#চিত্তদাহ
লেখনীতে : শুভ্রতা আনজুম শিখা
পর্ব ৪১
🍂🍂🍂
~অনেকক্ষণ ধরে বাড়ির বাহিরে দাড়িয়ে আছি মাহতাব। শুভ্রতা বাড়ি নেই। দারোয়ান বললো ঘন্টা দুয়েক আগে গিয়েছে। আমি এক ঘন্টা যাবত বাহিরে বসে আছি। ও আসছে না। কলও ধরছে না। আমার খুব চিন্তা হচ্ছে।
~চিন্তা করো না তমা। আমি দেখছি।
কল কেটে চিন্তিত ভঙ্গিতেই বসে রইলো তিলোত্তমা। বললেই তো আর চিন্তা ছেড়ে বসে থাকা যায় না। মেয়েটা সুস্থ হয়েছে বেশি সময় হয়নি। হাতের ফ্র্যাকচার মাত্র ঠিক হয়েছে। এই মেয়ে আবারো বাড়ির বাহিরে গিয়েছে কাউকে না জানিয়ে। আবার যদি কোনো অঘটন ঘটায়?
______________________________________
~কেমন আছো, আন্টি?
পরিচিত কণ্ঠে অচেনা ডাক শুনে পেছন ফিরে তাকালো নিতা। হাসিমুখে শুভ্রতা দাড়িয়ে। প্রথমে চিনতে একটু কষ্ট হলেও একটু সময় নিয়ে বুঝতে পারলো হ্যা এই মেয়েটাই শুভ্রতা। আগের থেকে অনেক শুকিয়ে গেছে, চোখের নিচে কালো দাগ। শুভ্রতাকে দেখে বেশ অবাক হলো নিতা। তবে প্রকাশ করলো না।
~তুই শুভ্রতা না?
~কেনো চিনতে পারছো না?
~তুই… আমাকে?
~তুমি করে বলছি কেনো? তাইতো?
নিতা থতমত খেয়ে গেলেন। শুভ্রতা আলতো হাসলো। নিতার হাত জড়িয়ে ধরে হাঁটতে হাঁটতে বললো,
~অতীত থেকে শিক্ষা নিয়েছি বুঝলে! কিছু স্বভাব পরিবর্তন জরুরি ছিল।
শুভ্রতার কথার মানে নিতা বুঝতে পারলো না। ভ্রু কুঁচকে রেনুর দিকে চাইলো। রেনু চোখ মুখ কালো করে তাদের পেছন পেছন হাঁটছে। কোনো কথা বলছে না। নিতা নিজ থেকেই প্রশ্ন করলেন,
~রেনু? তোর কি মন খারাপ?
রেনু ফট করে মাথা তুলে ওদের দিকে তাকালো। শুভ্রতার দিকে চেয়ে জোরপূর্বক হাসলো। ব্যস্ত ভঙ্গিতে বললো,
~আরে না খালাম্মা। এমনেই ভালো লাগতাছে না। কত ভিড় আজকে দেখছেন?
নিতা আশেপাশে তাকালো। চেষ্টা করলো ভিড় খুজার। হাতে গুনা কয়েকজন মানুষই ঘুরঘুর করছে এখানে। ভিড় কোথায় দেখলো সে? নিতা কথা বাড়ালো না।
~তোর মা কেমন আছে শুভ্রতা? অনেকদিন হলো দেখা হয় না।
মুহূর্তেই শুভ্রতা আর রেনুর হাসি মিলিয়ে গেলো। ব্যস্ত ভঙ্গিতে এদিক ওদিক চোখ বুলালো। লম্বা শ্বাস নিয়ে বললো,
~ভালো আছে।
একটু থেমে বললো,
~বাড়ি চলো তো আন্টি।
নিতা গেলো না। শুভ্রতার হাত টেনে ঠায় দাঁড়িয়ে রইলো। শুভ্রতা প্রশ্নসুচক দৃষ্টিতে তাকালো।
~রেনুর চোখে পানি কেনো শুভ্রতা? তোর মা কি ভালো নেই?
শুভ্রতা করুন চোখে রেনুর দিকে তাকালো। রেনু মুখে আঁচল চেপে কান্না শুরু করলো। শুভ্রতা ঢোক গিলে কম্পিত গলায় বললো,
~আম্মু মারা গেছেন দেড় মাস হলো।
নিতা বিস্ময়ের দৃষ্টিতে চাইলেন। উমা মারা গেলো আর সে জানে না। কই নুরও তো তাকে কিছু বললো না।
~তুই আমাকে একবার জানালিও না শুভ্রতা! নুরও কিছু বললো না।
~নুর আপায় কি কইবো খালাম্মা? হেয় তো নিজেই জানে না। কতবার কইতে চাইলাম, ফোন দিলাম ধরলো না।
রেনুর কথা শেষ না হতেই ধমকে উঠলো শুভ্রতা। চোখে মুখে ফুটে উঠলো রাগ। রেনু চুপ করে গেলো।
~তোর কি নুরের সাথে ঝগড়া হয়েছে?
~তোমার না কেনাকাটা শেষ? চলো তোমাকে বাড়ি পৌঁছে দেই।
নিতা নিঃশব্দে চলে এলো শুভ্রতার সাথে। শুভ্রতার কথা মনোযোগ দিয়ে শুনছে। এতসব ঘটে গেলো শুভ্রতা বা নুর কেউই জানালো না। তার চাপা অভিমান হলো।
~তুই নুরের সাথে একান্তে বসে ঠান্ডা মাথায় কথা বল। সব ঝামেলা মিটিয়ে নে।
~সে নিজের ভুল না বুঝা পর্যন্ত তাকে নিজ থেকে কিছু বলো না আন্টি।
নিতা শুভ্রতার মাথায় হাত বুলালো।
~দোয়া করি তোর জীবনের কালো মেঘ সরে গিয়ে সূর্যের আলোর দেখা মিলুক।
শুভ্রতা নিতার হাত ধরে বললো,
~ইন শাহ্ আল্লাহ।
~~~
চলবে~
(গত দুই মাসে পরিবারের কয়েকজনের মৃত্যু ঘটলো। এখন আবার ভাগ্নি হাসপাতালে ভর্তি। একের পর এক ঝামেলা। লেখালেখিতে মোটেও মন দিতে পারছি না। অপেক্ষা করানোর জন্য অত্যন্ত দুঃখিত 🙂 হ্যাপি রিডিং~)