দ্বিতীয় বসন্ত ❤️ পর্ব -২৩

#দ্বিতীয়_বসন্ত-২৩
Zannatul Eva

সরি আমার একটু দেরি হয়ে গেল। সবাই ঘুমানোর পর অনেক ভয়ে ভয়ে বের হলাম। আপনি কখন এসেছেন?

মাহির বলল, বেশিক্ষন না। পঁচিশ মিনিট আগে।

এতো তারাতারি এসেছেন কেনো? সবাই না ঘুমোতে কি বের হওয়া যায়? দিন ডায়রিটা দিন।

চলো তাহলে এবার ডায়রি পড়া শুরু করি।

মানে! এখানে? মাথা খারাপ নাকি আপনার? যেকোনো সময় যে কেউ ঘুম থেকে জেগে যেতে পারে। তারপর যদি কেউ দেখে আমি এখানে লুকিয়ে আপনার সাথে দেখা করছি রাতের বেলা তখন কী হবে ভাবতে পারছেন। আর দাদিজান জানলে আমাকে শেষ করে ফেলবে।

আমরা বয়ফ্রেন্ড গার্লফ্রেন্ড না রুহি যে আমরা ভয় পাবো। আমরা বিবাহিত। তুমি আমার বিয়ে করা বউ। আমার বউয়ের সাথে আমি যখন খুশি যেখানে খুশি দেখা করবো তাতে কার কী!!

রুহি একটু লজ্জা পেলো। ভ্রু কুঁচকে মাহিরের দিকে তাকিয়ে বলল, তাই না? খুব স্বামীগিরি ফলানো হচ্ছে এখন৷

মাহির আমতা আমতা করে বলল, ইয়ে মানে আমি লজিকটা বললাম। সত্যিই তো আমরা স্বামী-স্ত্রী। এটা তো তুমি অস্বীকার করতে পারো না।

রুহি প্রসঙ্গ পাল্টে বলল, এখন আপনি যান। আমি ভেতরে গিয়ে ভালো করে ডায়রিটা পড়বো। কেউ দেখে ফেলার আগে চলে যান।

মাহির মনে মনে বলল, ডায়রি দেয়ার বাহানায় একটু কাছে থাকবো ভাবলাম আর এখনি মহারানী তাড়িয়ে দিচ্ছে। ভাবখানা দেখো যেনো আমি পরপুরুষ।

মাহির চলে যাচ্ছিলো এমন সময় রুহি পেছন থেকে ডেকে বলল, সাবধানে যাবেন। আর গিয়ে আমাকে জানাবেন।

মাহির মৃদু হেসে মাথা নাড়ালো।

রুহি মনে মনে বলল, মাহিরকে নিয়ে আবার কবে থেকে ভাবতে শুরু করলাম! কী ইচ্ছে হচ্ছে আমার সাথে আজকাল!! সে যাই হোক, এখন ডায়রিটা পড়তে হবে। পুরো ডায়রিটা পড়ার পর দাদিজান এবং দাদাভাইয়ের রাগ ভাঙ্গাতে। উনাদের অসম্পূর্ণ সম্পর্কটাকে সম্পূর্ণ করতেই হবে। দুটো মানুষ আর কতকাল এভাবে দূরে দূরে সরে থাকবে!

রুহি তাড়াতাড়ি করে ডায়রিটা পড়তে শুরু করল। ডায়েরির দ্বিতীয় পাতা থেকে লেখা শুরু_____

“আমি জানি তালেব
তুমি আমার উপর ভীষণ রেগে আছো। তুমি জানো না তোমার আর সায়েদার বিয়ে ভাঙ্গার পেছনে আমিই ছিলাম। আমি কখনই চাইনি ভিখিরি বাড়িার মেয়ে আমার ঘরে পুত্রবধূ হয়ে আসুক। আর্থিক দাম্ভিকতা আমাকে একটা গন্ডির ভেতরে আটকে রেখেছিলো। আমি চাইনি খান বাড়ির মেয়ের সাথে আমার ছেলের বিয়ে হোক। আর সেই জন্যই আমি বিয়ের দিন তোমার শ্বশুর মানে সায়েদার বাবার কাছে মোটা অংকের পণের দাবি করেছিলাম। যদি এই শর্ত মানা হয় তবেই বিয়েটা হবে আর নয়তো হবে না। আমি জানতাম, সায়েদার বাবা ভীষণ সৎ ছিলেন। পণের টাকা দিয়ে উনি কোন দিনও মেয়েকে বিয়ে দিবেন না। সেই জন্যই আমি এমন প্রস্তাব রেখেছিলাম। ঠিক তখনই বিয়েটা ভেঙে যায় এবং আমি তোমাকে সেখান থেকে নিয়ে চলে আসি। তোমাকে বলেছিলাম সায়েদা অন্য এক বড়লোক ছেলেকে বিয়ে করবে বলে বিয়ে ভেঙে দিয়েছে এবং তোমার সাথে যোগাযোগ করার সমস্ত রাস্তা বন্ধ করে দেই। আর সায়েদা যখন জানতে পারে তুমি মোটা অংকের পণ দাবি করেছো ঠিক তখন সেও বিয়ে ভেঙ্গে দেয়। আজকে মনে হচ্ছে আমি সত্যিই আর পৃথিবীতে বেশি দিন থাকতে পারবোনা। শরীরের অবস্থা ভালো নয়। তাই আমার মনে হয় সত্যি কথাটা তোমাকে জানানো উচিত। আর আমার তোমার সামনে সত্যিটা বলার সেই সৎ সাহস টুকু নেই। আমি জানি না বাবা হিসেবে কিভাবে তোমাকে মুখ দেখাবো। তাই আমি এই ডায়রিতে সব কথা লিখে যাচ্ছি। আমি জানি এই ডায়রিটা তোমাকে সায়েদা দিয়েছিল।আর এটা তুমি কখনো না কখনো খুলে দেখবে। জানিনা সেদিন তুমি আমাকে ক্ষমা করতে পারবে কিনা। কিন্তু তাও এই বৃদ্ধ বাবাকে পারলে ক্ষমা করে দিও।

ইতি তোমার অপরাধী
বাবা

রুহি একদম শক্ত হয়ে বসে আছে ডায়রিটা পড়ে। এই প্যাঁচ কী করে খুলবে সে! দুজন দুজনকে ভুল বুঝে বসে আছে এতোগুলা বছর ধরে। দাদাভাইর এই ভুল একমাত্র এই ডায়রি পড়িয়েই ভাঙ্গাতে হবে।

কিন্তু এতো সহজ কথা গুলো পড়ে মাহির কিছুই বুঝতে পারলো না! স্ট্রেঞ্জ!!

মোবাইলটা হাতে নিয়ে মাহিরকে কল করলো রুহি। ফোন ধরতেই বলল, আচ্ছা আপনি কী পারেন বলেন তো! এই সামান্য একটা ব্যাপার আপনি বুঝতে পারলেন না? আপনার তো উচিত ছিল দাদাভাইর কাছে ডায়রিটা নিয়ে গিয়ে তখনই সবটা বলে দেয়া। দাদাভাইর ভুলটা ভেঙ্গে যেতো আর আমরাও তাদের দুজনকে খুব তারাতারি এক করে ফেলতে পারতাম।

মাহির বলল, আসলে তোমাকে খুব দেখতে ইচ্ছে করছিলো। তাই মিথ্যে বলেছিলাম।

রুহি ভারী গলায় বলল, কিহ! আমাকে মিস করার মতো কী হয়েছে? এখন এসে ডায়রিটা নিয়ে যান আর যেভাবেই হোক দাদাভাইকে দিয়ে এই ডায়রিটা পড়াবেন।

মাহির বলল, সেটা তো তুমিও করতে পারো। দাদিজানকে সবটা খুলে বলো। দাদিজান ও তো দাদাভাইকে ভুল বুঝেছে। তার ভুলটাও তো ভাঙ্গাতে হবে।

রুহি বলল, না।

কেনো?

আমি চাই দাদাভাই নিজে দাদিজানের সমস্ত ভুল ভেঙ্গে দিক। দাদিজানকে সামলানো ভীষণ মুসকিল। ধরুন দাদাভাইর সাথে দাদিজানের দেখা করালাম আমরা। তারপর দাদাভাই নিজে সমস্ত ভুল বোঝাবুঝি দূর করে দাদিজানের রাগ ভাঙ্গাবে।আইডিয়াটা কেমন বলুন?

মাহির বলল, যুগে যুগে ছেলেরাই কেনো আগে রাগ ভাঙ্গাবে! এটা তো অন্যায় ছেলেদের উপর।

রুহি রাগি স্বরে বলল, ভুল যার সেই আগে থেকে রাগ ভাঙ্গাবে। যেহেতু দাদাভাইর বাবা ভুল করেছিলেন তাই তার বংশধর হিসেবে দাদাভাইই দোষী। বাবার করা ভুলের শাস্তি তাকেই পেতে হবে। অবশ্য পেতে হচ্ছেও এতো গুলো বছর ধরে। আর আমার দাদিজান! সেও তো কম কষ্ট পায় নি। একটা মেয়ের বিয়ে নিয়ে কত স্বপ্ন থাকে। প্রতিটা মেয়ের স্বপ্ন একদিন সে বউ সাজবে। এমন একটা মানুষের জন্য যাকে সে ভালোবাসে। ভালোবাসার মানুষকে নিজের করে পাওয়ার সেই সুখ থেকে দাদিজানকে বঞ্চিত করা হয়েছে। উনি ভেবেছেন দাদাভাই ওনাকে ঠকিয়েছেন। আর তাই তো এতো গুলো বছর ধরে কেউ কারো মুখদর্শন করেনি। কিন্তু আমার মনে হয় ওনারা এখনও দুজন দুজনকে ভুলতে পারেনি।

তুমি কী করে এতোটা সিউর হচ্ছো?

আপনার মাথায় কি কিচ্ছু নেই নাকি?

কেনো? আমি আবার কী করলাম?

ওনারা দুজনেই এখনও অবিবাহিত। কাউকে ভালো না বাসলে কেউ তার গোটা জীবনটা এভাবে সঙ্গীহীন কাটিয়ে দেয়!!

হুম বুঝলাম।

ঘোড়ার ডিম বুঝেছেন। এখন দাদাভাইকে এই ডায়রি পড়ানোর দায়িত্ব আপনার।

ঠিক আছে আমি এক্ষুনি আসছি ডায়রি নিতে।

আরে আরে!! রাত কয়টা বাজে খবর আছে আপনার? এতো রাতে আপনি আবারও আসবেন? মাথা খারাপ নাকি আপনার!! কাল এসে নিয়ে যাবেন। তবে অবশ্যই সবার নজর এড়িয়ে। এখন রাখছি।

আরেকটু কথা বলা যায় না?

রুহি হাই তুলতে তুলতে বলল, প্রচন্ড ঘুম পাচ্ছে আমার। রাখলাম আমি। আর আপনিও ঘুমান।

বলেই রুহি ফোন কেটে দিলো।

মাহির একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল, যেদিন তোমাকে আমার কাছে ফিরিয়ে নিয়ে আসতে পারবো সেদিনই আমার চোখে শান্তির ঘুম আসবে। তার আগে নয়। কখন যে সকাল হবে!!
______________________

পরের দিন রাতে আবারও মাহির সবার নজর এড়িয়ে রুহিদের বাড়িতে এলো ডায়রিটা নিতে। রুহির চাচা রাতে পুকুরের মাছ পাহারা দিতে বেরিয়েছিলেন। তাই রুহি মাহিরকে ফোন করে বলল, সোজা বাড়ির ভেতরে চলে আসতে। মাহির পেছনের দরজা দিয়ে ভেতরে ঢুকতে যাচ্ছিলো এমন সময় রুহির চাচা বাইরে থেকে চোর চোর বলে চেঁচিয়ে উঠলো।

চলবে……

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here