চিত্তদাহ লেখনীতে : শুভ্রতা আনজুম শিখা পর্ব ৪৮

0
439

#চিত্তদাহ
লেখনীতে : শুভ্রতা আনজুম শিখা
পর্ব ৪৮

🍂🍂🍂

সারা ছাদ জুড়ে পায়চারি করছে শুভ্রতা। হাতে হুমায়ূন আহমেদের বই। মনোযোগ দিয়ে বই পড়ছে। তার সাথে পায়ে পায়ে হাঁটছে রোজ। হঠাৎই রোজের গায়ে পা বেঁধে পড়ে যেতে নিয়েও নিজেকে সামলে নিলো শুভ্রতা। শুভ্রতা কোমরে হাত রেখেই রোজের দিকে চেয়ে বিরক্তি মিশ্রিত গলায় বললো,
~এমন করছিস কেনো? দেখছিস না বই পড়ছি!

রোজ ফ্যাল ফ্যাল করে চেয়ে রইলো তার মুখপানে। শুভ্রতার মায়া হলো। রোজকে কাঁধে নিয়ে বলতে লাগলো,
~রোজ, গল্প শুনবি? ভীষণ সুন্দর গল্প। মনোযোগ দিয়ে শুনবি।

শুভ্রতা এবার রোজকে কাধে নিয়ে হাঁটতে লাগলো। রোজ ও শান্ত হয়ে শুভ্রতার মতোই ফ্যাল ফ্যাল করে বইয়ের দিকে চেয়ে রইলো। শুভ্রতার পূর্ণ মনোযোগ দ্বিতীয় বারের মত ভঙ্গ হলো রেনুর ডাকে,

~আপামনি আপনের ফোন আইছে।

এমন সময় কল আসে শুভ্রতা কিছুটা বিরক্তি বোধ করলো। বইয়ে দৃষ্টি স্থির রেখেই হাত বাড়ালো রেনুর দিকে। রেনু তার হাতে ফোন ধরিয়ে দিয়ে গুনগুন করতে করতে সিড়ি বেয়ে নেমে গেলো। শুভ্রতা কপালে সূক্ষ্ম ভাঁজ ফেলে তার যাওয়ার দিকে তাকালো। বিড়বিড় করে বললো,
~আশ্চর্য!

ফোনের ওপাশ থেকে মানুষটা শুভ্রতার অস্তিত্ব টের পেতেই লাগাতার তার নাম ধরে ডেকে যাচ্ছে। শুভ্রতা ফোন কানে রাখলো। সালাম দিতেই ওপাশের মানুষটা সালামের জবাব নিয়ে বলতে শুরু করলো,
~আমি জানি তুই চন্দ্রের ভালোর জন্যই ওকে নিজের থেকে দূরে সরিয়ে দিতে চাইছিস। আমিও চন্দ্রের ভালো চাই। আমি জানি সে কিসে ভালো থাকবে। তাই বলছি কিছুক্ষণের মধ্যেই চন্দ্র তোর কাছে পৌঁছাবে। সে তোকে একটা প্রশ্ন করবে। আমি মনে প্রাণে চাই তোর উত্তর যেনো “হ্যা” হয়। খবরদার না করবি না। অবশ্য না হলেও সমস্যা নেই। না কে কিভাবে হ্যা বানাতে হয় তা আমরা মা ছেলে দিব্যি জানি। রাখছি।

কল কাটতেই শুভ্রতা ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে দাড়িয়ে রইলো। মানুষটা রীতিমতো ছোট খাটো হুমকি দিলো তাকে। এবার বুঝলো উমা কেনো বলতো চন্দ্র তার মায়ের মতো। শুভ্রতা আনমনেই আওড়ালো,
~যেমন ছেলে তার তেমন মা। দুজনই সাংঘাতিক।

শুভ্রতা ছাদের কোণ ঘেঁষে দাঁড়িয়ে রইলো দীর্ঘক্ষণ। বই পড়ার ইচ্ছাটা নিমিষেই হারিয়ে গেছে কোথাও। তার দৃষ্টি এখন শুভ্রনীলাম্বরে স্থির। নীল আকাশে শুভ্র মেঘের আনাগোনা। শুভ্রতা মনে মনে আওড়ালো,
~আল্লাহর সৃষ্টি এতো সুন্দর কেনো? যতই দেখি মন ভরে না।

শুভ্রতার মনে পড়লো। একটা নির্দিষ্ট সময় পর সে এই সুন্দর ভুবন আর দেখতে পাবে না। আকাশটা আর তার দেখা হবে না। এমন মুগ্ধ হয়ে সে আর প্রকৃতিতে মিশে যেতে পারবে না। সময় শেষ হয়ে আসছে তার, মৃত্যু খুব নিকটে। শুভ্রতা আরো মনোযোগ দিয়ে আকাশ পানে চেয়ে রইলো। যেনো পলক পড়লেই বিশেষ কিছু হারিয়ে ফেলবে। এক একটা মুহূর্ত তার জন্য জরুরি। অতি জরুরি। চোখের পলক ফেলে সে কিছু সুন্দর, মুগ্ধকর দৃষ্টি হারাতে চায় না। সে চোখ দ্বারাই যেনো প্রকৃতির এক ছবি তুলে নিলো। জমা করতে লাগলো নিজের মনে। কে জানে ২মিনিট পরই হয়তো তার চোখ চিরকালের জন্য বন্ধ হয়ে যাবে। সে আফসোস রাখতে চায় না। আফসোস ভয়ংকর জিনিস। জীবনে বড় থেকে বড় খুশিও এই আফসোসের কাছে তুচ্ছ হয়ে যায়। সে আফসোস চায় না। শুধু চায় ভালো থাকতে। মৃত্যুর আগে মুঠো ভর্তি সুন্দর স্মৃতি নিয়ে যেতে চায় সে।
___________________________________________

গাড়ির শব্দে আকাশ থেকে দৃষ্টি সরিয়ে নিচের দিকে তাকালো শুভ্রতা। চন্দ্রের গাড়ি গেট দিয়ে ঢুকছে। চন্দ্র নিচ থেকে ইশারা করলো শুভ্রতাকে উপরেই থাকতে। শুভ্রতাও চন্দ্রের কথা মত ঠাঁই দাড়িয়ে রইলো। একটু পরই ছাদে প্রবেশ করলো চন্দ্র। হাঁটু তে হাত ঠেকিয়ে জোরে জোরে শ্বাস নিচ্ছে। গাড়ি থেকে বেরিয়ে এক ছুটে এখানে এসেছে সে। হয়রান হওয়ারই কথা। চন্দ্র একটু শ্বাস নিয়ে বললো,

~ভালোবাসি তোমাকে। নিজের থেকেও বেশি। কথা দিচ্ছি আমার চন্দ্রাবতীর সুখের জীবনে কখনো গ্রহণ লাগতে দিবো না। তাকে আমার কাছে রাখার জন্য, তাকে সুখে রাখার জন্য যেকোনো কিছু করতে রাজি আমি। এবার জবাব দাও জলদি। বিয়ে করবে আমায়?

চন্দ্রের অস্থির চাহনি। শুভ্রতা থমথমে মুখ করে চন্দ্রের দিকে তাকিয়ে রইলো। চন্দ্র চেষ্টা চালালো প্রেয়সীর অভিব্যাক্তি বুঝার। শুভ্রতা বিচক্ষণ দৃষ্টিতে চন্দ্রের পা থেকে মাথা অব্দি চোখ বুলালো। মাথায় সাদা ব্যান্ডেজ যাতে ছোপ ছোপ রক্তের দাগ লেগে আছে এখনো। ডান হাতের ব্যান্ডেজ টা খোলা হয়েছে গতকাল সন্ধ্যায়। ঘাড়ের কাটা দাগটাও শুভ্রতার দৃষ্টিগোচর হলো। শুভ্রতা ছোট শ্বাস ফেলে চন্দ্রের কাছাকাছি গিয়ে দাঁড়ালো। আলতো হাতে চন্দ্রের কপাল ছুঁয়ে কিছু একটা আন্দাজ করে বললো,
~জ্বর কমেনি কেনো? নিশ্চয় ওষুধ খাননি? আপনাকে ডাক্তার এর সার্টিফিকেট দিলো কে? শুনুন! মা বাবা এসব হেরফের মানলেও আমি এসব মানবো না। এমন খামখেয়ালী চলতে থাকলে বিয়ের ডেট আরো পিছাতে হবে। তখন দোষ আমার ঘাড়ে দিতে পারবেন না বলে দিচ্ছি।

শুভ্রতার কথা বুঝতে চন্দ্রের একটু সময় লাগলো। শুভ্রতা মুচকি মুচকি হাসছে। শুভ্রতার কথার মানে বুঝতে পারতেই চন্দ্রের সারা অঙ্গ যেনো খুশিতে কেঁপে উঠলো। সে খুশিতে লাফিয়ে উঠলো। চিৎকার করে হাজার বার শুকরিয়া জানালো উপরওয়ালাকে। সে জড়িয়ে ধরলো শুভ্রতাকে। চন্দ্রের গায়ের কম্পন অনুভব করলো শুভ্রতা। একটা মানুষ কতটা ভালোবাসলে এমন করতে পারে তার জানা নেই। সে শুধু জানে চন্দ্র তাকে ভালোবাসে। নিরন্তর, নিরবিচ্ছিন্নভাবে ভালোবাসে তাকে। এমন ভালোবাসার মানুষকে পাইয়ে দেওয়ার জন্য সেও মনে মনে উপরওয়ালাকে ধন্যবাদ জানালো। চন্দ্র বলে উঠলো,
~ভালোবাসি, ভালোবাসি, খুব খুব খুব ভালোবাসি।

শুভ্রতা হাসলো। স্মিত কন্ঠে শুধালো,
~আমিও
~~~
চলবে~

(শুভ্রতা কিন্তু বিয়ের জন্য রাজি হয়ে গেছে। সবাই মিষ্টি খাওয়ান নয়তো আবারো বিয়ে ক্যান্সেল 😁 হ্যাপি রিডিং~)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here