কাছে দূরে পর্ব ৪

#কাছে_দূরে ♥️🥀
#moumita_mehra
#পর্বঃ০৪

—-” ভাইজান এই যে আনছি বরফ। কই রাখুম?”

সাবাব পেছন মুড়ে তাকালো। রুবির দিকে তাকিয়ে রুক্ষ স্বরে বলল,

—-” রাখতে বলেছি নাকি? বললাম না ওর গালে লাগিয়ে দিবি!”

রুবি ঢোক গিলল। রুবি হীরকে পছন্দ করলেও অধিক পরিমাণে ভয়ও পায়। যেখানে সে হীরের সামনে বসেই দাঁত কেলিয়ে হাসতে পারেনা সেখানে হীরের সামনে গিয়ে তার গালে বরফ লাগানো অনেক দূরের কথা। সাবাবের কথা মেনে সে হীরের গালে বরফ লাগাতে পারল না। বিছানার পাশে ছোট্ট টুলটা টেনে তার উপর বরফের বক্সটা রাখতে রাখতে ভীত কন্ঠে বলল,

—-” আ,,মারে খালাম্মায় রান্নাঘরে ডাকতাছে। আ,,আমি যাই।”

কথাটা বলেই ছুট্টে পালিয়ে গেলো রুবি। সাবাব রুবির যাওয়ার পানে তাকিয়ে ভ্রু কুঁচকে ফেলল। হীর এখনও চুপচাপ বসে আছে। আঁড়চোখে যদিও একবার দেখলে সাবাবকে। তবে সাবাবের চোখে তা ধরা পড়ল না। সাবাব বরফের বক্সটা হাতে তুলে আমতাআমতা করতে লাগল। হীর কিছুক্ষণ চুপ থেকে বলল,

—-” আমাকে দাও আমি লাগিয়ে নিতে পারব।”

সাবাব হীরের আড়ালেই ছোট্ট করে নিঃশ্বাস ফেললো। হীরের কথায় সে ভরসা পাচ্ছে না। হীর কি আদৌও লাগাবে বরফ গুলো? নাহ্, ভরসা ঠিক করা যাচ্ছে না। সাবাব বরফের বক্সটা হাতে রেখেই গলা খাঁকারি দিলো। সাত পাঁচ কিছু একটা ভাবতে ভাবতে বলল,

—-” একা একা লাগালে কষ্ট বেশি হতে পারে। তার চেয়ে বেটার আমি লাগিয়ে দিচ্ছি!”

হীরের চোখ গোল্লা পাকিয়ে গেলো মুহুর্তেই। সাবাবকে নিজের দিকে এগিয়ে আসতে দেখেই কাচুমাচু করে খানিকটা গুটিয়ে গেলো সে। এই মুহুর্তে ভয় নয়, অস্বস্তিটাই বেশি কাজ করছে। সাবাবও অস্বস্তিতে পড়ল খানিকটা। তবে সেটা প্রকাশ পেলো না। বেশ স্বাভাবিক ভঙ্গিমা নিয়েই হীরের পাশে বসল সাবাব। বরফের বক্সটা খুলে এক টুকরো বরফ তুলে খুব সাবধানতার সহিত হীরের গালে লাগালো। গালে বরফ লাগতেই জ্বলা ভাবটা যেন মাথাচাঁড়া দিয়ে উঠল। হীর চোখ বুঁজে কাতর কন্ঠে চাপা আর্তনাদ করল! সাবাব হীরের গালে বরফ লাগাতে লাগাতে দু-চোখ ভরে দেখতে লাগল হীরকে। ভয় পেলেও কতটা মায়াবী লাগে হীরের মুখখানা। ইচ্ছে করে দু-চোখ ভরে দেখতে! আলতো হাতে স্পর্শ করতে!

সাবাব দেশে ফিরেছে ঠিক নয় দিন আগে। বাসায় জানালো আজই তার ফ্লাইট ছিলো! তার দেশে ফেরার খবর পরিবারের থেকে গোপন করার পেছনে কারনটা মুলত হীরই ছিলো। হীরের জন্য এমন মৃত্যুবান যে এই প্রথমবার ছড়ানো হয়েছে সেরকমটা নয়! আরও অনেকবার এবং অসংখ্য বার হীরের উপর এট্যাক হয়েছে। আর সেখান থেকে সাবাবই তাকে উদ্ধার করেছে। দেশে না থেকেও হীরের আশেপাশে সর্বদা সিকিউরিটি দিয়েছে। তবে সবটাই হীর এবং পরিবারের অগোচরে। আজিম সাহেবও বরাবর হীরকে নিয়ে ভীষণ চিন্তিত। কেননা, হীরের বাবা-মায়ের মৃত্যু স্বাভাবিক ছিলো না। তাদেরকে খুব নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়েছিলো। আর হীরের বাবা-মায়ের খুনিরাই এখন হাত ধুয়ে পড়ে আছে হীরের পেছনে। খুনিরা একটা দল বা একটা দলের একটা মাথা নয়। এখানে কল কাঠি নাড়ছে অসংখ্য মাথা। কেউ ভালোবাসা খুইয়ে হয়ে উঠেছে উন্মাদ আর কেউ কারিকারি টাকার লোভ সামলাতে না পেরে হয়ে উঠেছে বেয়াড়া। সবারই কিছু না কিছু উদ্দেশ্য হীর এবং তার পরিবারকে নির্মিশেষ করে দেওয়ার জন্য। ঠিক নয় দিন আগে দেশে ফিরে হীরের সমস্ত দায়িত্ব নিজের কাঁধে তোলে সাবাব। কফি-শপে বোম ফিট করার খবর সে আজ সকালেই পায়। টানা নয়টা দিন পরিশ্রমের উপর পরিশ্রম করেও তাদের পরিকল্পনা সামনে আনতে পারেনি। তবে আজ পেরেছে। আর যখন পারল তখন হাতে সময় ছিলো মাত্র এক ঘন্টা। আর এক ঘন্টার মাঝে সাবাবের হীরের কাছে পৌঁছতেই লেগে গেলো পয়তাল্লিশ মিনিট। মাত্র পনেরো মিনিট হাতে থাকায় হীরকে কি করে কফি-শপ থেকে বের করা যায় মথায় আসছিলো না! তাই না চাইতেও এমন এক কান্ড ঘটাতে হলো যাতে হীর একরাশ তিক্ততা আর ক্ষোভ নিয়েই প্রস্থান করে। মনে মনে উপরওয়ালার সহায়তা চাচ্ছিলো যেন তার প্ল্যান টা সফল হয়। উপরওয়ালা সাবাবের কথা কবুল করল। সে যেভাবে চাইল সেভাবেই সবটা হলো। তবে সাবাবের একটাই আক্ষেপ রইল যে সে হীর আর তার বাকি তিন ফ্রেন্ডকে ছাড়া আর একটা মানুষকেও বাঁচাতে পারল না!

—-” আমাকে দাও প্লিজ! আমি লাগিয়ে নিচ্ছি।”

হীরের কাতর কন্ঠে ভাবনার সুতো ছিঁড়ল সাবাবের। সাবাব নিজের অবস্থান বুঝে গলা খাঁকারি দিলো। গলে গিয়ে অবশিষ্ট থাকা অর্ধেক বরফ হীরের হাতে তুলে দিয়ে উঠে দাঁড়ালো সে। হীর অস্বস্তি নিয়ে বরফটা গালে ঘষতে লাগল। সাবাব যাওয়ার উদ্দেশ্যে বলল,

—-” আস্তে আস্তে লাগাতে থাক। ব্যাথাটা একটু হলেও কমবে।”

হীর জবাব দিলো না। নিজের মতো করে বরফ লাগাতে থাকল। সাবাব হীরের গতিবিধি পর্যবেক্ষণ করে বক্সটা টুলের উপর রেখে বেরিয়ে গেলো রুম থেকে। হীর এবার চোখ তুলে তাকালো। সাবাবের যাওয়ার পানে তাকিয়ে ছোট্ট করে নিঃশ্বাস ফেললো। মনে মনে ভাবতে লাগল,

—-” নিজেই চড় মারল আবার নিজেই দরদ দেখাতে এসেছে। এলিয়েন!”

_______________

আজ হীরের ভোর ভোর ঘুম ভাঙল। বাড়ির মধ্যে মানুষ গুলো পাখির মতো কিচিরমিচির করছে। একরাশ বিরক্তি নিয়েই উঠে বসল হীর। ঘড়িতে সময় দেখলে ৫টা ৫৬ চোখে পড়ল। এতো ভোরে বাড়ির মানুষ গুলোর হলো কি? এভাবে হাঁকডাক শুরু করল কেন? আর বাড়িতে মানুষই বা কতজনক? আগে ছিলো চারজন আর এখন সাবাব আসায় বাড়তি হলো একজন। মোট পাঁচজন মানুষ। নীচে তো হীর নেই। সানিয়া এবং সাবাবও খুব সম্ভবত নিজেদের রুমে থাকবে। রুবি আর নাজমা বেগম রান্না ঘরে থাকবে সবার নাস্তা রেডি করার জন্য। আর আজিম সাহেব ফজরের নামাজ পড়ে এক কাপ চা নিয়ে চুপচাপ শান্ত ভঙ্গিতে খবরের কাগজের পাতা উল্টাবেন। তাহলে চেঁচামেচিটা করছে কারা?

হীর গাল ফুলিয়ে নিঃশ্বাস ছেড়ে বিছানা ছাড়ল। হেলতে দুলতে ওয়াসরুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে চেঞ্জ করে একদম পরিপাটি হয়েই নীচে নামল। দুই সিঁড়ি অতিক্রম করতেই চোখে পড়ল পাড়া প্রতিবেশীর মা-কাকি মাদের। বিরক্তিতে কপাল কুঁচকে গেলো হীরের। তার মানে এই ভোর বেলা পাখির মতো কিচিরমিচির এরাই করছে! হীরের ইচ্ছে হলো না নীচে গিয়ে তাদের সামনে দাঁড়াতে। তবুও আস্তেধীরে নীচে নামল। এখানে এমনও অনেক মহিলারা বসে খোশমেজাজে গল্প জুড়েছেন যাদের এই প্রথম দেখছে হীর। এদের আগমনের কারন টা সঠিক না জানলেও বেশ জোর গলায় বলতে পারবে বিদেশি ছেলের কাছে নিজেদের মেয়েদের গুণগান গাইতে এসেছেন তারা। নাজমা বেগম এদের প্যানপ্যানানি আর ঘ্যানঘ্যানানিতে অতিষ্ট প্রায়। উনি পারেন তো সবাইকে এক গাদা কথা শুনিয়ে দিয়ে উঠে যান। সানিয়া আর সাবাবকে দেখা যাচ্ছে। যেখানে এই মহিলামহলের আসর জমানোর মধ্যমনি সাদমান সাবাব সেহেতু সাবাবের এখানে থাকা বাঞ্ছনীয়!

—-” হীর! ওখানে দাঁড়িয়ে পড়লি কেন সোনা? এখানে আয়না? দেখ এই আন্টিসরা ভাইয়ার জন্য কত খাবার দাবার নিয়ে এসেছে। ইফ ইই ওয়ান্ট সো ইউ ক্যান ট্রাই বেব।”

শেষ কথাটা বলেই চোখ টিপল সানিয়া। মহিলা মহলের এই ভীড়ে নিজেকে বারবার হারিয়ে ফেলছে সাবাব। সে যে কয়বার তাদের আসর ভেঙে ঠেলেঠুলে উঠতে যায় তারা সে কয়বার হেঁচকা টান দিয় আবারও বসিয়ে দেয় সাবাব কে। ব্যাপারটা সাবাবের জন্য চরম বিরক্তির হলেও বেশ মজা পাচ্ছে হীর। সে সানিয়ার দিকে তাকিয়ে মুখ টিপে হাসতে লাগল।

সানিয়া ভীর ঠেলে উঠে এসে হীরের পাশে দাঁড়ালো। ভাইয়ের করুন দশা বিশ্লেষণ করতে করতে বলল,

—-” জানিস, উনারা পারলে তো ভোর চারটার সময়েই এসে উপস্থিত হতেন। ভাগ্যিস আগে জানেন নি। ইশশ, দেখনা কি দশা করেছে আমার ভাইটার?”

কথাটা বলেই ভাইকে দেখিয়ে হাসতে লাগল সানিয়া। হীরও চুপ থাকতে পারল না। সানিয়ার সাথেই যোগ দিয়ে হাসতে লাগল সে। হীরের হাসির শব্দে বুকের ভেতরটা মোচড় দিয়ে উঠল সাবাবের। একরাশ বিরক্তি পাশে ঠেলেই দু’চোখে মুগ্ধতা নিয়ে তাকালো হীরের দিকে। মন জুড়ানো হাসি তার। মনোমুগ্ধ হয়ে গেলো সাবাব।

—-” অনেক হয়েছে আলাপচারিতা এবার উঠতো তুই।”

ভদ্রতার খাতিরেই এখনও রেগে যাননি নাজমা বেগম। ছেলেকে এখান থেকে কোনো মতে বের করাই তার উদ্দেশ্য। ছেলেটাকে দলে মলে একদম আলুভর্তা করে ছেড়েছে এরা।

সাবাব মায়ের দিকে অসহায় চোখে তাকিয়ে বলল,

—-” মা, আমি আবারও আমেরিকায় ফিরে যাচ্ছি। ভালো থেকো তোমরা।”

সাবাবের কথায় ফিক করে হেসে দিলো সানিয়া। হীর মুখ টিপে হাসতে লাগল। নাজমা বেগম রাগে বিরবির করে বললেন,

—-” আগে এখান থেকে তো বের হ। পরে না হয় যাস তোর আমেরিকায়।”

মায়ের কথা শুনে সাবাবের চোখ মুখে ফুটে উঠল আরও ভয়ংকর অসহায়ত্ব। নাজমা বেগম আর রিস্ক নিলেন না। ছেলের হাত ধরেই টেনে উঠালেন মহিলাগনের মাঝখান থেকে। অতঃপর আস্তে করে বললেন,

—-” এখান থেকে আর আগে পরে না তাকিয়ে সোজা নিজের রুমে চলে যা। আর ভুল করেও নীচে নামবি না। যা।”

সাবাব রুমের উদ্দেশ্যে পা বাড়াতেই আবারও পাখির মতো কিচিরমিচির করতে লাগল মহিলাগন।

” কি গো ভাবি? ছেলেকে আবার কোথায় পাঠাচ্ছো? আমাদের কথা বলা তো শেষ হয়নি!”

” সাবাব যেওনা বাবা, আমার মেয়ে ইরিনা তারপরে কি করল শুনবে না?”

” নীরার কথা তো শেষ অব্দি শুনলেনা সাবাব?

” শিরিন কিন্তু বলেছে সে তোমার সাথে আজ বিকেলে দেখা করবে বাবা! ভুলে যেও না কিন্তু।”

” রাবেয়ার নাম্বারটায় কল করে কথা বলে নিও বাবা।”

” ভাবি ছেলেকে আরেকটু থাকতে বলো না এখানে? আমার মেয়ে রিনি তো ওর জন্য পায়েস রেঁধে পাঠিয়েছে। এক চামচও তো খেলো না।”

মহিলাগনের একেক জনের একেক বানীতে কান চেপে ধরেই দ্রুত পায়ে প্রস্থান করল সাবাব। হীর আর সানিয়া কেবল হা করে শুনতে লাগল তাদের কথা। নাজমা বেগম অতিষ্ট হয়ে বললেন,

—-” সব শুনবে ভাবি। আজ আপনারা আসুন? আমার ছেলেমেয়েদের এখনও নাস্তাপানি হয়নি। আপনারা এভাবে ভাষন দিয়ে চললে আজ ওদের অভুক্তই থাকতে হবে।”

নাজমা বেগমের কথাটা গায়ে লেগে গেলো সবারই। চলে যাওয়ার উদ্দেশ্যে জায়গা ছেড়ে উঠে দাঁড়ালো সবাই! একেক জন করে বের হতে হতে বলে গেলো,

—-” তোমার ছেলেকে আমরা পছন্দ করি বলেই এসেছিলাম গো ভাবি।”

নাজমা বেগম রাগ দেখিয়ে বললেন,

—-” ধন্য করে দিলেন আমার ছেলেকে পছন্দ করে। এবার আসুন আপনারা।”

সব মহিলাগনই যেতে যেতে তাদের বিশেষ কর্তব্যটি পালন করে গেলেন। নাজমা বেগম আর তার ছেলের যাওয়ার পথে থাকিয়ে সবাই ছোট বড় করে মুখে ভেংচি কেটে বেরিয়ে গেলেন। নাজমা বেগম যেন হাফ ছেড়ে বাঁচলেন। ধপ করে সোফার উপর বসে পড় বড় বড় দম ফেলতে লাগলেন। সানিয়া আর নিজেকে আঁটকে রাখতে না পেরেই ঘর কাঁপিয়ে হেসে উঠল। মায়ের কাছে গিয়ে বসে হাসতে হাসতেই বলল,

—-” মা? তোমার বিলেত ফেরত ছেলের জন্য কতগুলো বউ আনবে? দেখো এই আন্টিসরা কিন্তু এখনই লাইন ধরতে শুরু করে দিয়েছে।”

রাগ আর হাসি কোনোটাই নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারলেন না নাজমা বেগম। না পেরে মেয়ের তালেই তাল মিলিয়ে ঘর কাঁপিয়ে হাসতে লাগলেন।

—-” আচ্ছা অনেক হয়েছে, এবার যা ভাইকে আর বাবাকে ডেকে নিয়ে আয় আমি নাস্তা দিবো।”

সানিয়া হাসি থামাতে বড় করে নিঃশ্বাস টেনে বলল,

—-” হ্যাঁ যাচ্ছি। তুমি খেয়াল রেখো তোমার ছেলেকে কিডন্যাপ করতে আবার যেন ঐ মহিলাগন চলে না আসে।”

নাজমা বেগম হেসে উঠে বললেন,

—-” না না আর আসবে না। তুই যা।”

সানিয়া উপরে চলে গেলো সাবাব আর আজিম সাহেব কে ডাকতে। নাজমা বেগম উঠে দাঁড়ালেন। বড় বড় দম ফেলে এগিয়ে যেতেই হীরকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখলেন। নাজমা বেগম মুচকি হেসে এগিয়ে গেলেন হীরের কাছে। হীরের গালে হাত রেখে স্নেহভরা কন্ঠে বললেন,

—-” সুপ্রভাত হীরপরি।”

হীর মিষ্টি করে হাসল। মৃদুস্বরে বলল,

—-” সুপ্রভাত বড় মা।”

নাজমা বেগম মুচকি হেসে হীরের কপালে চুমু খেয়ে বললেন,

—-” এসো খেতে এসো।”

” না না না! আমি নীচে যাবো না! ঐ আক্রমণাত্মক মহিলাগন যেকোনো সময় এসে আবারও আমার উপর হামলা করতে পারে।”

” আরে উনারা চলে গেছেন তো। মা উনাদের কথা শুনিয়ে পাঠিয়ে দিয়েছে। আশা করা যায় আর আসবেন না!”

উপর থেকে সানিয়া আর সাবাবের গলা ভেসে আসতে লাগল। নাজমা বেগম গলা উঁচিয়ে বললেন,

—-” কি রে কি হলো?”

সানিয়া মায়ের মতো করেই গলা উঁচিয়ে বলল,

—-” দেখো না মা? তোমার ছেলে নীচে আসতে চাচ্ছে না। ভয় পাচ্ছে। বলছে উনারা আবারও চলে আসবেন।”

নাজমা বেগম ছেলেকে ভরসা দিয়ে বললেন,

—-” না বাবা আর আসবেন না উনারা। জলদি খেতে আয়। কত দেরি হয়ে গেলো দেখেছিস। আয় আয় জলদি আয়।”

মায়ের কথায় ভরসা পেলো সাবাব। আস্তেধীরে নীচে নেমে ডাইনিং টেবিলে এসে বসল। হীর ততক্ষণে এসে নিজের জায়গায় বসে পড়েছে। সানিয়া সরাসরি টেবিলে না এসে বাবাকে ডাকতে গেলো খাওয়ার জন্য। নাজমা বোগম রান্নাঘরে চলে গেলেন। সাবাব রান্নাঘরে একবার উঁকি দিয়ে মাকে কাজে ব্যস্ত দেখতেই হীরের উদ্দেশ্যে বলল,

—-” ব্যাথা কমেছে?”

হীর প্রথমে খেয়াল করেনি সাবাব তাকে কিছু বলছে। সাবাব কথা বলছে শুনেই সে মাথা নীচু করে রইল। তাই দেখতে পেলো না তার কানে ফোন আছে কি না? তবুও আন্দাজ করে নিলো তার কানে ফোন আছে। হীরকে চুপ থাকতে দেখে সাবাব গলা খাঁকারি দিয়ে হীরের দিকে পূর্ন দৃষ্টি নিক্ষেপ করল। শান্ত কন্ঠে আবারও একই প্রশ্ন করল,

—-” ব্যাথা কমেছে গালের?”

হীর এবার আঁড়চোখে তাকালো। যখন বুঝতে পারল সাবাব তাকেই বলছে তখন সে নড়েচড়ে বসল। জিহ্বা দিয়ে ঠোঁট ভিজিয়ে মৃদুস্বরে বলল,

—-” হু কমেছে।”

—-” আমি চলে আসার পর বরফ লাগিয়েছিলি?”

হীর হ্যাঁ সূচক মাথা নাড়ল। সাবাব আরও কিছু বলার জন্য প্রস্তুতি নিতেই খাবার হাতে নিয়ে এসে পড়লেন নাজমা বেগম। তার পেছন পেছন রুবিও। আর ঐপাশ থেকে আসলেন সানিয়া আর আজিম সাহেব। যে যার চেয়ার টেনে বসে পড়তেই খাবার দিতে আরম্ভ করলেন নাজমা বেগম। সাবাবের আর কিছু বলার সুযোগ হয়ে উঠল না। আঁড়চোখে বারবার দেখতে লাগল চুপচাপ শান্ত হয়ে বসে থাকা হীরকে। হীরের জন্য নাস্তা বেড়ে নাজমা বেগম প্রথম টুকরো খাবার আগে হীরের মুখে দিলেন। আর তারপর তার বাকি দুই ছেলে-মেয়ের মুখে। আজিম সাহেবও একই কাজ করলেন। খাবারের প্রথম টুকরো আগে হীরকে খাওয়ালেন আর তারপর তার বাকি দুই ছেলে-মেয়েকে খাওয়ালেন।

#চলবে____________________

[ বিঃদ্রঃ আশাকরি আজকের পর্ব পড়ে পাঠকগনের কনফিউশান কাটবে যে কেন সাবাব হীরকে চড় মেরেছিলো? ]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here