#কাছে_দূরে ♥️🥀
#moumita_mehra
#পর্বঃ০৫
—-” বড় মা আমি আসছি।”
হীরের ডাক নাজমা বেগমের কান অব্দি পৌঁছল কি না বোঝা গেলো না। হীর দাঁড়ালো না। রোজকারের অভ্যাস মতো বড় মাকে বলেই বেরিয়ে গেলো ভার্সিটির উদ্দেশ্য। হীর বিবিএ দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রী। মাসখানিক বাদেই ফাইনাল টার্মের এক্সাম! এই সময় পড়াশুনার চাপটা বরাবরই একটু বেশি। হীর হিসাব বিজ্ঞানে বেশ মনোযোগী ছাত্রী। ভালো ছাত্রী হলেও কখনও তাকে পড়াশুনোয় গ্যাব দিতে দেখা যায়নি। তার পড়ার প্রতি আগ্রহ দেখলে মাঝেমধ্যে তার বন্ধুরা ভাবে, কি এমন মজা আছে এই পড়াশুনোয়? কেবল হীরকে দেখলেই তারা আগ্রহ নিয়ে পড়তে উদ্যোত হয়। তবে বেশিদূর যায় না৷ মাঝপথেই হাল ছেড়ে আবারও যে যার ধর্মে ব্যস্ত হয়ে পড়ে। মানে, সবাই ফোন আর ইন্টারনেট জগত নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়ে।
হীর গাড়ির পাশে এসে দাঁড়াতেই খেয়াল করল ড্রাইভার নেই। আশপাশে চাতক পাখির মতো নজর ঘুরালেও ড্রাইভার ফিরোজকে চোখে পড়ল না। কপালের মাঝখানটা মুহুর্তেই কুঁচকে গেলো হীরের। প্রতিদিন নিয়ম করে ফিরোজ গাড়িতেই হীরের জন্য অপেক্ষা করে। হীর আসলেই ফিরোজ একগাল হেসে সর্বপ্রথম যে কথাটা বলে, “গুড মর্নিং ছোট ম্যাডাম!”। হীরও ফিরোজের দিকে চেয়ে ঠোঁটের কোনে মিষ্টি হাসি জুড়ে জবাব দেয়, ” গুডমর্নিং!”। হীর চুপচাপ গাড়িতে উঠে বসতেই ফিরোজ একটানে ছুটে চলে ভার্সিটির উদ্দেশ্যে। আজ ফিরোজ নেই! ছুটি নিলো কি না সেটাও হীর জানে না! কেউ তাকে জানালোও না।
—-” ড্রাইভার ছুটি নিয়েছে।”
পেছন থেকে ভেসে আসল সাবাবের গলা। হীর পেছন মুড়ে তাকিয়ে কিছু একটা ভেবে বলল,
—-” কখন নিলো?”
—-” আজ ভোরেই। তার বউ এর বাচ্চা হয়েছে নাকি। সেখানেই ছুটেছে।”
হীর নিঃশব্দে নিঃশ্বাস ফেলে ছোট্ট করে বলল,
—-” ওকে।”
কথাটা বলে হীর হাঁটা ধরতেই সাবাব বলে উঠলো,
—-” কোথায় যাচ্ছিস? ভার্সিটি যাবিনা?”
হীর না সূচক মাথা নেড়ে বলল,
—-” আমার কাছে গাড়ির লাইসেন্স নেই। গাড়ি নিয়ে বের হলে প্রবলেমে পড়তে হবে।”
সাবাব অবাক হওয়ার চেষ্টা করে বলল,
—-” ড্রাইভ করতে জানিস?”
—-” জানি।”
হীরের উত্তরে সাবাব যেন আকাশ থেকে পড়ল। কিছুক্ষণ হা করে তাকিয়ে থেকে বিস্মিত কন্ঠে বলল,
—-” সিরিয়াসলি!”
হীর জবাব দিলো না। সাবাব এমন রিয়াকশন দিচ্ছে যেন হীর তার সাথে মজা করছে। হীরের রাগ লাগল। কেননা, সে একদমই মজা করছে না। আর মজা করার জন্য মানুষেরও কি অভাব হলো? যে সাবাবের সাথেই মজা করতে হবে?
সাবাব খেয়াল করল হীরের কপাল কিঞ্চিৎ কুঁচকে আছে। হীর কি বিরক্ত হচ্ছে?
—-” চল আজ আমি তোকে ভার্সিটি ছেড়ে দিয়ে আসছি।”
হীর শান্ত কন্ঠে জবাব দিলো,
—-” প্রয়োজন নেই।”
—-” আমার কাছে লাইসেন্স আছে। নো প্রবলেম!”
—-” আমি ভেবেছি আমি আজ যাবো না।”
—-” ভার্সিটি যাওয়ার জন্য ফুল গেটআপে দাঁড়িয়ে বলছিস যাবি না? কেন? আমার সাথে কি ভরসা হচ্ছে না?”
হীরের ইচ্ছে হলো সাবাবের জবাবে “না” বলতে। “একদমই ভরসা হচ্ছে না” বলতে ইচ্ছে করল। কিন্তু সে বলতে পারল না। যদি সে এমন কিছু বলে বসে তবে কি সাবাব তাকে চড় মারবে? ঠিক কফি-শপের মতো? হীরের ভয় হলো। ভয়ে তার চোখ জোড়া কেঁপে উঠল। ঢোক গিলে চুপচাপ এগিয়ে গেলো গাড়ির দিকে। গাড়ির পেছনের সিটে বসার উদ্দেশ্য গাড়ির দরজাটা খুলতে নিলেই হঠাৎ ধমকে উঠল সাবাব। হীর আঁতকে উঠে লেপ্টে গেলো গাড়ির সাথে। ভয়ার্ত দৃষ্টিতে সাবাবের দিকে আঁড়চোখে তাকাতে নিয়েও পারল না। বুকের ভেতরটা ধকধক করছে হীরের। মনে হচ্ছে এক্ষনি সে মারা যাবে। ছোট্ট প্রানটা বেরিয়ে আসার জন্য যেন ছটফট করছে। চোখ দুটো বন্ধ করে নিয়ে নিঃশ্বাস আঁটকে ধরল হীর। সাবাব তাকে ধমক কেন দিলো? জানে না সে! নির্ভয়ে কি জিজ্ঞেস করবে সে? নাকি জিজ্ঞেস করতে নিলেও সাবাব তাকে চড় মারবে?
—-” আমাকে দেখে কি তোর ড্রাইভার মনে হয়? পেছনের সিটে বসছিস কেন?”
খুব দ্রুত চোখ খুলে তাকালো হীর। আবারও এক দফা বিরক্ত হলো সে! সাবাবের উপর নয় নিজের উপর! এখানে খুবই সামান্য এক ব্যাপার হলো! আর সে কি না কতদূর অব্দি ভেবে ফেললো। হীর নিঃশ্বাস ছেড়ে নিঃশব্দে সামনের সিটে গিয়ে উঠে বসল। সাবাব হীরের যাওয়ার পথে তাকিয়ে মুচকি হাসল। হীর সাদা রঙের চুরিদার পড়েছে আজ। সাদার উপর গোল্ডেন পাথরের কাজ করা। গলায় ছোট্ট একটা লকেট। কপালের মাঝখানে পাথরের ছোট্ট একটা টিপ। এটুকুতেই অসাধারণ লাগছে হীরকে। সাবাব আবারও হাসল। ডান হাতটা তুলে মাথা চুলকে এগিয়ে গেলো গাড়ির দিকে। গাড়ির দরজা খুলে ড্রাইভিং সিটে বসতে বসতে তার চোখে পড়ল হীরের কানে ঝুলে থাকা ছোট্ট পাথরের রিং এয়ারিংটা। সূর্যের আলো গাড়ির কাঁচ ভেদ করে ভেতরে পড়তেই বারবার চিকচিক করে উঠছে পাথর গুলো। হীর গাড়ির সিট বেল্ট বাঁধতে নিলেই চিকচিক করা ভাবটা কেটে গেলো। কেননা, হীর সামনের দিকে ঝুকতেই তার পেছনের চুল সব একসাথে আঁচড়ে পড়ল সামনে। যাতে করে হীরের কান, গাল, গলা সবই ঢেকে গেলো। আর সূর্যের আলো সব চুলের উপর পড়ল। ঢেকে গেলো পাথরের এয়ারিং জোড়া আর জামার উপর গোল্ডেন পাথরের করা কাজগুলো।
সাবাব হীরকে মুগ্ধ নয়নে আরও কিছুক্ষন দেখে গাড়ি স্টার্ট দিলো। গাড়ি চলছে নিজ গতিতে। ভেতরে দুজন মানুষই চুপচাপ বসে আছে। সাবাব হীরের ভার্সিটির লোকেশন দেখছে ম্যাপে আর হীর আঁড়চোখে তাকিয়ে তাকিয়ে সাবাবকে দেখছে। মাথার উপর সূর্যের আলো বারবার গাড়ির কাঁচ ভেদ করে সাবাবের মুখের উপর পড়ছে৷ সূর্যের তেজ একদম শূন্য বললেই চলে। তাই সাবাবের কাছে তেমন বিরক্তিকর হয়ে ওঠেনি এখনও! সূর্যের আলোতে সাবাবের গাল,ঠোঁট আর চোখ দুটো খুব বেশি আকর্ষণীয় হয়ে ফুটে উঠেছে। ফর্সা গাল কিঞ্চিৎ লাল হয়ে উঠেছে সাবাবের। তার আকর্ষণীয় দৃষ্টি সামনের দিকে স্থীর। কপালটা বারবার কুঁচকে গিয়ে আবারও সমান হয়ে যাচ্ছে। সাবাব না তাকিয়েও বেশ বুঝতে পারল হীর তাকে দেখছে। তাই হীরকে লজ্জা দেওয়ার পরিকল্পনা নিয়ে হীরের উদ্দেশ্যে বলে উঠলো,
—-” কেমন দেখলি আমায়? হ্যান্ডসাম লাগছে তো?”
সাবাবের কথায় বিষম লেগে গেলো হীরের। কাশি উঠতেই মুখে হাত চেপে বাইরের দিকে দৃষ্টি নিক্ষেপ করল হীর। সাবাব মনে মনে হেসে উঠলো। ভাবল,” ইশ,লজ্জবতীকে এভাবে লজ্জা না দিলেও হতো।”
________________
ভার্সিটির সামনে গাড়ি পার্ক করল সাবাব। হীর গাড়ির দরজা খুলে বের হতে নিলেই সাবাব বলে উঠলো,
—-” ক্লাস কখন শেষ হবে?”
হীর ঘাড় ফিরিয়ে একবার তাকালো সাবাবের দিকে। “ক্লাস কখন শেষ হবে তা জেনে তোমার কি?” কথাটা মনে মনে বলতে পারলেও সরাসরি জিজ্ঞেস করতে পারল না হীর। ছোট্ট করে জবাব দিলো,
—-” ২টায়।”
সাবাব ঠোঁটের উপর ঠোঁট চেপে ধরে ঘাড় কাত করল। হীর আর বসল না। দরজা খুলে বের হয়ে ভার্সিটির ভেতর চলে গেলো। সাবাব হীরের যাওয়ার পানে তাকিয়ে ছোট্ট করে নিঃশ্বাস ছেড়ে মনে মনে বলল,
—-” শত্রুরা চব্বিশ ঘন্টাই ওত পেতে থাকে হীরপাখি! আমি তোমায় এক সেকেন্ডও চোখের আড়াল করতে পারব না।”
সাবাব গাড়ি ঘুরিয়ে পার্কিং-এ রেখে সেও চলে গেলো ভার্সিটির ভেতর। হীর ততক্ষণে ভার্সিটির মাঠে এসে ফ্রেন্ডদের সাথে বসে পড়ল। হীরকে দেখতেই সবাই আলগা করে জড়িয়ে ধরল একবার। ভালোমন্দ জিজ্ঞেস করতে করতে হঠাৎ-ই প্রশ্ন তুলল এশা,
—-” গত কালকের ঘটনায় আমার রাতের ঘুম হারাম হয়ে গেছিলো জানিস। আমি সারা রাত শুধু নিউজগুলো ঘুরিয়ে ফিরিয়ে দেখেছি। আল্লাহ রক্ষা করেছিলো। আর নয়তো ঐ মানুষ গুলোর মতোই আমরাও কয়লা হয়ে যেতাম।”
মিলি এশার কথার রেশ টেনে বলল,
—-” আচ্ছা আমায় একটা কথা বলত, যে লোকটা এসে হীরকে চড় মেরেছিলো উনি কি আগে থেকেই এই ঘটনার ব্যাপারে জানতেন? উনি কি কোনো ভাবে হীরকে বাঁচাতেই এমন কাজ করেছিলেন?”
আদ্র ভাবুক কন্ঠে বলল,
—-” ইউ মিন হীরের শুভাকাঙ্ক্ষী?”
মিলি থুতনিতে হাত ঠেকিয়ে বলল,
—-” হতেই পারে। আবার নাও হতে পারে। কারন তোরা ভাব উনার যদি হীরকে বাঁচানোর উদ্দেশ্য থাকত তবে সে হীরকে সুন্দর করেই বুঝিয়ে ওখান থেকে চলে যেতে বলতে পারত! এভাবে চড় মারার কি ছিলো?”
হীর গাল ফুলিয়ে নিঃশ্বাস ছাড়ল। বন্ধুদের মুখে ঘুরেফিরে একই কথা শুনতে শুনতে সে চরম বিরক্ত। কপট রাগ দেখিয়ে বলল,
—-” লিসেন, আমার সাথে এমন ঘটনা এই প্রথম বার ঘটছে তেমনটা তো নয় রাইট? সো আমরা একটা সামান্য ব্যাপার নিয়ে এতো ওভাররিয়াক্ট কেন করছি আমি তো সেটাই বুঝতে পারছিনা! আমাদের এই ঘটনা নিয়ে গবেষণা করা ছাড়াও তো অনেক কাজ আছে তাই না? সামনেই ফাইনাল টার্ম। এবার আমরা একটু পড়াশোনা নিয়ে ভাবি প্লিজ?”
হীরের কথায় তিনজনেই মুখ চাওয়াচাওয়ি করতে লাগল। তাদের মতে হীর তো সর্বদাই পড়াশোনা নিয়ে পড়ে থাকে। তাহলে নতুন করে আবারও পড়াশোনা নিয়ে ভাবার কি হলো?
এশা কাচুমাচু করে বলল,
—-” ছেলেটা কাজ টা ঠিক না করলেও সত্যি বলতে আমি তার উপর ফিদা হয়ে গিয়েছি দোস্ত!”
হীর রাগী চোখে তাকাতেই এশা ঢোক গিলে বলল,
—-” তুই রাগ করিস আর যাই করিস আমি কিন্তু সত্যি ব,,বলেছি।”
এশার কথা শুনে ফিক করে হেসে দিলো আদ্র আর মিলি। মিলি এশার মাথায় চাটি মেরে বলল,
—-” গবেট! যে ছেলের প্রথম এন্ট্রিই ছিলো চড়ের মাধ্যমে! ভাবতে পারছিস তার ফিউচার বউয়ের কপালে কি পরিমান চড় থাপ্পড় লেখা আছে?”
আদ্র দাঁত কেলিয়ে হেসে বলল,
—-” এই মনে কর উঠতে গেলে চড় বসতে গেলে চড়। খেতে গেলে চড় ঘুমাতে গেলে চড়।”
—-” তার মানে ছেলেটা খাওয়া দাওয়াও করে চড়ের মাধ্যমে? ঘুমায়ও চড় মেরে? আচ্ছা এতো চড় কে খায় বলতো?”
মিলির কথা শুনে গাল ফুলিয়ে তাকালো এশা! কিছু বলতে নিলেই আদ্র হাসতে হাসতে বলে উঠলো,
—-” এশার জন্য এটাই বেস্ট হবে।”
এশা থমথমে মুখ করে দুজনের দিকে তাকাতে লাগল। অতঃপর হীরের দিকে তাকিয়ে অভিযোগের সুরে বলল,
—-” আমি কিন্তু ফিউচার অব্দি ভাবিনি রে। ওরাই বেশি বেশি বলছে।”
এবার হেসে ফেলল হীরও। এশার মাথায় গাট্টা মেরে বলল,
—-” বাট ওরা ভাবছে। কেননা ঐ ছেলের সাথে তোর ফিউচার প্ল্যান করতে বেশি সময় লাগবে না।”
হু হা করে হেসে উঠলো মিলি আর আদ্র। হীরও হাসছে মুচকি মুচকি। এশা গাল ফুলিয়ে সবার দিকেই দৃষ্টিপাত করছে ঘুরিয়ে ফিরিয়ে। চোখ পিটপিট করে কিছু বলতে নিলেই এশার চোখ জোড়া ডিম্বাকৃতির আকার নিলো। অবাকের শীর্ষে পৌঁছেই মিলির হাতটা শক্ত করে চেপে ধরলো এশা। বিস্ময় আর উত্তেজনা কোনোটাই আঁটকে রাখা সম্ভব হলো না তার জন্য। এশার রিয়াকশন দেখে বাকিরাও হতভম্ব হয়ে তাকালো। হীর এশার দৃষ্টি অনুসরণ করে তাকাতেই সাবাবকে দেখতে পেলো। হীরের হাসিমুখটা চুপসে গেলো তৎক্ষনাৎ। আদ্র আর মিলিরও একই অবস্থা। তবে তাদের হলো বিস্ময়ে। তাদের ভাবনা মতে, “এই ছেলে এখানে কি করে এলো? আজও কি হীরকে চড় মারার উদ্দেশ্য আছে নাকি তার? তবে কি হীরের এখানেও বিপদ আছে?”
সাবাব তাদের কাছাকাছি আসতেই দাঁড়িয়ে গেলো চারজনে। হীর চুপচাপ দাঁড়িয়ে থাকলেও এশা নিজের বিস্ময় আর চেপে রাখতে পারল না। বড় বড় চোখ করে বিস্মিত কন্ঠে বলে উঠলো,
—-” মিস্টার বিদেশি!”
মিলি পাশ থেকে এশাকে খোঁচা মারতেই এশা হুঁশে ফিরল। আদ্র কপাল কুঁচকে তাকিয়ে আছে সাবাবের দিকে। সে পূর্বপ্রস্তুতি নিচ্ছে যেন গত কালকের ঘটনাটা যেন আবারও পুনরাবৃত্তি না হয়।
সাবাব সবার দিকেই একবার তাকালো। হীরকে চুপচাপ দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে বাকিদের উদ্দেশ্যে বলল,
—-” হ্যালো গাইজ।”
জবাব দিলো না কেউ। কেননা তিনজনেই বেশ অবাক! কালকের ওমন একটা ঘটনার পর ছেলেটা তাদের সামনে এসে এতটা স্বাভাবিক গলায় কি করে কথা বলছে সেটাই ভাবাচ্ছে তাদের। সবাইকে চুপ থাকতে দেখে সাবাব ঠোঁটের কোনে হাসির রেখা টানল। আদ্রর দিকে হাত বাড়িয়ে বলল,
—-” আদ্র! রাইট?”
আদ্র বিস্মিত কন্ঠে বলল,
—-” জ্বী!”
আদ্রর সাথে হ্যান্ডশেক করে সাবাব এশা আর মিলির দিকে তাকিয়ে বলল,
—-” এশা এন্ড মিলি?কেমন আছো?”
এশা চোখ দুটো রসগোল্লা পাকিয়ে বলল,
—-” এই মিলি দেখ উনি আমার নামও জানে।”
এশা কথাটা বেশ জোরেশোরে বলে উঠতেই হেসে ফেলল সাবাব। আঁড়চোখে হীরের দিকে তাকাতেই হীর বাকিদের উদ্দেশ্যে বলল,
—-” উনি সাবাব ভাইয়া। আমার বাবাইয়ের ছেলে। চিনিস তো তোরা? আমেরিকায় থাকত, বলেছিলাম তোদের?”
আদ্র হঠাৎ চমৎকার করে হাসল। পূনরায় সাবাবের সাথে হাত মিলিয়ে বলল,
—–” সাবাব ভাই। সানিয়া আপুর জমজ ভাই তাই না?”
সাবাব মৃদু হেসে বলল,
—-” হুম।”
সাবাবের পরিচয় জেনে এবার মিলি আর এশাও স্বাভাবিক হলো। বেশ হেসে খেলে কথা বলতে লাগল সাবাবের সাথে। হীরের মনে হলো সাবাবের সাথে তাদের বেশ জমেছে। তাই তাকে এখানে না থাকলেও চলবে। হীর তাদের অহেতুক হাজি মজাকে পাত্তা না দিয়ে উঠে দাঁড়ালো। ক্লাসের উদ্দেশ্যে হাঁটা ধরে বলল,
—-” ফার্স্ট ক্লাস আর দশ মিনিট বাদেই শুরু হবে। তোরা আয় আমি গেলাম।”
হীরকে হাঁটা ধরতে দেখেই আঁড়চোখে তাকাল সাবাব। বাকি তিনজন লাফিয়ে উঠল হঠাৎ-ই। সাবাবকে ইশারায় বিদায় জানিয়ে হীরের পেছন পেছন পা চালাতেই থমকে গেলো সবাই। সামনে থেকে তাদেরও আগে থমকে গেলো হীর। হীরের সামনে দাঁড়িয়ে আছে কেউ। যাকে দেখতেই হীরের চোখের মাঝে ফুটে উঠল রাগ আর ক্ষোভ। আজ আর তাকে পাশ কাটিয়ে যাবে না হীর। দরকার পড়লে এই জনসম্মুখেই তাকে চড় মেরে তার সামনে থেকে সরাবে। আর সে তার জায়গা থেকেই হেঁটে যাবে।
—-” অনেক দিন বাদে দেখা। কেমন আছো হীর?”
হীর ঝলসানো চোখে তাকালো। দাঁতে দাঁত চেপে বলল,
—-” রাস্তা ছাড়ুন।”
#চলবে____________________
[ বিঃদ্রঃ এতো কষ্ট করে লেখার পর কি আপনাদের ছোট্ট একটা গঠনমূলক মন্তব্য আশা করতে পারিনা? যদি না পারি তাহলে কষ্ট করে লেখার কি দরকার? বাদ দেই! কি বলুন?🙂 ]