ছুয়ে দিলে মন পর্ব ১৬+১৭

#ছুঁয়ে দিলে মন ❤️
#লেখিকা:- তানজিনা আক্তার মিষ্টি ❤️
#পর্ব:-১৬

রাত এগারোটা…..!!!

আরশি এতক্ষণ ফোন হাতে নিয়ে শুয়েছিল। অনেকগুলো মেসেজ করেছে পড়ছিল আর দেখছিল।কখন রিপ্লে আসে ভাবতে ভাবতে আর চোখটা লেগে যায় এমন সময় ফোনের মেসেজ এসে টোন বেজে ওঠে।
সাথে সাথেই ঘুম থেকে উঠে যায়। তারপর ফোন হাতে নিয়ে দেখি মেঘ ও কে মেসেজ করেছে।

খুশি ধরে না যেন তাড়াতাড়ি কি মেসেজ করে দেখে।
দেখেই মুখে হাসি ফুটে উঠে।

মেঘ লেখেছে ও একটু বিজি ছিলাম এজন্য এফবিতে আসে নাই। আর সাথে আরেকটা কথা লিখেছি যেটা দেখেই আমার রাগ উঠে যায়।

মেঘ লেগেছে,
আপনি আমাকে নিয়ে এত টেনশন করছেন কেন। আর আমি এফবিতে আসি বানায়া সে আপনার কী তাতে। বাচ্চা মেয়ে এত ফেসবুক ঘাটাঘাটি করেন কেন কিছুদিন পরে আপনার এসএসসি পরীক্ষা।

রাগী একটা ইমোজি দেই‌ও নাকে।
হ্যাঁ তো এজন্য কি সারাদিন আমি পড়ার টেবিলে বসে থাকব নাকি।

উনি লিখেছেন,পড়ার টেবিলে বসে থাকবেন অন্য সবকিছু করবে ন আমাকে এতো মেসেজ করে বিরক্ত করবেন না প্লীজ আমি বিজি থাকি অনেক। আর আপনি আমার ছোট বোনের মতন তাই আমি চাই আপনি লেখাপড়া করুন ভালো কিছু করুন।

ছোট বোনের মত কথাটা শুনে আরশি শেষ মাথা রাগে ফেটে ওঠে মনে হয় এখন যদি মেঘকে চোখের সামনে পাই তো ওর যে কি হাল করতো ও নিজেও জানেনা।

আমি আপনার ছোট বোনের মত না ওকে। আমি আপনার বোন বাদে সবকিছু হতে রাজি আছি।
কথাটা লিখে লাভ ইমোজি দেয়।

10 মিনিট হয়ে গেল মেসেন করেছে কথাটা।কিন্তু রিপ্লাই নাই অনেক খন ধরে কি যেন লিখতে লিখতে আছে। কিন্তু এখনো দেয় নাই আধা ঘন্টা হয়ে গেছে এখনো রিপ্লে আসেনি। রাগে ফেটে যাচ্ছে আরশি এত কি লিখছে?
হ্যাঁ পাক্কা 1 ঘন্টা পর রিপ্লে আসে। সাথে সাথে আরোশী মেসেঞ্জারে ঢুকে দেখে কি?

আচ্ছা ছোট বোন ভালো থাকবেন বাই।

এটা দেখে তো আমার মেজাজ খারাপ হয়ে যায়। এই একঘন্টা পরে এই একটা এসএমএস দিলো। কিছু লিখব তার আগেই ব্লক। গড এটা এটা কি হলো? আমি তো বড় বড় চোখ করে মেসেজ অপশনে দিকে তাকিয়ে আছি। মেঘ আমাকে ব্লক করে দিল কিন্তু কেন? আমার প্রচুর খারাপ লাগতে শুরু করলো। সে কি আমাকে ইগনোর করছে। আচমকা চোখ দিয়ে আমার এক ফোটা জল গড়িয়ে পরলো হাতে সেটার দিকে আমি তাকিয়ে আছি আমার কষ্ট হচ্ছে প্রচুর কষ্ট হচ্ছে। একে তো আমি চিনি না ওকে আমি কোথায় পাব। যেটুকু মেসেজের আশা ছিল সেটাও অফ হয়ে।এখন আমি কিভাবে থাকবো আমার তো আর মেসেজ না দেখলে পাগল পাগল লাগে সবকিছু বিষাদ মানে হয়।

এটা মেয়ে কি করে করতে পারেন না প্রচুর কান্না করতে ইচ্ছে হচ্ছে।আর্য বাচ্চা বয়সের মেয়ে বয়সে কাউকে লাইক করেছে প্রচন্ড পরিমানে লাইক ভালোবেসে ফেলেছি। এখন ও নিজেকে সামলাবে কিভাবে কোথায় খুঁজে পাবে খুঁজে পাবে পাবে কিভাবে?

কাঁদতে কাঁদতে ঘুমিয়ে পড়ল….



তন্ময় আর জয় এক রুমে। জয় ল্যাপটপে কাজ করছে। তনময় ফোন টিপাটিপি করছে। হঠাৎ তনময় এর ফোনে আননন নাম্বার থেকে কল আসে। অক্টোপাসকে কিছুক্ষণ পরে দিকে তাকিয়ে আছে। অচেনা নাম্বার থেকে তো ওর ফোনে খুব একটা কল আসে না। চার আনার নাম্বার খুব একটা কেউ জানে না।

কিছু তাকিয়ে থাকে ফোন বন্ধ হয়ে যাবে বাজা তার আগে জয় মাথা উঁচু করে ওর দিকে তাকায়।

—কিরে এভাবে ফোনের দিকে তাকিয়ে আছিস কেন রিসিভ কর…!!

—নারে আননোন নাম্বার। কে নাকে হয়তো ভুলে এসেছে ধরার দরকার নাই।

—দরকারে ও তোকে ফোন দিতে পারে? হয়তো তার আগে নাম্বার কিছু হয়েছে এজন্য নতুন নাম্বার দিয়ে ফোন দিছে।

কথাটা শুনে তনময় কিছুক্ষণ ভাবল সে পর্যন্ত ফোন কেটে গেছে।
—-কেটে গেল থাক লাগবোনা।

জয় আর কিছু বলল না আবার কাজে মনোযোগ দিল কিছুদিন বিয়ে বাড়িতে থাকার জন্য একদম কাছ করতে পারে নাই তাই এখন কিছু কাজ সেরে নিচ্ছে।

সঙ্গে সঙ্গে আমার ফোন বেজে উঠল।

—-এবারও কি সে নাম্বার ফোন এসেছে?

—হ্যাঁ….!!

—এবার ফোনটা রিসিভ কর দরকার না থাকলে ফোন দিত না।

আমার ফোন রিসিভ করে ফোন কানে দিতেই ওপাশ থেকে ঝাঁজালো কণ্ঠ আসে।

— এই যে আপনার এতো ভাবো কেন নিজে তো ফোন নাম্বার দিয়েই গেলে না। আবার আমি কত কষ্ট করে নাম্বার জোগাড় করলাম ফোন দিতাছি আর আপনি ফোন রিসিভ করতেছেন না।

রেগে চিৎকার করে কথাটা বলল তিতলি। ইদ্রাকপুর সাত আসমানের উপরে উঠে গেছে।কত কষ্ট করে আপুর ফোন থেকে নাম্বারটা খুঁজে নিলাম আর এই লোকটা কিনা ভাব দেখাচ্ছে ফোন ধরতে গিয়ে ও। একবার প্রেম করি তারপরে তোমাকে বুঝাবো এইতিতলি কি জিনিস? আমার সাথে ভাব নিওনা!

মনে মনে কথা গুলো ভাবছিলো।

এদিকে তনময় তিতলির কথা বলার ধরন বুঝে গেছে কে। এই নাম্বার কোথায় পেলো। আমি তো দেইনি। বাপ কিতেজ এভাবে চিৎকার করে কেউ আমার সাথে কথা বলে না আর এই মেয়া কিভাবে কথা বলছ আমার সাথে। কিছু যে বলবে তার ও সুযোগ পাচ্ছে না একে একে থেকে বকেই যাচ্ছে।

—এইযে বুবা আপনি কি আমার ফোন পেয়ে বোবা হয়ে গেলেন? কথা বলেন আর আমার কাছে ক্ষমা চান ছড়ি বলেন তাড়াতাড়ি সরি বলেন…!!!

তনময় কিছু বলছেনা হতভম্ব হয়ে বসে আছে। তিতলি কথা বলার ধরন দেখে এমন ভাবে অধিকার খাটিয়ে কথা বলছে যেন আমি ওর প্রেমিক।
এদিকে জয় তনময়ের বিশমিত মুখ বুঝতে পারছে কিছু একটা ঘটে ফোনে।

—কিরে এভাবে হ্যাংলার মতো অসহায় মুখ করে রেখেছিস কেন? কথা বল। অচেনাকেউ নাকি,

—ওই তিতরি মেয়েটা আমার নাম্বার কিভাবে পেল তুই দিয়েছিস তাই না?

—এবার বুঝতে পারল কি জন্য তার মুখ অমন করে রেখেছিল। পাগল নাকি আমি দেশে যাব কেন? দিলে তোকে বলতাম না।

—আমি শুধুই দিয়েছি তুই আমাকে বলেছিলি নাম্বার দিয়ে আসতে আমি দেই নাই তাই দিয়ে আসছে সেটা সত্যি করে বল।
ফোন ওভাবে রেখেই জয়ের সাথে ঝগড়া শুরু করে দিল।এদিকে তিতলি চিৎকার করে কথা বলছি কিন্তু কোন রিপ্লাই দিচ্ছে না তাই ফোন কেটে আবার ফোন দিল।

তন্ময় ফোন রিসিভ করে বলল।

—-সত্যি করে বলো তুমি আমার নাম্বার কোথায় পেয়েছো?

—-আমি কি আপনাকে আবার মিথ্যা কখনো বলেছি আমি আপনার নাম্বার নিয়ে আপুর ফোন থেকে নিয়েছি!

জয় কে ছেড়ে দিলো এবার জয় আগুন হয়ে ওর দিকে তাকিয়ে আছে ফোন নিয়ে ঘর ছেড়ে বেরিয়ে গেল।
জয় আর গেল না কারণ ওরা এখন অনেক কাজ আছে। কাজ করতে লাগল হঠাৎওর চোখের সামনে মিষ্টি মুখটা চোখের সামনে ভেসে উঠলো।
সাথে সাথে ও বুকে ব্যথা অনুভব করল,

সেদিন মিষ্টি ওকে জড়িয়ে ধরার পর থেকেই এই অদ্ভুত একটাই ফিলিংস হয়। মনে হয় মিষ্টি কে জড়িয়ে ধরে রাখি এই বুকের মাঝে। কিন্তু এটা কি সম্ভব না সম্ভব না কখনো সম্ভব না।একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে আবার কাজে মনোযোগ দিলো কিন্তু মনোযোগ কাজে রাখতে পারছে না। বারবার মিষ্টি মুখটা ভেসে উঠছে চোখের সামনে।




এদিকে তিতলি তনময়ের সাথে তুমুল ঝগড়া চলছে শুরু করে দিয়েছে।

—আর একদিন যদি আপনি আমার ফোন রিসিভ করতে লেট করেছেন তো….

—একদিন কেন আমি তোমার ফোন রিসিভ করব না।অসভ্য মেয়ে নাম্বার দেয়নি তার মানে আমি তোমার সাথে কথা বলতে চাই না তাও তুমি আমার নাম্বারে ফোন দিয়েছো কেন? বাচ্চা একটা মেয়ে সে নাকি প্রেম করবে?

—দেখুন আপনি আমাকে বাচ্চা বলবেন না আমি যথেষ্ট বড় হয়েছি! আর কিছুদিন পর আমি কলেজে উঠবো। আমাকে বাচ্চা বলবেন আর আমি কোন দিক দিয়ে বাচ্চা।

—-তুমি কোন দিক দিয়ে বাচ্চা না তাই বল।

—আপনি আমাকে অপমান করছেন আপনি আমার সাথে প্রেম করবেন এটাই শেষ কথা।

—তুমি আমাকে দিচ্ছো?

—হ্যাঁ ধরে নিন তাই। এবার আমাকে জিজ্ঞেস করুন তিতলি জানু কেমন আছো?

—অসম্ভব তোমাকেজান ডাকবো ইম্পসিবল আর ফোন দিবানা।

—-দেবোই দেবোই 100 বার দিব!

শত বলেও তিতলিকে থামানো গেল না এইভাবে আধা ঘন্টা উপরে কথা বলা হলো তারপর তিতলি গুড নাইট আই লাভ ইউ জানু বলে ফোন কেটে দিল। আর তনময় অবাক হয়ে বোনের দিকে তাকিয়ে আছে কি ডেঞ্জারেস মেয়ের পাল্লায় পরলাম রে বাবা। এইতো আমার সাথে প্রেম করি ছাড়বে দেখে যায়।

ফোনের দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে আকাশের দিকে তাকায় তনময়।ও ও তিতলিকে প্রথম দেখেই পছন্দ করেছে কিন্তু বয়সের ডিফারেন্স অনেক। সেটাও মেটার করতো না অ ওনিজে তিতলিকে ভালোবাসি কথাটা বলতো কিন্তু তিতলির বয়স খুবই কম।
ওর সাথে আমাকে কি অল ফ্যামিলি মেনে নিবে। অবশ্যই নিবে না ওর বিয়ের বয়স হয় নাই এখন আর লেখা পড়ার বয়স আর ওর থেকে শুধু আমার জন্য বাইরের সৌন্দর্যটা ভেতর থেকে ভালোবাসা তৈরি হয় নাই।আমার বাইরের সৌন্দর্য দেখে পেছনে পেছনে পড়েছে ভাবছি এটা ভালোবাসা কিন্তু কিছুদিন পরেই মোহ কেটে গেলে ওর মনে হবে ও আর আমাকে ভালোবাসে না।

তখন আমি কি নিয়ে থাকবো তা থেকে এখনই স্নান করবো ওকে বুঝতে দেবনা যাওয়ার পথে আমার কিছুটা ফিলিংস আছে এটা সময়ের সাথে সাথে চলে যাবে কিন্তু ওর সাথে কথা বলে যোগাযোগ করলে তখন আমি আরো বেশি আরো দুর্বল হয়ে পড়বে তখন আর নিজেকে আটকে রাখতে পারব না।




মেঘ একটা বিরক্তিকর চাহনি দিয়ে ফোনের দিকে তাকিয়ে আছে। মেয়েটার সাহস কত বড় বাচ্চা একটা পুচকে মেয়ে মিষ্টি সমান সে আমাকে বোন ছাড়া অন্য কিছু ভাবতে বলছে। আমার লাভ ইমোজি দিচ্ছে। এই দিনও আমায় দেখতে হলো। রাগে-দুঃখে ও কি করবে ভেবে পাচ্ছে না। মেয়েটা কিছুদিন পরে দেশ চালাচ্ছে বারবার বন্টন বলল মানে না আজকে তো একদম বেশি আর কথা বলে মেয়েটা আরও বেশি সিরিয়াস হয়ে পড়বে এর থেকে ব্লক করে রাখাটাই ভালো।

এজন্য মেঘ আরশি কে ব্লক করে দেয়। আবার কি মনে করে যেন নুপুর এর নাম্বারে একটা কল লাগায়।

এই নাম্বারটা নুপুর চেনে নাপ্রায় এক বছর ধরে এই নাম্বার দিয়ে নুপুরের সাথে রাতে কিছু কথা হয় কিন্তু নুপুর জানেনা এই লোকটাকেও বিরক্ত হয়ে ঘুমের মাঝেই প্রথম বতব রিসিভ করতো জিজ্ঞেস করতেও কি কে আপনি পরিচয় অনেক ভাবিকে হতো কিন্তু মেয়ে তেমন কিছুই বলতো না নুপুরের কয়েকটা কন্ঠ শুনে ফোন কেটে দিত।

নুপুর বিরক্ত হয়ে আবার ঘুমিয়ে যেত।দিনের বেলা আবার ফোন দিলে সবসময় নাম্বারটা বন্ধ পেত। নুপুরকে মেঘ 1 বছর ধরে ভালোবাসে। কিন্তু নুপুর সেটা জানে না কারণ উপর কি কখনই বলা হয় নাই। মেঘের লেখাপড়া শেষ করে ফাস্ট যখন বিজনেসে ঢুকে তখন হয়তো ইন্টার সেকেন্ড ইয়ারে ছিল। তখন নুপুরকে ও দেখেছিল কিছু বাচ্চাদের সাথে ক্রিকেট খেলছে।একটা পার্কে সেদিন মিষ্টি কে নিয়ে গেছিল মিষ্টি তখন ক্লাস এইটে প্রথম বাচ্চা বেরাতে পছন্দ করে বোনের শখ পূরণ করতে ওকে নিয়ে পার্কে যায় মিষ্টি আশেপাশে ঘুরে দেখছিলো। মেঘ পাশে দাঁড়িয়ে ছিল হঠাৎ ওর চোখ যায় মাঠে সেখানে নুপুর ক্রিকেট খেলছিল। সেখান থেকে ভালো লাগা শুরু তারপরে নুপুরের খোঁজ খবর নিয়ে জানতে পারে নুপুর কোথায় পড়ে মাঝে মাঝে ওই কলেজে যেত দূর থেকে দেখতো সামনে যেতে না।তারপর কিছুদিন পর নুপুরের পরীক্ষা হয়ে যায় কিন্তু ভার্সিটি এডমিশন নেয়না ও নাকি জব করবে। একভাবে খোঁজ পায় তখন আমি অবাক হয়ে লেখাপড়া বাদ দিয়ে জব করবে কেন তখন ওর পরিবার সম্পর্কে জানতে পারি ওর পরিবারে আর্থিক প্রবলেম দেখা দেয়।এজন্য ও আর লেখাপড়া করবে না তখন আমি আমার এক কর্মী কে ওর কাছে আমার কোম্পানির চাকরির কথা জানায় তার পরেও এখানে আসে ইন্টারভিউ দিয়ে চাকরিতে নিযুক্ত হয়। আমিও সবসময় সাথে রুট ব্যবহার করি যাতে বুঝতে না পারে আমি আগে থেকে চিনি।

খুব তাড়াতাড়ি তোমাকে জানিয়ে দেবো আমার মনের কথা মায়াবতী। এবার তোমাকে আমার ঘরে বউ হয়ে আসতে হবে। বাবা মাকে যারা তবে তার তার বিয়ের জন্য পাগল হয়ে গেছে।

।#ছুঁয়ে দিলে মন ❤️
#লেখিকা:- তানজিনা আক্তার মিষ্টি ❤️
#পর্ব:-১৭

তিন মাস পর।

আজকের মিষ্টির এইচএসসি ফাস্ট পরীক্ষা। তিন মাস মিষ্টি মনোযোগসহকারে লেখাপড়া করেছে অন্য কোন দিকে মনোযোগ দেয় নি।মাঝে একদিন বন্ধুরা মিলে বেড়াতে গিয়েছিল বিয়ে বাড়ি থেকে আসার পর মনটা একটু খারাপ ছিল তারপর আস্তে আস্তে সব ঠিক হয়ে আর সব ভুলে গেছে।আরাফ নামের কারো সাথে যাওয়ার সাক্ষাৎ হয়েছিল তাকে হলে গেছে এখনো লেখাপড়া নিয়ে প্রচুর বিজি। পড়ালেখায় প্রথমে গ্রাফিতি দিল এখন সে পরিবারের সবার দিকে তাকিয়ে ভালো রেজাল্ট করার আপ্রাণ চেষ্টা করে যাচ্ছে। মাঝখানে বসে দুই তিন দিন লেখা পড়া হয়নি ভাইয়ের বিয়ে বলে কথা।

এছাড়া আরও ছুটি পায় নাই। মিষ্টি বই হাতেই বসে আছি হঠাৎ খাবারের প্লেট নিয়ে আম্মুর রুমের।একটু পরে বের হতে হবে এজন্য আম্মু আমার পেছনে ঘুরে ঘুরে খাইয়ে দিচ্ছে আর আমি এখন রেডি হবো।

—-আমার খাব না প্লিজ?

—-এই তুই লোকমা খেলে কোনদিন পেট ভরে। চুপচাপ খা তুই তার হাত দিয়ে খাচ্ছিস না আমি তো খাইয়ে দিচ্ছি তাও এত বাহানা কেন তোর।ঠিকমতো খাবার খেয়ে নাও গেলে পরীক্ষার হলে যে দেখবি তখন খিদে পেয়েছে খিদের জ্বালায় ভালো মত পরীক্ষা দিতে পারবি না।

—আম্মু,

—চুপ আমি কোন কথা শুনতে চাই না তুই তোর কাজ কর আমি তোর কাজে তো ডিস্টার্ব করছি না খাইয়ে দিচ্ছে খাবি আর যা করার তুই করতে থাক।

আম্মুর সাথে আর বেশি কথা বলল না মিষ্টি কারন জানেআমার কোন কথা শুনবে না খাইয়ে ছাড়বে এজন্য আর এনার্জি নষ্ট না করে নিজের ওরনা বেল বাধতে লাগলো।
এর মাঝে ভাবি রুমে ঢুকলো।

—ভাবী প্লীজ একটু হেল্প করো। আমি পারছি না।

ভাবী এসে আমার ওড়না বাদে হেল্প করলো।সাড়ে নয়টা বাজে পরীক্ষা 10 টা থেকে আর এখান থেকে যাইতে মনে হয় 20 মিনিট টাইম লাগে।

রেডি হয়ে ভাবি আম্মু আব্বুর কাছে বলে ভাইয়ের সাথে গাড়িতে উঠে বসলাম।

গাড়িতে বসে চুপ করে নীরব হয়ে আছি।

—কিরে এত নিশ্চুপ হয়ে আছিস কেন? এত টেনশন করার কিছু নাই মাথা ঠান্ডা রেখে পরীক্ষা দিবি আর তাড়াহুড়া করবিনা।

—আচ্ছা।

আর একটা কথা বললাম না একটু পরপর ভাইয়া এটা ওটা জিজ্ঞেস করে আমি শুধু উত্তর দিলাম ভাইয়া মাথা ঠান্ডা রাখতে পারল তাড়াহুড়া করতে না করল। গেটের সামনে আসতে দুজনে নেমে পড়লাম ভাই আমার মাথায় হাত বুলিয়ে গালে হাত রেখে।

—সাবধানে পরীক্ষা দিবি। ফ্রেন্ডরা ডাকাডাকি করলে সাড়া দিবে না কথা বললে তখন তোর খাতা নিয়ে নেবেন যেটা কমন পড়বে সেটা আগে সলভ করে নিবি।
আর পরীক্ষার শেষে পুরো খাতা রিভিশন দিবি ভালো করে।

আমি মাথা নেড়ে হ্যাঁ বলতেই ভাইয়া আমার কপালের কিস একে দিয়ে মারা যান এ চলে যাও আমি ভেতরে চলে যায়।

কারণ ভেতরে ঢোকার নিয়ম নাই শুধু স্টুডেন্ট ঢুকতে পারবে। ভাইয়া এখন অফিসে যাবে। আমার পরীক্ষা শেষে হয় ভাইয়া না হলে আব্বু নিতে আসবে।

ক্লাসে ঢুকতেই আমার একটা ফ্রেন্ডের সাথে দেখা হল। আর সব গুলা কোথায় পরেছে কে জানে ওর সাথে আমার রুল কাছাকাছি তবু আমি ফার্স্ট আরো সবার লাস্টের সিটে বসেছে। তবুও দুজনের মাঝে কিছু কথা হলো।পাঁচ মিনিট পরে স্যার খাতা নিয়ে ভেতরে ঢুকলো 10 মিনিট আগে সবাইকে খাতা দিয়ে দিল রোল মার্জিন টানার জন্য। 10 মিনিট পর প্রশ্ন আসলো আমার তো ভয়ে হাত-পা কাঁপছে অস্থির অস্থির লাগছে কেমন আসবে কমন পরবে কি পরবে না আমার সামনে দাঁড়িয়ে দেখছে ঘন্টা পড়লে সবাইকে প্রশ্ন দেবে।

সেই সময় আসন্ন ঘন্টা পড়ার সাথে সাথেই দুইজন আরো টিচার্স রুমে ঢুকলো তারপর তিন লাইনে তিনজন টিচার প্রশ্ন দিতে লাগল।




—-হ্যাঁ মিষ্টি তোর পরীক্ষা কেমন হইলো রে। নিশ্চয়ই ভালো হয়েছে তাইনা তোকে কত ডাকলাম যদি শুনতে পারলি না।

—জানিনা কেমন হয়েছে কিছু কমন পরছিলো আবার কিছু পরেও নাই আর তুই আমার ডাকছিলে কেনো?

–সব কোশ্চেন সলভ আর আমার নি আট নাম্বারের একটা থিম ভুলে গেছিলাম তাই তোরে জিজ্ঞেস করতে চাইছিলাম।

—-এত পেছনে বসে তুই আমারে ডরাস কেন তোরা আশে পাশে কেউ ছিল না আর আমি যদি এখান থেকে ধরে বলতাম তুই শুনতে পাচ্ছি না ওটা আমার খাতা নিয়ে যেত আমি তো সামনে বসছি দেখেন না স্যার সবসময় আমার উপর নজর রাখে।

—হ বুঝছি।

দুজনে কথা বলতে বলতে দুতলা থেকে আসলো।
পুলিশ বালা আসতেই আরো দুজন ফ্রেন্ডের সাথে দেখা হয়ে গেল তারপর মাঠে আসতে সবাই একসাথে তারপর আজকে পরীক্ষা কেমন হল কি কঠিন আসছিল কার পরীক্ষা কেমন হয়েছে এইসব নিয়ে কথা বলতে বলতে গেটের কাছে আসলো। আজকে ইংরেজি পরীক্ষা ছিল।
গেটের বাইরে আসতে দেখলাম ভাইয়া দাঁড়িয়ে আছে আমি ভাইয়ার সামনে যেতেই ভাইয়া নানা প্রশ্ন শুরু করে দিল। বললাম মোটামুটি ভালো হয়েছে।আমার পরীক্ষা মোটামুটি ভালই হয়েছে তো বুঝিনা যখন খারাপ হয় তখন বলবে ভালো পরীক্ষা দিলি এখন খারাপ লাগে এজন্য আমি কখনো ভাল পরীক্ষা দিলেও ভালো বলি না মোটামুটি বলি।

ভাই আমার প্রশ্ন নিয়ে দেখতে লাগল দেখিতে গাড়িতে উঠতে বললো আমাকে তারপর পানির বোতল আরো কিছু খাবার এনে আমার হাতে দিলো দোকান থেকে। তারপর নিজেও ওঠে গাড়ি স্টার্ট দিল আর আমি সেগুলো খেতে লাগলাম।

বাসার সামনে নামিয়ে দিয়ে ভাই আবার অফিসে চলে গেলো। আর আমি বাসার ভেতরে চলে এলাম। দরজা খোলাই ছিল। ‌ভাবি মনে হয় কেবল রান্না শেষ করে এসেছে আম্মু সোফায় বসে পানি খাচ্ছি আর ঘড়ির দিকে তাকাচ্ছে আমাকে নিয়ে টেনশন করছে বোঝা যাচ্ছে মুখ দেখে।

—আরে মিষ্টি এসে পরেছো ঐ দেখো আম্মু তোমার জন্য চিন্তায় চিন্তায় পাগল হয়ে যাচ্ছে। তা তোমার পরীক্ষা কেমন হল কমন পড়েছিল তো সব।

—আরে ভাবি তোমার কি মনে হয় আমার সবকিছুই কমন পড়বে আমি অতটা ভালো স্টুডেন্ট না বুঝছো কিছু পরেছিল আর যেগুলা পরেনা এগুলো বানিয়ে বানিয়ে দিয়ে আসছি।

—আচ্ছা গুড সবাই আছে তো এতেই হবে যাও আমার সাথে কথা বল।

আমাদের কথার মাঝে আম্মু তাড়াতাড়ি আমার কাছে এসে জিজ্ঞেস করতে লাগল পরীক্ষা কেমন হয়েছে আমরা তো খুবই ইমোশনাল একটুতেই হাঁপিয়ে যায় তার আবার আবার পেশার।এজন্য চিন্তা করলে অসুস্থ হয়ে পড়ে আজকে অসুস্থ লাগছে আমাকে নিয়ে বেশি টেনশন করছে আমি তাকে সান্তনা দিয়ে বললাম আমার পরীক্ষা খুব ভালো হয়েছে আম্মুকে খারাপ হলে কখনো খারাপ বলতে পাই না ভালোই বলতে হয়।

আমি নিশ্চিন্ত হল মুখে হাসি ফুটে উঠল তারপরে আমাকে ফ্রেশ হতে বলে নিজে খাবার টেবিলে চলে গেল এখন খাবার নিয়ে আমার রুমে আসবে আমি জানি।রুমে এসে ফ্রেশ হলাম তারপর আম্মু চলে এল আমি নিজে হাতে খেতে চাইলো আম্মু খেতে দিল না নিজে খাইয়ে দিলো তার পর আম্মুর কোলে মাথা রেখে শুয়ে পড়লাম রাতে ঘুম হয়নি পরীক্ষার টেনশনে টেনশনে ঘুমাতে পারি নাই এখন একটু ঘুমিয়ে নেই।

আম্মুকে বললাম দুই ঘন্টা পর আমাকে ডেকে দিও তারপর আবার পড়তে বসবো কালকে বাংলা পরীক্ষা। আর বাংলা অনেক পড়া বাংলা সহজ হলেও পড়ে যেতে হয় অনেক পোড়াবোই কাবার করা যায় না একদিনে।
দুই ঘন্টা পর আম্মু ডাকে উঠে বসলাম আড়মোড়া ভেঙে ফ্রেশ হয়ে এসে পড়তে বসে আমার দুধ নিয়ে এসে হাজির এই জিনিসটা আমার সবচেয়ে না পছন্দ কিন্তু আম্মুর এক বানিদুধ না খেলে আমায় এক্জাম ভালো হবে না আমি পড়তে পারব না অসুস্থ হয়ে পরবো শরীরে শক্তি দরকার এর জন্য ডিম আর দুধ খেতে হবে ডিম আমার পছন্দ তবুও ডিম সিদ্ধ খেতে খেতে আমার মুখ পৌঁছে গেছে মনে হয় আর দুধ টা আমি কখনোই পছন্দ করিনা তবু আম্মুর যন্ত্রণায় খেতে হয়।

সন্ধার আযানের আধা ঘন্টা পর্যন্ত পড়লাম দেড় ঘন্টা পড়লাম তারপর নামাজ পরে আবার পড়তে বসলাম কিছুক্ষণ পরে এর মাঝে ভাই আসলো কখন আসছে জানি না আমার রুমে এসে আমার পাশে বসে পরলো আমি বসে বসে বসে দেখবে।শত বড় ভাইয়ের শুনবে না প্রথম প্রথম ভাইয়া বসে থাকলে আবার পড়তে মন চাইতো না আমি তো খুব পড়ার আগে না পরে শুয়ে ঘুমাতাম এর জন্য এই কাজটা করে এখন অবশ্য আমি সেই কাজটা করি না। তবুও ভাইয়া যে তোমার বাসা থেকে আমি পড়তে বসলাম ওর পাশেই বসে থাকে।

ফোনে আব্বুর সাথে কথা বলছিলাম কারণ আবার আসছে নাকি আজকে লেট হবে সকালে ফ্লাইটে চিটাগাং গেছে ঐখানে না একটা কাজ আছে আসতে আসতে রাত হয়ে যাবে আমার পাশে বসে আছে আমি বিরক্ত হয়ে তাকিয়ে বললাম।

—-এই তোর বিরক্ত লাগে না এইভাবে বসে আছি বোরিং লাগছে না।

—সেসব তো আর ভাবতে হবে না তুই পড়।

—আমার কালকে বাংলা পরীক্ষা এটা আমি না ফুল্ল ভালো দেবো তবু পর আবার রিভিশন বিএম পরীক্ষার হলে তুই এত টেনশন নিস না আমি পড়বো ঠিকমতো তুই যা রেস্ট নে।

অনেক বালা ফর ভাইয়া আচ্ছা বলে নয়টার দিকে চলে গেল তার কিছুক্ষণ পর ডিনারের টাইম হয়ে গেছে আমি পরে আসতে চাইছিল খাবে দিতে কিন্তু আমি নিজের ইচ্ছে করে নিচে নামলাম সবার সাথে ডিনার করে নিলাম আব্বা এখনো আসে নাই হয়তো 10:00 11 টা বাজবে।




ঘড়ির কাটায় 11:00 টা বাজে একটু আগেই মিষ্টির আব্বু এসেছে।সবাই যার যার রুমে এখন বৃষ্টির ভাবি খাটের উপর বইসা আছে অনেকক্ষণ ধরে তার দৃষ্টি বারান্দার দিকে। জানালায় সে এক মানুষের দিকে তাকিয়ে আছে যে সিগারেটে ফূ দিচ্ছে অনবরত।

সে আর কেউ না মেঘ।
মেঘের দৃষ্টি অন্ধকার রাস্তার দিকে হালকা ল্যাম্পপোস্টের আলোতে আবছা রাস্তা দেখা যাচ্ছে কিন্তু অন্ধকারে বেশি।
যে সিগারেট সে কখনোই পছন্দ করত না সেই সিগারেটই এখন তার সঙ্গী। এটা হল তার বুকের জ্বালা নেভানোর জন্য যথেষ্ট। এখানে সামনে দিকে তাকিয়ে আছে আর সিগারেটের ফু দিচ্ছে। হঠাৎ একটা নরম তুলতুলে হাত মেঘকে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরে সে আর কেউ না স্ত্রী। 2 মাস হলো ওদের বিয়ে হয়েছে। কিন্তু এখনো স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্ক হয়নি। আসলে মেঘ আর স্ত্রীর কাছে যায়নি এমনকি কথা বলে না কখনো। বাসার সবাই জানে ওদের মধ্যে স্বাভাবিক সম্পর্ক কিন্তু ওরা দুইজন জানে ওদের মধ্যে কিছু স্বাভাবিক না।

মেঘেরই স্ত্রী মেঘকে জড়িয়ে ধরতেই মেঘ রেগে আগুন হয়ে ধাক্কা দিয়ে নিজে থেকে সরিয়ে দেয়। ছিটকে দূরে সরে যায়অরিস তেরি অসহায় মুখ করে মেঝের দিকে তাকিয়ে আছে তার চোখ ছল ছল করছে। আর মেঘের চোখ দিয়ে আগুন ঝরছে মনে হয়।

—-তোমাকে বলছি না আমাকে টাচ করবে না।

ওর স্ত্রী ওকে কিছু বলতে যাবে তারা একই মেঘকে আঙুল উঠিয়ে বলে।

—আমার থেকে দূরত্ব বজায় করে চলবে। কথাটা মনে রেখো না হলে তোমার জন্য খারাপ কিছু হবে।

বলেই মেঘ সিকারেটের শেষ টান দিয়ে সেটা বারান্দা দিয়ে ফেলে দিয়ে গটগট পায়ে রুমে এসে শুয়ে পড়ে।

আর মেয়েটি ওর যাওয়ার পানে একদৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। চোখ দিয়ে টপটপ করে পানি পড়ছে।শেয়ার ভেতরে না আসে ওইখানে ধরে বসে পড়ে নিশ্চুপ ভাবে কান্না করতে থাকে।

চলবে❤️

চলবে❤️

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here