#দ্বিতীয়_বসন্ত-১১
লেখা:Zannatul Eva
পাত্রপক্ষের মুখে এমন কথা শুনে সবাই প্রচন্ড চমকে গেল। রুহি আর এক মুহুর্তও সেখানে বসে রইলো না। উঠে গিয়ে নিজের মায়ের পাশে দাঁড়ালো। নাছিমা তারাতারি করে নিজের মেয়েকে পাত্রপক্ষের সামনে নিয়ে এলো। পাত্র ইঞ্জিনিয়ার। এমন সম্বোন্ধ হাত ছাড়া করা যায় নাকি! রুহিকে পছন্দ করেনি তো কী হয়েছে! রুম্পাকেই এই ছেলের কাছে বিয়ে দেবে বলে মনস্থির করলো নাছিমা।
সায়েদা বেগম মুখের মধ্যে আস্ত একটা পান পুরে নিয়ে বললেন, আপনারা এইবার আসেন বাপু। আমরা আপনাগো লগে কাম করুম না৷ এক মাইয়া দেখতে আইয়া হেই একই বাড়ির আরেক মাইয়া দেখতে চাইতাছেন এইডা খুবই বিচ্ছিরি ব্যাপার। আমগো ছোট মাইয়ারে এহনই আমরা বিয়া দিম না। আপনারা আসেন৷ বড় বউ রুহিরে নিয়া ভেতরে যাও। আমাগো মাইয়া এতো হেলাফেলার জিনিস না৷
মমতা খানম রুহিকে নিয়ে ভেতরে চলে গেল। পাত্রপক্ষের মুখে চুনকালি পরেছে বলে তারা রুহির সম্পর্কে বিভিন্ন রকমের বাজে মন্তব্য করতে করতে চলে গেল।
নাছিমা গটমট করতে করতে নিজের স্বামীকে বলল, তোমার কী কোনো ইচ্ছা অনিচ্ছা নাই? এই বাড়িতে তো তোমার মতামতের কোনো মূল্যই দেয় না কেউ। ওদের মেয়ের বিয়ে হবে না বলে কী আমরা আমাদের মেয়েকে ঘরে খুঁটি দিয়ে বেঁধে রাখবো! এতো ভালো একটা সম্বোন্ধ, ইঞ্জিনিয়ার পাত্র৷ এরকম একটা সম্বোন্ধ হাতের কাছে পেয়েও কেউ হাত ছাড়া করে! তোমার এই সংসারে থেকে আমাদের মা মেয়ের কিছুই হবে না৷ ফুপু আম্মা সারাজীবন নিজের সিদ্ধান্ত গুলো আমাদের ঘাড়ে চাপায় দিয়ে দিব্যি ছড়ি ঘুরিয়ে বেড়ায় বাড়িতে। আমাদের কি কোনো চাওয়া পাওয়া থাকতে নেই?
রুম্পার বাবা আজমল খান বললেন, ফুপু যা ঠিক করেন আমাদের ভালোর জন্যই করেন। তুমিই বা কাউকে কিছু জিজ্ঞেস না করে রুম্পাকে সবার সামনে নিয়ে এলে কোনো?
নাছিমা রাগান্বিত গলায় বলল, তো কী করতাম? তোমার মতো চুপচাপ দাঁড়িয়ে থেকে ভালো একটা সম্বোন্ধ হাত ছাড়া হতে দিতাম! কিন্তু শেষমেশ তো সেটাই হলো।
আজমল খান ভারী গলায় বলল, আমি বাইরে যাচ্ছি। আশা করবো এসব নিয়ে তুমি কারো সাথে আর একটা কথাও বলবে না। ফুপু লর সামনে তো একদমই না। কথাটা যেনো মনে থাকে।
____________________
হলো তো! হলো!! আমি বারবার করে বলেছিলাম আমি বিয়ে করবো না৷ আমাকে একলা ছেড়ে দাও। এভাবে পাত্রপক্ষের সামনে বসিয়ে আমাকে আমার পুরনো সেসব স্মৃতি গুলো মনে করিয়ে দিও না। তাও তোমরা আমাকে পাত্রপক্ষের সামনে নিয়ে গেলে। এখন শান্তি হয়েছে তো?
মমতা খানম বলল, এক সম্বোন্ধ হয় নি তো কী হয়েছে! আমরা আরও সম্বোন্ধ দেখবো। পৃথিবীর সব মানুষ তো এক না। কেউ না কেউ তো ঠিক আছে যে তোর জীবনটা সুন্দর করে সাজিয়ে দেবে। তোর সমস্ত খারাপ স্মৃতি গুলোকে ভালোবাসা দিয়ে মুছে দিবে। শুধু সেই মানুষটার অপেক্ষা করতে হবে।
রুহি বলল, ভালোবাসা, ভরসা, স্বপ্ন দেখা এসব নিয়ে এখন আর আমি ভাবি না মা। এখন নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করাই আমার একমাত্র লক্ষ্য। প্লিজ তোমরা আমার বিয়ে নিয়ে আর ভেবো না।
রুম্পা ছুটে দৌড়ে এসে রুহিকে জড়িয়ে ধরে বলল, আপু প্লিজ তুমি আমার উপর রাগ করো না৷ আমি তখন পাত্রপক্ষের সামনে যেতে চাইনি। মা আমাকে জোর করে নিয়ে গেছে।
কথা গুলো বলতে বলতে রুম্পা কেঁদে ফেললো। ঠিক তখনই নাছিমা এসে রুম্পার চুল টেনে বলল, তোকে বলেছি না এখানে আসতে না। যা নিজের ঘরে যা। যার জন্য এতো ভালো পাত্রটা হাত ছাড়া হয়ে গেল তার জন্য দরদ একদম উতলে উঠছে তোর!! আর তোকেও বলি রুহি, আমার মেয়ের সাথে ঘেঁষাঘেঁষি বন্ধ কর। তোর ছায়া পরে আমার মেয়েটার সাথেও না খারাপ কিছু ঘটে যায়। তুই আসলেই একটা অপয়া। সেদিন ময়নার বিয়ে বাড়ির লোকজন ঠিকই বলছিলো। যেখানেই যাস সেখানেই একটা না একটা ঝামেলা হয়। ময়নার বিয়েটা তো ভাঙ্গতে ভাঙ্গতেও টিকে গেল তামজিদ ভাইয়ের ছেলের জন্য। যেই পাপ লাগছে তোর গায়ে সেই পাপের ছায়া নিয়ে ঘুরে বেড়ালে তো এমন ঝুটঝামেলা লেগেই থাকবে।
সায়েদা বেগম ঝাঁঝালো গলায় বলে উঠলেন, এইসব আমি কী হুনতাছি ছোট বউ!! তুমি রুহিরে কিসব কইতাছো! ছিঃ ছিঃ ছোটবউ তোমার মন এতো নিচ! নিজের মাইয়ার মতো একটা মাইয়ারে এইভাবে কইতে পারলা! রুহি এইহানে কয়দিনই বা থাকবো? খবরদার কইতাছি আর কোনো সময় যদি দেখছি তুমি রুহির লগে এমনে কথা কইছো তাইলে আমার চাইতে খারাপ আর কেউ হইবো না কইয়া দিলাম। যাও এইহান থেইকা।
মমতা খানম বলল, থাক না ফুপু আম্মা। যা হওয়ার হয়ে গেছে। এখন আর কথা বাড়িয়ে লাভ নেই। আপনি শান্ত হোন। ছোট তুই কিছু মনে করিস না।
নাছিমা ভ্রু নাচিয়ে বলল, থাক থাক ভাবি আর আলগা দরদ দেখাতে হবে না। আমার মেয়ের ভালো ঘরে বিয়ে হোক তা কেউই চায় না। সব বুঝে গেছি আমি। এ বাড়িতে দুই চোখ করা হয়। রুহি আর রুম্পা আলাদা কিসে!! রুহির জন্য ভালো সম্বোন্ধ আসতে পারে অথচ ভেঙ্গে গেলে দোষ নাই৷ আর আমার মেয়ের জন্য ভালো পাত্র চাইলেই দোষ!!
মমতা খানম মৃদু স্বরে বলল, তুই কী চাস যারা রুহিকে ওর সাথে ঘটে যাওয়া দুর্ঘটনার জন্য পছন্দ করলো না। না জেনে শুনে সবটার জন্য রুহিকেই খারাপ ভাবলো তেমন পরিবারে তোর মেয়ে বিয়ে হোক? রুম্পার এর থেকেও ভালো ঘরে বিয়ে হবে দেখিস।
নাছিমা গটমট করে বলল, হয়েছে হয়েছে আর দরদ দেখাতে হবে না।
বলেই রুম্পাকে টানতে টানতে নিয়ে চলে গেল।
মমতা খানম একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলল৷
সায়েদা বেগম বললেন, বড় বউ রুহিরে নিয়া খাইতে আহো৷ খাবার টেবিলে জরুরি কথা কওয়োনের আছে আমার।
জ্বী ফুপু আম্মা। আপনি যান আমি রুহিকে নিয়ে আসছি।
খাবার টেবিলে বসে সায়েদা বেগম সবাইকে বললেন, আমি সিদ্ধান্ত নিছি রুহি এহন থেইকা আমার কাছেই থাকবো। গ্রামে থাকলে ওর বিয়া দিতে সুবিধা হইবো। শহরের মানুষ ভালা না৷ শহরে গিয়া থাইকা তো দেখলাই। মাইয়ার গায়ে একখান দাগ লাইগা গেল। দরকার হইলে রুহিরে এইখানের একটা কলেজে ভর্তি কইরা দিস আশরাফ।
আশরাফ খান বললেন, তা কী করে হয় ফুপু! রুহি আমার একমাত্র মাইয়া। ওরে ছাড়া কেমনে থাকুম? আর ঢাকাতেই এখন আমার সব কিছু। আপনি যা সিদ্ধান্ত নিছেন তা ভাইবা চিন্তাই নিছেন আমি জানি কিন্তু……আচ্ছা আমি চিন্তা ভাবনা কইরা দেহি।
রুহি কপাল কুঁচকে বলল, আমি এখানে থাকবো না। আমার পড়াশোনার কি হবে? না না দাদিজান। দরকার হলে আমি বেড়াতে আসবো মাঝেমধ্যে। কিন্তু পুরোপুরি এখানে থাকা অসম্ভব।
সায়েদা বেগম খাবার শেষ করে মুখে পান পুরে নিয়ে বললেন, দেহো যা ভালো মনে হয় তোমাগো। আমার যেইডা ভালা মনে হইছে কইছি। তবে আশরাফ তোর এই মাইয়া নামানো কিন্তু মেলা কষ্ট হইবো। আহারে আমার সোনার টুকরা নাতিন। কী জীবন কী হইয়া গেল রে কী হইয়া গেল…….
__________________________
এই রুম্পা চল আজকে একটু বেরোই। সারাক্ষণ বাসায় বসে কি ভালো লাগে? চলনা একটু ঘুরে আসি বাইরে থেকে। পশ্চিমের দিকে নাকি একটা সুন্দর জায়গা আছে শুনছিলাম ছোট চাচি বলেছিলো সেদিন।
রুম্পা বলল, ওদিকে যাওয়া যাবে না।
কেনো?
ওদিকের মানুষ বেশি সুবিধার না। একা একা মেয়ে মানুষের যাওয়া একমদই ঠিক হবে না। আর বাবা, চাচা, মা, দাদিজান সবাই যদি একবার জানে তাহলে আর রক্ষে নেই। রায়হানকে সাথে নিলে যেতে পারি।
ওকে নিয়ে কোথাও যাওয়া আর ঘরে বসে ভাঙ্গা রেকর্ড শোনা একই কথা। বকবক করে মাথা চিবিয়ে খাবে। না না ওকে নিয়ে যাওয়া যাবে না।
রুহি ভাবলো রুম্পা না গেলে সে একাই বের হবে। দুপুরের পর যখন সবাই ঘুমিয়ে পরবে তার পরপরই বেরিয়ে পরতে হবে। একটু সময় নিয়ে ঘোরা যাবে তাহলে।
দুপুরে খাওয়া দাওয়ার পর সবাই যখন ভাতঘুম দিচ্ছিলো ঠিক তখনই রুহি বেরিয়ে পরলো। হাঁটতে হাঁটতে একটা নির্জন জায়গায় চলে এলো সে। তখন বিকেল। সন্ধ্যে হতে অনেক সময় বাকি৷ রুহি ভাবলো এদিকটা ঘুরেফিরেই সন্ধ্যের আগে বাসায় চলে যাওয়া যাবে।
ওদিকে মাহিরও আজ বেরিয়েছে। রুহি গ্রামের পথঘাট একটু আধটু চিনলেও মাহির একদমই কিছু চেনে না। বড় হওয়ার পর তার গ্রামে একদমই আসা হয়নি।
রুহি হাঁটতে হাঁটতে দেখলো, ঘাট বাঁধানো একটা পুকুর। দৌড়ে গিয়ে সেখানে বসলো। ঠিক এমন সময়ই শর্মী ভিডিও কল দিলো।
কল রিসিভ করতেই শর্মী বলল, ভালোই তো আছিস। সেই যে গেলি আর তো আসার নাম নেই। তোর তো মামা একটা চাঁদ কপাল।
রুহি কপাল কুঁচকে বলল, চাঁদ কপাল! কিভাবে?
শর্মী বলল, যেখানে তুই সেখানে মাহির। তা কী কী করলি? বলনা বলনা।
কী করবো? ওরা জাস্ট একদিন আমাদের বাড়িতে এসেছিল। তখন একটু কথা হয়েছিল এই আর কী।
কী কথা হয়েছে বলনা বলনা প্লিজ।
রুহি মুখ বেকিয়ে বলল, এতো লাফাস না। প্রেমালাপ হয়নি।
হায়! এমন চান্স যদি অন্য কেউ পেতো তাহলে একদম লুফে নিতো। জানিস ভার্সিটির সবাই মাহিরের সাথে একটু কথা বলার জন্য কতটা মরিয়া হয়ে থাকে। আর তুই! সামনে পেয়েও বলছিস প্রেমালাপ হয়নি।
ঐ ছেলের সাথে প্রেম!! জীবনেও পসিবল না। তবে ওকে একটা থ্যাংক্স দিতে হবে। বিয়ে বাড়িতে দেখা হওয়ার পর আর তো দেখাই হলো না। তাই বলাও হয়নি।
থ্যাংক্স কেনো?
সে অনেক কাহিনী। ঢাকায় ফিরে বলবো।
ও আচ্ছা এখন আর আমাকে কিচ্ছু বলতে চাস না তুই। সব বুঝেছি আমি হুহ…..
রুহির সামনের রাস্তার দিকে নজর যেতেই দেখলো মাহির এদিকেই আসছে। রুহি শর্মীর সাথে কথা শেষ করার আগেই রুহির মোবাইল সুইচড অফ হয়ে গেল।
শীট! ফোনটা তো চার্জই করা হয়নি। এখনই অফ হতে হলো। কেউ ফোন করে না পেলে তো চিন্তা করবে। থাক আমি তো সন্ধ্যার আগেই বাড়িতে ফিরে যাবো।
মাহির এগিয়ে এসে রুহিকে দেখে বলল, হেই রুহি! তুমি এখানে! একা একা কী করছো?
রুহি বলল, কিছু না ঐ একটু ঘুরতে বেরিয়েছিলাম।
হঠাৎ এ কোয়েনসিডেন্স! আমিও তো ঘুরতে বেরিয়েছি। তবে হাঁটতে হাঁটতে এতোদূর এসে পরেছি যে এখন বুঝতে পারছি না কোনদিক যাবো।
রুহি বলল, সমস্যা নেই আমি একটু আধটু চিনি। হারাবেন না ভয় নেই।
মাহির আস্তে করে বলল, তুমি সাথে থাকলে হারাতে কোনো ভয় নেই৷ ইচ্ছে তো করছে সত্যিই সত্যিই তোমাকে নিয়ে কোথাও হারিয়ে যাই।
কিছু বললেন?
নাহ। কী বলবো!
থ্যাংক ইউ।
থ্যাংক ইউ! কেনো?
সেদিন বিয়ে বাড়িতে আমার হয়ে কথা বলার জন্য। আমার ভাইকে সাহস দেয়ার জন্য। রায়হান আমাকে সব বলেছে।
ইচ্ছে তো করছিলো সব গুলোকে সাইজ করতে৷ নেহাত সেখানে বাবা-মা ছিল। তাই মারপিট করিনি। নয়তো সব গুলোকে সাইজ করে দিতাম।
রুহি রাগি স্বরে বলল, এই জন্যই আমার আপনাকে অসহ্য লাগে। সব সময় মুখে মারামারির কথা। কেনো সুন্দর করে বোঝালে হয় না? মারপিট কেনো করতে হবে!!
কারন সবাই সুন্দর কথার যোগ্য না। সবাই তোমার মতো এতো সহজ না। সোজা আঙুলে ঘি উঠে না। মাঝে মাঝে আঙুল বেকাতে হয়। তুমি এসব বুঝবে না।
আমার বোঝার দরকারও নেই। আপনার সাথে কথাও বলতে চাই না আমি। শুধু সেদিনের জন্য জাস্ট ধন্যবাদ দেয়ার ছিল। মারপিট করা মানুষ আমি একমদই পছন্দ করি না।
মারপিটের কী দেখেছো তুমি! যেদিন খবর পেলাম রোহন কুত্তার……তোমার সাথে…….. সেদিন আমি ঠিক করে নিয়েছিলাম যে ওকে মেরে হাড্ডি গুড়ো করবো। কিন্তু ওর কপাল ভালো যে তার আগেই পুলিশ ধরে নিয়ে গেছে। তুমি একবার বললে ওর হাত-পা আস্ত রাখবো না আমি।
হয়েছে হয়েছে। আপনাকে বলেছি আমি আমার জন্য এসব করতে!! সব সময় মারপিট করার ধান্দা। ওর যা শাস্তি পাওয়ার ও পেয়ে গেছে। আচ্ছা আপনার সাথে সিগারেট আছে?
মাহির হেসে বলল, থাকবে না কেনো! সিগারেট আমার প্রথম প্রেমিকা৷ তাকে ছেড়ে কী করে থাকি!!
প্রথম প্রেমিকা! দ্বিতীয় প্রেমিকাটা আবার কে?
মাহিরের ইচ্ছে করছে হুরহুর করে বলতে যে সে রুহিকে কতটা ভালোবাসে। কিন্তু কিছুতেই বলতে পারছে না। পৃথিবীর সবচেয়ে কঠিন কাজ বোধহয় আই লাভ ইউ বলা। আচ্ছা এতো কিছু বলার পরও কী রুহি বুঝতে পারছে না আমি ওকে পছন্দ করি? মেয়েরা তো নাকি দূর থেকেও দেখে বুঝতে পারে কোন ছেলেটা তাকে কি নজরে দেখছে। রুহি কেনো বোঝেনা!
মাহিরের সাথে কথা বলতে বলতে প্রায় সন্ধ্যা নেমে গেল। মোবাইলে সময় দেখতে রুহির মনে পরলো কিছুক্ষন আগেই তার ফোন সুইচড অফ হয়ে গিয়েছিল। রুহি প্রচন্ড ঘাবড়ে গেল। এখন বাড়িতে ফিরলে সবার বকা তো খাবেই সাথে দাদিজান কঠিন শাস্তি দেবে। রুহি তরিঘরি করে উঠে পরলো।
মাহির বলল, কোথায় যাচ্ছো?
সন্ধ্যা হয়ে যাচ্ছে আর আপনি বলছেন কোথায় যাচ্ছি!! বাড়িতে ফিরতে হবে না! চললাম আমি।
একা একা কি করে যাবে? চলো আমি তোমার সাথে যাচ্ছি।
রুহির কারো সাহায্য লাগে না। সে একা একাই যেতে পারবে। বলেই রুহি এক দৌড় দিলো।
কিছুদূর যেতে না যেতেই রুহি পা মুচকে পরে গেল। এমন ভাবে পা মচকে গেছে যে একদম উঠে দাঁড়াতে পারছে না।
মাহির দূর থেকে রুহির দিকে তাকিয়ে হাসছে।
রুহি চেঁচিয়ে বলল, কেমন মানুষ রে বাবা! একটা মেয়ে পরে গেছে কোথায় দৌড়ে এসে তাকে ধরবে। উঠতে সাহায্য করবে তা না বসে বসে দাঁত বের করে হাসছে।
মাহির মৃদু হেসে বলল, রুহির তো কারো সাহায্য লাগে না। সে একাই চলতে পারে। আরও চলো একা।
রুহি রাগি স্বরে বলল, লাগবে না আমার কারো সাহায্য। আমি একাই যেতে পারবো।
একথা বলেই রুহি নিজে নিজে উঠতে গিয়ে আবারও পরে গেল।
এবার সত্যিই মাহির দৌড়ে এসে রুহিকে ধরলো।
পা টা অনেক গুরুতর ভাবে মচকে গেছে। এদিকে সন্ধ্যেও নেমে এসেছে। মাগরিবের আযান পরে গেছে চারদিকে। রুহির ভীষণ ভয় করছে। এমন নির্জন একটা জায়গায় কোথাও কেউ নেই। শুধু সে আর মাহির।
চলবে………