#চিলেকোঠায়_অনুরক্তির_ছোঁয়া
#লেখনীতে_ফারহানা_আক্তার_ছবি
#পর্ব_১৯
.
.
🌺
” আ আমি মানে মেঘ চৌধুরীর আমার বড় ভাই৷ সম্পর্কে আমরা কাজিন৷” আর কিছু বলার পূর্বে রাফিদের চোখের দিকে তাকিয়ে চুপ হয়ে গেল৷
” তুমি ওই খুনিটার বোন শিট এটা কেন আমি আগে বুঝতে পারি নি?”
” রাফিদ ফর গড সেক প্লিজ আমাকে সবটা খুলে বলো আমি জানতে চাই ফারহা আপুর বিষয়ে৷”
” জেনে কী করবে বেলা? পারবে তোমার কাছের মানুষ গুলোকে শাস্তি দিতে? কী হলো বলো?”
” রাফিদ প্লিজ আমাকে সবটা বলো৷” রাফিদের হাত ধরে করুণ গলায় বললো বেলা৷ রাফিদ এবার কিছুটা নরম স্বরে বলে উঠলো,” তাহলে শোন ……..”
মেঘের মা মিসেস মায়রা চৌধুরী বেলার সাথে কিছু কথা বলার জন্য ওর রুমে ঢুকতেই দেখে পুরো রুম ফাঁকা৷ ওয়াশরুমেও নেই দেখে তিনি চিন্তিত হয়ে মেঘের রুমের দরজায় নক করে৷ মেঘ বেলকনিতে দাড়িয়ে নিকোটিনের ধৌয়া উড়াতে ব্যস্ত তখনি দরজায় নক পড়তে দ্রুত সিগারেটের বাকী অংশের আগুন নিভিয়ে বাইরে ছুড়ে ফেলে রুমে এসে দরজা খুলে দেখে তার মা দাড়িয়ে৷
” মম এতো রাতে তুমি? ঘুমাও নি?”
” বেলা কোথায় মেঘ?” বলতে বলতে রুমে ঢুকলো মায়রা৷ রুমের ভেতরে সিগারেটের বাজে গন্ধটা যে এখনো রয়ে গেছে এটা বুঝতে পেরে মেঘ বেশি কথা না বলে বললো মম বেলা ওর রুমে হবে নিশ্চয়ই৷ এতো রাতে আমার রুমে কেন থাকবে?”
” বেলা ওর রুমে কেন পুরো বাড়ির কোথাও নেই মেঘ৷” মেঘ এবার যেন চমকালো৷ বেলা বাড়িতে নেই তাহলে রাফিদের কাছে যাই নি তো? যে কথা গুলো বেলাকে বলতে পারে নি ওর ঘৃনা দেখতে পারবে না বলে আজ সে তার বোনের চোখে নিজের জন্য ঘৃনা দেখতে পাবে হয় তো! এটা ভাবতেই মেঘ শিউরে উঠলো৷ সে তার আদরের ছোট বোনের চোখে যে নিজের জন্য ঘৃনা দেখতে পারবে না৷ কিছুতেই না৷ কথা গুলো ভাবতে ভাবতে মেঘ বলে উঠলো,” মম আমি দেখছি বেলা কোথায় আছে৷ তুমি টেনশন করো না আর ছোট চাচুকে কিছু বলো না শুধু শুধু টেনশন করবে৷” মেঘ কথা গুলো বলে দ্রুত চেন্জ করে গাড়ির চাবি নিয়ে রুম থেকে বের হয়৷ তবে ড্রইংরুম পর্যন্ত আসতেই দেখে বেলাকে৷ চোখ মুখ ফুলে লাল হয়ে আছে৷ দেখে মনে হচ্ছে বেলা খুব কেঁদেছে মেয়েটা৷ মেঘের বুকটা তৎক্ষনাৎ ছ্যাৎ করে উঠলো৷ যে ভয়টা সে পেয়েছিলো সেইটাই হলো না তো? এই দ্বিধা দ্বন্দের মাঝে বেলা মেঘের সামনে দাড়িয়ে ভাঙা ভাঙা গলায় বলে উঠলো,” ঘৃনা করি তোমায়৷ তুমি আমার দাভাই হওয়ার যোগ্য নও৷ তুমি একটা খুনি৷ একটা মেয়ের জীবনটা কয়েক মুহূর্তে তুমি নরকে পরিবর্তণ করে দিলে৷ একটি বারও ভাবলে না যে ভালোবাসে সে কখনো তার ভালোবাসা ছিনিয়ে নিতে চায় না বরং ত্যাগ করে তার ভালোবাসার মানুষটির সুখের জন্য, আর তুমি কী করলে? ফারহা আপুর জীবনে সব রঙ তুমি কেড়ে নিলে? তার জীবনটা নষ্ট করে দিলে? কী করে পারলে তুমি?ছিঃ আমার ভাবতেও ঘৃনা হচ্ছে তুমি আমার দাভাই৷ আমার ঘৃনা হচ্ছে এমন একটা পরিবারে জন্ম নিয়ে আর সেই পিতার জন্য আফসোস হচ্ছে যে পিতা তার নিজের হাতে তার একমাত্র মেয়ের সুখ গুলো নিজের হাতে গলা টিপে মেরে ফেলেছে৷ তোমাদের জন্য আমার ঘৃনা হচ্ছে৷ শুধু ঘৃনা৷” বেলা আর কিছু বললো না মেঘের পাশ কাটিয়ে উপরে নিজের রুমে চলে গেল৷ মেঘ এতোক্ষণ অনেক কষ্ট করে নিজেকে সামলে রেখেছিলো৷ বেলা চলে যেতে মেঘ হাটু মুড়ে কান্নায় ভেঙে পড়ে৷ এতোক্ষণ দোতালার দাড়িয়ে মায়রা চৌধুরী সবটা শুনছিলো মেঘকে কাঁদতে দেখে তিনি নিচে এসে মেঘের কাঁধে হাত রাখে মেঘ পেছনে তাকিয়ে তার মা’কে দেখতে পেয়ে তাকে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে লাগলো৷
” মেঘ আমি জানি না তুমি অতিতে ঠিক কী কী করেছো তবে বেলার মুভমেন্ট তার কথা গুলো শুনে ধরে নিবো তুমি অতিতে ভালো কিছু করো নি যার কারনে বেলা তোমাকে এত কথা শুনালো৷ কী হয়েছে বা কী হয়েছিলো তা এখন তোমার কাছে আমি জানতে চাইবো না তবে আমি আশা করবো তুমি তোমার ভুল গুলি শুদরে নিবে৷ এখন রুমে গিয়ে ঘুমিয়ে পড়ো বাকি কথা আগামীকাল হবে৷”
মায়রা চৌধুরী মেঘকে কিছুটা শান্ত করে নিজের রুমের উদ্দেশ্য চলে গেল কারণ তারও আজ অনেক গুলো প্রশ্ন তার স্বামীকে করা বাকী আছে৷ সে প্রশ্নের উওর যে তার আজ চাই৷
আজ রাফিদ নিজেকে বড্ড হালকা মনে হচ্ছে বেলাকে শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত সবটা জানাতে পেরে৷ মেয়েটা সবটা শুনে যে বড্ড কষ্ট পেয়েছে এটা রাফিদ বেলার চোখ দুটো দেখেই বুঝতে পেরেছে৷ বেলার জন্য মনে মনে যে রাফিদের বুকটা পুড়ছে এটা বুঝেও নিজেকে শান্ত করার বৃথা চেষ্টা করছে রাফিদ৷ কারণ বেলার সাথে ভালোবাসার নাটক করতে করতে কখন যে নিজের মনের চিলেকোঠায় বেলা নামক দুরন্তপনা মেয়েটাকে ঠাই দিয়েছে সেটা রাফিদ নিজেও জানে না৷
ফারহার ঠোঁটের কোণে তৃপ্তির হাসি৷ ল্যাপটপে কিছু একটা দেখে ফারহার মনটা ভালো হয়ে গেল৷ ল্যাপটপ বন্ধ করে ফারহা রাফিদের সাথে কথা বলার জন্য রাফিদের রুমে ঢুকতেই দেখে রাফিদ বেলার ছবি গুলো বার বার দেখছে৷ ফারহা নিঃশব্দে রাফিদের রুম থেকে বেড়িয়ে গেল৷ ঘড়ির কাটা একটা ছুঁই ছুঁই ফারহার চোখে ঘুম নেই৷ রাফিদ যে বেলাকে ভালোবেসে ফেলবে এটা কিছুটা আন্দাজ করলেও যে এতো তাড়াতাড়ি বিষয়টা ঘটে যাবে এটা ভাবে নি ফারহা৷
পরেরদিন মিসেস মায়রা মেইডদের সাথে সাথে দ্রুত টেবিলে খাবার সাজিয়ে ফেললো৷ তবে পুরো সকাল থেকে মিসেস মায়রার মুখটা থমথমে হয়ে আছে৷ মিসেস মায়রার ছোট জা মিরা এসে হাসি মুখে মিসেস মায়রার কাজে হাত লাগাতে নিলে মিসেস মায়রা বলে ওঠে,” তোকে কিছু করতে হবে না ছোট৷ আমি সবটা সামলে নিবো৷ তুই বরং সবাইকে খাবার সার্করে দে৷” মিসেস মায়রার কথা মত মিরা সবাই কে খাবার সার্ব করে দিতে দিতে বেলাকে খাবার টেবিলে দেখতে না পেয়ে বলে,” বেলা কোথায়? ও এখনো ঘুম থেকে উঠে নি? ”
মিরার কথা শুনে মেঘের মনটা বিষিয়ে গেল গতকাল রাতে ঘটনা মনে পড়ায়৷ মেঘ ভাবছে হয়তো একই টেবিলে বসে তার সাথে খেতে হবে এই জন্য হয়তো তার ছোট বোনটা খেতে আসছে না৷ তবে মেঘের সব ভাবনা ভুল প্রমান করে একজন মেইড বলে উঠলো,” ম্যাডাম বেলা আফা তো বাড়িতে নাই৷ ভোর বেলা দেখলাম তার বড় লাগেজটা লইয়া বাইর হইয়া গেল৷” কথা টা শোনা মাত্র সবাই রিতিমত চমকে গেল৷ বেলা এত ভোর বেলা লাগেজ নিয়ে কোথায় যেতে পারে? এই চিন্তায় একে অন্যের মুখ দেখতে লাগলো৷ তখনি মেঘ সেই মেইডকে প্রশ্ন করে৷
” খালা যাওয়ার সময় বেলা আর কিছু বলে গেছে আপনাকে? মনে করে বলুন তো?”
মেইড একটু ভেবে বলে হয় মেঘ বাবা৷ বেলা আফা যাওনের সময় আমারে বললো , খালা কেউ যদি জানতে চায় আমি কোথায় চলে গিয়েছি তখন বলবেন৷ বেলা তার নিজের দেশে ফিরে গেছে৷”
শাফিন চৌধুরী তার মেয়ের এমন কান্ডে অবাক হয়ে বললো,”মানে কানাডা চলে গেছে? কিন্তু কেন?”
মায়রা চৌধুরী তার ছেলের মুখের দিকে না তাকিয়ে শাফিনকে বললো,” চিন্তা করো না ভাই বেলা মা সঠিক সময়ে ফিরে আসবে৷ হয়তো কোন আর্জেন্ট কাজ ছিলো ওদেশে তাই কাউকে না জানিয়ে ফিরে গেছে৷”
” কিন্তু ভাবি আমাদের তো একবার বলতে পারতো?”
” যা হয়ে গেছে তো হয়ে গেছে তুমি কি এখন কিছু করতে পারবে ভাই? ”
” না ভাবি কিন্তু..”
” কোন কিন্তু নয় ভাই৷ বেলা মা সঠিক সময়ে ফিরে আসবে তোমরা চিন্তা করো না৷ খেয়ে নেও৷”
সব শুনে মেঘের গলা দিয়ে খাবার আর নামলো না৷ না খেয়েই উঠে গেল৷
২১.
সকালে নাস্তা করেই দুই ভাইবোন বেড়িয়ে পড়ে৷ রাফিদ রিক্সা করে কলেজে চলে যায় কারণ আজ বেশ দেরি করে ঘুম থেকে ওঠায় কলেজ যেতে লেট হয়ে গেল৷ আর ফারহা সব গুছিয়ে নিয়ে বের হওয়ার সময় দিদা এসে মরা কান্না জুড়ে দেয়৷ কারণ তার ছেলে বেশ অসুস্থ হয়ে পড়েছে৷ হাসপাতালে ভর্তি করা প্রয়োজন হতে পারে৷ ফারহা হাসবে নাকি কাঁদবে বুঝতে পারলো না৷ যে তার ছেলের এই অবস্থা করেছে তার কাছে এসেই কান্না জুড়ে দিলো৷ সব সামলে বের হতে হতে বেশ লেট হয়ে গেল ফারহার৷ দূর্ভাগ্য বসত অর্ধেক রাস্তা পর্যন্ত যেতেই আকাশের রঙ বদলাতে শুরু করলো কয়েক মুহূর্তে মধ্যে চারিদিক অন্ধকারে ছেঁয়ে গিয়ে ঝড় শুরু হলো৷ এই দূর্যোগে একটা রিক্সাও পাচ্ছে না৷ রাগে দুঃখে ফারহা দ্রুত পা চালালো৷ ফারহার চলার মাঝে হুট করেই একটা গাড়ি এসে ফারহার গা ঘেষে থামে৷ একটুর জন্য ফারহা হয়তো ছিটকে পড়লো না তবে রাগে গাড়ির জানালায় টোকা দিবে এমন সময় জানালার কাঁচ নামাতে ফারহা মেঘকে দেখে রাগের পরিমানটা যেন আরও তীব্র হলো৷ তবে মেঘের মুখে কোন রিয়েকশন দেখতে পেলো না ফারহা৷ পরক্ষণে গতকাল রাতের কথা মনে পড়তেই ঠোঁটের কোণে তৃপ্তির হাসি ফুটে উঠলো৷ মেঘ কোন ভনিতা ছাড়াই গাড়ির দরজা খুলে দিয়ে বললো,” উঠে এসো ফারুপাখি৷”
” না আমি আপনার সাথে কোথাও যাচ্ছি না মিস্টার চৌধুরী৷”
” তর্ক করো না ফারুপাখি৷ গাড়িতে উঠে এসো না হলে বাধ্য হয়েই আমাকে নামতে হবে৷”
ফারহা এদিক-ওদিক তাকিয়ে কিছু একটা ভেবে গাড়িতে উঠে বসবো৷ ফারহা গাড়িতে ওঠার পরই মেঘ গাড়ি স্টার্ট দেয়৷ ঝড়ের তীব্রতা যেন বেড়েই যাচ্ছে হঠাৎ ফারহা খেয়াল করে মেঘ তার ভার্সিটি ওভার টেক করে অন্য রাস্তা ধরে যাচ্ছে৷ আজ যে সে ভার্সিটিতে যেতে পারবে না ফারহার বুঝতে আর বাকি নেই৷
মেঘের অফিসের কাছাকাছি একটা ফ্লাট আছে৷ ওখানে শুধু মাত্র মেঘ যেতো৷ ফ্লাটটা মেঘ নিজেই কিনে ছিলো৷ যেটা তার বাবা মা কেউ জানে না৷ এর মাঝে ঝুমঝুমিয়ে বৃষ্টি পড়তে লাগলো৷ আটতলা বিল্ডিংয়ে চতুর্থ তলায় মেঘের ফ্লাট৷ মেঘ বৃষ্টির ভেতর গাড়ি থেকে নেমে ফারহাকে কোলে তুলে নিয়ে বিল্ডিংয়ে প্রবেশ করে৷ আচমকা মেঘের কান্ড দেখে ফারহা হচকিয়ে যায়৷ মেঘ কী চাইছে বুঝতে পেরেই ফারহা চিৎকার করে বলতে লাগলো,” আমাকে কোল থেকে নামিয়ে দিন মিস্টার চৌধুরী৷ আপনি যা করছেন সেটা একদম ভালো করছেন না৷ আমাকে যেতে দিন বলছি৷”
ফারহার কথা যেন মেঘের কানে পৌছাচ্ছে না৷ মেঘ ফারহাকে কোলে নিয়ে লিফটে উঠে গেল৷ বলা বাহুল্য যে সে সময় কোন ফ্লোরে কেউ ছিলো না যে যার ফ্লাটে ছিলো৷ কেউ ফারহার গলার আওয়াজ পাইনি কারণ বাইরে তমুল বেঁগে বৃষ্টি পড়ছিলো৷ মেঘ চতুর্থ তলায় গিয়ে ফারহাকে কোল থেকে নামিয়ে হাত শক্ত করে ধরে থেকে দরজার লক খুলে ফেলে ফারহাকে নিয়ে ভেতরে প্রবেশ করে৷
রাগে থর থর করে কাঁপছে ফারহা৷ ফারহার এখনি ইচ্ছে করছে মেঘকে নিজ হাতে খুন করতে৷ মেঘ দরজা লক করে পকেটে চাবি রেখে গলার টাই টা আলগা করে ফারহাকে বলে,” সরি ফারুপাখি এভাবে তোমাকে না বলে তুলে নিয়ে আসার জন্য, কিন্তু কি করবো বলো? বললে তো তুমি ভালো মেয়ের মত আসতে না৷ তাই তো না বলে তোমাকে নিয়ে আসলাম৷ জানি তোমার প্রচন্ড রাগ হচ্ছে৷ হয়তো ইচ্ছে করছে আমাকে খুন করে ফেলতে তাই না?”
ফারহা দাঁতে দাঁত চেপে রাগটা সংবরণ করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে৷ ফারহা চাচ্ছে না এই মুহূর্তে তার হাতে কোন অঘটন ঘটে যাক৷ এই মেঘ নামক লোকটাকে এতো ইজিলি মৃ’ত্যু ফারহা মটেও দিবে না৷ এতো বছর স্বামী সন্তান হারিয়ে যে যন্ত্রণা ফারহা ভোগ করেছে সে যন্ত্রনা যে মেঘকে সইতে হবে৷ তার আগে মৃ’ত্যু দেওয়ার কথা ফারহা ভাবতেও পারে না৷
ফারহার ভাবনার মাঝে মেঘ হুট করে ফারহার সামনে হাটু গেড়ে বসে পড়ে হাত জোড় করে ফারহাকে বলতে লাগলো,” ফারুপাখি প্লিজ আমাকে ক্ষমা করে দেও৷ আমি অতিতে তোমার সাথে যা করেছি তার কোন ক্ষমা হয় না কিন্তু আমি তোমার কাছে ক্ষমা চাইছি ফারুপাখি৷ ভার্সিটিতে তোমাকে দেখার পর থেকে আমি তোমার সাথে নাটক করে এসেছি৷ কারণ আমি জানতাম তুমি মাঝে মাঝে পুরনো স্মৃতি ভুলে যেতে৷ আমি সেটারই সুযোগ নিয়ে তোমাকে প্রপোজ করি৷ কিন্তু তুমি রিজেক্ট করে দেও তখনি বুঝতে পেরেছি আয়াশ শুধু তোমার স্মৃতিতেই নেই, আয়াশ তোমার হৃদয়ের চিলেকোঠায় খুব যত্নে আগলে রেখেছো৷ ফারুপাখি আমি তোমাকে ভালোবাসি বড্ড বেশি ভালোবাসি৷ তোমাকে ছাড়া আমার বেঁচে থাকাই সত্যি খুব যন্ত্রনার তুমি বিহীন এই মেঘের কোন অস্তিত্ব নেই৷ ভালোবাসি তোমায় কেন বুঝো না তুমি? কেন আমাকে ভালোবাসতে পারো না ফারুপাখি? সে দিন সেদিন আয়াশ আর তোমার সাথে যা হয়েছে সেটার জন্য আমি দায়ী না৷ আমি শুধু মাত্র তোমাকে আটকাতে চেয়েছিলাম কিন্তু তখন কী থেকে কী হয়ে গেলো৷ আমি সবটা বুঝে ওঠার আগেই সবটা শেষ হয়ে গেলো৷”
ফারহা এতোক্ষণে নিস্তব্ধতা ভেঙে বলতে লাগলো,” আমার দূর্বলতার সুযোগ নিতে চেয়েছিলেন আপনি কিন্তু আফসোস সেটা আপনি নিতে পারেন নি৷ কিন্তু আজ আমাকে এখানে তুলে আনার কারণ টা জানতে পারি নিশ্চয়ই আপনার এই স্বীকারক্তি গুলো শুনাতে আনেন নি তাই অভিনয় না করে আমাকে কেন আপনার ফ্লাটে এনেছেন সেটা বলুন?”
মেঘ উঠে ফারহার মুখোমুখি দাড়িয়ে বলে উঠলো, “বিয়ে করতে৷”
.
.
.
#চলবে…..?#চিলেকোঠায়_অনুরক্তির_ছোঁয়া
#লেখনীতে_ফারহানা_আক্তার_ছবি
#পর্ব_২০
.
.
🌺
পুরো ড্রইংরুম জুরে নিরবতা ছেঁয়ে আছে৷ ফারহা মেঘের কথা শুনে কোন রকম রিয়েক্ট করলো না৷ এটা দেখে মেঘ বেশ অবাক হয় কারণ বিয়ের কথা শোনা মাত্র ফারহা এতোক্ষণে সব কিছু ভেঙে চুড়ে ফেলার কথা কিন্ত ফারহা তেমনটা মটেও করলো না বরং মেঘের সামনে থেকে সরে গিয়ে সোফায় বেশ আরাম করে বসে মেঘের উদ্দেশ্যে করে বলতে লাগলো,” আপনার এমন চিপ জোকস আমার একদমিই পছন্দ হয় নি মিস্টার চৌধুরী৷ যদিও বা আপনাকে দেখে মনে হচ্ছে না আপনি জোকস করছেন তবুও বলে রাখি মন দিয়ে শুনুন৷ আমি অতিতে যেমন আমার আয়াশকে ভালোবাসতাম , ঠিক তেমন বর্তমানেও ভালোবাসি আর ভবিষ্যৎ ভালোবাসবো৷ তাই অযথা আমার পেছনে সময় ব্যয় না করে আপনি আপনার নিজের কাজে মন দিন৷”
মেঘ ধীর পায়ে ছোট্ট ডাইনিং প্লেসে গিয়ে গ্লাসে পানি ঢেলে নিয়ে ফারহার সামনে গ্লাসটা এগিয়ে দিলো৷ ফারহাও সুন্দর ভাবে গ্লাসটা হাতে নিয়ে টেবিলের উপর রেখে মেঘ কে বললো,” এখন বলুন আপনি কী কারণে আমাকে আপনার ফ্লাটে নিয়ে এসেছেন?”
মেঘ একটু বিরক্ত হলো ফারহার প্রশ্নে তবুও আবারও সেই একি প্রশ্নের উওর দিলো৷
” বিয়ে করতে ফারুপাখি৷”
ফারহা এবার বেশ রেগেই টেবিলের উপর থেকে গ্লাস টা নিয়ে মেঘের মুখে পানিটা ছুড়ে মেরে বলতে লাগলো,” আমার ধৈর্যের পরীক্ষা নিস না মেঘ৷ সহ্য করতে পারবি না আমার রাগটাকে, অনেক কষ্ট করে নিজেকে সামলে রেখেছি আমাকে বাধ্য করিস অন্য রুপটা দেখাতে বিশ্বাস কর এই রুপে যদি তোর জীবনে একবার প্রবেশ করি তাহলে চৌধুরী বংশ ধ্বং’সের একমাত্র কারণ আমি হবো৷ তার সাথে চৌধুরীর পরিবারের প্রত্যেকটা সদস্যদের ক’বরে শুইয়ে দিবো৷ ”
ফারহার কঠোরতা, হিং’স্রতা দেখে মেঘ কয়েক মুহূর্তের জন্য ভুলেই গিয়েছিলো এই সেই নরম কোমল হৃদয়ের মেয়ে৷ যার মিষ্টি কোমলতা দেখেই সে তার ফারুপাখির প্রেমে পড়েছিলো৷ কিন্তু আজ যাকে দেখছে সে তার ফারুপাখি নয় তার আদলে থাকা এক কঠিন ভয়ংকর হিং’স্র নারী৷
” মিস্টার চৌধুরী দরজার লক খুলে দিন আমাকে যেতে হবে৷”
মেঘ এবার ধাতস্থ হয়ে আবারও সেই একি কথা বলে উঠলো,” প্রথমে আমাদের বিয়ে হবে ফারুপাখি৷ তারপর তুমি যেখানে ইচ্ছে যেতে পারো৷ আমি বাধা হয়ে দাড়াবো না৷” ফারহা নিজের রাগটা আর সামলাতে পারলো না আচমকা মেঘের গালে ঠাটিয়ে একটা থাপ্পর মেরে বসলো ফারহা৷ থাপ্পরের জোরটা এতো ছিলো যে মেঘের কানে যেন তন্দ্রা লেগে গেল৷
” তোকে বার বার সাবধান করার পরও তোর যখন বিয়ে করার শখ তাহলে আজ আমি তোর এই শখটা না হয় মিটিয়ে দিবো৷ ”
ফারহা তার ব্যাগ থেকে ফোনটা বের করে কাউকে একটা কল দিয়ে বিয়ে এরেন্জমেন্ট করতে বলে কিন্তু তৎক্ষনাৎ মেঘ ফারহা ফোনটা ছিনিয়ে নিয়ে কল কেটে দিয়ে বলে,” এভাবে লুকিয়ে চুরিয়ে বিয়ে মেঘ চৌধুরী করবে না ফারুপাখি৷ আমাদের বিয়েটা হবে ধুমধাম করে৷ পুরো শহরকে জানিয়ে হবে৷ মেঘ উঠে দাড়িয়ে দরজার লক খুলে ফারহাকে বলতে লাগলো,” আমি জানি আমার উপর তোমার অনেক রাগ অভিমান জমে আছে৷ আমি তোমার হৃদয়ের কষ্ট গুলো ঠিক একদিন বিলিন করে আমার ভালোবাসার ফুল ফুটাবো ফারুপাখি৷ সেদিন তোমার হৃদয়ে আঙ্গিনায় জুড়ে এই মেঘের আনাগোনা থাকবে৷ কথা দিলাম তোমার হৃদয়ের গহীনে ঠিক একদিন আমি প্রবেশ করবো৷”
” সেদিন হবে আমার জীবনে শেষ দিন৷” কথাটা বলে ফারহা তার ব্যাগ ফোন নিয়ে ফ্লাট থেকে বের হয়ে লিফটে উঠলো৷ ফারহার পেছন পেছন মেঘ ও এলো৷ কেউ কারও সাথে বাক্য বিনিময় করলো না দুজনের মাঝে নিস্তব্ধতা বিরাজমান৷ লিফটের দরজা খুলে যেতে ফারহা লিফট থেকে বের হতে হতে মেঘের উদ্দেশ্যে বললো,” আর একপাও আমার পেছনে এগোবেন না মিস্টার চৌধুরী৷ ”
থমকে গেল মেঘ সত্যি সত্যি আর এক পাও আগালো না মেঘ৷ তবে মেঘ দেখলো তার গাড়ি পাশে আর একটি বেশ দামী গাড়ি দাড়িয়ে আছে৷ ফারহা ঠিক ওই গাড়িটার সামনে দাড়াতে গাড়ির দরজাটা খুলে গেলো আর ফারহা গাড়িতে উঠে বসলো৷ মেঘ বেশ অবাক হয় এটা দেখে৷ গাড়িটার ভেতরে ফারহা ব্যতিত অন্য ব্যক্তিটাকে দেখার জন্য এক পা আগাতে দেখে গাড়ি স্টার্ট দিয়ে মিনিটেই তার পরিসীমার বাইরে চলে গেল৷ তখনও টিপ টিপ বৃষ্টি পড়ছে৷ যদিও বা মেঘ বৃষ্টিতে ভিজতে না তবুও কেমন যেন তার ভেতরে ভেতরে অস্তিরতা কাজ করছে৷ আজকে ফারহা যে রুপ দেখেছে মেঘের হঠাৎ মনে হচ্ছে এই মেয়ে তার জীবনে সর্বনাসিনী হয়ে প্রবেশ করে সব কিছু ধ্বং’স করে দিবে না হয়ে ভালোবাসার সমুদ্দুরে ভাসিয়ে নিয়ে যাবে৷
ইতোমধ্যে পুরো এক বোতল ঠান্ডা পানি খেয়ে ফেলেছে ফারহা তবুও যেন তার রাগটা কমছে না৷ আদিল চেষ্টা করছে তার আপার রাগটা কমানোর কিন্তু যতোবারই কথা বলার চেষ্টা করছে ঠিক ততোবারই ফারহার রক্ত চক্ষু দেখে চুপ হয়ে গেছে৷ ফারহা এবার পানি খেতে খেতে নিজ থেকে বলতে লাগলো,” ওই দিকের কী খবর?”
” তোর কথা মত সব জায়গায় লোক লাগিয়ে দিয়েছি আপা৷ আর একটা খবর হলো আজ সকালে পুলিশ ভার্সিটির পেছনের দিঘি থেকে গাড়ির সাথে ওই লোক গুলোর ডেডবডি তুলে ফেলেছে৷ আর আশ্চর্যের বিষয় হলো সেদিনকার কোন সি সি ক্যামেরার ফুটেজ নেই ৷ মানে রেকর্ড হয়নি৷ পুরো ভার্সিটিতে লাগানো ক্যামেরা গুলো বন্ধ ছিলো তাই পুলিশ কোন ক্লু খুজে পায়নি৷”
” গাঁধা মিলন হাওলাদার এতটাও বোকা না যে মেয়ে গুলো তুলে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করবে আর প্রমাণ গুলো সামনে ফেলে রাখবে৷ আমি এগুলো আগেই জানতাম তাই এগুলো নিয়ে আমি আর মাথা ঘামাই নি৷”
” উফফ কি বুদ্ধি আপার,সব কিছু কি করে সামলে নেয়৷ বাট আজ ওই মেঘের ভাগ্য ভালো ছিলো আপা ওকে নিজের হাতে খুন করেনি৷ আপা যে কী চায়ছে আমি সত্যি বুঝতে পারছি না তবে একবার এ দেশ থেকে তোকে নিয়ে যেতে পারলে কখনো এই পোড়া দেশে তোকে আসতে দিবো না৷ এখানে কষ্ট ছাড়া আর কিছুই তোর জন্য অবশিষ্ট নেই৷” নিজের মনে মনে কথা গুলো বললো আদিল৷
দুটো ক্লাস শেষ তবুও বেলাকে আসতে না দেখে রাফিদের মনটা কেমন যেন কু ডাকছে৷ সকাল থেকে একশ বার বেলাকে কল করেছিলো কিন্তু যতবার কল দিয়েছে ঠিক ততবার এক বিরক্তিকর নারী কন্ঠ বার বার একই কথা বলে গেছে৷ বেলার ফোন বন্ধ দেখে রাফিদের চিন্তা যেন আরও এক ধাপ বেশি হলো৷ কোন ভাবে তৃতীয় ক্লাস শেষ করে বেলার ভাবনায় বিভোর হয়ে রাফিদ বাড়ি দিকে ফিরতে লাগলো৷ আজ যে তার কোন কাজে মন বসছে না৷
আদিল ফারহার গাড়িটা আবাসিক এরিয়া ছাড়িয়ে যাওয়ার পর পর একটা বড় ট্রাক দ্রুতগতিতে তাদের পেছনে আসছে৷ আদিল গাড়ি সাইডে নিলেও ট্রাকটা এগিয়ে না গিয়ে তাদের গাড়ির পেছনে রইল আর দ্রুত গতিতে আগাতে লাগলো৷ আদিল ফারহার বুঝতে বাকি নেই যে এটা তাদের শত্রুদের মধ্যে একজনের কাজ৷
—“পিচ্চি তুই পেছনের সিটে যা আমাকে গাড়ি চালাতে দে৷”
–” কিন্তু দি৷”
–” কোন কিন্তু নয় পিচ্চি ট্রাকটা আমাদের দিকে আসছে৷ দ্রুত ড্রাইভিং সিট থেকে সরে যা৷”
আদিল তাই করলো৷ ফারহা ড্রাইভিং সিটে বসে গাড়ির স্পিড বাড়িয়ে দিলো৷ তখনি ফারহা খেয়াল করে সামনে থেকে আর একটি ট্রাক আসছে৷ পেছনে সামনে দুদিকে বিপদ ফারহা আদিলকে বাঁচতে হলে এখন দুটো উপায় আছে এক. গাড়ি থেকে লাফিয়ে বের হয়ে যাওয়া আর দুই হলো… কাটা দিয়ে কাটা তোলা৷ ফারহা দ্বিতীয় রাস্তাটা বেছে নিলো৷ প্রচন্ড গতিতে গাড়ি চলছে সামনে তিন রাস্তার মোড় ফারহা দ্রুত গতিতে ট্রাকের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে আর সামনের এবং পেছনের ট্রাকটা তাদের দিকে এগিয়ে আসছে৷ আচমকা বিকট শব্দে দুটো গাড়ির সংঘর্ষে ব্লাস্ট হলো গাড়ি দুটো৷ চারিদিকে কালো ধোয়ায় ছেয়ে গেছে৷ সাধারণ জনগন ভয়ে জ্বলন্ত গাড়ির দিকে না গিয়ে দুরে দাড়িয়ে দেখছে৷ ইতোমধ্যে পুলিশ এসে হাজির হয়৷ অন দা স্পটে যারা ছিলো তারা সবাই মারা গেছে৷ রিপোটার খবর টা নিউজে প্রচার হতে লাগলো৷ এদিকে শাফিন চৌধুরী তার লোকদের একের পর এক কল করে যাচ্ছে কিন্তু কোন ভাবেই তাদের সাথে যোগাযোগ করা সম্ভব হচ্ছে না৷ তখনি মিরা ছুটে এসে শাফিনকে উদ্দেশ্য করে বলে,” শাফিন তুমি নিউজ দেখেছো? ”
” না মিরা কেন কী হয়েছে?”
মিরা কথা না বারিয়ে দ্রুত টিভি অন করে নিউজ চালালো৷ শাফিন নিউজ দেখে ধপ করে বসে পড়লো চেয়ারে৷ মিরা শাফিনের কাছে যেতে শাফিন বলতে লাগলো,” এই বার, এই বারও মেয়েটা বেঁচে গেলো৷ ”
” হ্যাঁ শাফিন মেয়েটা বেঁচে গেল কী করে? তোমার প্লান অনুযায়ী দুদিক দিয়ে গাড়ি এ্যাটাক করলে মেয়েটার বাঁচার কথা না কিন্তু মেয়েটা ঠিকি বেঁচে গেল আর মরলো তোমার লোকেরা৷ ট্রাক দুটো সংর্ঘষে আগুন লেগে সবাই মরে গেছে৷”
শাফিন যেন এবার নিজের হার মেনে নিলো৷ ফারহাকে শেষ করা যে তার পক্ষে সম্ভবপর নয় এটা ঠিক বুঝে গেছে৷
২২.
—-” স্যার আপনার ফোন৷ দুবাই থেকে শেখ সাহেব দিয়েছে৷”
শেখ সাহেব নামটা শুনে মিলনের বুকের ভেতর ধক করে উঠলো৷ একে তো মাল ডেলিভারি দিতে পারি নি তার উপর এ্যাডভান্স টাকা গুলো ফেরত দিতে পারেনি৷ এখন কি বলবে শেখ সাহেব কে ভাবতেই গলা যেন শুকিয়ে এলো মিলনের৷ কাঁপা কাঁপা হাতে ফোনটা নিয়ে কানে ধরলো মিলন৷ মিলন হ্যালো বলার সাথে সাথে ফোনের ওপাশ থেকে এক হংকার শুনতে পেলো মিলন৷
আদিল আজ ফারহাকে নিয়ে তার ফ্লাটে চলে গেলো৷ রাফিকেও মেসেজ করে এখানে আসতে বলে দেয় আদিল৷ ফারহা তার নির্ধারিত রুমে গিয়ে ফ্রেস হয়ে ড্রইংরুমে এসে বসে ততক্ষণে আদিল তার আপার প্রিয় নুডুলস বানিয়ে ফেলে৷
” এই নে আপা খেয়ে নে৷ কম সময়ে শুধু এতটুকুই করতে পেরেছি৷”
ফারহা মিষ্টি একটা হাসি দিয়ে বলতে লাগলো,” তুই খুব ভালো করেই জানিস নুডুলস আমার ফেবারিট৷ এটা হলে আমার আর কিছু চাই না৷ তোর টা কোথায়?”
” এই তো আনছি৷”
ফারহা খেতে খেতে আদিলকে বলতে লাগলো৷ পিচ্চি সামনে আমার জন্য এক মহাযুদ্ধ অপেক্ষা করছে৷
” আপা তোর কথার মানে টা আমি ঠিক বুঝলাম না৷”
“আমার মনে হয় মেঘ চৌধুরী আগামী দু-তিন দিনের মধ্যে আমাকে বিয়ে করার জন্য উঠে পরে লাগবে৷”
“ওয়াট! বিশ্বাস কর আপা এই মেঘ কে আমি জানে শেষ করে দিবো৷”
” উহু না পিচ্চি জানে আমি মারবো না মেঘকে৷ ওকে তো আমি ধুকে ধুকে মারবো৷ ”
” কী ভাবে আপা?”
” বলবো তার আগে তোকে একটা কাজ করতে হবে৷”
” কি কাজ?”
ফারহা খেতে খেতে তার প্লানটা আদিলকে বুঝিয়ে দিলো৷ ফারহার প্লান শুনে আদিল বলতে লাগলো,” আপা তুই তো জিনিয়াস৷ তোর প্লান মত চললে সাপও মরবে আর লাঠিও ভাঙবে না৷
আকাশে কালো মেঘ গুলো সরে গিয়ে তারা গুলো জ্বল জ্বল করছে৷ চারিদিকে শীতল বাতাস প্রবহমান৷ মেঘ কিছুক্ষণ আগে ফ্লাট ছেড়ে বাড়িতে ফিরে আসে৷ বাড়িতে ঢুকতেই মায়রা চৌধুরীর মুখোমুখি হয়৷ মেঘ তার মা’কে কিছু বলতে নিলে মায়রা চৌধুরী মুখ ফিরিয়ে অন্যত্র চলে যায়৷ মেঘের মুখে অন্ধকারে ছেঁয়ে যায়৷ মেঘ মন খারাপ করেই তার রুমে চলে যায়৷
মায়রা না তার ছেলের সাথে কথা বলছে আর না তার স্বামী শাফায়াতের সাথে কথা বলছে৷ সে রাতে তার স্বামীকে চেপে ধরার পর পরই শাফায়াত সবটা খুলে বলে মায়রাকে৷ সবটা শুনে মায়রা চৌধুরী কিছু সময়ের জন্য স্তব্ধ হয়ে গেলো৷ তিনি যেন নিজের কান কে বিশ্বাস করতে পারছিলো না৷ তার স্বামী সন্তান একটা মেয়ের স্বামী সন্তান সংসার সব কিছু ধ্বংস করে দিলো৷ একটা মেয়ে হয়ে মায়রা চৌধুরী কিছুতেই মানতে পারছে না৷ একরাশ ঘৃনা হতাশা তার স্বামীর দিকে নিক্ষেপ করে বলে,” ছিঃ আমার ভাবতেও ঘৃনা হচ্ছে তুমি আমার স্বামী শাফায়াত৷ তুমি মেঘ আর আশরাফ ভাই তোমরা কি ভাবে পারলে মেয়েটার জীবনটা ধ্বংস করলে? তোমরা কি মানুষ? তোমাদের শরীরে কী মানুষের রক্ত নাকী কোন পশুর রক্ত ?”
” মায়রা মুখ সামলে কথা বলো৷”
মায়রা শাফায়াতের কথার পিঠে শুধু একটা কথাই বললো,” তোমরা যা করেছো তার বিচার উপরে যে আছেন সে করবে৷ মনে রেখো আল্লাহ ছাড় দেন কিন্তু ছেড়ে দেন না৷”
সে রাতের পর থেকে মায়রা তার স্বামী এবং সন্তানের সাথে কথা বলা বন্ধ করে দিলো৷
পরেরদিন সবাই একত্রে ডাইনিং টেবিলে বসে নাস্তা করছিলো তখনি শাফায়াত চৌধুরীর ফোনটা বেজে ওঠে৷ ম্যানেজারের নাম্বার দেখে শাফায়াত কল রিসিভ করে কানে ধরতে ফোনের ওপাশ থেকে যা বললো তা শুনে শাফায়াত চৌধুরী আতঁকে ওঠে হাত থেকে ফোনটা পড়ে গেল৷
.
.
.
#চলবে………..