তুমি হলেই চলবে পর্ব -১৩

#তুমি_হলেই_চলবে
#part_13
writer : Mahira_Megha

আরিয়ান এখন কি করবে জানে না। কি করা উচিত ওর ও জানে না। সিড়ি বেয়ে নিচে এসে সবাইকে দেখলো। সবার মুখে খুশি ঝলমল করছে। আরহান সবচেয়ে বেশি খুশি। বাবাকে এই ভাবে কখনো দেখেনি আরিয়ান।

রাতে মেহেন্দি আর সংগীত।
আরিয়ান আর আরুহীকে একসাথে বসিয়ে রেখেছে। আরুহী বারবার আরিয়ানের দিকে তাকাচ্ছে।

আরুহী নিজের মনেই হারিয়ে আছে,” ভাইয়া আর একটা দিন তারপর তুমি আমার হয়ে যাবে। আমি এখনো বিশ্বাস করতে পারছি আমি তোমায় পেয়ে যাবো। তুমি ও আমায় ভালোবাসো তাই না ভাইয়া? তা না হলে কি আর বিয়ে করতে? ভালো না বাসলে তো তুমি আমার কেয়ার ও করতে না।”

ইথেন আরুহীর সামনে চুটকি বাজিয়ে, ” কিরে কই হারালি। চল ডান্স করবো। ”
আরুহী কিছু না বলে ইথেনের হাত ধরে চলে গেলো। নাচছে আরুহী সব কাজিনরা ওকে মাঝখানে রেখেছে ।
আরুহীর মুখের খুশিটা সবার চোখে পড়ছে। আরিয়ান ওকে দেখছে আর মনে মনে বলছে,” মেয়েটাকে চিট করা কি ঠিক হবে আমার। না না আমি কি ভাবছি এসব। আমি ভালোবাসবো আরুহীকে। আমার পারতেই হবে। এটা তো ঠিক ওকে আমার ভালো লাগে। আর ভালোলাগা থেকেই তো ভালোবাসা সৃষ্টি হয়।”

ইয়োগ আরিয়ানকে টেনে নিয়ে গেলো। আরিয়ান ও নিজ ইচ্ছাই চলে গেলো ডান্স ফ্লোরে।
আরহীর সাথে কাপল ডান্স করছে আরুহীর চোখের দিকে তাকিয়ে। আরুহীর হার্টবিট কয়েক শত গুন বেড়ে গেছে। মনে হচ্ছে পৃথিবীর সব সুখ পেয়ে গেছে ও। আরিয়ান ও ওর দিকে চেয়ে আছে হয়তো ওর মাঝে ভালোবাসা খোজার চেষ্টা করছে।

সিড়ির এক কোনায় দাড়িয়ে সবটা দেখছে আর্শ। আজ আরুহীর চোখে সব মুগ্ধতা ও দেখতে পাচ্ছে যা এতদিন ওর চোখে ছিলো আরুহীর প্রতি। হাত দিয়ে নিজের চোখের পানি মুছে আরুহীর ছবি তুলে নিলো। যদি ও ওর ফোন জুড়ে শুধু আরুহীর ছবি।

আর্শঃ আজ তোকে একদম আমার স্বপ্নের রাজকুমারির মতো লাগছে রে আরুহী। তোকে ছেড়ে যেতে একদম ইচ্ছে করছে না। বাট তোকে যে অন্য কারো হতে দেখার ক্ষমতা আমার নেয়। যদি ভুল করে ভালোবাসি বলে দেয়। তাহলে তো তোর বন্ধুত্ব ও হারাবো।

এক দৌড়ে নিজের রুমে এসে দরজা বন্ধ করে কাঁদছে আর্শ।

বাহিরের সাউন্ড বক্সের শব্দ যেনো আর্শের কষ্ট হাজার গুন বাড়িয়ে দিয়েছে।

সবাই আর্শকে ডেকে ছিলো বাট ও নানা অজুহাতে কাটিয়ে দিয়েছে ।

হঠাৎ দরজায় কারো টোকা দেওয়ার শব্দ পেয়ে চোখ মুছে নেয়, মুখ ধুয়ে দরজা খুলে দেয়।

আরুহীকে দেখে নিজেকে সামলাতে পারছে না আর্শ মনে হচ্ছে এখনি চোখ দিয়ে অঝরে বৃষ্টি নামবে।

আরুহী আর্শের দিকে তাকিয়ে, ” কিরে হয়েছে তোর বলতো। সাউন্ড বক্সের শব্দ পেয়ে যে রাস্তা ঘাটে নাচ শুরু করে দেয় সেই ছেলে কিনা এত ডাকার পরে ও নিচে নামলো না!
ভ্রু কুচকে আর্শের দিকে তাকিয়ে, ” কি লুকাচ্ছিস আমার থেকে? আর্শ তোকে বলতেই হবে। কেনো এমন করছিস তুই? চোখ লাল কেনো তোর আর্শ তুই কাঁদছিলি এতখন? কথাটা বলার সময় আরুহীর চোখের কোনাতেও পানি জমতে শুরু করেছে।
আর্শ কে আগে কখনো কাঁদতে দেখেনি ও। আর্শ এক নাম্বারের দুষ্টু লাইফে কোনো জিনিস ও সিরিয়াসলি নেয় নি। কখনো কেউ বকা দিলেও ও হেসে দিতো। এরকম একটা ছেলে কেনো কাঁদছে তা জানা নেয় আরুহীর।

আরুহী আবার ওকে বললো, ” বলনা আর্শ কি হয়েছে তোর কথাটা বলতেই আরুহীর চোখ থেকে পানি গড়িয়ে পড়লো। যা আর্শের মনকে ভেঙ্গে দিচ্ছে। নিজেকে সামলানোর বৃথা চেষ্টা করছে আর্শ বাট পেরে না উঠে আরুহীকে জড়িয়ে ধরে কেঁদে দিলো।

আরুহী ও ওর সাথে তাল মিলিয়ে কাঁদছে।
আর্শ ওকে ছেড়ে নিজের চোখের চোখের পানি মুছে বলে উঠে,” কাল তো তোদের সবাইকে ছেড়ে যাবো তাই কষ্ট হচ্ছে।
আরুহীঃ না গেলে হয় না। তোকে ছাড়া আমি কিভাবে থাকবো।
আর্শ মুখে ফেক হাসি এনে,” একদম মিথ্যা বলবি না আমাকে ছেড়ে থাকতে পারবি না তাইনা? তাহলে ভাইয়ার কি হবে। তুই কি বিয়ের পর আর আমাকে সময় দিবি নাকি। যা এবার ঘুমিয়ে নে সকালে উঠতে হবে তোর। কাল নাকি শপিং এ যাবি?

-হ্যাঁ হলুদের আগে শপিং এ যাবো। আচ্ছা আমার মেহেন্দি পড়া কেমন হয়েছে তাই বল।

আর্শ ওর হাতের দিকে তাকিয়ে আছে একটা হার্ট শেপে AA লেখা। আর্শ মনে মনে বলে উঠলো, ” আরুহী আরিয়ান বাট একটা এ তে আরিয়ান না হয়ে আর্শ ও তো হতে পারতো কেনো হলো না। কেনো আমার সাথে এমন করলে আল্লাহ। আমার ভালোবাসায় কোথায় কমতি ছিলো?

আরুহীকে নিচে ডেকে নিয়ে গেলো নিলিমা।

সকালে আর্শ বেলকুনি তে বসে আছে। কেমন যেনে দেখাচ্ছে ওকে মনে হচ্ছে ওর ওপর দিয়ে ঝড় বয়ে গেছে।

আরুহী আরিয়ানের ছবি দেখছে আর মনের মধ্যে হাজারো ভাবনা উকি দিচ্ছে।

আরিয়ান নিজের রুমে বসে আছে। মুখটা মলিন। চোখ বন্ধ করে নিজের মনের সাথেই যুদ্ধ করছে আরিয়ান। নিচে সবার চেঁচামেচি কান অব্দি পৌঁছায় না আরিয়ানের।

আরুহী একটা গাড়ি নিয়ে বেরিয়ে পরলো শপিং এ। আসলে আরিয়ানকে একটা গিফ্ট দিতে চায় আরুহী তাই একা যাচ্ছে।

কয়েক ঘন্টা পর

আরুহী নিজের রুমে বসে কাঁদছে, ” না এটা কি করে সম্ভব। কি করে এমনটা হতে পারে। ভাইয়া আমায় কেনো এভাবে ঠোক্কাছে। যদি আমায় ভালো না বাসে তাহলে আমায় বলে নি কেনো? আর যদি আমায় ভালোবাসে তাহলে আমি যা দেখলাম সেইটা কি ছিলো?

ভাইয়া আমি তোমায় খুব ভালোবাসি। তোমায় ছেড়ে থাকতে পারবো না।

আরিয়ান বাড়ি ফিরে নিজের রুমের দরজা লাগিয়ে বসে আছে। পাথরের মতো হয়ে আছে অনুভূতি শক্তি কাজ করছে না ওর। বাকরূদ্ধ হয়ে আছে। মুখে না আছে কষ্টের ছাপ না আছে কোনো খুশির ঝলক। এ যেনো এক অনুভূতি হীন রোবট।

আর্শ নিজের ব্যাগ গুছিয়ে নিয়েছে চলে যাবে এখনি। বাড়ির সবার চোখে পানি। আর্শ ও কাঁদছে বাট ওর চোখের পানির কারন যে আরুহী। আরুহী চিরদিনের জন্য পর হয়ে যাবে ভেবেই কষ্ট পাচ্ছে ও।

আরুহীকে দেখতে পেলো না কোথাও। মন যদি ও আরুহীকে খুজছে বাট মস্তিষ্ক বলছে আরুহী যেনো সামনে না আসে। আরুহীকে দেখে যদি ও যেতে না পারে।

গাড়িতেই উঠে বসতেই আরুহী ও এলো।

সবাই অবাক হয়ে আরুহীকে দেখছে আরুহীর পোষাক দেখে মনে হচ্ছে আরুহী ও আর্শের সাথে যাচ্ছে। আর হাতের ব্যাগটাও তাই বলছে।
আরুহী মাথা নিচু করে মুখ শক্ত করে বললো, ” আমিও আমেরিকা যাচ্ছি। করবো না বিয়ে আমি।

আরিয়ান দাড়িয়ে সবটা দেখছিলো বাট কিছু বলে নি। আরুহী আরিয়ানের দিকে তাকিয়ে ছিলো হয়তো এই আশা নিয়ে যে আরিয়ান ওকে আটকাবে। বাট আরিয়ান তো নিবর দর্শক। না মুখে কিছু বলছে আর না আরুহী ওর চোখ দেখে কিছু বুঝতে পারছে। না আছে অনুশোচনা না আছে আরুহীকে ফেরানোর চেষ্টা।

নিলিমা আরবার আরহান রিহানা সহ সবাই আরুহীকে আটকাতে চাইলো।
সবকিছুতে ছেলে মানুষি করা যায় না আরুহী। পাগলামি বন্ধ কর আজ তোর বিয়ে।
বাট আরুহীর কানে কোনো কথা পৌঁছায়নি।
ড্রাইভার কে ড্রাইভ করতে বললো।
আর্শ কিছু বুঝতে পারলো না। কি হয়েছে কেনো এমন করছে আরুহী সবটা ওর মাথার ওপর দিয়ে যাচ্ছে।
আরুহীর জোড়াজুড়িতে গাড়ি চালানো শুরু করে ড্রাইভার।

পুরো রাস্তা কোনো কথা বলেনি আরুহী চোখ দিয়ে পানি পরছিলো আঝোরে। আর্শ কি করবে বুঝতে পারছে না। আর্শঃ কি হয়েছে রুহি।
-কোনো প্রশ্ন করিস না আর্শ।

আরুহী বসে আছে নিজের রুমে আর্শ ওকে অনেক বার ডেকে ছে বাট কোনো সারা দেয় নি ও।

আমেরিকা এত বড় একটা দেশে আর্শ আরুহী দুজন। কত কিছু ভেবেছিলো ওরা বাট কে জানতো এমন একটা পরিস্থিতি সৃষ্টি হবে।

চলবে……..

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here