#তবুও_তোমায়_ভালোবেসেছি
#লেখা_ইভানা
#পার্ট_১৩
দেবরের বৌ প্রথম দিন শ্বাশুড় বাড়িতে এসে আমাকে হুকুম করলো তার জন্য চা বানিয়ে তার রুমে দিয়ে আসতে। আমি কিছু বলতে পারি নি কারণ আমার স্বামীর প্রতি আমার কোনো অধিকার নেই সেখানে তাদের বাড়ির কারো সাথে জোর গলায় কথা বলা আমার জন্য মানায় না।
শ্বাশুড়ি মা রেগে গেছে রিফাত কাউকে কিছু না জানিয়ে বিয়ে করেছে আর আবিরও ভেবেছিলো ছোট ভাইয়ের বিয়ে ধুমধাম করে দিবে সেটা হয় নি বলে খারাপ লাগছে আবার রিফাতে বৌয়ের প্রথমদিনের আচার-আচরণ শুনে রেগে আছে। আমার নেই কোনো রাগ নেই কোনো অধিকার তাই চা বানিয়ে নিয়ে রিফাতের রুমের দরজায় নক করতেই ওর বৌ চায়ের কাপ হাতে নিয়ে দরজা লাগিয়ে দিলো।
বাচ্চাদের জন্য দুধ গরম করে রুমে নিয়ে গেলাম। আবির ঘুমাচ্ছে সাথে বাচ্চারাও ঘুমাচ্ছে। দুপুরে এখন পর্যন্ত কারো খাওয়া হয় নি তাই আবিরকে ডাক দিলাম,
“এই যে শুনেছেন, এখন উঠে খেয়ে নেন”
“আমি ঘুমাচ্ছিনা তাই শুনেছি ”
“তাহলে উঠেন ”
“মা কি খেয়েছে? ”
“না, রুমের দরজা বন্ধ করে আছে ”
“রিফাত হঠাৎ করে বিয়ে করবে এটা মা মেনে নিতে পারে নি ”
“হুম কিন্তু এখন তো বিয়ে হয়ে গেছো তাহলে মেনে না নেওয়ার কোনো কারন নেই, ওরা সুখে থাকলে আর কি চাই ”
“হ্যাঁ মাকে একটু বুঝাতে হবে ”
“আপনি গিয়ে মায়ের সাথে কথা বলুন ”
“হ্যাঁ যাচ্ছি ”
আবির মায়ের সাথে কথা বলতে গেলো, আমিও আমার মেয়েদের খাইয়ে দিচ্ছি। আমার মেয়েরা এতো লক্ষ্মী যে খাওয়ার সময় আমাকে জ্বালায় না, ঘুমন্ত অবস্থায় খেয়ে নেয়।
আবির মাকে বুঝিয়ে শুনিয়ে খেতে নিয়ে এসেছে। রিফাত প্লেট খাবার বেড়ে রুমে নিয়ে যাচ্ছে দেখে মা বললো,
-তুই রুমে খাবার নিয়ে যাচ্ছিস কেনো? আমাদের সাথে বসে খা আর তোর বৌকে ডেকে নিয়ে আয়
-মা ও সবার সামনে বসে খেতে কম্ফোর্টাবেল ফিল করবে না তাই রুমে খাবার দিয়ে আসছি।
-তোর বৌকে খাবার খেতে হবে আমাদের সাথে বসে খেতে হবে কথাটা তাকে বুঝিয়ে দিস।
রিফাত আর কোনো কথা না বলে চলে গেলো। আবির মাকে বললো,
-মা তুমি ওদের বিয়েটা মেনে নেও, এখন আর রাগ করে থেকো না।
-আমার রাগ হচ্ছে ওর বৌয়ের চালচলন কথাবার্তা দেখে, আজ এসে ইভাকে চা বানানোর জন্য বলে তাহলে ভাবতে পারিস মেয়েটা কেমন।
-থাক না মা সবাই এক হয় না।
-আমি ভালোয় ভালো, খারাপে সঙ্গে খারাপ তাতে যদি এ বাড়ি ছেড়ে চলে যায় তাহলে চলে যাক
রিফাতের বৌ একটা টিশার্ট আর প্যান্ট পড়ে এসেছে। মা চেয়ারে বসা থেকে উঠে দাঁড়িয়ে বললো,
-এই মেয়ে তুমি এসব কি পরেছো? শ্বাশুড়ি -ভাসুরের সামনে এসব পড়ে কেউ আসে?
-এক্সকিউজ, আমার রিনি এই মেয়ে মেয়ে এটা আবার কোন ধরনের কথা আর শুনেন আমি বিদেশে থেকেছি তাদের কালচারের সাথে আমি অভ্যস্ত।
-আমার বাড়িতে এসব চলবে না ভদ্র ভাবে থাকতে হবে। এই আমার বড় বৌকে দেখেছো তার মতো করে। (মা আমাকে দেখিয়ে বলেছে)
-আমি কেনো উনার মতো হবো? উনি একজন বিবাহিত পুরুষকে বিয়ে করেছে আমি তো তা করি নি কারো সঙ্গে আমার তুলনা করবেন না। আর হ্যাঁ রিফাত তোমাকে বলছি আমার খাবার আমার রুমে গিয়ে আসো।
রিনি রুমে চলে গেলো ওর পিছন পিছন রিফাত ও গেলো। মা খাওয়া ছেড়ে উঠে নিজের রুমে গেলো। আজ কারো খাওয়া হবে না বুঝে গেছি তাই এক কাপ চা বানিয়ে নিয়ে বারান্দায় গিয়ে বসি।আমার মন মেজাজ খারাপ থাকলে চা খেলে একটু শান্তি লাগে। চায়ের কাপে চুমুক দিতে আবির এসে বলে,
“ভরদুপুরে চা না খেয়ে, ভাত খেলে তো পারো ”
“না খিদে নেই ”
“তুমি এতো সাধাসিধে কি শুধু বিবাহিত পুরুষকে বিয়ে করেছো তাই নাকি আগে থেকে এমন ছিলে? ”
“কোথাও কি লেখা আছে বিবাহিত পুরুষকে বিয়ে করলে সাধাসিধে থাকতে হবে? ”
“না কিন্তু,,,,,,
” কিন্তু কি? আপনি তো মহা ঝামেলার মানুষ। এখনো কি আপনাকে বলেছি আমি সাধাসিধে থাকতে পছন্দ করি? আপনাকে বিয়ে করেছি বলে এমন সাধারণ থাকি? শুনে রাখেন আমি কাউকে দেখানোর জন্য সাজি না মন চাইলে সাজবো নয়তো না।কেউ আমাকে ভালোবাসলে আমার সাদামাটা রং দেখে ভালোবাসবে, উজ্জ্বল রং দেখে না। সবাইকে আমার মতো ভাববেন না। আমি এমন কেউ না যে আমার সঙ্গে কাউকে তুলনা করে ভাই ভাইয়ে সম্পর্ক নষ্ট করবেন বা মা ছেলের সম্পর্ক নষ্ট হবে। আমাকে নিয়ে যে যা খুশি বলুক আমি কিছু মনে করি না”
“তুমি এতো রেগে যাচ্ছো কেনো? তোমাকে খারাপ কিছু বলি নি তো?”
“আমার রাগ করার কি যথেষ্ট আছে না বলুন? ”
“শান্ত হয়ে বলো কি হয়েছে? ”
“কিছু হয় নি, আমাকে একা থাকতে দিন ”
“একটু হলেও বুঝেছি, রিনির কথায় খারাপ লেগেছে ”
“না”
“তাহলে আমি প্রতিবাদ করি নি তাই ”
“না”
“মিথ্যে বলবে না, জানি এর জন্যই তোমার খারাপ লেগেছে ”
“আমার ভালো লাগুক বা খারাপ লাগুক তাতে আপনার কি? আমি কি আপনার আপনজন নাকি ”
আবির আমার হাতটা ধরে রুমে নিয়ে বললো,
“আমার দুই মেয়ের মা তুমি। তোমাকে নিয়ে আমার সামনের দিনগুলোতে চলবে হবে, আমার সব বিপদে তুমি পাশে থাকবে। তুমি আমার অর্ধাঙ্গিনী। ”
আবিরের কথাগুলো শুনে নিজের অজান্তে উনাকে জড়িয়ে ধরি,
“মিশ্মি -তিশ্মি দেখেছো তোমার মা কতো হিংসুটে, তোমাদের বুকে আগলে ধরি বলে তোমার মা ও ভাগ বসিয়েছে ”
আবিরের কথা শুনে খুব লজ্জা পেয়ে তাকে ছেড়ে দিলাম।
সন্ধ্যায় রান্নাঘরে নুডলস রান্না করি তখন রিনি এসে বলে,
-আমার জন্য ব্ল্যাক কফি বানিয়ে দেও
-নুডলস রান্না করা শেষ হলে তোমার জন্য ব্ল্যাক কফি বানাবো
-নুডলস পরে রান্না করো আগে আমার কাজ করো
-তুমি যেমন বাড়ির বৌ তেমন আমিও এই বাড়ির বৌ। আমি তোমার চাকরানী না যে যখন তখন এসে আমাকে হুকুম করবে।
শ্বাশুড়ি মা এসে বললো,
-সামান্য কফি তো চেয়েছে তাতে এতো আপত্তি করার কি আছে?
মায়ের কথাটা শুনে কেমন জানো লাগলো কারন মা অনন্যায় কিছু মেনে নেয় না।
মা আবার বললো,
-ছোট বৌ, তুমি নুডলস রান্না করো।
চলবে,,,,,,,