#দ্বিতীয়_বসন্ত-১৩
লেখা:Zannatul Eva
রুহি প্রচন্ড ভয় পেয়ে গেল। না জানি এরা কী না কী বলবে। ওদিকে রুহির বাবাও প্রচন্ড উদগ্রীব হয়ে আছেন কখন মেয়েকে নিয়ে বাড়িতে ফিরতে পারবে সেই জন্য৷ মুরব্বিদের মধ্যে থেকে একজন বলে উঠলেন, এই ছেলে আর মেয়ের এখন বিয়ে দিতে হবে। এটাই একমাত্র সমাধান।
রুহি তাদের কথা শুনে প্রচন্ড রকমের একটা ধাক্কা খেলো। রীতিমতো তার মাথা ঘুরতে শুরু করে দিয়েছে।
ওদিকে মাহিরকে তার বাবা তামজিদ আহমেদ ধরে রেখেছেন৷ কারন যেকোনো সময় মাহিরের হাত চলতে শুরু করবে। একবার যদি মারপিট শুরু করে তবে এখানে পুলিশের গন্ডগোল বেঁধে যাবে। এতে ব্যাপারটা আরও গাঢ় হয়ে যাবে৷
ইতোমধ্যেই চারপাশ থেকে আরও লোকজন আসতে শুরু করে দিয়েছে। সবাই কানাকানি করছে৷ ভাবছে রুহি আর মাহির বোধহয় বাড়ি থেকে পালিয়েছে কিংবা অন্য কোনো ব্যাপার।
তামজিদ আহমেদ বললেন, বিয়েটাই তো একমাত্র সমাধান না। দেখুন বিয়ে হচ্ছে একটা পবিত্র বন্ধন। হুট করে বললেই তো বিয়ে হয়ে যায় না। আমাদের ছেলে-মেয়ের ব্যাপার আমরা বাড়ি গিয়ে বুঝে নেবো কী করবো। আপনাদের মাথা না ঘামালেও চলবে।
মুরব্বিরা বললেন, তা কী করে হয় মশাই! আপনাদের ছেলে-মেয়ে রাত-বিরেতে গ্রামের পথে ঢলাঢলি কইরা বেরাইবে আর আপনারা বলতাছেন আমাদের মাথা না ঘামাইলেও চলবো!! এদের ছাইড়া দিলে গ্রামের অন্য ছেলে-মেয়েরাও সাহস পাইয়া যাইবো। তাছাড়া আজকের পর এই মাইয়ারে যেই দেখবো সেই খারাপ বলবো। আপনে তো ছেলের বাবা তাই বড় বড় কথা কইতাছেন। মেয়ের বাবার কী হইবো ভাবছেন একবার?
মাহির রাগান্বিত স্বরে বলল, আপনারাই ব্যাপারটাকে এতো জটিল করে তুলেছেন। আমি তো প্রথমেই বললাম আমরা দুজনেই আলাদা আলাদা ঘুরতে বেরিয়েছিলাম এবং আমরা পূর্ব পরিচিত৷ হোচট খেয়ে পরে গিয়ে ওর পা টা মচকে গেছে তাই আমি ওকে বাড়ি ফিরতে সাহায্য করছিলাম দ্যাটস ইট। আপনারা শুধু শুধুই ভুল ভাবছেন।
বখাটে ছেলে গুলো বলল, ধরা পরলে চোর কি স্বীকার করে যে সে চুরি করতে আসছিলো? তোমার এই গল্পে কেউ ভুলবো না মামা। সবাই যা বলে তা মেনে নাও। নয়তো এতো সহজে এখান থেকে ছাড়া পাবা না।
রুহির বাবা আশরাফ খান অসহায় দৃষ্টিতে তামজিদ আহমেদের দিকে তাকিয়ে বলল, এখন আমার মেয়েটার কী হবে তামজিদ!! কী থেকে কী হয়ে গেল! আমার যে আর মুখ তুলে তাকাবার সাহসটুকুও রইলো না।
মাহির বলল, আংকেল আপনি এভাবে কেনো ভাবছেন? রুহি তো কোনো অন্যায় করেনি। তাহলে এতো চিন্তা কেনো করছেন আপনি?
তুমি তো ছেলে বাবা। তোমার কিছুই হবে না। কিন্তু ও তো মেয়ে। মেয়ে মানুষের সম্মান অল্প আঘাতেই ভেঙ্গে যায়। এরপর আমার মেয়েকে কে বিয়ে করবে?
তামজিদ আহমেদ মনে মনে বললেন, আল্লাহ যা করেন ভালোর জন্যই করেন৷ এই মেয়েকেই তো আমি আমার ছেলের বউ করতে চেয়েছিলাম। যদিও রেহনুমা মত দেয়নি। কিন্তু আল্লাহ যখন আমাকে নিজে থেকেই পথ দেখাচ্ছেন তাহলে এটাই সঠিক সময় সঠিক সিদ্ধান্ত নেয়ার।
নিজের সাথে আলোচনা করে তামজিদ আহমেদ উঁচু স্বরে বললেন, মাহির বিয়ে করবে।
হ্যাঁ! কী বলছিস তুই তামজিদ!! আশরাফ খান বললেন।
তামজিদ আহমেদ বললেন, যা বলছি একদম ঠিক বলছি। মাহির রুহিকে বিয়ে করবে। আপনারা আপনাদের সমাধান পেয়ে গেছেন?
মুরব্বিরা সবাই বলে উঠলেন, আলহামদুলিল্লাহ। তাইলে এইবার কাজী অফিসে যাওয়া যাক?
আশরাফ খান এতোক্ষনে হাফ ছেড়ে বাঁচলেন। মেয়েকে নিয়ে তার সমস্ত চিন্তা এক নিমিষেই দূর হয়ে গেল। মুখে ফুটে উঠলো প্রানবন্ত হাসি।
মাহির বলল, সবাই যার যার মতো মতামত দিয়ে যাচ্ছেন। একবারও কেউ জানতে চাইছেন না রুহি কী চায়! জীবনটা ওর তাই ও সিদ্ধান্ত নেবে ও কাকে বিয়ে, কখন বিয়ে করবে। আপনারা নন।
মাহির রুহিকে বলল, তুমি বলে দাও রুহি। তোমার কোনো ভয় নেই। তুমি যা বলবে তাই হবে। এখানে কেউ তোমাকে জোর করতে পারবে না আমি কথা দিচ্ছি। সবটা আমি বুঝে নেবো।
পরোক্ষনেই মাহির মনে মনে বলল, না বলো না রুহি। প্লিজ রুহি তুমি না বলো না। আল্লাহ রুহি যেনো হ্যাঁ বলে দেয়।
রুহি নিজের বাবার মুখে যেই খুশির হাসি দেখেছে সেই খুশি নষ্ট করে দেয়ার দুঃসাহস কী করে দেখাবে সে!! সত্যিই তো এরপর লোকজন তার পরিবারকে আরও কথা শোনাবে। মাহিরকে সে পছন্দ করে না ঠিক কিন্তু আজ যদি সে মাহিরকে বিয়ে করতে রাজি না হয় তাহলে তার জন্য তার পরিবারকে অনেক সমস্যার সম্মুখীন হতে হবে।
অনেক কিছু ভেবে চিন্তে রুহি নিজের সাথে লড়াই করে মাহিরকে বিয়ে করতে রাজি হয়ে গেল। সেই রাতেই মাহির এবং রুহির বিয়ে হলো। তামজিদ আহমেদ ছেলে এবং ছেলের বউকে নিয়ে বাড়ি ফিরলেন।
বাড়ি তো ফিরলেন কিন্তু দরজায় নক করার আগে প্রচন্ড ঘাবড়ে গেলেন। রেহনুমা কিছুতেই এই বিয়ে মেনে নেবে না। কিন্তু জন্ম মৃত্যু বিয়ে সবটাই তো আল্লাহর ইচ্ছা। এটা রেহনুমাকে মেনে নিতেই হবে। আজ অথবা কাল।
কলিং বেল চাপতেই রেহনুমা এসে দরজা খুলল। দরজা খুলে মাহিরের পাশে রুহিকে দেখেই সে প্রচন্ড চমকে গেল।
চলবে…….