#চেকমেট
#পর্ব-১০
ওসি তরিকুল ইসলাম সৌরভ কে বলল,
“সবাইকে একবার থানায় এনে জিজ্ঞাসাবাদ করলে ভালো হইতো। সবগুলা বাপ বাপ করে সত্যি কথা উগড়ায়ে দিতো।”
সৌরভ কফিতে চিনি মিশাতে মিশাতে বলল,
“তার জন্য তো প্রমাণ লাগবে। কারও বিরুদ্ধে কোনো প্রমাণ পেলে তবেই না এরেস্ট করা যেত। ”
তরিকুল ইসলাম বলল, আমার মনে হয় পুরা ফ্যামিলি মিলে এই কাজ করেছে।
“হতেই পারে। খুনী একজন না, কয়েকজন মিলে এই কাজ করছে। ”
“এজন্যই তো বলছি। খুন করছে ওই নীরা নামের বদ মেয়েটা। আর ওরে মদত দিছে ওর ভাই। খুনের প্ল্যান বের হইছে ওর স্বামীর মাথা থেকে। পঙ্গু মানুষ তো তাই বুদ্ধি বেশি। বইসা বইসা এইসব প্ল্যান করছে তাই। ”
সৌরভ স্মিত হেসে বলল, বুঝলাম কিন্তু তাদের ধরতে তো প্রমাণ লাগবে। এসব আমরা বলে তো আর কিছু করতে পারব না ওসি সাহেব।
ওসি সাহেব আক্ষেপের সুরে বলল,
সত্যি সৌরভ, চৌদ্দ শিকের ভিতরে যদি এক ডোজ কায়দামতো দেয়া যাইতো তাইলে এক ঘন্টায় থলের বিড়াল বাইর হইয়া যাইতো।
এমন সময় দারোগা সাহেব হন্তদন্ত হয়ে ছুটে এলেন। বললেন,
“স্যার একটা খবর আছে। ”
সৌরভ উৎসুক গলায় বলল, স্যার খবর টা হইলো হেমলক কোথায় পাওয়া যায় এই রহস্য উদঘাটন করতে পারছি।
সৌরভ নিভে গেল। বলল, আমি ভাবলাম আপনি খুনীকেই ধরে ফেলছেন।
দারোগা সাহেব তাতে ক্ষ্যান্ত হলেন না। তিনি তার মতো বলতে লাগলেন,
“স্যার হেমলক কাটার পর দেখতে গাজরের মতো। স্বাদও কিছুটা তেমন। আর এটা হার্বাল শপে খোঁজ করলে পাওয়া যাবে। তবে এটা খুব রেয়ার। ”
সৌরভ চুপচাপ শুনলেও ওসি সাহেব থামিয়ে দিয়ে বলল,
“এসব তো সৌরভ আরও দুদিন আগে নেটে খোঁজাখুজি করে পাইছে। আপনি নতুন কিছু পাইলে বলেন। ”
দারোগা সাহেব এবার দপ করে নিভে গেলেন। ভদ্রলোক অনেক সময় ধরে খুঁজে টুজে সব ইনফরমেশন বের করেছিল। আর তাতে এক বালতি জল ঢেলে দিলো।
সৌরভ দারোগা সাহেবের উদ্দেশ্য বলল,
“আপনাকে জাহাঙ্গীর কবির সম্পর্কে খোঁজ নিতে বলেছিলাম। নিয়েছেন কী?”
দারোগা সাহেব খুশি খুশি গলায় বলল, জি স্যার।
এরপর পকেট থেকে একটা কাগজ বের করে সৌরভের দিকে দিয়ে বলল, স্যার জাহাঙ্গীর কবিরের বাড়ি চাঁদপুরের সিরকালিয়ায়।
” সিরকালিয়া কী গ্রামের নাম?”
“জি স্যার। তবে উন্নতমানের গ্রাম। মফস্বলের চেয়ে একটু গ্রাম আর কী।”
“আচ্ছা। তারপর? ”
“জাহাঙ্গীর কবিরের কেউ নাই। এক ভাই আছে যিনি দেশের বাইরে থাকে। খবর আছে যে তার সাথে সম্পর্ক খারাপ। পৈতৃক ভিটা নাকি জাহাঙ্গীর কবির বিক্রি করে দিয়েছে। সেই টাকার এক টাকাও নাকি কাউকে ভাগ দেয় নি। ”
“হু ভদ্রলোক এক নম্বরের সন্ডাইত। আর বিয়েও করেছিল সেরকম একজন কে। ”
শেষ কথাগুলো বলল একটু নিচু গলায়।
দারোগা সাহেব বলল, স্যার কিছু বললেন?
সৌরভ বলল, না আপনি কন্টিনিউ করুন।
“জাহাঙ্গীর কবির যে মেয়েটাকে বিয়ে করেছে তাকেও কিন্তু বাধ্য হয়ে করেছে স্যার। ”
সৌরভ অবাক গলায় বলল, যেমন?
“জি স্যার। মেয়ের বাপকে ভুজুংভাজুং বুঝিয়ে দশ লাখ টাকা নিয়েছিল। ফেরত দেবার নাম নেই তারপর নাকি ওই মেয়েটাকে বিয়ে করেছে। তাছাড়া মেয়ের পাস্ট হিস্ট্রিও ভালো না। ”
“ক্লিয়ার করে বলুন দারোগা সাহেব। ”
“স্যার মেয়ে এর আগে একজনের সাথে ভাগছিল। সেই ছেলে নাকি মদ, গাজা খেয়ে বউ পেটাতো। সেখান থেকে ছাড়িয়ে আনা হয়েছিল আর তারপর ই জাহাঙ্গীর কবিরের সাথে বিয়ে হয়। ”
“ওরে শালা! এতো দেখি ব্লকবাস্টার সিনেমার গল্প।”
“স্যার আরেকটা ব্যাপার আপনাকে বলা হয় নি। ”
“কী ব্যাপার? ”
“মাস খানেক আগে নীরা ইন্ডিয়া গিয়েছিল। ”
“তাতে কী?”
“স্যার হেমলক কিন্তু বাংলাদেশের চেয়ে ইন্ডিয়ায় এভেইলেবল বেশী। ”
সৌরভ চমকে উঠলো। আসলেই তো! এই বিষয় টা তো ও নেটেও দেখেছে।
*****
লাবণী সৌরভ কে ফোন করে বলল,
“ভাইয়া আমি আর ওই বাড়িতে যাব না।”
সৌরভ অবাক হলো না একটুও। বলল, হোয়াট হ্যাপেন্ড?
লাবণী যা বলল তার সারমর্ম হলো এই যে, আজ বিকেলে লাবণী যথারীতি তুশল কে আঁকা শেখাতে গিয়েছে। কিন্তু গত কদিন ধরে তুশল ওর কাছে কিছু শিখছে না। হাবিজাবি এঁকে যাচ্ছে। লাবণী চেষ্টা করেছে অন্যকিছু আঁকানোর জন্য কিন্তু পারেনি। তুশল উলটো লাবণীকে দুদিন আগে খামচি দিয়েছে।
আজ আবারও যখন জোর করলো তখন লাবণীকে কামড়ে দিয়েছে। ব্যাপার টা দেখে নীরা হাসিমুখে লাবণী কে বলল,
“লাবণী আই থিংক তুশল তোমাকে আর পছন্দ করছে না। তাই তুমি না আসলেই ভালো। তাছাড়া তুমি তো এই বাড়ি গোয়েন্দাগিরী করতে আসো৷ ওপ্স সরি তুমিতো আসো স্পাইগিরী করতে। এম আই রাইট?
সব শুনে লাবণী বলল, ওকে আর যেতে হবে না। তবে এই গুটিবাজ মেয়ে আর কতো গুটিবাজি করে সেটা আমিও বের করব।
চলবে..