#তুমি আমার প্রাণ
#পর্বঃ১৪
#Mitu-মিতু
“ভাইয়া দেখো আমি আমার পুতুলকে বুকে পেয়েছি।আমার পুতুল ফিরেছে আমার কাছে। ভাইয়া দেখো আমার মেয়ে”
মা-মেয়ের মিলন মেলায় চেয়ারম্যান বাড়ির প্রত্যেক টা ব্যক্তির মুখে হাসি ফুটে।রিশা সাহেরা বানুর বুকের সাথে মিশে আছে। সে আজ তৃপ্ত। তার মায়ের ভালোবাসা সে পেয়েছে। মুর্শিদা তানিয়া আসবে জন্য রান্নাঘরে গেলো। তার মেয়েটা যে পড়াশোনার জন্য তার বুক খালি করে দূরে থাকে।আবার কতদিন পর মেয়েটাকে কাছে পাবে। সাহেরা বানুর মুখে হাসি দেখে মুর্শিদা আর মতিন সাহেব ও খুশি। তারা মনে মনে আল্লাহর কাছে শুকরিয়া আদায় করলো। দোতলায় তাসরিফ দাড়িয়ে আছে। রিশা যখন দৌড়ে বাড়ির ভেতরে আসলো তখন পিছে পিছে তাসরিফ এসে সোজা উপরে চলে এসেছে সেখান থেকেই সে তার পুতুলকে দেখছে।
“সেই ছোটবেলা যদি আমার সাথে চলে আসতি তাহলে তোর জীবনে একটুও দুঃখের ছায়া আসতো না পুতুল। কিন্তু তুই বাবার কথায় মাকে খারাপ বলে মানতি।”
মনে মনে কথাটা বলে তাসরিফ নিজের ঘরে চলে গেলো। আজ তার ছুটির শেষদিন। কালকেই চলে যেতে হবে। ঘরে সে তার জামা কাপড় প্যাকিং করতে লাগলো।রিশা প্রায় ঘন্টা খানেক সময় মায়ের বুকের সাথে ঘাপটি মেরে থাকলো।সাহেরা বানুর চোখে পানি ঠোঁটে হাসি। খুশি মনে মেয়ের মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে থাকলো।
_______________
“ভাইয়ু!আমি আজ আসলাম আর তুমি কালকেই চলে যাবে?”
মন খারাপ করে তানিয়া তাসরিফ কে বললো কথাটা। সে সন্ধ্যার সময় রসুলপুর পৌঁছেছে।তাসরিফ তাকে আনতে গেছিলো। বাড়ি এসে সবার সাথে কথা বলে ভাইয়ের ঘরে এসেছে মায়ের বলা কথা শুনে।তার মনটাই খারাপ হয়ে গেছে। কতদিন পর ভাইয়ের সাথে দেখা হলো আর ভাই কিনা কালকে সকালেই চলে যাবে।
“বনু! মন খারাপ করবি না। ডিফেন্স এর কাজ আমি আমার ইচ্ছা মতো ছুটি কাটাতে পারি না। আমার ছুটি কিছুদিনের। এর মধ্যে ডাক পরলে ছুটে যেতে বাধ্য আমি। তোর বিয়ের সময় আমি থাকবো।”
“ভাইয়ু! বিয়ের কথা বাদ। এবার বলো আমি ভাবি পাবো কবে? তোমার পছন্দ হলো কাউকে? ”
“বনু! যা এখন। আমি বিশ্রাম নিবো এখন। আজ পুরোটা সময় দৌড়ের ওপর ছিলাম। ”
তানিয়া আর কথা বাড়ালো না। তার এমন গোমড়া মুখো ভাই আছে ভাবতেই অবাক হয় সে। একটু কিছু বলতে গেলেই বনু যা এখন। নিজের ঘরে গিয়ে তানিয়া তার হবু বরের কাছে ফোন দিলো। সে যখন অনার্স এ ভর্তি হয় তখন ইরফানের সাথে পরিচয়।বেষ্ট ফ্রেন্ড থেকে এখন তারা হবু বর-বউ। ৪ বছরের পরিচয় থেকে প্রনয়। ইরফান এস.আই পদে চাকরিরত। ছেলের সকল বায়োডাটা দেখে চেয়ারম্যান বাড়ির কেউ অপছন্দ করেনি। তানিয়া এখন মাস্টার্স এ পড়ছে।
______________
ভালোবাসা এক পবিত্র অনুভূতি। আর সেখানে যদি হয় বাবা-মায়ের ভালোবাসা তাহলে তা সর্গ সুখ। সাহেরা বানু তার কলিজার পুতুলকে ভালোবাসা দিয়ে জড়িয়েছে। সেই বিকেল থেকে এখন রাত দশটা পর্যন্ত তিনি একটু সময়ের জন্যও মেয়ে থেকে দূরে সরেননি।রিশা তার ঘরে মায়ের কোলে মাথা দিয়ে ঘুমিয়ে ছিলো। ঘুম থেকে উঠে সে তানিয়ার সাথে কিছু সময় গল্প করে। খাওয়ার সময় হলে তারা দুজনে দোতলা থেকে নিচে নামে। খাবারের টেবিলে তারা দুজন বাদে সবাই বসে পরেছে। তারাও চটপট নিজেদের জায়গায় বসে পরলো। তানিয়া মতিন সাহেবের উদ্দেশ্যে বললো
“আব্বু! ভাইয়া আমার থেকে কত বড় কিন্তু তোমরা বিয়ের কথা বলো না কেনো? ভাইয়ার আগে তার ছোটোবোনের বিয়ে হলে লোকে কি বলবে। সবাই বলবে বিয়ে পাগল মেয়ে।”
মেয়ের কথায় মতিন সাহেব হাসলেন।
“মা! তোমার ভাইয়ের নাকি বিয়ের সময় হয়নি এখনো।তার বিয়ে করতে দেরি আছে। আমার ছেলের জন্য আমার দাদা হওয়াও আটকে আছে। ”
যাকে নিয়ে কথা হচ্ছে সে চুপচাপ খেয়ে যাচ্ছে। তাকে দেখলে মনে হবে সে কিছুই শুনতে পাচ্ছে না।
“আব্বু! ভাইয়ুকে দিয়ে কাজ হবে না।আমরাই মেয়ে খুজতে শুরু করি।আমার একমাত্র ভাইয়ের বউ আমরাই পছন্দ করে আনি তবে ভাইয়ুর পছন্দ করা কেউ আছে নাকি জানতে হবে।”
এতক্ষণ সব কথা বসে থেকে শুনছিলো রিশা আর খাচ্ছিলো এ পর্যায়ে তাসরিফ কে জিজ্ঞেস করলো
“ভাইয়া আছে নাকি কেউ? থাকলে বলো আমরা আমাদের ভাবিকে দেখবো।”
“চুপচাপ খেয়ে উঠ। তোর এটা নিয়ে মাথা না খাটালেও চলবে।”
তাসরিফের থেকে এমন উত্তর পেয়ে রিশা তানিয়া আর তার মামার দিকে তাকালো। এতক্ষণ সবাই বললো কিছু হলো না আর সে বলাতেই মুখে বুলি ফুটলো। তাসরিফ কে বলে উঠলো
“শোনো ভাইয়া! একটু মিষ্টি করে কথা বলা শিখো। এমন খিচুড়ি মার্কা কথায় কেউ ফিরেও তাকাবে না তোমার দিকে।”
“তোর কথা বেশি হয়ে যাচ্ছে পুতুল। তোর এতো ভাবতে হবে না।আমার পছন্দ হলেই চলবে তার পছন্দ হওয়া লাগবে না।”
খাওয়া শেষে তাসরিফ সোজা উপরে চলে আসলো। এখন একটা লম্বা ঘুম দিতে হবে। কালকে থেকে আবার শুরু হবে তার ব্যস্ত জীবন।
___________
রিশা তাসরিফের ঘরের সামনে দাড়িয়ে থেকে হাতের নখ কামড়াচ্ছে। তাসরিফ জেগে আছে নাকি তা নিয়ে সে কনফিউজ।আজ সে তার মায়ের ভালোবাসা পেয়ে খুব খুশী। তাসরিফ কে ধন্যবাদ জানাতে এসেছে। কালকে সকালে চলে যাবে তখন বলার সুযোগ পাবেনা বলে এখন এসেছে। তাসরিফ ঘরের ব্যালকুনিতে দাড়িয়ে ফোনে কথা বলছিলো।ঘরে এসে খাওয়ার পানি না পেয়ে জগটা হাতে নিয়ে দরজা খুলে বের হওয়ার সময় রিশার সাথে ধাক্কা লাগার আগেই নিজেকে সামলে নিলো।হুট করে সামনে তাসরিফ কে দেখে রিশা চমকে গেলো।
“তুই এখানে দাড়িয়ে কি করছিস?”
“ভাইয়া আমি তোমার কাছে এসেছিলাম। ”
রিশার কথায় তাসরিফ ভ্রু কুঁচকে বললো
“এতো রাতে না ঘুমিয়ে আমার কাছে কি?”
হাতের জগটা রিশার হাতে ধরিয়ে দিয়ে বললো
“পানি নিয়ে আয়”
রিশা তড়িঘড়ি করে নিচে থেকে পানি নিয়ে আবার তাসরিফের ঘরের সামনে দাঁড়ালো
“ভাইয়া আসবো?”
“আয়”
রিশা তাসরিফের ঘরে টেবিলে পানির জগটা রাখলো। তাসরিফ বিছানায় বসে রিশার দিকে তাকিয়ে আছে।
“এবার বল কি বলার জন্য দাড়িয়ে ছিলি?”
“ধন্যবাদ”
“কিসের জন্য? ”
“এইযে আমাকে বুঝানোর জন্য। মায়ের ভালোবাসা পাইয়ে দেওয়ার জন্য। ”
“ধন্যবাদ আমি গ্রহণ করলাম না।”
তাসরিফের কথায় রিশা তাসরিফের দিকে তাকালো।দুজনের চোখাচোখি হওয়াতে রিশা বললো
“কেনো ভাইয়া?”
“কারন তোর কাছ থেকে আমার অন্য কিছু চাই।”
চমকে উঠলো রিশা। কি চায় তাসরিফ রিশার কাছ থেকে তা ভাবতে লাগলো সে।
“একটা গল্প শুনবি? এক ঘুম পরীর গল্প। ”
“আমি আর ছোট নেই ভাইয়া।”
“এই গল্প ছোটদের জন্য না। একগ্রামে একটা পিচ্চি পুতুল ছিলো। বাবার কাছে সে থাকতো। সে যখন ছোট ছিলো তখন তার সাথে পাশের গ্রামের এক রাজপুত্রের দেখা হয়। পরীর থেকে রাজপুত্র অনেক বড় ছিলো বয়সে। পরীর হাতে ফোস্কা পড়া দেখে রাজপুত্রের হৃদপিণ্ড কেঁপে উঠেছিলো। এক সময় জানা গেলো সেই পরী রাজপুত্রের সম্পর্কে বোন হয়। এক পরিস্থিতির স্বীকার হয়ে ছোট পরীটা রাজপুত্রের বাবার সাথে তাদের বাড়িতে আসে। সেই পরী ছিলো চুপচাপ,, কথা বলতো না কারো সাথে,, কেমন করে শুধু তাকিয়ে থেকে দেখতো সবকিছু।রাজপুত্রও ছিলো গম্ভীর ধাঁচের। প্রয়োজন ব্যতীত সে কোনোকিছুতে নজর দিতো না।কিন্তু রাজপুত্র পরীর সাথে মিশে গেলো,,পরীকে হাসতে শেখালো,,নিজের মতো করে তাকে বড় হতে সাহায্য করলো,,তারা হয়ে উঠলো বন্ধুর মতো।
কিন্তু বিপত্তি বেধে গেলো অনেক পরে। কোনো এক বিকেলে রাজপুত্র সেই পরীর ঘরে গিয়েছিলো পরীকে ডাকতে। ছোট পরীটা চকলেট খেতে খেতেই ঘুমিয়ে গেছিলো।এলোমেলো চুলের সাথে ঠোঁটের চারপাশে চকলেট মেখে ছিলো। ঘুমন্ত পরীকে দেখে রাজপুত্রের কি হলো সে বুজতে পারলো না। কিছুক্ষণ পরীর দিকে তাকিয়ে থেকে না ডেকে চলে গেলো নিজের ঘরে। ঘুমন্ত পরীর মায়ায় জরিয়ে গেলো রাজপুত্র।এর আগেও অনেক বার পরীকে ঘুমানো অবস্থায় দেখেছে,, তখন কিছু না হলেও হঠাৎ করেই কি যেনো হয়ে গেলো রাজপুত্রের সাথে। তারপর থেকে তার জীবনে এলো পরিবর্তন। চোখের সামনে ভাসতো পরীর সকল কর্মকাণ্ড,, ঘুমাতে গেলে স্বপ্ন হয়ে ধরা দিতো। বয়সের পার্থক্যের কারনে নিজেকে মায়া থেকে বের করতে চাইলেও বের হওয়া আর হলো না। বরং মায়া পরিনত হলো ভালোবাসায়।সেই রাজপুত্র তার ঘুমন্ত পরীকে ভালোবাসে,,খুব ভালোবাসে কিন্তু পরীকে কিছু বুজতে দেয়নি।তবে এবার তাকে বুঝাতে হবে,,জানাতে হবে। তাকে কতটা চায় সেই রাজপুত্র তা অনুভব করাতে হবে।”
চলবে……
[পাঠক/পাঠিকাগন আমার এই ছোট পেজটাতে ফলো করে রাখবেন। আমি গল্প দিলে যেনো সবার আগে আপনাদের কাছে পৌঁছে যায় ]