তবুও তোমায় ভালোবেসেছি পর্ব ১২

#তবুও_তোমায়_ভালোবেসেছি
#লেখা_ইভানা
#পার্ট_১২

“আমার কাছে আগাবেন না, আপনি আমার স্বামী হলেও আপনার অধিকার নেই আমার প্রতি জোর খাটানো কারন আপনি নিজে আমাকে স্ত্রীর অধিকার দেন নি”
“তোমাকে কি আমি বারন করেছি যে আমার প্রতি অধিকার খাটাতে পারবে না?”

আবিরের কথাটা শুনে, রুমের দরজা বন্ধ করে দিয়ে আবিরের শার্টের কলার্ট ধরে দেয়ালের সাথে মিশিয়ে বললাম,
“বাসর রাতের আপনি যে কথাগুলো বলেছেন সেগুলো ভুলে যাই নি তবুও এখন যখন বলেছেন অধিকার খাটাতে তাহলে হয়ে যাক ”
“মানননে কি? আমাকে ছাড়ো তো”
“কেনো ছাড়বো? আপনি তো বললেন অধিকার খাটাতে তাই তো আমার অধিকার আমি বুঝে নিচ্ছি ”
“না না আমি তো এমনি বলেছি, দেখতে চেয়েছি তোমার সাহস আছে কি না ”
“তাই বুঝি”

আমার হাত দিয়ে আবিরের চোখ চেপে ধরে তার পায়ের উপর আমার পা রেখে গালের সাথে গাল লাগিয়ে বললাম,
“স্বামী স্ত্রীর মধুর সম্পর্কে কোনো বাঁধা আর থাকবে না ”
“ইভা তুমি এসব কি করছো, মাথা ঠিক আছে? “(আবির চোখ বন্ধ করতেই মনে পড়ে গেলো ঐশীর কথা।)
“না গো, আপনার প্রেমে ডুবে আছি ”

আবির আমাকে এক ধাক্কা মেরে সরিয়ে দিলো। আমি ছিটকে গিয়ে ড্রেসিং টেবিলের সামনে গিয়ে পরি,নিজেকে কোনোভাবে সামলে সোজা হয়ে দাঁড়াই।
“বাপের বাড়ি এসেছো বলে কি যা ইচ্ছে হয় তাই করবে নাকি? নিজেকে কি মনে করো, তুমি আমার উপর ঢলে পড়লে আমি কনট্রোল করতে পারবো না সেই সুযোগে আমার প্রতি স্বামীর অধিকার খাটাবে? ”
“ব্যাস থামুন, আপনি কি মনে করেছেন আপনার প্রতি প্রেমে হাবুডুবু খাচ্ছি নাকি? আপনাকে ভালোবাসা আমার পক্ষে কখনো সম্ভব না, শুধু মাত্র আপনি এতোক্ষণ ধরে বলছিলেন যে অধিকার খাটাতে তাই এসব করেছি কিন্তু দেখলেন যে অধিকার দেয় না তার প্রতি অধিকার খাটাতে গেলে উল্টো আঘাত পেতে হয় তাই আপনাকে আমিও বলে রাখি আমার প্রতি কোনো অধিকার খাটাবেন না। ”

দরজায় একটা লাথি মেরে আবির বাইরে চলে গেলো। আমিও নিজেকে স্বাভাবিক করে সবার সাথে সঙ্গ দিলাম যদিও আবির ছিলো না। সারাদিন মা মিশ্মি তিশ্মিকে তার কাছে রেখেছে রাতে ওদের ছাড়া আমার ঘুম আসবে না তাই মায়ের রুমে গিয়ে দেখি দুজনে কাঁদছে আমি সাথে ওদের কোলে নিয়ে দেখি গা হালকা গরম জ্বর আসছে।

-মা ওদের গা গরম জ্বর আসছে তো।
-হ্যাঁ তাই তো দেখলাম, তোমাকে বলবো করে কিন্তু তুমি সবার সাথে ছিলে তাই বলা হয় নি
-আপনি এটা একদম ঠিক করেন নি, আমার মেয়েরা আমার কাছে সবার আগে।
-তোমার যে পরিস্থিতিতে বিয়ে হয়েছে সেখানে তুমি বাচ্চাদের নিয়ে এতো ভাববে।
-আমি ওদের মা এটাই বড় সত্যি আর কিছু না
-আমার ভুল হয়ে গেছে, তুমি ওদের নিয়ে বসো আমি গিয়ে আবিরকে বলি ওষুধ নিয়ে আসতে।

ফার্মেসি বন্ধ ওষুধ আনতে পারে নি। বিছানায় শুয়ে দিলে কান্না করে তাই আমি মিশ্মিকে কোলে রেখেছি আর মা তিশ্মিকে কোলে রেখেছে। মা সারাদিন অনেক কষ্ট করেছে দেখে আবির মাকে ঘুমাতে পাঠালো। দুজনে চুপ করে বসে আছি। অনেকক্ষণ পরে নিরবতা ভেঙ্গে আবির বললো,
“উহুম, একটা বললো? ”
“বলুন ”
“আসলে সন্ধ্যার সময়ের ঘটনা,,,,,,
” ওসব নিয়ে কিছু শুনতে চাই না ”
“রাগ করছো তাই না? ”
“রাগ করবো কেনো? আপনার সাথে কি আমার রাগ অভিমান সম্পর্ক নাকি? ”
“সরি ”
“সরি বলার দরকার নেই ”
“তুমি জানো তো প্রথম ভালোবাসা ভুলে যাওয়া সম্ভব না আবার যদি সে অকালে চলে যায় তাহলে কতোটা কষ্ট পেতে হয় ”
“হুম বুঝেছি,তানিয়ার বিয়েতে আমাদের যাওয়ার দরকার নেই। দুদিন থেকে বাসায় চলে যাবে ”
“কেনো যাবো না?তুমি না গেলে তানিয়ার খারাপ লাগবে তো”
“আমার মেয়েদের থেকে কারো বিয়েতে যাওয়া বেশি গুরুত্বপূর্ণ না ”
“আমার উপর রাগ করে এরকম সিদ্ধান্ত নিয়েছো? ”
“মোটেও না, আমার মেয়েদের ভালোর জন্য আমি সব কিছু করতে পারি। কেউ পাশে থাক বা না থাক আমার মেয়েরা আমার পাশে সবসময় থাকবে এটা আমার বিশ্বাস “।
” আচ্ছা ”

আবির আমার সাথে আর কোনো কথা বাড়ালো না। সারারাত ঘুমাতে পারি নি। সকালে ওষুধ খাওয়ানোর পরে বাচ্চাদের জ্বর কমে যায়। দুদিন বাপের বাড়ি থেকে শ্বশুর বাড়ি চলে এলাম। এই দুদিন আবিরের সাথে প্রয়োজন ছাড়া তেমন কোনো কথা হয় নি। মায়ের থেকে শুনলাম আবিরের ভাই রিফাত আজকে বাসায় আসবে সেজন্য অনেক রান্নাবান্না হয়েছে। পড়ালেখার সূত্রে বিদেশে থাকতো।
কলিং বেলের শব্দ শুনে মা গিয়ে দরজা খুলে দেখে রিফাত এসেছে সাথে করে একটা মেয়েকে নিয়ে এসেছে।

“তোমাদের না জানিয়ে বিয়ে করেছি, আমাদেরকে মেনে নেও ”
“তোর কি একটা বার আমাদের জানানোর দরকার ছিলো না বল?”
মেয়েটা পাশ থেকে বলে উঠলো,
“রিফাত তুমি আমাকে বলে আমার কোন রুমে থাকবো? আমার অনেক মাথা ব্যাথা করছে কেউ কে বলো আমার জন্য চা বানাতে ”

আবির রুমে আছে বাচ্চাদের কাছে। আমি শ্বাশুড়ি মায়ের পাশে দাঁড়িয়ে আছি । মা রিফাতকে বললো,
“তোর বৌয়ের সাহস তো কম না আমার বাড়িতে আসতে না আসতেই চা বানাতে হুকুম করে ”

মেয়েটা উত্তর দিলো,
“আপনি বোধ হয় আমার শ্বাশুড়ি মা তাই না?তাহলে উনি তো আমার জন্য চা বানাতে পারে ”
আমাকে উদ্দেশ্য করে বলেছে।

চলবে,,,,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here