#গোধূলি_লগ্নের_সেই_তুমি
#লেখনীতে_জেনিফা_চৌধুরী
#পর্ব_পয়ত্রিশ
দোলনায় বসে আছে ফাইজা। আর পেছন থেকে দোল দিচ্ছে ফারদিন। ফাইজা চোখ বন্ধ করে মুহূর্ত’ট উপভোগ করতে লাগলো। চোখ বন্ধ করেই আবদারের স্বরে বলে উঠলো…..
–একটা গান শুনাবেন মিস্টার অভদ্র? তবে অবশ্যই গান’টা আমি সিলেক্ট করে দিব…..
ফাইজার আবদারে ফারদিন মুচকি হেসে ঠোঁট কামড়ে বললো…..
–একটা রোমান্টিক গান হলে কিন্তু দারুন হবে। সাথে হালকা-পাতলা রোমান্স ও করতে পারব। কি বলো জান?
ফাইজা মুখ’টা সামান্য ফুলিয়ে বলে উঠলো…..
–নাহ আমার ফেবারিট গান’টা গাইতে হবে প্লিজ…..
ফারদিন ভাবুক স্বরে বলে উঠলো….
–তুমি কখনো আমাকে বলো’নি তোমার প্রিয় গান’ কি? তাহলে নাম না বললে কি করে গাইব?
ফাইজা গানের নাম’টা বলতে’ই ফারদিন চিন্তায় পড়ে গেলো। কারন এই গান’টা ও শুনলেও সুর ভালো করে উঠাতে পারেনা। তাও চেষ্টা করতে লাগলো। ফাইজা দোলনায় দোল খাচ্ছে আর ফারদিন ওর সামনে’ই একটা গাছের সাথে হেলান দিয়ে দাড়িয়ে গিটারে সুর তুলতে লাগলো। বাসার থেকে বের হওয়ার সময় কাঁধে করে গিটার নিয়ে এসেছিলো। এই আবদার’টাও ফাইজা’র। কিন্তু হাতে যেহেতু ব্যাথা তাই গিটার বাজাতে বারন করেছে ফাইজা। কিন্তু ফারদিন সে কি আর কারোর কথা শোনার পাত্র৷ ব্যাথা যেহেতু বাম হাতে তাই মনের মাধুরি মিশিয়ে সুর তুলে গাইতে শুরু করলো…….
“চলতি সময় থমকে দাড়ায়”
জেগে জেগে স্বপ্ন দেখি হায়
তোমার এই হাত ধরতে চায়
ফাগুন হাওয়ায়””
এইটুকু গেয়ে ফাইজার সামনে এসে ওর হাত’টা শক্ত করে ধরে হাতের উল্টো পাশে চু’মু খেয়ে আবার গাইতে শুরু করলো।
কি মায়ার কোন সে নেশায়…
বারে বারে মন ছুঁতে চায়
চেনা মুখ ঘোর পাঁক খায়..
চোখের পাতায়……
এইটুকু গেয়ে এইবার ফাইজার চোখের পাতায় ডিপলি চু’মু খেয়ে আবার উঠে গিয়ে গিটার’টাকে কাঁধে ঝুলিয়ে গাইতে শুরু করল…..
আমি বার বার বহুবার তোমাকে চাই…..
আমি বার বার হাজার বার তোমাকে চাই….
এইটুকু গেয়ে ফাইজার দিকে হাত বাড়িয়ে দিতে’ই ফাইজা ফারদিনের’ হাত’টা ধরতে’ই ফারদিন এক টানে ফাইজা’কে নিজের সাথে মিশিয়ে নিলো। ফারদিনের গলা জড়িয়ে ধরে ওর চোখে চোখ রেখে এইবার ফাইজা গাইতে শুরু করলো…….
“” তুমি আমি আর নিরব’তা”
শুনতে পাও এই মনের কথা..
ঘোর আঁধারে ও তোমায় দেখি…
তুমি কবিতা ও তুমি কবি……
বলে ফারদিন’কে ছেড়ে দিতে’ই ফারদিন আবারো গিটার বাজানো শুরু করলো। ফাইজা একটু সামনে এগিয়ে গাইতে শুরু করলো….
আজ কাল মন ডুবে যায়..
অনুভবে তুমি ভাসো তাই…
এই আমি না চেনে আমায়
চেনায় না…..
আমি বার বার বহুবার তোমাকে চাই
আমি বার বার হাজার বার তোমাকে চাই…..
ফাইজা এইটুকু গাইতে’ ফারদিন ও সাথে তাল মিলিয়ে গাইতে শুরু করলো…..
আমি বার বার বহুবার তোমাকে চাই
আমি বার বার হাজার তোমাকে চাই…..
গান’টা শেষ হতে’ই ফাইজা’ শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো ফারদিন’কে। ফারদিন ও ফাইজা’র কপালে আলতো করে ঠোঁট ছুঁয়ে বলে উঠলো…..
–যতবার এই পৃথিবী’তে জন্মানোর সুযোগ পাবো ততবার যেনো শুধু তোমাকে পাই। আমি বার বার বহুজনম শুধু তোমাকে চাই জান……
ফাইজা লাজুক হেসে ফারদিনের তালে তাল মিলিয়ে বললো…….
–আমি বার বার লক্ষকোটি বার আপনাকে চাই জনাব…….
বলে ফারদিনের গলায় চুমু খেয়ে নিজেই লজ্জা পেয়ে ফারদিনের বুকে মুখ লুঁকালো। আর ফাইজার বোকা কান্ডে ফারদিন উচ্চস্বরে হেসে দিলো। হঠাৎ কয়েকজনের জোরে শিস বাজানোর সাথে হাত-তালির শব্দে ফারদিন ফাইজ দুজনে’ই হকচকিয়ে উঠে সামনে তাঁকাতেই দেখলো চার-পাঁচটা ছেলের সাথে তিনজন মেয়ে। ওরা সবাই একসাথে দাড়িয়ে শিস বাজাচ্ছে আর হাততালি দিচ্ছে। ফারদিন ফাইজা ছেলেমেয়ে গুলোর দিকে তাঁকাতেই ওরা সামনে এগিয়ে আসলো। ওদের মধ্যে থেকে একজন মেয়ে এগিয়ে এসে ফারদিনের দিকে হাত বাড়িয়ে হ্যান্ডশেক করে বলে উঠলো…….
–আমি নেহা আর ওরা সবাই আমার ফ্রেন্ড। আমরা সবাই মিলে এইদিক’টায় মিউজিক ভিডিও করার জন্য এসেছিলাম। আর এসে যে এত সুন্দর একটা দৃশ্য দেখব সত্যি ভাবিনি। বিশ্বাস করুন আপনাদের দুজন’কে একসাথে চোখ জুড়িয়ে যাওয়ার মতো সুন্দর লাগছে। আমরা ওইদিক’টায় ছিলাম বলে আপনারা হয়তো খেয়াল করেন’নি। যখনি আপনি এই আপু’কে দোল দিচ্ছিলেন তখন দৃশ্য’টা খুব বেশি সুন্দর লাগছিলো। যেহেতু ক্যামেরা হাতে’ই ছিলো তাই আপনাদের পারমিশন না নিয়ে’ই কতগুলো ছবি তুলে নিয়ে ভিডিও করা শুরু করলাম আর এতক্ষনের পুরো’টা সময় আমরা ক্যামেরায় বন্দি করে নিয়েছি। উই আর সো সরি পারমিশন ছাড়া’ই ছবি ভিডিও করার জন্য…….
মেয়ে’টার কথা শুনে ফারদিন হালকা হাসলেও ফাইজা হা করে তাঁকিয়ে আছে। লজ্জায় ওর মাটির সাথে মিশে যেতে ইচ্ছে করছে। তারমানে এতক্ষনের সব কিছু ক্যামেরায় বন্দি হয়েছে। ইসস কি লজ্জা? ফাইজা লজ্জায় ফারদিনের পিছে মুখ লুকালো। ফাইজার লজ্জা পাওয়া দেখে ওরা সবাই এক সাথে হেসে দিলো। ফারদিন কিছুক্ষন ওদের সাথে কথা বলে ছবি গুলো নিজের ফোনে নিয়ে নিলো। ছবি আর ভিডিও গুলো আসলেই খুব সুন্দর হয়েছে। ওরা যাওয়ার সময় ফারদিন আর ফাইজার সাথে একটা সেল্ফী তুলে নিলো। ওরা সবাই চলে যেতে’ই ফাইজা কোমরে হাত দিয়ে রাগী দৃষ্টি’তে ফারদিনের দিকে তাঁকিয়ে বলে উঠলো….
–আপনার সাথে থাকার ফলে দিন দিন আমিও নির্লজ্জ হয়ে যাচ্ছি। আজ থেকে আর থাকব না আপনার সাথে……
বলে সামনে হাটা ধরলো। আর ফারদিন হা করে তাঁকিয়ে আছে। ও করলো টা কি? ফারদিন ফাইজা’র পিছু পিছু হাটছে আর বলছে…..
–ও জান। জান। ও জান। একটু বলো না আমি কি করেছি। জানননন……
ফারদিনের শেষে জান শব্দ’টা একটু টেনে জোরে বললো। ফাইজা এইবার কানে হাত দিয়ে জোরে চেঁচিয়ে বলে উঠলো….
–এই হাম্বার মতো রাস্তা ঘাটে চেঁচাচ্ছেন কেনো? মানুষ হাম্বা মনে করে গোয়াল ঘরে নিয়ে বেঁধে রাখবে। আইছে জান। মনে হচ্ছে তার জান কেউ টেনে নিয়ে যাচ্ছে। যতসব আজাইরা ঢং। একদম আসবেন না আমার পিছু পিছু। শা”লা খা’টাশ লজ্জা শরম কিছু নেই। আমার পিছু পিছু আসএ একদম ঘুষি মে/রে নাকের বারান্দা ছুটিয়ে দিব……
বলে বড় বড় পা ফেলে বাড়ির দিকে এগিয়ে গেলো। ফারদিনের মুখ’টা এতক্ষনে হা হয়ে আছে। এতগুলো কথা শুনিয়ে গেলো কোনো কারন ছাড়া’ই? কিসব বলে গেলো? খা’টাশ’ হাম্বার। উফফ আর ভাবতে পারলো না ফারদিন। মুখ ফুলিয়ে ফোস হয়ে একটা নিশ্বাস ছাড়লো। হাত দুটো কোমরে রেখে ঘাড় কাত করে একবার ফাইজার যাওয়ার দিকে তাঁকিয়ে একটু মুচকি হাসলো। আর মনে মনে ভাবলো “এই মেয়ে’টা কবে যেনো ও’কে পাগল বানিয়ে ফেলে”। ভাবতে লজ্জা পাওয়ার ভঙ্গি করে হাত দুটো দিয়ে মুখ ঢেকে মেয়েলী ভঙ্গী’তে অভিনয় করে বলে উঠলো…..
–হায় মা’রডালা। কি লজ্জা…….
এইটুকু বলেই নিজেই জোরে শব্দ করে হেসে উঠলো। একা একা’ই কোমরে হাত দিয়ে হেসে যাচ্ছে। তা ফাইজা দূর থেকে খেয়াল করে ওর দিকে রাগী চাহনী দিয়ে আছে। আর ফারদিন হাসতে হাসতে ওর দিকে এগিয়ে যাচ্ছে।
____________________________________________
জেহের নিজের রুমে বসে বসে ল্যাপটপে কিছু একটা করছিলো। এমন সময় ওর ফোন’টা বেজে উঠতে’ই স্কীনের থেকে চোখ সরিয়ে ফোনের দিকে চোখ দিতে’ই চেনা নাম’টা দেখে একটু হেসে ফোন রিসিভ করে কানে ধরতে’ই ওই পাশ থেকে ফুঁপিয়ে কান্নার শব্দ ভেসে আসলো। কান্নার কারন’টা জেহের বুঝতে পারলো। তাই একটু মজার স্বরে বললো…..
–বাচ্চা’টা কি এখনো দুপুরের বিষয় নিয়ে ভাবছে। আরজা লিস্টেন টু মি,তুমি এখনো বেশ ছোট। যত বড় হবে তত তোমার ভালো লাগা বাড়বে। চাহিদা বাড়বে। তোমার মধ্যে ম্যাচুরিটি আসবে। তখন তুমি আজকের দিনের জন্য পস্তাবে। তাই আগের থেকেই তোমাকে বুঝাচ্ছি আবেগ’টাকে লক করো। প্লিজ ডোন্ট ক্রাই……….
জেহের কথা গুলো বলে উঠতে’ই আরজা কান্নারত অবস্থায় চেঁচিয়ে ওপাশ থেকে বলে উঠলো…..
–খুব শিঘ্রই আমার বিয়ে। আপনাকে আর আজকের পর কেউ বিরক্ত করবে না। আমি বাচ্চা, ইমম্যাচুর, আমার ভালোবাসা’টা আবেগ তাইনা। খুব ঠান্ডা মাথায় আমাকে অপমান করলেন তো। ঠিক আছে সমস্যা নেই। আমি আপনাকে ভালোবাসি কিনা সেটা শুধু আমি জানি তাই আপনার করা অপমান গুলো মেনে নিলাম। আপনার উপর কোনো অভিযোগ নেই। ভালো থাকবেন আপনি। আজকের পর আর কেউ আপনাকে বিরক্ত করবে না। শুধু একটা কথা মনে রাখুন” আমি সত্যি আপনাকে খুব ভালোবাসি জেহের” খুব বেশি ভালোবাসি” আমি কোনো দিন অন্য কাউকে বিয়ে করতে পারব না। দরকার পড়লে আমি সুইসাইড করব। বাড়ি ছাড়ব তাও অন্য কাউকে বিয়ে করব না।
বলেই কাঁদতে লাগলো। তখনি এক বিকট শব্দে ফোন’টা কেটে গেলো। জেহের ঠিক বুঝতে পারলো এই মুহূর্তে অপরপাশের মানুষ’টা ফোন’টাকে ছুড়ে মে’রেছে। আরজার কথাগুলো শুনে জেহের মন’টা নিমিশেই খারাপ হয়ে গেলো। নিজে নিজেই বলে উঠলো…..
–একটু বেশি সিরিয়াস হয়ে গেলো নাকি ব্যাপার’টা। যদি কিছু করে বসে…. ওহ নো…….
বলেই জেহের ফোন’টাকে পকেটে ঢুকিয়ে এক প্রকার দৌড়ে বেড়িয়ে গেলো।
#গোধূলি_লগ্নের_সেই_তুমি
#লেখনীতে_জেনিফা_চৌধুরী
#বোনাস_পর্ব
সুই’সা’ইড করতে যেয়ে গলায় দড়ি প্যাঁচিয়ে কোনো মেয়ে ফিল্টার লাগিয়ে সুন্দর পোছ দিয়ে ছবি তুলতে পারে ভাবতে’ই জেহেরের মাথা ঘুরে যাচ্ছে। দরজার আড়ালে দাড়িয়ে পর্দায় মুখ লুঁকিয়ে দাড়িয়ে দাড়িয়ে আরজার কান্ড দেখছে জেহের। আর আরজা চেয়ারের উপর দাড়িয়ে দাড়িয়ে সুন্দর সুন্দর কয়েক’টা ছবি তুললো। কিছু বিভিন্ন স্টাইলে তুললো। আর কিছু ছবি’তে মুখ’টাকে অসহায় করে চোখে ড্রপ দিয়ে পানি বানিয়ে তুলছে। এইসব দেখেই জেহেরের মন চাচ্ছে নিজেই ওই দড়ি’তে ঝুলে পড়তে। জেহের জানতো এই মেয়ে জীবনে সুই’সা’ইড টুইসাইড করব না। তাও ওইযে মন মানতে চায়’নি তাই ছুটে এসেছিলো। আর ছুটে এসে এইসব কান্ড দেখবে ভাবতে’ই ওর চেহারার রং পাল্টে যাচ্ছে। ছবি তোলা শেষ হতে’ই আরজা সাবধানে চেয়ার থেকে নেমে দড়ি’টা’কে খুলে রেখে দিলো। তারপর বিছানায় বালিশ কোলে নিয়ে বসে মুখে দুষ্টু হাসি রেখে বলে উঠলো…..
–মিস্টার জেহের আদনান আমাকে বাচ্চা বলা। আমার ভালোবাসা নাকি আবেগ। এখন বুঝবেন আবেগ কাকে বলে। আবার বড় মুখ করে বলছেন অন্য কাউকে ভালোবাসি। ওই শা’ক চু’ন্নি’কে একবার পাই ন্যাড়া করে রাস্তায় ছেড়ে দিব। আমার জেহেরের দিকে নজর দেওয়া শুধু একবার জানতে পারি কে তার ওই পেয়ারি ভালোবাসার মানুষ তারপর দেখাব মজা। আর মিস্টার জেহের আদনান আজ যদি আপনাকে দিয়ে ভালোবাসি শব্দ’টা না বলাতে পারছি তাহলে আমার নাম ও আরজা না। হুউউ…..
বলে আঙ্গুল দিয়ে নাক’টা ঘষে ফোস করে একটা নিশ্বাস ছাড়লো। তারপর পূর্বের মতো কাঁদো কাঁদো ফেস করে কাউকে কল দেওয়ার জন্য ফোন’টা হাতে নিলো। জেহের বুঝতে পারলো ফোন’টা ওর কাছে’ই আসবে তাই আগেই দৌড়ে আরজা রুমের সামনে থেকে চলে আসলো। আরজা’র কল’টা রিসিভ করে কানে ধরতে’ই আরজা কাঁদো কাঁদো স্বরে বলে উঠলো……..
—আমি চলে যাচ্ছি। আর কখনো আপনাকে বিরক্ত করব না। শুধু শুনে রাখুন আমার মৃ’ত্যুর জন্য দায়ী থাকবেন আপনি আর আপনার গার্ল ফ্রেন্ড। ভালো থাকবেন..
আরজার কথাগুলো শুনে জেহের হাসবে নাকি কাঁদবে বুঝতে না পেরে এক মুহূর্তের জন্য কোমায় চলে গেলো। একটা মানুষ এমন অভিনয় করতে পারে। আরে ও তো সিনেমায় কোনো অডিশন ছাড়াই চান্স পেয়ে যাবে। এই মেয়ে’টাকে সারাজীবন কি করে সামলাবো? কথাগুলো ভেবে জেহের আনমনেই বলে উঠলো…..
–ভালোবাসা কাঠালের আঠা লাগলে পরে ছাড়ে না…….
এই মুহূর্তে জেহের কাছ থেকে এমন কথা আশা করে’নি আরজা। ও সু/ইসাইড করতে যাচ্ছে শুনেও কোনো রিয়েক্ট করলো না ভেবেই আরজা ভ্যাঁ করে কেঁদে দিলো। আরজার কান্নার শব্দ শুনে জেহের ধ্যান ফিরে এলো। ভ্যাবাচেকা খেয়ে প্রশ্ন করলো….
–কি হলো কাঁদছো কেনো?
আরজা কাঁদতে কাঁদতে’ই জবাব দিলো…..
–জানেন আজ আমার একটা গান খুব মনে পড়ছে। এইবার প্রশ্ন করেন গান’টা কি তাহলে বলব?
জেহের ও হাবলার মতো মুখ করে প্রশ্ন করলো……
–কি গান বলো?
এইবার আরজা একটু নাক টেনে বেসুরে চেঁচিয়ে গাইতে শুরু করলো….
“বলবো নাকো আর কোনোদিন ভালোবাসো তুমি মোরেএএএএএএ”
বলবো নাকো আর কোনোদিন ভালোবাসো তুমি মোরেএএ..
বলে ছিলে গোওওওওওও ভালোবাসি গোওওওওও……
আর শুনতে পারলো না জেহের। এমন বেসুরে গলায় কেউ গান গাইতে পারে। জোরে চেঁচিয়ে ধমকের স্বরে বলে উঠলো…..
—চুপ। একদম চুপ। আর একটা শব্দ তোমার গলা থেকে যেনো বের না হয়।
জেহের ধমকে আরজা থতমত খেয়ে উঠলো। কি করলো ও? একটা দুঃখের ছ্যাকা খাওয়া গান এই তো গাইতে ছিলো। তারজন্য এভাবে ধমক দেওয়া লাগে। ভেবে আরজা ন্যাকা স্বরে বলে উঠলো……
—সত্যি আজকের পর আর বলবো না ভালোবাসি। ভালো থাকবেন ফ্যানের ঝুলানো দড়ি’টা ডাকছে আমায়…..
বলে জেহের’কে আর কোনো কথা বলার সুযোগ না দিয়ে ফোন রেখে দিলো আরজা। জেহের এখনো থ হয়ে আছে। একটা মেয়ে এমন পাগল টাইপ কি করে হয়? আরজা ফোন কে’টে ফোন’টাকে বুকে জড়িয়ে ধরে মুখ বাঁকিয়ে বলে উঠলো……
–এইবার আর আমার চুনাময়না’টাকে আছাড় মা/রব না। আমার এত্ত সাধের মোবাইল ওই ম’ক্কেলের জন্য কেনো আছাড় দিব……
তখন আরজার পুরনো ফোন’টাকে আছাড় মে/রেছিলো। আরজা এইবার খুশিত্ব গদগদ হয়ে বলে উঠলো….
-এখন হবে আসল খেলা। আসুন মিস্টার জেহের আসুন। এসে সিনেমা স্টাইলে বলবেন……
এইটুকু বলে মুখের ভঙ্গিমা চেঞ্জ করে খাট থেকে নেমে ড্রেসিং টেবিলের সামনে গিয়ে অভিনয় করে বলতে লাগলো…..
–নাহ প্রিয়া থুক্কু প্রিয়া না আরজা। নাহ আরজা না তুমি আমাকে ছেড়ে চলে যেতে পারো না। আমি অন্য কাউকে ভালোবাসি না। আমি শুধু তোমাকেই ভালোবাসি। তুমি ম’রতে পারো নাহহহ……
এইটুকু অভিনয় করে নিজেই নিজেকে বাহবা দিতে নিজের কাঁধে নিজেই চাপ’ড় মে/রে বললো….
–বাহ আরজা বাহ তুই তো খুব ভালো অভিনয় পারিস। খুব শিঘ্রই তুই সিনেমায় চান্স পেয়ে যাবি…..
কথাগুলো বলে ঢং করে একটু লাজুক হাসলো আরজা। এমন সময় দরজা থেকে কেউ গম্ভীর কন্ঠে বলে উঠলো…..
–জ্বী আপনি খুব শিঘ্রই হলিউড সিনেমায় হিরো আলমের সাথে চান্স পেয়ে যাবেন……
চেনা কন্ঠ স্বর শুনেই আরজা থতমত খেয়ে পেছনে তাঁকিয়ে জমে গেলো। জেহের কে দরজায় রাগী ফেস করে দাড়িয়ে থাকতে দেখে আরজা চোখ বড় বড় করে জোরে চেঁচিয়ে বলে উঠলো…..
–মৃ”ত্যুর আগে আপনাকে স’চোক্ষে দেখতে পারব ভাবিনি জেহের। আমার সময় শেষ। জোরে জোরে পড়ুন ইন্নালিল্লাহি ওয়াইন্না’ইলাইহি রাজিউন…..
এইটুকু বলেই মাথায় হাত দিয়ে ঘুরতে লাগলো। আর ভাবতে লাগলো…..
–নিচে পড়লে শিউর আমার মাঝা কোমড় ভাঙ্গবে। কিছুতে’ই নিচে পড়া যাবেনা….
এইটুকু মনে মনে বলে ঘুরে বিছানার সামনে গিয়ে ধপ করে বিছানায় পড়ে গেলো। আরজা’র কাহিনী বুঝতে না পেরে জেহের ও কিছু’টা ঘাবড়ে গেলো। একটু ভয় পেয়ে জোরে আরজা বলে ডেকে আরজার সামনে গিয়ে বসে ওর মাথা’টা কোলে তুলে নিয়ে পা’গলের মতো ডাকতে লাগলো আরজা’কে। আর আরজা জেহের অস্থিরতা শুনে মনে মনে পৈশাচিক আনন্দ অনুভব করছে। জেহের আরজার নাকের সামনে হাত নিয়ে নিঃশ্বাস চেক করলো। এইবার আরজার মুখের দিকে ভালো ভাবে লক্ষ্য করতে দেখলো আরজার চোখ পিট পিট করছে। জেহের খুব ভালো ভাবে বুঝতে পারলো আরজা এখনো নাটক করছে। তাই সুযোগ বুঝে আরজার গালে মশা বলে জোরে একটা থা’প্প’ড় মে/রে বসলো। থা’প্প’ড় খেয়েই আরজা “ও মাগো” বলে উঠে বসে গাল ডলতে ডলতে বলে উঠলো …..
–এত জোরে কেউ থা’প্প’ড় মা/রে? আপনার কি মায়া দরদ বলতে কিছু নেই…..
এইবার জেহের অসহায় মুখ করে বলে উঠলো….
–খুব জোরে লেগেছে তাইনা।
আরজাও জেহেরের সাথে অসহায় ফেস করে মাথা ঝুলালো। যার মানে “হ্যা” খুব জোরে লেগেছে। এইবার জেহের আরজা’কে চমকে দিয়ে আরেক গালে দ্বিতীয় বার থা’প্প’ড় দিয়ে বলে উঠলো….
–আসলে তুমি তো বলেছিলে তুমি সুই/সা’ইড করেছো। আর তখন তোমার গালে একটা ইয়া বড় মশা বসেছিলো তাই ভাবলাম আহারে বেচারি’কে মশা’টা কামড় দিলে খুব খারাপ হবে। তাই, আর কি একটু জোরেই মশা’কে মা/রছিলাম। ভালো করেছি না আরজু বেবিইইই……
আরজা এখনো গালে হাত দিয়ে বোকা বোকা মুখ করে চেয়ে আছে জেহেরের দিকে। জেহের এইবার কিছু না বলে মুখে দুষ্টু হাসি ফুটিয়ে ভ্রু নাচালো। তখনি ফোন’টা বেজে উঠতে জেহের পকেট থেকে ফোন বের করে কানে ধরেই আদুরে স্বরে বলে উঠলো…..
–হ্যালো প্রিয়াঙ্কা। বেবি আমি তো তোমার কথা’ই ভাবছিলাম। তোমাকে কত্ত মিস করছিলাম জানো। আই লাভ ইউ বেবি। উম্মাহহহহহ……
বলে কথা বলতে বলতে রুম থেকে বেড়িয়ে গেলো। আর আরজা যেনো আকাশ থেকে পড়লো। তার মানে সত্যি জেহেরের গার্লফ্রেন্ড আছে। এইটুকু শুনে’ই আরজার এতক্ষনের সব দুষ্টু’মি বুদ্ধি গুলো হাওয়া হয়ে গেলো। মুখ’টা বেলুনের মতো চুপসে গেলো। চোখের পাতা গুলো ভারী হয়ে আসলো। গাল বেগে মোটা করে গড়িয়ে পড়তে লাগলো নোনা জল। বুকের ভেতর মুচড়ে উঠলো। এতক্ষনের হাসির আমেজ টা মুখ’ থেকে উধাও হয়ে গেলো। ভেবেছিলো জেহের ও’কে ভালোবাসে কিন্তু স্বীকার করছেনা। তাই এতক্ষন ওত সব কিছু নাটক করছিলো। কিন্তু এখন আর কিছু ভাবলো না আরজা জড়ানো কন্ঠে বললো….
–তারমানে আপনি সত্যি অন্য কাউকে ভালোবাসে জেহের ভাইয়া। আমাকে একবার ভালোবাসলে কি হতো? আমি যে আপনাকে সত্যি খুব বেশি ভালোবাসি…..
এইটুকু বলে বালিশে মুখ গুঁজে ডুকরে কেঁদে উঠলো। আর জেহের দরজার আড়াল থেকে দেখে মুখে হাসি ফুটিয়ে বলে উঠলো…..
–দুইদিন পর তোমার বিয়ে। আমি তোমাকে সারাজীবন খুব হাসি খুশি দেখতে চাই ড্রামাকুইন। তাই বিয়ের আগে একটু কান্না করিয়ে নিচ্ছি তার জন্য সো সরি মাই ড্রামাকুইন…….
#গোধূলি_লগ্নের_সেই_তুমি
#লেখনীতে_জেনিফা_চৌধুরী
#পর্ব_ছত্রিশ [Mehendi_special]
সময় সময়ের তালে বয়ে চলেছে। সব বিষন্নতা কষ্ট ভুলে শুরু হতে চলেছে নতুন অধ্যায়। আজ ফাইজা আর ফারদিনে’র মেহেন্দী। দুজনের মেহেন্দীর অনুষ্ঠান ফারদিনের বাড়ি’তে’ই আয়োজন করা হয়েছে। গায়ে হলুদ মেহেন্দী দুই’টাই ফারদিনের বাড়ি’তে হবে। আর বিয়ে’টা দুজনের বাড়িতে। ফারদিন আজ সাদা আর কালো কম্বিনেশনে পাঞ্জাবী পড়েছে। চুল গুলো শ্যাম্পু করায় আরো বেশি সিল্কি হয়ে গেছে। হাতে একটা কালো ঘড়ি। মুখে রয়েছে সেই ভুবন ভুলানো হাসি। যা দেখে কোনো মেয়ে ক্রাশ খেলেও খেতে পারে। জেহের ও ফারদিন’কে আজ মনে হচ্ছে জমজ ভাই। দুজনেই সেম ড্রেস,ঘড়ি,জুতা। ওরা দুজন সব ঠিক ঠাক সাজানো হয়েছে কিনা তা তদারকি করছে। উপরের রুমে সাজানো হচ্ছে ফাইজা’কে। ফাইজা সিল্কের একটা সাদা শাড়ি পড়েছে। সাথে তাজা লাল গোলাপ ফুলের গহনা। মুখে হালকা সাজ। দেখতে বেশ মিষ্টি লাগছে। কাকতালীয় ভাবে আজ আরজা’কেও ফাইজা’র মতো সাজানো হয়েছে। সেদিনের পর আরজা আর জেহের সামনে আসে’নি। জেহের কয়েকবার গিয়েছিলো ওদের বাড়ি। কিন্তু, আরজা জেহেরের সামনে আসে’নি। আজ যত’ই হোক বেস্ট ফ্রেন্ড এর মেহেন্দী না এসে কি থাকা যায়। আরজা প্রথমে আসতে রাজি হয়’নি৷ কারন, জেহের’কে দেখে নিজেকে সামলাতে পারবে না। কিন্তু, ফাইজা তো আর শুনবার পাত্রী নয়। পার্লার থেকে লোক এসে ওদের সাজিয়ে দিয়েছে। আরজা প্রথমে বুঝতে পারে’নি। সাজানোর আগে অনেক বার বারন করেছে। কিন্তু কেউ শুনে’নি। তাই সাজানো শেষ হতে’ই ড্রেসিং টেবিলের সামনে গিয়ে নিজের সাজ দেখে মুখ হা করে অবাক স্বরে বলে উঠলো…..
—আজ কার মেহেন্দী। আমার নাকি তোর তাই তো বোঝা যাচ্ছে না। সবাই তো ভাববে আমাদের দুজনের এই বিয়ে?
আরজার কথা শুনে ফাইজা মুখ টিপে হেসে জবাব দিলো…..
— হ্যা, দুজনের এই তো বিয়ে…..
এইটুকু বলেই মুখে হাত দিয়ে থেমে গিয়ে মনে মনে বলে উঠলো….
–এই রে এক্ষুনি সত্যি ফাঁস হয়ে যাচ্ছিলো৷ ভাইয়া আমাকে গনোধোলাই দিবে। ফাইজা, কন্ট্রোল কন্ট্রোল……
ফাইজা পূর্নরায় কিছু বলতে যাবে তার আগেই আরজা সন্দিহান দৃষ্টি’তে ফাইজার দিকে তাঁকিয়ে বলে উঠলো…..
–থেমে গেলি কেনো? দুজনের বিয়ে মানে?
এইবার ফাইজা থতমত খেয়ে আমতা আমতা করে বললো…..
–ইয়ে হ্যাঁ। মানে না। ধুর হ্যাঁ, দুজনের এই তো বিয়ে আমার আর উনার।
বলেই লাজুক হাসলো ফাইজা। এই প্রথম ফাইজা ফারদিন’কে উনি বলে সম্মোধন করলো। এতে আরজা চোখ বড় বড় তাঁকিয়ে থেকে বললো…..
–আরে বাহহ। উনি আহা কি মধুর প্রেম। দোয়া করি তোরা সারাজীবন এমন করে’ই সুখে থাক।
বলতে’ই আরজার গলা আটকে এলো। চোখে জল এসে ভীড় করলো। বুকের ভেতর’টা চে’পে আসলো। অসহ্য যন্ত্রনা অনুভব হতে লাগলো। আজ যদি জেহের ও আমাকে ভালোবাসতো তাহলে আমাদের বিয়ে’টাও এত’টাই সুখের হতো। এইটুকু ভেবে’ই আরজা চোখের জল লুঁকাতে রুম থেকে বেড়িয়ে গেলো। আর ফাইজা ওর দিকে অসহায় চোখে তাঁকিয়ে থেকে বলে উঠলো…..
–আমি জানি তুই অনেক কষ্ট পাচ্ছিস। ভাইয়া’টা কেনো তোকে এত’টা কষ্ট দিচ্ছে কে জানে? তবে বিয়ের দিন যেই সারপ্রাইজ’টা পাবি সেদিন তোর সব দুঃখ ঘুঁচে যাবে…….
বলে একটা স্বস্তির নিশ্বাস ছাড়লো।
____________________________________________
আরজা সিড়ি সামনে এসে নিচে তাঁকিয়ে থেমে গেলো। জেহের’কে আজ কি সুন্দর লাগছে। মুখের হাসি’টা মন কেড়ে নেওয়ার মতো। আরজা ওর দিকে তাঁকিয়ে আনমনে বলে উঠলো…..
–কি হতো আমাকে একবার ভালোবাসলে জেহের ভাইয়া? আমার খুব কষ্ট হচ্ছে। আপনাকে ছেড়ে আমি অন্য কাউকে বিয়ে করতে পারব না।
বলতে না বলতে ওর চোখ বেয়ে শ্রাবন ধারা নামতে শুরু করলো। কাঁধে কারোর হাতের স্পর্শ পেয়ে আরজা তাড়াতাড়ি চোখের জল মুছে মুখে হাসির রেখা টেনে পেছনে তাকালো। ফাইজা’কে দেখে মুখের হাসি’টা চওড়া করে কিছু বলতে যাবে তার আগেই কোথা থেকে তনুজা এসে তাড়া দিয়ে বলে উঠলো….
–তোরা এখনো এখানে দাড়িয়ে কেনো? ওইদিকে সবাই বসে আছে তোদের জন্য। তাড়াতাড়ি চল….
বলেই ওদের দুজন’কে নিয়ে নিচে নামতে লাগলো। আরজা’কে না চাইতেও মুখে হাসি ধরে রাখতে হচ্ছে।
____________________________________________
ফারদিন আর জেহের পাশাপাশি বসে আছে। স্টেজের সোফায়৷ চারদিকে নানা রকম ফুল বাতি দিয়ে সাজানো। সিড়ি দিয়ে ফাইজা আর আরজা দুজন’কেই নামতে দেখে ওরা দুজনে’ই হাবলার মতো চেয়ে রইলো। ফাইজা নিচে নেমে এসে ফারদিনের দিকে তাঁকাতেই ফারদিন হাত দিয়ে ওয়াও দেখালো। ফাইজা লজ্জা মাখা হাসি দিয়ে উঠলো। ফারদিনের বরাবর অন্য একটা স্টেজে সোফা বিছানো। সেখানে আরজা আর ফাইজা’কে পাশাপাশি বসানো হলো। ওরা সবাই বসতে’ই জেহের মাইক্রোফোন হাতে নিয়ে সবার উদ্দেশ্যে বলতে শুরু করলো…….
–আজ সবাই’কে আরেক’টা খুশির খবর দিতে চাই। আমরা ভাই বোন মিলে একটা ডিসিশন নিয়েছি যে, আমরা দুজনে এক সাথে দুজনের ভালোবাসার মানুষ’টাকে বিয়ে করব। আশা করি সবাই বুঝতে পেরেছেন আমার কথা। মানে আজ আমার ও মেহেন্দীর অনুষ্ঠান হবে……
জেহের কথা শেষ হতেই চারদিকে কড়ো-তালির শব্দে মুখরিত হতে লাগলো। আরজা যেনো আকাশ থেকে পড়লো। মুহূর্তে’ই চারদিক ঘূর্নিপাকের মতো ঘুরতে লাগলো। গলায় এসে নিঃশ্বাস আটকে রইলো। চারপাশের কোনো শোরগোল ওর কান অব্দি পৌঁছালো না। কিছু সময়ের জন্য ও নিথর পাথরে পরিনত হলো। আরজা’কে নিস্তব্ধ দেখে জেহের ফাইজা’র দিকে অসহায় চাহনী দিতে’ই ফাইজা চোখের ইশারায় কিছু বুঝালো। তারপর আরজা’কে ধাক্কা দিয়ে খুশি মনে বলে উঠলো……
—কিরে তুই চুপ করে গেলি কেনো? আমার যে কি খুশি লাগছে। তোর খুশি লাগছে না।
ফাইজা’র কথায় আরজা নিজের ধ্যানে ফিরে এসে হকচকিয়ে বলে উঠলো….
–হ্যাঁ, খুশির খবর তো। আমার ও খুব খুশি লাগছে। দুটো বিয়ে খাবো……..
চেষ্টা করেও মুখে হাসি ফুটাতে পারলো না আরজা। ভেতরে যেই ঝড় বইছে তা কি করে বুঝাবে ও সবাই’কে। এই যন্ত্রনা বুঝার মতো কেউ নেই ওর। নিজের চোখের সামনে নিজের ভালোবাসার মানুষ’টাকে অন্যের সাথে বিয়ের পিরিতে বসতে দেখতে হবে। এই মৃ/ত্যু যন্ত্রনা ও কি করে সহ্য করবে? সব যন্ত্রনা ভেতরে চে’পে রেখে মুখে হাসি ফুটিয়ে শুরু করলো মেহেন্দী অনুষ্ঠান। অনুষ্ঠান শুরু হলো ফারদিন আর ফাইজা’র কাপল ডান্স দিয়ে।
“Tumko paya hai to ”
jaise khoya hoon
kehna chahoon bhi
to tumse kya kahoon”
গান’টায় বেশ রোমান্টিক একটা ডান্স হলো ফারদিন ফাইজা’র। নাচ শেষ হতে’ই আরজা নিজেই ফাইজার হাতে খুব সুন্দর করে মেহেদী লাগিয়ে দিতে লাগলো। হাতের মাঝে ফারদিনের নামের অক্ষর’টা বসিয়ে দিলো। ফাইজা’র মেহেদী দেওয়া শেষ হতে’ই আরজা ফারদিনের হাতে মেহেদী লাগিয়ে দিলো। আর ওদের কিছু কাজিন আত্মীয় স্বজন মিলে গান বাজনা নাচে ব্যস্ত। সবাই মিলে তা উপভোগ করছে। ফারদিনের হাতে মেহেদী লাগানো শেষ হতে’ই আরজা স্টেজ থেকে নামার জন্য পা বাড়াতে’ই জেহের বলে উঠলো…..
–আজ তো আমার মেহেন্দী। তাহলে আমাকেও মেহেদী লাগিয়ে দাও তো বাচ্চা।
জেহের কথা শুনে আরজা ভেতর থেকে ভেঙে গেলেও মুখে চওড়া একটা হাসি ফুটিয়ে বলে উঠলো……
—হ্যাঁ দিচ্ছি জেহের ভাইয়া।
বলেই বুকের ভেতরে চা’পা যন্ত্রনা জেহেরের জাতে মেহেদী লাগিয়ে দিতে লাগলো। শেষ পর্যায়ে জেহের হাতে পিয়াঙ্কা নামের অক্ষর লিখতে গেলে জেহের বাধা দিয়ে বলে উঠলো…..
–আরে আরে কি করছো? “পি” লিখছো কেনো?
জেহের এই প্রশ্নে আরজা অবাক হয়ে জবাব দিলো
..
–আপনার ভালোবাসার মানুষ’টার নাম তো পিয়াঙ্কা তাই “পি” লিখছি…
এইবার জেহের একটু বিরক্ত নিয়ে উওর দিলো…..
–তোমাকে কে বলেছে এক লাইন বেশি বুঝতে। ওর ডাক নাম পিয়াঙ্কা কিন্তু আসল নাম “এ” দিয়ে তাই “এ” লিখো……
এইবার আরজার বুক’টা খানিক’টা কেঁপে উঠলো। নিজের নামের অক্ষর’টা জেহের হাতে লিখতে ওর বুক কাঁপছে। কি আশ্চর্য নামের অক্ষর এক কিন্তু মানুষ দুটো ভিন্ন। এইটুকু ভেবে একিটা দীর্ঘ শ্বাস ছেড়ে জেহেরের হাতে সুন্দর করে “Aj” লিখে দিলো। মেহেদী দেওয়া শেষ হতে’ই আরজা নিচে নেমে সবার সাথে নাচে যোগ দিলো। চারদিকে সাউন্ডবক্সে গান বাজচ্ছে।
“mehendi hai Rachne waali”
haathon mein gehri lali”
গান’টা বাজছে। আর আরজা তালে তালে সবার সাথে নেচে যাচ্ছে। জেহের মুগ্ধ নয়নে ওর দিকে তাঁকিয়ে আছে।
____________________________________________
সবার চোখের আড়ালে ফারদিন এসে ফাইজা’র হাত ধরে লুঁকিয়ে উপরে নিজের রুমে নিয়ে আসলো। এক হাত দিয়ে দরজা’টা বন্ধ করে ফাইজা’কে দরজার সাথে চে’পে ধরে মুগ্ধ নয়নে ওর দিকে তাঁকিয়ে রইলো। আর ফাইজা হা করে বলে উঠলো…..
–দিদা যদি দেখেছে আমরা একসাথে আপনাকে…..
আর বলতে পারলো না তার আগেই ফারদিন ফাইজা’র ঠোঁটে নিজের ঠোঁট ডুবিয়ে দিলো। ডিপলি একটা চুমু খেয়ে নেশাময় কন্ঠে বলে উঠলো…..
–অর্ধেক পাগল তো আগে’ই করে দিয়েছিলে। এখন কি পুরো পা’গল করার ধান্দায় নেমেছো জান…..
বলে ফাইজা’র গলায় মুখ ডুবালো। ফাইজা মুহূতে’ই আবেশে চোখ বন্ধ করে নিলো। দুই হাত মেহেদী ভর্তি। তাই চাইলেও ফারদিন’কে সরাতে পারছে না।আর ফারদিন সে তার প্রেয়সীর শরীরের ঘ্রানে ব্যস্ত………
#চলবে