দিওয়ানা পর্ব ৮

#দিওয়ানা
#Sabiya_Sabu_Sultana(Saba)
#পর্ব_৮

অন্ধকার রাতের মাঝে ছাদের রেলিং ঘেঁষে আকাশের দিকে তাকিয়ে আছে সোহা । চোখে থেকে গড়িয়ে পড়ছে বিন্দু বিন্দু অশ্রু কনা। মনের ভিতরে জমে থাকা কষ্ট যন্ত্রণা গুলো অন্ধকার নিকষ কালো রাতের মাঝে হাওয়ার সাথে মিশিয়ে দিচ্ছে। মনের স্মৃতি পটে ভেসে আসছে একের পর এক যন্ত্রণায় ভরা মুহুর্ত যেগুলো জীবনের অনেকটা জুড়ে অভিশপ্ত হয়ে আছে। হয়তো সারাজীবন মনের এক কোণে অভিশপ্ত হয়েই থাকবে। ঠিক শরীরের এক একটা কালো চিহ্ন এর মত রয়ে যাবে। ছোটো থেকে জীবনটা অনেকটাই স্বপ্নের মতো কেটেছে। এই আঠারো বছর জীবনে ছয় বছর বয়স পর্যন্ত দিন গুলো ছিল স্বপ্নের মতো এর বাকি বারো বছর ছিল কালো অন্ধকারে ভরা অভিশপ্ত জীবন। নিজের বাপির কথা মনে পড়লে ছোটো বেলার সেই দিন গুলোতে চলে যায় যখন একদম ছোটো সব সময়ে আদরে ভালোবাসার মাঝে কেটে গেছে। সোহার মনে পড়ে সেই দিন গুলো যখন সামান্য একটু কান্না করলেই তার বাপি বাড়ি মাথায় করে ফেলত। সব কাজ ফেলে তাকে নিয়ে ঘুরে বেড়াতো। ঘোড়া হয়ে সারা বাড়ি তাকে নিয়ে ঘুরে বেড়াতো। মনে পড়ে সেই দিন গুলো যখন তার মা আর মণি মায়ের সাথে রান্না ঘরে দিন কেটে যেতো। ছোটো বেলার খেলার সঙ্গী ছিল তার মন আর আয়ু। তিনজনে বাড়ি মাথায় করে রাখত। মন তাকে অন্য কারোর সাথে মিশতে দিত না। বেশির ভাগ সময় কেটে গেছে মন এর সাথে। ছোটো বেলায় সোহা খুব মিষ্টি খেতে ভালোবাসতো খাওয়ার সময়ে কিছু হোক না হোক জেলিবি টা সব সময়ে এর জন্য থাকতো তার জন্য। আর সেই জন্য সেই ছোটো থেকে তাকে জেলেবি বলতো তার মন। সোহা আমন নাম টা উচ্চারণ করতে পারতো না তাই মন বলে ডাকত আমন কে। আর অ্যাস কে আয়ু। তার মনে আছে একদিন খেতে বসে অন্য খাবার বাদ দিয়ে পুরো জেলিবির পাত্র টা নিয়েই খেতে বসে গেছিলো আর সারা মুখে গায়ে মাখামাখি করে ছিল। সেই প্রথম তাকে জেলিবি নামে ডেকে ছিল তাকে আমন। সেদিন আমন তাকে ওই মাখামাখি অবস্থাও গার্ডেন নিয়ে গিয়ে জেলিবি টেস্ট করার নামে তার ঘাড়ের তিলে খুব জোর কামড় বসিয়ে দিয়েছিলো। আর সাথে সাথে সোহা চিৎকার দিয়ে উঠেছিলো তবুও ছাড়েনি আমন সোহা কে বাড়ির সবাই এসে আমন কে ছাড়িয়ে ছিল। আমন তখন সোহার দিকে তাকিয়ে নিজের ঠোঁটের ওপরে জিভ দিয়ে চেটে নিচ্ছিল আর সোহা তখন ঠোঁট ফুলিয়ে কাঁদছিল। সোহার কান্না দেখে সবার সামনে সোহা সারা মুখের থেকে জেলিবির মিষ্টি জিভ দিয়ে চেটে নিয়েছিলো। আর সোহা বোকার মত চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে ছিল। এটা ভাবতেই সোহার মুখে হাসি ফুটে ওঠে। সাথে গাল দুটো লাল হয়ে যায়। তখনকার কথা ভাবতেই লজ্জা পাচ্ছে সবার সামনেই কি কাজ করেছিল বদ ছেলে টা। ছোটো বেলায় থেকেই এটা ছিল আমন এর জেলিবি টেস্ট করার নিয়ম তাকে কামড় দিয়েই।

নিমেষেই হাসি মুখ টা কালো মেঘে ঢেকে যায় সেই অভিশপ্ত দিনের কথা মনে পড়তে।সেদিন ছিল জন্মদিন ছয় বছরে পা দিয়েছে। সারা বাড়িতে আলোয় আলোয় ভরা। শুধু তার মন ছিল খারাপ কারণ ওই দিনে তার সিম সিম মণি মা আয়ু আর তার মন ছিলোনা তার জন্মদিনে। ছোটো সোহা বার্বি গাউন পরে সারা বাড়িতে ঘুরে বেড়াচ্ছিল। কেক কাটার সময়ে তার পাশে সবাই উপস্থিত ছিল শুধু তার মাকে পাচ্ছিল না তাই ছোটো সোহা তার মাকে খুঁজতে গেছিলো রুমে। তারপরই হঠাৎ চিৎকার শুনে রুমে থেকে বাইরে সিঁড়ির কাছে আসতেই পাথর হয়ে যায় সামনের দৃশ্য দেখে। তার মা সিঁড়ি থেকে গড়িয়ে গড়িয়ে নিচে পড়ছে। এটা দেখতেই সোহা চুপ হয়ে গেছিল না মুখ থেকে কোন কথা বের হয়েছিলো আর না পড়েছিলো চোখ দিয়ে এক বিন্দু পানি। শুধু পাথরের মত এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে ছিল তার মায়ের রক্তাক্ত শরীরের দিকে। সোহা কোনো কথা বলতে পারিনি আর পুরোই চুপচাপ পাথরে পরিণত হয়েছিল তার পর থেকেই। শুকিয়ে গেছিলো তার চোখের পানি। মায়ের মৃত্যুর সাথে সাথে হারিয়ে ছিল তার বাপি কে। সেই জন্মদিন এর কেক কাটা হয়নি আর তারপর থেকে না হয়েছিল তার জন্মদিন পালন। এক প্রকার ভুলেই গেছিলো তার জন্মদিন এর কথা শুধু একটাই কথা মনে ছিল তার মায়ের মৃত্যু দিন। সেই দিনের পর থেকে নেমে এসেছিল সোহার জীবনে অন্ধকার। ঢেকে গেছিলো অমাবস্যার কালো মেঘে। নেমে এসেছিল তার শরীরে একের পর এক চিহ্ন। তার বাপি ও তাকে সেই দিনের পর থেকে ঘৃণার চোখে দেখত আর তার নামে একের পর এক নেমে আসে বদনাম এর তালিকা আর সেই সাথে চলত বাবার শাসন নামের অত্যাচার। সোনিয়া তার বাপি কে বলেছিলো সোহা তার মায়ের মৃত্যুর জন্য দায়ী সেই নাকি সিঁড়ির থেকে তার মাকে ফেলে দিয়েছিলো। সেই সাথে একটু একটু করে বশ করেছিলো তার বাপি কে তার মিথ্যে ভালোবাসার নামে। ছোটো থেকেই কখনো সোহা সোনিয়া কে পছন্দ করত না। সে অনেকবার দেখেছে তার মায়ের অবর্তমানে সোনিয়া তার বাপির কাছাকাছি আসার চেষ্টা করত। বারবার তার বাবা মায়ের মাঝে ঝগড়া সৃষ্টি করত। কিন্তু ছোটো সোহা শুধু দেখে যেতো কিছু বলতে পারতো না সব কিছু বুঝতে পারতো না। যতো বড় হয়েছে আগের দৃশ্য গুলো মনে পড়লে বুঝতে পারতো সোনিয়ার শয়তানী মায়া জাল যেখানে তার মা মৃত্যু আর তার বাপি ফেঁসে গেছিল। এগুলো ভাবতেই চোখ দিয়ে অঝোর ধারায় পানি গড়িয়ে পড়ছে।

হঠাৎ নিজের পেটের ওপর ঠান্ডা হাতের স্পর্শ পেতেই কেঁপে ওঠে ঘোর কেটে বেরিয়ে আসে সোহা। পিছন ঘুরতে নিলেও পারে না ততক্ষণে কেউ পিছন থেকে আষ্টেপিষ্টে তাকে জড়িয়ে নিয়েছে। ঘাড়ের ওপর উষ্ণ নিঃশ্বাস আর ঠোঁটের স্পর্শে কেঁপে ওঠে সারা শরীরে শিহরন খেলে যায়। সাথে সাথে চোখ চেপে বন্ধ করে নেয় সোহা। বুঝতে পারে তার পিছনে কে আছে। সোহা জানে তার দুঃখের সময়ে সে কোথায় থাকতে পারে সেটা একজনই জানে। আর সেটা তার মন সেই আগের মত তাকে পিছন থেকে জড়িয়ে নিয়েছে নিজের বাহুডোরে। ছোটো বেলায় ছিল একটা অন্যরকম আবেগ পূর্ণ। আর এখন কার এই স্পর্শে তার সারা শরীর কেঁপে উঠছে।

-“জেলেবি । আমন এর নেশা ভরা মৃদু আওয়াজে ডেকে ওঠে সোহার ঘাড়ে মুখ ঘষতে ঘষতে।

আমন এর এমন আওয়াজ আর ঠোঁটের স্পর্শে সোহা কেঁপে কেঁপে উঠছে সারা শরীরের শিহরিত হচ্ছে গায়ের লোম দাঁড়িয়ে গেছে। এই আঠারো বছর বয়সে প্রথম এমন স্পর্শে সোহা ঠক ঠক করে কাঁপছে একদম কনকণে শীতের মত। আমন সোহার এমন কেঁপে ওঠা দেখে আরো বেশি করে সোহা কে নিজের সাথে মিশিয়ে নেয় ঠোঁটের স্পর্শ আরো বেশি গাড়ো হয়ে ওঠে। সোহার কামিজ ভেদ করে পেটে হাত স্লাইড করতে থাকে। গভীর হতে থাকে পেটে থাকা হাতের স্পর্শ। সোহা চোখ বন্ধ করে হাত দিয়ে আমন এর হাত খামছি দিয়ে রাখে। আবেগে আমন এর এমন পাগলামির মাঝে ডুবে যেতে যেতে হঠাৎ ভেসে ওঠে আমন এর করা অপমান যন্ত্রণা কষ্ট গুলো। সাথে সাথে বন্ধ চোখের থেকে গড়িয়ে পড়ে কয়েক বিন্দু পানি। আমন এর হাতের থেকে নিজের হাত সরিয়ে নিয়ে গায়ের জোরে আমন কে ধাক্কা দিয়ে নিজের থেকে সরিয়ে দেয়। চোখে মুখে ফুটে শক্ত কঠিন আর যন্ত্রণার চিহ্ন। চোখ বেয়ে পড়তে থাকে অনবরত পানি।

আমন হঠাৎ এমন ধাক্কা খেয়ে নিজেকে সামলাতে পারে না। কিছুটা দূরে ছিটকে যায়। পড়তে পড়তে নিজেকে বাঁচিয়ে নেয়। অবাক হয়ে সোহা কে দেখতে থাকে যে এখনও সেই আগের মত পিছন হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। হাল্কা নাক টানা আর ফুফানোর আওয়াজ আসতেই বুঝতে পারে সোহা কাঁদছে। আমন এগিয়ে এসে সোহার কাঁধে হাত রাখতেই সোহা নিজের কাঁধের থেকে আমন এর হাত ঝটকা দিয়ে ফেলে দেয়।আমন এর দিকে না ফিরেই কর্কশ আওয়াজ বলে ওঠে।

-“প্লিজ মিস্টার আমন চৌধুরী আমার থেকে দূরে থাকো। দেয়ার মত অবশিষ্ট কিছুই নেই আমার কাছে। আর নতুন করে কোনও অপমান আর যন্ত্রণা সহ্য করার ক্ষমতা আমার মধ্যে বেঁচে নেই। এই মৃত শরীরে বেকার আঘাত করে কোনো কিছুই পাবে না। শুধু সময় নষ্ট হবে। চিন্তা নেই এই ভিখারি ঢ্যাড়শমার্কা মেয়ে বেশি জ্বালাতন করবে না। শুধু আজ রাত টা কষ্ট করে আমার উপস্থিতি সহ্য করে নিও। সকাল বেলা থেকে আবারও শান্তিতে থাকতে পারবে।আমি জানি আমার উপস্থিত মেনে নিতে কষ্ট হয় তোমার। এটা যদি ও ঠিক আমার মত একটা মেয়ে কে কেই বা তার আশেপাশে দেখতে চায়। তাই চিন্তা করতে হবে না কালকে সকালে আমি চলে যাব তার পরেই শান্তিতে থাকতে পারবে।

সোহার এই বোজা গলায় কথা গুলো শুনেই আমন স্থির হয়ে যায় বুকের মধ্যে ধক করে ওঠে। গায়ের রক্ত হিম হয়ে যাচ্ছে আমন এর। চোখ গুলো পানিতে চিক চিক করছে। সোহা কি বলছে এগুলো সে তাকে ছেড়ে চলে যাবে। সে নিজেকে খারাপ ভাবছে। এটা ভাবতেই আমন এর বুক রক্তাক্ত হতে শুরু করেছে। সোহা তাকে ভুল বুঝছে তার করা কাজ গুলোর জন্য যে তার জেলেবি অনেক কষ্ট পেয়েছে মনের মধ্যে অনেক অভিমান জমে গেছে। আমন এর চোখ থেকে এক ফোটা পানি গড়িয়ে পড়ে. বুঝতে পারে সোহার কথা গুলো শুনে তার বুকের মধ্যে জ্বলতে শুরু করেছে। তাড়াতাড়ি করে সোহা কে নিজের সাথে জড়িয়ে নেয় সর্ব শক্তি দিয়ে। সোহা ছাড়াতে চাইলেও আরো বেশি করে নিজের বুকের সাথে মিশিয়ে নেয়। সোহার ঘাড়ে মুখ গুঁজে দেয় আমন। তার মনে হচ্ছে একটু আলগা করলেই সোহা তাকে ছেড়ে যাবে।

সোহা আমন এর বাহুডোরে থেকে নিজেকে ছাড়াতে ছটফট করে। আমন এর পিঠে কিল ঘুষি মারে। আমন এর বুকে এক জোর কামড় বসিয়ে দেয় যাতে ছেড়ে দেয়। কিন্তু আমন দাঁতে দাঁত চেপে সোহার দেয়া এই যন্ত্রণা সহ্য করে। পিঠে নখের আচড় ও তার কাছে এখন কিছু মনে হচ্ছে না। সোহা নিজেই ছেড়ে দেয়। আমন এর বুকে কামড় বসিয়ে তার ভিতরে কষ্ট হচ্ছে। কামড় এর জায়গায় নিজের ঠোঁট রেখেই কান্নায় ভেঙে পড়ে। পিঠে নখ গেঁথে থাকা হাতটা ও এবার আমন কে জড়িয়ে নেয়। আমন কোনো কথা না বলে সোহা কে জড়িয়ে রাখে নিজের বুকের মাঝে। দুজনেই একে ওপর কে শক্ত করে জড়িয়ে রেখেছে। আর আমন সময় দিচ্ছে সোহা কে সমস্ত কষ্ট অভিমান ঝেড়ে শান্ত হওয়ার জন্য।

সোহা তার কান্নার মাঝে তার কাঁধের ওপর উষ্ণ তরল অনুভব করে। যা তার কাঁধ ঘাড় ভিজে যাচ্ছে। সোহা বুঝতে পারে আমন কাঁদছে। এটা বুঝতে পেরে সোহা নিজেই আরো বেশি টাইট করে জড়িয়ে নেয় আমন কে। আমন সোহার এমন করাতে হালকা হেসে সোহা কে আরো জোর জড়িয়ে বেলার ঘাড়ে গলায় নিজের ঠোঁটের স্পর্শে ভরিয়ে দেয়।

-“আই অ্যাম স্যরি জেলেবি। আমি তোমাকে আঘাত করেছিলাম যে কারণে সেটা উল্টো হয়ে তুমি আরও বেশি কষ্ট পেয়েছ আমি বুঝতে পারিনি। আমি শুধু আমার দিক দেখে গেছি। তাই তোমাকে আঘাতের পর আঘাত করে গেছি আর তোমার সাথে সাথে নিজেও কষ্ট পেয়েছি। তোমাকে যতো টা না আঘাত করেছি তার দ্বিগুণ আঘাত নিজেকে করেছি। তবুও নিজের ভুল বুঝতে পারিনি। আই অ্যাম স্যরি ।আমন ভেজা ভেজা গলায় বলে ওঠে।

-“মানে? কি কারণ ছিল এর পিছনে? সোহা অবাক হয়ে নাক টানতে টানতে বলে ওঠে।

আমন সোহা কে নিজের বুকের থেকে সামনে এনে দু হাত দিয়ে মুখ তুলে কপালে গভীর এক চুমু দিয়ে রেলিং এর ওপরে বসে পিছনের দেয়ালে হেলান দেয়। এক হাত বাড়িয়ে সোহা কে টেনে নিজের কোলে তুলে নেয়। সোহা কে নিজের কোলে বসিয়ে নিজের সাথে জড়িয়ে নেয়। সোহা ও আমন এর কোলে বসে বুকের ভিতরে বিড়াল বাচ্চার মত গুটিয়ে বসে। আমন সোহা কে দেখে সোহার কপালে নিজের মাথা ঠেকিয়ে দেয়।

-“সেদিন লন্ডন থেকে ফিরে আগেই ছুটে গেছিলাম আমার জেলেবির কাছে তার মান ভাঙতে। জন্মদিন এর সময়ে আমি থাকতে পারিনি তাই আমি জানতাম গাল ফুলিয়ে বসে আছে। আমি মনে মনে অনেক কিছু প্ল্যান করে নিয়ে আমার জেলেবির পছন্দের ডল নিয়ে গিয়েছিলাম। কিন্তু গিয়ে দেখি শূন্য ঘর কোথাও আমার জেলেবি নেই। গেটে তালা দেয়া। পাশের দোকানের কাকুর থেকে এক সপ্তাহ আগে এই বাড়ি চলে গেছে আমার জেলেবি। সাথে সাথে আমার মনে জমে একরাশ অভিমান। আমাকে না বলে এখান থেকে চলে গেছে এটা ভাবতেই আমার মনে রাগ জমে হাতের থাকা ডল টা ওখানেই ফেলে আমি ফিরে আসি। আর তার কিছুদিন পরেই কলকাতায় চলে আসি আমরা। সব সময়ে আমি জেলেবি খুব করে ফিরে পেতে চাইতাম মনে হতো সামনে পেলেই আগেই আমি কামড়ে কামড়ে দাগ কর দেবো তার পর আবার ভালোবাসা দিয়ে দেবো। এখানে এসে আমার জেলেবির জন্য আমি কোনো বন্ধু বানাইনি কারণ আমার একটাই বন্ধু ছিল তার জায়গা আমি কাউকে দেবো না। আসতে আসতে বড় হতে থাকলাম আর তার সাথে আমার জেলেবির জন্য মনে থাকা অভিমান টা রাগে পরিণত হতে থাকে। যতো বড় হতে থাকলাম চারপাশে মেয়েরা আমার সাথে মিশতে চাইতো। ওদের দেখলেই আমার জেলেবির কথা মনে পড়তো। তাই সবাই কে এড়িয়ে যেতাম। ইউনিভার্সিটি ভর্তি হওয়ার পর একে একে সবাই আমাকে ঘিরে থাকতো সবাই আমার সাথে বন্ধুত্ব করতে চাইতো আমিও তাদের সাথে মিলে গেছিলাম তবে মেয়েদের থেকে দূরে থাকতাম কথা বললে ও।

সেদিন ইউনিভার্সিটি বসে সবাই আড্ডা দিচ্ছিলাম পার্কিং এর ওখানে বসে গেটের দিকে চোখ যেতেই হঠাৎ করে আমি থমকে যাই। অনুভব করি আমার বুকের বাম পাশের ধুকপুকানির আওয়াজ। আসতে যেটা তীব্র থেকে তীব্রতর হয়ে উঠছে। চব্বিশ বছরে এই প্রথম আমার হার্ট দ্রুত গতিতে বিট করছে। গেট থেকে একটা মেয়ে আসছে। একদম সাধারণ সাজ পোশাক। সাদা আনারকলি কূর্তি একপাশে ওড়না ফেলা বড় বড় চুল গুলো কে বেনি বেঁধে এক পাশে ফেলা সাথে কাঁধে ব্যাগ। ব্যাস সিম্পল। না আছে মুখে কোনো মেকআপ আর না কোনো স্টাইলিস ড্রেস ।এতেই আমার চোখ দাঁড়িয়ে গেছিলো। মেয়েটার দু চোখে ভয়ে ভরা। এদিকে ওদিকে তাকিয়ে এগিয়ে আসছিল আমাদের দিকে। আমাদের সামনে এসে দাঁড়িয়ে যায় চশমা ঠিক করে মৃদু কাঁপা কাঁপা গলায় ক্লাস জিজ্ঞেস করে। কিন্তু সেটা আমার মাথায় যায় না ততক্ষণে ওর মুখের দিকে তাকিয়ে আমার চোখ দাঁড়িয়ে গেছে। ওর মুখের দিকে তাকিয়ে যেনো আমি আমার জেলেবি কে খুঁজে পাচ্ছিলাম আমার মনের মধ্যে শুরু হয়েছিল তুমুল ঝড়। বাম ভ্রু এর নিচে থাকা তিল আর ঠোঁটের কোণে থাকা তিল আমাকে আমার জেলেবির মুখ মনে করিয়ে দিচ্ছে। চোখের দিকে তাকাতেই আমি চিনে ফেলি এটাই আমার জেলেবি আমার মনের মধ্যে থাকা রাগ অভিমান সব একসাথে জড়ো হয় সেই আগের পরিকল্পনা আগে কামড় দেবো খুব করে তারপর দেখা যাবে তাই এগোতে যাচ্ছিলাম মেয়েটার দিকে কিন্তু হঠাৎ একটা কথায় থেমে যায় আমার পা। নাম জিজ্ঞেস করছিলো আমার পাশে দাঁড়িয়ে রাজ তারা ওকে। ওরা বলা মৃদু মিষ্টি আওয়াজ থেকে বেরিয়ে এসেছিল নামটা “সোহা জৈন” এটা শুনেই আমার মনের মধ্যে হতে থাকা খুশির ঝলক টা এক মুহূর্তে নিভে যায়। কিন্তু আমার হার্ট তখন আরো জোরে বিট করছিলো। মন বলছিল এই তোর জেলেবি কিন্তু ব্রেইন মানতে চাইছিল না। আর তারপর থেকেই শুরু হয় তোমাকে কষ্ট দেয়া সেদিন বাড়ি এসে আমি ঘুমাতে পারিনি। শেষে মন ও মস্তিষ্কের সাথে যুদ্ধ করে শেষে মনের জয় হয়েছিলো। মেনে নিয়েছিলাম এই মেয়ে আমার জেলেবি হোক আর যেই হোক একেই আমার চাই আমি তোমাকে ভালোবেসে ফেলেছিলাম তাই তোমাকে বারবার আঘাত করতাম তোমাকে জেলাস করানোর জন্য আমি মণিকার সাথে লেগে থাকতাম। ভেবেছিলাম তুমি আমার সাথে এই ঝগড়া করবে রাগ দেখাবে কিন্তু তুমি সব কিছু মেনে নিতে। প্রতিদিন তোমাকে কষ্ট দিতাম আর বাড়ি এসে তার দ্বিগুণ কষ্ট নিজেকে দিতাম। তুমি আমার জেলেবি এটা জানার জন্য সব সময়ে তোমাকে ফলো করতাম। আমি জানতাম তোমার ঘাড়ে তিল আছে আর আছে সেখানে আমার কামড় এর হাজারো চিহ্ন। আমি সব সময়ে তোমাকে আঘাত করার নামে খুঁজে যেতাম কিন্তু তুমি কখনও ঘাড় ফাঁকা রাখতে না নাহয় তোমার চুল আর নাহয় ড্রেস এর মাঝে ঢাকা থাকতো। কিন্তু এর মাঝে আমি এত বেশি তোমার মাঝে ডুবে গেছিলাম যে প্রতি মুহূর্তে তোমাকে কষ্ট দিয়ে নিজের করে নিতে চাইতাম কিন্তু তুমি মুখে বুঝে সব মেনে নিতে আমার দেয়া কষ্ট গুলো।

আমি ভুল ছিলাম। আমি তোমাকে ভালোবেসে ছিলাম ঠিক কিন্তু সেটা ঠিক মতো প্রকাশ করতে পারিনি তোমাকে কাছে পেতে গিয়ে তোমাকে আরো আঘাত করে ফেলেছি। আমি বুঝতে পারিনি একদমই আমি শুধু আমার দিকে ভেবেছিলাম। তোমাকে কষ্ট দিয়ে নিজের করতে চেয়েছিলাম কিন্তু আমি খুব ভুল ছিলাম। আমন কান্না ভেজা গলায় বলে ওঠে। চোখ দিয়ে গড়িয়ে পড়ছে পানি।

সোহা এতক্ষণ আমন এর বুকের মধ্যে বসে চুপচাপ শুনে যাচ্ছিল আমন এর কথা গুলো আর চোখ ভেসে যাচ্ছিল পানিতে। সোহা আমন কে টাইট করে জড়িয়ে ধরে। কান্না করে আর আমন এর বুকে নিজের মুখ ঘষতে থাকে। আমন ও সোহা কে নিজের সাথে জড়িয়ে নেয়। বুঝতে পারে তার জেলেবি সেই আগের পাগলামি শুরু করেছে. কষ্ট পেলেই তার বুকে মুখ ঘষতে থাকতো আগে আর পিঠে কিল ঘুষি মারতে থাকতো। এখন শুধু একটু উল্টো হয়েছে কিল ঘুষি বাদ দিয়ে বুকে মুখ ঘষতে আছে।

সোহার এমন করাতে আমন এর গায়ের রক্ত চলকে ওঠে সারা শরীরে শিহরন খেলে যায়। নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা করে ও পারে না. সোহা কে নিজের থেকে সরিয়ে দিতে চাইলেও পারে না। সোহা আমন কে আরো শক্ত করে জড়িয়ে ধরে। সোহার স্পর্শে আমন নেশায় মাঝে চলে যায়। নিজেকে আর না আটকাতে নিজের বুকের থেকে সোহার মাথা তুলে এক হাত গালে রেখে অন্য হাত মাথার পিছনে দিয়েই সোহার ঠোঁটে ঠোঁট ডুবিয়ে দেয়। শুষে নিতে একে অপরের ঠোঁটের রস। চলতে থাকে একে অপরের জীব এর সাথে লড়াই। আরো গভীর থেকে গভীর হতে থাকে স্পর্শ। আমন সোহা কে নিজের দিকে টেনে এনে দু হাতে নিজের সাথে জড়িয়ে নেয়। সোহা ও আষ্টেপিষ্টে জড়িয়ে নেয় আমন কে। আমন সোহা কে নিজের সাথে জড়িয়ে রেখেই চুম্বনরত অবস্থায় সোহা কে নিয়েই ওপর ছাদের রেলিং বসা অবস্থায় ঝাঁপ দেয়।
.
.
.
. 💚💚💚
. চলবে….

ভুল ত্রুটি মার্জনা করবেন । প্লিজ সবাই নিজেদের মতামত জানাবেন।

(লেখার মধ্যে কিছু ভুল হলে ধরিয়ে দেবেন দেখা হয়নি তাড়াতাড়ি লিখেছি। আর প্লিজ নেক্সট নাইস আর স্টিকার কমেন্ট বিরত রেখে গল্পের ব্যাপারে নিয়ে কমেন্ট করুন। নেক্সট না লিখলেও আমি নেক্সট দেবো। অনেক অসুবিধার মাঝে থেকে সময় ম্যানেজ করে লিখছি। আপনাদের কাছে এটুকুই আশা রাখছি গঠনমূলক মন্তব্য করুন। আপনাদের কমেন্ট আমার লেখার উৎসাহ দেয়। ধন্যবাদ 😊 )

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here