিব সাহেব এবার হাসিমুখে বিদায় দিলেন মেয়ে কে।মিম গাড়ির মধ্যে ঘুমিয়ে যায় ইমানের বুকে।ইমান মনেমনে বলে,”ভয় নেই সোনা,মিশনে যাওয়ার আগে আমি বাবাকে বলে তোমাকে পাঠিয়ে দেবে মায়ের (মাহি) কাছে।” আজ মিহা ওর সমগ্র সীমা অতিক্রম করে ফেলেছে।এবার ওর একদিন কি আমার একদিন।এতো সহজে আমি ছেড়ে দেবো না ওই মেয়ে টাকে।মিম হঠাৎ করে বলে ওঠে,
– আশ্চর্য!
মিহা নোংরা কাজ করলে,তোমাকে ও সেটা করতে হবে? ভুলে যেও না তুমি ওর মতো না ঠিক আছে? ইমান আর কোনো কথা না বাড়িয়ে মৃদু হেসে শক্ত করে নিজের বুকে জড়িয়ে ধরে ওকে।তারপর মনেমনে বলে,”আচ্ছা সোনা? তোমার কি ঘুমিয়ে ও শান্তি নেই? বুঝতে পেরে গেছো যে আমি সায়েস্তা করতে চাইছি ওই মেয়ে টা কে?”

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here