#কুয়াশা মন
পর্ব ১৩…
সামিরা স্কুলে যাওয়ার জন্য তৈরি হচ্ছিল। বুয়া এলে সে তাঁর কাছে জিজ্ঞেস করল, তার বাবা কোথায়? রুমে দেখেনি কেন?
বুয়া হতবাক! মিহিরকে সে বাবা বলে ডেকেছে? নিশ্চয় ভুল শুনেছেন। তিনি ড্যাবড্যাব চোখে সামিরার দিকে তাকিয়ে রইলেন। সামিরা বলল, “বাবা কোথায় বলছি।”
“ও, হ্যাঁ, তোমাগো আব্বা কাল রাইত বাসায় আসেনি। আমারে ফোন দিয়ে কইছিল, তোমার সাথে থাইকতে। আমি রাতের বেলায় তোমার পাশে নিচেই ঘুমাইছিলাম। তুমি হাতে কী একটা লইয়া ঘুমাইয়াছিলে বলে দেখতে পাওনি।”
“তো কখন ফিরবেন?”
“কিছু তো কইবার পারুম না।”
সামিরা ভাবতে ভাবতে স্কুলে চলে গেল। এসে তড়িঘড়ি করে তার মায়ের ডায়েরি নিয়ে বসে পড়ল।
আমার দিন কী রাত, সময়কেই দীর্ঘ মনে হতো। কিন্তু এখন তেমন একটা মনে হয় না। চোখের পলকেই পাঁচটি মাস অতিবাহিত হয়ে গেছে। সময় সংক্ষেপ হয়েছে। খুব ভালোই লাগছে। দিনের সময়টা নওরিন আর তার বাবুর সাথে কাটিয়ে দিই। রাতের দিকে মাউথ অর্গানে তোলা মিহিরের মাতাল করা সুরটা শোনে যাই, কাটিয়ে দিই রাত। এভাবেই চলছে আমার দিনকাল। দিন যতই বাড়ছে, আমার মন নব নব প্রত্যাশার বাসা ততই বাঁধছে। এখন বাঁধতে শুরু করেছে, মিহিরের মুখে একটিবার ভালবাসি কথাটা শোনার। না জানি কখন এই শুভক্ষণ আসবে। কখনও কি তার মনে জায়গা করে নিতে পারব? কখনও কি তার প্রেয়সী হয়ে উঠতে পারব? অনেক খেয়াল, আশা, প্রত্যাশা এই মনে।
এভাবেই বেশ কয়েক পৃষ্টা সাবিহা লিখে গেছে। মনের সুখ কী বেদনা সবই ফুটিয়ে তুলেছে অতি সূক্ষ্মভাবে। সামিরার কাছে এই ডায়েরি তাড়াতাড়িই পড়া শেষ করতে হবে। তার জানতে হবে, তার মা যখন এতো কোমল মনের মানুষ ছিল, তবে কীভাবে তাদের বিচ্ছেদ ঘটেছে। মিহিরের কারণে কিছু হয়েছে বলে সামিরা এরূপ ধারণা আর করতে পারছে না। কারণ সাবিহার বর্ণনামতে মিহির অনেকটুকু বদলেছে। কুয়াশা অনেকটুকু কেটেছে তার মনের। তবে কী হয়েছিল যে, আজ তার মা-ই তার সাথে যোগাযোগ রাখে না?
সামিরা কিছু কিছু প্যারা বাদ দিয়ে দ্রুত পড়তে শুরু করল।
ডাক্তার পরশুই আমার ডেলিভারির ডেট দিয়েছেন। এমন সময় মুক্তাও এই দেশে নেই, স্বামীকে নিয়ে বাংলাদেশে বেড়াতে গিয়েছে। ডাক্তারের একথা মুক্তাকে বলার পর সে অনেক আপসোস করেছিল। তার শ্বশুরের জমি-জমা নিয়ে প্রবল সমস্যা বেঁধেছে। দুই কী চারদিন পরও আসতে পারবে না। এসে পড়ার কথা কালকের মধ্যেই। কিন্তু আমারই পোড়া কপাল। নওরিনও তার শ্বশুরঘরে। একাকীত্বে খুব করে ভুগছিলাম। মিহিরকে নিষেধ করার সত্ত্বেও সে অফিস থেকে ছুটি নিয়ে ফেলেছে বেশ কয়েকদিনের জন্য। আজ সকালে কপালে কালো দাগ পড়ল, ডান পা মচকে গিয়েছে। হাঁটতে পারছি না। রান্নাবান্না সব মিহিরই করেছে। আমি বিগত সময়ে কিছু রান্না তাকে শিখিয়েছিলাম। তাতেই সে আমার মন-পেট ভরছে। সকাল থেকে পুরো বাসার কাজ সে একাই করছে। আমি পায়ের ভারই দিতে পারছি না মাটিতে। মিহির আমায় হুকুম দিয়েছে রেস্ট করার জন্য। নিজেকেই কেমন অকর্মক বলে মনে হচ্ছে। অস্থির একটা ভাব কাজ করছে আমার মাঝে। পরশু কী হতে চলেছে এই নিয়ে দুশ্চিন্তা। মা এই প্রথমবারের মতো হয়েছি। কাজেই একটা দারুণ ভয় কাজ করার কথা। প্রহর যতই কাটছে, ভয়টা আমাকে আরও চাপ দিচ্ছে। কেমন অস্বস্তি বোধ করছি। মিহির একটু আগে আমাকে ঘুমোতে বলে কোথায় যেন গেছে। দুপুর প্রায় অর্ধেক কেটে গেছে। এখনও আসছে না সে। বলে রেখেছিল, ফিরতে ঘণ্টাখানেক লাগবে। আমার ঘুম আসছে না। সে আমাকে ফেলে এভাবে এক মিনিটের জন্যেও বাহিরে যায় না। আজ হয়তো জরুরি কোনো কাজ এসেছে।
সামিরা এটুকু পড়ার পর বেশ কয়েক পৃষ্টা উল্টাল। আর কোনো লেখাই নেই। এটুকুতেই লেখা শেষ! অথচ ডায়েরিতে আরও অনেক পৃষ্টা খালি রয়েছে। সামিরা বাকি প্রতিটি পৃষ্টা খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখল, আর কোনো লেখাই নেই। কিছুই বুঝে উঠতে পারছে না সে। তার মা এতটুকু পর্যন্ত লিখে আর কিছু লিখেনি কেন? সে বেশ মাথা ঘামিয়ে রুমে পায়চারি করতে লাগল। তার মায়ের বাকিটা কথা সে কার কাছ থেকে জানবে? কে বলবে তাকে? মিহির বাসায় নেই। বুয়া কিছু জানলেও এখন লাভ হবে না। কারণ বুয়া দুপুর থেকেই অসুস্থ। ফুফির সাথেও যোগাযোগ হচ্ছে না।
সামিরার মাথায় এলো, মিহিরের হয়তো এমন কোনো নোটবুক থাকতে পারে, যেখানে অন্তত দুয়েকটা আত্মীয়ের হলেও ফোন নাম্বার থাকতে পারে। সে দ্বিতীয়বারের মতো আবার তার বাবার রুমে ঢুকল। গতবার সে তাড়াহুড়ো করে কেবল মাউথ অর্গানটি রেখে গেছিল। তাই রুমের বিশেষ কিছু তার নজরে পড়েনি। এখন সে চারদিকে ঘুরে ঘুরে দেখছে। রুমের কোনো বিশেষত্বই নেই। সবকিছু সাদামাটা। যে কেউ দেখলে বলবে, মিহিরের রুচি নেই।
মাউথ অর্গান এখনও কাজের টেবিলে পড়ে আছে। বিকেল শেষ হয়ে আসছে। মিহিরের আসার কোনো নির্দিষ্টতা নেই। যেকোনো সময় চলে আসতে পারে। এই ভেবে সামিরা আরেকটু সক্রিয় হলো। শুরুতেই প্রতিটি ফার্নিচারের ড্রয়ার তন্নতন্ন করে খোঁজে দেখল, কিছুই বেরুয় কিনা। কিন্তু কিছুই পেল না। ড্রেসিং টেবিলের একটু পাশেই মস্তবড় আলমারি। আলমারিতে তো অনেকে প্রয়োজনীয় অনেক কিছুই রাখে। সামিরা তড়িঘড়ি করে চাবি খুঁজতে লাগল। কারণ তার বাবার মতো বদমেজাজি লোকের হাতে যদি সে জিনিস খোঁজা অবস্থায় ধরা পড়ে তবে সামিরার রক্ষা নেই। আবার তার বাবা তাকে হয়তো বলতেও পারে, তোমার যা ইচ্ছা হয় খোঁজো। আমি বাধা দেবো না। শেষের ঘটনার সম্ভাব্যতা খুব কম। কাজেই সে এদিক-ওদিক খোঁজাতে ব্যস্ত হয়ে পড়ল। অবশেষে পেল বিছানার এক কোণে বেডের নিচে। পেয়ে সে বেশ কয়েকটা চাবি পেরিয়ে দরজার তালা খোলে ফেলতে সক্ষম হলো। সুবিধা হলো, সামিরার রুমে তার মায়ের যে আলমারিটি আছে সেটি এটিরই অংশবিশেষ। সহজেই সে বুঝেছে কোথায় কোন গোপন ড্রয়ার থাকার কথা। সে মেইন ডেক্স খোঁজেও কিছু পেল না। তবে দুয়েকটা কাজের বইয়ের ফাঁকে ফাঁকে তার মায়ের ছবি গুঁজানো দেখতে পেল। এগুলো দেখে সামিরা আরও বেশি উত্তেজিত হয়ে পড়ছে। কী হলো, কী হলো, এই চিন্তাই প্রবল। সে তার মায়ের আলমারির যে গোপন ড্রয়ারটি থেকে তার মায়ের ডায়েরিটি পেয়েছিল, ঠিক সেরূপ একটি ড্রয়ার মিহিরের আলমারিতেও আছে। সামিরা কিঞ্চিত আশা ফিরে পেল বটে। এখানে যদি কিছু পেয়ে যায়!
সে ড্রয়ারটির সন্ধান করতে শুরু করল। নানান কাগজপত্রের মাঝে তার হাত হঠাৎ কিছু একটির মলাটে গিয়ে লাগল। কাগজপত্র সরিয়ে সে হতভম্ব রয়ে গেল। একটি ডায়েরি! মিহিরের মতো গম্ভীর একটি লোকও কি ডায়েরি রাখে বা ডায়েরিতে লেখে?
সামিরা ডায়েরিটি নিয়ে একপাশে সরিয়ে রাখল। না, এতো খোঁজেও এরচেয়ে বেশি কিছু পাওয়া গেল না। সে সবকিছু ঠিকঠাক করে গুছিয়ে রেখে ডায়েরি নিয়ে রুমে ফিরে এলো। মায়ের ডায়েরি পড়া শেষ, এখন বাবার ডায়েরি। ডায়েরি খুলতেই কাটাছেঁড়ায় ভরপুর দেখল প্রতিটি পৃষ্টায়। লেখার অবস্থাও বারোটা। তার মা কত শালীন করে মসৃণ হাতে ডায়েরিতে লিখেছিল, কিন্তু তার বাবার হাতের লেখা দেখে বোধ হচ্ছে, তার মুখে যেমন নম্র কথা মানায় না, ঠিক তেমন তার হাতেও কলম মানায় না। সামিরা ওসব ব্যতিরেকে পড়তে শুরু করল।
আমি মিহির তালুকদার। মনির তালুকদারের ছোট ছেলে। (কাটাছেঁড়া) না, না, ডায়েরিতে মানুষ কি শুরুতেই ইন্টার্ভিউ দেয়? ডায়েরির লেখাগুলো কেউ পড়ছে নাকি?
সামিরার এক মুহূর্তের জন্য মনে হলো, দুনিয়ার যতসব শখ মেয়েদের কাছেই। এইযে, তার মায়ের কল্পনা ছিল না কেউ একদিন তার ডায়েরি পড়বে, তবু সে খুব সজ্জিত করে লেখালেখি করেছে।
সাবিহা একবার বলেছে, তার একটি ডায়েরি আছে, যেখানে সে তার মনের কথা সবই লেখে। সেদিনই ভাবলাম, কেননা আমিও একটি ডায়েরি রাখা শুরু করি! আমার একাকীত্ব গুছবে। মনের কথা শেয়ার করার জন্য সাবিহার কাছে যেতে হবে না বারংবার, ডায়েরির মলাটেই বন্দি থাকবে কথাগুলো। সেই ভেবে ডায়েরি একটি রাখলাম। কিন্তু আমার মনে হচ্ছে না, আমি বেশ কিছু শেয়ার করতে পারব। ডায়েরিতে লেখার বিষয়ে ছেলেরা হয়তো মেয়েদের চেয়ে একটু পিছিয়ে। কৌতূহল কী আগ্রহ দুটোরই অভাব। তাই শুরুতেই কী লিখতে হবে ভেবে কূল পাচ্ছি না। আচ্ছা, ডায়েরিতে সাবিহা তো আমার কথাই লিখে। আমিও কি তার কথাই লিখব? নাহয় লিখি। আমার জীবনে বাবা যাওয়ার পর থেকে তো কেউ নেই। এখন সে আর আমি ছাড়া বাসায় কেউই নেই। আমরা এখন দেশেও থাকি না, থাকি দুবাইয়ে। আমার ভাবতেই অবাক লাগছে আমি ডায়েরি লিখছি। বিগত একটি বছর আমার মন কোথায় ছিল আমার নিজেরই জানা ছিল না। এইদিন সাবিহার সাথে কথা বলে, বাবার শোকে কেঁদে মনটা যেন হালকা হয়েছে। এজন্যই হয়তো ডায়েরি লেখার মন মানসিকতা জুগিয়েছে।
ডায়েরির মাঝখানের অংশ থেকে।
“সাবিহা”
এক অপূর্ব রূপসী মেয়ে, সাবিহা। আমি সাধারণত আমার যাবজ্জীবনে পর কোনো মেয়ের দিকে তাকাইনি। সে আমার মামাতো বোন ছিল বিধায় মাঝে মাঝে লুকিয়ে দেখতাম একটু-আধটু। তার বর্ণনা কোন দিক দিয়ে শুরু করব ভেবে পাচ্ছি না আমি। আমি যে বয়সে বোঝদার হয়েছি, তখন ভেবেছি আমার কোনো জীবনসঙ্গী এলে নিশ্চয় তাকে কোনোদিনই আমার ভালো লাগবে না। কিন্তু ঘটনাক্রমে আমার এমন একটি মেয়ের সাথে বিয়ে হলো যাকে আগে থেকেই সামান্য হলেও ভালো লাগত। আমি ভাবিওনি কখনও কোনো মেয়ে আমার নজরে ভালো হবে। সাবিহা ছোটকাল থেকেই আমাকে অনেক কিছুতে রাগিয়ে এসেছে। তার কারণে বাবার কত শত বকা শুনেছি। তবুও সে যখন সাফাই গায়, তখন মুগ্ধ হয়ে শুনে থাকি। ভাবি এভাবে কেউ কিছু বুঝালে গম্ভীর মানুষও বাচাল হবে। এইযে, আমি এখন হয়ে গেলাম।
শুরুতে সাবিহাকে মোটেও পছন্দ হতো না। কত ভুল বোঝাবুঝির পর মঈন ভাইয়ার বিয়ের শেষে ওর চোখে পানি দেখে আমার অভিমান সবই গলে গেল। সেদিনই ভেবেছি মেয়েটিকে আর কষ্ট দেবো না। কিন্তু ঘটনাক্রমে আবারও ওর সাথে গোলযোগ বাঁধল। দোষ ছিল মুক্তার, ঝেড়েছি আমি তাকে। কত অপমান, কত লাঞ্চনাই না সহ্য করেছে সে। কিন্তু আমি ভুল স্বভাবে প্রতিটি মেয়ের মধ্যে আগের মায়ের প্রতিচ্ছবি দেখি। সাবিহাকে দেখলে এই যেন মনে হতে শুরু করে, এই মেয়েও একদিন আমাকে ধোঁকা দেবে। সম্পত্তি নিয়ে তো পালাবেই, ততদিনে তার রূপে মাতাল করেও ছাড়বে। বাবার মতো পরিণতি আমারও হবে ভাবলে বুকটা সহসা কেঁপে উঠত। বলে উঠতাম, না, এই মেয়েকে কিছুতেই আমি আমার মনে ঠাঁই দিতে পারব না। একদিন সুযোগের ব্যবহার করে তার সাথে তালাকের কথাটাও তুলে ফেললাম। এর আগেও কথার ফাঁকে এই তালাকের কথাটি বলে ফেলতাম। সে চুপ হয়ে যেত, তর্ক আর করত না বলে এই প্রসঙ্গে আমি হেরে যেতাম, তালাকের কথা এগিয়ে নিতে পারতাম না। একদিন তাকে তালাক দেওয়ার সুবর্ণ একটি সুযোগ পেয়েছিলাম, কিন্তু বাবা সাবিহার যেসব সত্যের কথা বললেন তাতেই আমি ছানাবড়া! সাবিহা আমাকে ভালোবাসে! সে তার ডায়েরিতে নাকি আমাকে নিয়েই লেখে। দুর্ভাগ্যক্রমে ধরা পড়েছিল ডায়েরিটি মুক্তার কাছে। এসব শুনে আমার চোখ যেন কপালে উঠল। একটি মেয়ে আমার সম্পত্তিকে না ভালোবেসে আমাকে বেসেছে? মেয়েরা না কলঙ্কিনী! তবে সে কোন ভুবন থেকে এলো? সে কি এযাবৎ পৃথিবীর স্বার্থপর মেয়েদের মাঝেই রয়েছিল? আমার মন মানতে রাজি ছিল না। ভেবে নিলাম, তাকে তালাক দেবো না। কিন্তু ভালোও বাসব না। না জানি কবে ছদ্মবেশীর ন্যায় ধোঁকা দিয়ে চলে যায়। আমি তাকে তালাক দিলাম না। এরপর বাবা আমাদের ছেড়ে চলে গেলেন। একবছরের মুখে মায়েরা আমাকে এখানে চলে আসতে বললেন। আমি যেন কাঠপুতুল! চলে এলাম একা তাকে নিয়ে। মন-দেমাগ যদি ঠিক থাকত, তবে আপনাকেই বলতাম, কী করছিস? সাবিহার সাথে একা থাকবি? ওভাবে একা থাকলে যে কেউ কাছে আসবে। সাবিহার সাথে সুসম্পর্কে গড়তে দেরি হবে না।
আমি অন্যমনস্কের মতো দিন অতিবাহিত করতে লাগলাম। সেন্সলেস ছিলাম বলতে গেলে। সামিরা মাঝে মধ্যে পাশে এসে বসত। বোকার মতো বলত, একটু কেঁদে মনের বেদনাটা উজাড় করে দিন! আমি চুপচাপ থাকতাম। একদিন এই পন্থা ব্যবহার করলাম, সত্যিই কাজে এলো। আমার বুকের যন্ত্রণা অনেকখানি প্রশমিত হলো কাঁদার মাধ্যমে। এরপর অজান্তেই সাবিহাকে স্ত্রী হিসেবে শ্রদ্ধা করতে শুরু করলাম। তার চাহিদাকেও গুরুত্ব দিতে লাগলাম, অজান্তেই বিশ্বাস করতে শুরু করেছিলাম তাকে। আমি এই ব্যাপারটা ওপর থেকে দেখাতাম না। মনের গহীনেই রাখতাম। পাশে যেন সুযোগ নিয়ে না বসে!
অচিরেই তাকে কাছেও আসতে দিলাম। একদিন সে হঠাৎ আমার হাতে চুরি হয়ে যাওয়া আমার প্রিয় বাদ্যযন্ত্র মাউথ অর্গানটি এনে দিলো। আবদার করতে লাগল, একটিবার বাজিয়ে শোনাতে। আমি সেদিন যেন অর্গানের প্রিয় সুরটায় নয়, তারই মুগ্ধকর কথায় মাতাল হয়েছি। সেদিন আমার পাশে বসে চোখ বন্ধ করে সে সুরটি উপভোগ করছিল। একটি সুরকে কেউ এভাবে উপভোগ করে! তা আমার অজানাই ছিল। এরপর থেকে আমি ওর মুগ্ধতা দেখার জন্য ওই সুরটি তুলে যেতাম।
(চলবে…)
লেখা: ফারিয়া কাউছার