কৃষ্ণচূড়ার রং লাল পর্ব ১২+১৩

কৃষ্ণচূড়ার রং লাল-১২.🎈
@হাফসা আলম
_____________________
আকাশ কালো হয়ে এসেছে।চারপাশে সন্ধ্যার আমেজ।তবুও দূর দূর গাছের প্রতিচ্ছবি দেখা যাচ্ছে।ছুটে চলছে তীব্রভাবে।একের পর এক সাই সাই করে পার হয়ে যাচ্ছে।তুতুল উদাসীন চোখে তাকিয়ে এসব খেলা দেখছে।বাতাস হচ্ছে ঝনঝন করে।বাতাসের এলোমেলো হাওয়া উড়িয়ে দিচ্ছে তার চকচকে কোঁকড়া কেশ।বাঁকিয়ে উড়িয়ে দিচ্ছে শরীরের জড়িয়ে থাকা শাড়ির আঁচল।মন খারাপের কোনো কারণ থাকে না।হুট করেই যেনো যেকে বসে।কিন্তু আজ তুতুলের মন খারাপের কারণ আছে।রিঝের হাতে বই।কপাল কুঁচকে সে বই পড়ছে।হিমেল উপরে ঘুমাচ্ছে।মায়েশাও উপরে।নিচে বসে আছে রামিম আর আসমা।আসমা কিছুসময় ফোন নিয়ে ব্যস্ত ছিলো।কিন্তু এখন মনোযোগ দিয়ে রিঝকে দেখছে একবার তুতুলকে দেখছে বহু বার।রামিম ফোনে গেমস খেলছিলো।হুট করেই চেঁচিয়ে উঠে সে বলল,
“ মার মার মার।”

আসমা লাফিয়ে উঠে বলল,
“ কারে??”

রামিম ফোন থেকে চোখ তুলে বলল,
“ তোরে বলি নাই।পাবজি খেলছস জীবনে??না তো।তুই এগুলোর কি বুঝবি।সর।হাবা একটা।”

আসমা ফস করে শ্বাস ফেলে বলল,
“ এসব যারা বানাইছে ওরা এক পাগল যারা খেলে ওরা আর এক পাগল।সে হিসেবে তুই কি জানোছ রামিম্মা??”

রামিম খেলাই মনোযোগী ছিলো।তাই বলল,
“ কি??”
“ তুই ও পাগল।সর। আরো যা।চেপে বসতে বসতে তো আমারেই ফালাই দিবি এখন।”

রামিম সরে বসলো।আসমা আরো একটু পাশ ঘেষে ফিসফিস করে ডাকলো,
“ রামিম্মা!!”

রামিম বিরক্তি প্রকাশ করে বলল,
“ এমন ঘেইষা আছস কা??দূরে যা।”

আসমা চিমটি কাটে।রামিম “আউচ” করে হাত ঘষে।আকাশ একপাশে কাত হয়ে ঘুমাচ্ছে।আসমা ওরেও ডাকে।আকাশের চোখে ঘুম।তার আকাশ পাতাল সব ঘুমে ডুবে আছে।আসমা সবাইকে কাছাকাছি ঘেঁষতে বললো।তারপর কন্ঠ খাদে নামিয়ে বলল,
“ ভাই রিঝের মতিগতি কিছু বুঝি না তোরা বুঝলে বল??”

আকাশ হাই তুলতে তুলতে বলল,
“ শালা বলদ।তা না হলে কেউ এমন করে বল??”
“ হুম আমিও সেটাই ভাবছি।রামিম সবচাইতে বেশি চিনে ওরে।রামিম তুই বল রিঝের আসল মতলব কি??”
“ ওরে বুঝা আমার সাধ্যের বাহিরে।”

রামিম সুর লাগিয়ে গেয়ে উঠে,
“ তোমার আমার প্রেম আমি আজও বুঝিনি।”

রিঝ ত্যাড়া চোখে বইয়ের পাতা থেকে মুখ তুলে তাকায়।তুতুলও জানালার পাশ থেকে চোখ তুলে তাকায়।রামিম রিঝকে ঠেলেঠুলে তুতুলের পাশে বসে।তারপর হেঁসে জিজ্ঞেস করে,
“ তুতুল তা তোমার সম্পর্কে কিছু বলো।বসে বসে বিরক্ত হচ্ছি।”

তুতুল নির্লিপ্ত ভঙ্গিতে বলল,
“ আমার সম্পর্কে তো আপনি সব জানেন ভাইয়া।আমার নাম, বাবার নাম ,ভাইয়ার নাম ,বাড়ি কোথায়…”
“ থামো থামো।আমি এগুলো জিজ্ঞেস করি নি।তোমার পছন্দের কথা জানতে চাই।সব চাইতে ভালো লাগে কি করতে??”

“ ঘুমাতে।” তুতুলের সোজা সাপটা জবাব।

রিঝ ফোড়ন কাঁটে।বলে,
“ এইটা ছাড়া পারোই বা কি।”
“ যাই পারি আপনার থেকে বেশি।” তুতুল ঠোঁট বাঁকায়।রিঝ ভ্রু কুটি করে।রামিম ঝড়ের পূর্বাভাস পেয়ে তাড়াতাড়ি বলল,
“ তোমার প্রিয় খাবার কি??

তুতুল এই প্রশ্নে খুশি হলো।তাই হেঁসে উঠে বলল,
“ বিরিয়ানি।”
“ ওয়াও।রিঝ তো অসাধারন বিরিয়ানি রান্না করতে পারে।তোমাকে সারা জীবন বিরিয়ানি রান্না করে খাওয়াবে।ঠিক বলেছি না??”

তুতুল মুখ বাকিয়ে বলল,
“ কচু খাওয়াবে।উনার যুগ চললে তো বিরিয়ানির সাথে এক চামচ বেশিই পিয়োর বিষ খাইয়ে আমারে কবরে পাঠাবে।হুহ।”

রিঝ মাথা বাঁকা করলো।ঠোঁট বাকিয়ে অদ্ভুত ভঙ্গীতে হেসে বলল,
“ আমার যুগ চললে এক চামুচ কেনো??এক বোতল বিষ খাইয়ে দিবো।আমি মোটেও কিপটা না।যা দিবো সব বেশি বেশি।বিষটাও বেশিই দিবো।এত কষ্ট করে একটা বোতল কিনবো।যদি সব না দি তাহলে তো নষ্ট হয়ে তাই না।”
“ বাকিটা আমি আপনাকেই খাইয়ে দিবো।শত হোক আপনি তো আমার বড় তাই না ভাইয়াাাাাাা।”

তুতুল দাঁতে দাঁত চাপে।রিঝ আবার বইয়ে মুখ গুঁজে।তুতুল মনে পড়ার ভঙ্গিতে বলল,
“ রামিম ভাইয়া।আপনি চিনেন উনাকে??”

রামিম চোখ উঁচিয়ে বলল,
“ কাকে??”
“ কাকে আর রিঝ ভাইয়ার গার্লফ্রেন্ড।”

তুতুলের আজব কথায় সবাই একবেলা কেশে উঠে।আসমা উঠে আসে।তুতুলের আর এক পাশে বসে।আকাশ তো নিচেই বসে পরে।তুতুল সবার দিকে অবাক হয়ে তাকায়।সবার ভাব দেখে তার নিজের কপালেই ভাজ পরে।রামিম বিস্ময়ে ভারি গলায় বলল,
“ রিঝের গার্লফ্রেন্ড আছে??”
“ অবশ্যই আছে।আপনারাও জানেন না??এতো পুরাই চুপা রুস্তম।দেখলেন কেমন বন্ধু আপনাদের??বললও না।তবে আমি জানি।তুতুল বলে কথা।” তুতুল বিজয়ের হাসি হাসে।সবাই হতবম্ভ হয়ে রিঝের দিকে তাকয়।রিঝের ভুক্ষ্রেপ নেই।সে নিজের বইয়ের পাতায় ব্যস্ত।রামিমই আগে প্রশ্ন করে,
“ তুমি জানো??”
“ তা নয় তো কি।অবশ্যই জানি।আরে আমি তো ছবিও দেখেছি।”
সবাই এক সাথে চেঁচিয়ে উঠে।বলে,
“ কি!!কখন??কিভাবে,?কোথায়??কোন সময়??কিসের মাধ্যমে??”
“ আরে বাপরে এতো প্রশ্ন এক সাথে??তাও সবাই??আপনারা সত্যি জানেন না??আল্লাহ রিঝ ভাই আপনি কি খারাপ??আমি না হয় আপনার জাত শত্রু।এরা তো বন্ধু।এদের তো বলতেই পারতেন।কিন্তু না আপনি বললেন না।দেখেন সবাই উনি কত খারাপ।আ,,”

কথার মাঝ পথে থামিয়ে আকাশ বলল,
“ তোমাকে!!মানে স্যরি মেয়েটাকে দেখে ফেলেছো??তাহলে তো তুমি জানবে কেমন দেখতে??বলো??”

তুতুল সবার দিকে তাকিয়ে ফুস করে শ্বাস নেয়।চোখে মুখে একরাশ হতাশা নিয়ে ব্যর্থ মনে বলল,
“ সেটা তো জানি না আকাশ ভাইয়া।”
“ জানো না মানে কি??তুমি না ছবি দেখেছো??” আকাশের কন্ঠে অবাকতা।

তুতুল বিষন্ন কন্ঠে বলল,
“ ছবি তো দেখেছি।কিন্তু উল্টো পিঠ।সম্পূর্ন দেখার সুযোগ কই দিলো উনি।তার আগেই বাঁশ মার্কা গলায় কা কা কা করা শুরু করেছিলো।খারাপ লোক একটা।বউ পাবে না আপনারা সবাই দেখে নিয়েন।আমি।এই আমি তুতুল বলে দিলাম।মিলিয়ে নিয়েন।”

সবাই হাসে শব্দ করে।রিঝ কন্ঠে বিরক্তি নিয়ে বলল,
“ এই ভাবে হাসবি না একদম।বাজে শুনায়।আর আসমা মেয়েদের তো এতো শব্দ করে হাসাই উচিত না।কয়বার নিষেধ করেছি?তবুও তুই একুই রয়ে গেলি।ডিজগাস্টিং।”

রিঝের কথায় আসমার কিছু যায় আসে না।সে হাসির শব্দ বাড়িয়ে দেয়।সেই হাসিতে যেনো আকাশ বাতাস এক হয়ে যাবে মুহূর্তে।দপ দপ করে তুতুল গায়ের উপরে পড়ছে সে।তুতুল রামিমের দিকে ঝুলতেই রিঝ রামিমের হাত টেনে তাকে নিজের দিকে ঝুকিয়ে নেয়।তুতুল হালকা ঝুকে সোজা হয়।আকাশ হাত বাড়িয়ে দেয়।বলে,
“ তুতুল তুমি যে বলছো রিঝ বউ পাবে না সেই কথায় আমি ৮০% বিশ্বাসী।কারণ যাকে এ ভালোবাসে তাকে হয় তো সে বলতেই পারবে না।”

তুতুল ভারী অবাক হলো।তার জানা মতে রিঝ ভাইয়ের সব কথা সটকার্ট।যা ভালো লাগবে সরাসরি বলে দেয়।আর যা ভালো লাগবে না তা সে না করে দেয়।তাহলে ভালোবাসার মানুষকে বলতে পারছে না মানে কি??তুতুল জিজ্ঞেস করে বলল,
“ কেনো কেনো??”

রিঝ চোখ গরম করে তাকালো।আকাশ ঢোক গিললো।বলল,
“ আমার হাতটা দেখে দেও।রিঝের বানী তো সত্যি হবেই।কিন্তু আমার কবে বিয়ে হবে একটু যদি বলতে।আসলে সিঙ্গেল থাকতে থাকতে আমি বিরক্ত হয়ে গেছি।আমারও বউ লাগবে।”

রামিম হেসে উঠে পিঠ চাপড়ে বলল,
“ এতো বউ বউ করিছ না।সিঙ্গেল মানেই জীবন বিন্দাস।মিঙ্গেলে কষ্ট বেশি দোস্ত।”
“ তুই বুঝবি না সিঙ্গেলের কষ্ট।তুই তো মিঙ্গেল।তুতুল হাত দেখো।”

তুতুল হাসে ঠোঁট চেপে।দুষ্টোমি করে বলে,
“ ভাইয়া আমরা তো বান্দরবানেও যাবো।আপনাকে তখন মারমা বা চাকমা দেখে একটা মেয়ের সাথে বিয়ে দিয়ে দিবো।ব্যস সুন্দরী বউ জীবনও সুন্দর।”

আকাশ নাক উচিয়ে নেয়।মুখের ভাবটা পানসে করে ফেলে।যেনো সত্যিই তার মারমা বা চাকমা মেয়ের সাথে বিয়ে হবেই।আকাশ সিরিয়াস ভাব নিয়ে সামনে বসে।নখ দাঁত দিকে কামড়ে নেয়।বিড়বিড় করে বলে,
“ মারমারা বেশি সুন্দর হয় না কি চাকমারা??আর ওরা কি মুসলিম হয়??”

আকাশ আরো ভাবে।একসময় চেঁচিয়ে উঠে।সবাই ঝাটকা খায়।আকাশ বেসুরা গলায় চেঁচিয়ে বলে,
“ ওরা তো মুসলিম হয় না।আমি মারমা চাকমাকে বিয়ে করতে পারবো না তুতুল পাখি।প্লিজ কিছু করো।”

তুতুল শব্দ করে হেসে উঠে।আকাশ চোখ রাঙ্গা করতেই দু’হাতে মুখ চেপে ধরে সে।তারপর হাসি থামিয়ে বলল,
“ সমস্যা কি মুসলিম করে নিবেন।”
তুতুল আবার হাসে।আকাশ চিন্তায় ডুবে।যেনো এই কথাই সত্যি হবে!!
____________________
রাত হয়েছে কিছুটা।রিঝ বসে আছে শান্ত হয়ে।হাতে তার ইংরেজি লেখকের বই।খুব মনোযোগ দিয়ে সে বই পড়ছে।মুখ দেখে মনে হচ্ছে গুরুত্বপূর্ন অংশে আছে সে।দৃষ্টি জোড়া তার খুব গভীর।চোখের গোল চশমাটা বার বার চোখ থেকে সরে যাচ্ছে।রিঝ ডান হাতের একটা আঙ্গুল দিয়ে ঠেলে দিচ্ছে।ট্রেনের ঝকঝক শব্দে মাঝে মাঝে সে বিরক্তিতে কপাল কুঁচকে নিচ্ছে।জানালার ফাঁকফকর দিয়ে হু হু করে ঢুকছে শীতের বাতাস।এলোমেলো করছে মাথার ঝাকড়া চুল।গলা অবধী গেঞ্জি তার।তবুও মনে হচ্ছে ঠান্ডা গলায় এসে লাগছে।গায়ের কালো জ্যাকেটও ঠান্ডা হয়ে আছে।একেই বলে কড়া শীত।তুতুলের খুব প্রিয় এই শীতকাল।কিন্তু রিঝের একদম পছন্দ না।তবুও সে চায় সারাটা বছর জুড়ে শীত পড়ুক।হঠাৎ কিছু একটা গুটিশুটি মেরে রিঝের কাঁধে এসে পড়েছে।রিঝ চোখ তুলে বই থেকে।সামনে তাকিয়ে দেখে রামিম আর আসমা হা করে দুই দিকে কাত হয়ে ঘুমাচ্ছে।চোখটা একটু একটু করে চশমার ভেতর থেকে বাকিয়ে দেখে।তুতুলের লাল ঠোঁটজোড়া কিঞ্চিৎ মেলা।চোখ বুজা।কোঁকড়া চুল মুখের উপরে।মাথাটা ঠিক রিঝের কাঁধে।রিঝ হালকা হাসে।তুতুলও মনে হয় হালকা হাসছে।ডান কোণার ঠোঁট ঘেঁষে যে কালো ছোট তিলটা আছে সেই ।সেই তিল হাসির কারনে ঠোঁটের কোণায় ডেবে গেছে।রিঝ পূর্ন দৃষ্টি মেলে তুতুলের দিকে তাকায়।তুতুলের গায়ে শীতের জামা নেই।শীতে কাঁপছে সে।হাত দিয়ে ঘুমের মাঝেই নিজের বাহু ঢাকছে।রিঝ নিজের দিকে একবার তাকায়।তারপরে এক হাতে তুতুলের মাথাটা সাবধানে নিজের হাতের পিঠে নেয়।এক হাতে নিজের জ্যাকেট খোলে।তুতুলের ঘুম ভারী।একবার ঘুমালে দুনিয়ার খবর নেই তার।অনেক ডাকলেও উঠতে চায় না সে।রিঝ নিজের জ্যাকেট খোলার সময় তুতুলের মাথাটা বুকের কাছে রাখে।নিজের বুকের তীব্র শব্দে তার বার বার মনে হয়েছে এই বুঝি তুতুল উঠে গেলো।কিন্তু ভাগ্য অনেক ভালো।তুতুল ঘুমে এতটাই মগ্ন যে সে আর উঠলো না।রিঝ সামনে তাকালো।তুতুলের মাথাটা নিজের কাঁধে রাখলো।বাম হাতে জ্যাকেট গায়ে জড়িয়ে দিলো।তুতুল যেনো গরম অনুভব করলো।আরামে সে আরো ঘেঁষে রিঝের হাত জড়িয়ে ধরলো।তুতুল ঘুম পাগল মেয়ে নয়।কিন্তু জার্নি করার সময় সে প্রচন্ড ঘুমায়।যাকে বলে মরার মত ঘুম।সেই ঘুম আবার বাহু ছাড়া হয় না।কারো না কারো বাহু তো লাগেই।নানুর বাড়ি যাওয়ার সময় বা যে কোনো জার্নিতে তুতুলের মা তার পাশে বসে।এই প্রথম অন্য কারো সাথে তুতুল কোথাও যাচ্ছে।দূরে কোথাও।তাই এবারো তার বাহু লাগছে।রিঝের বাহু।রিঝের মুখে গম্ভীর ভাব থাকে সব সময়।সে কম হাসে।মুখে সব সময় গম্ভীর ভাব থাকে।হাসলেও অনেক কম।মুচকি হাসিই সব সময় তার ঠোঁটে।গোলাপি ঠোঁটজোড়ায় মুচকি হাসিই মানায়।রিঝ গম্ভীর মুখে তুতুলের চুলগুলো গাল চোখ ঠোঁটের উপর থেকে সরিয়ে দেয়।তুতুল আরো আরাম করে জড়িয়ে ধরে।রিঝ অপলক তাকিয়ে থাকে তুতুলের মোটা কালো ভ্রু জোড়ার দিকে।চোখ ঘুরপাক খায় তুতুলের ঠোঁটে,বন্ধ চোখের পাতায়,ঠান্ডায় লাল হয়েও উঠা গালে।আর সেই কোণার কালো তিলে।আস্তে করে কয়েকটা দীর্ঘশ্বাস গোপনে নিয়ে রিঝ সাবধানী চোখে চারপাশে চোখ বুলেয়েই টুপ করে তুতুলের দুই’ভ্রুর মাঝের খালি কপালে গভীর করে একটা চুমু আঁকে।অনেক সময় নিয়ে নিজের গোলাপি ঠোঁটজোড়া চেপে রাখে তুতুলের কপালে।তুতুল যখনি হালকা কপাল কুঁচকে নড়ে উঠে।রিঝ দ্রুত ঠোঁটজোড়া সরিয়ে নেয়।ঠোঁট মেলে চমৎকার একটা হাসি হাসে।পলক বিহিন তাকিয়ে থাকে আরো অনেক সময়।তারপর চশমাটা এক আঙ্গুলের মাথা দিয়ে ঠেলে দিয়ে বাম হাতে বই ধরে মুখের উপরে।বই পড়ুয়া রিঝের মনোযোগ যেখানে ঝকঝক করা ট্রেনও নিজের দিকে আকর্ষন করতে পারে নি।সেই রিঝ আড়চোখে তুতুলকে দেখছে।মাঝে মাঝে একটু বেঁকে ফু দিচ্ছে তুতুলের চুলে।যাতে মুখ থেকে সরে যায় সেই চুল।হঠাৎ ঠান্ডা কন্ঠে রিঝ চমকায়।কানের পাশে ফিসফিস করে রামিম বলল,
“ মামু আমি তো সব দেইখা ফেলাইছি।তলে তলে এতো।সামনে সব কই থাকে।তুই ওরে কইবি না কি আমিই কইয়া দিমু??”

রিঝ চোখ রাঙ্গায়।কন্ঠ একদম নিভু নিভু করে বলে,
“ ফালতু কথা বন্ধ কর।তুই জানছ আমি এগুলো পছন্দ করি না।”

রামিম ফস করে নিজের শ্বাস ছোট করে নিয়ে নিচু গলায় বলে,
“ তুই কি ওরে ভালোবাসছ না??আর বাসলে বলছ না কেন??”

রিঝ রামিমের মুখটা চেপে ধরে।আরো দূরে ঠেলে নিজের কাঁধের দিকে তাকায়।তুতুল বেঘোরে খুমচ্ছে।বাচ্চাদের মতো চক চক শব্দ করে ঠোঁটজোড়া নাড়াচ্ছে।সেই তালে ঠোঁটের পাশের তিলটা গুলছে।রামিমের দিকে ঘুরে গভীর গলায় রিঝ বলল,
“ তাকে আমি মারাত্নক ভালোবাসি।বলিনা শুধু হারিয়ে ফেলার ভয়ে।এ ভয় বুঝার ক্ষমতা সবার হয় না রে।”

কৃষ্ণচূড়ার রং লাল-১৩.🎈
@হাফসা আলম
_____________________
সকাল সকাল সাইমন হোটেলের মানুষ বিস্মিত চোখে তাকিয়ে আছে।এই দৃশ্য তারা আগে কখনো দেখেছে কি না তাদের মনে নেই।উৎসুক একটা পরিবেশ তৈরি হয়েছে মুহূর্তে।রিঝের কোলে তুতুল।সে ঘুমাচ্ছে।কিন্তু গায়ে জ্বর।তুতুলের কান্না জিনিসটা সহ্য হয় না।করলেই ভয়ংকর জ্বর হয়।সকাল দশ টার আগে ডাক্তার পাওয়া মুশকিল।রিঝের এক কলেজ লাইফের বন্ধু ডাক্তার।সে কক্সবাজারেই থাকে।রিঝ কল করে বলেছে হোটেলে আসতে।স্টাফ হতে সবাই হা করে তাকিয়ে আছে।সাদা লালের মিশ্রনে পড়া শাড়ি,খোলা চুল,অর্ধঢাকা মুখ।রিঝ গলা উচিয়ে সামনে তাকিয়ে হাঁটছে।রামিম ক্লান্ত গলায় বলল,
“ এমন ভাবে কোলে নিয়েছে যেনো জোর করে কেউ কোলে তুলে দিয়েছে।ঢং।”
চারপাশের এমন জোহুরি নজরেই রামিমের সমস্যা।বিড়বিড় করে সে কিছু কথা শুনিয়ে দিলো।সাতজনের জন্য আগেই আলাদা আলাদা রুম বুক করা হয়েছে।রিঝ চাবি নেয় এক হাতে।তুতুলের এলোমেলো শাড়িতে সে যেনো নিজেই পেঁচিয়ে যাচ্ছে।ঘুমে জ্বরে তুতুলের মুখটা কেমন লাল লাল হয়ে আছে।গালে লালছে দাগ।রিঝ একদম রুমে নিয়ে যায় তুতুলকে।সবাই নিজেদের রুমে যায় না।তার পিছনে পিছনে যায়।ট্যুরে একজনের সমস্যা মানে সবার সমস্যা।রিঝ খুব মনোযোগী।সাথে ব্যস্ত হয়ে তুতুলকে বিছানায় রাখে।ব্ল্যাঙ্কেট গায়ে জড়িয়ে দেয় ভালো করে।রামিমের কাছ থেকে নিজের ব্যগ নেয়।রুমাল বের করে।ওয়াসরুম থেকে ভিজিয়ে নিয়ে আসে।তুতুলের মাথায় পানি দেয়।উত্তেজিত দেখাচ্ছে তাকে।আসমা রামিম হিমেল আকাশ মায়শা সবাই হা করে দেখছে।এটা ওটা এগিয়ে দিচ্ছে।দ্রুত না দিলে রিঝ চিৎকার করছে।রাগ দেখাচ্ছে।তুতুল মাঝে মাঝে চোখ মিটমিট করে তাকিয়ে বলছে ,
“ চোখ জ্বালা করছে আমার।”
রিঝ তখন রেগে বলে,
“ ভালো হয়েছে।আরো জ্বলুক।”
রিঝের চোখেমুখে চিন্তার ছাপ দেখে রামিম বলল,
“ আরে ভয় পাছ কা??ভালো হয়ে যাবে।তুই তো কোইলি অর কান্না করলে জ্বর হয়।এটা নরমাল।”
“ সেটা আমিও জানি।কিন্তু অর জ্বর ভালো জিনিস না।তাই ভয় লাগতাছে।”
হিমেল আর মায়শা এগিয়ে এসে বলল,
“ তাইলে আমারা রুমে যাই।অনেক ক্লান্ত লাগছে।ঘুরতে এসে এসব প্যারা ভালো লাগে না।”
রামিম বিরক্ত হলো।মায়শার অনেক কাজ এখন তার ভালো লাগে না।কেমন যেনো??তাই রেগেই বলল,
“ বাল তোগোরে কে কইছে আইতে??যা ভাগ।”
“ তুই এমন করে কথা বলছিস কেনো??”হিমেল তেড়ে আসে।”
রামিমও যায়।আকাশ থামায় বলে,
“ দেখ ঝগড়া করিছ না।তুতুল অসুস্থ।রিঝ রেগে আছে।শুধু শুধু আর ঝামেলা লাগিয়ে কি লাভ?যা তোরা।”
রামিম ঘাড় ত্যাড়া।বলল,
“ মায়শা তুমি যাবে না।”
মায়শা শুনলো না।বলল,
“ আমার ক্লান্ত লাগছে।তাই আমি আমার রুমে যাবো।শুধু শুধু আমাকে আটকাচ্ছো কেনো??”
“ যা।তুই তো আমার কোনো কথাই শুনবি না।হিমেলের সাথেই বেশি জমে যা তুই অর লগে।”
আসমা এগিয়ে আসে।মায়শা রাগে ফস করে উঠে বলে,
“ তুই করে বলতে না নিষেধ করেছি না।তবুও কেনো বলছো??ভুলে গেলে না কি আমি তোমার গার্লফ্রেন্ড হোই।”
রামিম বিড়বিড় করে বলে,
“ বালের গার্লফ্রেন্ড।নিজে এসে প্রপোজ করে গলাই ঝুলছে।কিন্তু ভাব এমন যেনো আমিই পাগলা কুত্তার মতো ঘুরি পিছনে।”
আসমা সব শুনে।চোখ উল্টে তাকায়।দু’জনেই বেড়িয়ে যায়।আকাশ সন্দেহী গলায় বলে,
“ ভাই তোরা যাই কছ আমার ডালমে কুছ কালা লাগতাহে।”
“ মায়শার মাঝে কত গাফলাই থাকতে পারে।কিন্তু হিমেল ক্লান্ত তাই ঘুমাইতে যাচ্ছে।”
আকাশ পাশ ফিরে আসমার দিকে তাকালো।বলল,
“ আমি তো অর নামই নি নাই।তুই যেহেতু কইতাছস তাহলে দুই জনের মধ্যই কাহিনী আছে।”
“ মোটেও না।”
দু’জনের তর্কাতর্কি রিঝে কানে যায়।প্রচন্ড রাগ নিয়ে চোখ লাল করে তাকালো সে।কঠিন কন্ঠে বলল,
“ সব কটা রুম থেকে বাইরে যা।”
রামিম সবাইকে চুপ করতে বলে।বিনিত সুরে রিঝেকে বুঝায়।বলে,
“ স্যরি।”
“ স্যরি শুনতে চাইনি।রুম থেকে যা।মানে যা।ফাইজলামি পাইছস??যা তো তোরা।”
রিঝের ধমক শুনে সবাই চলে যায়।
ডাক্তার আসে।দেখে যায়।বলে,বিকেলের মধ্যে জ্বর কমে যাবে।নরমাল জ্বর।প্রায় হয়।রিঝ তুতুলের কাছে আসমাকে রেখে যায়।ফার্মিসি থেকে ঔষুধ নিয়ে আসে।তুতুলকে খাওয়ায়।আসমা সামনের সোফায় বসে।রিঝ সবার জন্য খাবার অর্ডার করে।দরজায় শব্দ হয়।খাবার নিয়ে এসেছে।আসমা রিঝকে বলে,
“ খাবার খাবি আয়।”
“ না আমি এখন খাবো না।তুই খা।” রিঝের সোজা জবাব।
আসমা আর কথা বলে না।নিজের খাবার নিজে খায়।রিঝেরে রাগাইতে চায়না সে।রাগলে ভয়ংকর লাগে।যেনো খুন করেও শান্ত হবে না।রিঝ দেখে তুতুলকে।জ্বরে মুখ লাল হয়ে আছে।ঠোঁট বার বার শুকিয়ে যাচ্ছে।তাই জিভ দিয়ে ঠোঁট ভিজাচ্ছে সে।রিঝ মনোযোগ দিয়ে দেখে।বাঁকা বাঁকা চুল যখন মুখে পড়ে তুতুল তখন তীব্র একটা খোব নিয়ে মুখটা কুঁচকে দেয়।রিঝ নিজে নিজে হাসে।আসমা অবাক হয়ে দেখে।রিঝ তো নিজে নিজে হাসার মানুষনা??কি চমৎকার হাসি!!এই হাসি তার সব হাসির থেকে অদ্ভুত ভিন্নতায় আঁকা।
______________________
তুতুলের জ্বর কমে।চোখ খুলে তাকায়।ঘামে শরীর ভিজা।গলায় ঘাড়ে হাত রাখে।ঘামে একাকার ঘাড়।তুতুল উঠে বসে।চারপাশে চোখ বুলায়।হোটেলে নিজেকে আবিষ্কার করে সে অবাক হয়।কখন এলো??কিছুই মনে নেই তার।আশেপাশে কেউ নেই।সামনে তাকায়।দেখে রিঝ সোফায় ঠেসে বুকে হাত গুঁজে পাজোড়া টেবিলের উপরে রেখে ঘুমাচ্ছে।তুতুলের মাথার রুমাল পরে যায়।তুতুল হাতে নিয়ে দেখে।রিঝের রুমাল।সে চিনে।রুমালের নিচে কালো সুতার কাজ করে লেখা” রিঝমান”।তাহলে কি রিঝ মাথায় জলপট্টি দিয়েছে??তুতুল চমকায়।রিঝের দিকে তাকায়।ফর্সা মুখে ক্লান্তির একটা ছাপ।বাশের কুঞ্চির মতো নাকটা সোজা এসে হালকা বেঁকে গেছে নিচের দিকে।খোঁচা খোঁচা দাঁড়ি।ফ্যাকাশে ঠোঁট।চোখের পাপড়িগুলো ঘন।একভ্রুর উপরে ছোট কালো তিল।রিঝ তার মায়ের মতো হয়েছে।তার মায়েরও নাকের পাশে কালো তিল আছে।হুবহু সেই তিল রিঝের ভ্রুর উপরে আছে।একপাশের ভ্রু কাঁটা।কাঁটা ভ্রু দেখে তুতুলের ছোট বেলার কথা মনে পরে।তখন খুব ছোট ছিলো সে।তবুও সেদিনের কথা তার মনে আছে।বিকেলে রিঝের বাসায় যায় সে।রুমে খুঁজে পায় না।বাগানেও খুঁজে পায় না।শেষে পুকুর পাড়ে পায়।রিঝ বর্সি দিয়ে মাছ ধরছে।ছোট থেকেই খুব অদ্ভুত রিঝ।বাকি সাধারন বাচ্চাদের মত নয় সে।চুপচাপ থাকে।গম্ভীর হয়ে।অনেক হাসির কথায় সবার হাসতে হাসতে বারটা বাজলেও সে হাসে না।আবার মাঝে মাঝে চমৎকার করে হাসে।সবই অদ্ভুতুরে।তবে গোপনীয়তা খুব বেশি।নিজের কথা সে কউকে জানতেও দেয় না বলেও না।খুব কমকথার মানুষ হলেও অনেক শুনতে পারে।তাই বেশির ভাগ মানুষ রিঝের সাথে কথা বলে আনন্দ পায়।নিজে কম বলে কিন্তু অন্যের বিরতিহীন বকবক সে শুনতে পারে।রিঝ গম্ভীর মুখে মাছ ধরে।তুতুল ডাক দেয়।কাছে যেতে নেয় ।রিঝ দেখে পায়ের নিচে গর্ত ।তাই দৌড়ে আসে।তুতুলকে সরিয়ে নিজেই পড়ে যায়।পাশেই ফুলের বিশাল গাছ ছিলো।সেই গাছের চারপাশে ইট দিয়ে রেখেছিলো।কোণা কোণা ইটের সাথে রিঝের ভ্রু সহ মাথা লাগে।মাথাই হালকা ব্যথা পায় ।কিন্তু ভ্রু থেকে অনেক রক্তক্ষরণ হয়।দুই তিন stitch দেওয়া লেগেছে।এতো রক্ত দেখে আয়শা রহমান সেন্সলেস হয়ে গেছে।কিন্তু রিঝ সামান্য কান্নাও করেনি।ছোট থেকেই প্রচন্ড শক্ত মনের সে।তুতুল মুগ্ধ চোখে তাকিয়ে দেখে।রিঝের ঘুমের মাঝেও শিল্প শিল্প একটা ভাব আছে।এলোমেলো হয়ে না খুব সুন্দর করে গুঁছিয়ে ঘুমাচ্ছে সে।নিঁখুত তার ভাব।নিজের প্রতি নিজেই চমকায় তুতুল।রিঝকে সে পছন্দ করে না।তাহলে এভাবে দেখার কি আছে??কিন্তু অদ্ভুত ভাবে তার মনে হচ্ছে রিঝ ভাই প্রচন্ড হ্যান্ডসাম একজন ছেলে।কি আশ্চর্য!!এমন মনে হওয়ার তো কোনো কারনই নেই।তাহলে তার এমন মনে হচ্ছে কেনো??তুতুল চোখ সরিয়ে নেয়।হঠাৎ একটা পোকা তুতুলের গায়ে এসে পরে।চিৎকার করে তুতুল বিছানায় গুটিশুটি মেরে বসে।রিঝ চমকায়।ছুটে আসে।আঁতকে উঠে প্রশ্ন করে,
“ কি হয়েছে??জ্বর বেড়েছে??চোখ জ্বলে??না কি মাথা ব্যথা??”
রিঝের কন্ঠে চিন্তা।মাথায় হাত দিয়ে দেখে।জ্বর নেই।শান্তির নিঃশ্বাস ফেলে।বিছানার পাশে বসতেই তুতুল চেঁচিয়ে উঠে বলল,
“ নিচে সাপ আছে।বসবেন না।”
রিঝ পাশে তাকায় দেখে টিকটিকি।মরা টিকটিকি।তুতুল তবুও ভয় পায়।তার কাছে টিকটিকি সাপের মতো লাগে তাই সাপই ডাকে।রিঝ টিশু দিয়ে ফেলে দেয়।তুতুলের দিকে তাকিয়ে শব্দ বিহিন কিছুসময় হাসে।পাশে বসে শান্ত গলায় বলে,
“ ট্যুরে এসেছো না??”
তুতুল নিচু কন্ঠে বলে,
“ হুম।”
“ তাহলে আর কান্না করে জ্বর বাধাতে পারবে না।তাহলে আমি তোমাকে ঢাকায় নিয়ে চলে যাবো।”
“ আমি না যাইলে কিভাবে নিবেন??”
তুতুল মুচকি একটা হাসি দেয়।শুকনো হাসি।রিঝের বুকে গিয়ে লাগে।রিঝ হঠাৎ কোলে তুলে নেয় তুকুলকে।আকর্ষিক কাজে তুতুল হতবাক।ভয়ে দু’হাতে জড়িয়ে ধরে রিঝের গলা।রিঝ হাসলো।ঠোঁট ভর্তি হাসি ঝুলিয়ে বলল,
“ ঠিক এভাবে।”
তুতুল চোখ খুলে বলল,
“ কোলে নিয়েছেন কেনো??নিচে নামান।”
রিঝ আর কথা বললো না।সোজা ওয়াসরুমে চলে আসে রিঝ।তুকুলকে নিচে নামিয়ে দিয়ে বলে,
“ ফ্রেশ হও।খাবার খাবো ক্ষুধা লেগেছে।”
“ আপনি খান।আমি আটকাই রাখছি না কি??”
“ না তোমার জন্য অপেক্ষা করছি।”
তুতুল ভারী অবাক হলো।অপেক্ষা??তার জন্য??রিঝ ভাইয়া??বাপরে এটা তো অসম্ভব।তুতুলকে অবাক হতে দেখে রিঝ বলল,
“ এতো অবীক হওয়ার কিছু না।তোমাকে ফেলে খেলে তোমার ভাই আমাকেই কাঁচা খেয়ে ফেলবে।নিজের ক্ষতি কে চায় বলো??দ্রুত ফ্রেশ হও আমি আর অপেক্ষা করতে পারবো না।একেই জীবনে প্রথম কারো জন্য অপেক্ষা করতে হয়েছে তাও বকবক চালিয়ে যেতে হচ্ছে।”
“ আপনি সারা জীবনে শুধু আমার জন্য অপেক্ষা করেছেন??” তুতুলের গভীর কন্ঠ।
রিঝ উত্তর দিলো না।সোজা বেড়িয়ে যায়।তুতুল ফ্রেশ হয়ে আসে।একসাথে খায়।খেতে বসে তুতুল কথা বলতে চায়।রিঝ কড়া চোখে তাকায়।রোবটের মতো খাওয়া শেষ করতে হয়েছে তুতুলকে।
__________________
কক্সবাজার বাংলাদের মোটামুটি সবমানুষের পরিচিত একটি স্থান।বিশ্বের দীর্ঘতম সমুদ্র সৈকত এই কক্সবাজার।নানা প্রান্ত থেকে মানুষ ছুটে আসে এই সমুদ্রের নোনাপানিতে নিজেদের ভাসিয়ে দিতে।সূর্যের রঙ্গে নিজেকে রাঙ্গিয়ে তুলতে।মিশে যেতে সূর্য আর ঢেউয়ের মাঝে।প্রিয়সীর হাতে হাত রেখে সমুদ্রর বুকে ডুবে যাওয়া সূর্যকে দেখতে।হতাশা বিষন্নতাকে ঢেউয়ের তুমুল শব্দে ভাসিয়ে দিতে।বিকেল পাঁচটা ছুঁই ছুঁই।সমুদ্রসৈকত কক্সবাজারের বালুকাময়ের উপরে খালি পায়ে দাড়িয়ে আছে ওরা পাঁচ জন।তুতুলের তুমুল জোড়াজুড়িতে বিকেলেই বেরিয়ে আসতে হয়েছে তাদের।রিঝ বলেছিলো,আজকে রেস্ট নিতে কালকে সমুদ্র দেখতে আসবে সবাই মিলে।কিন্তু তুতুল প্রচন্ড ঘাড় ত্যাড় রিঝের ভাষ্য মতে।তাই বিকালেই নামতে হয়েছে।বালিতে পা দিতেই গরম অনুভব হয়।সূর্য তখন পশ্চিম আকাশে।তবুও বালি গরম।দূরে হাজারও মানুষের ভীর।তুতুল কান খাড়া করে।দূরে সমুদ্রের ঢেউের শব্দ কানে আসে।তুতুল হেঁটে চলে।যতো সামনে যায় সমুদ্রের শব্দ তত তীব্র হয়।আসমা উত্তজিত হয়ে রামিমের হাত খামঁছে ধরে।রামিম ব্যথা পায়।বলে,
“ শুধু খামছি দেছ কা পাড়লে কামড়াই ও দে।”
আসমা সত্যি সত্যি রামিমের হাতে দাঁত বসিয়ে দেয়।রামিম হতবাক।আসমা পানির দিকে ছুঁটে যায়।রামিম চেঁচিয়ে বলল,
“ রাক্ষসী দাড়া আমি আইতাছি।এর প্রতিশোধ পানিতে ডুবাইয়া লমু।”
সমুদ্রের একদম কাছে আসেতেই ঢেউয়ের শব্দ দ্রুত বাড়ে।তুতুল প্রান খুলে শ্বাস নেয়।উপভোগ করে ধূসর রঙ্গের পানি।তীরে আচড়ে পড়ছে বড় বড় ঢেউ।সেই ঢেউয়ের শব্দ যেনো জীবনের সকল কষ্ট,না পাওয়ার হতাশা,কষ্টের আর্তনাদ,হাহাকার!!সব ভাসিয়ে নিয়ে যাচ্ছে নিজের সাথে।রোমাঞ্চকর করে তুলছে সকলের মনকে এই উত্তাল জলরাশির শব্দ।চারপাশে চোখ বুলালেই দূরে দেখা যায় গাঢ় সবুজ সারি সারি ঝাউবন,উপরে নীল আকাশ,নিচ সমুদ্র,বিচিত্র মানুষ,ঢেউয়ের গর্জন,স্থির হয়ে কিনারায় আচড়ে পড়া ঢেউ পায়ের নিচের বালুকণার স্তর যা পা রাখতেই খালি করে দিচ্ছে নিচের জমিন সবাই মুগ্ধতায় ঘেরে।প্রকৃতি এতো সুন্দর কেনো??এতো সুন্দর না হলেও বোধ হয় পারতো!তুতুল নিজের অজানতেই পানিতে চলে আসে।রিঝ ছুটে এসে হাত ধরে।আঙ্গেলের ভাজে আঙ্গুল রাখে।দু’টি হাত লেপ্টে যায়।যেমন লেপ্টে আছে সমুদ্র আর ঢেউ।ঠিক যেনো তারই মতো মিলিয়ে আছে দু’টি হাত।আঙ্গুলের খাজে খাজে প্রেম লুকিয়ে রাখে রিঝ।তুতুল চোখ ঘুরিয়ে পাশে তাকায়।অনেক মানুষ,নিচে পানি সব দেখে তুতুল ভীতু হয়ে উঠে।রিঝের বাহু নিজের আর একহাতে চেপে ধরে।পানির ঢেউ বাড়ে।তুতুল সেই তালে ভার্সাম্য হারাতে থাকে।সাঁতার পারে না সে।একটু বড় ঢেউ আসতেই চেঁচিয়ে ছোখ মুখ খিঁচে বলে,
“ রিঝ ভাই শক্ত করে ধরেন।আমি হারাই যামু তো।”
রিঝ মুচকি হাসলো।আরো শক্ত করে হাত জড়িয়ে পিছনের দিকে নিয়ে আসতে আসতে বলল,
“ হারাতে দিলে তো??এই জীবনে তুমি আমার দায়িত্বে আছো।দায়িত্ব মানে বুঝো??এই দায়িত্ব সব দায়িত্বের চেয়ে আলাদা।যা সেচ্ছায় নিজের কাঁধে বহন করার মতো আনন্দের আর কিছুই নেই।কিছু দায়িত্বের মাঝে সত্যি তীব্র আনন্দ লুকিয়ে আছে।”
তুতুল আরো শক্ত করে রিঝের হাত ধরে।চোরাবালি সরে যাচ্ছে পায়ের নিচের থেকে।তুতুলের হাতের বাঁধন আরো শক্ত হয়।রিঝের সমস্ত শরীর জুড়ে অজস্র ভালো লাগায় ভরে উঠে।বুকে একটা ঝড় বইছে।তুতুলের খুব কাছের উপস্থিতি তাকে সেই ঝড়ের আভাস দেয়।এ তো ভালোবাসারই আভাস।

“ শোনো মেয়ে বলি তোমায়
আমার হৃদয়ের অতল সাগরের তলায়
আমি শুধু তোমারেই খুঁজিয়া বেড়াই।”

#চলবে…………
রি-চেক করা হয় নি ভুলগুলো আল্লাহর দেওয়া মহান গুন ক্ষমার চোখে দেখবেন।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here