#কুয়াশা মন
পর্ব ৬…
বাসায় আজ ফুফা এসেছে। সাথে মিহির ভাইয়াও। আজ অনেক বছর পর মিহির ভাইয়া আমাদের বাসায় এসেছেন। এভাবে হঠাৎই আজ কোন কারণে আসা হলো তাঁদের? আমি গিয়ে দরজার কোণ ঘেঁষে লুকিয়ে তাঁদের একটু-আধটু দেখছিলাম। বাবারা কী কথাবার্তা বলছেন তা কিছুই বুঝছি না। আর বাবাই বলে রেখেছেন, বড়রা কথাবার্তা বললে ওখানে যেন না যাই, আমি যত বড় হই না কেন। লুকিয়ে বিশেষ কিছু দেখতে পারছিলাম না। খানিকটা বেরুতেই মিহির ভাইয়ার নজরে পড়ে গেলাম। সাথে সাথেই দরজার কোণে লুকিয়ে পড়ি। খানিক পর আরেকটু উঁকি দিয়ে দেখি ভাইয়া রাগে কটমট করছেন। আমাকে দেখেই রাগছেন। একি! আমি কি আবার তার সাথে কোনো গণ্ডগোল করে ফেলেছি? তড়িঘড়ি করে চলে এলাম। মাথায় হাত ঠেকিয়ে ডায়েরিতে লিখছি। বাহিরে সকলের সমাগম। কী হচ্ছে কিছুই বুঝছি না।
ঘণ্টাখানেক পেরিয়ে গেলে বাহিরের নিস্তব্ধতার আভাস পেলাম। সবাই চলে গিয়েছে ভেবে আমি রুম থেকে বের হওয়ার জন্য উদ্যত হই। এহেন সময় আমার আর বাইরে যেতে হয়নি। বাবা নিজেই আমার রুমে প্রবেশ করলেন। বাবাকে নিয়ে আমার একটা সমস্যা, তাঁর অন্তরে কী চলে তা সহজেই বুঝি না। তাঁর অনুভূতির ভাবমূর্তি তাঁর চেহারায় সহজেই প্রকাশ পায় না। রেগে আছেন নাকি খুশিতে মেতে উঠেছেন কিছুই বুঝছি না। তিনি আমার টেবিলের সামনে এসে একটা চেয়ার বসার জন্য টেনে নিলেন। তাঁর সাথে সাথে আমিও বসে পড়লাম। বুকটা কেবল দুরুদুরু করছিল। এই যেন ফুফার নালিশ না শোনায়। করেছিও বা কী? আমার তো এমন কিছু মনে নেই যে, আমি আবারও কোনো গোলমাল পাকিয়েছি মিহির ভাইয়ার সাথে।
বাবা বললেন, “মা, তোর বিয়ের বয়স আগেই হয়েছে। তোর ভাগ্য খারাপ হওয়ায় তোর সম্বন্ধটা খারাপ পড়েছিল। ওই কারণে তোর মনের অবস্থা বুঝে আমি মাস খানেক তোর সাথে বিয়ের সম্বন্ধে কিছুই বলিনি।”
এমা, খাইছে! আবার বিয়ে? গত বিয়েটি থেকে রেহাই পেয়ে কত ফুর্তিতেই না ছিলাম। এখন আবার বিয়ের কথা তুলছেন? এইবার নিশ্চিত আমার রেহাই নেই।
“তুই তো জানিস, তোর জন্য আমি এমন বর চাই, যে তোকে খুব সুখে রাখবে।” বাবা বলছিলেন, “ধনীর কোনো ছেলের সাথে তোর বিয়ে দেওয়ার প্রবল ইচ্ছা। আল্লাহ্ আমার মনোবাসনা পূরণ করেছেন। তোর জন্য পেয়েছি এমন একজন।”
মুহূর্তেই হৃদস্পন্দন আমার হুট করে বেড়ে গেল। একটু আগে ফুফারা এসেছিলেন। সম্ভবত কোনো একটা সম্বন্ধ নিয়ে। তার মানে..
“তোর ফুফা তোর জন্য মিহিরের সম্বন্ধ নিয়ে এসেছিলেন।” তিনি বললেন, “তোর সাথে মিহিরের বিয়ে দিতে চান।”
আমার হৃদস্পন্দন কমে গেল। আমি শীতল হয়ে গেলাম। মন-দেমাক আমার হয়তো সবই অসার হয়ে পড়ে কাজ করা বন্ধ করে দিয়েছে। এ কী শুনলাম?
“তোর আর মিহিরের মাঝের ঝগড়া-ঝাঁটিগুলোর সম্বন্ধে আমি আগে মুক্তার কাছে অনেকবার শুনেছি।” বাবা বললেন, “হয়তো তোরা একে অপরকে পছন্দ করিস না। এডজাস্ট করে নিবি! একবার বিয়ে হয়ে গেলে সবই ঠিক হয়ে যাবে। তোর আর মিহিরের মাঝের ভুল বোঝাবুঝিগুলোও ঠিক হয়ে যাবে। মিহির ভালো একটা ছেলে। একটু কম কথা বলে এই যা। স্বভাবে যে অনেক নম্র, এ কারণে ছেলেটিকে আমার খুব ভালো লাগে। আর আমার পছন্দ মানে তোর পছন্দ। তবু তোর মত বল।”
কোনোকিছুতে আমার দ্বিধাবোধ করলে কানের সামনের চুলগুলো হাত দিয়ে কানের পেছনে গুঁজে দেওয়া আমার স্বভাব। তখনও আপনা থেকে এমনটা করেছিলাম। বাবা মুচকি হেসে আমার মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে চলে গেলেন। আমি বিস্মিত রয়ে গেলাম। গালে হাত ঠেকিয়ে কী সব হয়ে গেল তার চিন্তায় মশগুল। তখনই কে যেন আমায় পেছন থেকে জড়িয়ে ধরেছে। ভ্রমের দেশ থেকে বেরিয়ে এসে দেখলাম মুক্তা আমাকে জড়িয়ে ধরে মিষ্টি মিষ্টি হাসছে। বলছে, “কিরে, কেমন খেলেছিরে? এখন তোকে আমার ভাবী হতে কেউ বাধা দিতে পারবে না।”
“এসব তুই করেছিস?”
“হ্যাঁ, তাই নয় কি?” মুক্তা আমার চেয়ারের পেছনের ক্ষুদ্রাংশে বসে বলল, “সে কতগুলোই না রুটি বেলেছি।”
“কয়টা? আর কীভাবে?” জবুথবু হয়ে বসে পেছনের দিকে তাকিয়ে বললাম, “মিহির ভাইয়াকে রাগে ফুঁসতে দেখেছি আমি। কী এমন করেছিস? আমার গলায় ফান্দা দেওয়ার পরিকল্পনা করছিস না তো?”
“আরে না, তেমন কিছু হবে না। একবার বিয়েটা হয়ে গেলে সব ঠিক হয়ে যাবে। ছোট ভাইয়া হয়তো এখন কিঞ্চিত রেগে আছেন। রেগে হয়তো অগ্নিশর্মাও হয়েছেন। তবে চিন্তা করিস না। বিয়েটা হওয়ার পর বলে দিস যে, সব হট্টগোল আমিই করেছি।”
“কী করেছিস তা তো বল?”
“শোন, আমি পরশু বাসায় আমার জানপাখিটাকে নিয়ে এসেছিলাম। ভেবেছি, অনেক হয়েছে অপেক্ষা। এখন কিছু একটা করার সময় চলে এসেছে। ছোট ভাইয়ার বিয়ে দেখার পালা এসেছে। আমি একটা প্ল্যান করলাম। কাল ভাইয়া তোর দুলাভাইয়ের সাথে কাজে গিয়েছিল। যাওয়ার সময় ওঁকে একটা লিপস্টিক দিয়ে রেখেছিলাম এবং পুরো প্ল্যানিংটা বুঝিয়ে দিয়েছিলাম। সেই মোতাবেক তিনি ভাইয়াকে জোর করে একটা টেইলরের দোকানে নিয়ে গেলেন, ভাইয়ার জন্য একটি জামা বানাতে দিয়েছেন জানিয়ে। আর তাঁর পাগলামোর সম্বন্ধে ভাইয়া অনেক আগে থেকেই অবগত আছে। ভাইয়া তাঁকে বোঝালো, ‘পাঞ্জাবি কেনে দেওয়ার এতই যখন ইচ্ছা, একটা রেডিমেড কিনে দিন। এতোগুলো মাপজোখ করে পাঞ্জাবি সেলানোর কী দরকার? আমার অন্য কোনো পাঞ্জাবির সাইজও তো নিতে পারতেন।’ তিনি ভাইয়ার একটা কথাও না শোনে টেইলরকে মাপ নিতে বললেন। আমার কথামতো তিনি ভাইয়ার অজ্ঞাতসারে টেইলরের এক হাতের বৃদ্ধাঙ্গুলির নিচের ভাগে পাশের খাঁজের সাথে মিশিয়ে লিপস্টিক লাগিয়ে দিলেন এবং বললেন, সুযোগে ভাইয়ার গলার আশেপাশে লিপস্টিকের ছাপটি বসিয়ে দিতে। তারপর টেইলরকে দিয়ে তোর ভাইয়া ইশারা করে ছাপটি বসিয়ে নিলেন। প্ল্যান এভাবেই অর্ধেক সফল হয়েছে। প্ল্যান মোতাবেক তিনি আসার সময় ভাইয়াকে একাই বাসায় ফিরতে বলে নিজ কাজে চলে গেলেন। ভাইয়া একা ফিরে এলো। হলরুমের সোফায় আমি আর বাবা বসেছিলাম। ভাইয়ার মুখের সঠিক জায়গায় ছাপটা বসিয়েছে দেখে আমি আমার জানপাখিকে শত শাবাশি দিতে লাগলাম।”
“রাখ, তুই আর তোর জানপাখি। এতো অবিচার তাঁর সাথে? তারপর কী শয়তানি করেছিস বল।”
“আমি ওটা দেখেও না দেখার ভান করে রইলাম। বাবা হঠাৎ নিউজপেপার ফেলে ভাইয়ার পেছনে তার রুমে চলে গেলেন। আমি সোফা থেকেই দেখছিলাম, ভাইয়া হতভম্ব হয়ে দাঁড়িয়ে ছিল। বাবা বললেন, ‘তোর সাথে কথা আছে।’ এরপর দরজা বেঁধে দিলেন। আমি গিয়ে দরজার সাথে কান লাগালাম। শুনতে পাচ্ছিলাম, বাবা বলছিলেন, ‘তোর গলার পাশে লালরঙের এসব কিসের দাগ?’
‘কোথায়?’
‘এই যে তোর গলায় লিপস্টিকের মতো?’
‘লিপস্টিক?’, ভাইয়া প্রায় চিৎকার করে উঠল।
‘বাইরে কী করে এসেছিস?’
‘আমি আবার কী করে আসব?’
‘তোকে কি আমি চিনি না? তুই বাহিরে গিয়ে ইটিস-পিটিস করবি আর বাসায় এসে মিথ্যা বলবি, এই যে তোর স্বভাব।’
এভাবে বাবা আর ভাইয়ার মধ্যে কথোপকথন হচ্ছিল। শেষের দিকে বললেন, ‘তোর এসব কাণ্ডসাজীর কারণে লজ্জায় সবার সামনে আমার মাথা নিচু হবে। এখন তোকে বিয়ে দেওয়া ছাড়া আর কোনো উপায় নেই।’
ভাইয়াও বেশ তর্ক করলেন। তবে বাবা নিজের সিদ্ধান্তেই অটল রইলেন। আমি ভেবেছিলাম, সুযোগের দুর্ব্যবহার করে বাবার দেমাকে ভাইয়ার বিয়ে দেওয়ার খেয়ালটা ঢুকাব। কিন্তু আমার কিছুই করতে হয়নি। বাবা যখন রুম থেকে বেরুচ্ছিলেন, তখন আমাকে দরজার পাশে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে বললেন, ‘কী শুনছিস?’
ভাইয়া তখন ওয়াশরুমে যাচ্ছিল দেখে সময় থাকতে বাবাকে ইনিয়ে-বিনিয়ে বললাম, ‘আপনিও কি ওদের কথা জেনে ফেলেছেন?’
‘মানে? কাদের কথা?’
‘এই যে ছোট ভাইয়া আর সাবিহার কথা?’
‘বুঝিনি আমি..’
‘বাবা, আমি যখন ওদের একসাথে দেখা করার কথা শুনেছিলাম তখনই ভেবে ফেলেছি, ভাইয়া যা করছে না আপনার চোখকেও বেশিদিন এড়াবে না।”
‘কী বলছিস? ক্লিয়ারলি বল।’
‘তিনি একটু আগে আমাকে কল করে বলেছিলেন, আজও ভাইয়াকে সাবিহার সাথে রেস্টুরেন্টে দেখেছিলেন। দুজন কেমন স্বাভাবিকভাবে প্রেমালাপ করছিল। এই শোনে আমার কেবল সন্দেহ হয়েছে। এখন বাস্তবেই দেখি সাবিহার সাথে ভাইয়ার..’
‘চুপ, আরেকটা কথা বলবি না। যা সামনে থেকে।’ ফিসফিসিয়ে ধমকের সুরে বললেন।
ভাইয়া ওয়াশরুম থেকে বেরুচ্ছে দেখে আমি বেরিয়ে পড়লাম। তারপর বাবার মাথায় ঢোকালাম, তোদের এসব কাণ্ড বেশিদিন চললে সমাজে আমাদের দুর্নাম হবে। তার চেয়ে বরং তোদেরকে যেন এক করে দেয়। বাবা চিন্তিত ভঙ্গিতে রুমে চলে গেলেন। রাতের খাবার শেষে ভাইয়াকে হুকুম দিয়ে এলেন, ভাইয়াকে তোর সাথে শিগগিরই বিয়ে করতে হবে। অতঃপর আজ মামাদের সাথে কথা বলে গেলেন। কিন্তু তিনি তোদের ওইসব কাণ্ডকারখানার কথা বলেননি মামাকে। হি হি হি।”
আমি উঠে মুক্তাকে এলোপাথাড়ি পেটাতে লাগলাম। ফুফা এখন কী ভাববেন আমার সম্বন্ধে? আমাকে কত ভালই না বাসতেন তিনি! এখন মিহির ভাইয়াকেও বা কীভাবে শাসিয়েছেন। তাকে পিঠিয়ে ক্ষান্ত হলাম। ও হেসে বলল, “বিয়ের পর ঠিক হয়ে যাবে বাবা। সত্য কথাগুলো বেরুতে দেরি লাগবে না। তুই কেবল বিয়ের প্রস্তুতি নে।”
“আচ্ছা, ওই পাগলাটে ট্রিক’টা কোত্থেকে পেয়েছিস?”
“একবার একটা টিভি শো’তে দেখেছিলাম লিপস্টিক ঠোঁটের আকারে লাগানোর ধরনটা।”
“আমার না খুব ভয় করছে। সবকিছুর জন্য তিনি আমাকেই যে ঝাড়বেন।”
“আরে এতো টেনশন নিস না তো। ঠিক হয়ে যাবে।”
আজরাত মুক্তা এখানেই থেকে গেল। ফুফারা পুনরায় এসে বিয়ের কথা পাক্কা করে যাবেন।
সবশেষে ডায়েরি নামের একমাত্র বন্ধুটির কাছে সব কথা শেয়ার করতে বসলাম। এতদিনের প্রত্যাশা আমার পূরণ হতে চলেছে। তবে কোথাও যেন ঘাটতি রয়ে যাচ্ছে। তাঁকে এভাবে জোরপূর্বক আপন করার তো মানে হয় না।
দরজার ওপাশে কোনো পুরুষালি গলার আওয়াজ পেয়ে সামিরা ডায়েরি লুকিয়ে ফেলল। নিশ্চয় মিহির কথা বলছে। একটু পর রুমে সামিরার জন্য খাবার হাতে বুয়া এসে ঢুকলেন। সামিরা জিজ্ঞেস করল, “কী বলছিল মিহির?”
“আপনের বাবা আইজ রাইত আফিস থেইক্যা আয়তে পারবেন না। আমারে সবসময় তোমাগো আশেপাশে থাকতে কইতেছিলেন।”
“আপনাকে বারবার বলি তাঁকে আমার বাবা বলবেন না।”
“অমন বলতি নাই। ওঁ তোমার জন্মদাতা। তুমি নিজ সন্তান বইল্যা দেশের বাড়িঘর ছাইড়া তোমারে নিয়া এখানে চলি আয়ছেন। তোমাগো দেখভাল করবার জন্য আমারেও নিয়া আয়ছেন। তোমার লালনপালনে কোনো কমতি রাখতেছে নি? ডাকবে না কেন বাবা?”
“তিনি যদি সত্যিই আমার চিন্তা করতেন, তবে মা’কে দেশে ফেলে চলে আসতেন না। সর্বদা আমার সাথে রাখতেন।”
বুয়া তাঁর চোখগুলো বড় বড় করলেন, “তুমি ওরে মা ডাকলে?”
“কেন? কোনো সমস্যা?”
“না,” জয়ের হাসি হেসে বুয়া বললেন, “এই প্রথম দেখলাম, তুমি কেউ একজনের নাম না ধইরা তারে মা বলি ডাকছ।”
“আচ্ছা, একটা কথা জিজ্ঞেস করি?” একদিকে চেয়ে থেকে সামিরা প্রশ্ন করল, “তিনি কোথায় আছেন? কেমন আছেন?”
বুয়ার চোখ ছলছল করে উঠল। কিছুক্ষণ চেয়ে রইলেন তার দিকে। এরপর মাথায় তাঁর হাত বুলিয়ে বললেন, “আমি চিনি সামিরা মা’কে। তোমার বাবাগো কইছিলাম, সামিরা মায়ের একটা মন আছে। তার ভেতর সুখ-দুঃখও আছে। কিন্তু তোমাগো ফুফিরা কয়, তুমি অন্য সবার কাছ থিকা আলাদা। তোমার মইধ্যে মন নেই।”
সামিরা কথাগুলো শুনল না। বিরক্তিকর ভঙ্গিতে বসে রইল।
“আছে, তোমাগো মা ভালা আছে।”
“থাকেন কোথায়?”
“নিজ বাড়িতে।”
“আমার খোঁজ-খবর নেন না?”
“কেন নিবে না? তোমাগো ফুফির সাথে তো যোগাযোগ রাখছেন। তুমি তো ফুফির সাথে কথাও কও না। তাই ফুফি তোমারে কিছু কয় না।”
সামিরা দীর্ঘ এক শ্বাস ফেলে খাবার খেয়ে শুয়ে পড়ল। বুয়া মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে ঘুম পাড়ালেন। এখনও তিনি হতভম্ব। এতবছর যাবৎ তিনি সামিরার সাথে আছেন, সামিরা কখনও কারও কথা জিজ্ঞেস করেনি। এই প্রথম তার মায়ের সম্বন্ধে জিজ্ঞেস করেছে, তাও হুট করেই। সামিরা ঘুমে তলিয়ে গেলে তিনি লাইট বন্ধ করে দিলেন।
ডায়েরি থেকে।
এখন আমাকে বউ সাজে তাঁর রুমে বসিয়ে গেছে মুক্তা ও মায়া আপুরা। এই কয়েকদিন বিয়ের চাপে বলতে গেলে ডায়েরিটা ধরাই হয়নি। এইমাত্র বসলাম। ভয়ে কাঁপছি আমি। কী হতে চলেছে? নিশ্চয় তিনি আজ খুব বকা দেবেন আমায়। কারও হেঁটে আসার শব্দ হচ্ছে। নিশ্চয় তিনি আসছেন।
কালরাত তিনি আসার সাথে সাথে ডায়েরি লুকিয়ে ফেলেছিলাম। তাঁর চোখের সাথে আমার চোখ একবারও মিলেনি। এসে তিনি কাপড় বদলিয়ে আস্ত পাশে শুয়ে পড়লেন। আমার না বকা শোনার কথা? নাকি এসব তুফানের আগের নীরবতা?
দিন কয়েকটা কেটে গিয়েছে আমার বিয়ের। এখনও আমরা অপরিচিতের ন্যায় ব্যবহার করি। তিনি আমার সাথে সেই থেকে নিয়ে একটুও কথা বলেননি। এমনকি বকাও দেননি। আমি বোকা বনে বসে। তাঁর মনে কী চলছে কিছুরই আভাস পাচ্ছি না।
(চলবে…)
লেখা: ফারিয়া কাউছার