দ্বিতীয় বসন্ত ❤️ পর্ব -২২

#দ্বিতীয়_বসন্ত-২২
Zannatul Eva

আপনাকে দাদাভাইর ঘর থেকে লুকিয়ে ঐ ডাইরিটা আনতে হবে এবং পুরো ডায়েরিটা পড়ার দায়িত্ব আমি আপনাকে দিচ্ছি। পড়ে আমাকে জানাবেন যে, ডায়েরির ভেতরে কী কী লেখা আছে। পুরো ডায়েরিটা মনোযোগ সহকারে পড়বেন। আমার মনে হচ্ছে আমরা এখান থেকেই কিছু না কিছু ক্লু অবশ্যই পাবো। যেহেতু এটা অনেক পুরনো দিনের ডায়েরি। হতে পারে এটা আমার দাদিজানের দেওয়া কোনো উপহার। যা খুব যত্ন করে দাদাভাই নিজের আলমারিতে তুলে রেখেছেন।

মাহির বলল, তুমি কী করে এতো সিউর হচ্ছো?

রুহি বলল, সিউর নই৷ আমার সিক্স সেন্স বলছে এরকম কিছু হতে পারে। আই এম নট সিউর। কিন্তু আমাদের তো চেষ্টা করতে হবে।

মাহির হতাশ হয়ে বলল, যাই একটু আশা ছিল তাও এখন শেষ। এভাবে কিছু হবে না।

রুহি বলল, আপনাকে যেটা করতে বললাম সেটা করুন। নয়তো আর কখনও ফোন করবেন না আমাকে। কী যায় আসে আমি আপনার জীবনে থাকলাম বা না থাকলাম তাতে!! মাহির কোন কথা না বলেই ফোন রেখে দিলো। রুহি ভাবল, একটু বেশি রুড বিহেভ করে ফেললাম মনে হয়! এভাবে না বললেও পারতাম।
উনি তো সবার মতো না। এতো কিছুর পরেও উনি আমাকে বিয়ে করেছে। আমি জানি মাহির আমাকে পছন্দ করে। হয়তো ভালোও বাসে। কিন্তু আমি তো মাহিরের যোগ্য নই। যতোবার ভাবি ভালোভাবে কথা বলবো ঠিক ততোবারই মনে পড়ে আমি মাহিরের যোগ্য নই। আমার জীবনটা অন্যরকম।

রুহি আর কল ব্যাক করলো না। শুধু একটা ভারী নিঃশ্বাস ফেললো।

মাহির চুপিচুপি তালেব আহমেদের রুমে চিরুনি তল্লাশি করেও সেই ডায়েরিটা কোথাও খুঁজে পেলো না। তালেব আহমেদ তখন ঘুমোচ্ছিলেন।

কী অদ্ভুত! রুহি তো বলল, ডায়েরিটা আলমারিতেই আছে। খয়েরী রঙের কোনো ডায়েরিই তো আমার চোখে পরছে না৷ না না যে করেই হোক ডায়েরিটা আমাকে খুঁজে বের করতেই হবে। একমাত্র ঐ ডায়েরি থেকেই দাদাভাই আর রুহির দাদিজানের সমস্ত গোপন কথা জানা সম্ভব। আর তারপরেই আমি রুহিকে ফিরিয়ে নিয়ে আসতে পারবো। যে করেই হোক ডায়েরি আমাকে খুঁজে পেতেই হবে। মাহির আরও ভালো করে খুঁজতে লাগলো। এমন সময় তালেব আহমেদ জেগে গেলেন৷ ঘুমন্ত গলায় বললেন, কী খুঁজছো দাদুভাই?

মাহির হকচকিয়ে উঠে বলল, নাথিং বড় দাদাভাই। কিছু খুঁজছি না তো।

তালেব আহমেদ হেসে বললেন, টেলিং লাইস?

মাহির আমতা আমতা করে বলল, আসলে দিয়াশলাই খুঁজছিলাম।

তুমি জানো আমি ধূমপান করা একদম পছন্দ করি না। তোমাকে কতবার বলেছি ওসব খাওয়া ছাড়ো। তুমি বরং বিরিয়ানি খাও। সিগারেট একটা খাওয়ার জিনিস হলো!! বাজে গন্ধ সাথে স্বাস্থ্যের ক্ষতি। সিগারেট খাওয়ার অভ্যেস ছাড়ো। বিরিয়ানি খাওয়ার অভ্যেস করো। মাথায় ঢুকলো কথা গুলো?

মাহির নিচু স্বরে বলল, বিরিয়ানি কে যদি ভেঙ্গে বলি তাহলে কিন্তু ঐ একই কাহিনী হয়।

একই কাহিনী মানে?

মানে বিরি যোগ য়ানি। ধরো বিড়ি যোগ আনি। মানে উচ্চারণ তো একই হয়। এখানেও সেই ঘুরেফিরে বিড়ির কথাই চলে আসছে। কিভাবে ছাড়ি বলো। তবে ওর জন্য কয়েকবার চেষ্টা করেছিলাম।

কার জন্য?

আআআ কেউ না। আমি এখন আসছি বড়দাদা ভাই। তুমি ঘুমোও।

তালেব আহমেদ একটা নিঃশ্বাস ফেলে বললেন, ভালোবাসলে মানুষ কত কী না পারে! কেউ কেউ ভালোবেসে নিজের প্রিয় অভ্যেস গুলোও বদলে ফেলতে পারে। আবার কেউ কেউ ভালোবেসে কারো জন্য গোটা জীবন অপেক্ষা করে কাটিয়ে দিতে পারে। দুঃখ কেবল একটাই, যার জন্য আমরা এতো কিছু করি সেই মানুষটাই আমাদেরকে বোঝে না।
___________________

ওরা যখন আমার নাতনিরে একেবারে পাঠাইয়াই দিছে তাইলে আর কোনোদিনও আমার নাতনিরে ঐ বাড়িতে পাঠাইম না৷ আশরাফ তুই চিন্তা করিস না। রুহির মতো এমন সোনার টুকরা মাইয়ার লগে বারবার খারাপ হইতে পারে না। হয়তো ভালো কিছুর জন্যই এমনটা হইছে। ওরে আমরা এর চাইতেও ভালো ঘরে বিয়া দিম। তুই কিচ্ছু চিন্তা করিস না আশরাফ। শান্ত হও বড় বউ। তোমরা এমন করলে তো রুহিও ভাইঙ্গা পরবো।

রুহি বলল, শুধু শুধু ওনাদের দোষ দিয়ে কোনো লাভ নেই দাদিজান। ওনারা সত্যিই আমাকে মেনে নিয়েছে। আর মাহিরও আমাকে ফিরিয়ে নিতে চায়। আমিই যেতে চাইছি না। আমি চাই না সংসার জীবনে বাঁধা পরতে। এই বিয়েটা তো এক্সিডেন্টলি হয়ে গেছে। কিন্তু আমি কখনও চাইবো না কেউ আমার মতো একটা মেয়েকে বিয়ে করে হতাশার সাগরে ডুবে থাকুক। কারো দয়া আমার চাই না।

রুহির ছোট চাচি বলল, এইভাবে বাবা-মায়ের ঘাড়ে বসে থাকবে। ওরে দেখে দেখে তো আমার রুম্পাটাও নষ্ট হয়ে যাবে। এখনি তো আমার কথা শোনে না।

সায়েদা বেগম রাগি স্বরে বললেন, আমিও চাই না ঐ বাড়ির লগে আমাগো কোনো সম্পর্ক থাকুক। যা হয় ভালোর জন্যই হয়। ঐ বাড়ির কেউ যেনো ভুলেও এ বাড়িতে পাও না রাহে। ঐ পোলারে কইয়া দিস আমার নাতনি এতো ফেলনা না। ঐ বাড়ির লগে চিরদিনের শত্রুতা আমাগো।

কিসের শত্রুতা ফুপুজান?

ছোট বউ তোমারে কইছি না মুখে মুখে প্রশ্ন করবা না। যাও নিজের কামে যাও।
________________________

পরের দিন মাহির আবারও তালেব আহমেদের ঘরে চিরুনি তল্লাশি চালায়। টানা কয়েক ঘন্টা খুঁজাখুঁজির পর অবশেষে সেই যাদুর ডায়েরি খুঁজে পেলো সে। কিন্তু এমন অদরকারি কাগজ পত্রের ভেতর ডায়েরিটা ফেলে রেখেছে কেনো বড় দাদাভাই!!

প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে মাহিরের মাথায়।

সে যাই হোক, খুঁজে পেয়েছি সেটাই অনেক। এবার আর রুহি আমার কাছে না এসে থাকতে পারবে না।

মাহির চটজলদি ডায়েরিটা পরে শেষ করে ফেললো। পুরো ডায়েরি পরার পর বুঝতে পারলো, বিয়ে ভাঙ্গার পেছনে ছিল তালেব আহমেদের বাবা আলতাব আহমেদ। তিনি মারা যাওয়ার আগে সমস্ত কথা এই ডায়েরিতে লিখে রেখে গেছেন। কিন্তু অদ্ভুত ব্যাপার এই ডায়েরি তো এতো বছর ধরে বড় দাদাভাইয়ের কাছেই ছিল। তাহলে তার তো জানার কথা এই ডায়েরি সম্পর্কে। এই ডায়েরি পড়ার পর সমস্ত ভুল বোঝাবুঝি শেষ হয়ে যাওয়ার কথা। কিন্তু তাহলে এখনও কেনো দাদাভাই আর দাদিজানের মধ্যে এতো ঝামেলা!! মাথা কাজ করছে না। এক্ষুনি রুহিকে সমস্তটা জানাতে হবে।

মাহির রুহিকে ফোন করে বলল, ডায়েরি পেয়ে গেছি।

রুহি এক্সাইটেড হয়ে জিজ্ঞেস করলো, কী লেখা ছিল ডায়েরিতে? পড়েছেন সবটা?

মাহির বলল, পড়েছি কিন্তু অনেক কিছুই বুঝতে পারিনি। আমার মনে হয় তুমি পড়লে সবটা ক্লিয়ারলি বুঝতে পারবে। আমাদের দেখা করা উচিত।

রুহি রেগে গিয়ে বলল, সামান্য একটা কাজ দিয়েছিলাম সেটাও পারলেন না! লেখা নাকি বুঝতে পারছে না। মারপিট আর সিগারেট খাওয়া ছাড়া আর কী পারেন বলুন তো আপনি।

ভালোবাসতে পারি।

কীহ!!

কিছু না।

শুনতে পাই নি কী বললেন।

আসলে রুহি সবটাই শুনেছে। না শোনার ভান ধরে আছে।

বলেছি কাল আমরা দেখা করছি তাহলে।
মাহির আসলে এই ছলে রুহির সাথে দেখা করতে চাইছে৷

রুহি বলল, আমি দেখা করতে পারবো না। দাদিজান জানলে ভীষণ রেগে যাবেন। আপনি এবং আপনার বাড়ির কারো সাথে দেখা সাক্ষাত করতে মানা করেছেন দাদিজান।

মাহির বলল, দাদাভাই আর দাদিজানের রাগারাগি বন্ধ করার জন্যই তো আমরা এতো কিছু করছি। কত কষ্ট করে ডায়েরিটা খুঁজে বের করলাম। তাছাড়াও এর পরের ধাপ কী সেটার জন্যও তো আমাদের প্ল্যান করতে হবে। দেখা না হলে সেটা কিভাবে সম্ভব!! ফোনে এসব হয় নাকি!

আপনি বুঝতে পারছেন না কেনো! আমি বাড়ি থেকে বেরোতে পারবো না।

তাহলে আমি আসছি।

মানে!!

এক ঘন্টার মধ্যে আমি তোমাদের বাড়িতে আসছি। সবাই ঘুমিয়ে পরলে যেভাবেই হোক বাড়ির পেছনের দিকটায় চলে আসবে। এখন রাখছি।

আরেএ…..শুনুন……

মাহির ফোন রেখে দিলো।

সবাই ঘুমিয়ে যাওয়ার পর রুহি চাদর মুড়ি দিয়ে পা টিপে টিপে পেছনের দরজা দিয়ে বাইরে বেরোলো।

একটু দূরেই মাহির দাঁড়িয়ে আছে। মাহিরকে দেখে হঠাৎ করেই রুহির বুকের মধ্যে ঢিপঢিপ করতে শুরু করলো। এমনটা আগে কখনও হয় নি৷ মাহিরও অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছে রুহির সাথে দেখা করার জন্য।

রুহি এক পা দু পা করে মাহিরের দিকে এগিয়ে গেল।

চলবে………

ছবি:সংগৃহীত

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here