কুয়াশা মন পর্ব ১২

#কুয়াশা মন

পর্ব ১২…

মাস খানেক পর বুঝতে পারলাম, আমি অন্তঃসত্ত্বা। মা’কে জানানোর পর তিনি খুব খুশি হলেন। বাকি আছে মিহির। তাকে বলব কিনা ভেবে পাচ্ছি না। বললেও বা কীভাবে বলব? কেমন হবে তার প্রতিক্রিয়া, এই নিয়ে বড় দুশ্চিন্তা।
উনার অজ্ঞাতসারে হয়নি কিছুই। কাজেই উনাকে নিঃসঙ্কোচে কথাটি বলতে পারব। উনি এখন মোটামুটি ঠিক হয়েছেন। আগের মতো সারাক্ষণ বাসায় থাকেন না। কাজে যান অফিসে, রাতের দিকে ফিরে আসেন। একঘেয়েমি ভাবটি এখন আর নেই বলতে গেলে। মন খুলে আমার সাথে মাঝে মধ্যে দু’একটা কথা বলেন। মা ঠিকই ধরেছেন, বাহিরে এলে তিনি ঠিক হয়ে উঠবেন।
মুক্তা তার স্বামীকে নিয়ে সম্প্রতি এখানেই শিফট হয়ে গেছে। একবার আমাদের সাথে দেখা করতে এসেছিল। এরপর আর আসেনি। তার বাসা এখান থেকে বেশিদূরও নয়। আমি ক্ষমা চেয়েছি তার সাথে রুক্ষতার সাথে কথা বলার দায়ে। সে পুরনো কথাগুলো অনেক আগেই ভুলে গেছে। দোষ সবারই ছিল। তাই সে তার মনে কোনো বিদ্বেষ রাখেনি। তা জেনে আমার খুবই ভালো লেগেছিল। তবে একটা চাপা অভিমান রয়েছে অবশ্য। এই কারণেই হয়তো তেমন একটা আসে না।
বাসায় আমি ছাড়া এই সময় কেউ থাকে না। বাড়িওয়ালারা থাকেন নিচের তলায়। আমাদের ভাড়া বাসাটি মোট তিন তলার। তার মধ্যে মিহির আর আমি থাকি দ্বিতীয় তলায়। ফ্ল্যাটগুলো অসম্ভব বড় আকারের। বাড়িওয়ালা খুব শখ করে বেঁধেছেন। তবে তাঁর পরিবার তত বড় না যে, এতগুলো রুম বা জায়গার প্রয়োজন হবে। তাঁরা একতলাতেই এডজাস্ট করে নিতে পেরেছে দেখে বাকিগুলো ভাড়া দিয়ে দিয়েছে।
মিহির আগে যে বাসায় থাকত, সেটি এখন বড় ভাইয়ার দখলে। মিহির চাইলেই ছিনিয়ে নিতে পারতেন, এমনটা তবে করেননি। ঝামেলায় পড়া থেকে সবসময় দূরত্ব বজায় রাখেন। তাই এই বাসাটায় ভাড়াটে হিসেবে থাকছি। উনি সম্প্রতি ভালো একটি জায়গা কিনেছেন, ভবিষ্যতে কিছু করার জন্য। হয়তো কাজ শুরুও করে দিয়েছেন। আমাকেই জানাননি হয়তো। তবে এই বাসায় স্বাচ্ছন্দ্যে আছি। একা তবে থাকতে হয় না। পাশের ফ্ল্যাটের এক মেয়ে এখানে আসে উনি যাওয়ার পর। নাম নওরিন, খুব ভালো একটি মেয়ে। বেশিরভাগ ইংলিশেই কথা বলতে হয়। এসে আমাকে অনেকক্ষণ সময় দেয়। তার এক ছোট বাচ্চাও আছে। ওর সাথে খেলে দিনটা কেটে যায়। নওরিন বলে, আমার বাচ্চা যখন পৃথিবীতে আসবে, তখন সে সবচেয়ে বেশি ভালবাসা পাবে আমার। এমনটা বলেছে, বাচ্চাদের প্রতি আমার মমতা দেখেই হয়তো।
মিহির একদা এক কাজের মেয়ে রেখেছিলেন। কিন্তু মেয়েটি বেশিদিন টিকলো না। আমি একবার বিকালে ঘুম থেকে উঠে তাকে অনেক খুঁজেছিলাম, পাইনি। তারপর কোনো না কোনো জায়গায় দুয়েকটি জিনিসের অনুপস্থিতি পেলাম দুয়েকদিন যাবৎ। বিল্ডিংয়ের অনেকের কাছে মিহির জিজ্ঞেস করে দেখল মেয়েটির কথা। কিন্তু কেউই দেখেনি, সবাই সেই সময় ঘুমোচ্ছিল। পরে মিহির বললেন, “আমি তোমাকে বলেছিলাম, অপরিচিত কাউকেই বাসায় রাখা উচিত নয়। তোমার জোরাজুরিতে যাও রেখেছিলাম, দেখলে তো পরিণাম? না জানি কি কী চুরি করে নিয়ে গেল। মেয়েটি আজ ছোট ছিল বলে, যদি এরচেয়ে অধিক কিছু হয়ে যেত!”
আমি সেবারের মতো চুপ করে গেলাম। কাজের মেয়ে আরেকটি আনানোর জন্য আর কখনও তাকে বলতে ইচ্ছে হয়নি। পরবর্তীটা আবার কী না কী করে বসে!
দিন কয়েক হলো, নওরিন শ্বশুরঘরে পা রেখেছে একমাস থাকার জন্য। এখন বলতে গেলে পুরোপুরি নিঃসঙ্গ আমি। ডায়েরিতে লিখেই সময় কাটানোর ধান্দা করছি।
রান্না স্রেফ দুইজনের। খুব তাড়াতাড়িই সেরে যায়। রান্না শেষে বাকি সময়টা অবসর। মিহির বাসার বাহিরে নিচে বসে আছে। তার ধারণা, পাশেরই মস্ত বড় বাগানের ফুলের সুভাসের চেয়ে অন্য কোনো গন্ধই সুগন্ধ নয়। সময় আর মুড ভালো থাকলে সে ওখানে গিয়ে চেয়ার পেতে বসে থাকে। বাড়িওয়ালার খুব প্রিয় সে। তিনি খুব যত্ন করে সেখানে ছোটখাটো করে বেতের চেয়ার সাজিয়েছেন মিহিরের জন্য। পরে ক্রমে চেয়ার সংখ্যা বাড়িয়েছেন, বিল্ডিংয়ের অন্যান্য ছেলেমানুষের কথা ভেবে। অবশ্য এই সময় তিনি ছাড়া কেউ থাকেন না। প্রতিবার ফোন দিয়ে বলেন এক কাপ নিয়ে যাওয়ার জন্য। এইতো, ফোন বাজছে।
আমি চা নিয়ে উনার কাছে গেলাম। বসে পড়লাম অন্য একটি চেয়ারে।
“একি! তুমি এখানে বসলে যে?”
“আমি কি বসতে পারি না?”
“বসতে পারো। তবে তুমি তো বসো না। শুধু তুমিই না, এখানে কেউই তো বসে না।”
“বসে, আপনি বাকিটা সময় অফিসে থাকেন বলে জানেন না। এই সময় ওরা কেউ না হয় টিভি দেখছে, না হয় পরিবারের সাথে ব্যস্ত।”
উনি ভ্রূ কুঁচকে আমার দিকে তাকালেন। “আমাকেও ওইরূপ হতে হবে নাকি?
“না, আপনার এই জায়গা যখন ভালো লাগে আসতেই পারেন। তবে যদি ওইরূপ হতেন খুব ভালো হতো।”
“আমার জানামতে এখানে আমি আটটা থেকে নয়টা পর্যন্তই থাকি। বাকিটা সময় তো বাসায় কাটাই। তুমি ছাড়া তো কেউ নেই।”
“হ্যাঁ, নেই। কিন্তু আসবে শীঘ্রই।”
“কে?”
“কেউ না।”
উনি কিছুই বুঝেননি। সোজা কথা ছাড়া অন্য কোনো কথায় তিনি সায়ই দেন না। চা খাওয়ায় মনোযোগ দিলেন।
“আমি মা হতে চলেছি।”
উনি আমার দিকে ঘুরে একটু তাকালেন, “ভালো কথা।”
“ফিল্মে দেখি হিরোইনরা এভাবে তার স্বামীকে এই কথাটা বললে স্বামীরা অনেক সুন্দর একটা অবাক হওয়া টাইপ প্রতিক্রিয়া দেয়। আপনার মাঝে কিছুই তো দেখছি না।”
“ডায়ালগটা ফিল্মের ছিল?”
“হ্যাঁ। না, কিন্তু কথাটা তো সত্যি।”
“আমি খুশি হয়েছি।”
“সত্যি?” বুক ফুলে উঠল আমার।
“হ্যাঁ, মা অনেক আগেই আমাকে অভিনন্দন জানিয়েছেন। সেই থেকে আন্দাজ করেছি। তুমি না বললেও এভাবে আমার কাছে পৌঁছারই ছিল কথাটি। খুশি হয়েছি, বাসায় আর নিরিবিলিতে থাকতে হবে না। কারও হৈচৈ, কান্নাকাটি লেগে থাকবে। তাছাড়া আমি আর তুমি কাছে এসেছিলাম বাচ্চার জন্য। বিয়ে তো জীবনে দ্বিতীয়টা আর করব না। ভাবলাম, যাই হওয়ার হলো, এখন থেকেই সংসার করি। তোমাকে একপ্রকার ক্ষমা করেছি বলতে গেলে। একটি বছর বাবার কথাগুলো ভেবেছি। তিনি যেভাবে তোমার সুপারিশ করেছিলেন সেসবের কথা। আমি বুঝতে অপারগ হওয়ায় তোমাকে কাছে আসতে দিলাম। তারপরই বুঝতে পারলাম আসলে তোমার কোনো দোষ নেই। তোমার চরিত্র খারাপ নয়। তবু আমি কোনো মেয়েকে আমার বিছানায় জায়গা দিতে পারলেও মনে দেওয়া সম্ভব নয়। কতবছর এক বিছানায় শুয়েও এক হব না? তাছাড়া জীবনে চাহিদা না থাকলে বাঁচার আশা থাকে না। ভালোই হবে, কেউ আসবে, তার দায়ভার নিজ কাঁধে বাবা হয়ে নেবো।”
“শুনে ভালো লাগল। আপনি এমন বাস্তববাদী কখন হলেন?”
“সময়ের সাথে।”
“সময়ের সাথে? আগে তো মেয়েদের বিশ্বাস করতেন না, সময়ের সাথে আমাকে কি করা শুরু করেছেন যে, আমি আমার স্ত্রীত্ব থেকে বঞ্চিত হলাম না?”
“একথা জিজ্ঞেস করা তোমার উচিত হয়নি। আমার বিশ্বাসের দরকার কেন পড়ছে তোমার? থাকো, যেভাবে আছো। তোমার মানসিক কী শারীরিক সব চাহিদাই তো মিটছে।”
“এইভাবে কেন বলছেন? আমি আপনাকে আগেই অনেক বড় একটি কথা বলে সেরেছি। আমি আপনাকে ভালোবেসেছি, আমার অধিকারে অনেক কিছুই আছে।”
“এই বিষয়ে আমার প্রতিবার কথা বলতে ইচ্ছে হয় না।
তোমার হাতে ওটা কী?”
“দেখে ফেলেছেন?”
“না, দেখিনি বলেই দেখতে চাই।”
আমি আমার হাতে থাকা মাউথ অর্গানটি বের করে দেখালাম। উনি বিস্ফারিত চোখে দেখে ওটা ঝাপটে আমার হাত থেকে নিলেন।
“একি? এটা কই পেলে? এটা তো চুরি হয়ে গিয়েছিল।” উত্তেজিত হয়ে তিনি বললেন।
আমি অপরাধীর মতো জবুথবু হয়ে বসে রইলাম।
“চোরটা কি তুমি?”
“আরে না.. না, আমি কেন চোর হব? আসলে এটা আমি চুরি করিনি। আমি শুধু নিয়েছিলাম। আর কখনও দেওয়া হলো না।”
“ওটাই একপ্রকার চুরি।”
“আমি যখন নিয়েছিলাম তখন চুরি কাকে বলে তা জানতাম না। আমি যখন দশ বছরের, তখনেরগুলো মনে আছে। আমি যখন ফুফির বাসায় বেড়াতে যেতাম, তখন প্রায়ই আমাকে থাকতে দেওয়া রুমের জানালা দিয়ে অনেক সুন্দর মিহি একটা সুর ভেসে আসত। যতদিন ছিলাম, ততদিন শুনেছি। কিন্তু রাতের বেলায় ফুফিরা রুম থেকে বেরুতে দিতেন না বলে সুরকারকে দেখতে পেতাম না। আমি ওই সুরের প্রেমে পড়েছিলাম। যতই শুনতাম, আরও শুনতে ইচ্ছে হতো। একপ্রকার মোহ কাজ করত। রাত গভীর হতে শুরু করলেই শুনতে পেতাম সুরটা। অবশেষে একবার সাহস করে সবাই শুয়ে পড়ার পর সুরটির সন্ধানে বেরুলাম। এসে দরজা আগে থেকেই খোলা দেখলাম। আমি পা টিপে টিপে গিয়ে দেখলাম, আপনিই মাউথ অর্গানটি দিয়ে অনেক যত্ন করে চোখ বন্ধ করে মনোযোগ সহকারে সুর তুলছিলেন। আমি মুগ্ধ হয়ে আপনার পাশে বসেই শুনছিলাম। আপনি সুরের একটা টান দেওয়ার পর যখন নিশ্বাস ছাড়ার জন্য চোখ খুললেন তখন..”
“তখন দেখলাম তুমি আমার পাশে বসে আছ।”
“আপনার মনে আছে এখনও?”
“তুমি যতটুকু ভালোবাসো তারচেয়ে অত্যধিক ভালবাসতাম আমিই এই সুরটিকে। একাই সুর তুলতে পছন্দ করতাম। মায়েরা অনেক বকাঝকা করতেন, রাতের বেলায় এরূপ বাজনা করার জন্য। আমি বাজিয়ে যেতাম। এই সুরটা আমাকে অন্য জগতে নিয়ে যেত যেন। যখন বাজাতাম, তখন মনে হতো, হায়! এই সুন্দর পৃথিবীতে একটু আগে কেন এলাম না? আমার মুডটা স্বতঃস্ফূর্ত ছিল। কাজেই আমি তোমাকে শত ঘৃণা করার পরও বকলাম না। ফিসফিসিয়ে একবার বলেছিলাম চলে যেতে কিন্তু…”
“কিন্তু আমি ওই সুরটা আরেকটু শোনার জন্য বায়না ধরেছিলাম। আপনার মুড ভালো থাকায় রক্ষা পেয়েছিলাম। আপনি এক নিশ্বাসে আরেকটি টান দিয়ে পাশে বসে থাকা আমাকে শুনালেন। আমি তৃপ্ত হয়ে চলে এলাম। পুরোটা রাত কান খাঁড়া করে শুধু সুরটাই শুনে যেতাম। আমারও মনে হতো, এই পৃথিবী খুব সুন্দর। আমি এরপর থেকে আপনাকে দিনের বেলায়ও বিরক্ত করা শুরু করে দিয়েছিলাম এটি বাজানোর জন্য। আপনি আর কখনও শুনাননি। বেড়ানো শেষে চলে আসায় সবই ভেস্তে গেল। আরেকদিন যখন আপনার বাসায় গেলাম, তখন ভাবলাম, আপনি যেহেতু বাজিয়ে শোনান না, সেহেতু এখন থেকে আমি নিজেই বাজাব। ছোট ছিলাম বিধায় কোন ফাঁকে সুযোগে আপনার রুমে ঢুকে অর্গানটি নিয়ে নিয়েছিলাম। আগে থেকেই জানতাম কোথায় রাখতেন। নিজ বাসায় এনে বহুবার বাজানোর চেষ্টা করলাম, ব্যর্থ গেল। আস্তে আস্তে যতই বড় হতে লাগলাম, আপনার রুমে ঢোকা মুশকিল হয়ে পড়ল। বড় হয়েও অর্গানটা আর রেখে আসতে পারলাম না। তাই অগত্যা নিজের কাছেই এতদিন রেখে দিলাম।”
“বেশ যত্ন করেছ। মরিচা ধরতে দাওনি। আমার এখন এটার আর প্রয়োজন নেই।”
“জানি, আপনি এখন সেই সুরকার কিশোর নন। বলিষ্ঠ পুরুষ হয়েছেন, সাথে গাম্ভীর্য এসেছে।”
“ওটার জন্য সময়ই দায়ী। তখন মনটা কচি ছিল, জীবনের স্বাদ নিতে চেষ্টা করতাম। তিক্ততাকে মনে আশ্রয় দিতাম না বলে।”
“সমস্যা কী? এখন একটু বাজান! আমি আরেকটিবার এই সুর শোনার জন্য ব্যকুল হয়ে আছি।”
“এই সুর আমায় মাতাল করে ছাড়ে। আমি মাতাল হতে চাই না।”
“আমার জন্য না হলেও একবার দ্বিতীয়জনটির জন্য বাজান? ওর মা হয়ে চাইছি। ওর প্রথম চাওয়া এটি, বাবা হয়ে নিশ্চয় পূরণ করবেন।”
“তোমার বোকামো লজিক ভালো লাগছে না। যাও।”
“বাজাবেন তো?”
“না বাজালে?”
“যাচ্ছি আমি, অপেক্ষায় থাকব বাজানোর। আপনি যখন সুরটির একটি টান দিয়ে নিশ্বাস ফেলার জন্য চোখ খুলবেন, তখন দেখবেন আমি পাশেই আছি। গালে হাত দিয়ে আপনার দিকে তাকিয়ে মিটিমিটি করে হাসছি।”
আমি কেমন এক রহস্যময় হাসি হেসে চলে এলাম। উনি চেয়ে রইলেন আমার যাওয়া। আমি বেশ কিছুক্ষণ অপেক্ষা করলাম, আমার বিশ্বাস, সে বাজাবে। সে মুখে বলে আমায় বিশ্বাস করে না, কিন্তু করতে শুরু করেছে নিজের অজান্তেই। তা না হলে বাবার যাওয়ার পর আমাকে তালাক দিয়ে দেওয়ার সুবর্ণ একটি সুযোগ ছিল। তা না করে সংসারিক জীবন শুরু করলেন তিনি। আমায় কাছে আসতে দিলেন। আমি শুয়ে এসব ভাবছিলাম, তন্দ্রা মতো আসছিল। তখনই এক সূক্ষ্ম মিষ্টি মিহি সুর আমার ঘুমকে হাওয়ায় উড়িয়ে দিলো। সেই পরিচিত সুর! না জানি কতবছর অপেক্ষা করেছি! এই যেন কেউ আমায় ডাকছে।
উনি যখন সুরটির একটি টান দিয়ে চোখ খুললেন, তখন আমি পাশেই বসেছিলাম। উনার দিকে চেয়েছিলাম গালে হাত ঠেকিয়ে। উনি বড় অবাক হলেন। চোখ আবার বন্ধ করে নিজেকে সুরের কাছে প্রায় মাতাল করে দিয়ে আবার বাজাতে মগ্ন হলেন।

সামিরা তড়িঘড়ি করে উঠে পাশেই থাকা তার মায়ের আলমারি খুলল। যে গোপন ড্রয়ারে সে তার মায়ের ডায়েরিটি পেয়েছিল সেখানেই ময়লাযুক্ত অর্গানটি একবার সে দেখেছিল। পুরনো, মরিচাধরা দেখে পরিত্যক্তের ন্যায় ধরেওনি। সে খোঁজে বের করলো সেটি। সে বেশ যত্ন সহকারে মাউথ অর্গানটি পরিষ্কার করল। সেটিকে একবার হাতে ছুঁয়ে দেখল, কোথাও না কোথাও তার মায়ের হাতের ছাপ অবশ্যই আছে। সামিরা ডায়েরি আর পড়ল না। ইচ্ছে হচ্ছে, মায়ের সাথে একটু কথা বলতে। মিহির বাসায় নেই। বুয়া ছাড়া কেউই নেই। তার ফুফি বলেছিল, তার মায়ের সাথে ফুফির ছাড়া আর কারোরই যোগাযোগ নেই।
সে মাউথ অর্গানটি বুকে চেপেই ঘুমিয়ে পড়ল। তারও মনে বাসনা জাগতে লাগল, সুরটি কি এতোই মধুর লেগেছিল তার মায়ের কাছে? নিশ্চয় তারও খুব ভালো লাগবে। সেও একবার মিহিরের মাধ্যমে শুনবে।
পরদিন চুপিসারে সে মাউথ অর্গানটি তার বাবার কাজের টেবিলে রেখে এলো, যাতে করে তার চোখে পড়ে সেটি।
(চলবে…)
লেখা: ফারিয়া কাউছার

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here