#ক্যাসিনো ©লেখিকা_(মায়া)
#পর্ব_১২
মেহমেতের মুখে বিষন্নতার ছাপ, কেমন অস্থির অস্থির দেখাচ্ছে। মরিয়মের দিকে এক বার চেয়ে দ্রুত গলায় বলে,
তারাতারি ব্যাগ পত্র গোছগাছ করো। আমরা শান্তিপুর যাচ্ছি। ৯টার গাড়িতেই। মরিয়ম প্রচন্ড অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করে। আমরা হঠাৎ গ্রামের বাড়িতে কেন যাবো কি হয়েছে??
তেমন কিছু না তোমায় যেতে বলছি তুমি যাচ্ছো।
মেহমেত আলমারি থেকে কাপড় বের করে ব্যাগে ঢুকাচ্ছে। এখন বাজে ৮টা, আতংকিত গলায় মরিয়ম বলে,মেহমেত আপনি আমার প্রশ্নের জবাব কেন দিচ্ছেন না?? কারো কি কিছু হয়েছে?? বাড়িতে। আমার ফোন কোথায় আমি এখনি বাবা কে ফোন করছি। মেহমেত মরিয়মের ফোন টা হাত থেকে নিয়ে নেই। কারো কিছু হয়নি সব ঠিক আছে । বাবা মাকে অনেক মিস করছি। এই জন্য যাচ্ছি আমরা । তুমি কি তোমার মা বাবা কে মিস করছো না??? হঠাৎ এমন ভাবে বলছি বলে ঘাবড়ে যেতে হবে না। সবাই ঠিক আছে। সবাই যখন ঠিক আছে তাহলে ফোন দিতে কেন দিচ্ছেন না?? আমরা সারপ্রাইজ দিতে চাচ্ছি তুমি যদি এখন ফোন দাও তো সব সারপ্রাইজ নষ্ট হয়ে যাবে। বুঝেছো মহারানী এখন ঝটপট রেডি হও তো। রাতের খাবার খেয়ে আমরা বের হচ্ছি।
মরিয়ম মন মেহমেতের কোথায় কোন শান্তি পেল না। তার বার বার মনে হচ্ছে কিছু একটা ঘটছে। বড্ড কুডাকছে মনটা। কেমন যেন মেহমেতের কোথায় খোটকা লাগছে।
ছোট মিহি আনন্দে আত্মহারা। সে দাদুর বাড়ি যাচ্ছে। আফিয়া ফুপির সাথে কত্ত মজা হবে। দাদু বাড়ি সাথে নানু ও বাড়ি। পড়া শুনা থেকে ছুটি। মিহির খুশি খুশি মুখটা দেখে মরিয়ম ম্লান হাসলো।
গাড়িতে উঠেছে তারা, মরিয়ম জানলার কাছে বসে রয়েছে,আনমনে অন্ধকার রাস্তা দেখছে , গাড়ি তার নিজ গতিতে এগিয়ে চলছে। মরিয়মের অস্থির মন কিছুতেই শান্তি পাচ্ছে না। কেন জানি বার বার মনে হচ্ছে। কারো কিছু হয়েছে।
মিহি আর মেহমেত এই গল্প না সেই গল্প জুরে দিয়েছে। তাদের খুনসুটি আগে মুগ্ধ হয়ে দেখতো। আজ এসবে ও কেন জানি বিষাদ লাগছে।
শান্তিপুরের উদ্দেশ্য গাড়ি পৌঁছে গেছে। রাত প্রায় ৩টা বাজে। আশে পাশে কোন গাড়ি নেই। মেহমেত ভ্রু কুঁচকে তাকালো চারপাশে। মেহমেত ফোন বের করে কাউকে ফোন দিলো প্রায় ১৫মিনিট পর গাড়ি আসলো। মরিয়ম শুধু বার বার তাকাতাকি করছে কখন সে তার বাড়িতে যেতে পারবে। যত রাস্তা অগ্রসর হচ্ছে তত যেন মরিয়মের ধুকপুকানি বেড়ে চলেছে। অবশেষে বাড়ির কাছে পৌঁছে গেছে তারা। দ্বিতীয় তলা ইটের দালান। ইয়া বড় এক গেট। গাড়ি থামাতেই মরিয়ম তরিঘরি করে ধরফর করে দরজা খুলতে আরম্ভ করে। মেহমেত মরিয়মের এহেন কান্ডে অবাক হয়ে যায় । মেহমেত মরিয়মের কাছে যেয়ে বলে এই করছো টা কি দরজা কি ভেঙে ফেলবে না কি। দাঁড়াও দরজা খুলে দিচ্ছে আমিন চাচা।
দরজা খোলার সাথে সাথে মরিয়ম হুড়মুড়িয়ে ঘরে প্রবেশ করে। ঘরে ঢুকতেই মরিয়মের চোখ দুটো বড় বড় হয়ে যায়।
ঘর অন্ধকার,হুট করে ঘরের আলো জ্বলে উঠে। সবাই সারপ্রাইজ বলে চিল্লিয়ে উঠে। Happy Anniversary I
মা বাবা,শশুর শাশুড়ি আফিয়া সবাই এক সাথে আছে। সবাই কে ঠিক দেখে মরিয়ম হাফ ছেড়ে বাঁচে। মেহমেত আর মিহি হাতে গোলাপ নিয়ে পিছনে দাঁড়িয়ে আছে। মরিয়ম পিছনে ঘুরে হেসে ফেলে। চোখের কোণে চিকচিক করছে পানি। happy anniversary my dear queen
মরিয়ম হাতে ফুল দিয়ে মেহমেত মুচকি হাসলো। ছোট মিহির দিকে মরিয়ম ঝুঁকে মিহি মরিয়মের হাতে ফুল দিয়ে বলে,আব্বুর সাথে সব সময় ভালো থাকবেন আম্মু। এতো ছোট বাচ্চার মুখে এমন পাকনামি কথা শুনে সবাই হেসে ফেলে। মরিয়ম মিহি কে কোলে উঠিয়ে নিয়ে দুই গালে চুমু দিতে থাকে thank you আমার আম্মুটা। আফিয়া মরিয়ম কে জরিয়ে ধরে। সবার সাথে কুশল বিনিময় করে । সবার মুখে হাসি দেখে মরিয়ম ভিতরে এক অমায়িক শান্তি অনুভব করছে। কত দিন পর মা বাবাকে পেয়ে সব যেন মরিয়মের খুশিটা দ্বিগুণ হয়ে গেছে। গত ৬মাসের সকল দুঃখ কষ্ট এক নিমিষে ভুলে যায়।
কিছু ক্ষন গল্প গুজব করে যে যার ঘরে চলে যায়। সকাল হতে আর কিছু ক্ষন বাকি। মরিয়ম আর মেহমেতের জার্নি করা শরীর দেখে তাদের ঘুমুতে যেতে বলে। মিহি আফিয়ার ঘরে চলে গেছে।
মরিয়ম ঘরে প্রবেশ করেই মেহমেত কে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে। থ্যাংকস ,, কিন্তু আপনি আমায় এতো এতো চিন্তিত করে ফেলছেন যার জন্য আপনাকে শাস্তি পেতে হবে। মেহমেত আবাশে মরিয়ম কে জরিয়ে ধরেই বলে। মাঝে মাঝে চিন্তিত ভাবে সারপ্রাইজে যে আনন্দ আছে তা তুমি বুঝবে না। গম্ভির মুখটাই মূহুর্তেই যখন হাসি ফুটে যায় সেই হাসি সব কিছুর চেয়ে বেশি সুন্দর লাগে দেখতে। আর মহারানীর সব রকম শাস্তি শিরোধার্য । মরিয়ম মেহমেত কে ছেড়ে দিয়ে বলে, আপনার শাস্তি হলো বৃদ্ধ বয়সে ও আমাকে আপনার থেকে আলাদা করা যাবে না। আর কখনো উল্টা পাল্টা কাজ করা যাবে না। নয়লে বৃদ্ধ হওয়ার আগে মরিয়ম কে হারাবেন।
নিমিষেই মেহমেতের মুখ টা ফ্যাকাশে রূপ ধারণ করে। মরিয়ম কে নিজের কাছে টেনে নিয়ে এসে কপালে গভীর চুম্বন করে মুচকি হেসে বলে মৃত্যুর আগে পর্যন্ত কোথাও আমায় ছেড়ে যাওয়ার প্রশ্নই আসে না। গত ৬মাস টা নিজের জীবনের একটা খারাপ স্বপ্ন ভেবে ভুলে যাও। সামনে আর কিছুই হবে না প্রমিস । আমি পরিস্থিতির শিকার ছিলাম। এর বেশি কিছু নয়,,,আর একটা ও প্রশ্ন করো না যে কি পরিস্থিতি ছিল।এটা আমি বলতে পারবো না। মরিয়ম কপালে ভাঁজ এনে মেহমেতের চোখের দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল। তার পর ছোট একটা নিঃশ্বাস ফেলে শুকনো হেসে বলেন ঠিক আছে জিজ্ঞেস করবো না।
২দিন কেটে গেছে,সেই ছোটো বেলার মত মরিয়মের দিন গুলো কেঁটে যাচ্ছে। সকালে বাবার আদর মাখা কন্ঠে ঘুম ভাঙে। তার পর মায়ের হাতের রান্না আহ্ কত দিন খাইনি। আয়েশে পেট ভরে খাবার খাওয়া। তার পর বাবার সাথে হেটে হেটে পারা ঘুরে আসা। জমির আইলে খালি পায়ে ঘুরে বেড়ানো।
মরিয়মের মনে হচ্ছে সে সব চেয়ে বেশি সুখি মানুষ। কিন্তু মরিয়মের এই ভাবনায় মাথায় বারি পড়ে গেল। মেহমেত তার জামা কাপড় খুঁজে পাচ্ছে না বলে সাজ সকালে মরিয়ম কে ডেকে বাড়ি মাথায় তুলে ফেলছে।
মরিয়ম তারাতারি ঘরে এসে দেখে ঘরের সব জায়গায় কাপড় ছরিয়ে ছিটিয়ে রেখেছে। মেহমেত নাকি কাপড় খুজে পাচ্ছে না অথচ সব অর্ধেক কাপড় ছরিয়ে রেখেছে। মরিয়ম কিঞ্চিৎ রাগ দেখিয়ে বলে। কি করেছেন এসব আপনি??? জামা গুলো হাতে নিতে নিতে আবার বলে জামা নাকি খুঁজে পাচ্ছেন না । তাহলে এসব কি মেহমেতের কাপড় গুলো দেখিয়ে। আরে এসব না আমার আঁশ রঙের শার্ট টা কোথায়। কেন আঁশ রঙের শার্ট কেন লাগবে?? অন্য যেকোনো একটা কিছু পড়লেই তো হয় নাকি???
কথা বলে ঐ শার্টে তারাতারি বের করে দাও তো আমায়। মরিয়ম কাপড়ের ব্যাগ থেকে মেহমেতের আঁশ রঙের শার্ট বেড় করে দিলো কপট রাগ দেখিয়ে। মেহমেত শার্ট গায়ে দিয়ে মরিয়মের গালে টুপ করে একটা চুমু দিয়ে তারাতারি ঘর থেকে। মরিয়ম ঠোঁটের কোণে হাসি। আল্লাহর কাছে লাখ লাখ শুকরিয়া মেহমেত কে আবার তার কাছে ফিরিয়ে দেওয়ার জন্য। আর কোন পরিক্ষা নিও না আল্লাহ। মানুষ টাকে হেদায়েত দান করুন 😊
মরিয়ম এলোমেলো কাপড় গুলো গোছগাছ করে আলমারি তে রাখছে হঠাৎ ব্যাগের কাপড় সরাতে গিয়ে একটা ফাইলে চোখ আটকে যায় তার। এটা কিসের ফাইল?? কৌতুহল দমিয়ে রাখতে না পেরে ফাইল টা খুলে পড়তে লাগে। মরিয়ম ভিতর টা দুমরে মুচরে যায়। আবার সেই ক্ষত গুলো আলগা হতে থাকে। মেহমেত তাহলে এই কারনে এখানে এসে এসেছে। আবার তাকে ভালোবাসা দেখাচ্ছে সেগুলো সব মিথ্যা তাহলে। মরিয়মের কিছু ক্ষনের হাসির টুকরো টা কষ্টের এক পাহাড়ে পরিনত করলো। চোখ টা ঝাপসা হয়ে আসছে। রাগ হচ্ছে মেহমেতের উপর। কি ভাবে করতে পারে এটা সে??? মুষ্টিবদ্ধ হাত করে চোখ বন্ধ করে কি করবে সেটা ভাবছে। এই সময় বুদ্ধি দিয়ে কাজ করতে হবে। না কি মেহমেত কেই জিঙ্গাসা করবে ফাইলটার বিষয়ে!! নাহ বললে যদি আরো কোন গভীর প্ল্যান আবার সাজায়। মরিয়ম কিছু ক্ষন ফাইল টা নিয়ে ভাবতে বসে তার পর মাথায় একটা বুদ্ধি আসায় তাচ্ছিল্যের হাসি হাসেন।
নূর মোহাম্মদ মেহমেতের বাড়ি অফিস সব জায়গায় যায়। যেয়ে জানতে পারে তারা গ্রামের বাড়ি গেছে দু দিন আগে। নূর মোহাম্মদ আশাহত হয়। ভেবেছিল আজই কেস টা ক্লোস হয়ে যেতো। কিন্তু সময় টা যেন আবার বেরে গেল। মেহমেত না ফিরা অব্দি কিছু করতেও পারবে না।সব প্রশ্নের জোট তার কাছে থেকেই তো ভাঙা যাবে। হতাশ মনে নূর মোহাম্মদ ফিরে যায়।।।
মরিয়ম বিষন্ন মনে ছাদের এক কোণে দাঁড়িয়ে আছে, আকাশের দিকে পলকহীন ভাবে চেয়ে আছে। আল্লাহ কোন পাপের শাস্তি দিচ্ছেন। কি ভুলের সুস্থ স্বাভাবিক জীবন টা কেন এতো জটিল সমীকরণে বদলে যাচ্ছে।
জাবেদ মেয়ে কে খোঁজতে খোঁজতে ছাদে এসে মেয়ে কে এমন ভাবে মন খারাপ করে থাকতে দেখে। মাথায় হাত বুলিয়ে জিজ্ঞেস করে। মরিয়ম!! কি হয়েছে মা তোর??? বাবার কন্ঠ পেয়ে মরিয়ম চিন্তার গলক ধাঁধা থেকে বেরিয়ে আসে । মুচকি হেসে বলে, কিছু হয়নি বাবা। আমি ঠিক আছি, জাবেদ হাসলেন, আগের মত চাপা স্বভাবের রয়ে গেলি। মেহমেতের সাথে কি কিছু হয়েছে?? মন খারাপ কেন তোর??
মরিয়ম বাবাকে আসস্ত করে বলে বাবা কিছু হয়নি। সব ঠিক আছে,, তুমি একটা আবদার পূরণ করবে আমার???
কেন করবো না আমার এক মাত্র কন্যার জন্য। মরিয়ম ছোট বাচ্চাদের মত মুখ করে বলে,, ছোট বেলার মত পাখি কিনে আনবে তার পর সেটা কে উরিয়ে দিবো। আমার জন্য এক জোড়া পাখি কিনে আনবে বাবা ???
জাবেদ সন্ধ্যার দিকে মরিয়মের জন্য তিন জোড়া পাখি কিনে আনেন। সেই পাখি মরিয়ম হাত দিয়ে উরিয়ে দিচ্ছে। বন্দি পাখি গুলো মুক্ত আকাশে কেমন ডানা ঝাপটা তে ঝাপতে উরে যাচ্ছে গন্তব্যহীন ভাবে। মরিয়ম মিহি জাবেদ আকাশের পাখি উরিয়ে যাওয়ার পানে চেয়ে আছে। মরিয়মের চোখে পানি। কেন জানি তার কষ্ট গুলো কেও এমন আকাশে উরিয়ে দিলে মন্দ হতো না। বন্দি কিছু কে মুক্ত করে দেওয়ার মাঝে যে প্রশান্তি আছে তা অন্য কোথাও নেই।
চলবে _____?????
কেমন হলো গল্পটা জানাতে ভুলবেন না কিন্তু..! পরবর্তী পর্ব গুলো সবার আগে পড়তে পেজটা ফলো করুন।