#না_চাইলেও_তুমি_আমার💞
#লেখিকা_লায়লা_আঞ্জুমান_ইতি
#পার্ট_০৭
।
।
।
।
ভার্সিটি ছুটি হয়ে গেছে বাড়ী ফিরার উদ্দেশ্যে রওনা দিলাম আজ ডেভিলটা আসে নিই অফিসে কোন মিটিং সেখানে আছে তাই আজ আর কারও ভয়ে থাকতে হয় নিই।কামাল চাচ্চু এসে দাড়িয়ে আছে গাড়িতে উঠতে গিয়ে শুনতে পেলাম পিছন থেকে কেউ আমাকে ডাকছে পিছনে ঘুরেই দিহানকে দেখতে পেলাম সে আমার কাছে এসে বলতে লাগল,,,,হ্যালো আমি দিহান।
আমি উনার উদ্দেশ্যে বললাম,,, হ্যালো।উনি কিছুটা লাজুক ভঙ্গিতে বলল,,আসলে আমার আপনার সাথে কিছু কথা বলার ছিল যদি আপনি চান।
বেশ বুঝতে পারছি কি বলবে আজ আর ওই ডেভিলটা আসে নিই তাই বললাম,,ওকে চলুন।
উনি আর আমি একটা নদীর কাছে গেলাম,আমি উনাকে বললাম,,হুম বলুন।উনি আমার দিকে তাকিয়ে বললেন,,,আআআ আসলে আপনার সাথে তো আমার আগে দেখা হয় নিই আপনার মা আর আমার ফুপি এক জায়গায় কাজ করে সেখান থেকেই তাদের পরিচয়। উনার এত পেচানো কথা আর মাথায় ঢুকছে না তাই মুখ ফুটে বলেই ফেললাম,,,আসল কথাটা বলুন।
উনি বললেন,,,,আপনি তো অবশ্যই জানেন যে আপনার সাথে আমার বিয়ের কথা হচ্ছিল সেই দিন দেখা করার জন্য অপেক্ষা করছিলাম কিন্তু আপনি আসেন নিই আমাকে আপনার পছন্দ হয় নিই।হায় আল্লাহ এতো দেখি মহা বিপদ এখন কি বলব মুখে একটা নকল হাসি টেনে বললাম,,
না না তেমন কিছু না।উনি বললেন,,,তাহলে আপনি নাকি বিয়ের জন্য না করে দিয়েছেন কেন।
ইশশশ এই প্রশ্নের উত্তর কিভাবে দেব আমি তো আর বলতে পারব না যে আমার বিয়ে হয়ে গেছে তাহলে তো গিয়ে মাকে বলে দেবে মাথায় আর কিছু আসছে না আমি একটু হেসে বললাম,,,আসলে আআ,আমি এখন বিয়ের জন্য প্রস্তুত না এএ এতো দ্রুত বিয়ে করতে চাই না।
উনি সামান্য হেসে বললেন,,,তাহলে বলতে পারতেন এভাবে বিয়েতে না করলেন কেন আপনি যত সময় চান আমি আপনাকে দেব,আমরা ফ্রেন্ডশিপ করি ধিরে ধিরে দুজন দুজনকে বুঝতে পারব । উনার কথার উওরে কি বলব বুঝে পাচ্ছি না শুধু বেকুব এর মতো হেসেই যাচ্ছি। উনি আবার বললেন,,আমরা তাহলে এখন থেকে বন্ধু।আমি কিছু না বলে শুধু মাথাটা ডান দিকে ঝুকালাম।
রাতে বিছানায় শুয়ে আছি মা হঠাৎ এসে চুল গুলো নেড়ে দিতে লাগল আমি সন্দেহ জনক দৃষ্টিতে তাকিয়ে বললাম,,,কি ব্যাপার। মা সামান্য হেসে বলল,,,,তুই নাকি আজ দিহানের সাথে কথা বলেছিস।আমি মার দিকে তাকিয়ে বললাম,,,,হ্যা কথা বলেছি এসে বলছিল আমার সাথে কথা বলবে তাই আর না করি নিই।মা উৎসাহিত হয়ে বলল,,,কি কথা বলেছিস কেমন লেগেছে তোর আমি জানতাম খারাপ লাগবে না। আমি এবার উঠে বলতে লাগলাম,,,,,,, মা শোনো তুমি যা চাইছো তা সম্ভব না আমি বিয়ে করব না।মা এবার রাগী একটা লুক নিয়ে বলল,,,কেন করবি না কত ভালো ছেলে তুই জানিস ও একটা ডাক্তার তোর কি অন্য কারও সাথে কিছু আছে নাকি।মার এমন রাগী লুক দেখে এখন ভয় করছে একটু হেসে বলতে লাগলাম,,,কি বল আআআ,আমার অন্য কোনো পছন্দ নেই আমি কোনো প্রেম চেম করি না রিলেক্স।
মা কিছুখন পর চলে গেল তার কিছুখন পরই কাব্যের ফোন আসলো রিসিভ,,,,,,,,, হ্যালো। ওপাশ থেকে বলল,,,কেমন আছো
—খুব ভালো আমাকে নিয়ে আপনার চিন্তা করতে হবে না।
—তুমি এতো তেতো ভাবে কথা বল কেন? একটু মিষ্টি ভাবে কথা বলতে পার না।
—ওতো মিষ্টি ভালো না ডায়বেটিস হবে।
উনি সামান্য হেসে বললেন,,,,কাল তো অনুষ্ঠান তুমি কিন্তু ওই শাড়িটা পড়ে আসবে।
—-না আমি শাড়ি পড়ব না
—-তোমাকে যখন বলেছি তোমাকে পড়তেই হবে
—-ওই এতো হুকুম দেও কেন?
উনি সামান্য হেসে বললেন,,,, তুমি টা শুনতে তো খুব ভালো লাগলো। নিজেকে একটু শান্ত করে বললাম,,,শুনুন আমি শাড়ি পড়ব না। উনি আবার বললেন,,,,ওই তুমি করে বল না শুনতে ভালো লাগে।
এই লোকে কিছু বলে লাভ নেই তাই ওকে বলে ফোন রেখে দিলাম।সকালে ঘুম থেকে উঠেই অর্ধেক পড়া শাড়ি নিয়ে দৌড় দিলাম মার কাছে, মা আমাকে দেখ হাসতে হাসতে শেষ আমি গাল ফুলিয়ে বললাম,,,,,হয়েছে হয়েছে আর এভাবে হাসতে হবে না শাড়িটা পড়িয়ে দেও।মা এসে আমার মাথায় একটা আস্তে থাপ্পড় দিয়ে বলল,,এখন পযন্ত শাড়ি পড়া শিখলি না।
তারপর মা শাড়ি পড়িয়ে দিল, তারপর সাজতে লাগলাম চোখে কাজল আর মাসকারা দিয়ে নিলাম কপালে একটা ছোট কালো টিপ, কানে সিল্ভার কালারের ঝুমকো চুল গুলো মাঝে সিতি করে ছেড়ে নিলাম, এক হাতে কালো কাচের চুড়ি আর অন্য হাতে কালো একটা ঘড়ি ব্যস আমি রেডি।
ভার্সিটি গিয়ে ফ্রেন্ডের সাথে বসলাম সবাই কথা বলছি হঠাৎ সবাই অন্য দিকে তাকালো আমিও ওদের দৃষ্টি অনুসরণ করে তাকিয়ে দেখি ডেভিলটা আসছে কালো কালারের একটা পাঞ্জাবি পড়া, হাতে একটা কালো ঘড়ি চোখে সান গ্লাস, পাঞ্জাবির হাতা গুলো গুছিয়ে হাতের কনুই পযন্ত নেওয়া, আমার নিজেরই চোখ ফিরাতে ইচ্ছে করছে না এতে আমার কোনো দেষ নেই সব উনার দোষ এত সুন্দর কেন দেখাতে হবে উনাকে সব গুলো মেয়ে চোখ দিয়ে গিলে খাচ্ছে, রাগ হচ্ছে ভিশন পরক্ষণেই আবার রাগ চলে যাচ্ছে এটা ভেবে উনার দিকে মেয়েরা তাকিয়ে আছে তাতে আমার কি। চোখ গুলো সরিয়ে অন্য দিকে নিলাম।
উনি আমাকে দেখেও না দেখার মতো চলে গেলন এই লোকটা এমন কেন একা পেলে কত বেহায়ামি করে আর ভার্সিটিতে আমাকে চেনেই না যতসব ছাতার মাথা দূররর আমার কি।
চেয়ারে বসে অনুষ্ঠানে দেখছি তখনি হিয়ার ফোন আসলো বলল আমাদের ক্লাস রুমে যেতে কি যেন বলবে, তাই উঠে হাটা দিলাম ক্লাস রুমের উদ্দেশ্যে, হঠাৎ এক হেঁচকা টানে আমাকে এক ক্লাস রুমের ভিতরে নিয়ে নিলো, হঠাৎ এমন হওয়ায় ভয়ে চোখ বন্ধ করে ফেলেছিলাম,আমতা আমতা করে চোখ খুলে দেখি ডেভিলটা মুচকি হেসে তাকিয়ে আছে আমার দিকে রেগে উনার থেকে নিজেকে সরিয়ে চলে যেতে লাগলাম ওমনি আবার এক টান দিয়ে আমাকে নিজের সাথে মিশিয়ে নিলো রাগান্বিত চোখে তাকিয়ে বললাম,,,কি করছেন ছাড়ুন আমাকে।
উনি একটু মুচকি হেসে বললেন,,,,ছাড়ার জন্য তো আর ধরি নিই।এবার রাগ আর নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারছি না যেই কিছু বলতে গেলাম ওমনি উনি বলে উঠলেন,,,,,সিশশ চুপ একদম চুপ তুমি এখন আর কিছু বলবে না, তুমি তোমার পেট থেকে এক রাজ্যে রাগান্বিত কথা বের করার আগে আমার কথা শোনো।
উনার এমন কথা শুনে চুপ হয়ে গেলাম কি বলবে এমন আমি এইসব ভাবতে ভাবতে উনি বলে উঠলেন,,,,সিরিয়াস কথাটা পরে বলব আগে বল তুমি এত ভয়ঙ্কর কেন?
উনার এমন কথা শুনে আমার ভ্রু কুচকে গেল বলে কি আগা মাথা কিছুই বুঝলাম না।জিজ্ঞেস করার দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছি উনার দিকে উনি সামন্য হেসে আমার কানের কথা এসে ধিরে ধিরে বললেন,,,এমনি তো আধ মরা হয়ে আছি এমন ভয়ঙ্কর রুপ দেখিয়ে তো পুরো শেষ করে দিলে।
উনার এমন কথায় রাগ করব নাকি লজ্জা পাবো বুঝতে পাচ্ছি না কিন্তু বেশ লজ্জা লাগছে উনি আবার বলে উঠলেন,,,,এবার তোমাকে একটা কথা বলি শেষ বারের মতো আমি যদি আর কখন তোমাকে ওই দিহান ছেলের সাথে তুমি কথা বলেছো বা দেখা করেছো সেই দিন তোমার সাথে যা হবে তার জন্য আমাকে দায়ী করতে পারবে না।বলেই বাকা হেসে চলে গেল।আমি তো ভয়ে ফ্রিজ হয়ে গিয়েছি হায় আল্লাহ এ কীভাবে জানলো এত পুরো ডেঞ্জারাস। আর না দাড়িয়ে থেকে আমাদের ক্লাস রুমে গেলাম, হিয়া অনুষ্ঠানে নাচ দিয়েছে আমাকে দেখে বলল,,,,দেখতো ইতি আমাকে ঠিক দেখাচ্ছে তো। আমিও মাথা নাড়িয়ে সাই দিলাম হ্যা।
কিছুখন পর হিয়া নাচলো আমি বসে বসে অনুষ্ঠান উপভোগ করছি সবাই খুব ভালো করছে, কিছুখন পর কাব্য স্টেজে গিটার নিয়ে উঠলো, আমি অবাক হয়ে তাকিয়ে আছি পাশ থেকে হিয়া ধাক্কা দিয়ে বলল,,,,দেখিস এখন কাব্য ভাইয়া গান গাইবেন রিহার্সালের সময় উনার গান শুনে ছিলাম খুব সুন্দর। আমি একটু ভেঙ্গিয়ে বললাম,,দেখি কি এমন মহাভারত জয় করে ফেলে।উনি গিটারে সুর তুললেন তারপর মুখ দিয়ে গুনগুন করতে লাগলেন তারপর চোখ বন্ধ করে এক দিলঘায়েল করার মতো একটা হাসি দিল আর গাইতে লাগলো,,,,
♪♪♪♪♪♪♪তুমি চাইলে আমি তোমার,,,,,,,,,♪♪♪♪♪♪♪♪♪♪♪
♪♪♪♪♪♪♪♪♪♪♪না চাইলেও তুমি আমার,,,,,,,,,♪♪♪♪♪♪♪♪♪
♪♪♪♪♪♪তুমি বসে থাকলে,,,, আমি আবেগে উড়ে যাই♪♪♪♪♪♪♪♪♪♪♪
♪♪♪♪♪♪♪♪♪♪♪♪♪তুমি চলে গেলে আমি, আমি যেন আমি নাই,,,,♪♪♪♪
♪♪♪♪♪♪♪♪♪তুমি চাইলে আমি তোমার,,,,♪♪♪♪♪♪♪♪♪♪♪
♪♪♪♪♪♪♪♪♪♪♪♪♪♪না চাইলেও তুমি আমার,,,,,,,♪♪♪♪♪♪♪♪
♪♪♪♪♪♪♪♪♪অনন্ত রাতের ছায়া পথে, হারিয়েছো কিনা জানি না♪♪♪♪♪
♪♪♪♪♪♪শুধু জানি তুমি আছো খুব কাছে ছোয়া তো যাবে না♪♪♪♪♪♪♪
♪♪♪♪♪♪♪♪তোমায় আমি লিখে দিলাম, আমার প্রিয়,, আকাশ,,,,,,♪♪♪♪♪♪
♪♪♪♪♪♪♪♪♪♪♪♪তোমার মাঝে গড়ি আমি আমার বসবাস,,,,♪♪♪♪♪♪
♪♪♪♪♪♪তুমি চাইলে আমি তোমার,,,,,,♪♪♪♪♪♪♪♪♪♪♪♪♪♪♪♪♪
♪♪♪♪♪♪♪♪♪♪♪♪না চাইলেও তুমি আমার,,,,,,,,♪♪♪♪♪♪♪♪♪♪♪♪
উনার গানের মাঝে আমি নিজেকে হারিয়ে ফেললাম সবার হাত তালি দেওয়ার আওয়াজে হুশ ফিরলো।পাশে হিয়া আবার ধাক্কা দিয়ে বলল,,,কি কেমন লাগল।আমি বললাম,,হুম তেমন একটা না মোটামুটি ভালোই।ও এক ভ্রু উচু করে বলল,,,,এহহহহহ মিথ্যে বলছিস কেন দেখলাম তো কেমন হুশ হারিয়ে ফেলেছিলি বাকি মেয়েদের দেখ কেমন ভাবে তাকিয়ে আছে, বাকীদের দিকে তাকিয়ে মেজাজটা খারাপ হয়ে গেল কি বেহায়া মেয়ে এই গুলো আজ তো মনে হয় উনাকে সম্পূর্ণ গিলে না খেলে এদের শান্তি হবে না।উনি ও আছেন এত ভাব নিয়ে চলে কেন।
রাতের দিকে রুমে বসে আছি আর আজকের দিনের কথা ভাবছি, আর সেই গান যা এক ভিন্ন জগতে নিয়ে গিয়েছিলো,এই লোকটার আরও কত রুপ আছে,,,,,,,,
#না_চাইলেও_তুমি_আমার💞
#লেখিকা_লায়লা_আঞ্জুমান_ইতি
#পার্ট_০৮
।
।
।
।
হঠাৎ ফোন বেজে উঠলো নাম্বার টা চিনি না, কলটা রিসিভ করে বললাম,,,,হ্যালো কে বলছেন।ওপাশ থেকে বলল,,,
— আমি দিহান
–আপনি??????
–আপনার সাথে কিছু কথা বলার ছিল কাল কি দেখা করতে পারি?
–ওও,ও,ওকে
উনি কল কেটে দিলেন,, আমার তো এখন খুব টেনশন হচ্ছে,না জানি কি বলবে আর ওই ডেভিলটা কি ভয়ানক কথা বলেছিলো ইশশশ কি প্যারা না কাল দিহানকে সব বলে দেব আর রিকুয়েস্ট করব যেন মাকে না বলে।
পরের দিন ভার্সিটি শেষ করে দিহান এর সাথে দেখা করতে গেলাম,দিহানের সামনে যেতেই দিহান গম্ভীর ভাবে বলল,,,,কাব্য ছেলেটা কে আর ওর সাথে আপনার কেমন সম্পর্ক।
–আপনাকে উনি কিছু করেছেন?
-তেমন কিছু করে নিই শুধু হুমকি দিয়ে এসেছে যেন আপনার ধারে কাছে না আসি তাহলে নাকি আমার অবস্থা খারাপ করে দেবে এখন আপনি বলুন?
আর কিছু না লুকিয়ে সব খুলে বললাম, উনি অবাক হয়ে বললেন,,,,
–আপনাদের বিয়ে হয়ে গেছে
-হুম সব বললাম তো
-উ নার এমন ব্যবহার করা সাভাবিক আমার স্রী সাথে আমিও অন্য কোনো ছেলে সহ্য করতাম না
–আপনি প্লিজ মাকে এখন কিছু বলবেন না
–না না আপনি চিন্তা করবেন না, কিন্তু আপনি কি উনাকে ভালোবাসেন
–আ,,,,,,,,,,আমি,,,আসলে, আসলে আমি মানে আমি
উনি আমার এমন কথা বলার অবস্থা দেখে হেসে বললেন,,,,,
-আপনি দ্বিধায় আছেন তাই না কিন্তু আপনিও উনাকে পছন্দ করেন তা আমি পরিষ্কার বুঝতে পারছি।
– না কিন্তু উনি মাঝে মাঝে ডেভিলদের জন্য মতো আচরণ করে আর যখন রেগে যায় তখন মনে হয় সব কিছু কাপিয়ে দিবে আর উনার অধিকার খাটানো তো আছেই
– উনি আপনাকে খুব ভালোবাসে
– বাদ দিন এখন তো সব ক্লিয়ার, আমার মনে হয় এখন যাওয়া দরকার
– হুম চলুন
সামনে হাটতে গিয়ে একটা ইটের সাথে পা লেগে গেল যেই পড়তে গেলাম ওমনি দিহান আমার হাত ধরে ফেলল আর বলল,,,
— আপনি ঠিক আছেন তো
— হ্যা থ্যাংকস
–হুম সাবধানে চলুন
হঠাৎ কোথা থেকে কাব্য এসে উনার হাত থেকে আমার হাতটা ছাড়িয়ে, দিহানকে একের পর এক ঘুষি দিয়েই যাচ্ছে আর বলছে,,,সাহস কি করে ওর হাত ধরার সাবধান করে ছিলাম না।
আমি গিয়ে উনাকে থামতে বলছি কিন্তু উনি মনে হয় আমার কোনো কথাই শুনতে পারছে না নিজের মতো মেরেই চলেছে, এবার উনাকে এক ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দিলাম।উনি আর কিছু না বলে চুপ হয়ে গেলেন, আমি গিয়ে দিহানকে উঠালাম,,,,
–আপনি ঠিক আছেন তো আই এম সো সরি
— না না আমি ঠিক আছি আর মিস্টার কাব্য আপনি ভুল ভাবছেন, আমি আর ও এখানে এসে ছিলাম সব কিছু ক্লিয়ার করার জন্য আর কিছু না।
আমি রেগে কাব্যের দিকে তাকিয়ে বললাম,,আপনি কাকে বুঝাছেন এই লোকটা এমনই উনার ঠিক ভুল বুঝার কোনো ক্ষমতা নেই উনি নিজে যা ভাবেন তাই ঠিক।কাব্য আমার কাছে এসে বলতে লাগলো,,,আই এম সরি আমি আসলে তোমাদের এক সাথে দেখে মাথা ঠিক রাখতে পারি নিই।আমি উনার দিকে তাকিয়ে বললাম,,,আমাকে সরি বলছেন কেন না বুঝে যার গায়ে হাত তুলেছেন তাকে সরি বলেন।
উনি দিহানের কাছে গিয়ে বলল,,,,,
– আই এম রিয়েলি সরি দিহান
– না না সরি বলার প্রয়োজন নেই আমি বুঝতে পারছি
– আপনার খুব লেগেছে
উনি সামান্য হেসে বললেন,,,,,তেমন লাগে নিই আবার কমও লাগে নিই।
তারপর দুজনই হেসে দিল কাব্য আবার সরি বলল,আমি দিহানকে আল্লাহ হাফেজ জানিয়ে কাব্যের দিকে রেগে তাকিয়ে চলে আসলাম পিছন থেকে কাব্য ডেকেই চলেছে কে শোনে কার কথা গাড়িতে উঠে বাড়িতে চলে আসলাম।
রাতে খাবার টেবিলে মা হঠাৎ বলল,,,ইতি শোন।আমি মার দিকে তাকিয়ে বললাম,,,,কি হয়েছে মা।মা আমার দিকে ফিরে বললেন,,,,,কাল সন্ধ্যায় রেডি থাকিস আমি কাল তাড়াতাড়ি চলে আসবো। আমি অবাক হয়ে বললাম,,,কেন কোথায় যাব।মা বলল,,,,কাব্যর বাড়ীতে। কথাটা শুনেই কাশি উঠে গেল মা তাড়াতাড়ি পানির গ্লাস দিল পানি খেয়ে একটু শান্তির নিশ্বাস ছাড়লাম। মা বলল,,,,কি হয়েছে হঠাৎ এমন কাশ ছিলি কেন। মার কথাটা বাদ দিয়ে বললাম,,,আগে তুমি এটা বল ওখানে যাব কেন?
মা আমার দিকে তাকিয়ে বলল,,,,কাল কাব্যের জন্মদিন তাই আমাদেরও যেতে বলেছে। আমি মার দিকে তাকিয়ে বললাম,,,,মা আমি যাব না তুমি যেও। মা ভ্রু কুচকে বলল,,,,যাবি না মানে কেন যাবি না।আমি সামান্য হেসে বললাম,,,,এমনি। মা এক ধমক দিয়ে বসিয়ে দিল আর স্পষ্ট কন্ঠে জানিয়ে দিল যেতেই হবে। আর মাকে কিছু বলে লাভ নেই।
ওয়াসরুম থেকে বের হয়ে আয়নার সামনে মুখ মুছতে লাগলাম হঠাৎ পিছন থেকে আমাকে কাব্য বলল,,হায়।আমিও সাভাবিক ভাবে তাকিয়ে বললাম,,,হ্যালো।।বলে আবার মুখ মুছতে লাগলাম হঠাৎ হুশ ফিরলো অবাক হয়ে তাকিয়ে বললাম,,,আপনি।
উনি আমার দিকে তাকিয়ে বলল,,,হ্যা আমি।একটু রেগে বললাম,,,আপনি এখানে কেন।উনি আমার দিকে ফিরে বলল,,,,
– তুমি কি এখনো রাগ করে আছো
– হ্যা শুধু রাগ না প্রচন্ড অসন্তুষ্ট আমি আপনার প্রতি
– আই এম সরি, বললাম তো তোমাদের ওমন ভাবে দেখে মাথা ঠিক রাখতে পারি নিই।
– তাই বলে এমন ভাবে একটা লোকে মারবেন, উনার যদি কিছু হয়ে যেতো।
– ওর এতে চিন্তা তোমার আমাকে নিয়ে কি একটু ভাবতে পার না, আমার কেমন লাগে, আমার কষ্ট টুক কেন বুঝো না তুমি।
বলেই নিশ্চুপ হয়ে এক আহত দৃষ্টিতে তাকালো, উনার দৃষ্টিতে না জানি কত কথা বুঝিয়ে দিচ্ছে আমায়।
হঠাৎ ঘড়িতে জোরে ঘন্টা বাজলো তাকিয়ে দেখি রাত ১২ টা, মনে পড়লো উনার জন্ম দিনের কথা, উনার দিকে তাকালাম উনি এখনো সেই এক দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকিয়ে আছে, হুট করে একটু হেসে বললাম,,,হ্যাপি বার্থডে মিস্টার ডেভিল।উনার মুখে এখন একটু হাসি ফুটলো আমাকে বলল,,,থ্যাংক ইউ।
– আচ্ছা আপনি রুমে আসলেন কিভাবে?
– তোমার বারান্দায় গ্রিল দেওয়া নেই আর দুতলায় হওয়ায় ওটা টা সহজ
– কি সাহস আপনার যদি পড়ে যেতেন আর কেউ দেখলে একদম চোর ভাবতো
– হুম কিন্তু কেউ দেখে নিই
– আপনি পারেনও, একটু দাড়ান আমি আসছি
– কোথায় যাচ্ছ
– আসছি
রুমে থেকে বেড়িয়ে মার রুমে উঁকি দিলাম দেখলাম মা দুনিয়ায় সকল চিন্তা ভাবনা ভুলে ঘুমের কোলে ঢুলে পড়েছে মার দরজাটা আস্তে করে লাগিয়ে দিলাম তারপর ফ্রিজের কাছে গিয়ে কেক বের করলাম, আজ সন্ধ্যায় মা চকলেট কেক এর কিছু পিস এনে ছিলো তার মাঝে একটা পিস রেখে ছিলাম সকালে খাবার জন্য, কেকের পিস টা আর একটা ছুরি নিয়ে গেলাম রুমে,উনি আমাকে দেখে হা হয়ে তাকিয়ে আছে, আমি কেকটা বিছানায় রেখে আবার রুম থেকে বের হয়ে একটা মোমবাতিতে আগুন জ্বালিয়ে নিয়ে আসলাম,উনার সামনে উনাকে ইশারায় বললাম ফু দিতে উনি সামান্য হেসে ফু দিল,তারপর ছুরিটা দিয়ে বললাম,,
– এই নিন কেক কাটুন
– তুমিও ধরো
– ওকে
তারপর দুজন কেক কাটলাম, উনি বাচ্চাদের মতো মুখ খুলে রেখেছেন, কেকটা নিয়ে কিছুটা লাজুক ভঙ্গিতে উনাকে খাইয়ে দিলাম, উনি কেক নিয়ে আমার মুখের সামনে তুললো, আর কিছু না বলে বেশ লাজুকতার সঙ্গে উনার হাত থেকে কেক খেলাম।উনি আমার দিকে মুচকি হেসে বললেন,,,জানো এটা আমার লাইফের বেস্ট বেস্ট বার্থডে উইশ ছিল এবার আমার গিফট।আমি অবাক হয়ে বললাম ,,,, গিফট এখন আমি গিফট আনবো কোথা থেকে।উনি মুচকি হেসে বললেন,,,,আমি কি জানি।
এখন চিন্তায় পড়ে গেলাম চোখ পড়লো আমার সামনে রাখা ছোট জোড়া দুইটি টেডি বিয়ার এর উপর, একটা ব্রাউন কালারের আর একটা হোয়াইট কালারের,ওখানে থেকে ব্রাউন কালারের টেডি বিয়ারটা নিয়ে উনাকে এগিয়ে দিয়ে বললাম,,,,এই নিন আপনার বার্থডে গিফট।
উনি ছোট ব্রাউন টেডি বিয়ারটা হাতের মুঠে নিয়ে মুচকি হেসে বলল,,,থ্যাংকস ফোর দিস।উনি আবার বললেন,,,,,, তোমার রুম দেখে কেউ বলবে তুমি এত বড় একটা মেয়ে।আমি ভ্রু কুচকে বললাম,,,, কেন কেন আমার রুমে কি সমস্যা আছে।উনি সামান্য হেসে বলল,,,,এই যে চার পাশে টেডি বিয়ার দিয়ে ভরা।আমি চোখ ছোট করে বললাম,,,,,আমার টেডি বিয়ার খুব পছন্দ তাই চার পাশে এত টেডি বিয়ার, টেডি বিয়ার গুলি অনেক কিউট হয় ।
উনি হেসে বললেন,,,,,, হুম তোমার মতো।আমি উনার কথা শুনে ভ্রু কুচকে তাকালাম আর বললাম,,,,অনেক রাত হয়েছে আপনার এখন যাওয়া দরকার।উনি বললেন,,,,,হুম যাচ্ছি কিন্তু যেই কারণে আসলাম তাই তো ভুলে গেলাম মাফ করে দিয়েছো তো আমাকে।আমি উনার দিকে তাকিয়ে বললাম,,, না আপনার বার্থডে তাই নরম ব্যবহার করছি। উনি বললেন,,,তাহলে কবে তোমার এই রাগ যাবে।আমি একটু ভাব নিয়ে বললাম,,, আমি কি জানি।উনি এবার মুচকি হেসে বললেন,,,,, ওকে আমার এখন যাওয়া দরকার আর এই গিফটা আমার কাছে সব সময় থাকবে যত দিন এই দেহে প্রান আছে।উনার এমন রোমিও মার্কা কথা শুনে পেট ফেটে হাসি পাচ্ছে তাও নিজেকে কন্ট্রোল করে রাখলাম।উনাকে বললাম,,,,আপনার ডাইলোগ শেষ হলে এবার বলুন আপনি কিভাবে যাবেন।
উনি আমার দিকে ফিরে বললেন,,,,বারান্দা দিয়ে।আমি বললাম,,,,,, না না ওখান দিয়ে যেতে হবে না মা ঘুমাচ্ছে মেইন ডোর দিয়ে যান।উনিও বললেন,,, ওকে।উনাকে দরজার বাহিরে নিয়ে বললাম,,,,,,এবার আপনি আসুন।উনি বললেন,,,, ওকে কিন্তু শোনো কাল কিন্তু তুমি আমাদের বাড়ীতে যাবে আর আবার ও অসংখ্য ধন্যবাদ আমাকে এত সুন্দর কিছুটা মুহুর্ত উপহার দেওয়ার জন্য।উনার কথা কি রিয়েক করব বুঝে পাচ্ছি না হাসিটাকে আটকাতে চাইলাম কিন্তু এই অবাধ্য বেহায়া হাসি মুখ ফুটে বেড়িয়েই আসলো,,,,
চলবে,,,,,,,
ভুলক্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন
(পার্ট_০৭)
চলবে,,,,,,,,,,,,,,,
ভুলক্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন
/