“কোনো মুচির বাড়ির মেয়েকে আমি মির্জা বাড়ির বউ হতে দেবো না।”
শাপলা বেগমের কথায় বিন্দু মাথা তুলে তাকায়। লজ্জায় অপমানে তার চোখ ছলছল করে ওঠে। মুচির বাড়ির মেয়ে, এই কথাটা তাকে মাঝেমাঝে শুনতে হয়।
– এসব তুমি কি বলছো বড় ফুফু? বিন্দুর বড়বাবা মুচি ছিলেন, সেখানে ও কি করতে পারে? না ওর বাবা না ওর দাদা ওনারাতো আর মুচি নন, তাইনা?
আরানের দিকে রাগী দৃষ্টিতে তাকান শাপলা বেগম। তারপর তাচ্ছিল্যভরা কন্ঠে বলেন,
– ওর বংশ শুরুতো হয়েছে এই মুচি থেকেই। আর শোন আমি আর এখন এই ব্যাপারে কিছু শুনতে চাচ্ছি না। এই ব্যাপার এখানেই যেন বন্ধ করা হয়। আর এই যে মেয়ে, এবার তুমি যেতে পারো। আশা করি মির্জা বাড়ির বউ হওয়ার শখ তোমার আর জাগবে না।
– এসব কি বলছিস তুই শাপলা?
অনেকটা জোরে ধমকে বলে ওঠেন আলী আকবর মির্জা।
– তুমি চুপ করোতো ভাইজান। ছেলের জন্য মেয়ে ঠিক করেছো, বংশ দেখেতো ঠিক করবে নাকি? আর এই মেয়ে তুমি যাচ্ছো না কেন?
– তুই বাড়াবাড়ি করছিস শাপলা। আমি বিন্দুকে আমার বড় ছেলের বউ হিসেবে পছন্দ করেছি, তোর সেখানে আপত্তি করার কথা নয়। আর ওকে কোনোরূপ অপমান করার অধিকারও তোর নেই।
বিন্দু সোফা ছেড়ে ওঠে দাঁড়ায়। তার সাথে তার বাবা কবির শেখও উঠে দাঁড়ান। তিনি হাই-স্কুলের হ্যাডমাষ্টার। সম্পত্তি তেমন না থাকলেও লোকে সম্মান করে অনেক। তবে ওই যে মুচির বাড়ি এটার জন্য আগে মাঝেমধ্যে অপমানিত হতে হতো। কিন্তু কখনো কেউ এভাবে সামনাসামনি অপমান করেনি। আজ অপমানে তিনি ডুবে আছেন। তারা এখন দাঁড়িয়ে আছে মির্জা বাড়ির ড্রয়িংরুমে। তাদের এলাকায় এই মির্জাবাড়ি অনেক প্রসিদ্ধ। বিন্দু একবার ড্রয়িংরুমের চারদিকে চোখ বুলায়। তার পাশেই থমথমে মুখ নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে মির্জা বাড়ির কর্তা আলী আকবর মির্জা। ডানদিকের সোফায় বসে আছে তার অর্ধাঙ্গী নয়না বেগম। তার মুখও থমথমে হয়ে আছে। বিন্দু এবার তার সামনের সোফায় তাকায়। সেখানে বসে আছে মির্জা বাড়ির বড় ছেলে আরাধ মির্জা। সে চুপচাপ বসে আছে। আরাধের পাশে বসে আছে তার ছোট ভাই আরান মির্জা। বিন্দুর ডান সাইডে দাঁড়িয়ে আছে শাপলা বেগম। তিনি আলী আকবর মির্জার বোন। তার দুইমেয়ে স্যাটেল আমেরিকায়। শাপলা বেগমের স্বামী মারা গেছেন বছর পাঁচেক হবে। তারপর মেয়েরা তাকে নিয়ে আমেরিকায় চলে যেতে চেয়েছিল। কিন্তু শাপলা বেগম তাদের সরাসরি না করে দেন। দেশ ছেড়ে তিনি যেতে পারবেন না। দরকার হলে তিনি তার ভাইয়ের বাড়ি থাকবেন। তাও তিনি বিদেশ যাবেন না। তিনি মির্জা বাড়িতে আছেন প্রায় চার বছর।
– বিন্দু তুই দাঁড়া। বাবা তুমি কিছু বলো ফুফুকে। তোমার সামনে ফুফু ওদের এভাবে অপমান করছে।
আরানের কথায় তেতে উঠেন শাপলা বেগম। দাঁত কিড়মিড়িয়ে বলেন,
– ওর জন্য তোর এত দরদ কেনোরে? বিয়ের কথাতো চলছিল আরাধের সাথে। তাহলে তুই এত উতলা হচ্ছিস কেন?
– আমি জানি ওর বিয়ের কথা ভাইয়ার সাথেই হচ্ছে। আর ওর জন্য আমার এত দরদ কেন বুঝতে পারছোনা? কারণ ও আমার বেস্টফ্রেন্ড।
– যত আদিখ্যেতা। এই মেয়ে দাঁড়িয়ে আছো কেন? নিজের বাড়ি যাও।
নিজের কথা শেষ করে শাপলা বেগম স্ব-স্থান ত্যাগ করেন। বিন্দু টলমলে চোখে বাবার দিকে তাকায়। আজ তার বাবার চোখেও পানি। বিন্দু চাইলেই শাপলা বেগমকে উচিৎ জবাবটা দিতে পারতো। কিন্তু বড়দের মুখে মুখে সে কখনোই কথা বলে না। তাই সে মুখ বুঝে সব সহ্য করেছে।
– বিন্দু চলো। এখানে আর একমুহূর্তও নয়।
কবির শেখের কথা শুনে আলী আকবর মির্জা ওনার সামনে এসে দাঁড়ান। তিনি নতদৃষ্টিতে কবির শেখের দিকে তাকিয়ে বলেন,
– ক্ষমা চাওয়ার মুখ নেই আমার। তাও বলবো ক্ষমা করবেন ভাইজান। আজ আমার বাড়িতে এসে আপনাদের অনেক অপমানিত হতে হল। বিশ্বাস করেন এসব যে হতে পারে সেসব কিছু সম্পর্কে আমি অবগত ছিলাম না। আপনি পারলে আমায় ক্ষমা করবেন। আমি চাইলে শাপলাকে বকতে জকতে পারতাম কিন্তু বেশি কিছু বলি নি একটা কারণে। শাপলা ওর মেয়েদের ছেড়ে আমার কাছে এসে থাকছে। বড়ভাই হিসেবে ছোটবেলা থেকে অনেক আদর যত্নে মানুষ করেছি। তাই এখন যদি ওকে কিছু বলতে যেতাম তাহলে রাগ করে আমার বাড়ি ছাড়তো। একবার চলে গেলে আর এমুখো হতো না।
– বিন্দু আমি তোমায় দাঁড়িয়ে থাকতে বলিনি, চলো। আর আপনি মিস্টার মির্জা আপনার করা উপকারের কথা আমি কখনো ভুলবো না। আমি সারাজীবন কৃতার্থ থাকবো আপনার কাছে। আমার অসময়ে আপনি আমার পাশে দাঁড়িয়েছিলেন। তবে একটা কথা আপনাকে না বলেও পারছি না, আজকে আপনি আমাকে আপনার বাড়িতে ডেকেছেন সে না হয় ঠিক আছে কিন্তু আমার মেয়েটাকে ডেকে এনে ঠিক করেন নি। বাড়িতে যেহেতু ডেকে এনেছেন সেখানে আপনার বোন এভাবে অপমান না করলেও পারতো। আমরা কিন্তু আসতে চাই নি, আপনার অনুরোধে আমরা এখানে এসেছি। আর এমন না যে আমার মেয়ে অচল, তাকে আমি বিয়ে দিতে পারবো না। হয়তো আপনাদের মত বড়ঘরে দিতে পারব না। তবে আমি বড়ঘর চাই না। বড় মনের মানুষ চাই। আসি আমরা। ভালো থাকবেন।
কবির শেখ বিন্দুকে নিয়ে মির্জা বাড়ি ত্যাগ করেন। বিন্দু যাওয়ার আগে আরো একবার বাড়িটার দিকে তাকায়। দোতলা এই বাড়িটার ডিজাইন বেশ পুরোনো ধাঁচের। তবে আভিজাত্যে ভরপুর। বাড়ির ভিতরের প্রত্যেকটা আসবাবপত্র বেশ এক্সপেন্সিভ। বিন্দু এই বাড়িতে আরো দু’বার এসেছিল আরানের সাথে। আজ নিয়ে তিনবার হলো। আরান বিন্দুর বেস্টফ্রেন্ড। তারা একইসাথে পড়াশোনা করে। তাদের বন্ধুত্ব অনার্স প্রথম বর্ষ থেকে। এই তিনবছরে তাদের বন্ধুত্ব আরো গাঢ় হয়েছে। বিন্দু আরানকে নিজের ভাইয়ের চোখে দেখে। এটা সবাই জানে। তাদের এই তিন বছরের বন্ধুত্বে বিন্দু মাত্র দু’বার আরানের বাড়িতে এসেছে। সে এখানে আসতে চায় না। তার একমাত্র কারণ শাপলা বেগম। তিনি যেমন বিন্দুকে পছন্দ করেন না, তেমনি বিন্দুও তাকে পছন্দ করে না। এই মহিলা সবসময় খ্যাঁকখ্যাঁক করে। বিন্দুকে দেখলে সেটা আরো বেড়ে যায়। বিন্দুর হয়তো আজকের পর থেকে এবাড়িতে আসা একেবারের জন্য বন্ধ হয়ে যাবে। কারণ আজকের করা অপমানের জন্য কবির শেখ তাকে আর এই বাড়িতে আসতে দিবে না। বিন্দু এই বাড়িতে প্রথম যেদিন আসলো তার সেদিনের কথা মনে পড়ে গেল।
দিনটি ছিল একবছর আগের। সেদিন ভার্সিটি থেকে বাড়ি ফেরার পর আরান জোর করে বিন্দুকে তাদের বাড়িতে নিয়ে আসে। বিন্দু প্রথমে আসতে চায় নি পরে আরানের জোরাজুরিতে আসতে বাধ্য হয়। বিন্দু বাড়ির ভিতরে গিয়ে পুরো হা হয়ে যায়। এ যেন এক রাজপ্রাসাদ। বাহির থেকে বাড়িটাকে দেখলে যে কেউ ভাববে পুরোনো বাড়ি। তবে ভিতরটা পুরো ভিন্ন। বাড়ির ভিতরের প্রত্যেকটা কোনায় আভিজাত্যের ছোঁয়া। বিন্দুর দেখে মনে হলো এই বাড়ির মানুষগুলো যথেষ্ট রুচিশীল হবে। বিন্দুকে নিয়ে গিয়ে আরান সোফায় বসায়। তারপর বিন্দুকে আশ্বাস দিয়ে বলে,
– তুই এখানে একটু বস। আমি আম্মুকে ডেকে নিয়ে আসছি। থাকতে পারবিতো?
– আরে এতটা উতলা হচ্ছিস কেন? তুই যা, আমার কোনো প্রবলেম হবে না।
আরান যাওয়ার পর অনেক্ষণ ধরে বিন্দু বসে বসে বোর হয়ে যাচ্ছিলো। তাই হাটার উদ্দেশ্যে একটু ওঠে দাঁড়ায়। তারপর সিঁড়ির দিকে তাকায়। ভাবে নিচের দিকটা এতটা সুন্দর হলে উপরের রুমগুলো কেমন হবে। ওপরের রুমগুলো দেখার লোভ সামলাতে পারেনি বলে সে পা টিপে টিপে সিঁড়ি বেয়ে দোতলায় ওঠে। দোতলায় উঠে সে পড়ে যায় বিপাকে। কোনদিকে যাবে বুঝতে পারছে না। এখানে পরপর অনেকগুলো রুম। কোনটায় ঢুকে আবার কোন বিপদে পড়ে সেসব ভেবে বিন্দু নিচে যাওয়ার জন্য পা বাড়ায়। তারপর কিছু একটা দেখে সে দাঁড়িয়ে যায় তারপর সে তার বা দিকে তাকায়। সেখানে একটা রুমের দরজায় গোটাগোটা অক্ষরে বেশ বড় করে লেখা আছে,”ডোন্ট ডিস্টার্ব মি।” বিন্দু কিছুক্ষণের জন্য বোকা বনে গেল। কারো দরজায় এমন লেখা সে আগে কখনো দেখিনি। তাই কৌতুহল দমিয়ে রাখতে না পেরে দরজার হাতলে হাত দেয়। দরজায় লেখা বারন অমান্য করে সে দরজায় ধাক্কা দেয়। ধাক্কা দেওয়ার সাথে সাথে দরজাটা খুলে যায়। বিন্দু দ্বিতীয়বার বোকা বনে যায়। দরজায় লেখা আছে ডোন্ট ডিস্টার্ব মি। আবার লক না করে রেখেছে। কোন এলিয়েন এখানে থাকে সেটা দেখার জন্য বিন্দু রুমে প্রবেশ করে। রুমে প্রবেশ করতেই তার নাকে মিষ্টি একটা ঘ্রাণ ভেসে আসে। পাগলকরা এই ঘ্রাণটা আসলে কোথা থেকে আসছে তা দেখার জন্য বিন্দু রুমের ভিতরে উঁকিঝুঁকি দেয়। কিন্তু অন্ধকারের জন্য কিছুই দেখা যাচ্ছে না। রুমের লাইট অফ সাথে জানালার পর্দা টানানো। বিন্দু কি করবে বুঝে উঠতে পারছেনা। ভিতরে ঢুকে দেখবে কি? এই রুমের মালিক নিশ্চয়ই এখন এখানে নেই। নাহলেতো আর দরজা খোলা থাকতো না। তাই সে চোরের মত পা টিপে টিপে আন্দাজ করে বিছানার কাছে যায়। তার মনে হলো বিছানার পাশের দেয়ালে কারো ছবি টানানো। অন্ধকারের জন্য ঠিক ঠাওর করতে পারছে না। সুইচবোর্ড কোথায় আছে সেটাও বুঝতে পারছে না। আন্দাজ করে হাঁটতে গেলে বিছানার সাথে এটাচড টেবিলের পায়ার সাথে পা লেগে সে বিছানায় পড়ে যায়। শুধু পড়লেতো চলতোই। কিন্তু তার মনে হলো সে কোনো মানুষের গায়ের ওপর পড়েছে। আতংকে বিন্দুর কলিজা কাঁপছে। এ ঘরে কেউ আছে ভাবতেই তার হৃদপিন্ড বিদ্যুৎ বেগে ছুটতে লাগলো।
– হোয়াট দ্যা হেল আর দিস? কে আপনি? আমার গায়ের ওপর পড়েছেন কেন?
হঠাৎ কোনো পুরুষালী গলায় কথাগুলো শুনে বিন্দুর পিলে চমকে ওঠে। তার মানে সে একটা ছেলের গায়ের ওপর পড়ে আছে। বিন্দু তড়িৎগতিতে উঠতে চাইলো কিন্তু উঠতে পারলো না। বুঝতে পারলো ছেলেটা তাকে একহাতে জড়িয়ে ধরে আছে। কখনো কোনো ছেলের এতটা কাছাকাছি সে যায়নি। তাই ব্যাপারটায় তার খুব অস্বস্তি হচ্ছে।
– উত্তর না দিয়ে ছুটাছুটি করছেন কেন?
বিন্দুর মনে হল এমন গলা সে এর আগে কখনো শুনে নি। এমন মিষ্টি গলা কি কোনো পুরুষের হতে পারে। বিন্দু খুব করে চাইলো ছেলেটা যেন আরেকটু কথা বলে। কিন্তু না সে কথা না বলে বিন্দুকে একহাতে চেপে ধরে অন্য হাতে রুমের লাইট অন করে। লাইট অন করা মাত্রই বিন্দু হকচকিয়ে যায়। তারপর সে ছেলেটার দিকে তাকায়। ছেলেটা তার দিকেই তাকিয়ে আছে। বিন্দুকে ছেলেটি ছেড়ে দিয়ে লাফ দিয়ে বিছানার ওপর উঠে বসে। তারপর কন্ঠে রাগের আভাস ফুটিয়ে বলে,
– হু আর ইউ? স্টুপিড গার্ল আমার রুমে এসেছেন কার পারমিশন নিয়ে?
ছেলেটার ঝাঁঝালো কথায় বিন্দু ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে যায়। সে কি বলবে কিছুই বুঝতে পারছে না। বিন্দু আমতাআমতা করে বলে,
– আআমিতো আরররা..।
– পাগলের মত কি বলছেন? ঠিক করে বলুন। আগে বলুন আপনি কে?
– আমি বিন্দু।
– বিন্দু? কোন বিন্দু? আর আপনি আমার রুমে কি করছেন?
– আমি আফসানা বিন্দু। আরানের বেস্টফ্রেন্ড। আরান আমায় এ বাড়িতে নিয়ে এসেছে। আর আমি ভুল করে আপনার রুমে ঢুকে পড়েছি। আমি সরি। আর ককখনো আপনার রুমে আসবোনা। আমায় প্লিজ এখন যেতে দিন।
চোখ বন্ধ করে একদমে কথাগুলো বলে বিন্দু দম ছাড়ে। তারপর একচোখ খুলে ভ্রুঁ উছিয়ে দেখে ছেলেটা তার দিকে হা করে তাকিয়ে আছে। তা দেখে বিন্দু নিজের চোখগুলো খুলে ঝটপট বিছানা থেকে নামতে নেয়। সে নামার আগেই ছেলেটা তাকে টান মেরে নিজের মুখের সামনে নিয়ে আসে। তারপর দাঁতে দাঁত চেপে বলে,
– আপনি আরানের বেস্টফ্রেন্ড রাইট? তাহলেতো আপনার আরানের সাথে থাকার কথা, তাহলে আমার রুমে আসার মানে কি? ওয়েট ওয়েট আপনি রুমে ঢুকার আগে দরজায় নোটিশ দেখেননি?
বিন্দু প্রথমে মিনমিনিয়ে বলে,
– সেটা দেখেইতো এ রুমে এসেছি। এবার প্লিজ আমার হাতটা ছেড়ে দিন। পাক্কা বলছি আপনার রুম কেনো আমি আর কখনো আপনার বাড়িতেই আসবো না।
ছেলেটা বিন্দুর হাত ছেড়ে দেওয়া মাত্রই সে বিছানা থেকে নেমে দাঁড়ায়। বিন্দু দৌঁড়ে চলে যেতে নিলে কারো সাথে ধাক্কা খেয়ে ফ্লোরে পড়ে যায়। চোখ তুলে তাকিয়ে দেখে তার সামনে আরান দাঁড়িয়ে আছে। তারমানে সে আরানের সাথে ধাক্কা খেয়েছে। বিন্দু তড়িঘড়ি করে উঠে আরানের সামনে দাঁড়িয়ে বলে,
– হারামি আমাকে ড্রয়িংরুমে রেখে তুই কোথায় চলে গিয়েছিলি?
– আমি আম্মুকে খুঁজতে গিয়েছিলাম। এসে দেখি মহারানীর টিকিও ড্রয়িংরুমে নেই। সব জায়গা খুঁজে শেষে এখানে আসলাম। ভেবেছি ভাইয়ার রুমেতো আর তুই আসবিনা।
– ভাইয়ার রুম?
এটুকু বলে বিন্দু থেমে যায় তারপর আরানের কানের কাছে গিয়ে ফিসফিসিয়ে বলে,
– এটা তোর সেই ভাইটা, যার কথা আগে বলেছিলিস?
– হুম। এটাই আমার ভাই, আরাধ মির্জা।
বিন্দু এবার পিছনে ফিরে আরাধের দিকে তাকায়। আরাধ অন্যদিকে তাকিয়ে আছে।
গাড়ির হর্ণের শব্দে বিন্দু বর্তমানে ফিরে আসে। বিরক্তি নিয়ে রাস্তার আশেপাশে তাকায়। আর মনে মনে সে একটা কঠিন সিদ্ধান্ত নেয়। তার বাবা চাইলেও সে কোনোদিন মির্জাবাড়ির চৌকাঠ ফেরোবে না। কোনোদিন না।
চলবে…
#দখিনা_হাওয়া
#মারিয়া_আক্তার
[০১]
[