#তিক্ততার_সম্পর্ক
লেখিকাঃ তাহমিনা তমা
পর্বঃ ১১
আরমান মায়ের গলা শুনে শান্ত গলায় বললো, এমনটা কেনো করলে মা ?
এই কথা টুকুই ছাহেরা বেগমের প্রেসার বাড়িয়ে দেওয়ার জন্য যথেষ্ট ছিলো।
আমতা আমতা করে বললো, ছেলে পক্ষের তাড়া ছিলো তাই তোর আসার অপেক্ষা করতে পারিনি।
আরমান এবার নিজের মায়ের দিকে তাকালো। ছাহেরা বেগম নিজের ছেলের সাথে চোখ মেলাতে পারছে না তাই এদিক ওদিক তাকাচ্ছে। আরমান মায়ের দিকে তাকিয়ে তার গতিবিধি লক্ষ্য করছে।
আরমান থমথমে গলায় বললো, আমার সামনে থেকে এখন যাও মা।
ছাহেরা বেগম ছেলে দিকে তাকিয়ে বললো, তুই ফ্রেশও হসনি খাবার খাবি না ?
আরমান কঠিন গলায় বললো, মা আমাকে একা থাকতে দাও।
আরমানের এমন গলা শুনে ছাহেরা একটু চমকে উঠলো আর বের হয়ে গেলো রুম থেকে। আরমান আবার আগের ন্যায় চোখ বন্ধ করে নিলো। আরমানের এখন কী করা উচিত সে নিজেই বুঝতে পারছে না। কী করলে এই যন্ত্রণা থেকে মুক্তি পাওয়া যাবে সেটাও বুঝতে পারছে না।
১৬.
ফজরের আযান কানে যেতেই ঘুম ভেঙে গেলো ইমার। ধীরে ধীরে চোখ খোলে বুঝার চেষ্টা করলো সে এখন কোথায় আছে। গতকালের কথা মনে পড়তেই ধড়ফড়িয়ে উঠে বসলো। বুঝতে পারলো অপেক্ষা করতে করতে ঘুমিয়ে পড়েছিলো। তাড়াতাড়ি সারারুমে চোখ বুলিয়ে দেখে নিলো। নাহ্, সে ছাড়া রুমে আর কারো অস্তিত্ব নেই। সেটা বুঝতে পারলেই চোখ থেকে টপ করে এক ফোঁটা পানি গড়িয়ে গেলো। ইমার বুঝতে বাকি রইলো না ইয়াদ তাকে নিজের ইচ্ছেতে বিয়ে করেনি। সেটা হলে নিশ্চয়ই বাসর রাতে বউকে একা রেখে অন্য কোথাও থাকতে পারতো না। বাসর রাত নিয়ে প্রত্যেকটা মেয়ের সাজানো অনেক স্বপ্ন থাকে। ইমারও ছিলো অনেক স্বপ্ন। বিয়ের আগে আরমান ছাড়া অন্যকোনো ছেলের সাথে কথা পর্যন্ত বলতো না আর আরমানের সাথে কথা বলতো বাধ্য হয়ে নিজের মনের সব ভালোবাসা জমিয়ে রেখেছিলো স্বামীর জন্য কিন্তু স্বামী নামক মানুষটার কাছে হয়তো ইমার কোনো মূল্যই নেই। ইমা চোখের পানি মুছে বেড থেকে নেমে ওয়াশরুমে চলে গেলো ওযু করতে। এই রুমে জায়নামাজ আছে কিনা ইমার জানা নেই তাই নিজের পরিষ্কার একটা ওড়না বিছিয়ে নামজটা পড়ে নিলো। নতুন জীবনে যেনো কোনো তিক্ততার ছায়া না থাকে আল্লাহর কাছে চোখের পানি ফেলে সেটাই চাইলো। নামাজ শেষ করে কিছু সূরাহ তিলাওয়াত করলো কারণ ইমা কোরআন শরিফ আনেনি, সব শেষে উঠে দাঁড়ালো ঐ বাড়িতে প্রতিদিন নামাজ পড়ে কোরআন তিলাওয়াত করে কাজে লেগে পড়তো কিন্তু এখানে কী করবে ভেবে পাচ্ছে না। এখন আর তার ঘুম হবে না তাই রুমটা গোছানোর সিদ্ধান্ত নিলো। একটা দীর্ঘ শ্বাস ছেড়ে রুমের সব ফুল ছিঁড়ে ফেলতে লাগলো তখন চোখ গেলো বেডের ওপর দেয়ালে ইয়াদের বড় একটা ছবির দিকে। ছবির মাঝেও মুখে গম্ভীরতা আর অ্যাটিটিউডের ছাপ স্পষ্ট। ইমা একবার ছবিটা ছুঁয়ে দিলো। দেখে মনে হচ্ছে কম্পিউটারে প্রিন্ট করা নয় বরং হাতে আঁকা ছবি কিন্তু বুঝার উপায় নেই একদম পারফেক্ট এঁকেছে।
ইমার ছবিটা দেখে হঠাৎ একটা বুখারী শরীফের বর্ণনা মনে পড়ে গেলো,
হজরত আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর জন্য প্রাণীর ছবিযুক্ত একটি বালিশ তৈরি করেছিলাম। যেন তা একটি ছোট গদী। এরপর তিনি আমার ঘরে এসে দুই দরজার মাঝখানে দাঁড়ালেন এবং তাঁর চেহারা মলিন হয়ে গেল। তখন আমি বললাম- ইয়া রাসুলাল্লাহ! আমার কি অপরাধ হয়েছে? তিনি বললেন, এ বালিশটি কেন? আমি বললাম, আপনি এর উপর ঠেস দিয়ে বসতে পারেন এ বালিশটি সে জন্য আমি তৈরি করেছি।রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, ‘হে আয়িশা! তুমি কি জান না? যে ঘরে প্রাণীর ছবি থাকে, সেখানে (রহমতের) ফেরেশতা প্রবেশ করেন না! আর যে ব্যক্তি প্রাণীর ছবি আঁকে তাকে কেয়ামতের দিন শাস্তি দেয়া হবে! তাকে (আল্লাহ্) বলবেন, ‘তুমি যে প্রাণীর ছবি বানিয়েছ, এখন তাতে প্রাণ দান কর।’ (বুখারি)
হাদিসের উল্লেখিত বর্ণনা থেকে এ কথা সুস্পষ্ট যে, প্রাণ আছে এমন জীব-জন্তুর ছবি আঁকা কিংবা ঘরে লাগানো যাবে না। যদি কেউ ছবি আঁকে কিংবা ঘরে টানিয়ে রাখে তবে, ওই ব্যক্তির জন্য রয়েছে ভয়াবহ শাস্তি। আর ঘরে ছবি থাকলে সে ঘরে রহমতের ফেরেশতা প্রবেশ করে না।
ইমা অনেক ভেবে চিন্তে ইয়াদের ছবিটা খোলে ফেললো আর মনে মনে ঠিক করে নিলো এটা কে এঁকেছে জিজ্ঞেস করে তাকে আর মানা করে দিবে কোনো প্রাণীর ছবি আঁকতে। ছোট ছোট ভুলের জন্য আমরা অনেক সব অনেক বড় পাপ করে ফেলি। ইমা পুরো রুমটা পরিষ্কার করে ফেললো। এমনিতেই রুমটা গুছানো শুধু ফুলগুলো সরালো ইমা। নিজের লাগেজ থেকে জামাকাপড় বের করে কাবার্ডে রাখতে গিয়ে দেখে ইয়াদের কাপড় দিয়ে ভর্তি। ইয়াদের গুলো একপাশে রেখে নিজের গুলো একপাশে রাখলো ইমা। ইমার কাপড় খুব একটা বেশি নয় তাই অল্প জায়গাতেই হয়ে গেলো। সব করা হয়ে গেলে বেডে বসে পড়লো আর কী করা যায় ভাবতে লাগলো কিন্তু কিছু পেলো না করার মতো। বেলকনির দরজায় চোখ পড়তেই সেদিকে পা বাড়ালো। দরজা খোলে বের হয়ে দেখলো এটা বেলকনি না একটা মিনি ছাঁদ আর সেখানে ইয়াদের এক্সারসাইজের সব জিনিসপত্র রাখা। ইমা চারদিকে চোখ বুলিয়ে নিলো এতো সুন্দর একটা ছাঁদ তবে গাছ নেই তেমন। দু কর্নারে বেশ বড় বড় দুটো এরিকা পাম গাছ আর মাঝে কয়েকটা ক্যাকটাস গাছ লাগনো। এতো সুন্দর একটা জায়গা পেলে ইমা গাছে গাছে ভরিয়ে তুলতো। ইমা ঠিক করলো কয়েকটা দিন গেলে অনেক গাছের চারা লাগাবে এখানে। রেলিং ধরে নিচের দিকে তাকাতেই ইমার চোখ কপালে উঠার মতো অবস্থা। বাড়ির এরিয়া অনেক বড় আর নিচে কালো পোশাক পরা গার্ড হাতে গান নিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে।
ইমা বিড়বিড় করে বললো, এতো গার্ড কেনো এখানে এরা মাফিয়া টাফিয়া নয় তো ?
কথাটা মনে হলেই ইমা ভয়ে একটা ঢোক গিললো। পরক্ষণে ইয়াদের চেহারা মনে হতেই ভাবলো এতো সুন্দর আর হ্যান্ডসাম মানুষ মাফিয়া হতে পারে না।
১৭.
আবার সেই একই স্বপ্ন দেখে ইয়াদের ঘুম ভাঙতেই খেয়াল করলো ফার্ম হাউসে নিজের বেডে শুয়ে আছে সে। এতো মানুষের আনাগোনা একদমই সয্য হয় না ইয়াদের আর কাল রাতেই মেয়েটার সাথে কোনো খারাপ আচরণ করার ইচ্ছে ছিলো না তাই এখানে চলে এসেছিলো। ইয়াদ উঠে ওয়াশরুমে চলে গেলো ফ্রেশ হতে। ওযু করে নামাজ পড়ে বাইরে চলে গেলো এক্সারসাইজ করতে। বাড়িতে সবসময় ট্রেডমিলে দৌড়ায় ইয়াদ সেটা মিনি ছাদেই আছে। কখনো ইচ্ছে হলে গার্ডেনে যায়। কিন্তু ফার্মহাউসে এলে সবসময় বাইরে দৌড়ায় আজও তাই করলো। হার্মহাউসটা সবুজে ঘেরা। ইয়াদ দৌড়াচ্ছে হঠাৎ তার মনে পড়লো তার বিয়ে করা বউয়ের কথা।
একটু ভেবে নামটা মনে করলো বিয়ের সময় কাজি বলেছিলো। ইয়াদের ব্রেন খুব শার্প তাই সহজেই সব মনে থাকে, ইসমাত আবিয়াত ইমা উর্ফে মিসেস আবরার হামিদ ইয়াদ। টাকার বিনিময়ে আমাকে বিয়ে করে জীবনের সবচেয়ে বড় ভুল করেছো তুমি আর তার মাশুল তো তোমাকে দিতেই হবে। মিসেস রুবিনা কবির তোমাদেরকে যত টাকা দিয়েছে এন্ড দেবে বলেছে তার থেকে হাজার গুন কষ্ট আমি তোমাকে দিবো মনে রেখো। আর মিসেস রুবিনা কবির আপনার চালা গুটি দিয়ে এবার আপনাকেই মাত দেবো আমি।
কথাগুলো নিজের মনে আওড়ে আবার দৌড়াতে লাগলো ইয়াদ।
ইমা বেলকনিতে দাঁড়িয়ে ছিলো রুমের দরজায় কেউ নক করলে রুমে এসে দরজা খোলে দেয়।
ইয়ানা হাসি মুখে বললো, গুড মর্নিং ভাবি।
ইমাও মুচকি হেঁসে বললো, গুড মর্নিং।
ইয়ানা বললো, ভাইয়া কোথায় ভাবি ? আমার প্রচুর ঘুম পাচ্ছিলো তাই ওয়েট না করে ঘুমিয়ে পড়েছিলাম, ভাইয়া কখন এসেছে রাতে ?
ইমা কী উত্তর দিবে ভেবে পাচ্ছে না। কী করে বলবে বাসর রাতে তার স্বামী ঘরেই ফেরেনি।
ইমাকে মাথা নিচু করে থাকতে দেখে ইয়ানা আন্দাজ করে বললো, ভাইয়া রাতে ফেরেনি ?
ইমা ইয়ানার প্রশ্ন শুনে টলমলে চোখে তার দিকে তাকালো। ইমার দৃষ্টি ইয়ানার মনে গিয়ে আঘাত করলো। নিজের ভাইয়ের কাজে তার নিজেরই লজ্জা করছে। ইয়ানা কী বলবে ভেবে পাচ্ছে না।
আমতা আমতা করে বললো, হয়তো ভাইয়ার জুরুরি কাজ পরে গিয়েছিলো। আগেও এমন অনেকবার করেছে তুমি মন খারাপ করো না।
ইমা মনে মনে বললো, অন্যদিন আর গতকাল কী এক হলো ? কী এমন কাজ পড়লো নিজের সদ্য বিবাহিতা স্ত্রীকে বাসর ঘরে একা রেখে সে বাইরে থেকে গেলো।
ইয়ানা ব্যাপারটা সামলে নিতে বললো, তুমি নিচে চলো সবাই ওয়েট করছে ব্রেকফাস্ট করবে।
ইমা ইয়ানার সাথে নিচে চলে গেলো। ইয়ানা সবার সাথে পরিচয় করিয়ে দিলো। কিছু গেস্টও ছিলো ইয়ানার নানু বাড়ির। সবাই ইমাকে জিজ্ঞেস করে ইয়াদ কোথায় তাতে ইমা কিছু না বলে মাথা নিচু করে থাকে। ইয়ানা পরিস্থিতি সামলাতে বলে ইয়াদের জরুরি কাজ পরে গেছে তাই অনেক ভোরে বের হয়ে গেছে বাসা থেকে আর তাড়াতাড়ি চলে আসবে। এদিকে ইমার চোখের কোণে পানি জমে গেছে। বাসর রাতে তার স্বামী ঘরেই ফেরেনি একটা মেয়ের জন্য এটা কতটা অপমানের সেটা কী ইয়াদ বুঝতে পারছে। আজকে রিসেপশন পার্টি আছে তার আয়োজন শুরু হয়ে গেছে। খাওয়া শেষে ইমা আবার রুমে চলে এলো।
ইয়ানা নিজের রুমে গিয়ে ইয়াদকে কল দিলো দুবার রিং হওয়ার পর ইয়াদ রিসিভ করলো।
ইয়াদ স্বাভাবিক গলায় বললো, হ্যালো।
ইয়ানা রেগে বললো, ভাইয়া তুমি কোথায় আর সারারাত কোথায় ছিলে ?
ইয়াদ ভাবলেশহীন ভাবে বললো, এখন অফিসে যাচ্ছি আর রাতে ফার্মহাউসে ছিলাম।
ইয়ামা অবাক হয়ে বললো, ভাইয়া গতকাল তোমার বাসররাত ছিলো আর তুমি হার্মহাউসে ছিলে ? এদিকে সারারাত ভাবি তোমার জন্য অপেক্ষা করে বসে ছিলো।
ইয়াদ আগের ন্যায় বললো, আমি কাউকে বলেছি আমার জন্য ওয়েট করতে, বসে থাকতে ?
ইয়ানা হতাশ গলায় বললো, এটা কেমন কথা ভাইয়া ?
ইয়াদ শান্ত ভঙ্গিতে বললো, ইয়ানা আমি ড্রাইভ করছি পরে কথা বলবো।
ইয়ানা ব্যস্ত হয়ে বললো, আজ তোমার রিসেপশন আর তুমি কিনা অফিসে যাচ্ছো ?
এসব কোনো কারণেই ইয়াদের লাইফ স্টাইল চেঞ্জ হতে পারে না। আই ডোন্ট কেয়ার বাসায় কী হচ্ছে ?
ইয়াদ ফোন কেটে দিলো আর ইয়ানা মাথায় হাত দিয়ে বেডে বসে পড়লো। সকালে কোনোভাবে ম্যানেজ করে নিয়েছে কিন্তু এতোবড় পার্টি কীভাবে ম্যানেজ করবে বুঝতে পারছে না ইয়ানা। সবাই তো ইমাকেই কথা শুনাবে। ইয়ানার এখন মনে হচ্ছে ইয়াদের সাথে ইমার জীবন জড়িয়ে অনেক বড় ভুল করেছে সে। ইয়াদ যেমন ছিলো তাকে তেমনই থাকতে দেওয়া উচিত ছিলো।
ইমার কিছু ভালো লাগছে না নিজের ফোনটা বের করে রিকুকে কল দিলো। দিনটা এভাবে কেটে গেলো সন্ধ্যায় পার্লারের লোক এসে ইমাকে সুন্দর করে সাজিয়ে দিলো কিন্তু ইমার মনে আঁধার নেমে এসেছে। বিয়ের পর পুরো একটা দিন পেড়িয়ে গেলো ইয়াদের দেখা নেই চোখ দুটো লাল হয়ে গেছে ইমার।
ইয়ানা ইমাকে দেখে বললো, মাশাআল্লাহ আমার ভাবিকে একদম পরীর মতো লাগছে।
ইমা কিছু বললো না জোরপূর্বক একটা হাসি দিলো ইয়ানাও বুঝতে পারছে ইমার অবস্থা কিন্তু সে কী করবে ? ইয়াদ তো এখন ফোনও রিসিভ করছে না। ইয়ানা ইমাকে নিচে নিয়ে গেলো। কথা আর তার বাবা মাও এসেছে কিন্তু আরমান আসেনি। সবার এক প্রশ্ন ইয়াদ কোথায় উত্তরে ইমা নিশ্চুপ আর ইয়ানা নানা কথা বলে সবাইকে সামলাচ্ছে তবু অনেকে কানাঘুষা করছে। যার জন্য পার্টি সেই তো নেই মানুষ সুযোগ পেলে কথা না শুনিয়ে ছাড়বে নাকী ? আর এমনিতেই সবাই জানে ইয়াদ মেয়েদের সয্য করতে পারে না তাই আরও বেশি কানাঘুঁষা হচ্ছে ইমাকে নিয়ে।
কথা পানি খাচ্ছিলো হঠাৎ কোথায় থেকে ইশান উপস্থিত হয়ে বললো, আমরা তো এখন বেয়াই বেয়াইন হয়ে গেলাম তাই না ?
ইশানের হঠাৎ কথা বলায়, কথার কাশি উঠে যায় আর ইশান ব্যস্ত হয়ে বলে, আরে আস্তে আস্তে খান। আবার দুষ্টুমি করে বলে, কেউ নিয়ে চলে যাচ্ছে না তো।
ইশানের কথায় কথা তার দিকে কড়া দৃষ্টি নিক্ষেপ করে সেখান থেকে চলে যায়। আর পুরোটা সময় ইশানকে এড়িয়ে চলে। বিষয়টা ইশানের একদমই ভালো লাগছে না। পার্টিতে আসা সব মেয়ে তার সাথে একটু কথা বলার সুযোগ খোঁজে যাচ্ছে আর ইশান যার সাথে কথা বলতে চাইছে সে তাকে এড়িয়ে চলছে। রাত এগারোটার দিকে পার্টি শেষ করে সবাই চলে যায়। ইমাকে ঐ বাড়িতে নিতে চেয়েছিলো ইমা যায়নি। রুমে এসে চুপচাপ বসে রইলো সোফায়, চেঞ্জও করছে না। সে তো খুব সাদামাটা একটা জীবন চেয়েছিলো যেখানে টাকার অভাব হলেও ভালোবাসার অভাব কখনো হবে না কিন্তু এসব কী হচ্ছে ইমা মেনে নিতে পারছে না।
রাত প্রায় বারোটা বাজে তখন গাড়ি নিয়ে গেইট পেরিয়ে ভেতরে ঢুকলো ইয়াদ। পার্টি শেষে সব গুছানো হচ্ছে তখন। ইয়াদ কোনো দিকে না তাকিয়ে সোজা নিজের রুমের দিকে পা বাড়ালো। ইয়াদ বাইরে গেলে নিজের রুম লক করে যায় তাই সবসময় চাবি তার কাছেই থাকে। দরজা খোলে ভেতরে প্রবেশ করলো ইয়াদ।
চলবে,,,,#তিক্ততার_সম্পর্ক
লেখনীতেঃ তাহমিনা তমা
পর্বঃ ১২
ইয়াদ রুমে ঢুকে ভ্রু কুঁচকালো কারণ রুমে কেউ নেই। সারারুম চোখ বুলিয়ে দেখে নিলো, নাহ সত্যি কেউ নেই। কিন্তু রুমে তো তার স্ত্রী থাকার কথা। ইয়াদ এসবে মাথা না ঘামিয়ে ব্লেজার খোলে সোফায় রেখে সোফায় বসে পা থেকে শো খুলতে লাগলো। কপালের ভাজে বিরক্তি প্রকাশ পাচ্ছে ইয়াদের, চরম বিরক্তি। রুমে পড়ার স্লিপার পায়ে পড়ে কাবার্ডে নিজের ড্রেস আনতে গিয়ে চোখে পড়লো মেয়েদের ড্রেস।
ইয়াদ রেগে বললো, What the hell is this ?
ইমার দম বন্ধ হয়ে আসছিলো এতোবড় রুমে একা বসে থেকে তাই রুম থেকে বের হয়ে বেলকনি মানে মিনি ছাঁদে গিয়ে রেলিং ধরে আকাশের দিকে তাকিয়ে আছে আর চোখ থেকে পড়ছে শ্রাবণ ধারা। রুম থেকে ইয়াদের রাগী গলা শুনে চমকে উঠে ইমা, পা বাড়ায় রুমের দিকে। ইয়াদ ইমার ড্রেসগুলো হাতে নিয়ে ছুঁড়ে মারে আর ইমা দরজার কাছে এসে দাড়াতেই ড্রেসগুলো তার মুখের ওপর গিয়ে পড়ে, কেঁপে উঠে ইমা হঠাৎ মুখের ওপর এসে পড়ায়। ইয়াদ কারো অস্তিত্ব বুঝতে পেরে বেলকনির দরজার দিকে তাকায়। মুখ দেখা যাচ্ছে না কাপড়গুলো মুখের ওপর পড়ায়। ভ্রু কুঁচকে তাকালো ইয়াদ। ধবধবে সাদা হাতে মুখের ওপর পড়া কাপড়গুলো ধরেছে মেয়েটা। ড্রেসের লং হাতার জন্য শুধু হাতের কবজি পর্যন্ত দেখা যাচ্ছে। পা থেকে মাথা পর্যন্ত একবার চোখ বুলিয়ে নিলো ইয়াদ। সাদা রঙের ফ্লোর পর্যন্ত লম্বা একটা গ্রাউন পড়ে আছে তাই পা দেখা যাচ্ছে না আর মাথায় হিজার সেটাও বুঝা যাচ্ছে। ইয়াদ বিরক্ত হয়ে চোখ সরিয়ে নিলো।
ইমা মুখের ওপর থেকে কাপড়গুলো সরিয়ে কাঁপা গলায় নিচু স্বরে বললো, কী হয়েছে ?
ইমার কাঁপা গলায় বলা সামান্য কথাটা ইয়াদের মনে হলো হৃদয় স্পর্শ করে গেলো। এতো নিচু আর শান্ত গলা ইয়াদ হয়তো আগে শুনেনি। ইয়াদ এক মুহুর্তের জন্য থমকে গেলেও পরে আর সেটাকে পাত্তা দিলো না।
ইয়াদ কাবার্ড থেকে নিজের ড্রেস হাতে নিয়ে পর্বের ন্যায় ঝাঁঝালো রাগী গলায় বললো, আমার কাবার্ডে নিজের জিনিস রাখার সাহস হলো কীভাবে তোমার ?
ইয়াদের রাগী গলায় ইমা খানিকটা কেঁপে উঠলো তবে নিজেকে সামলে অনেকটা সাহস নিয়ে বললো, গতকাল কবুল বলার আগ পর্যন্ত এটা শুধু আপনার ছিলো কিন্তু কবুল বলার পর থেকে আপনার সব জিনিসে আমারও সমান অধিকার হয়ে গেছে এমন কী আপনার উপরও।
ইমার এমন কথা শুনে ইয়াদ দিগুণ রেগে তার দিকে অগ্নি দৃষ্টিতে তাকালো। কিন্তু তার অগ্নি দৃষ্টি স্থায়ী হলো না। আজও ইমা কান্না করছিলো তাই তার চোখের ঘন পাপড়িগুলো ভিজে গেছে আর চোখের ভাষায় প্রকাশ পাচ্ছে তীব্র বেদনা। ইয়াদ চমকে উঠলো ইমাকে দেখে সে নিজের চোখকে বিশ্বাস করতে পারছে না। তবে সেদিনের ইমা আর আজকের ইমায় আকাশ পাতাল তফাত। মলিন পোশাকে তাঁকেও সেদিন অনেকটা মলিন লেগেছিলো কিন্তু আজ তাকে দেখে পরীও হার মানতে বাধ্য হবে। ইয়াদের দৃষ্টি ইমার চোখেই সীমাবদ্ধ হয়ে গেলো। ইমা যতটা সুন্দর তার থেকেও কয়েকগুণ বেশি সুন্দর তার ঘন পাপড়িতে ঘেরা বড় আর গোল গোল মায়াবী চোখগুলো। যে চোখে একবার হারালে ফিরে আসার পথ খুঁজে পাওয়া হয়তো অসম্ভব আর তাই ইয়াদের মতো খিটখিটের মেজাজের মানুষ হার মেনে গেছে ঐ চোখের কাছে। ইয়াদের এমন দৃষ্টিতে ইমা অস্বস্তিতে পড়ে গেলো কিছু বলছে না শুধু তাকিয়ে আছে। ইমা চোখ নামিয়ে নিলে ইয়াদের হুঁশ ফিরে সে কী করেছে এতক্ষণ। ইয়াদ এক সেকেন্ড লেট না করে ওয়াশরুমে ঢুকে গিয়ে ধরাম করে দরজা আটকে দেয় আর ইমা চমকে দরজার দিকে তাকায়। মানুষটা এমন কেনো করলো বুঝতে পারে না ইমা। ইমা দীর্ঘ শ্বাস ছেড়ে সোফার সামনে ফ্লোরে রাখা ইয়াদের শোগুলো নিয়ে শো তাকে রেখে দিলো। সোফার উপর ফেলা ব্লেজার হাতে নিতেই আবার সেই মিষ্টি গন্ধ নাকে লাগলো যা গতকাল শেরওয়ানিতে পেয়েছিলো। ইমা ব্লেজারটা নাকের কাছে নিয়ে লম্বা একটা শ্বাস নিলো কী মিষ্টি গন্ধ। ইমা নাকের কাছে থেকে ব্লেজার সরিয়ে ওয়াশরুমের দরজার দিকে তাকালো টপটপ পানির আওয়াজ আসছে ভেতর থেকে। ইমা বুঝতে পারছে না তার জীবনের মোড় তাকে কোনদিকে নিয়ে যাচ্ছে। বুঝতে পারছে না তার সামনে সুখ আছে নাকি আগের মতোই দুঃখ আর তিক্ততা। ইমা দীর্ঘ শ্বাস ছেড়ে ব্লেজারটা কাবার্ডে তুলে রাখলো সাথে নিজের ড্রেসগুলোও। তারপর ড্রেসিং টেবিলের সামনে বসে গায়ের ডায়মন্ডের জুয়েলারি আর হিজাবের পিন খুলতে লাগলো। এদিকে ঝর্ণা ছেড়ে দুহাত দেয়াল ঠেস দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে ইয়াদ।
বিড়বিড় করে বললো, এই মেয়ে এখানে কী করে এলো ? তবে কী সেদিন এই মেয়ের আমার সামনে আসা রুবিনা কবিরের কোনো চাল ছিলো ? নাকি আমার সাথে এই মেয়েকে দেখে ওকেই সিলেক্ট করেছে কিছু বুঝতে পারছি না।
ইয়াদ অনেক কিছু চিন্তা করতে করতে শাওয়ার শেষ করলো অনেক সময় নিয়ে। ইমা রুমে বসে আছে ইয়াদ কখন বের হবে আর সে ফ্রেশ হবে। ইয়াদ একটা টাউজার আর টিশার্ট পরে টাওয়েল দিয়ে চুল মুছতে মুছতে বের হলো। সামনে তাকাতেই কপাল কুঁচকে গেলো ইয়াদের।
দ্রুত পায়ে বেডে সামনে দাঁড়িয়ে রাগী গলায় বললো, Who did it ?
ইমা অন্যমনস্ক হয়ে গিয়েছিলো তাই ইয়াদের রাগী গলায় আবারো চমকে উঠলো। কী হয়েছে বুঝতে পারলো না।
ধড়ফড়িয়ে উঠে দাঁড়িয়ে বললো, কী হয়েছে ?
ইয়াদ হাতের টাওয়েল বেডে ছুঁড়ে ফেলে দিয়ে ছবি থাকার জায়গাটা আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে বললো, এখানকার ছবি কোথায় ?
ইমা শান্ত ভঙ্গিতে বেডের পেছনের দিক দেখিয়ে দিলো ইয়াদ দেখলো ছবিটা দেয়ালের সাথে ঠেস দিয়ে উল্টো দিকে করে রাখা মানে ছবির পেছনের সাইড দেখা যাচ্ছে শুধু কিন্তু ছবি দেখা যাচ্ছে না।
ইয়াদ ঝাঁঝালো কণ্ঠে বললো, এটা এখানে কে রেখেছে ?
ইমা আগের ন্যায় বললো, আমি।
ইয়াদ রেগে ইমার দিকে খানিকটা এগিয়ে গিয়ে দাঁতে দাঁত চেপে বললো, Who the hell are you ? আমার জিনিসে হাত দেওয়ার সাহস হলো কীভাবে ?
ইমা ভয়ে কিছুটা পিছিয়ে গিয়ে বললো, দেখুন এই রুমে এখন আমিও থাকবো আর নামাজও পড়বো ইনশাআল্লাহ। রুমে প্রাণীর ছবি থাকলে সেখানে রহমতের ফেরেশতা প্রবেশ করে না আর সেটা আমি কখনো চাই না। আমাদের প্রিয় নবী বলে গেছেন কোনো প্রাণীর ছবি আঁকা এবং ঘরে টানানো থেকে বিরত থাকতে, তাই আমি সরিয়েছি।
ইয়াদ আর কিছু বলতে পারলো না। আঙ্গুল তুলে ইমাকে শাসিয়ে বললো, নেক্সট টাইম আমার রুমের কোনো পরিবর্তন করার চেষ্টাও করো না সেটা তোমার জন্য একদমই ঠিক হবে না।
ইমা মাথা নাড়িয়ে সম্মতি জানালো আর ইয়াদ পাশ কাটিয়ে ড্রেসিংটেবিলের সামনে গিয়ে চুলে ব্রাশ করতে লাগলো। ইমা নিজের ড্রেস নিয়ে ওয়াশরুমে চলে গেলো ফ্রেশ হতে। শাওয়ার নিয়ে বের হয়ে দেখে ইয়াদ বেডে বসে ল্যাপটবে কিছু করছে। তাই চুপচাপ গিয়ে ড্রেসিংটেবিলের সামনে বসে মাথার টাওয়েল খুলে দিলো আর তার লম্বা ঘন কালো চুলগুলো পিঠ পেড়িয়ে ফ্লোর ছুঁই ছুঁই হয়ে গেলো। এতো রাতে চুল ভেজানোর ইচ্ছে ছিলো না কিন্তু এতো ঝামেলার জন্য মাথা ভনভন করছিলো তাই শাওয়ার নিতে বাধ্য হলো। ইয়াদ কাজ করতে করতে হঠাৎ সামনে তাকিয়ে থমকে গেলো। ইমা একটু কাত হয়ে চুল মুছছে। পিঠের এক সাইড থেকে চুল সরে নিচের দিকে সরে এসেছে আর সেই সাইডের ইমার ফর্সা ঘাড়টা দেখা যাচ্ছে। যেখানে ছোট ছোট চুলগুলো ভিজে লেপ্টে আছে। ইয়াদের চোখ আঁটকে গেছে ইমার মেঘের মতো চুলে। ইয়াদ মনে করার চেষ্টা করলো এর আগে কখনো কারো এতো সুন্দর চুল দেখেছে কিনা কিন্তু ফলাফল শূন্য। এমনই ইয়াদ মেয়েদের থেকে দুরত্ব বজায় চলে আর তাছাড়া যা মেয়ে তার চোখে পড়েছে সবারই কাঁধ পযন্ত খুব স্টাইল করা চুল। চুলের এমন ন্যাচারল লুক ইয়াদ আগে দেখেছে বলে মনে পড়ছে না। ইয়াদের পরিচিত মানুষগুলো এখন ইয়াদকে দেখে চিনতে পারবে না কারণ সবসময় কপালের ভাজে বিরক্তি নিয়ে চলা ইয়াদ আর এখনকার ইয়াদের পার্থক্য আকাশ পাতাল। এই ইয়াদের কপালের ভাজে বিরক্তি নয় গভীর কালো চোখে আজ মুগ্ধতা বিরাজ করছে। ইয়াদ নিজেকে প্রশ্ন করছে সে কী করছে এসব আর সে কী ভুলে যাচ্ছে মেয়েরা কালসাপ। ভালোবাসার মায়ায় জড়িয়ে তা গলার ফাসে পরিণত করবে। না না ইয়াদের তো এই মায়া আটকালে চলবে না। তার প্রতিশোধ নিতে হবে, খুব ভয়ংকর প্রতিশোধ, তার বাবার সাথে হওয়া অন্যায় আর প্রতারণার প্রতিশোধ। ইয়াদ কাউকে ছাড় দিবে না। ইয়াদ ঘৃণা করে মেয়েদের আর তাদের সৌন্দর্যকে। কারণ নিকৃষ্ট মেয়েগুলো নিজের রুপকে কাজে লাগায় উদ্দেশ্য হাসিল করতে। ইয়াদ ঘৃণা করে তার পূর্ব পুরুষদের রেখে যাওয়া বিশাল এই হামিদ সাম্রাজ্যকে। আজ শুধু এই সাম্রাজ্যের জন্য ইয়াদের চোখে সবাই অপরাধী সবাই ঘৃণিত। কী লাভ হয়েছে এই এতো সম্পত্তির উত্তরাধিকারী হয়ে ? তার শৈশব ধ্বংস করে দিয়েছে এই সম্পদ। ইয়াদের মনে হতো তার থেকে রাস্তায় বড় হওয়া ছেলেটা সুখী কারণ সে দিন শেষে একবেলা খেয়ে বাবা-মায়ের ভালোবাসার চাদরে জড়িয়ে যেতো আর দিনশেষে ইয়াদ হয়ে পড়তো নিঃসঙ্গ আর একা। ইয়াদ ইমার দিকে তাকিয়ে থাকলেও তার মনে এখন ভাসছে পুরনো কিন্তু তিক্ততার স্মৃতি যা তাকে হাসতে ভুলিয়ে দেয় তাকে করে তুলে ভয়ংকর আর কঠিন একজন মানুষ। ইয়াদের চিন্তার মাঝেই তার চোখমুখ লাল হয়ে গেলো রাগে তবু থম মেরে বসে রইলো। এ যেনো কোনো ঝড়ের আগ মুহূর্ত।
ইয়াদ গম্ভীর আর থমথমে গলায় বললো, আমার সামনে থেকে এখনই চলে যাও নাহলে তার পরিণতি ভালো কিছু হবে না।
ইয়াদের হঠাৎ কথায় ইমা চমকে পেছনে তাকালো আর ইয়াদের চোখমুখ দেখে ভয় পেয়ে গেলো। কী হয়েছে বুঝতে পারলো না। সে তো কিছু করেনি তাহলে ইয়াদ এমন করছে কেনো ?
ইমা ইয়াদের সামনে দাঁড়িয়ে বললো, কী হয়েছে আপনার, আপনাকে এমন লাগছে কেনো ?
ইয়াদ তখনো সেভাবেই থম মেরে বসে আছে দেখে ইমা ভয়ে ভয়ে নিজের কাঁপা হাতটা ইয়াদের কাঁধে রেখে বললো, আপনি ঠিক আছেন ?
ইয়াদ অগ্নি দৃষ্টিতে লাগলো ইমার হাতের দিকে যেটা এখন তার কাঁধে অবস্থান করছে। তা দেখে তার রাগ যেনো কয়েকগুণ বেড়ে গেলো। এই মেয়ের সাহস হলো কীভাবে আবরার হামিদ ইয়াদকে স্পর্শ করার ? চোখদুটো অগ্নিকুণ্ড রুপ ধারণ করেছে। ইমা হাতটা কাঁধে রাখার পরও অসম্ভব কাঁপছে ইমার হাতটা।
#তিক্ততার_সম্পর্ক
লেখনীতেঃ তাহমিনা তমা
পর্বঃ ১৩
ইয়াদ নিজের কাঁধের দিকে তাকিয়ে ঝাঁঝালো কণ্ঠে ধমক দিয়ে বললো, Remove your hand from my shoulder.
ইমা কেঁপে উঠলো ইয়াদের ধমকের স্বরে কথা শুনে আর কাঁপা-কাঁপি আরো বেড়ে গেলো। ইমা খুব করে চাইছে হাতটা সরিয়ে নিতে কিন্তু ইমা পারছে না। মনে হচ্ছে অদৃশ্য কোনো শক্তি তার হাত আঁটকে রেখেছে। হয়তো অতিরিক্ত ভয়ের ফলে।
ইয়াদ এক ঝটকায় ইমার হাত সরিয়ে দিয়ে বেড থেকে উঠে দাঁড়ালো। ইয়াদ ইমার হাত মুচড়ে ধরে বললো, তোমার সাহস হলো কী করে আমাকে টাচ করার ? মেয়েদের ছায়াও আমি ঘৃনা করি আর তুমি আমাকে টাচ করলে কোন সাহসে ?
ইয়াদের এমন কথায় ইমা ভয় পাওয়ার চাইতে বিস্মিত হলো কয়েকগুণ বেশি।
ইমা কাঁপা গলায় বললো, মেয়েদের যদি এতোই ঘৃণা করেন তাহলে বিয়ে কেনো করেছেন ?
ইয়াদ ইমার হাতটা ঝটকা দিয়ে সরিয়ে বললো, বিয়ে করেছি আমার বোনের জন্য কারণ আমার বোন আমার কাছে ভাবি চেয়েছে তাই রাজি হয়েছি। আর মিসেস রুবিনা কবিরের চাল জানতে পেরে রাজি হয়েছি।
ইয়াদ শেষের কথাটা রহস্যময় এক চিলতে হাসি দিয়ে বললো।
ইমা অবাক হয়ে বললো, বোন বিয়ে করতে বললো আর মেয়েদের ঘৃণা করা সত্ত্বেও বিয়ে করে নিলেন ? এতো ভালোবাসেন বোনকে ? কিন্তু কেন, সেও তো একটা মেয়েই।
ইমার এহেন কথায় ইয়াদ রেগে ইমার গাল চেপে ধরে বললো, সাবধান তোদের মতো থার্ডক্লাস মেয়েদের সাথে আমার বোনের একদম তুলনা করবি না। আমার বোনকে আমি আমার নিজের হাতে বড় করেছি। নারী জাতির ধোঁকাবাজির ছায়া ওর উপর পড়তে দেইনি। একদম ফুলের মতো পবিত্র আমার বোনের মন।
ইমা এক দৃষ্টিতে ইয়াদের দিকে তাকিয়ে থেকে বললো, আপনার বোন পবিত্র ভালো আর বাকি সবাই লোভী ?
ইয়াদ রেগে বললো, হ্যা তাই সব মেয়ে ধোঁকাবাজ ছলনাময়ী। নিজের স্বার্থের জন্য যে জাতি নিজের অনাগত সন্তানকে খুন করার কথা চিন্তা করতে পারে তারা কখনো ভালো হতে পারে না, কখনো না।
ইমা অবাক হয়ে বললো, মানে ?
ইয়াদ কিছু না বলে দরজা খোলে সজরে দরজাটা ধাক্কা দিয়ে রুম থেকে বের হয়ে গেলো। ইমা সেদিকে অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। ইমা বুঝতে পারছে না ইয়াদ এমন কেনো করছে। তবে এটা বুঝতে পারছে এই রাগী গম্ভীর চেহারার আড়ালে অনেক বড় কোনো রহস্য লুকিয়ে রেখেছে সে আর কোনো কারণে নারী জাতি সম্পর্কে হয়েছে নিকৃষ্ট ধারণা। ইমা বুঝার চেষ্টা করছে তার ভবিষ্যৎ কী ফলাফল হিসাবে চোখ ভড়ে এলো পানিতে।
বিড়বিড় করে বললো, সুখের প্রত্যাশাকারী তো সবাই কিন্তু প্রদানকারী কেবল মাত্র মহান আল্লাহ তাআ’লা। সুখ যাকে দেওয়ার আল্লাহ তাআ’লা তাঁকেই দিবে আর যাকে না দেওয়ার সে হাজার চেষ্টা করেও সুখের দেখা পাবে না।
ইমা কিছু না ভেবে বেডে শুয়ে পড়লো। চোখের পানি ফেলতে ফেলতে একসময় ঘুমের দেশে তলিয়ে গেলো। ইমাকে তখন কথাগুলো বলতে বলতে অতীতের কিছু তিক্ত স্মৃতি ধরা দিয়েছিলো ইয়াদের চোখের পাতায় আর তা কোথা থেকে যেতো রাগী চোখে পানির আগমন ঘটিয়েছিলো তাই ইমার সামনে থেকে চলে আসে সে। ইয়াদের চোখের পানি সেদিনের পর না কেউ দেখেছে আর না কোনোদিন দেখবে। ইয়াদ বাড়ির ছাদে দাঁড়িয়ে কিছু সময় রাতের হাঁসতে থাকা আকাশটা দেখতে লাগলো। প্রকৃতির হাঁসি দেখলে ইয়াদের বড্ড হিংসা হয়। ইয়াদ মনে করে প্রকৃতি হাঁসতে হাঁসতে তাকে উপহাস করে বলে ইয়াদ তুই হাঁসতে ভুলে গেছিস। শেষ কবে প্রাণ খোলে হেসেছিলি তোর মনে আছে তো ইয়াদ ? আর এসব প্রশ্নের উত্তর ইয়াদ দিতে পারে না। একসময় প্রকৃতির সাথেও রাগ করে নিজেকে ব্যস্ত করে তুলে কাজের মাধ্যমে। ছেলেদের কাঁদতে হয় না কিন্তু ইয়াদের মাঝে মাঝে ইচ্ছে করে চিৎকার করে কেঁদে বুকের জমা কষ্টটা বের করে দিতে কিন্তু ইয়াদ কাঁদতেও পারে না। কষ্টগুলো দিনের পর দিন, মাসের পর মাস আর বছরের পর বছর বুকের মাঝে জমতে জমতে তাকে পাথর করে দিয়েছে এখন। সবাই জানে ইয়াদ রাগী কিন্তু তার এই রাগী আর কঠিন হওয়ার পেছনের কারণটা কেউ জানতে চায় না।
ইয়াদ বিড়বিড় করে বললো, আমার বোনটা কীভাবে ছলনাময়ী হবে ইমা ? সে নিজেই তো মা নামক এক ছলনাময়ীর স্বীকার। জানো ইমা আমি আজও এই হিসাবটা মিলাতে পারিনি একটা মেয়ে খারাপ হতে পারে, একটা স্ত্রী খারাপ হতে পারে কিন্তু একজন মা কীভাবে এতো জঘন্য হয় কীভাবে, কীভাবে ? এর উত্তর আমি আজও পাইনি। না না যে জাতি মা নামক একটা পবিত্র শব্দের সাথে ছলনা করতে পারে সেই জাতির কোনো রুপই ভালো হতে পারে না, কখনো না। আমি আমার বাবার মতো ভুল কখনো করবো না, কোনোদিন না।
ইয়াদ আবার রাগে অগ্নিমূর্তি রুপ ধারণ করে রুমের দিকে পা বাড়ালো। রুমের দরজা ঢেলে ভেতরে ঢুকতেই চোখে পড়লো বেডের ওপর শুয়ে থাকা এক পরীর ওপর। এতোটুকু সময়েই ঘুমিয়ে কাঁদা হয়ে গেছে ইমা। ভেজা চুলগুলো বালিশের ওপর দিয়ে এলিয়ে নিচের দিকে নামিয়ে দেওয়া যা থেকে টপটপ পানি পরে ফ্লোর ভিজে যাচ্ছে। রুমের এসি বন্ধ তবে ফ্যানটা চলছে আর তাতে ইমার ছোট ছোট চুলগুলো উড়ে বেড়াচ্ছে ইমার সারা মুখময় জুড়ে। কালো রঙের লম্বা হাতার ব্লাউজ আর কালো একটা শাড়ী গায়ে জড়নো ইমার। শাড়ী পড়া দেখে মনে হচ্ছে এটাতে সে অভস্ত্য আগে থেকেই। ইমার বন্ধ চোখের দিকে তাকিয়ে থাকলো ইয়াদ। পরক্ষণে নিজের মধ্যে ধীরে এলো সে। কেবলই ঘুমের রাজ্যে পারি জমিয়ে ছিলো ইমা কিন্তু সেটা বেশি সময় স্থায়ী হলো না। ইমা ঘুমের মধ্যে অনুভব করলো তার হাত ধরে হেঁচকা টানে তাকে কেউ বসিয়ে ফেলেছে। চমকে গেলো ইমা কী হয়েছে বুঝতে পারলো না কিছু সময় পর যখন বুঝতে পারলো তখন খেয়াল করলো চোয়াল শক্ত করে দাঁড়িয়ে আছে ইয়াদ তার ঠিক সামনে। ইয়াদকে দেখে ভয়ে একটা ঢোক গিললো ইমা। এই কিছু মুহুর্তের মধ্যে ইমা অনেকটা বুঝে গিয়েছে ইয়াদ কেমন।
ইমা ভয়ে ভয়ে বললো, ক,,কী হয়েছে ?
ইয়াদ দাঁতে দাঁত চেপে বললো, তুমি আমার বেডে শুয়েছো কোনো সাহসে ? তুমি ভাবলে কীভাবে আমি একটা মেয়ের সাথে আমার বেড শেয়ার করবো।
ইমা ভীত গলায় বললো, তাহলে আমি কোথায় ঘুমাবো এখন ?
ইয়াদ একই ভঙ্গিতে বললো, তুমি কোথায় ঘুমাবে আই ডোন্ট কেয়ার বাট আমার বেডে নয়। বেড ছেড়ে রুমের যেখানে খুশি শুতে পারো বাট রুমের বাইরে যেতে পারবে না। এই রুমের দরজার বাইরে সবাইকে বুঝাবে তুমি আমার সাথে অনেক হ্যাপি, আমি তোমাকে চোখে হারায় বিশেষ করে মিসেস রুবিনা কবিরকে এটা বুঝাবে।
মা না বলে বারবার নিজের মায়ের নাম বলাতে অবাক হয়ে ইয়াদের দিকে তাকালো ইমা। সে কিছু বলার আগেই ইয়াদ আবার বললো, ভুলেও যদি আমাদের সম্পর্ক তুমি মিসেস রুবিনা কবিরের সামনে প্রকাশ করার চেষ্টা করেছো আমার সবচেয়ে নিকৃষ্ট রুপ তুমি দেখবে মনে রেখো।
ইমাও তার মায়ের ওপর অভিমান করে আছে তাই বলে ইয়াদের বারবার নিজের মায়ের নাম বলা তার সয্য হলো না।
ইমা বললো, উনি আপনার মা হয় বারবার উনার নাম বলছেন কীভাবে আপনি ?
ইয়াদ ইমার সাহস দেখে অবাক না হয়ে পারছে না তার একটা কথার উত্তরও ছেড়ে দিচ্ছে না ইমা, এতে ইয়াদের রাগ আরো বেড়ে গেলো। আবার ইমার গাল চেপে ধরলো ইয়াদ। ইমা এবার নিজের গাল ছাড়িয়ে নেওয়ার চেষ্টা করতে লাগলো।
তা দেখে ইয়াদ আরো শক্ত করে ধরে বললো, জন্ম দিলেই কেউ মা হতে পারে না। মা শব্দের মহত্ব অনেক বড় সেটা যার তার সাথে জুড়ে তার অপমান করতে চাই না আমি।
ইমা ওভাবে থেকেই বললো, মা তো মাই তার সাথে অভিমান করা যায় তবে তাকে ঘৃণা করা যায় না।
ইয়াদ ইমার মুখে রুবিনা কবিরের সাপোর্ট সয্য করতে পারছে। ইমার এই সাপোর্টে ইয়াদের বিশ্বাস আরো দৃঢ় হচ্ছে ইমা রুবিনা কবিরের পক্ষে কাজ করার জন্যই তাকে বিয়ে করেছে।
ইয়াদ দাঁতে দাঁত চেপে বললো, কত টাকা দিয়েছে রুবিনা কবির তোকে আমার জীবনে আসার জন্য ?
ইমা যেনো ইয়াদের কথায় আকাশ থেকে পড়লো কীসের টাকার কথা বলছে ইয়াদ সেটা ইমার বোধগম্য হচ্ছে না।
ইমা চমকে বললো, কীসের টাকার কথা বলছেন আপনি ? আমি কেনো টাকা নিবো ?
ইয়াদ তাচ্ছিল্যের হাসি হেঁসে বললো, হয় তুমি অতিরিক্ত চালাক না হলে অতিরিক্ত বোকা আর তাই আমাকেও বোকা মনে করো।
ইয়াদ ইমাকে ছেড়ে বেডে বসে বললো, তোমার কী মনে হয় তোমার মতো চালচুলোহীন একটা মেয়েকে রুবিনা কবির বিনা স্বার্থে এই বাড়ির বউ করে নিয়ে এসেছে সেটা আমি বিশ্বাস করে নিবো ? তোমার কী মনে প্রশ্ন জাগে না ? তুমি এই বাড়ির বউ হওয়ার যোগ্য কী না ?
ইমা ইয়াদের কথায় থমকে গেলো। সত্যি তো তার মতো এতিম অসহায় মেয়ে কী আবরার হামিদ ইয়াদের মতো সফল বিজনেসম্যানের স্ত্রী হওয়ার যোগ্যতা রাখে। আর মিসেস রুবিনা কবির কীভাবে তাকে নিজের এমন ছেলের বউ করে আনতে পারে ? সে তো সত্যি যোগ্য নয় ইয়াদের।
ইয়াদ তাচ্ছিল্যের হাসি দিয়ে বললো, কী হলো কথা বন্ধ হয়ে গেলো ?
ইমা কিছু না বলে মাথা নিচু করে ফেললো আর বরাবরের ন্যায় চোখের পানি তার সঙ্গী হলো।
ইয়াদ আবার বললো, মিসেস রুবিনা কত টাকা দিয়েছে তোমাকে ?
ইমা অসহায় দৃষ্টিতে ইয়াদের দিকে তাকিয়ে বললো, বিশ্বাস করুন আমি সত্যি কোনো টাকার কথা জানি না।
ইয়াদ সামনের দিকে তাকিয়ে বললো, বিশ্বাস আর নারী জাতিকে সেটা এ জন্মে আমার পক্ষে সম্ভব নয় মিসেস ইসমাত আবিয়াত ইমা। অফিস থেকে মোটা অংকের টাকা সরিয়েছে মিস্টার ডি কে আর মিসেস রুবিনা কবির। সেটা আমি জেনে গেছি আর তার প্রামণও আছে আমার কাছে। আর এটাও জেনে গেছি টাকাগুলো ব্যয়ের উৎস তুমি তাই আমার সামনে নাটক করে লাভ নেই। যা যা জানো সব বলে দাও এতে তোমারই মঙ্গল।
ইয়াদের সব জানা খুব বেশি প্রয়োজন তাই নিজেকে অনেক কষ্টে শান্ত রেখে ইমার পেট থেকে সব কথা বের করার চেষ্টা করছে। তবে ইমার বারবার অস্বীকার করা দেখে ইয়াদের রাগ ধাপে ধাপে বাড়ছে। কতক্ষণ কন্ট্রোল করতে পারবে সেটা ইয়াদের জানা নেই।
ইমা ভেজা গলায় বললো, বিশ্বাস করুন আমার কথা আমি সত্যি টাকার বিষয়ে কিছু জানি না।
ইয়াদ চোখ বন্ধ করে নিজের রাগ কন্ট্রোল করার শেষ চেষ্টা করলো কিন্তু শেষ পর্যন্ত সফল হতে পারলো না। এতোক্ষণের পুষে রাখা রাগ সব বেড়িয়ে গেলো। ইয়াদ আগের মতো রক্তচক্ষু করে তাকালো ইমার দিকে। ইয়াদ এবার ইমার হাত ধরে এক টানে বেড থেকে ফেলে দিলো ফ্লোরে ইমা হাঁটুতে ব্যাথা পেয়ে আহ্ করে উঠলো। এতে ইয়াদের মনে কোনো মায়ার সৃষ্টি হলো না বরং এটা ইমার অভিনয় মনে করলো।
ইয়াদ রেগে অগ্নিমূর্তি হয়ে বললো, কী ভেবেছিস তুই না বললে আমি বার করতে পারবো না ? এই ইয়াদ যেটা করতে চায় সেটা করেই ছাড়ে। তুই বললে তোর জন্য ভালো হতো আর আমার জন্য সহজ বাট তুই ভালো কিছু পাওয়ার যোগ্যই না। আর কান খোলে শুনে রাখ ভুলেও যদি রুবিনা কবিরের সামনে প্রকাশ করিস আমি টাকার বিষয়ে সব জেনে গিয়েছি তাহলে সেটাই তোর শেষদিন হবে। আর ইয়াদের হাতে মৃত্যু মানে মৃত্যুর আগে জাহান্নামের কষ্টের নমুনা দেখা। তাই এই রুমের কথা যেনো দরজার বাইরে না যায়। আর আমার থেকে সবসময় দশ হাত দুরত্ব বজায় রাখবি সেটা তোর জন্য ভালো হবে।
কথাগুলো শেষ করে ইয়াদ বেডে শুইয়ে পড়লো কপালে হাত রেখে আর ইমা ফ্লোরে বসে ফুপিয়ে কাঁদতে লাগলো।
কান্নার শব্দ শুনে ইয়াদ বিরক্ত হয়ে বললো, আর একবার যদি আমার কানে কান্নার শব্দ আসে ছাঁদ থেকে নিচে ছুঁড়ে ফেলে দিবো।
ইয়াদের কথায় ইমা ভয় পেয়ে মুখ চেপে ধরে কান্না আটকানোর চেষ্টা করলো।
ইয়াদ আবার বললো, টাকার লোভে আবরার হামিদ ইয়াদকে বিয়ে করে জীবনের সবচেয়ে বড় ভুল করেছো সেটা হাড়ে হাড়ে টের পাবে সারাজীবন মিসেস ইসমাত আবিয়াত ইমা। তুমি যদি ভেবে থাকো আমি তোমাকে ডিভোর্স দিবো তাহলে সেটা সম্পূর্ণ ভুল। আমার সাথে সারাজীবন কাটানোই হবে তোমার শাস্তি। কারণ আমি মনে করি আমার থেকে নিকৃষ্ট আর ভয়ংকর মানুষ পৃথিবীতে আর দুটো নেই।
ইমা এবার খানিকটা রেগে বললো, কী করলে বিশ্বাস করবেন আমি টাকার বিষয়ে কিছুই জানি না। আমার মৃত বাবার নামে কসম করে বললে ?
ইমার রাগী গলায় এমন কথায় ইয়াদ চমকে উঠে তাকালো ইমার দিকে।
চলবে,,,,,
চলবে,,,,,,