তুমি আসবে বলে পর্ব -১১+১২+১৩

#তুমি আসবে বলে
#অপেক্ষার প্রহর
#Sondha Halder
#পর্ব-১১

বর্তমানে,,,,,,

রাতের নিস্তব্ধতা ঘেরা অন্ধকার কাটিয়ে ভোরে প্রথম কিরণে ঝলমলিয়ে উঠেছে সারা আকাশ। রবির কিরণ এসে পরে অন্তুর মুখে, অন্তুর চোখ মুখ কুঁচকায় সে মুখটা ঘুরিয়ে অন্য দিকে নিয়ে ঘুমাতে লাগলো। হঠাৎ কারোর নরম হাতে বুলাতে লাগলো তার মাথায়। অন্তু ঘুম ঘুম চোখে তাকিয়ে দেখে অরনি হাসি মাখা মুখ খানি। হালকা হেসে অন্তু বললো…

অন্তুঃ গুড মর্নিং অরু

অরনির প্রশান্তির হাসি হেসে বলো…গুড মর্নিং দিদিয়া। সারারাত এখানে ঘুমিয়ে ছিস তুই দিদিয়া

অন্তু উঠে বসলো ভালো ভাবে। তাপর মাথা ঝাকিয়ে হ্যাঁ সূচকে মাথা নাড়ায় সে। অরনি নিজের হাত দিয়ে অন্তুকে চেক করলো জ্বর আছে কি না, না নেই ভেবে স্বস্তির নিঃশ্বাস নিলো। অরনি বললো….

অরনিঃ দিদিয়া এখন ফ্রেশ হয়ে নিচে চল দাদাভাই বোধহয় আমাদের জন্য ওয়েট করছে। আমি ও রুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে নিচে যাচ্ছি।

বলে অরনি চলে গেলো, অন্তু কিছু খন সেদিকে তাকিয়ে থেকে চোখ ঘুরিয়ে টেবিলে রাখা ছবিটার দিকে তাকিয়ে থাকলো। কি হাসি, কি মায়া তার মুখে যেনো পৃথিবীর সব সুখ সে পেয়েছে, আসলেই অর্ণব অন্তুকে পেয়ে সব সুখ পেয়েছে৷ কিন্তু এই সুখ পাবার জন্য তাকে কম খাটুনি খাটতে হয়নি, ভাবতেই অন্তুর ঠোঁটের কোণায় তৃপ্তির হাসি ফুটলো। সে ছবিটা বইয়ের ভাজে রেখে ফ্রেশ হতে গেলো…..
____________________________

সকাল- ৮টা

আজ রোদের উঠতে একটু দেরি হয়েছে, সকালের মর্ণিং ওয়ার্ক হলো না তার। কাল সারা রাত নিঝুম কাটিয়ে ভোরে দিকে চোখটা তার লেগেছিলো। কিন্তু সারে ৭টার দিকে আনভির আদুরি মায়াভরা ডাকে তার ঘুম ভাঙে। আনভি রোদের বুকের সাথে লেপ্টে মাথা উঁচু করে তাকিয়ে আছে রোদের দিকে, রোদ আনভি কপালে চুমু দিয়ে বললো….

রোদঃ আমার আম্মু টা আজ সকাল সকাল উঠলো যে। প্রতিদিন তো আমি না ডাকলে ওঠো না…

আনভি তার ছোট্ট ছোট্ট হাত দিয়ে রোদে দু’গাল ধরে আহ্লাদি সুরে বললো….

আনভিঃ পাপা আত (আজ) আনভির সতালে (সকালে) ঘুম ভাঙু (ভেঙে) গেছে তাই উঠে পরেছি

রোদঃ তাই বুঝি

আনভিঃ হুম হুম [মাথা দুলিয়ে]

রোদ আনভিকে কথা শুনে তাকে কাতুকুতু দিতে লাগো এতে আনভি খিলখিল করে হাসতে লাগলো, রোদ তার সারা মুখে আদর করে তাকে নিয়ে ওয়াশরুম চলে যায়। রোদ আনভিকে ফ্রেশ করিয়ে নিজে ফ্রেশ হয়ে রেড়ি হয়ে আনভিকে নিয়ে নিচে আসে….
______________________________

অন্তু অনেকখন ধরে কিছু বলবে বলবে করেও বলতে পারছে না কেমন হাসফাস করতে লাগলো। কিছু ভাবছে নিজের মনে আর নিজের হাত কচলাছে, আর এদিকে আদি কোন হেলদোল নেয় যে অন্তু নামের কেও তার রুমে আছে সে তো দিবি মজায় রেড়ি হতে লাগলো অফিসের জন্য। (সকালে সবার সাথে আজ অন্তু নাস্তা করেছে অনেক দিন পর, অন্তুকে দেখে সবাই খুশি হয়েছে মেয়েটা আদি আসায় স্বাভাবিক হতে লাগছে ভবে তারা খুশি। খাওয়া শেষ অন্তু আদির রুমে আসে তার সাথে কিছু কথা বলে কিন্তু কিছু বলতে পারছে না সে) আদি রেড়ি হয়ে টাই গলায় বাঁধে বাঁধে অন্তুর দিকে কিছুখন তীক্ষ দৃষ্টি প্রয়োগ করে বলতে লাগলো….

আদিঃ যা বলতে এসেছি বল এমন হাসফাস করে লাভ নেয় অন্তুপাখি [টাই বাঁধতে লাগলো]

অন্তু আমতাআমতা করে বলতে লাগলো…. আসলে দাদাভাই বলছি কি আজ অফিস না গেলে হয় না। মানে কালকেই তো তুমি আসলে আর আজ থেকেই কাজ নিয়ে পরলে। আমাদের কেও তো সময় দেবে না মানে তোমার অতি প্রিয় জনে কে।

অন্তুর কথা শুনে আদি হাত থেমে যায়, অন্তু কাকে মিন করে বলেছে সে ভালোই বুঝতে পেরেছে। কিন্তু আদি না বোঝার ভান করে টাই বাঁধা শেষ করে জুতা পরতে পরতে বললো….

আদিঃ আমার আজ একটা ইম্পর্টেন্ট মিটিং আছে তাই যেতে হবে কিন্তু বিকেলের সময়টা বাড়িতে থাকবো…[জুতো বাঁধা শেষ করে ব্লেজার পড়তে লাগলো]

আদির এই খাপছাড়া ভাব দেখে অন্তুর রাগ হলো। সে সরাসরি আদির কাছে গিয়ে তার সামনে দাঁড়িয়ে বললো…

অন্তুঃ দাদাভাই আমার কথার মানে তুমি বুঝতে পারছো তাইলে কেন এমন ভাব করছো যে কিছু বোঝনি।

আদিঃ কি বোঝা লাগবে

অন্তুঃ আমি আদিবার কথা বলছি দাদাভাই। তুমি একটা বার আদিবার খোজ নেবে না, যে সে কোথায় আছে, কেমন আছে, কি করছে, কোন পরিস্থিতিতে আছে কিছু জানতে চাও না তুমি বললো আমাকে।

আদি অন্তুর দিকে কিছুখন তাকিয়ে থেকে কাঠ কাঠ গলায় বললো….

আদিঃ যে নিজে থেকে হারিয়ে যায় তাকে কেও খুজে পায় না অন্তুপাখি। আমি ও পাবো না, ওর কি সমস্যা ছিলো আমাকে বলতে পারতো কিন্তু না ও কি করলো আমাকে না বলে যোগাযোগ বিছিন্ন করে দিয়ে কোথাও হারিয়ে গেলো। তাইলে আমার কি প্রয়োজন পরেছে তাকে খুজে বের করা…

আদির কথা শুনে অন্তু দমে গেলো, সে জানে আদি যা বললো ১০০% সত্যি যে নিজে থেকে হারিয়ে যায় তাকে কেও খুজে পায় না। অন্তুর এখনো মনে আছে..( ৪ বছর আগে যখন তার সাথে সেই ঘটনাটি ঘটে তার মাস দুয়েক পর আদি তাকে ফোন করে কান্না কাটি করে অন্তু যখন তাকে জিজ্ঞেস করে কি হয়েছে তখন আদি বলে আদিবা নাকি তার সাথে ১মাস যাবত যোগাযোগ করে না আদি খোঁজ নিলে যানতে পারে আদিবা তার বাড়ি ছেড়ে দিয়ে কোথাও চলে গেছে আন্টি আর নুপুর কে নিয়ে। এটা শুনে অন্তু হতবিহ্বল হয়ে যায় সে, কি হয়েছে আদিবার সাথে সে জানে না কিন্তু এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে আদি অনেক কষ্ট পায়। যে ছেলে তার মা, বোন ছাড়া কারোর জন্য কান্না করে নাই সেই ছেলে ৪ বছর ধরে আদিবার জন্য কান্না করেছে।) অন্তু তারপর ও বললো…..

অন্তুঃ দাদাভাই তারপর ও যদি একটা বার ওর খোজ নিতি প্লিজ

আদি কিছুখন ভেবে বললো…..ওকে

অন্তু আদিকে জড়িয়ে ধরে বললো… থেঙ্কংইউ দাদাভাই। আদি অন্তুকে জড়িয়ে ধরে মনে মনে বলোো…ওকে তো আমি যে কোনো মুলে খুজে বের করবো। কেন করলো এটা আমার সাথে তার ও জবাব দিতে হবে তাকে। আমি যেই অগুনে জ্বলেছি ওকে ও সেই অগুনে জ্বলতে হবে শুধু একটা বার পাই। আদি অন্তুকে ছেড়ে চলে যায় অন্তু ও তার রুমে চলে যায়…..
___________________________

অফিসে,,,,দুপুর সারে ১২টা,

রোদ ল্যাপটপ কিছু কাজ করছে আর বার বার হাতের ঘড়ির দিকে তাকাছে। দেখে মনে হচ্ছে অধিক আগ্রহ নিয়ে কারোর আসার অপেক্ষা করছে সে। রোদ আবার ও ঘড়ির দিকে তাকিয়ে বিরক্ত হয়ে কাজ করতে লাগলো৷ হঠাৎ তার কেবিনে নক পরলে সে তাকে আসতে বলে, মিস লিনা এসে রোদকে বলে…

মিস লিনাঃ স্যার অন্তরা গ্রুপ অফ কোম্পানি থেকে আদি মির্জা আর আকাশ মির্জা এসেছে। আমি কি তাদের পাঠিয়ে দেবো।

রোদ বাঁকা হেঁসে বললো…জ্বি মিস লিনা তাদেরকে আসতে বলুন আর আমাদের জন্য ক্যাফি দিতে বলবেন।

মিস লিনাঃ ওকে স্যার

বলে মিস লিনা চলে গেলে, রোদ তার ল্যাপটপ বন্ধ করে মাথা এলিয়ে দেয় চেয়ারে কিছু একটা ভেবে তার ঠোঁটের কোণেয় রহস্যময়ি হাসি ফুটে ওঠে। মিনিট পাঁচেক পর আরার কেবিনে নক পরে, রোদ চোখ খুলে বললো.. গেম ইজ স্টার্ট নাও ফর্ম হেয়ার জাস্ট ওয়েট এন্ড ওয়াচ। বলে তাদেরকে ভেতরে আসতে বললো। আদি আর আকাশ ভেতরে আসলে রোদ দাঁড়িয়ে বললে…

রোদঃ আপনার বসুন

রোদের কথা মতো তারা বসলো। আদি বলতে লাগলো…

আদিঃ হুম

রোদঃ কিছু না মনে করলে আমাকে আপনি আপনি না বলে তুমি বা নাম ধরে ডাকতে পারেন

আদিঃ ওকে তুমি ও আমাকে তুমি করে ডেকো।

তারা কিছু কথা বলতে বলতে আদি বললো..

আদিঃ রোদ তোমাদের বিদেশে যে কোম্পানির ব্রাঞ্চ আছে সেখানে আমাদের কোম্পানি কিছু প্রোজেক্ট করেছে। তাই আমরা চাই আমাদের কোম্পানির নতুন একটা প্রোজেক্ট এখানে শুরু করতে চাই তোমাদের সাথে।

রোদঃ আমি দেখেছি তোমাদের কাজ আর তোমাদের কোম্পানির ও অনেক সুনাম আছে। তাই আমাদের কোন অসুবিধা নেয় তোমাদের সাথে কাজ করতে।

আকাশঃ তাইলে প্রেজেন্টেশনটা তুমি একবার দেখে নিতে। তারপরে না হয় ডিলটা ফাইনাল করা যাবে।

তাদের কথার মাঝে মিস লিনা তাদের জন্য ক্যাফি নিয়ে আসে। রোদ তাদের কে নিতে বলে, তার ক্যাফি নেয়। আকাশ আর আদি রোদকে প্রোজেক্ট সম্পর্কে সব বলতে লাগলো। রোদ বললো…

রোদঃ হুমম সব ঠিক আছে তাইলে আমরা ডিলটা ফাইনাল করি।

আদিঃ ওকে তুমি বলো কবে ডিলটা সাইন করবে তাইলে আমরা পেপারওর্য়াক শুরু করতে পারি।

রোদঃ আসলে এই ডিলটা আমাদের দুজনের কোম্পানির জন্য ভালো আর আমার মনে একটা অনুষ্ঠানের মাধ্যমে এই ডিলটা ফাইনাল করাটা ভালো হবে। কি বলেন আপনারা

আদি আর আকাশ দুজন দুজানাকে দেখে আদি বলতে লাগলো…এতে আমাদের কোন সমস্যা নেয়। তুমি বলো কবে ডিলটা সাইন করবে

রোদঃ ওকে তাইলে কাল সন্ধ্যায় আমাদের বাসায় একটা পার্টি দিয়ে ডিলটা ফাইনাল করি। আর তার সাথে আমাদের একে ওপরকে জানা হয়ে যাবে কি বলেন

আকাশঃ ঠিক আছে, তাইলে আজ আসি কাল সন্ধ্যায় দেখা হচ্ছে। [বলে উঠা দাঁড়ায়]

সব কথা বলে আদি আর আকাশ চলে যায়। রোদ হালকা হেঁসে মনে মনে বললে…এটা তো শুরু এরপর অনেক কিছু হবার আছে। কালকের থেকে খেলা শুরু হবে। বলে কাজ করতে লাগলো।
_______________________________

বিকেলের শেষ দিকে সূর্য হেলে পরেছে পশ্চিমাকাশে। আকাশে হালকা হলুদ বর্ণের রশ্মি ছোঁয়া দিয়েছে। রুমের মধ্যে গুটিসুটি মেরে বসে আছে আয়রা, হাতে তার কাচের কৌটা তাতে আমের আচার নিয়ে খেতে লাগলো আর বার বার দরজার দিকে তাকাছে। আয়রা বিরক্ত হয়ে বললো…

আয়রাঃ উফ ভাল্লাগেনা কখন থেকে ফোন করছি কিন্তু মহাশয়ের আশার নাম গন্ধ নাই।

বলে আরেকটা আচার মুখে দিলো। তখনি আয়ান রুমে আসে আয়রা একবার তাকিয়ে মুখ ঘুড়িয়ে ফেলে। আয়ান বেশ বুঝতে পেরেছে তার স্ত্রীর অভিমান হয়েছে লেট করায়। আয়ান কিছু না বলে হাতের ব্যাগ রেখে ফ্রেশ হতে চলে যায়। এদিকে, আয়রা আড়চোখে সব দেখে ও কিছু বললো না তার আয়ানের প্রতি ভিশন রকমের অভিমান হয়েছে। ১০ মিনিট পর আয়ান ওয়াশরুম থেকে বের হয়ে দেখে আয়ারা একই ভঙ্গিতে বসে আছে৷ মৃদু হয়ে ব্যাগ থেকে একটা বক্স বের করে আয়রার কাছে এসে বললো…

আয়ানঃ তো মহারানীর বুঝি এই অধমের ওপর বড়ো অভিমান হয়েছে।

আয়রা আড়চোখে আয়ানকে দেখে মুখ ফুলিয়ে বললো…হু

আয়ান আয়রার মুখ দেখে হেসে বললো…ওকে আর রাগ, অভিমান করে থাকতে হবে না। এই দেখো এদিকে তাকাও (বলে আয়রাকে তার দিকে ঘুড়িয়ে আয়ান তার কান ধরে বললো) আছে বাবা সরি আর এমন হবে না এবারের মতো মাফ করো।

আয়রা ফিক করে হেসে ফেলে আয়রাকে হাসতে দেখে আয়ান বক্সটা খুলে তার মধ্যে থেকে রসমালাই নিয়ে আয়রাকে খাইয়ে দেয়। আয়রা রসমালাই দেখে খুশি হয়ে যায় কেননা তার সকাল থেকে খেতে ইচ্ছা করছে কিন্তু কাওকে বলতে পারছে না। তাইলে এই ছেলে কি করে সব বুঝে যায় তার কি কি প্রয়োজন। আয়রা খেতে খেতে বললো…

আয়রাঃ তুমি প্রতিবারের মতো কি করে বুঝে যাও আমার কি খেতে ইচ্ছে করছে

আয়ান রহস্যময়ি হাসি দিয়ে বললো…ম্যাজিক বুঝলে বউ ম্যাজিক। তোমাকে বুঝতে হবে না এখন মন ভোরে খেয়ে নাও। তা আজ কি কি করলে..

আয়রা মন খারাপ করে বললো….কি আর করবো সারাখন রুমেয় তো থাকি। তোমারি তো আদেশ রুমের বাইরে না যাওয়ার। আমি বুঝি না বাইরে গেলে কি হবে।

আয়ানঃ কি হবে না হবে তা তোমার জানা লাগবে না। দুপুরে খেয়েছো

আয়রাঃ হুমম মিনু খালা দিয়ে গিয়েছিলো। আয়ান আমাকে নিয়ে বাইরে যাবে প্লিজ। দেখো সব সময় আমি রুমে থাকি আর আমার রুমে দিদুন আর মিনু খালা ছাড়া কেও আসে না আমার সারাটা দিন বোর হয় প্লিজ….

আয়রার অকুতি ভরা চোখে তাকিয়ে আয়ান নিজেকে সামলে নিয়ে বললো…না আজ না অন্য কোন দিন এখন আমি আমার বাচ্চা আর তার মাকে আদর করবো।

বলে আয়রার পেটে চুমু দিয়ে বলো…বাবু তোমার মাম্মাকে বেশি বেশি জ্বালাবে তাইলে তোমার মাম্মা বোর হবার সময় পাবে না বুঝলে…

আয়ানের কথা শুনে আয়রা মুখ বাকিয়ে বললো….হ্যাঁ আছে আমার কোথাকার নবাব, আমার বেবি আমার কথা শুনবে তোমার না তাই চুপ থাকো।

আয়ানঃ আমার বেবি আমার কথা শুনবে তুমি চুপ থাকো..

এখন শুরু হয়ে গেলো তাদের ঝরগা। আয়ান ঝরগাতে না পেরে উঠতে সে আয়রাকে ঝাপটে ধরে আদর করতে লাগলো। এতে আয়রা লজ্জায় লাল হয়ে আয়ানের আদর নিতে লাগলো। এই একজনি আছে যে তাকে নিজের থেকেও বেশি ভালোবাসে, তার সব আবদার, রাগ, অভিমান, সব মেনে নেয়। আয়রা নিজেকে ভাগ্য বান মনে হয় আয়ানকে পেয়ে…..
#তুমি আসবে বলে
#অপেক্ষার প্রহর
#Sondha Halder
#পর্ব-১২

কোলাহল যুক্ত পরিবেশে বসে থাকতে থাকতে বিরক্ত হয়ে উঠছে অরনি। সে হবে না কেন বিরক্ত নিম্নে ৩০ঘন্টা ধরে বসে আছে সে ক্যাফি শপে প্রাপ্যর জন্য। ভার্সিটি থেকে একটা ক্লাস করে বেরিয়ে এসেছে সে শুধু প্রাপ্যর সাথে দেখা করার জন্য কিন্তু সে জনাব আসার নাম গন্ধ নেয়। ফোঁস করে একটা বিরক্ত কর নিঃশ্বাস ছেড়ে উঠে দাঁড়ায় চলে যাবার জন্য। ঠিক সেই সময় ক্যাফের দরজা খুলে ভেতরে আসে প্রাপ্য, আশেপাশে কাওকে খুজতে লাগলো কাঙ্ক্ষিত মানুষকে দেখে মুচকি হেসে এগিয়ে এসে ব্যস্ত শুরে বলতে লাগলো….

প্রাপ্যঃ সরি সরি সরি অনেক লেট হয়ে গছে আসতে সরি অরু…[বলে কান ধরলো কিউটি ফেস করে]

কারোর কথা শুনে সামনে তাকিয়ে নিজের সামনে প্রাপ্যকে দেখে রেগে গিয়ে অরনি বললো…

অরনিঃ এই তোমার প্রবলেম টা কি বলতো। প্রতি বার এমন কাজ করো আর এসে কিউটি ফেস করে সরি বললো আর আমি গলে যায়। কিন্তু এবার হবে না আমি এবার গলে যাবো না। হু

প্রাপ্য কান ছেড়ে দাড়া, সে এবার বুঝেছে এই বার আর এই ট্রিক কাজ করবে না। তাই অরনিকে চেযারে বসিয়ে দিয়ে তার সামনের চেয়ারে বসে বললো….

প্রাপ্যঃ সরি অরুসোনা আজ আমি অনেক ব্যস্ত ছিলাম সত্যি বলছি। আজ বাড়িতে পার্টির সব কাজ আমার ঘাড়ে এসে পরছে আর ভাইয়া অফিসের কাজে ব্যস্ত। তাই এমন হলো একটু বোঝার চেষ্টা তো করো।

অরনি তার রাগ ছেড়ে প্রাপ্য কে বললো.. ঠিক আছে মাফ করলাম এবারের মতো। তা তোমার কাজ সব শেষ হয়েছে।

প্রাপ্যঃ হুম হয়েছে ভাইয়া হাফ ডে দিয়েছে আজ অফিসে। অফিসের স্টাফ দের আজ পার্টিতে উপস্থিত থাকতে হবে আমাদের নতুন প্রজেক্টর ডিল সইয় হবে তাই। একটু পর শপিং এ যাবো আনভি জেদ ধরেছে নতুন জামা লাগবে। এতো কাজের মধ্যে থেকে তোমার কাছে আসা বুঝলে

অরনিঃ হুমম বুঝলেম, কিন্তু এখন আমাকে যেতে হবে

প্রাপ্যঃ কেন [ভ্রু কুচকে]

অরনিঃ দাদাভাই আমাদেরকে নিয়ে আজ শপিংয়ে যাবে। রাতের পার্টির জন্য

প্রাপ্যঃ ওকে চলো তোমাকে বাড়িতে দিয়ে আসি। ও ভুলেই গেছি এই নও [বলে একটা ব্যাগ তার দিকে এগিয়ে দিলো]

ব্যাগ দেখে অরনি ভ্রু কুচলো সে ইশারায় বলে..এতে কি আছে আর আমাকে কেন দিচ্ছো। প্রাপ্য কি যেন বললো এতে অরনি মাথা নাড়িয়ে তার সাথে চলে গেলো। প্রাপ্য অরনিকে বাড়িতে নামিয়ে দিয়ে সে ও বাড়িতে গেলো…..
______________________________

গাড়ি আপন গতিতে চলছে সাথে অন্তুর অবাধ্য চুল গুলো। আদি গাড়ি চালাছে তার পাশে অন্তু বসে বাইরের পরিবেশ উপভোগ করছে, অনেক দিন পর বাইরে বড়াতে এসেছে তাই মন খুলে নিঃশ্বাস নিচ্ছে। আর অরনি পিছনে বসে ফোন ঘাটছে। অন্তু মাথা ঘুড়িয়ে আদিকে দেখে নিলো আজ আদি তাদের শপিং করাতে নিয়ে যাচ্ছে। অন্তু যাবে না বলে আদির এক কথা তাকে যেতে হবে তাই বাধ্য হয়ে আসতে হয়েছে তাকে, সে এখনো ভাবছে কালকের কথা।

কাল দাদাভাই আর চাচ্চু এসে যখন সবাইকে বলে আমাদের কোম্পানির সাথে চৌধুরী কোম্পানির বড় একটা ডিল হয়েছে সবাই খুশি হয়ে ছিলো। তারপর আদি বলে কাল নাকি চৌধুরী বাড়িতে পার্টি রাখা হয়েছে ডিলটা সাইন করার জন্য তাদের সবাই কে যেতে হবে কিন্তু মুসকিল হলো যাওয়া নিয়ে, দিদুন যেতে পারবে না, আয়রাকে কাল ডক্টর দেখাতে হবে, বাবা তার পার্টি অফিসে কাজ আছে যাবে না আর চাচি সাফসাফ বলছে যাবে না তাই বাধ্য হয়ে আমি অরনি দাদাভাই আর চাচ্চু যেতে হবে। এরপর দাদাভাই বললো কাল শপিং যাবে তৈরি হয়ে থাকতে।

আদির গাড়ি থামাতেই অন্তুর ভাবনা ঝুটে যায়। আদি বাইরে এসে তাদেরকে নিয়ে ভেতরে গেলো। একের পর কে জামা দেখে দেখে আদি বিরক্ত হয়ে বলো…

আদিঃ অরুবুড়ি আর কতো জামা দেখবে বলতো কখন থেকে দেখেয় যাচ্ছো একটাও পছন্দ হলো না তোমার

অরনিঃ আমি কি করবো পছন্দ হচ্ছে না দাদাভাই [গোমরা মুখে]

আদি হতাস নিশ্বাস ছেড়ে একটা হালকা গোলাপি রঙের মধ্যে মেরুন পুতির কাজ করা গ্রাউন্ড নিয়ে অরনিকে দেয়৷ অরনি গ্রাউন্ড দেখে খুশি হলে বললো…দাদাভাই তোমার চয়েজ তো দেখছি হেবি আমার পছন্দ হয়েছে আমি এটাই নেব।

আদি আর অন্তু মুচকি হাসলো, আদি অন্তুকে বলে সে কি নেবে। অন্তু হালকা মেরুন রঙের গ্রাউন্ড নিলো তারপর আদি তার জন্য ক্যাফি কালারের ব্লেজার আর সাদা শার্ট নিলো। শপিং শেষে আদি তাদের নিয়ে ক্যাফি শপে যেতে লাগলো। আদি অরনি আগে আগে যাচ্ছে আর অন্তু তাদের থেকে অনেক পিছনে আছে। হঠাৎ করে অন্তুর হার্ট দ্রুতগতিতে বাড়তে লাগলো, অন্তু হাসফাস করতে করতে আসেপাশে কাওকে খুজতে লাগলো৷ অন্তু এদিক ওদিক দেখে কাওকে পেলো না তার মনে হচ্ছে কেও তাকে দেখছে গভীর ভাবে তাকে পর্যবেক্ষণ করছে। অন্তু বিড়বিড় করে বলছে…আমি জানি তুমি এখানেই আছো, আমাকে দেখছো, আমি তোমার উপস্থিত অনুভব করতে পারছি, আমার হার্টের গতি বাড়ছে এখন যেমনটা তুমি আমার আসেপাশে থাকো এমন হয়ে। কেন এমন করছো সামনে আসো, এবার তুমি নিজে না ধরে দিকে আমি তোমার জন্য পাগলামি করবো না। দেখে নিও

বলে অন্তু ক্যাফি শপের দিকে যেতে নিলে একটা ছোট বাচ্চা মেয়ে এসে তাকে জড়িয়ে ধরে কান্না করে মাম্মা বলছে। হঠাৎ এমন হওয়া অন্তু হতবাক হয়ে গেলো। অন্তুর বুকে মোচর দেয় বাচ্চাটা মুখ থেকে মাম্মা ডাক শুনে, অন্তুর চোখ থেকে একফোঁটা অশ্রু গড়িয়ে পরে। অন্তু নিজেকে সামলে বাচ্চাটাকে কোলে তুলে নিয়ে চমকে যায়। বাচ্চাটি মুখ কান্না করার ফলে লাল হয়ে গেছে এখনো চোখে পানি। অন্তু সযত্নে তার চোখ মুখে আদর করে বললো….

অন্তুঃ মামুনি কান্না বন্ধ করো। আমাকে বললো কি হয়েছে তোমার তোমার সাথে কে আছে আমাকে বললো।

মেয়েটি অন্তুর গলা জড়িয়ে ধরে আদু আদু কান্না জড়িয়ে কন্ঠে বললো….আমি হলারি (হারিয়ে) গেছি, আন্লি (আন্ট) কে পাচ্ছি না আমি।

অন্তু এবার বুঝলো মেয়েটা হারিয়ে গেছে আর তার সাথে তার কোনো আন্টি আছে। অন্তু তাকে শান্ত করতে করতে বললে…মামুনি দেখ তোমার আন্টিকে পেয়ে যাবো তুমি কান্না করো না। দেখো গুড গাল কান্না করে না

মেয়েটি নাক টেনে বললো…হুম

অন্তু আশেপাশে দেখতে লাগলো যে মেয়েটি কার। কিছুখন পরে একজন মহিলা এসে মেয়েটিকে তার কাছ থেকে নিয়ে ব্যস্ত হয়ে বললে…

মালাঃ আনভি মামনি তোমার কিছু হয়নি তো এভাবে কেও না বলে চলে যায়। যানো আমি কতো টেনশনে ছিলাম তোমাকে খুজে না পেয়ে।

(হ্যাঁ মেয়েটা আর কেও না আনভি। আনভিকে নিয়ে মালা আর বাকিরা শপিং করতে এসেছে। রোদের ফোন আসায় সে একটু দূরে যায় এই ফাকে আনভি বাইরে চলে আসে যখন কাওকে না তখন আনভি কান্না করে আর অন্তুর সাথে দেখা হয়) অন্তু মহিলাটিকে দেখে বুঝতে পারলো এই মেয়েটার আন্টি আর মেয়েটা নাম আনভি। অন্তু চুপ করে দেখবে লাগো শুধু

আনভিঃ সরি

মালা আনভিকে শান্ত করে সামনে থাকা অন্তুকে বললো…থেঙ্কংইউ ম্যাম আজ আপনি না থাকে আনভি মামনির কোন ক্ষতি হতে পারতো

অন্তুঃ এর কোন প্রয়োজন নেই আপনি আনভিকে দেখে রাখবেন।

বলে আনভিকে আদর করে দেয়। কেন যেন অন্তুর আনভিকে ছাড়তে ইচ্ছে করছে না। আনভির মধ্যে এমন কিছু টান অনুভব করছে অন্তু যেটা শুধু ওর জন্য করতো। অন্তু আনভির কপালে চুমু দিয়ে দেখে অন্তুর মুখে যেই জায়গায় একটা তিল আছে ঠিক সেই জাগায় আনভি ও তিল আছে। অন্তু নিছক কোইন্সিডেন্ট ভেবে ছেড়ে দেয়, কিন্তু চোখ গুলো কেমন চেনা চেনা লাগছে, হালকা বাদামি রঙের। মালা আনভিকে নিয়ে চলে গেলো, অন্তু শুধু আনভিকে দেখতে লাগো। মনে হচ্ছে তার বুকের মাঝে থেকে কেও তার স্পন্দন কেরে নিয়ে যাচ্ছে। সে যানে না অন্তু চলে যায় ওখান থেকে, অন্তু চলে যেতেই কেও আড়াল থেকে বেরিয়ে আসলো তার ঠোঁটের কোনে তৃপ্তির হাসি। দেখে মনে হচ্ছে অনেক কিছু পেয়ে গেছে। অচেনা লোকটি ওখান থেকে চলে যায়……..
___________________________

অরনি রেড়ি হয়ে অন্তুর রুমে এসে দেখে অন্তু দাড়িয়ে দাড়িয়ে কি যেন ভাবছে। অরনি তা দেখে বললো…

অরনিঃ দিদিয়া দাড়িয়ে দাড়িয়ে কি ভাবছি বলতো

অরনির কথা শুনে অন্তু অসহায় মুখ করে বললো…দেখ না অরু শপিং থেকে দাদাভাই যে গ্রাউন্ডটা দিলো সেটার বদলে দেখ কি পেকং করে দিয়েছে।

অন্তুর কথা শুনে অরনি বেডে দেখে একটা নীল আর অরেনজ রঙ মিশ্রিত একটা সুন্দর শাড়ি সাথে মেচিং জুয়েলারি। অরনি শাড়িটা হাতে নিয়ে বললো…

অরনিঃ ওয়াও খুব সুন্দর শাড়ি দিদিয়া। এটাই পেড়ে নে

অরনিঃ অরু কি যাতা বলছিস অন্য কারোর শাড়ি ভুল করে আমার কাছে এসেছে তাই কি পেড়ে নেব। আমি অন্য কিছু পড়ে নিছি

অরনিঃ দিদিয়া কি পরবে তোর ভালো কোন জামা আছে নেই তো। তাইলে একটাই পরে নেবে চলো চলো।

অরনি জোর করে অন্তুকে শাড়িটা পড়িয়ে দেয় সাথে হালকা সাজিয়ে দেয়। অরনি অন্তুকে দেখে বলে খুব মিষ্টি লাগছে। অরনি শুধু হাসতে লাগলো, তারপর সবাই চলে গেলো চৌধুরী বাড়িতে……
____________________________

রাত-৭ঃ৩০টা,

প্রাপ্য সব দেখছে কোথাও কিছু কমতি আছে কি না। প্রাপ্য আজ ক্রিম কালারের শার্ট পেড়েছে চুলে জেল দেয়া হাতে কালো ঘড়ি কিলার লুক৷ মেহমান আসতে লাগলো অফিসের অনেক স্টাফ চলে এসেছে ইতিমধ্যে। আদির গাড়ি এসে থামে চৌধুরী বাড়িতে, সবাই নেমে আসে আদি আর আকাশ আগে ভেতরে গেলো আর অন্তু অরনি পেছনে আসছে। আদি প্রাপ্য সাথে কথা বলতে বলতে বললো…

আদিঃ প্রাপ্য রোদ কোথায় তাকে তো দেখছি না।

প্রাপ্যঃ ভাইয়া আসছে একজন স্পেশাল মানুষকে তৈরি করছে। আপনি বাবার সাথে কথা বলুন আমি একটু আসি

আদি ওকে বলে মি.চৌধুরীর সাথে কথা বলতে লাগলো। একটু পর রোদ নেমে আসে নিচে গায়ে সাদা শার্ট আর নীল রঙের ব্লেজার, হাতে কালো ঘড়ি, গালে হালকা চাপ দাড়ি তার অবাধ্য চুল কপালে লেপ্টে আছে দেখতে হ্যান্সাম লাগছে৷ রোদ তার বাবাই কাছে এসে বললো…

রোদঃ বাবাই সব ঠিক আছে

মি.চৌধুরী আর আদি কথা বলছে তখন রোদের কথা শুনে তার দিকে তাকায়। আদি বললো… তো রোদ এতোখনে দেখা মিলো তোমার

রোদঃ হুমম একজন কে তৈরি করতে দেড়ি হয়ে গেলো।

আদি মুচকি হসে বললো…স্পেশাল হু

রোদঃ স্পেশালের থেকেও স্পেশাল

তাদের কথা মাঝে অরনি আর অন্তু ভেতরে আসে। প্রাপ্য দূর থেকে অন্তুকে দেখে মনে হচ্ছে ছোট্ট খাটো হার্ট অ্যাটাক হবে মেয়েটাকে দেখতে অপ্সরা লাগছে। হালকা গোলাপি রঙের গ্রাউন্ড সাথে হালকা মেকাপে মানিয়েছে। এদিকে অরনি প্রাপ্য দেখে প্রাপ্য ইশারায় তার কাছে আসতে বলছে অরনি ইশারায় আসছি বলে। অরনি অন্তুকে বলে…দিদিয়া আমি এখনি আসছি তুমি ওই দিকে যাও দেখো দাদাভাই আছে। অন্তুকে কিছু না বলতে দিয়ে সে চলে যায়। অন্তুর একা থাকতে ভয় করছে এতো মানুষ দেখে কেমন অস্থির লাগছে। অন্তু যেতে নিলে পায়ে শাড়ির বেধে পড়ে যেতে নিলে অন্তু চোখ মুখ খিঁচকে ফেলে তার মনে হয় এই বুঝি তার কোমর ভাঙলো। কিছুখন পর তার মনে হলো সে কোন ব্যাথা পেলো না তাই পিটপিট করে তাকায় দেখে সে কারোর বাহু ডোরে। তার সামনে থাকা ব্যাক্তিকে দেখে চোখ কুচে ফেলে তার মনে হচ্ছে একে আগে কোথাও দেখেছে। এদিকে রোদ অন্তুর পরতে দেখে তাকে ধরে ফেলে রোদ অন্তুকে দেখে বিস্ময় প্রকাশ করে। রোদ অন্তুকে সোজা কেরে দাড় করিয়ে দেয়। অন্তু নিজেকে ঠিক করে নিলে আদি এসে অন্তুকে বললে..

আদিঃ অন্তু তুমি ঠিক আছো।

অন্তুঃ হুমম দাদাভাই

আদিঃ থেঙ্কংইউ রোদ তুমি না থাকলে কি না কি হয়ে যেতো

রোদঃ নো প্রবলেম আদি

আদি অন্তুর সাথে রোদর পরিচয় করিয়ে দেয়। মি.চৌধুরী বলে… রোদ দেখতো দিদিভাই হয়েছে কি না। রোদ মাথা নাড়িয়ে আনভিকে আনতে গেলো। অন্তুকে দেখে মি.চৌধুরী বললো…

মি.চৌধুরীঃ ভারি মিষ্টিতো তুমি মা কি নাম তোমার

অন্তুঃ জ্বি আঙ্কেল অন্তরা মির্জা অন্তু

মি.চৌধুরীঃ তুমি তাহলে আদির বোন ও আমাকে বলছে। তোমার কোথাও লাগেনি তো

অন্তুঃ না আঙ্কেল

তাদের কথার মাঝে রোদ আনভিকে নিয়ে নিচে আসতে দেখে মি.চৌধুরী বলে..ওই তো দিদিভাই চলে এসেছে। তার কথা শুনে অন্তু সেদিকে তার তাকাতেয় বিস্মিত হয় যায়, সে ভাবতে পারছেনা এই মেয়েটা এখানে তাইলে কি এদের সাথে আনভির কোনো সম্পর্ক। আনভি কে দেখতে পুরোই পুতুল পুতুল লাগছে, হালকা নীল সাদা মিশ্রিত জামা, নীল জুতা মাথায় কিলিপ কিউটির ডিব্বা লাগছে তাকে। আনভির কথায় ধ্যন ভাঙে অন্তুর তখনে প্রাপ্য, অরনি, আদি, আকাশ, মি.চৌধুরী সবাই এক সাথে এসে দাড়ায়। আনভি রোদের কোল থেকে বলে বললে…

আনভিঃ চাত্তু (চাচ্চু) দাদুন আমাকে দেখতে কেমলা (কেমন) লাগছে

আনভির কথা শুনে সবাই হেসে দেয়। প্রাপ্য আনভির কাছে এসে তার গালে চুমু দিয়ে বললে…

প্রাপ্যঃ আমার পরীটা তো সব সময় ভালো দেখায় কিন্তু আজ তাকে সত্যি সত্যি পরী লাগছে

মি.চৌধুরীঃ আজ আমার আনভি দিদিভাই কে ছোট্ট রাজকুমারী লাগছে।

তাদের কথা শুনে আনভি খিলখিল করে হাসতে লাগে। অন্তু এক ধ্যনে তার দিকে তাকিয়ে থাকলো। কেন জানি অন্তুর মনের কষ্টকে আনভির হাসি শীতল করে দিচ্ছে। আদি বললো…

আদিঃ রোদ এই বুঝি তোমার স্পেশাল মানুষ

রোদঃ হুমম আমার জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ তার স্পেশাল মানুষ আমার মেয়ে আনভি চৌধুরী

আদিঃ হুম দেখেয় বোঝা যাচ্ছে কতোটা স্পেশাল। তা মামনি তোমাকে অনেক কিউট লাগছে

আনভিঃ থেঙকু (থেঙ্কংইউ) আন্কুল (আঙ্কেল)

আদিঃ ওয়েলকাম মামনি

রোদ অন্তুর দিকে তাকায় দেখে সে এক ধ্যানে আনভিকে দেখছে। আনভি হঠাৎ অন্তুকে দেখে রোদের কোল থেকে নেমে দৌড়ে অন্তুর কাছে গিয়ে তার কোমর জড়িয়ে ধরে। আনভির কান্ড দেখে সবাই অবাক। রোদ ভ্রু কুচকে তাকিয়ে আছে ঘটনা টা বোঝার জন্য, কেননা তার মতে আনভি এই প্রথম তাকে দেখেছে। কিন্তু তাকে দেখে মনে হচ্ছে এর আগেও তাদের দেখা হয়েছে। অন্তু নিচে বসে আনভির সারা মুখে চুমু দিয়ে বুকে জড়িয়ে ধরলো। আনভি বললো…..

আনভিঃ ভালো আন্লি (আন্টি) তুমি এখানে কেন

অন্তু তাকে ছাড়িয়ে তার গাল টেনে বললো… ওই যে আঙ্কেল টা আছে (আদিকে দেখিয়ে) আমি তার সাথে এসেছি ওনি আমার দাদাভাই

আনভিঃ ওও

আদি এসে বললো…অন্তু তুই আনভিকে কি করে চিনিস। অন্তু একে একে শপিং মলের সব কথা বলতে লাগলো। রোদ সব শুনে বললো…আপনাকে কি বলে ধ্যনবাদ জানাব জানি না তখন আনভি কে না পেয়ে আমার পাগল পারা হয়ে গিয়েছিল। মালার কোলে আনভিকে দেখে শান্তি পায় তখন কিছু করতে পারিনি মালা পরে আমাকে সব বলেছে। থেঙ্কংইউ মিস

অন্তুঃ অন্তরা আমাকে অন্তু বলতে পারেন

রোদঃ থেঙ্কংইউ মিস অন্তু।

মি.চৌধুরী বললো ডিলটা এনাউন্সমেন্ট করতে তাই রোদ স্টেজের দিকে যেতে লাগলো….
#তুমি আসবে বলে
#অপেক্ষার প্রহর
#Sondha Halder
#পর্ব-১৩

রোদ সবার দৃষ্টি আকর্ষণ করার জন্য মাইক হাতে নিয়ে গলা ঝেড়ে বলতে লাগলো…

রোদঃ লেডিস্ এন্ড জেন্টালম্যান সবাইকে আন্তরিক ভাবে ধন্যবাদ জানাচ্ছি এখানে আসার জন্য। আর আমাদের খুশিতে সামিল হবার জন্য। আজ এখানে আপনাদের ডাকার বিশেষ করন হলো, আমাদের কোম্পানি সাথে অন্তরা গ্রুপ অফ কোম্পানির বিগ প্রজেক্ট করতে যাচ্ছে শীগ্রই।

রোদের কথা শুনে সবাই করোতালি দিলো। রোদ আবারো বললো…

রোদঃ আজ তার ডিল সাইন করা হবে। আমি অন্তুর কোম্পানির মালিক আদি মির্জা কে স্টেজে এসে ডিলটা সাইন করতে অনুরোধ করছি।

আদি স্টেজে যায় রোদ তার সাথে হেন সেক করে কিছু পেপার তাকে দেয়। আদি পেপার গুলো পড়ে তাতে সইন করে দেয় তারপর রোদ করে। সবাই হাতেতালি দিয়ে সম্বর্ধনা দেয়। রোদ বলে…পার্টি এখন থেকে শুর করা যায়। আপনা পার্টি ইনজয় করুন। রোদ আর আদি নিচে নেমে আসে, সবাই ড্রিংকস নিচ্ছে হালকা আওয়াজে মিউজিক বাজছে।
রোদ তার বিজনেস পার্টনারদের সাথে কথা বলছে। আদি এসে অন্তু আর অরনির কাছে। অরনি বলল..

অরনিঃ কংগ্রেস দাদাভাই

আদিঃ থেঙ্কিইউ অরু

অন্তুঃ কংগ্রাচুলেশনস দাদাভাই

আদিঃ থেঙ্কংইউ অন্তুপাখি

আদি অন্তর কোলে আনভিকে দেখে অন্তুকে বললে… অন্তু আনভি এখনো তোর কাছে আছে ওকে কাওকে দে তোর অসুবিধা হবে। সেই কখন থেকে কোলে নিয়ে আছিস, দাড়া আমি রোদকে বলি ও নিয়ে যাবে আনভিকে [বলে রোদকে খুজতে লাগো]

এদিকে আনভি অন্তুর কোল থেকে নামছে না, অনেক বার মালা এসেছিলো কিন্তু আনভি তার কাছে যায় নি বলেছে….আমি ভালো আন্লি (আন্টি) কাছে থাকবো

মালা হতাশ হয়ে আবার চলে যায়। অন্তু ব্যাস্ত সুরে বললো…থাক না দাদাভাই আমার কোন অসুবিধা হচ্ছে না বরংচ ভালো লাগছে আনভিকে নিয়ে। দেখ তুই কি সুন্দর করে আমাকে জড়িয়ে কাঁধে মাথা রেখেছে।

আদি অন্তর কথা শুনে দেখে সত্যি আনভি অন্তুর কাথে মাথে রেখে আছে। আদি একবার অন্তুর দিকে চেয়ে থাকে অন্তুর চোখে মুখে কেমন একটা খুশি উজ্জ্বল করছে তার, আদি আর কিছু বললো না আকাশ মির্জা কে নিয়ে তাদের কিছু পার্টনাদের সাথে কথা বলতে গেলো। অরনি ও প্রাপ্য কে খুজতে খুজতে ওপরে চলে যায়। হঠাৎ অরনি হাতে টেনে কেও একটা রুমে এনে তাকে দেয়ালের সাথে চেপে ধরে। আকাম্মিক এমন হওয়ায় অরনি ভয়ে চোখ বন্ধ করে নেয়, তার গা কাপতে থাকে। তার মুখের ওপরে কারোর উষ্ণ নিশ্বাস আছড়ে পড়ছে, তার সামনের চুল গুলো আলতো হাতে তার কানের পিঠে গুজে দিতেয় সেই লোকের স্পর্শে খানিকটা কেঁপে ওঠে সে। অরনি পিটপিট করে চোখ খোলে সামনে তাকাতেই দেখতে পায় প্রাপ্যর হাসোজ্জল মুখ খানি, ঠোটের কোণে লেগে থাকা দুষ্টু হাসি দেখে অরনির মনে ঝড় উঠে। তার শরীর আবস হয়ে আসে, প্রাপ্য তার হাত দিয়ে অরনির গাল স্লাইড করতে করতে বললো….

প্রাপ্যঃ অরুসোনা ভয় পেয়ে গেছিলে বুঝি।

অরনিঃ কি ক ক করছো কি প্রাপ্য তু তুমি। কেও দেখে ফেলে কেলেঙ্কারির ঘটবে..[কাপা কাপা গলায়]

প্রাপ্যঃ তোমাকে আজ দেখতে হেবি লাগছে, আমার না তোমাকে আদর করতে ইচ্ছে করছে। প্লিজ অরুসোনা একটু [ঘোর লাগা দৃষ্টিতে বলতে লাগলো]

বলে অরনির দিকে এগোতে লাগলো, অরনির মুখের ওপর প্রাপ্যর উষ্ণ নিশ্বাস আছড়ে পড়তেই অরনি চোখ বন্ধ করে নিলো, জামায় দু’হাতে মুঠো বন্দি করে নেয়। প্রাপ্য ঘোর লাগা চোখে অরনি গালে হাত দিয়ে তাকে নিজের একেবারে কাছে নিয়ে এসে তার ঠোঁটে ঠোঁট ছোঁয়ায়। অরনি জামা ছেড়ে প্রাপ্য গলার পেছনে জড়িয়ে ধরে তার আরো কাছে যায়। অরনির সম্মতি পেয়ে প্রাপ্য আরো নিবিড় করে ভালোবাসতে লাগলো। কিছু সময় পর প্রাপ্য অরনিকে ছেড়ে দুরে গিয়ে দাড়িয়ে জোরে জোরে কয়েকটা নিশ্বাস নিয়ে অরনির দিকে তাকায়। মেয়েটা মাথা নিচু করে নিশ্বাস নিছে প্রাপ্য দেখে অরনি লজ্জায় লাল হওয়া মুখ খানি। বেস বুঝতে পারছে মেয়েটা এখন তার সাথে মাথা উঁচু করার মতো পরিস্থিতিতে নেয়। প্রাপ্য টেবিল থেকে পানি নিয়ে অরনিকে দিলে সে পানিটা নিয়ে খেতে লাগলো, একটু পর অরনি স্বাভাবিক হলে প্রাপ্য বলে….

প্রাপ্যঃ অরুসোনা নিজেকে ঠিক করে নিচে আসো। আমাদের এখানে এক সাথে দেখলে কেও খারাপ ভাবে। আমি নিচে যাচ্ছি তুমি আসো।

বলে চলে গেলো। অরনি আয়নাতে নিজেকে দেখে তার গাল লজ্জায় লাল হয়ে গেলো ইসস কি করেছে ঠোঁটা, অরিন ভালো করে মুখ মুছে বললো…অসভ্য ছেলে। বলে নিচে চলে যায়।
_____________________________

অন্তু একটা চেয়ারে বসে তার কোলে আনভি বসে পুটুরপুটুর করে কথা বলছে। অন্তু আনভির কথা শুনে মাঝে মাঝে হাসছে আর আনভিকে আইসক্রিম খাইয়ে দিচ্ছে। তাদের দেখে মনে হচ্ছে কতো দিনের পরিচিত কিন্তু তার সবে মাতে কয়েক ঘন্টা আগে পরিচিত হয়। কেও দেখে মনে করবে তার মা-মেয়ে, অন্তু অনেকখন মনে হচ্ছে কেও তাকে গভীর ভাবে দেখছে কিন্তু সে কাওকে খুজে পায় না, সে আবার আনভির দিকে মন দেয়।

এদিকে রোদ আনভিকে এতো খুশি কখনো তার কাছে থাকতেও দেখেনি। অন্তুর সাথে কেমন কেরে এতো তাড়াতাড়ি মিশে গেলো বুঝলো না। আনভি অচেনা কারোর সাথে সহজে মেশে না, তাই নিয়ে রোদকে ভাবাচ্ছে। কি সুন্দর লাগছে তাদেরকে দেখতে, অন্তু আনভিকে আইসক্রিম খাওতে খাওয়াতে তার গালে লেগে যায় সে তার শাড়ির আঁচল দিয়ে তা মুছে দেয়। এ দেখে রোদের মুচকি হসি দেয়। হঠাৎ কাধে কারোর হাত পড়তেই রোদ চমকে যায়, ঘাড় ফিরিয়ে দেখে তার বাবাই দাড়িয়ে আছে। রোদকে সামনে তাকাতে ইশারায় করে তিনি বলেন…

মি.চৌধুরীঃ দেখেছো রোদ আজ আনভি কতোটা খুশি হয়েছে।

রোদ আনমনে বললো…হুমম

মি.চৌধুরীঃ রোদ তোমার উচিত না সব সময় আনভিকে খুশি রাখা। আমি জানি সেদিনের কথা প্রাপ্য আমাকে বলেছে সব। আমার মনে হয় আনভির এখন মা প্রয়োজন তুমি বুঝতে পারছো আমি কি বলছি

রোদ ভ্রু কুচকে তাকিয়ে থাকে তার বাবাই দিকে সে কি মিন করছে সে বুঝতে পারছে। রোদকে এভানে তাকাতে দেখে তার বাবাই বললো…..

মি.চৌধুরীঃ তোমার এখন উচিত অতীত ভুলে নতুন করে জীবন শুরু করা আর আনভিকে একটা মা এনে দেওয়া। যাতে আনভি খুশি থাকে যেমন এখন আছে অন্তুর সাথে দেখো

রোদ পুনরায় সেদিকে তাকায়, দেখে অন্তু আনভিকে আদর করছে আর আনভি ও অন্তুকে আদর করছে তারপর দুজনি খিলখিল করে হেসে ফেলছে। রোদ তার বাবাই দিকে তাকিয়ে বললো…

রোদঃ আমি মানছি আনভির মা প্রয়োজন কিন্তু তার বিনিময়ে আমি তাকে ভুলতে পারনো আর না নতুন ভাবে কাওকে আমার জীবনে জায়গায় দেবো। আমি ওকে কথা দিয়েছি ও ব্যতিত কওকে আমার বুকে ঠাঁই দেবো না।

মি.চৌধুরীঃ রোদ তুমি এখন যা করছো বা সামনে যা করবে সেটা আন্যায়। একজনের শাস্তি অন্য কেওকে দেওয়াটা আন্যায়। প্রতিশোধে নেশায় এতোটা নিচে নেমও না যে পরে উঠতে পারবে না।

রোদ তার বাবাইর কথা শুনে প্রচন্ড রেগে যায় কিন্তু প্রকাশ করলো না। কাঠ কাঠ গলায় জবাব দিলো…

রোদঃ তারা যে আন্যায় গুলো করলো তার কি হবে বাবাই। আমার আর আনভির জীবনটা নষ্ট করে দিলো তার কি হবে। এই যে আনভি তার মা ছাড়া বড় হচ্ছে তার কি কোন প্রয়োজন ছিলো,না ছিলো না। ওরা আমার থেকে আমার ভালোবাসা আর আনভির থেকে তার মা কে কেড়ে নিয়েছে। যে ভাবে আমরা কষ্ট পাচ্ছি ঠিক সেই ভাবে তারাও পাবে।

বলে রেগে সেখান থেকে চলে যায়। মি.চৌধুরী রোদের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে হতাশের নিশ্বাস ছেড়ে বললে…আমার ছেলেটা অনেক পাল্টে গিয়েছে সালমা (রোদের মা) আগের মতো হাসি খুশি নেয় আছে শুধু প্রতিশোধের নেশে। এই নেশা তাকে কি কি করাবে সে নিজেও যানে না। বলে সামনে অন্তু আর আনভিকে দেখে চলে যায়।
___________________________

বিকেলে আবহাওয়াটা আজ মেঘলা মেঘলা মনে হচ্ছে বৃষ্টি হবে। বৃষ্টি সিজনে আকাশটা এমনি হয়ে থাকে এই মেঘ এই রোদ্দু। অন্তু বিছানা শুয়ে বেলকনিতে দরজার দিকে তাকে ভেবছে আজ ৫ দিন হয়ে গেছে ওই পার্টি থেকে এসেছে তারা। দাদাভাই, চাচ্চু মিলে পুরো দমনে নতুন কাজে হাত লাগিয়েছে আজ ৩ দিন হলো৷ অন্তুর মন বার বার আনভিকে দেখতে আনচান আনচান করছে, আনভির মধ্যে কি একটা আছে তাকে টানে আনভির কাছে যাবার জন্য, এমন কি আছে আজ ও তা নিয়ে ভাবে অন্তু। আনভি হাসি, মুখ ফুলিয়ে থাকা, মিষ্টি করে কথা বলা, আর ওর চোখ চোখ যেনো অনেক কিছু বলে। আনভির কথা ভাবতেই তার ঠোঁটের কোণে হাসি ফুটে উঠলো সে ভেবে সেই সন্ধ্যার কথা যখন সে আনভিকে রেখে চলে আসবে সে কি কান্না আনভির সে কিছুতেই তার ভালো আন্টিকে আসতে দাবে না….

সারা পার্টিতে আনভি অন্তুর সাথে ছিলো এক মুহূর্তের জনেও কাঁধ ছাড়া হয় নিই। পার্টি শেষে হয়েছে অনেক খন সবাই চলে যাচ্ছে, অন্তুদের ও যেতে হবে তাই প্রাপ্য অন্তুর কাছে এসে আনভিকে নিতে নিলে আনভি অন্তুর গলা আকড়ে ধরে বললো..

আনভিঃ ভালো আন্লি (আন্টি) তুমি যেওনা আমালে (আমাকে) ছেড়ে..[কাঁদো কাঁদো গলায়]

অন্তু একবার প্রাপ্য কে একবার সাবাইকে দেখে, সবাই তাদের কে দেখছে আর ভাবছে কয়েক ঘন্টার পরিচয়ে এতোটা আপন করে নিয়েছে আনভি অন্তুকে। যে তাকে যেতে দিচ্ছে না, অন্তু বলে…

অন্তুঃ আনভি মামনি আমাকে যেতে হবে, আমি আবার আসবো তোমাকে দেখতে, আমারা এক সাথে খেলা করবো প্রমিস

কে শোনে কার কথা আনভি তো কিছুতেই অন্তুকে যেতে দেবে না। রোদ দূর থেকে সব দেখছে কিন্তু কিছু বলছে না। প্রাপ্য বললো…

প্রাপ্যঃ আনভি পরী চাচ্চুর কাছে আসো আমরা চকলেট খাবো আর গেম খেলবো আসো আমার কাছে…[বলে নিতে গেলে আনভি প্রাপ্য হাত ঝেড়ে সরিয়ে দেয়]

আনভির কাজে সবাই অবাক আদি আনভিকে বললো…আনভি মামনি তোমার ভালো আন্টি আজ তার বাড়ি যাক তরপর তোমাকে দেখেতে আবার আসবে এখন যেতে দাও

আনভিঃ না ভালো আন্লি (আন্টি) আমার কাছে থাকবে… [বলে ফুপিয়ে কান্না করে দেয়]

আনভির কান্নার শব্দ অন্তু বুকে ঝড় উঠায়, অন্তু আনভির মাথায় হাত বুলিয়ে শান্ত কারা চেষ্টা করে। মি.চৌধুরী অসহায় মুখে রোদের দিকে তাকায়। রোদ ধিরে পায়ে আনভির কাছে এসে তার মাথায় হাত দিতেয় অন্তুর হাতে স্পর্শ হয়। অন্তু চমকে যায় সাথে অস্থিরতা লাগতে লাগলো, অন্তু রোদের চোখে চোখ রাখতেই তারাতাড়ি নামিয়ে নেয়। এই চোখে গভীরতা অন্তু অন্য কিছু দেখতে পায় কি তা জানে না, রোদ অন্তুর থেকে চোখ সরিয়ে আনভিকে আদুরি সুরে বললো…..

রোদঃ আম্মু আমার কাছে আসো, আন্টিকে যেতে দাও। আন্টি আঙ্কেলদের বাড়িতে যেতে দেড়ি হয়ে যাচ্ছে আসো আমার কাছে।

আনভি মাথা তুলে একবার রোদের দিকে তাকায়। রোদ মেয়ের কান্নারত চোখ মুখ দেখে কষ্ট পায়। আনভি আদো আদো কান্না গলায় বললো…

আনভিঃ পাপা ভালো আন্লি (আন্টি) কে যেতে দিও না৷ আন্লি (আন্টি) আমাকে আনেক (অনেক) আদর করে আমাকে খাইয়েও দেয় পিলিত (প্লিজ) পাপা

আনভির কথা উপস্থিত সবার বুকে গিয়ে লাগে। রোদের চোখ ছলছল করতে লাগলো আনভির কথাতে, নিজেকে সামলে অন্তুর কাছ থেকে এক প্রকার কেড়ে নেয়। আনভিকে নিয়ে নিলে অন্তুর মনে হলো তার বুক থেকে কেও তার প্রান কেরে নিয়েছে, সে তার হাত গুটিয়ে নেয়৷ রোদ আনভিকে নিয়ে ওপরে চলে যেতে নিলে আনভি হাত-পা ছড়াছড়ি করে শুধু একটা কথায় বলছে ভালো আন্টি যেওনা আমাকে ছেড়ে। অন্তুর চোখের কোণে থেকে একফোঁটা জল গড়িয়ে পরে। আদি সবাইকে নিয়ে বাড়ি চলে আসে। রোদ বেলকনিতে থেকে তাদের যাওয়া দেখে আনভিকে আরো জড়িয়ে ধরে আর আনভি কান্না করতে থাকে৷ রোদ বললো….

রোদঃ তোমরা কাজটা ভালো করলে না আজ আমার মেয়ের চোখে আবার ও জল আসছে। এর ফল তোমাদের পেতেয় হবে, গোটা মির্জা বাড়ি এর ফল ভোগ করবে। তেমাদের পাপের ফল শীগ্রই পাবে। জাস্ট ওয়েট এন্ড সিই

আনভি কান্না করতে করতে ঘুমিয়ে গেলো। রোদ তাকে চেঞ্জ করিয়ে শুয়ে দেয় ভালো ভাবে, ডোয়ার থেকে একটা ছবি বের করে তাকে দেখতে লাগলো রোদ….

অরনির ধাক্কাতে অন্তু তার ভাবনা থেকে বের হয়। অরনি তার দিকে ছোট ছোট চোখ করে দুষ্টু হসে বললে…

অরনিঃ কার কথা এতো ভাবছো দিদিয়া হুম হুম

অন্তু অরনির কথার মানে বুঝতে পেরে তার কান চেপে ধরে বললে…

অন্তুঃ কি বলি তুই অরু, আমাকে নিয়ে মজা করছি তুই দাড়া তোকে আজ মেরেই ফেলবো।

অরনিঃ দিদিয়া লাগছে ছাড় না আর করবো না এমন প্লিজ প্লিজ ছাড়া।

অন্তু অরনির কান ছেড়ে দিয়ে বললে….আর কখনো যেনো এমন না হয়। মনে থাকবে।

অরনি মাথা নাড়িয়ে হ্যাঁ বলে। অরনি কিছু বলে যাবে তার আগেই ভাঙাচোরার আওয়াজে আসতে লাগলো। অরনি অন্তু দুজনি চমকে যায়, এই সন্ধ্যায় কে এমন করছে ভেবে তার উঠে দাঁড়ায়। অন্তু বললে…আওয়াজটা কার রুম থেকে আসছে অরু

অরনিঃ দিদিয়া আমার মনে হচ্ছে দাদাভাইর রুম থেকে আসছে।

আদির কথা শুনে অন্তু বুঝতে পারে আদি রেগে আছে কনো কিছু নিয়ে। এক মুহূর্ত নষ্ট না কে তারা আদির রুমের দিকে যায়……

চলবে…..

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here