তুই আমার প্রেমময় নেশা পর্ব -০৮

#তুই_আমার_প্রেমময়_নেশা
#মিফতা_তিমু
৮.

আমি বেঘোরে ঘুমাচ্ছিলাম তখনই মনে হলো একজোড়া ঠান্ডা হাত আমার গাল স্পর্শ করে গেলো।ঠান্ডা হাতের স্পর্শে আমার ঘুম উবে গেল।ঘুমের মধ্যে ঠান্ডা হাতের ছোঁয়ায় ঘুম ভাঙ্গার কারণে বিরক্তিতে ভ্রু কুচকে এলো।আমি চোখ পিটপিট করে খুললাম।চোখ খুলতেই যাকে দেখলাম তারপর মনে হচ্ছে আমি এখনই উল্টে পড়বো।

মানে নিজের চোখকেই বিশ্বাস হচ্ছে না।আমার সামনে কম্বল গায়ে জড়িয়ে বেঘোরে ঘুমোচ্ছে নিভ্র ভাই।উনার লম্বা মুখশ্রীর ললাটে এসে জড়ো হয়েছে একরাশ কেশরাশি যা উনার ফর্সা শ্রী কে আরো সুন্দর করে তুলছে।আমি অপলক ভাবে চেয়ে আছি উনার দিকে।উনি বেঘোরে ঘুমোচ্ছেন, একটা মানুষ যে উনাকে নিস্পলক ভাবে দেখছে তা বোধ হয় উনার মানসপটেই নেই।উনি তো ঘুমোতে ব্যস্ত।

জানালা দিয়ে রোদের সোনালী আলো নিভ্র ভাইয়ের মুখের উপর পড়ছে আর তাতে উনার কোমল শ্রী তে ফুটে উঠেছে এক ফোঁটা স্নিগ্ধতা।ঘুম ভেংগে উঠে সাথে সাথেই এমন মনোমুগ্ধকর দৃশ্য দেখবো তা কল্পনাতেই ছিল না। সকাল সকাল এভাবে নিজের প্রিয়তম কে এত পবিত্র রূপে দেখা সকলের ভাগ্যে জোটে না।ইচ্ছা করছে উনাকে জড়িয়ে ধরতে।নিজেকে ইচ্ছা শক্তি দমিয়ে রাখতে না পেরে সাথে সাথে উনাকে জাপটে জড়িয়ে ধরলাম।

কিন্তু একি উনি কোথায়? আমি নিভ্র ভাইয়ার বদলে কোলবালিশ জড়িয়ে ধরে আছে। নিভ্র ভাইয়া রুপি কোলবালিশও আমার সঙ্গে মিশে আছে। তারমানে এতক্ষণ একটা সপ্ন দেখছিলাম। দৃশ্যটা স্বপ্ন ভাবতেই মুখটা বেজার হয়ে গেলো। আমিও কত পাগল তাইনা? নিভ্র ভাইয়া এত সাত সকালে নিরা আপুকে ছেরে আমার ঘরে এসে আমার সঙ্গে আমার বিছানায় ঘুমোবেন এমন একটা ভাবনা ভেবে বসলাম।এরকম ভাবনা ভাবা অন্যায়।আমাকে নিজের চিন্তা শক্তির উপর নিয়ন্ত্রণ আনতে হবে।

নিভ্র ভাইয়া কে ভুলতে পারব না কিন্তু উনার সঙ্গে নিজেকে জুড়তেও পারব না কারণ উনি অন্য কারোর। হি ডিজার্ভস সামওয়ান বেটার দেন মি।নিরা আপু উনার জন্য পারফেক্ট।ওদের দুজন কে একসঙ্গে অনেক ভালো মানায়।আমি নাহয় কল্পনাতেই উনাকে নিয়ে পাড়ি দিব হাজারটা পথ কিন্তু বাস্তবে উনার জায়গাটা সবসময় শূন্য থাকবে।উনার জায়গা কেউ নিতে পারবে না আর আমিও দিবো না কাউকে সেই জায়গা।

সকাল বেলা এরকম একটা সপ্ন দেখে মুডটাই চটকে গেলো।উঠে বিছানা গুছিয়ে ফ্রেশ হয়ে নিলাম।সপ্ন দেখার কারণে ঘুম ভেংগে গেছে আর এখন কিছুতেই ঘুম আসবে না তাই উঠে যাওয়াই ভালো।আমি ঘরের সব গুছিয়ে উঠে ওযু করে নামাজ পড়ে নিলাম।তারপর গোসল সেরে নিলাম।গোসল করে একটা হুডি আর জিন্স পরে বেরিয়ে পড়লাম। ছাদে গিয়ে একটু মুক্ত বাতাস পাওয়া যাবে তাহলে মনটাও ফুরফুরা হয়ে যাবে।

যেই ভাবা সেই কাজ।আমি সোজা নিজেকে ঠিক করে ছাদের উদ্দেশ্যে সিড়িতে পা রাখলাম। ছাদে এসে ছাদের পেছন দিকটায় এলাম।সেই জায়গায় অনেক ধরনের বাহারি রঙের ফুল আছে।আমাদের ছাদ অনেক বড়।ছাদের চার ভাগের দুই ভাগ এ ভাইয়ার বিয়ের হলুদের অনুষ্ঠান হয়েছিল আর বাকি দুই ভাগ মানে একভাগ সুইমিং পুল আর এক ভাগ ছাদে থাকা চারা গাছের অংশটুকু খালি রাখা হয়েছিল।এই জায়গাটায় আমার অনেকদিন আসা হয়না।এখানে কাঠগোলাপ আছে যা আমার অনেক পছন্দ।আমার অষ্টাদশী জন্মদিনে বাবা আমায় জন্মদিনের উপহার হিসেবে দিয়েছিল।কিন্তু সেই কাঠগোলাপের গাছ থেকে আস্তে আস্তে কাঠগোলাপ গুলো বিলীন হতে শুরু করেছে যেমনটা আমার মন থেকে সুখের আবেশ ধীরে ধীরে কেটে যাচ্ছে।

আমার মনের সুখের আবেশ কেটে গেছে কারণ আমার মনমাঝি তার নিয়ন্ত্রণ ছেরে দিয়েছে আর বলেছে যাও নিজের মত জীবনটা গুছিয়ে নাও।তোমায় সামলানোর জন্য সবসময় আমি থাকবো না।

কিন্তু সত্যিই কি মন মাঝি আমার মনের নিয়ন্ত্রণ আমার হাতে তুলে দিয়েছে? নিজের কাঁধে থাকা দায়ভার ছেড়ে দিলেও পেরেছে কি তার সম্পূর্ণ দায়ভার টা এড়িয়ে যেতে।মন তো এখনও তার অজান্তে তার দ্বারাই নিয়ন্ত্রিত।

ছাদে কিছুক্ষণ দাড়িয়ে থেকে ছাদের বাগানের অংশে থাকা চিলেকোঠার দিকে পা বাড়ালাম। চিলেকোঠা তালা খুলে খুলে চৌকাঠ পেরিয়ে ভিতরে ঢুকলাম।এই চিলেকোঠায় বিশেষ একজনের সাথে আমার অনেক স্মৃতি আছে যেগুলো কখনোই মন থেকে কিংবা এই চিলেকোঠা থেকে মুছে দিতে পারিনি। চিলেকোঠায় ভিতর ঢুকতেই অনেকদিনের বন্ধ চিলেকোঠার দরজা খোলে ভিতরে থাকা বাদুড়ের ঝাঁক মাথার উপর দিয়ে বেরিয়ে গেলো। ঘরে অনেক ধুলোবালি জমেছে। হুডির হাতগুলো একটু উপরে উঠিয়ে নিলাম যাতে ধুলোবালি না লাগে।

ঘরের কোনায় থাকা একটা টিনের ট্যাঙ্কির দিকে এগিয়ে গেলাম। ট্যাঙ্কির উপর ধুলোবালির মোটা আস্তরণ জমেছে যেন অনেকদিন পরিষ্কার করা হয়না।হয় না তো পরিষ্কার করা অনেকদিন। বছর পনেরো আগে ঘটে যাওয়া একটা ঘটনার কিছু বছর পর থেকে আর এই ঘরেতে আসিনি। ঘরটা খালি পড়ে আছে দশ বছর ধরে। বাড়ির সবাই কে বলে দিয়েছি এই চিলেকোঠার ঘর যেন আর কখনো খোলা নাহয়। তারপর থেকে এই ঘরে কেউ আসে না।

টাঙ্কির উপর জমে থাকা ময়লার আস্তরণ একটা ছোটো কাপড় দিয়ে মুছে পরিষ্কার করলাম।পকেট থেকে একটা ছোটো চাবি বের করে ট্যাংকি টা খুললাম।ট্যাংকি খুলতেই ট্যাঙ্কির মধ্যে অনেক ছোটো বড় জিনিস আবিষ্কার করলাম যার মাঝে থাকা এলবাম টা আমার দৃষ্টি সর্বাগ্রে কেড়েছে। ধীর হস্তে এলবামটি তুলে নিলাম।এলবাম খুলতেই চোখের সামনে ভেসে উঠলো আমার, তন্দ্রার, অভ্রর,নীলা আপুর আর নীরবের ছোটবেলার ছবি।আমরা পাঁচজন এক লাইনে বসে আছি।প্রথমে আপু আর আপুর উপর তন্দ্রা আপুর দুই বেনি ধরে রেখেছে।তন্দ্রার দুই বেনি আবার অভ্র ধরে রেখেছে আর অভ্রর কাধে হাত দিয়ে আমি বসে আছি।আবার আমার দুই বেনি নিরব ধরে রেখেছে।হালকা হেসে পাতা উলটালাম।একে একে আমাদের ছোটবেলার সব ছবি আবিষ্কার করলাম।

আমাদের ছোটবেলার অনেক মধুর স্মৃতি বাবা, বড় বাবা আর ছোটো বাবা মিলে ক্যামেরা বন্দি করেছে যেগুলোর সবই আমাদের পাঁচ জনের কাছে আছে। হঠাৎ পাতা উল্টাতে কিছু ছবিতে চোখ আটকে গেলো। ছবিগুলো নিভ্র ভাইয়ার। ছবিগুলো দেখেই বুঝা যাচ্ছে ওগুলো নিভ্র ভাইয়ার অজান্তে তোলা হয়েছে কারণ ছবিগুলো তে নিভ্র ভাইয়া হাসছে।

ভাইয়া একেক ছবিতে একেক মুখাভঙ্গী করেছে।ছবিগুলো আমার তোলা।বাবার ক্যামেরা দিয়ে তুলেছিলাম। নিভ্র ভাইয়ার ঠোঁটের হাসি বড্ড বেশী সুন্দর লাগে আমার কাছে। নিভ্র ভাইয়া সবসময় হাসার মত মানুষ নন।উনি কালে ভদ্রে হুটহাট হাসেন তাই উনার হাসিমুখের ছবি পাওয়া দুঃসাধ্য ব্যাপার।

ছবি দেখতে দেখতেই হঠাৎ মনে হলো পুরনো অতিতের পাতা না ঘাটাই ভালো।এতে পুরনো ঘা ভরে না বরং আরও তরতাজা হয়।তাই এলবামটা বন্ধ করে আবার জায়গা মত রেখে দিলাম।ঘর ছেড়ে বেরিয়ে যাচ্ছিলাম তখনই চোখ পড়লো চিলেকোঠার দরজার কাছে থাকা শেলফের উপর। শেলফের উপরে একটা গিটার ব্যাগ রাখা। গিটার টা এখনো এখানেই আছে তাহলে। তারমানে এত বছরেও কেউ এই ঘরে আসেনি। ব্যপারটা বুঝতে পেরে অবাক হলাম কারন আমি এই ঘরে আসতে মানা করলেও নিভ্র ভাইয়ের তো তা শোনার কথা নয়। ঘরের চাবি যদিও আমার কাছে তবুও ঘরের তালা ভেঙে ঘরে ঢোকা নিভ্র ভাইয়ের জন্য কঠিন কিছু নয়।

নিভ্র ভাইয়ের বরাবরই এই চিলেকোঠার ঘর নিয়ে অনেক আগ্রহ।উনি সবসময় আমায় জিজ্ঞেস করতেন আমি এই ঘরে ঘণ্টার পর ঘণ্টা কেন থাকতাম সবকিছু ফেলে রেখে ।একসময় এই ঘরে আমি সারাদিন পরে থাকতাম।ঘণ্টার পর ঘণ্টা নিভ্র ভাইয়ের ছবি দেখতাম।কিন্তু এখন সেসব অতীত।

নিভ্র ভাইয়ের বরাবরই আমার জিনিসের প্রতি অনেক আগ্রহ।এই যেমন এই ঘরে এমন কি আছে যে আমি এখানে থাকতাম। এই ঘরে না ঢুকলেও আমি যখন গিটার বাজাতাম তখন সেটার আওয়াজ ভাইয়া ঘর থেকেই পেত আর একদিন জিজ্ঞেস করেছিল গিটারের আওয়াজ কোথা থেকে আসে? আমি বলেছি আমি বাজাই।ভাইয়া অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করেছিল কে শিখিয়েছে? বস্তুত আমি সত্যি কথাটাই বলি।বাবা শিখিয়েছিল গিটার বাজানো।বাবা এককালীন সময়ে গান গাইতো।

ভাইয়ার আমার জিনিসে আগ্রহ থাকলেও কোনোদিন জোর করে দেখতে চায়নি আর আমিও দেখাইনি কারণ আমি চাইনা আমার মনের কোণে লুকিয়ে থাকা ভাবমূর্তির প্রকাশ কারোর কাছে হোক। গিটার ব্যাগের চেইন খুলে গিটার নামালাম।এই ঘর প্রতি মাসে একবার পরিষ্কার করা হয় তাই হয়তো গিটার এখনো অক্ষত আছে। হাসিনা আপা কে দিয়ে পরিষ্কার করাই তবে কোনোদিন এই ঘরে আসিনা আর আপাও আমার খুব বিশ্বস্ত তাই এই ঘর পরিষ্কার করে চাবি আবার আমার হাতেই ফিরিয়ে দেয়।

গিটার টা হাতে নিয়ে একটু সুর তুললাম। নাহ ঠিক আছে এখনো গিটার বাজানো ভুলিনি।একটু গান গাওয়া যায় এতে যদি মাইন্ড ডাইভার্ট হয় তাহলে তো ভালো।

Kuch khaas hai,
Kuch paas hai,
Kuch ajnabi ehsaas hai,
Kuch duriyan, nazdikiyan,
Kuch hass padi tanhaiyaan,

Kya yeh khumaar hai, kya aitbaar hai,
Shayad yeh pyaar hai,
Haan hai shayad,
Kya yeh bahar hai, kya intezaar
hai,
Shayad yeh pyaar hai, Pyaar hai shayad..

Kuch saaz hai jaage se jo the
soye,
Alfaaz hai, chup se nashe mein
khoye,
Nazrein hi samjhe yeh guftagu
saari, Koi arzoo ne hai angdayi li
pyaari,

Kya yeh khumaar hai, kya
aitbaar hai,
Shayad yeh pyaar hai,
Haan hai shayad, Naa inkaar hai, naa iqraar hai,

Shayad yeh pyaar hai,
Pyaar hai shayad… Kehna hi kya, mera dhakal naa
koi,
Dil ko dikha, dil ki shakal ka koi,
Dil se thi meri ek shart yeh aisi,
Lage jeet si mujhko, yeh haar
hai kaisi, Bukhaar hai, kyu beqraar hai,

Shayad yeh pyaar hai,
Pyaar hai shayad,
Jadoo sawar hai, naa ifteaar
hai,
Shayad yeh pyaar hai, Pyaar hai shayad,
Pyaar hai shayad.. Ooo..

Kuch khaas hai,
Kuch paas hai,
Kuch ajnabi ehsaas hai,
Haii..

Ra ra re…na na na Ra ra ra ra..
Na re na..
Pyaar hai shayad
Pyaar hai shayad
Yahi..

~ চলবে ইনশাল্লাহ্

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here