কৃষ্ণচূড়ার রং লাল পর্ব ১৪+১৫

কৃষ্ণচূড়ার রং লাল-১৪.🎈
@হাফসা আলম
_____________________
গোধূলি লগ্ন।সূর্য লাল হয়ে উঠেছে।রূপ ছড়িয়ে ডুবো ডুবো ভাব তার।সবাই উত্তেজনা নিয়ে দাড়িয়ে আছে।সূর্য ডুবি দেখবে বলে।সূর্য আকাশের কোল ঘেঁষে সমুদ্রের বুকে ধীরে ধীরে তুলিয়ে যাচ্ছে।তুতুল মুগ্ধ হয়ে দেখছে।রিঝ তার ডান পাশে।বাম পাশে আসমা,আকাশ রামিম।সবাই খুব মনোযোগ দিয়ে দেখছে।স্রোতের শব্দে মুখরিত পরিবেশ।ঠান্ডা বাতাস।আকাশ লাল।রামিম আর আসমা একে অপরের সাথে কথা বলবে না বলে ঠিক করেছে।তাই দু’জনেই দুই দিকে মুখ করে আছে।রামিম আসমার চুল টেনে ধরেছিলো।ব্যথা পেয়েছে অনেক।তাই বলেছে,
“ তুই আমার সাথে আর কখনো কথা বলবি না রামিম্মার বাচ্চা রামিম্মা।”
রামিম মুখ বাঁকিয়ে বলল,
“ না বললে নাই।তোর লগে কথা কইবার লাগি আমি মরি যাই মরি যাই টাইপের কোনো ব্যাপার নাই।সো কথা না কইলে নাই।”
“ মনে থাকে যেনো।”
“ হুম থাকবো।কতক্ষণ পরে তুই নিজেই বেহায়ার মতো কইবি দেখে নিছ।”
আসমা কটমট করে তাকালো।বলল,
“ মরে যাইলেও না।যা ভাগ।”
তারপর থেকে দু’জন দু’ই দিকে।মাঝে আকাশ।আকাশের হয়েছে মহা বিপদ।সিঙ্গেলদের কাজই মনে হয় এটা।মধ্যস্থকারী ব্যবসায়ীদের মতো।রামিম আসমাকে কিছু বলতে হলে বলে,
“ শোন আকাশ বলেদে আমিও কথা বলমু না জীবনে।আমার যে এতো এতো চুল টানে আমি কি কিছু কোই অরে??কই না তো।সহ্য করি।কিন্তু অর চুল একটু টানছি আরই বন্ধুত্বরে মাঝ রাস্তায় নিয়ে আসছে।ঢং।আমিও আর জীবনেও কথা কমু না।যা ভাগ।”
আসমাও উত্তরে বলে,
“ বলেদে আকাশ আমি আস্তে চুল টানি।কিন্তু ও যে এতো জোড়ে টানছে আমি কত ব্যথা পাইছি ক।এতো জোড়ে তো শত্রুও শত্রুর চুল টানে না।”
রামিম আবার হাক লাগিয়ে ডাকে,
“ আকাশ কইয়া দে শত্রুরে ঘুঁষি মারে,লাথি মারে কিন্তু চুলটানে এ জীবনেও শুনি নাই।”
“ আকাশ বলেদে বলদরা জীবনে অনেক কিছুই শুনে না।যানে না।বলদ তো তাই।”
রামিম রাগে আগুন হয়ে আকাশকেই চেঁচিয়ে বলে,
“ আকাশ দেখলি কেমন কইরা কইতাছে শাকচুন্নিটা।”
“ আমি শাকচুন্নি??আকাইশ্শা।”
“ আমি কি করলাম??দোস্ত।তোরা আমারে কেনো এমন টানা টানি করছ??আমি কিতা করছি??আমারে ছাড় রিঝরে ক।”
আকাশের ভারী ইনোসেন্ট গলা।রিঝ ভ্রু কুঁচকে এদের বকবক শুনছে।কিছু বলছে না।তুতুল বিরক্ত হচ্ছে মাঝে মাঝে।আবার মাঝে মাঝে অবাক হয়ে দেখছে।হাসিও পাচ্ছ খুব।আসমা কাঁদো কাঁদো গলায় বলল,
“ দেখ রিঝ আমারে শাকচুন্নি বলছে।আমি থাকবো না আর।আজই এই মুহূর্তেই চলে যাবো।এখনি।”
আসমা সত্যিই চলে যেতে নেয়।রিঝ ধমকে বলল,
“ দাড়া।ফাইজলামি করিছ না।ও এমনেইএগুলো বলছে।মনে নেওয়ার কিছু নেই।ভুলে যা।এগুলো তোদের নিত্য দিনের কাজ।মনে লাগাছ কা??দাড়া সূর্যস্ত দেখ।ঘুরাঘুরি কর।”
“ আপু তুমি আমার পাশে এসো।”
তুতুল আসমার হাত টেনে নেয়।মায়শা দৌড়ে আসে।রামিমকে পিছনের দিক থেকে গলা জড়িয়ে আদুরে গলায় বলল,
“ তোমারে খুঁজতে খুঁজতে আমি পুরা শেষ।এতো ভীরে খুঁজে পাওয়া যায় বলো??এতো কল করলাম রিসিভ করলা না কেনো??”
রামিম চরম বিরক্তি নিয়ে গলা ছাড়িয়ে নিলো।মায়শা ইনিয়ে বিনিয়ে বলল,
“ স্যরি জান।রাগ করিও না।আসলে আমি খুব ক্লান্ত ছিলাম তাই রেগে গেছিলাম।”
“ তো এখন লাফাতে লাফাতে আসার কি আছে??ঘুমাইলেই পারতা।”
“ এভাবে বলো কেনো??আমি তো স্যরি বলতাছি।”
রামিমের মেজাজ আগেই গরম ছিলো।তার এখন ইচ্ছে করছে মায়শাকে কয়েকটা কথা আচ্ছা করে শুনিয়ে দিতে কিন্তু রাগে চুপ করে আছে।মায়শা আরো নরম গলায় বলল,
“ স্যরি তো।ক্ষমা মহান গুন।স্যরি বললাম তো।”
রামিম হালকা হাসলো।মায়শা যেভাবে জাপ্টাজাপ্টি করছে এতে মাফ করে দেওয়াই উত্তম তা না হলে তাকেই চিবিয়ে মারবে।আকাশের কাছে এদের সবই ন্যাকামি লাগে।তাই মুখ ঘুরিয়ে তুতুলের দিকে এসে দাড়াতে এগিয়ে আসে।তখনই ধাক্কা লাগে বিদেশি এক মেয়ের সাথে।ধবধবে সাদা গায়ের রং।মাথা ভর্তি ভেজা সোনালি চুল।আকাশ মনে মনে বেশ খুশি হয়।বরাবরই তার বিদেশি মেয়েদের পছন্দ।হলিউড দেখে দেখে মাথা পুরাই বিঘ্রে গেছে।মেয়েটা খুবই দুঃখিত ভাব নিয়ে এগিয়ে এসে ইংলিশে বলল,
“ স্যরি স্যরি।আমি আসলে দেখতে পাইনি।আপনি কিছু মনে করেন নি তো??”
এমন কড়কড় ইংলিশ তো আকাশের আরো ভালো লাগে।সে নিজেও ভালো বলতে পারে।আকাশ পরখ করে দেখে।ছোট থ্রি কোয়াটার প্যান্ট আর সাদা টি-শার্ট গায়ে দাড়িয়ে আছে মেয়েটি।সোনালি চুল খোলা।দেখতে মন্দ লাগে না।তবে হঠাৎ করেই তার মনে হলো বাঙ্গালীর চেয়ে সুন্দর লাগছে না।তাও চলবে।মেয়েটা আবার দুঃখিত হয়ে নিচু গলায় বলল,
“ আমি সত্যি দুঃখিত।দেখতে পাই নি।পেলে অবশ্যই এমন কিছু হতে দিতাম না।আশা করি আপনি ক্ষমার চোখে দেখবেন।”
আকাশ দ্রুত হেসে উঠে ইংলিশেই বলল,
“ না না সমস্যা নেই।এমন ধাক্কাধাক্কী তো হই।আমি কিছু মনে করি নি ।আপনি এতো হতাশ হবেন না।”
একটু থেমে আবার দাঁত কিড়মিড় করে হেসে বাংলায় বলল,
“ আরে ধাক্কা ছাড়া প্রেম হয় না কি।”
“ স্যরি কিছু বলছেন??” মেয়েটা ইংলিশে বলল।
“ নাথিং।”
আকাশ হাসলো।মেয়েটাও কিঞ্চিত হাসলো।চুলগুলো পিছনে ঠেলে দিলো।আকাশ খুশিতে ডগমগিয়ে উঠে প্রশ্ন করলো,
“ আমি কি আপনার নাম জানতে পারি??”
“ অবশ্যই অবশ্যই।আমার নাম জব ক্লেরা।আপনার নাম??”
“ আকাশ।আমার নাম আকাশ।” খুশিতে গদগদ হয়ে হাসছে আকাশ।সবাই তার দিকে তাকায়।রামিম মিটমিট করে হাসছে।আকাশ বলে,
“ আপনার বাড়ি কোথায়।মানে কোথা থেকে এসেছেন??”
“ কানাডা।”
কথায় কথায় জমে উঠে দুজনের আলাপ।আকাশ ইনিয়ে বিনিয়ে অনেক মিথ্যাও বলে।সে আপেল পছন্দ করে না।কিন্তু মেয়েটা কথায় কথায় নিজের প্রিয় জিনিসের নাম বলে।তখন আকাশ চাপা মেরে বলে,
“ আমিও আপেল অনেক পছন্দ করি।রাতে একটা সকালে একটা খাই প্রতিদিন।”
“ ও তাই না কি।আমিও এমনই খাই।এটা স্বাস্থের জন্য ভালো।”
রামিম বাংলায় বলে,
“ ওও তুমি আপেল খাও??তাও সকালে রাতে??ও মা গো ট্রুলাভ।আপেল আর তোর মধ্যে।”
সবাই হেসে উঠে।আকাশ পাত্তা দেয় না।নিজের মতো কথা চালিয়ে যায় ক্লেরার সাথে।কথার মাঝে কোথেকে একটা মেয়ে দৌড়ে আসে।ইংলিশে বলে,
“ মাম্মি চলো আমার শীত করছে।জামা চেঞ্জ করবো।”
আকাশ সহ সবার মুখটা হা হয়ে যায়।ক্লেরা হেসে উঠে আকাশকে বলল,
“ আমার মেয়ে বায়না ধরেছে।যেতে হবে।”
আকাশ বিস্মিত গলায় বলল,
“ আপনার মেয়েও আছে,??মানে আপনার বিয়ে হয়েছে??”
“ হুম।এবং দুইটা বাচ্চা আছে।বাংলাদেশ সফরে এসেছি।সবাই মিলে।”
আকাশের মন খুন্ন হয়।সবাই ওর দিকে তাকিয়ে মিটমিট করে হাসে।আকাশ মুখে হতাশার আর হতাশার রেখা টানে।তাকে দেখে মনে হচ্ছে পৃথিবীর সবচাইতে বড় দুঃখি মানুষ সে।খুন্ন মন নিয়ে আকাশ আস্তে করে বলল,
“ আপনাকে দেখতে বিবাহিত মনে হয় না।”
ক্লেরা মুখে মৃদূ হাসির রেখা এঁকে বলে,
“ আমাকে দেখলে এটাও মনে হয় না যে আমার বয়স ৪৮ বছর।”
আকাশ বিস্ময়ের আর এক ধাপ।কি বলে এই মহিলা??আকাশ মনে মনে হাফ ছেড়ে বাঁচলো।এমন বুড়ি মহিলার সাথে সে প্রেম করতে চেয়েছে ভাবতেই বুক কাঁপছে।আকাশ উত্তেজনায় বাংলা বলে ফেলল,
“ আল্লাহ্ গো আপনারে হাজার শুকরিয়া।দোস্তেরা আমি বাইচা গেছি।আজকের পার্টি আমার পক্ষ থেকে।বাবা গো আমার আম্মার বয়সও আরো কম মাত্র ৪৫ বছর।কিন্তু বুড়ি বুড়ি লাগে।এরে লাগে না ক্যান??চিন্তা কর আমগো যদি বিয়া হোইতে প্রিয়াংকা চোপড়া গো জুটিরেও হার মানাই তো।”
সবাই হেসে উঠে।ক্লের এক ভ্রু সাবধানে তুলে বাংলা বুঝার চেষ্টা করে।তার মুখ দেখে মনে হচ্ছে পৃথিবীর সবচাইতে ভয়ংকর ভাষা বুঝি এই বাংলাই।অনেক সময় নিয়ে কিছু একটা ভেবে ক্লেরা বলল,
“ বেইয়া??”
সবাই আবার তার দিকে তাকায়।তার ছোট মেয়ে হেসে উঠে ইংলিশে বলে,
“ বেইয়া মানে বিয়ে মাম্মি।”
আকাশ দ্রুত বাংলায় প্রশ্ন করে,
“ আপনারা বাংলা পারেন??”
ক্লেরা বুঝলো না।তাই বলল,
“ স্যরি কি বলছেন বুঝতে পারছি না।”
আকাশ এক গাল হেসে উঠে বাংলায় বলে,
“ শালির বুড়ি আমি তো ভয়ই পাইছি।যা ভাগ।”
রিঝ চোখ রাঙ্গিয়ে হাসে।তবে বিয়ের মানে বুঝেছে বিদেশি মহিলা।এটা বুঝতে পেরেছে সবাই।তাই আকাশ এবার ইংলিশে বলল,
“ বিয়ে??আপনি যানেন এটা কি??কিভাবে জানে আপনার মেয়ে??”
“ বাংলাদেশে এসে একজন বিয়েতে আমাদের ইনভাইট করা হয়েছে সেই থেকেই জানি।কিন্তু আপনি কেনো বললেন সেটা বুঝলাম না।”
“ কিছু না।মানে আপনাকে বলিনি।”
“ আচ্ছা আমি চলি।অল্প সময়ের আলাপে ভালো লাগলো।আপনাদের দেশের মানুষ মিশুক।আমার খুবই পছন্দ বাংলাদেশ এবং তার মাঝে বাস করা মানুষদের।”
ক্লেরা আরো দুই একটা কথা বলে বিদায় নেয়।আকাশ নিরাশ গলায় রিঝের কাছে যেয়ে বলে,
“ আমি কি আজীবন সিঙ্গেল থাকমু দোস্ত??”
রিঝ সামনে তাকিয়ে মৃদু হাসে।স্বাভাবিক গলায় বলে,
“ছেলে হলে আশা করি থাকবি না।কিন্তু যদি ছেলে না হস তাহলে আমি বলতে পারছি না।কারন বিয়ে তো শুধু ছেলে আর মেয়েরই হয় আমার জানা মতে।”
আকাশ তেড়ে উঠে বলে,
“ ওই কি কইতাছস??আমি সত্যিই পোলা।প্রমান চাই??”
আসমা নাক ছিটকে বলল,
“ যা ভাগ।তোর প্রমান তোর কাছে রাখ।মিঙ্গেল হইতে হইলেও কপাল লাগে মামু।”
সবাই হাসে।সমুদ্রের স্রোত অনেক বাড়ে।আকাশ জুড়ে লাল সূর্য নামে।পানির শব্দে মন উতলা হয়ে উঠে।তুতুল মুগ্ধ!!জীবনটা সে সমুদ্র দেখেই পার করে দিতে পারবে।সঙ্গী হিসেবে সমুদ্র হলেই চলবে।

“ তুতুল একটা অদ্ভুত কথা শুনবে??”
তুতুল গভীর সমুদ্রে চোখ রেখেছে।মুগ্ধ দৃষ্টি মেলে তাকিয়ে আছে সেদিকে।সমুদ্রের গভীরে নিজের দৃষ্টি নিতে চায় সে।চোখের পলক লাফাচ্ছে না।নিঃশ্বাস থেমে থেমে পড়ছে।তুতুল শান্ত চোখে তাকিয়ে আছে মাঝ সমুদ্রের বিশালতার দিকে।সেভাবেই বললো,
“ আপনার এই সময় অদ্ভুত কথা মনে পড়েছে??”
“ হ্যাঁ ।পড়েছে।শুনবে কি না বলো??” রিঝের কাট কাট গলা।
তুতুল সামনে তাকিয়ে হাসলো।বললো,
“ আপনি মাঝে মাঝে আমার চাইতেই বেশি বাচ্চাদের মতো কথা বলেন।হিহি।আচ্ছা বলেন শুনছি।”
ঠোঁট কামড়ে ধরে রিঝ।মনে মনে হাসে সে।তারপর তুতুলের মত সামনে তাকিয়ে বলে,
“ সমুদ্র কাকে ভালোবাসে জানো??”
“ সমুদ্র আবার ভালোবাসার কি বুঝে??” তুতুলের অবাক হওয়া গলা।”
“ বুঝে।অনেক বেশি বুঝে।তাই তো তার কাছে ভালোবাসার মানুষরা ছুটে আসে।প্রিয়সীদের নিয়ে।”
“ তাই!!তো কাকে ভালোবাসে এই সমুদ্র??”
“ হুম।সমুদ্র সবচাইতে বেশি ভালোবাসে তার ঢেউকে।কিন্তু সে ভালোবাসা প্রকাশ করা হয়ে উঠে না।বলা হয় না ওহে ঢেউ আমি তোমায় ভালোবাসি।আর ঢেউ ও কিন্তু সমুদ্রকে খুব ভালোবাসে।কিন্তু সেও বলতে পারে না।”
তুতুল প্রচন্ড আগ্রহ নিয়ে তাকায়।রিঝের চোখ সামনে থেকে দৌড়ে আশা একটা ঢেউয়ের দিকে।তুতুল নিজের কোঁকড়া চুল মুখের উপর থেকে সরিয়ে দিয়ে বললো,
“ তারপর ,তারপর!!ওরা তো একসাথেই থাকে।তাহলে বলতে পারে না কেনো??এতো কাছে থেকেও বলতে পারে না??আল্লাহ কেনো??”
তুতুলের উত্তেজিত ভাব দেখে রিঝ ঈষৎ হাসলো।চোখ আগের মত রেখে এক ভ্রু কুঁচকে তুতুলের দিকে আড়চোখের দৃষ্টি নিক্ষেপ করে বললো,
“ কারন খুব সহজ।তারা একে অপরের মনের কথা জানে না।সমুদ্র ভাবে ঢেউ বুঝি তীর কেই ভালোবাসে।তাই তো আসলেই তীরে পৌছাতে চায়।আর ঢেউ ভাবে সমুদ্র বুঝি সূর্যকেই ভালোবাসে।তাই তো মানুষ অপেক্ষায় থাকে।সূর্য কখন সমুদ্রের বুকে ডুব দিবে।সমুদ্রও বুঝি সেই অপেক্ষাই করে।কিন্তু সমুদ্র অপেক্ষায় থাকে কখন ঢেউ তার বুক ঘেঁষে উত্তাল হয়ে আসবে।আর ঢেউ অপেক্ষায় থাকে কখন সে সমুদ্রের বুকের উপরে ভর দিয়ে নিজেকে উজার করতে পারবে।ভালোবাসাই পারে মনের দূরত্ব মিটিয়েও ভালোবাসতে।”
“ কিভাবে??”
“ এই যে তারা মনে করে দু’জনই অন্যজনকে ভালোবাসে।তবুও এক সাথে থাকে।এর মূল হচ্ছে কি জানো??”
“ কি??”
“ সমুদ্র হয়ে বুঝাই।সমুদ্র মনে করে সে না হয় অন্যকাউকে ভালোবাসে।তাতে আমার কি?আমি তো ঢেউ কেই ভালোবাসি।ঢেউ যে আমার বুক ঘেঁষে থাকে তাতেই আমি খুঁশি।ঢেউ ও ভাবে সূর্যকে যতই ভালোবাসো তোমার বুকে তো বেশিরভাগ সময় আমিই থাকি।তাই দুরত্ব থেকেও তারা খুঁশি।আর আমি সেই সমুদ্রের মতো।”
তুতুল আশ্চর্য চোখে তাকায়।চোখ গোল করে বড় করে।ভারী অবাক গলায় বলে,
“ আপনি নিজেকে সমুদ্র কেনো ভাবছেন??হোয়াই??”

রিঝ নিজের রীতি অনুযাই ঠোঁট কামড়ে ধরে।নিচের ঠোঁটে দাঁত বসিয়ে দেয়।তুতুলের দিকে পূর্ন দৃষ্টি মেলে তাকায়।সমুদ্রের কোলে সূর্য তখন ডুবে যায় যায়।ঢেউ অনেক রেগে আছে।তাই গর্জন করে উঠছে বার বার।সমুদ্রের বুকে যে সে সূর্যকে একদম সহ্য করতে পারে না।কিছুতেই না।রিঝ তুতুলের হাতটা ধরে।হাত টেনে আছে আনে।তুতুল তো বিস্ময়ে কিংকর্তব্যবিমুঢ় হয়ে তাকিয়ে আছে।দুরের সূর্যের লাল কিরণ এসে পড়ছে তার দিকে।জ্বলজ্বল করছে কালো বড় ঘন পাপড়ি যুক্ত চোখজোড়া।চোখে,মুখে ,গালে,ঠোঁটে পড়ছে লাল আভা।রিঝের চোখ মুগ্ধ হয়ে উঠে।নিজেকে একটু একটু করে যেনো হারিয়ে ফেলছে।ঠিক দূর আকাশের সূর্যের মত ডুবিয়ে তুলছে নিজেকে।ঢেউ আসে খুব জোড়ে।রিঝ নিজের চোখের ভাষা বদলায়।দুষ্টমিষ্টি ভঙ্গীরনেয় বলে,
“ তুতুল” তোমার কি নিজেকে ঢেউ মনে হচ্ছে??”
মুহূর্তে তুতুলের চোখ এলোমেলো করে হয়ে যায়।চারদিকে চোখ দৌড়ে নিয়ে ঘুরিয়ে নেয় একবার।তারপর কঠিন গলায় বলে,
“ আমি কেনো নিজেকে ঢেউ মনে করবো??”
“ মনে করছো না??” রিঝের ঠোঁটে হাসি।এই হাসি আরো ভড়কে দিচ্ছে তুতুলকে।তুতুল বলে,
“ অবশ্যই না।ঢেউ তো সমুদ্রকে মনে মনে খুব ভালোবাসে।আর আপনি নিজেকে সমুদ্র মনে করেন।কিন্তু আমি তো আপনাকে ভালোবাসি না।তবে আমি কেনো ঢেউ হবো??”
তুতুলের কন্ঠে একটা উত্তেজিত ভাব আছে।যেনো সে ১০০% এর বেশি শিউর সে ঢেউ না।সে জীবনেও হতেও চায় না ঢেউ।কখনোই না।রিঝ শব্দ করে হু হা করে হেসে উঠে।তুতুল বাঁকা চোখে তাকায়।রিঝ তুতুলের চোখের খট থেকে কয়েকটা এলোমেলো বাঁকা চুলগুলো কানের পাশে গুঁজে দেয়।রিঝের হাত খুব ঠান্ডা।তুতুলের কানের লতিতে হাত লাগতেই শিউড়ে উঠে সে।হালকা একটু কাঁপে শরীর।রিঝ ফিসফিস করা কন্ঠে বলে,
“ ঢেউের রাগ দেখতে পাচ্ছো??”
তুতুল নাখচ করে বলে,
“ আমি মোটেও ঢেউ না।”
“ তোমাকে কি বলছি আমি ঢেউ??আমি বলছি ঢেউয়ের রাগটা কান পেতে শুনো।সে কতো রেগে আছে।কতো জেলাস সে।সূর্যকে খুন করতে ইচ্ছে করছে।তাই তো সমুদ্রের বুকে থাপ থাপ করে শব্দ করে দ্রুত বেগে ছুটে আসছে।নিজের রাগ প্রকাশ করছে।নিজেকে উজার করে রাগে ভাসিয়ে দিচ্ছে সমুদ্রর উপরে।”
তুতুল কান খাড়া করে।সত্যি তো!!সে ভারী অবাক হয়।রিঝের হাতটা আরো শক্ত করে চেপে ধরে।রিঝের কথাগুলো বরাবরই তাকে মুগ্ধ করে।এতো সুন্দর করে গুছিঁয়ে কিভাবে কথা বলে??তুতুল মুগ্ধ!!বাকরুদ্ধ!!সমুদ্রের জন্য তার ভারী দুঃখ হচ্ছে।কত কষ্ট দিয়ে ঢেউ নিজের রাগ ঝাড়ছে।তুতুল ধির কন্ঠে বললো,
“ ঢেউ এতো বোকা কেনো??নিজেকে উজার করে ভালোবাসা উচিত।”
রিঝ তুতুলের দিকে তাকিয়ে আনমনেই বললো,
“ সেটাই তো।ঢেউ বোকা।”
“ হুম অনেক বোকা।আমার কি মনে হয় জানেন??”
“ কি??”
তুতুল এক গাল হেসে বলে,
“ ঢেউ আর সমুদ্র এক দিন না এক দিন একে আপরের মনের কথা জানবেই।”
তুতুল হাতটা টেনে নেয়।ঢেউ ছুঁয়ে দেখার মজাই অন্যরকম।রিঝ বিড়বিড় করে বলে,
“ যদি সত্য হতো!!সমুদ্র ভালোবাসায় ভরীয়ে দিতো।নিজেকেও ঢেউয়ের সাথে উজার করে দিতো।কোনো তীর বা সূর্য তাদের মাঝে আসতো না।সব জুড়েই শুধু সমুদ্র ঢেউ এর মিলন মেলা বয়ে চলতো।আকাশ জুড়ে মেঘমালারা বৃষ্টি হয়ে তাদের ভিজিয়ে দিতো।ইসস্ যদি সত্য হতো!!”

সূর্য ডুবে।আকাশ কালো হয়ে উঠে।এক দুই তারার মেলা শুরু হয়।রিঝ তাড়া দেয়।সবাইকে হোটেলে ফিরতে বলে।তুতুল যেতে চায় না।তাকে জোড় করে টেনে নিয়ে আসে।কথা দেয় রাতে তারা আবার আসবে।তুতুলের গায়ে জ্বর।মাথা ব্যথা।তবুও সে থাকতে চায়।রিঝের মাঝে মাঝে খুব ইচ্ছে করে তুতুলের কানের নিচে কয়েকটা থাপ্পড় বসিয়ে দিতে।এমন বেপরোয়া কেনো এই মেয়ে জিজ্ঞেস করতে।তুতুল উল্টো হয়ে হাঁটছে।রিঝের সাথে ঝগড়াও করছে অল্প।এটা ওটা নিয়ে তর্কবিতর্ক করছে।রিঝ কিছু বলছে না।সে চুপ।তুতুল নিজে নিজেই বলছে।সাথে বাকিরাও।হুট করেই ধাক্কা লাগে কারো সাথে।রিঝ দ্রুত হাত টেনে ধরে।তুতুল পিছনে তাকায়।সামনের ব্যক্তিকে দেখে সে হতবম্ভ হয়ে তাকিয়ে থাকে।রিঝও অবাক হয়।বাকিরা চিনেন না।তাই শুধু এমনেই তাকিয়ে থাকে।তুতুল ভালো করে দেখে।ইয়াজ দাড়িয়ে।এই লোক এখানে কি করে??সে জানে না।জানতেও চায় না।ইয়াজই প্রথমে বলল,
“ তুমি এখানে???”
রিঝ তুতুলের হাত ধরে।তুতুল হালকা কাঁপছে।ইয়াজ ভ্রু কুঁচকিত করে তাকিয়ে থাকে হাতের বাঁধনের দিকে।রিঝের ফ্রেমে বন্ধি চোখ মুহূর্তেই কঠিন হয়ে উঠে।
কৃষ্ণচূড়ার রং লাল-১৫.🎈
@হাফসা আলম
_____________________
ইয়াজ চোখ বাঁকিয়ে তাকায়।রিঝ কথা বাড়াতে চায় না।তুতুলের হাত ধরে বলে,
“ চলো।”
তুতুল হাঁটে রিঝের পিছনে পিছনে।ইয়াজ উঁচু গলায় বলে,
“ ঘুরতে এসেছো বুঝি??”
রিঝ ঘুরে।চোখে মুখে প্রচন্ড বিরক্তি।ইয়াজ ও তাকায়।দু’জনের চোখ এক হতেই রিঝ কঠিন চোখে তাকিয়ে বলল,
“ সেটা আপনাকে বলার প্রয়োজন মনে করি না।তবে একটা প্রশ্ন হু আর ইউ??”
ইয়াজের দু’পাশের গালের পাশ শক্ত হয়।অদ্ভুত চোখে তাকায়।রিঝের তাকানোর ভাব দেখে সে নিজেই যেনো ভুলে যাচ্ছে তাদের পরিচয় হয়েছিলো।একবার না কয়েকবার।তাহলে ভুলে গেলো কেনো??ইয়াজ কয়েক সেকেন্ড ভাবলো।তারপর বলল,
“ আমি তো আপনাকে জিজ্ঞেস করি নি।তাহলে নিজে বলছেন কেনো??আপনি না চিনলেও আমার কিছু যায় আসে না।আমি প্রশ্নটা তোমাকে করেছি তুতুল??”
তুতুল বিড়ালের মতো মাথা কাত করে।রিঝের পিছনে সে।তুতুলকে তাকাতে দেখেই রিঝ হাতটা আরো একটু শক্ত করে চেপে ধরে।মাথা তুলে রিঝের দিকে তাকায় সে।রিঝ শ্বাস ফেলে জোড়ে।শান্ত গলায় বলল,
“ নিজে যে কাজে এসেছেন তা করলেই খুশি হবো।আর তুতুল অপরিচিত লোকের সাথে কথা বলে না।চলো।”
রিঝ সামনে থেকে হাত টেনে নেয়।গটগট করে সামনে হেঁটে যায়।তুতুল পিছনে একবার তাকিয়ে রিঝের মুখের দিকে তাকিয়ে হাঁটে।রিঝ দ্রুত হাঁটছে।চোখ লাল হয়ে আছে।তুতুল বিস্মিত!ইয়াজকে দেখে তার যতটা না রাগ উঠছে রিঝের যেনো আরো বেশি।তুতুল চোখ ছোট করে।রামিম হেঁসে উঠে ইয়াজের পিঠ চাপড়ে বলল,
“ কে ভাই আপনি??আর তুতুলকে চিনেন কিভাবে??ওকে তো পরিবারের আর ভার্সিটির মানুষ বাদে কেউ তেমন চিনে না।আপনি কি ওর ক্লাসমিট??তবে দেখে মনে হচ্ছে না।”
ইয়াজের চোখ সামনে।সে তাকিয়ে আছে।সবাই তাকিয়ে আছে কৌতুহলি চোখে।আকাশ এগিয়ে এসে বলল,
“ কে ভাই আপনি??বোবা তো মনে হচ্ছে না।যেহেতু কিছুক্ষণ আগেই কথা বলেছেন।কাহিনী কি ভাই??”
আবার পিঠে কারো হাতের ছোঁয়া পেয়ে ইয়াজ চমকায়।পাশ ফিরে তাকায়।কারো কথা সে শুনেনি।তাই প্রশ্ন করে,
“ কিছু বলছিলেন?”
আকাশ রামিম হেঁসে উঠে বলে,
“ না ভাই গান গাইছি এতোক্ষণ।”
“ সেটা তো মনে হচ্ছে না।কারন আপনারা চোখে দেখেন।তাই ভুলেও আমার পিঠকে পিয়ানো মনে করবেন না।সো বলেন??”
“ তুতুলকে কিভাবে চিনেন??” রামিমের প্রশ্ন।
“ কিছু মানুষ অদ্ভুত ভাবে পরিচিত হয়।এদের অধ্যায় অদ্ভুত হয়।আমিও ওকে অদ্ভুত ভাবে চিনি।”
“ আরে বাপরে।এতো দেখি দার্শকিন টাইপের কথা বার্তা।কাহিনী কি??প্রেমে পড়েছেন না কি??কোথাও প্রথম দেখে??”
ইয়াজ ঠোঁট মেলে হাসলো।খাড়া চুলগুলো হালকা নাড়লো।কিছু বলল না।আকাশ পিঠ চাপড়াতে চাপড়াযে বলল,
“ ভুলেও ভাই এই ভুল করিয়েন না।রিঝেরে দেখলেন তো??খুন পারলে চোখ দিয়েই করে দিতো।ও ভয়ংকর।”
শেষের কথা আকাশ আস্তে বলে।ইয়াজ হেসে উঠে।পাশে এসে দাড়ায় একটা মেয়ে।নীল গেঞ্জি পড়া।সাদা প্যান্ট।চুল উপড় করে বাঁধা।এসেই বলল,
“ ইয়াজ চল।”
“ এখন না।পরে যাবো।এখন ভালো লাগছে না।”
মেয়েটা ভ্রু তুলে বলল,
“ তোর জন্যই এখানে আসা।তারমানে এই না যে আমি তোর কথা মতো বান্দর নাচ দিমু।মাত্র কইলি যাবি।আর এখন মতের পরিবর্তন??কাহিনী কি??মাথা কি গেছে??”
“ এখনো ঠিক আছে।তাই চল।ভালো লাগছে না।বিরক্ত করিছ না।”
ইয়াজ হেঁটে চলে যাও।সবাই কিছুক্ষণ বেকুবের মতো দাড়িয়ে থাকে।কিছুই বুঝল না তারা।সবার দিকে তাকিয়ে মেয়েটা বলল,
“ কি হয়েছে? আপনারা কি কিছু জানেন??ওর মন খারাপ হলো কিভাবে??”
আসমা অবাক চোখে তাকায়।কিছুক্ষণ আগে তো তুই তুই করে কথা বলছে।আর এখন ওর!!কাহিনী কি??এরা সবাই পাগল না কি??রামিম বলল,
“ তেমন কিছুই তো দেখলাম না।আর মন খারাপ হওয়ার তো প্রশ্নই আসে না।আমাদের তো এমন মনে হচ্ছে না।উনি তো হেঁসে হেঁসে গেলো।”
“ আপনারা বুঝবেন না।ওর মন খারাপ হলে আমি বুঝি।”
আকাশ মুখটা একটু বাঁকা করে।মনে মনে বিড়বিড় করে বলে ,হালার সবাই জোড়া জোড়া সামনে টপকায়।ক্যান??আল্লাহ একটু নজর দিলে কি হয়??” মায়শা বলল,
“ প্রেমিক??”
মেয়েটা উত্তর দিলো না।হাঁসলো।আকাশ আবার প্রশ্ন করে বলে,
“ বউ মনে হয়।মায়শা তুই পাগল না কি??কক্সবাজারে সবাই জুটি জুটি আসে।অবশ্যই বউই হবে।চল তো দেখি রিঝ তুতুল কই গেলো।”
সবাই সামনে কয়েক কদম এগিয়ে যায়।মেয়েটা পিছন থেকে ডেকে প্রশ্ন করে,
“ আপনারা কি তুতুল নামটা নিয়েছে??”
সবার মনে হচ্ছে এই মেয়ে কানেও কম শুনে।আকাশ বিরক্ত গলায় উত্তর দিলো,
“ হুম।”
মুহূর্তেই মেয়েটার মুখের রং পরিবর্তন হয়ে গেলো।সবাই তাকালো।অদ্ভুত সব।আবার হাঁটা দিলো।

রিঝ তুতুলকে সোজা টেনে নিয়ে যাচ্ছে।তুতুল হাতে ব্যথা পাচ্ছে।লাল হয়ে উঠছে হাত।একটু থেমে বলল,
“ এতো শক্ত করে ধরেছেন কেনো??আমি ব্যথা পাচ্ছি হাতে।”
হাঁটা থামিয়ে রিঝ চোখ বন্ধ করে সেখানেই দাড়িয়ে পরে।তুতুল খোলা চোখে শুধু তাকিয়ে তাকিয়ে দেখে।রাগ!!রাগে মুখটা লাল হয়ে উঠছে।রাগ জিনিস খুবই বাজে জিনিস।এটা মানুষের জীবনকে মুহূর্তে পাল্টে দিতে পারে।রিঝ সব সময় নিজের রাগকে নিয়ন্ত্রনে রাখে।আজ যেনো ঠেলেঠুলে বেড়িয়ে আসছে।রিঝ নিজেকে ঠিক করে তুতুলের দিকে তাকায়।বলে,
“ পুরোনো প্রেমিক দেখে আবেগ বেড়িয়ে আসছে বুঝি??সাবধান!এখন কান্নাকাটি করলে কানের নিচে কয়েকটা দিবো।যতো কাঁদার বাসায় গিয়ে কেঁদো।জ্বর হলে আমি আর ডাক্তার ডাকবো না বলে দিলাম।”
তুতুল নিচু গলায় বলল,
“ এমন কিছু করবো আমি একবারো বলছি??”
“ বলতে হবে কেনো??কান্না তো রেডিই থাকে।”
“ এভাবে বলার কিছু হয় নাই।”
“ তাই??চোখ লাল হয়ে আছে কেনো??”
তুতুল নিজের চোখে হাত দেয়।মুছে নিয়ে বলে,
“ লাল হয়ে আছে কারণ ঘুম আসছে।এর বেশি কিছুই না।আপনি শুধু শুধু আমার পিছনে লাগবেন না।আমি ঘুমাবো।”
“ যাও।কিন্তু ঘুমাবে না।খাবার খাবে।তারপর রাতের সমুদ্র দেখতে যাবো।কালকে থাকবো।এর পরেই চলে যাবো।”
তুতুল ভারী অবাক হলো।বলল,
“ কেনো??আমরা তো এখানে অনেক দিন থাকার কথা ছিলো তাই না।”
“ হুম থাকার কথা ছিলো।কিন্তু এখন থাকবো না এটাই কথা হচ্ছে।যাও।রুমে যাও।ফ্রেশ হও।”
তুতুলের হাতটা ছেড়ে বড় বড় পা ফেলে রিঝ নিজের রুমের দিকে চলে যায়।তুতুল হা করে তার যাওয়ার দিকে তাকিয়ে থাকে।
_________________
তুতুলকে টেনে টুনে রিঝ রেস্টুরেন্টের চেয়ারে বসায়।সবাই আগে থেকেই বসে ছিলো।তুতুলকে এভাবে নিয়ে আসতে দেখে আসমা জিজ্ঞেস করলো,
“ এভাবে টানছ কা??”
“ তো কি করবো।চোখ তো খুলতেই পারছিলো না।তাই এভাবে নিয়ে এসেছি।” রিঝ বসে পরে।
তুতুল টেবিলে মাথা রাখে।দু’হাত মাথার নিচে দেয়।চোখ বুঝে আবার ঘুমায়।রামিম আসমার পাশে এসে পরে।আসমা মুখটা অন্যদিকে ঘুরিয়ে নেয়।রামিম কন্ঠ নিচু করে বলে,
“ স্যরি শাকচুন্নী।তুই যে ব্যথা পাইছস আমি বুঝি নাই।”
আসমা মুখটা ফুলিয়ে নেয়।রাগে কটকট করে বলে,
“ তুই আবার শাকচুন্নী ঢাকলি??হারামি একটা।রাখ তোর বালের স্যরি।”
রামিম জিভ কামড়ে ধরে।তারপর না বুঝার ভঙ্গীতে বলল,
“ স্যরি স্যরি।আসলে শাকচুন্নিরে অন্য নামে ঢাকতে হয় জানান ছিলো না।তুই রাগ করছ কা??আমি তো আছি।তোর ইয়ার।আমি কইতাছি তোর নাম আইজা থেইক্কা পাল্টামু।নাম দিলাম ফুলনি।”
কথাটা বলেই রামিম সহ সবাই হাসে।আসমা চোখ রাঙ্গায়।গাল আরো ফুলায়।রাগে গিজ গিজ করতে করতে বলে,
“ তোর লগে লাগমুই না।তোর লগে লাগলে যা না লাগলেও তা।”
রামিম আরো ঘেঁষে বসে।আসমার একদম গায়ের সাথে লেগে ঠেলতে ঠেলতে বলে,
“ এই যে লাগলি।মিথ্যা কছ কা।যে লাগবি না।আমি তো দেখতাছি চিপকাই আছস।পছন্দনি আমারে??হইলেও লাভ নাই।আমি তো বুক।”
“ সর তুই।তোরে লাগবো আমার??পছন্দ আর তোরে??চেহারা যাইয়া দেখ আয়নায়।নিজেই ভয়পাবি।আমি আর কি কইমু।” আসমা চোখ নাচায়।অর্থ,কেমন দিলাম??
“ ভালো হোইছে।আমি নিজেরে দেখেই না হয় ভয় পামু।তোরে তো বাচ্চারা দেখলেও ভয় পাবে।কেমন লাগে ভুতনীর মতো।শয়তানের নানী একটা।”
তুতুল ঘুম ঘুম চোখে বলে উঠে,
“ সেটা তো আমি।রিঝ ভাইয়ার মতে।”
রিঝ চামুচ হাতে নিতে নিতে বলল,
“ আমরা সবাই জানি যে শয়তানের নানি তুমিই।”
তুতুল মুখটা তুলে তাকায়।টেবিলের উপরে থাকা লবনের পাত্র ঠাস করে ঢেলে দেয় রিঝের প্লেটে।মাথা টেবিলে রাখে।চোখ বুঝে।তারপর ঠোঁটে শয়তানি হাসি ঝুলিয়ে বলে,
“ এটা আমার এতো সুন্দর ঘুম নষ্ট করার শাস্তি।”
“ আমিও প্রতিশোধ নিতে পারি।সময় আসলেই দেখবে আমার প্রতিশোধ কত ভয়ংকর।”
একটা দশ বছরের ছেলে রেস্টুরেন্টের বাহিরে দাড়িয়ে থাকে কয়েক মুহূর্ত।আবার হেঁটে চলে যায়।রিঝ দেখে।উঠে যায়।ছেলেটাকে ডাকে।বলে,
“ নাম কি তোর??”
ছেলেটা বিস্মিত সাথে ভীতু।বলতে চায় না নাম।রিঝ নিচু গলায় বলল,
“ আরে ভয় পাছ কা??বাগ ভাল্লুক না কি??আমি তো তোর মতোই মানুষ।এই যে দেখ দুই হাত দুই পা।সবই সমান সমান।ভয় পাওয়ার কিছু নাই।নাম বল।”
ছেলেটার বাহুতে আলতো করে হাত বুলায় রিঝ।ভরসা পেয়ে ছেলেটা হালকা হেঁসে বলল,
“ মুহিন।”
“ বাহু সুন্দর নাম তো তোর।তো কি করছ??”
“ ঝিনুকের মালা বেঁচি স্যার।”
“ আরে বাপ স্যারও ডাকতে পারছ??তা তোর কোন দিক দিয়ে আমারে স্যার মনে হয়??স্যার মানে বুঝছ??”
মুহিন ভড়কায়।চেহারা ফ্যাকাশে হয়ে যায়।মুখ রক্ত শূন্য করে সে তাকিয়ে থাকে।রিঝ মৃদূ হাঁসে।বলে,
“ তুই তো দেখি অনেক ভীতু।কাহিনী কি? তুই না ছেলে ??ছেলেরা বুঝি ভীতু হয়??ভয় পাওয়া মেয়েদের স্বভাব।আবার কোনো মেয়েরে বলিছ না কিন্তু এটা সরাসরি।খেপে যাবে।”
ছেলেটা শব্দ করে হেঁসে উঠে।রিঝ নিঃশব্দে সে হাসির সাথে তাল মালায়।ছেলেটা নিজেই বলে,
“ স্যার আমি তো স্যার কথার মানে যানি না।”
“ স্যার আমরা শিক্ষককে বলি।আর শিক্ষক সেই যে তোকে একটা অক্ষর শিখায়।তো আমি তো তোকে কিছুই শিখাই না বা তুই আমার অফিসে চাকরিও করছ না।তাই ভাই ডাক।আবার আঙ্কেল ডাকিছ না।সবাই হাসবো।”
“ ডাকমু না ভাই।আপনি অনেকখ ভালা।”
“ তাই না কি??তবে এটা সত্য না।ওই যে টেবিলে মাথা দিয়ে শুয়ে আছে যে মেয়েটা সে বলে আমি খারাপ।আমারও তাই মনে হয়।যাই হোক।ভাই বোন কয় জন??”
“ চাইর জন।”
“ তুই বড়।”
“ না মাইজ্জা।”
“ ও আচ্ছা।চল আমার সাথে।”
“ কোথাই ভাই??” মুহিনের কন্ঠে ভয়।”
রিঝ হাসলো।হাত থেকে ঝিনুকের তৈরি জিনিস গুলো নিয়ে বলল,
“ চল তো আগে।তারপর বুঝবি।”
ছেলেটা ভয়ে ভয়ে যায়।সবাই তার দিকে তাকায়।রেস্টুরেন্টের স্টাফরা এগিয়ে আসে।ময়লা কাপড়ের ছেলেটাকে দেখা তারা চোখ উল্টে তাকায়।বলে,
“ এই এই এখানে কি করছ??ভিক্ষা দি না জানছ না।বাইরে যা।”
“ ওকে ভিখারি মনে হওয়ার কারণ কি??” রিঝের কড়া কন্ঠ।
স্টাফ ভড়কায়।রিঝ চোখের ইশারায় ছেলেটাকে বসতে বসে।তুতুলের ঘুম উড়ে যায়।সে দেখে।অদ্ভুত!!রিঝ এমন করছে কেনো??ছেলেটা প্রচন্ড ভয় নিয়ে বসে।রিঝ কঠিন কন্ঠ বলে,
“ জামা দেখে বিবেচনা করা মানুষের কাজ হতে পারে না।”
স্টাফ মাথা নিচু করে।রিঝ খাবার অর্ডার করে।ছেলেটার সাথে কথা বলতে বলতে রিঝ খাওয়া শেষ করে।ছেলেটা খুব ক্ষুধার্ত ছিলো।রিঝ সমুদ্র থেকে ফিরার সময় একে কথা বলতে দেখেছে।আজকে সারা দিন কিছু খায়নি সে।তাই এখন দেখেই চিনতে পেরেছে।রিঝ আরো ছয় পেকেট খাবার দেয় ছেলেটাকে।টাকা দিয়ে মালা কিনে নেয়।যাওয়ার সময় ছেলেটা দৌড়ে এসে রিঝকে জড়িয়ে ধরে।রিঝ মাথায় হাত বুলিয়ে দেয়।সম্পূর্ন্য দৃশ্য নিরবে চুপ মেরে দেখে তুতুল।কিছুই বলে না।মুগ্ধ নজরে সে শুধু তাকিয়ে থাকে।তার মনে হচ্ছে রিঝের অনেক রূপ আছে।এতো ছোট থেকে তার সাথে থেকেও তাকে চিনে না সে।রিঝ নিজেরে প্রকাশই করে না।সবাই ব্যাপারটা স্বাভাবিক ভাবে নিচ্ছে।শুধু তুতুল ছাড়া।বিস্মিত কন্ঠে সে প্রশ্ন করে,
“ ভাইয়া আপনারা দেখলেন উনি কি করেছে??ভারী সুন্দর কাজটা।ওয়াও।উনি এতো আবেগী??আমি তো জানতাম না।”
রামিম পানির গ্লাসে চুমুক দিয়ে বলল,
“ এটা তোমার কাছে নতুন??”
“ মানে??” তুতুল অবাক হলো।
“ আরে ও এমনই।পথে ঘাটে যাবে পাবে এমন ধরে বেঁধে নিয়ে আসে।জিজ্ঞেসও করে না খাবে কি না।পাগল একটা।”
“ আমি কোথায় ছিলাম এতো দিন??দেখিনি কেনো??”
রামিম হাসলো।তুতুল ভাবে,জীবনের বেশির ভাগ সময় তো ঝগড়া করেই কাটিয়ে দিয়েছে।তবে রিঝ এতো শান্ত আর চুপ চাপ যে তাকে বুঝাই যায় না।আসমা বলল,
“ আরে ওরে বুঝা যায় না।আমিও এখনো বুঝলাম না।এতো দেখেও।একদিন কি হয়েছে যানো,একটা বারো বছরের ছেলেকে ধরে এনে উড়াধুনা পিটা শুরু।আমরা তো সবাই ভয় পেয়েছি।ভেবেছি মেরেই ফেলবে।পিটিয়ে হসপিটালে পাঠায়।আবার চিকিৎসাও করায়।আমরা দেখেছি ঠিকই কিন্তু কিছু বুঝিনি।”
“ তার নিশ্চুয়ই কারন ছিলো।” আকাশের ক্ষীন কন্ঠ।
“ শান্তিপ্রিয় মানুষও।চুপ থাকতে পছল্দ করে।শুনে খুব বেশি।খুবই ভদ্র।নিজের মতো থাকে।ব্যক্তিগত জীবন সে লুকিয়ে রাখে।এমন কি বন্ধুদেরকেও নিজের ব্যক্তিগত ব্যাপার থেকে দূরে রাখে।রহস্য আছে অনেক ওর মাঝে।খুব একা ভাবতে,একা থাকতে পছন্দ করে।তাই পাহাড় ভালোবাসে।একা থাকার সাথে পাহারের সম্পর্ক আমার জানা নেই।আমরা ওরে নিয়ে প্রথম প্রথম ভাবতাম।আমি যখন ক্লাস থ্রিতে তখন ওর সাথে পরিচয়।তখন থেকে দেখেছি।ও খুব শীতল মানুষ।তবে রাগলে আগুন।সেটা তুমিও জানো।”
রামিমের কথায় তুতুল বিরক্ত হলো।বলল,
“ আপনি যা বলছেন সবই আমি জানি।জানিনা এমন কিছু বলেন।”
“ সেটা তুমি খুঁজে বের করো।আমাদের দ্বারা অসম্ভব”
তুতুল আরো কিছু বলতে চেয়েছিলো।কিন্তু রিঝ চলে আসে।ঝিনুকের মালা গুলোর একটা আসমাকে দেয়।একটা মায়শাকে।বাকি গুলো তুতলের হাতে দেয়।বলে,
“ এগুলো তোমার।”
“ আপনি তো প্রতিশোধ নিবেন বলেছিলেন।এখন গিফট দিচ্ছেন??কারণ কি??”
“ এখন পাগল আমাকে কামড়ালে আমি তো আর তাকে কামড়াতে পারি না।তাই না।শতো হোক আমি রিঝমান।”
তুতুল ফঁস করে উঠে।রিঝ হাসে।একটা মালা হাত থেকে নিয়ে তুতুলের কোঁকড়া তুলের উপরে বিছিয়ে দেয়।তুতুল তাকিয়ে তাকিয়ে দেখে।তুতুল বিমোহিত।রিঝ গালটা হালকা টেনে দেয়।তুতুলের সেদিকে খবর নেই।সে রিঝকে দেখে।অদ্ভুত ভালো লাগছে রিঝকে।আগে তো লাগতো না।তাহলে এখন কেনো??কাছাকাছি থাকে সবসময় তাই??না কি রিঝের আচরন তার ভালো লাগছে??তুতুল মাঝা ঝাড়ে।কিসব হাবিতাবি ভাবছে সে।মাথা ঝরতেই মালা পরে যায়।রিঝ আবার তুলে দেয়।মাথার চুল ঠিক কর দিতে দিতে বলল,
“ তোমার দায়িত্ব পালন নি করলে তো তোমার ভাই খুন করবে।তাই এতো যত্ন করি।তা না হলে ঠেকা পড়ছে না কি।”
তুতুল এই প্রথম রাগ করলো না।হাসলো।চুল ঠিক করে বললো,
“ আপনার ফোনটা দেন তো।”
“ কেনো??”
“ আরে দেন না।আমারটা উপরে রেখে এসেছি।”
“ স্যরি আমি আমার পার্সোনাল ফোন কাউকে দি না।আসমা তোরটা দে।”
তুতুল আসমার ফোনটাই নেয়।দেখে।কেমন লাগছে তাকে।কয়েকটা ছবিও তোলে।
_________________________
খাওয়া শেষ করে সবাই রাতের সমুদ্র দেখতে আসে।দীর্ঘ বালুকাময় পথে হাঁটছে সবাই।প্রতিটি সময়ে,প্রতিটি দিনে সমুদ্রের রূপ পরিবর্তন হয়।এটি প্রকৃতির সৌন্দর্যের বিস্ময়কর গুন।চাঁদ উঠেছে থালার মতো।দূরে সমুদ্রের গর্জন শুনা যাচ্ছে।চাঁদের আনন্দময়,নরম,কোমল আলো পড়ছে উপস্থিত সবার উপরে।সমুদ্রের উপরে দেখা যাচ্ছে চাঁদের আলোর ছায়া।অদ্ভুত মায়ার সেই ছায়া।জ্বলজ্বল করে জ্বলছে।দেখতে দারুন লাগছে।বাতাসের গায়ে ঘ্রান!সুন্দর মিষ্টি গন্ধে সব মুখরিয়ে আছে।বালি ঠান্ডা।নরম,তুলতুলে বালিকাময়।সমুদ্র থেকে একটু দূরেই বড় বড় মাছ ধরার নৌকা।অর্ধচাঁদের মতো দেখতে সেই নৌকা।সমুদ্রের রূপ সৌন্দর্য বরাবরই তুতুলকে মুগ্ধ করে।রাতের এই রূপ তাকে আরো মুগ্ধ করছে।সবাই আর একটু সামনে এগিয়ে যায়।তুতুলের গায়ে শীতের জামা নেই।ঠান্ডা পড়ছে খুব।সমু্দ্রের বাতাসের কারনে সে ঠান্ডা বেড়েই চলেছে।দু’হাত বাহুতে ঘঁষে।রিঝ নিজের মাথা ঝাড়ে।বিড়বিড় করে বলে,পাগল ।নিজের জ্যাকেট খুলে দেয়।তুতুল তাকায়।বলে,
“ আপনি অনেক ভালো হয়েগেছেন।এতো ভালো হওয়া ভালো না।”
রিঝ হাঁটে।পাত্তা দেয় না কথায়।সামনে একটা ছোট খাটো ভীর।কিছু ছেলেমেয়ে গোল হয়ে আগুনের সামনে বসে আছে।কারো হাতে গিটার,কারো হাতে বাঁশি।একজনের হাতে কাঁচের বল।তাতে সাদা চিরকুচ দেখা যাচ্ছে।মনে হয় খেলছে সবাই।তাদের মাঝ থেকে কেউ একজন এগিয়ে আসে।একটু মোটা।লম্বা মতো।শ্যামলা দেখতে।মাথায় গামছা বাঁধা।দেখে মনে হচ্ছে মাঝি।তুতুলের বলতে ইচ্ছে করেছে,আপনি কি মাছ ধরেন??কিন্তু বললো না।ছেলেটা এগিয়ে এসে বলল,
“ আরে তুই রিঝমান না??”
রিঝ,রামিম,আসমা,হিমেল,মায়শা,আকাশ সবাই ভালো করে দেখে।দেখেই চিনতে পারে।চিৎকার করে বলে,
“ ইমতিয়াজ না??”
ইমতিয়াজ হেঁসে মাথা নাড়ায়।সবাই জড়িয়ে ধরে।তুতুল সরে দাড়ায়। সে কাউকে চিনেনা।রিঝ মৃদূ হাসি ঝুলিয়ে বলল,
“ মাত্র একবছরের পরিচয়েও তুই আমাদের ভুলিস নি।ভাবতেই অবাক লাগে।”
রিঝের কথায় ইমতিয়াজ আবার রিঝকে জড়িয়ে ধরে।আবেগী কন্ঠে বলে,
“ তোদের ভুলা যায় না দোস্ত।বাবা মারা যাওয়ার পরে যেভাবে হেল্প করেছিস আমাকে আমি জীবনেও ভুলতে পারবো না।”
“ আরে যা শালা।এসব কথা এখন বলার তো মানেই হয় না।কত বছর পরে দেখা!!আগে বল এখানে কি করছ??”
“ টিম নিয়ে ঘুরতে এসেছি।আমার টিমে এখন ১২জন সদস্য।”
“ এতো বড় করে ফেলেছিস??ভালো।তবে তুই ভালো গান করছ সেটা আমরা জানি।”
“ স্বপ্ন পুরোনে তো তোরাই সাহায্য করেছিস তাই না??”
রামিম বলল,
“ তোর প্রতিভা ছিলো তাই তুই এগিয়ে যেতে পেরেছিস।এতে আমাদের হাত নেই।তোর ব্র্যান্ড তো নাম করা।তুই সেলিব্রেটি দোস্ত।তাই তো এতো দিনে একবারো খবর নেছনাই।” রামিমের কন্ঠে অভীমান।
“ দোস্ত বিশ্বাস কর আমি নাম্বার হারাই ফেলছি।হারাইও ফেলি নাই।ফোন চুরি হয়ে গেছে।যাই হোক।চল। সবাই ওই দিকে।”
সবার সাথে তুতুলও হাঁটে।তুতুলকে দেখেই ইমতিয়াজ ভারী অবাক হওয়া গলায় বলল,
“ তুমি কে??”
রিঝ আগে আগে বলল,
“ তুতুল।ওর নাম।”
“ তুমিই তুতুল!! ইমতিয়াজের কন্ঠে বিস্ময়।
ইমতিয়াজের কথায় তুতুল চমকালো।ইমতিয়াজ যেনো চিনতেই পেরেছে এমন একটা ভাব নিয়ে চোখ বড় করে তাকিয়ে আছে।রিঝ বলল,
“ হুম।ওই তুতুল।”
“ ও তুমিই তাহলে সে।যাই হোক।চলো।”
তুতুল প্রশ্ন করে,
“ আপনি আমাকে চিনেন??”
ইমতিয়াজ হেসে উঠে বলে,
“ তুমি আমার চাইতেও বড় সেলিব্রেটি।”
_______________
হিমহিম শীতল হওয়া বইছে।সবাই গোল করে বসেছে।রিঝের সামনে তুতুল।ইমতিয়াজ রিঝদের সাথেই পড়তো।একবছর পরে তার বাবা মারা যায়।পরিবার বড়।কিন্তু কেউ রোজগার করার মতো ছিলো না।ইমতিয়াজ গান গাইতে পারে খুব ভালো।তার ইচ্ছে বড় গায়ক হবে।তাই সবাই তাকে সাহায্য করে।পড়া বন্ধ করে সে গানে মন দেয়।ভিডিও ছেড়ে অনেক ইনকাম করে।এখনতো তার ব্র্যান্ড নাম করা।সবাই খেলছে।কেউ হালকা গান বাজাচ্ছে।সফট মিউজিক।বাতাস,সমুদ্রের ডাক,আকাশের চাঁদ,পাশে ঝাউবন।সব মিলিয়ে অসাধারন মুগ্ধতা কাজ করছে চারপাশে।তুতুল সবার মাঝে বিস্মিত।তাকে অনেকেই চিনে।কিন্তু কিভাবে??হুট করেই সবার মাঝেই ইয়াজ আসে।পাশে বসে।অনেকেই গান শুনছে।অনেক মানুষ জমা হয়েছে।অল্প তবে অনেক।ইয়াজকে দেখেই রিঝ ভ্রু তুললো।একটা বিশেষ কারনে ইয়াজ রিঝকে ভয় পায়।তাই একটু দূরে যেয়ে বসে।সে আসতে চায় নি।তবুও আসতে হয়েছে।সবাই মিলে খেলছে।গোল বল থেকে সবাই একটা করে চিরকুট নেয়।আলাদা আলাদা জিনিস করতে বলে।কাউ নাচ কেউ গান।অনেকে নিজের ইচ্ছেটাই করে না।সবার দিক থেকে ঘুরে তুতুলের কাছে আসে।তুতুলকে একটা কাগজ নিতে বলে।সে নেয়।তুতুল খুলে দেখে।কি আছে এটা জোরে বলা যাবে না।তুতুলের কানে কানে এসে একটা মেয়ে শিখিয়ে দেয়।তুতুল প্রস্তুতি নেয়।কথাটা রিঝকে বুঝাতে হবে।তুতুল রিঝের সামনে দাড়ায়।রিঝের দিকে তাকিয়ে হাসলো।হাত নাচিয়ে ইশারা করে দেখাচ্ছে সে।রিঝ প্রথমে বুঝে না।তুতুল অধৈর্য্য গলায় বলল,
“ রিঝ ভাই আপনি কিছুই বুঝেন না।ভাল করে দেখেন।”
তুতুল নিজেকে দেখায়।রিঝ এবার বলে,
“ তুমি।”
“ আরে না।ভালো করে দেখেন না।”
রিঝ এবার সিরিয়েস একটা ভাব নিয়ে দেখে।তুতুল প্রথমে নিজেকে দেখায়।তারপর রিঝকে।তারপর হাত নাচায়।কয়েক সেকেন্ড ভাবনার পর রিঝ বলল,
“ তুমি আমার কে!! এটাই তো??”
তুতুল ইশারাকে।বুঝায় হোইছে আরো ভালো করে ভাবেন।রিঝ ভাবে।তুতুল আরো বুঝায়।রিঝ বলে,
“ হাম আপকে হে কন??”
তুতুল লাফিয়ে উঠে।সবাই তালি দেয়।মুহূর্তে একটা খুশির পরিবেশ তৈরি হয়।তুতুল বালির মধ্যে লাফাতে গিয়ে ধপ করে পরে যেতে নেয়।রিঝ ধরতেই একদম তার বুকে গিয়ে পরে।তুতুল হুমড়ি খেয়ে পরে।কেঁপে উঠে বুকে।সবাই একটু থেমে আরো জোড়ে হেসে উঠে।রিঝের চশমা পরে যায়।রিঝের চোখের দিকে তুতুল তাকায় ।দেখে চোখ বুঝা যাচ্ছে।কালো রঙের মনি যুক্ত চোখ অদ্ভুত গভীর।যেনো কেউ তাকালেই নিচে তলিয়ে যাবে।একদম গভীরে।সমুদ্রের চাইতেও এর গভীরা যেনো অনেক বেশি।রিঝ চোখ সরিয়ে নেয়।দ্রুত চশমা খুঁজে পরে।তুতুল উঠে বসে।অপ্রস্তুত ভঙ্গিতে বলে,
“ স্যরি।”
সবার মাঝ থেকে একজন বলে,
“ উত্তর তো এখনো শেষ হলো না।সম্পূর্ন করেন।তা না হলে খেলা এগিয়ে নিয়ে যেতে পারবো না।”
রিঝ চোখে চশমা ঠেলে দিতে দিতে বলল,
“ তুমি আমার কাছে কৃষ্ণচূড়ার রং লাল।”
রিঝের কথায় তুতুল সহ সবাই চমকায়।রিঝ আবার বলে,
“ আরে এটা কবিতার লাইন।আগেরটা যেমন মুভির লাইন ঠিক তেমন।”
এই কথার আসল মানে শুধু রিঝ বুঝে।তুতুল রিঝের দিকে তাকিয়ে বুঝার চেষ্টা করে।রিঝের অনেক কথা তাকে ইদানিং অবাক করে।রামিম কথা ঘুরায়।বলে,
“ চলো খেলা শুরু করি।”
ইমতিয়াজ বলল,
“ না আজ আর অন্য খেলা না।রিঝ ভায়োলিন বাজা।অনেক বছর হয়েছে শুনি না।তোর এই সুর একদম ভিন্ন।সবার থেকে।যেনো কত আবেগ লুকিয়ে থাকে।দাড়া আমাদের কাছে আছে।”
ইমতিয়াজ ভায়োলিন হাতে দেয়।রিঝ কাঁধের উপরে ধরে।সুর তুলে।তুতুল প্রতিবারের মতো মুগ্ধ হয়ে শুনে।আশ্চর্য রকমের সুন্দর এই সুর।যেনো টানছে।বাতাসের তীব্রতা,সমুদ্রের গর্জন,চাঁদের আলো আর এই সুর!সব মিলিয়ে মধুময় পরিবেশ মুহূর্তে গড়ে তুলে।সবাই বিমুগ্ধ হয়ে শুনে।তুতুলের হঠাৎ হঠাৎ মনে হয় এই সুর বুঝি তার জন্যেই বাঁধাই করা!!কি দারুন এর অনুভুতি!তুতুল যেনো সত্যি তলিয়ে যাচ্ছে।বরাবরই এই সুর তাকে ঘায়েল করে।এর অনুভুতির সাথে তাকে মিশিয়ে ফেলে।যেনো ভালোবাসতে শিখায় নতুন ভাবে।ভালোবাসার কথা মনে পড়তেই তুতুল সজাক হয়।মুখটা কঠিন করে আগুনের উত্তাপের দিকে তাকায়।ভাবে, কিসব হচ্ছে তার সাথে??আগেই তো ভালো ছিলো।এখন এসব অদ্ভুত ব্যাপার কেনো ঘটছে??রিঝের ব্যবহার অন্যরকম মনে হচ্ছে।অদ্ভুত??আগে তো এমন মনে হতো না!!
“ আমার আকাশে সূর্য উঠে
তোমার নামের পতাকা হয়ে।
আমি প্রতিবারই সে সূর্য ডুবাই
বেলা ফুরাবার আগে।”
তুতুল ঠিক হয়ে বসে।মন দিয়ে শুধু সুর শুনে।
#চলবে…………

রি-চেক করা হয় নি ভুলগুলো আল্লাহর দেওয়া মহান গুন ক্ষমার চোখে দেখবেন।একটা গুরুত্বপূর্ন কথা,আমি গল্প লেইট করে দিচ্ছি এটা নিয়ে।আমি জানতে চাই আপনারা কি এই গল্প প্রতিদিন পেতে চান।না কি একদিন পর পর???উত্তরের উপরে নির্ভর করে।
#চলবে…………
ভুলগুলো আল্লাহর দেওয়া মহান গুন ক্ষমার চোখে দেখবেন।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here