নিশীথচিত্র পর্ব ৪৭+৪৮+শেষ

‘নিশীথচিত্র'(৪৭)
ইসরাত আয়রা ইচ্ছে

____________

সূর্য অস্তমিত হলো যেনো একযুগ সময় নিয়ে।বুকের মধ্যে হাহাকার আর চোখ দিয়ে অনবরত পানি ঝরছে। ফ্লোরে বসে থাকতে থাকতে হাত পা শিথিল হয়ে গেছে।সেদিকে খেয়ালই নেই রিনির।জানালা দিয়ে আকাশের দিকে তাকিয়ে আছে ফ্যালফ্যাল করে।চোখে এক সমুদ্র নোনাজলে চুপচুপে।গলা দিয়ে আওয়াজ বের হচ্ছে না কোনো।শব্দ করে কাদতে পারছে না।শক্তি থাকলে তো!রিমি দুবার খাওয়াতে এসেছিলো। খাবার হাত দিয়ে ঠেলে ফেলে দিয়েছিলো সে।হৃদপিন্ডে খানিকক্ষণ পর পর ছুড়ি চালানোর মতো কষ্ট হচ্ছে আর তারা আসছে খাওয়াতে।হাত পা ছড়াছড়ি করে আবার শান্ত হয়ে ফ্যালফ্যাল করে তাকাচ্ছে।কানে আসছে লোকজনের সমাগম।

আটটা কি নয়টা নাগাদ রেহানা তাজিমকে ঠেলে রিনির রুমের ভেতরে প্রবেশ করিয়ে দিলো।তাজিম ইতস্ততবোধ করছে।রিনির সামনে দাড়ালো।চোখ বন্ধ করে আছে রিনি।চোখ ফুলে ঢোল।।তাজিম ঝুকে রিনির কাধে হাত রাখলো।রিনি ভয়ও পায় নি বিস্ময়ও লাগে নি।সে স্বাভাবিক দৃষ্টিতে মাথা ঘুড়িয়ে তাকালো।কি টকটকে লাল চোখ।তাজিম সে দৃষ্টিতেই কেপে উঠলো।সে চোখে কি যেনো ছিলো।রিনি সারাদিনে মুখ ফুটে এই কথা বললো

–“দিহান ভাই কোথায় জানো তাজিম ভাইয়া?”কন্ঠস্বরও যেনো নেতিয়ে গেছে রিনির।

পরিবেশ স্বাভাবিক রাখা দরকার। রিনির মুখে দিহানের নাম শুনে সহ্য হচ্ছে না তবুও মানতে হবে।এই নাম চলবে হয়তো আজীবন রিনির মুখে।কিছু করার নেই।

–“স্টেশনে দেখেছিলাম কোলে করে নিয়ে যাচ্ছে দুজন।”

–“আর কিছু দেখো নি?”

–“না।”

–“বাসার কেউও দেখেনি?”

–“জানা মতে দিহানের খবর কেউ নেয় নি। ”

–“ও আচ্ছা। ”

–“তোমার সাথে আমার কাল বিয়ে?”

তাজিমের অসস্তিবোধ বাড়ছে।বললো

–“হ্যা।”

–“আচ্ছা।তোমার ফোনটা দেয়া যাবে?”

–“হ্যা হ্যা কেন নয়।আগে বিছানায় চলো।ওঠো।”

–“আচ্ছা।”

তাজিম ধরে উঠাতে গেলো।রিনি হাত দিয়ে থামিয়ে দিলো।বিছানার পাশ ধরে নিজেই উঠে বসলো। তাজিম নিজের ফোন এগিয়ে দিলো।রিনি ফোনটা হাতে নিয়ে দুহাতের মুঠোয় শক্ত করে চেপে ধরলো।দৃষ্টি তার নিচের দিকে।তাজিম বিছানার পাশে বসতে গেলে রিনি থামিয়ে দিয়ে বললো

–“আমার জন্য কিছু খাবার আনতে পারবা?তুমি আনবা নিচে গিয়ে।আর কেউ যেনো আশপাশেও না আসে।”

তাজিম অত্যন্ত খুশি হলো। তাজিমের কাছে রিনি খেতে চেয়েছে তা শুনে তাজিমের থেকে বেশি খুশি হয়েছে রেহানা।তাজিমকে নিয়ে নিচে চলে গেলো।আর তার থেকেও বেশি খুশি হয়েছে রিনি।কুট কুট করে কল লাগালো দিহানের ফোনে।নট রিচাবেল।দিহানের বাবা মা। নাহ কেউ ফোন তুলছে না।রিনির বুকের ভেতরে কি যে যন্ত্রণা নামক ভয়!

দীপ্তির নাম্বারে কল দিলো।তিনবারের বার রিসিভ হলো।

____________

সকালে এক ঝাক মেয়ে এসে রিনিকে সাজানো শুরু করলো।মেকাপের পরতে চোখের নিচের দাগ ঢেকে গেলো।চোখের ফোলা পাতা ঢেকে সুন্দ রংচঙয়ে রূপ নিলো।অগোছালো চুলগুলো সুন্দর খোপা করা হলো।কাদতে কাদতে শুকনো ঠোঁটটা টকটকে গাড়ো খয়েরী লিপ্সটিকে প্রানবন্ত হয়ে উঠলো।নাকে নথ ঝুললো।পুরো কান জুড়ে কানের দুল।টিপ পরাতে চাইলেও পরলো না। তার দিহান ভাই পছন্দ করে না।সুন্দরভাবে খয়েরী কাজ করা শাড়ি পরানো হলো।কপালে টিকলি।গলায় ঝুললো কতো রকমের হার।মিলিয়ে খয়েরী পরী।আর কষ্টের স্বাক্ষী রইলো লাল চোখ জোড়া। সেটা কিছু দিয়ে আর ঢাকা গেলো না।

মানুষ আর মানুষের সমাগম। বাচ্চাদের লাফালাফি চিৎকার চেচামেচি। সবাই হাসছে।পুতুলের মতো শক্ত হয়ে বসে আছে সে।নারীর কি অভাগা কপাল না?বিয়ে নিয়ে লাফালাফি করলে চক্ষু লজ্জা নেই আর বিয়েতে অস্বাভাবিক ভাবে কথা না বলে চুপ থাকলেই গুঞ্জন শুরু হয়।এই বিয়েতে মেয়ের মত নেই, প্রেম ট্রেম করে হয়তো।হাহা। সে হরেক কথা।এমন গুঞ্জন রিনিকে নিয়েও হচ্ছে।আর আমাদের সমাজ তাদের প্রচলিত ধারাও বিদ্যমান রেখে সমালোচনা করছে।রিনির মা ভীষণ খুশি।লাফিয়ে লাফিয়ে কাজ করছে।মেয়ে সেজেছে মানে বিয়ে নিয়ে আর চিন্তা কিসের?

এই তো আসরের নামাজ আদায় করেই বিয়ে।রিনিকে রুম থেকে বের করে আনা হলো।বিয়ের কবুল পর্ব চুকলেই বাসর ঘরটা সাজানো হবে রিনির রুমে।রিনি চোখ মেলে দেখছে। তার বাবা ঘরটাকে সেই ভাবে সাজিয়েছে।চকচক করছে, গান বাজছে।রিনির মনেও গান বাজছে।বেদনার।হুহঃ

সব পুরুষ লোক এক সময়ে বসলো।ঝাকঝমক খয়েরী পাঞ্জাবিতে বসলো তাজিম।ঠোঁটে লেগে আছে হাসি।রিনি শুধু মায়ের দিকে তাকিয়ে আছে।ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে আছে মায়ের দিকে।রেহানা যেদিকে যায় সেদিকে চোখ ঘুরিয়ে তাকিয়ে থাকে রিনি।রেহানার অস্বস্তি লাগছে।মেয়ের দিকে তাকিয়ে জোরপূর্বক হাসছে । রিনির চোখ দুটো অসম্ভব লাল অসম্ভব।

কাজী তার কর্ম শুরু করলো।সেই আগের কাজীই।তাকে বলা হয়েছে স্বামী মারা গেছে তাই মেয়ের শোক কাটাতে আবার বিয়ের আয়োজন। তাজিমকে কবুল বলতে বললো। সে খুব একটা দেরি করে নি। রিনির দিকে এক পলক তাকিয়ে ছোট্ট নিশ্বাস ফেলে বলে দিয়েছে কবুল।রিনির পালা।রিনির থম মারা মুখটায় একটা শুকনো রহস্যজনক হাসি ফুটলো।সে হাসি চোখ এড়ালো না রেহানার, এড়ালো না মুনিরের, এড়ালো না শাহানারার, এড়ালো না তাজিমের। কারোও চোখ এড়ালো না।অদ্ভুত হাসি।রিনির হাসির আওয়াজ বাড়ছে। আশ্চর্য চোখে এখন রুম জুড়ে বাচ্চা বুড়ো চল্লিশ পঞ্চাশ জনের সবার চোখ রিনির দিকে। বিয়ের কনে কবুল বলার সময় হাসছে।অদ্ভুত না?

রেহানার পিলে চমকে ওঠে কেন জানি।অচিরেই বিপত্তি ঘটে।রিনি হাসছে অনেক জোরে হাসছে।পিনপতন নিরবতার মাঝে বিয়ের কনের হাসি বেমানান।অবিলম্বে রিনি বললো

–“আচ্ছা মেয়েদের এক স্বামীর সাথে তালাক না হওয়া অব্দি বিয়ে হয়?”

অবুঝ বাচ্চার মতো মুখ করে কথা বলছে রিনি।কাজী বললো

–“না মা।কিন্তু তোমার স্বামী মারা গিয়েছে এখন আর তালাকের প্রয়োজন নেই।”

–“ওহ হো আপনিই তো আমার বিয়ে পরিয়েছিলেন।”

আত্মীয়দের মাঝে ফুসুরফাসুর শুরু হয়ে গেছে।অনেকেই জানতো না বিয়ে হয়েছে রিনির।

–“কাজী আংকেল আমার স্বামী মারা যায় নি।তবুও আমার মা আমাকে বিয়ে দিচ্ছে আমার স্বামীর অঢেল সম্পত্তি নেই বলে।আমার মা আমাকে অনেক ভালোবাসে তাই না?”

কাজীর চক্ষু চড়কগাছ। শব্দ করে বললো “ওসতাগফিরুল্লাহ”

–“আমাকে এই পাপ কাজে ডাকলেন মুনির সাহেব।”

রিনি ঠোঁট উল্টালো।অস্বাভাবিক ভাবে বললো

–“হ্যা কাজী আংকেল।”

সবাই বাক শক্তি হারালো।রিমি কানের কাছে এসে বললো

–“একটা কথা বলবি না আর রিনি। চুপ কর।বাবা মায়ের মানসম্মান নষ্ট কেন করছিস?”

রিনি বিচলিত হলো না।সে দ্বিগুন স্বাভাবিক ভাবে বলা শুরু করলো কিন্তু তার কথা উপস্থিত সকলের কাছে অস্বাভাবিক। বললো

–“মারুফ ভাই মরে গেছে। তুই বিধবা হয়েছিস তোর বাচ্চা বাবা ছাড়া হলো সাত আট মাস বয়সে বাবা ছাড়া হলো।এরপর তোর বাচ্চাকে মেরে ফেলা হবে।ব্যাপারটা ইনজয়েবল না?”

রিমির চোখ বড় বড় হয়ে গেলো।

–“তুই আমার বোন হয়ে স্বামী সন্তান নিয়ে এভাবে বলতে পারলি?মা রিনি এভাবে বলতে পারলো আমাকে?”

রিনি রহস্য করে হাসলো

–“তোরটা স্বামী আর আমারটা কি ছিলো?আমার স্বামী না? নাকি ফ্যামিলি স্টাটাসে না মিললে স্বামী পরিচয় দিতে নেই সেই ছেলেকে?তোর সন্তান পৃথিবীতে এসেছে তাই ওর বাবা অপূর্ণতা ওর হবে।।আর সন্তান পেটের মধ্যে পাঁচ মাস তাই বাবা হারানোর কোনো প্রভাব পরবে না অপূর্ণতাও হবে না? তাই না?”

শেষ কথায় রিনি অস্বাভাবিক ভাবেই চিৎকার দিলো।উপস্থিত সবাই হতভম্ব রিনি প্রেগন্যান্ট? আপাতত মজা নিতে ব্যস্ত পরে সমালোচনা করা যাবে।মুনির মাথা হেট করে নিচের দিকে তাকিয়ে রইলো।

রিনি আবার হাসলো।আবার রিমির দিকে তাকিয়ে বললো

–“তোর বাবা মার পেটের সন্তান আমিও।দেখ না তারা সন্তানের এতো ভালো চায় যে একবার অঢেল টাকার বাড়িতে বিয়ে হয় নি বলে। বিয়ের কাগজপত্র ছিড়ে বিয়েটাকে ধামাচাপা দিলো।এরপর মেয়ের সুখের জন্য অঢেল টাকা ওয়ালা বাড়িতে বিয়ে দিচ্ছে।”

রিনি খানিকক্ষণ থেমে রইলো।আবার বললো

“তোর বাবা মা আমাকে কতো ভালোবাসে দেখেছিস?যখন দেখেছে আমি অন্যায় ভাবে পেটে সন্তান এনেছি তখন হাতের কাছে পেয়েছে আমার স্বামীকে। আমার স্বামী বললো সে আমাকে বিয়ে করবে।ফ্রিতে পোয়াতি মেয়েকে বিয়ে দেয়ার জন্য তখন মেধাবী নিম্নমধ্যবিত্তের সাথেও তখন বিয়ে দিতে রাজী হলো তোর বাবা মা।আমার মনে হচ্ছে তখন ফকিরের সাথেও বিয়ে দিতো বুঝলি রিমি আপু।কিন্তু যেই সে পোয়াতি মেয়ে জন্য সম্মন্ধ বড় ঘর থেকে পেলো তখন আর তোর মা বাবার লোভ সইলো না।কান লাগাতে লাগাতে আরও কারণ খুজে পেলো যে আমার সন্তানের সত্যিকারের বাবাও আমার স্বামীই। বুঝেই গেলো সেই ছিলো আমার প্রেমিক পুরুষ ।আমার স্বামী স্বীকারও করেছিলেন।প্রথমে স্বীকার করে নি কারণ তাহলে তোর বাবা মা মেনে নিতেন না।অপরাধবোধে দগ্ধ হতে দেখেছি আমি তাকে।আর সেই মানুষটাকে আমার ননদকে বস্তির মানুষের ভাষায় গালি দিয়ে তাড়ালো তোর মা।আমার স্বামী আবার এলো।বললো যোগ্য হয়ে দেখাবে আমাদের পরিবারের। লাগলে সন্তানটাকেও সেই বড় করবে। নাহ তোর মা আমার সন্তানের জন্মের সময়েই মেরে দেবে এই সিদ্ধান্তে অচল।এরপর তোর শাশুড়ীও লোভ সামলাতে পারলো না।একঘরে দুই ছেলে দেবে সব সম্পত্তি তাদের তাহলে।আর তোর মা ও বলতে পারবে বড় ঘরে দিয়েছে দুই মেয়েকেই।এই নাম কামানোর জন্য নিজের মেয়েকে অর্থ সম্পত্তির কাছে বেচাকেনা করলো নিচ মানুষের মতো।”

শেষ বাক্যটা বলার সময় আবার রিনি অস্বাভাবিক ভাবে চিৎকার দিলো।চিৎকার আর থামলো না।ক্রমশ বাড়লো।

–“মানছি আমরা ভুল করেছি।তবে কাপুরুষের মতো সে পালায় নি সম্পর্কটাকে পবিত্র করেছে।এই বিয়ে করবো না বলে স্বামীর হাত ধরে পালালাম। কোর্টে গিয়ে আবার বিয়ে করলাম।ট্রেনে উঠার সময় আমার স্বামীটা…..”রিনির কন্ঠ মিয়িয়ে গেলো খানিক।আবার তেজি গলায় বললো

–“আমার স্বামীটা আমাকে পরে যেতে দেখে চলন্ত ট্রেন থেকে লাফ দিলো।রক্তে মাখামাখি ছিলো জানিস?আর আমার বাবা মা সেই অবস্থা দেখেও অমানুষ কুত্তার মতো আমাকে নিয়ে চলে এলো আর বিয়েও দিচ্ছে। ভালোবাসার মানুষ সে, আমার আমার স্বামী স, আমার সন্তানের বাবা সে।আর তোর এই মা এতো নিচ এতো নষ্ট যে আমাকে আবার।”

রিমি রিনির গালে থাপ্পড় বসালো।

–“একটা কথা বলবি না আর তুই।”

রিনির তেজের মধ্যে রিমির থাপ্পড় সহ্য হলো না।হিতাহিত জ্ঞানশূন্য সে।রিমির গালে থাপ্পড় উঠালো। আবার হাত ফিরিয়ে নিলো। বললো

–“আমি এখন তোর মায়ের মতো নিকৃষ্ট মহিলাকেও থাপ্পড় মারতে পারি। কোন সাহসে তুই আমার গায়ে হাত তুলছিস?আসলে মা যেমন মেয়ে আর কেমন হবে!তোর আর তোর মায়ের স্বামী হসপিটালে মৃত্যুর মুখে দাড়িয়ে আছে আর তোরা বিয়ে কর পারলে।কর। কর।আমাকে বিয়ে দিচ্ছিস তোরা বিয়ে কর।ওহ না তোদের স্বামী তো আবার বড়লোক। ”

রিনি সরাসরি বাবা মা বলে সম্মোধন করছে না।রিনি গটগট করে হেটে রেহানার সামনে গেলো।তার চোখে পানি।

রিনি সম্মোধন করলো এভাবে

–“রিমির মা তোমার মতো মানুষের চোখে পানি যে?”

রিনি হাসলো।বললো

–“দেখি সন্তানকে মা বাবা ত্যাজ্য করে।আজ আমি আমার বাবা মাকে ত্যাজ্য করলাম।ত্যাজ্য করলাম।তোমরা আমার বাবা মা না।এতো নিকৃষ্ট, স্বার্থলোভী, নিচু মনের মানুষ আমার বাবা মা না।বিবাহিত মেয়েকে যে বিয়ে দিতে পারে শুধু বড় গলার করে বলার জন্য এতো বড়ো পাপ করতে পারে।তার সাথে তার সন্তান এতোটুকু পাপ করতেই পারে।সামান্য পাপ করেছি। পাপির সন্তান পাপ তো করবেই।তবে যোগ্য শাস্তি দিয়েছি।”

রিনি তাজিমের দিকে ফিরলো।চোখে চোখ রেখে বললো

–“আর হ্যা তাজিম ভাই আপনার মেয়ের অভাব হবে না। আপনার লোভী মাকে স্বান্তনা দিয়ে নিশ্চয়ই বলবেন যে মা আমার হাজার খানেক গার্লফ্রেন্ড আছে। একটা বিয়ে ভাঙলে তোমার পুত্রবধূর অভাব করবে না কখনও।কিন্তু দিহান ভাইয়ের রিনি গেলে তার জীবনে আর কেউ রিনি হয়ে আসবে না।”

রিনি আবার রেহানার দিকে ফিরলো

–“আমার মধ্যে যে তেজ দেখলে সেটা নারীত্ব,মাতৃত্ব।আর একজন স্ত্রীর শক্তি মা।মা বলে শেষ ডাক এটা। নারীকে অবলা ভেবো না । আল্লাহ হাফেজ। ”

রিনি হেলতে হেলতে সদর দরজা দিয়ে বেড়িয়ে গেলো।কেউ আটকালো না।রেহানা ধপ করে পরে গেলো ফ্লোরে।

______________

গেটের বাইরেই দাঁড়িয়ে আছে একজন।রিনি শুকনো হেসে তার কাছে এগিয়ে গেলো। সে বিস্ময় চোখে তাকিয়ে রইলো।রিনি ভেজা গলায় বললো

–“তনয় ভাই আপনার শালার পেছনে কি খুব দৌড়াতে হচ্ছে?আপনার চোখে কি ক্লান্তির ছাপ!বেশি ভালো নেই আমার দিহান ভাই তাই না?”

তনয় শুধু বললো

–“এলে কিভাবে সবার মধ্য থেকে?”

রিনি ছোট্ট করে বললো

–“এসেছি। ”

শুকনো হেসে উদাস চোখে তাকিয়ে বললো

–“একেবারে চলে এসেছি।”

–“সার্টিফিকেট গুলো নিয়ে আসতে তাহলে।”

–“দিহান ভাই নিয়ে গেছিলো আগেই।”

–“চলো।”

–“হুম।”

রিনি বিরবির করে বলতে লাগলো

–“সবার দায়িত্ব নেয়া লোকটা নিজেই অন্যের দায়িত্ব হয়ে গেলো।”

চলবে
‘নিশীথচিত্র'(৪৯)
ইসরাত আয়রা ইচ্ছে

_______________

জীবনের খারাপ অধ্যায়গুলো অতিক্রম অনেক যুগ নিয়ে হলেও সুখকর অধ্যায়ের রেশ বেশি সময় ধরে থাকলেও মনে হবে যেনো চোখের পলকে কেটে গেলো সবটা সময়।সুখকর সময়ের বহতা খুবই দ্রুত।ভালোবাসাতে হলে ভালো রাখতে জানতে হবে।যারা ভালোবাসার অমৃত পান করেনি তারা বুঝবেই না কোন স্বর্গীয় অনুভূতি থেকে তারা বঞ্চিত। তাই তো প্রেম বেদনা কিছু দিয়েই লাভব করা যায় না।প্রতিনিয়ত আত্মঘাতীর মতো সিদ্ধান্ত নিচ্ছে যারা ভালোবাসা হারাচ্ছে, ভালোবাসা শিখিয়ে নির্মম ভাবে বড্ড একা করে চলে যাচ্ছে কিংবা সামাজিক পারিবারিক প্রতিকূলতায় বিচ্ছেদ হতে হয়েছে।সেই একাকিত্ব মানুষগুলো যে কতটা অসহায় হয়ে পরে বোঝা যায়। কারণ যতই বলা হোক বুঝি কিন্তু পরিস্থিতির মুখোমুখি না হলে সে বুঝবে এটা ভাবাটাও নেহাত বোকামি।

স্বর্গীয় অনুভূতি থেকে বঞ্চিত হলে যে কতোটা কষ্টের মধ্যে নির্গত করা হয় তা তো বলা বাহুল্য। তাই ভালোবাসাকে ভালো রাখতে হবে।কারণ ভালো থাকাটাই মূলে।এসব মেনেই কেটে গেলো কয়েক মাস।

জ্ঞান ফিরে এসেছে রিনির । চোখর পল্লব কুচকে উঠেছে।চোখ খোলার পালা এইবার।রুম থেকে সবাই বের হয়ে গেলো।দিহান অধীর আগ্রহে রিনির মুখের দিকে তাকিয়ে আছে।রিনি পিটপিট করে চোখ দুটো খুললো। আবছা থেকে পরিষ্কার হচ্ছে আস্তে আস্তে চারপাশের পরিবেশ।যতই পরিষ্কার হচ্ছে ততই দেখা যাচ্ছে ফুলের সমারহ।গায়ের উপরের সাদা চাদরটা খিচে চেপে ধরলো।কিন্তু সেখানেও হাতের মধ্যে পিষ্ট হচ্ছে একটা ফুল।রিনি হাত ঢিলে করলো।অসুস্থ হওয়ার পর হসপিটাল এসেছিলো।তাহলে তার কোলে বাবু থাকার কথা এতো ফুল কেন?ফুল দিয়ে কিছু একটা লেখা আছে।ডান হাতে চোখ মুছলো অতঃপর তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে পড়ার চেষ্টা করলো।ফুল দিয়ে ভালোবাসি লেখা সাদা বোর্ডে।তখনই কর্ণকুহরে প্রতিধ্বনিত হলো ভালোবাসি কথাটা। দিহান পাশে বসেই মোহনীয় কন্ঠে ভালোবাসা বিনিয়োগ করলো।রিনির তব্দা লেগে গেলো।পাশ ফিরে মানুষটাকে দেখলো।ভালোবাসি বিনিয়োগ এমন পরিপূর্ণ সময়ে হবে কল্পনার বাইরেই ছিলো।দিহানের কোলে একটা বাবু। বাবুটা কি তার?স্বপ্ন কিনা বোঝার চেষ্টা করলো।চারদিকে ভালো ভাবে তাকালো।ফ্লোরে ফ্লোরে, সামনের সাদা বোর্ডে এমনকি নিজের গায়ে দেয়া সাদা চাদরটার উপর স্থানে স্থানে তাজা, সতেজ লাল গোলাপ।চোখে অশ্রু চিকচিক করে উঠলো।মাথা তুলে দিহানের দিকে ফিরলো।দিহান তার বেডেই বসেছে এবার। এক হাতে রিনিকে উঠে বসতে সাহায্য করলো।অন্য হাতে নিজের সন্তানকে সামলে ধরে আছে।রিনি নির্বাক , ভাষা ভুলে গেছে সে।দিহান তাকিয়ে দেখলো বাবুটা চোখ খুলে পিটপিট করছে।দিহান হেসে সন্তানের হাতে একটা কাঠ গোলাপ গুজে দিলো।ছোট ছোট নরম আঙুল গুলো আকড়ে ধরা ভালোই বোঝে।জন্মের পর থেকে তারা আঁকড়েই ধরে ছোট ছোট আঙুলগুলো দিয়ে।সন্তানের মুঠ করা হাতটা নিজের মুঠের মধ্যে নিয়ে কাঠ গোলাপটা রিনির দিকে ধরলো।রিনি এবার শব্দ করেই কেদে উঠল।

দিহান হেসে বললো

–“আমি এবং নিশীথিনী দুজনেই তার মাকে ভালোবাসি বলছি।সে গ্রহণ করবে কি?নাকি কাদবে শুধু?”

রিনি চোখ মুছে গোলাপটা নিলো।দিহান সাথে সাথে নিশীথিনীকেও আলতো করে রিনির কোলে দিলো।রিনি আবারও কেদে ফেললো।গুরগুর চোখ করে দেখছিলো নিশীথিনী। মায়ের কান্না দেখে সেও কান্নার শুরু করে দিলো।তার কান্না দেখে রিনি থেমে গেলো।দিহান হেসে রিনিকে জড়িয়ে ধরলো।রিনি কান্নারত বাচ্চারটার দিকে ড্যাবড্যাব চোখে তাকিয়ে আছে।কি নরম, ছোট ছোট আঙুল।মুখ ফুটে বললো

–“লাল লাল গাল ওয়ালা বাবুটা আমাদের দিহান ভাই?এই নাম কবে রাখলেন?আমার তাহলে মেয়ে বাবুই হয়েছে?আমি স্বপ্ন দেখছিলাম ছেলে বাবু।আর আপনি স্বপ্নে বলছিলেন আমার প্রিন্সেস কই পাবো।দেখেন প্রিন্সেস।”

দিহান নিশীথিনীর ছোট্ট গালে একটা আঙুল আদুরে ভঙ্গিতে চালিয়ে দিতে দিতে বললো।

–“যেদিন শুনেছি আমাদের সন্তানের অস্তিত্ব এসছে।সেদিনই রেখেছি নাম।”

–“বুঝলেন কীভাবে মেয়ে হবে?”

–“ছেলের নামটাও ঠিক করে রেখেছিলাম।ছেলে হলে নিশীথ রাখতাম।কিন্তু এসেছে আমার মা তাই নিশীথিনী ।”

দিহানের চোখে পানি এলো।রিনি আবার খুশীতে কান্না করছে।তাই দেখে নিশীথিনী আবার কান্না জুড়ে দিলো।রিনি সন্তানের কপালে চুমু খেলো অমনি থেমে গেলো।আর একটা চুমু খেলো। দিহান চুমু খেলো রিনির গালে।দীপ্তি ঢুকে পরলো।দিহান উঠে দাড়াতে যাচ্ছিলো । দীপ্তি থামিয়ে দিলো।

–“ভাইয়া প্লিজ চুমু খা আবার রিনির গালে একটা ছবি তুলি।প্লিজ লজ্জা পরে পা।”

রিনি নিশীথিনীকে চুমু খাচ্ছে, দিহান রিনির গালে।দীপ্তিকে চিৎকার করে বললো

–“কি সুন্দর এই ছবিটা আমি বাধাবো।আহা সবাই সাদা পোশাকে।সাদার মতো পরিষ্কার জীবন হোক তোমাদের।”

–“খালি পাকা কথা যা।”

–“রিনির বেবি হয়ে গেলো আমি পাকা কথা বললে কি দোষ?গুণে দেখেছি রিনি আমার আড়াই মাসের ছোট। ”

–“তুই বের হবি?।”

দীপ্তি বের হতে গেলেই বললো

–“সব গোলাপ গুলো তোল।বাস্কেটটায় রাখ।”

দীপ্তি বিরবির করে বললো

–“সাজাতেও আমি আবার গোছাতেও আমি।কচু।”

ফুলগুলো তুলে বেতের বাস্কেটটায় রাখলো এরপর বের হয়ে গেলো।

–“ফুল তুলে ফেললাম। হসপিটাল তো।পারমিশন নিয়েছি কষ্টে।”

রিনি মিষ্টি হাসলো।নিশীথিনী কান্না শুরু করলো।থামছেই না।রিনি নাড়িয়ে চাড়িয়ে অসহায় মুখে দিহানের দিকে ফিরলো।

–“ওর হয়তো ক্ষুধা পেয়েছে।”

–“আমি কি করবো এখন?”

–“আচ্ছা দাড়াও নার্স ডেকে আনছি।”

–“কেন!”

–“তাহলে নিজেই ফিডিং করাও।আমি সাহায্য করছি।”

রিনি মিইয়ে যাওয়া গলায় বললো

–“আসলে আমার না লজ্জা লাগছে।”

দিহান রুম কাপিয়ে হাসলো।নিশীথিনী শব্দ পেলে আরও জোরে কান্না জুড়ে দিচ্ছে।রিনি অসহায় মুখে মেয়ে আর স্বামীর দিকে তাকালো।

____________

আটটা মাস কেটে গেলো সুন্দর ভাবে।হাসিতে কোনো কমতি ছিলো না রিনির। দিহান সব দিয়ে রিনিকে ভালো রাখার চেষ্টা করে।

রাত সাড়ে বারোটা। নিশীথিনীকে কোলে নিয়ে পড়ছে দিহান।রিনি সেই কখন কোলে দিয়ে গেলো আসার নাম নেই।বিছানায় সোয়ালে যদি ঘুম ভেঙে যায় তাই আর বিছানায় সোয়াচ্ছেও না।এমনিই রিনির প্রতি আজ ক্ষেপে আছে।পড়াশুনোয় নাম নেয় না এই মেয়ে।মাথা মোটাটাকে নিয়ে কিভাবে সংসার করবে সে?জোড়ে ডাকতেও পারছে না।যদি নিশী উঠে যায়।সে কোলে নিয়ে চেয়ার ছেড়ে উঠলো।দীপ্তির রুমের দরজার সামনে দাড়িয়ে দেখলো।দুজন ফোনে কি যেন দেখছে আর গড়াগড়ি দিয়ে হাসছে।

রিনির চোখ পরলো দরজার দিকে।দিহানের চোখ দেখে ভয় পেয়ে গেলো।বিছানা দিয়ে নেমে সুরসুর করে দিহানের পিছু পিছু রুমে চলে গেলো।নিশীকে কোলে নিয়ে বিছানার সাথেই পাতানো নিশীর জন্য কেনা ছোট্ট বিছানায় সুয়িয়ে দিল।তিনপাশ আটকানো বিছানা।পরে যাওয়ার চান্স নেই।মেয়েটা আজকাল মুরামুরি করে প্রচুর।উবু হয়ে হাটু দিয়ে দৌড়ের গতিতে ছুটতে পারে সে।দিহান দরজা আটকে ফ্রেস হয়ে বের হতেই রিনি চট করে ঢুকে গেলো দিহানের চোখ ফাকি দিয়ে। বিশ মিনিট পার হয়ে গেলো রিনি আর বের হয় না।দিহানের মেজাজ আরও বিগড়ালো।দরজায় ধাক্কা দিয়ে বললো

–“যদি ভাবো বাথরুমে সারা রাত ঘুমিয়ে কাটিয়েও পার পাবে তাহলে বড্ড বেশি ভুল করছো রিনি।”

ধমকে রিনির ঘুমের ঝিমুনি সরে গেলো।নাহ আর বসা যাবে না। মাথাটা দরজা দিয়ে বের করতেই দিহান টেনে বের করলো রিনিকে। ওত পেতে ছিলো স্ব।রিনি ঠোঁট উল্টে আছে।দৌড়ে পালাবে সে? এখন যদি পড়তে বসায়?

–“পড়তে বসো।”

রিনির মাথায় বাজ পরলো।ভাবার সাথে সাথেই কপাল পুরলো।সে আর কিছু ভাববেই না।

–“স্বামী ও স্বামী ও বর।”

রিনির আদুরে ডাক।আদুরে ডাকের মাঝে ছলনা ভরা দিহান জানে।না পড়ার ছলনা।

–“কাজ হবে না।পড়তে বসো।”

–“নিশী জ্বালাইছে।তাই পড়তে পারি নাই।”

–“নিশী আড়াই ঘন্টা ধরে আমার কোলেও।ও কি জ্বালাতন করতে পারে আমায় শুনাবা না।”

–“বিশ্বাস করেন ও আপনার কাছে ভদ্র সাজে।কি বান্দররে বাবা!নিজের মেয়েও আমাকে ছাড়ে না।”

–“এখন আট মাসের বাচ্চার দোষ?”

–“তাহলে ও আপনার কাছে ভদ্র মেয়ে কেন সাজে?আর আমাকে কেন কামড়ায়?দুইটা দাঁত দিয়ে আমাকে ফালা ফালা করব দেয়।”

–“ঠিক করে একদম।ওর দুষ্ট মা ওর নামেই মিথ্যা কথা রটায় তাকে যে কুচি কুচি করছে না এই কপাল।”

রিনি ঠোঁট উল্টালো।কেউ তার পক্ষে না।এ কেমন বিচার?অবশ্য সে নিজের ইচ্ছতেই পড়ে না।নিশী শান্ত বাচ্চা।নিজে নিজে খেলে গান গায় আঃআঃ করে।কোলে কোলে ঘুরে বেড়ায়।মোবাইলে গান ছেড়ে দিলে এক ধ্যানে সেদিকে তাকিয়ে থাকে।এতে পড়ার ক্ষতি হয় না খুব একটা ।মাঝে মাঝে কামড় দেয় অবশ্য।আর রিনির মতো দুষ্ট মা সেটাকে পড়া থেকে বাঁচার অযুহাত হিসেবে তিল থেকে তাল বানায়।এ আজ নতুন না।রিনি চট করে লাইট নিভিয়ে দিলো।দিহানকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো।

–“আমি আর পড়বো না দিহান ভাই।আমার লেখা পড়া করতে মন চায় না।”

এসব বলছে আর দিহানের গায়ে চুমু খাচ্ছে।দিহান থমথমে কণ্ঠে বললো

–“হ্যা তারপর তোমার মা বলুক তার মেয়েকে পড়ানোর মুরোদ নেই আমার।”

রিনি দিহানকে ছেড়ে লাইট জ্বেলে দিলো। বললো

–“কতোবার বলেছি আমার বাবা মা নেই।আমি এতিম।বার বার বাবা মা বাবা মা কেন করেন।অসহ্য।”

রিনি ধপ করে চেয়ারে বসে পরলো।ফরাত ফরাত বইয়ের পাতা উল্টে পড়া আরম্ভ করলো।দিহানও কপালে হাত দিয়ে বিছানায় সুয়ে পরলো।মিনিট বিশেক পরে উঠে রিনিকে চেয়ার থেকে কোলে তুলে নিলো। রিনি হাত পা ছুড়ছে।

–“এতো তেজ কেন?হু?” “সেই আগের পাতলু রিনি হয়ে গেছো।একটু আদর করে দেই?আমার কিন্তু তোমার কাছে লজ্জা টজ্জা নেই।”

রিনির ডায়ালোগ রিনিকেই ফেরায় এখন দিহান এখন।

–“ছাড়েন।আমি আদর করতে নিছি আমাকে সরাই দিছেন।এখন আমিও দেবো না।ছাড়েন।”

–“তাহলে পড়াশুনা কেন করে না আমার বউটা?”

রিনি ছটফট করছে।দিহান বিছানার সাথে চেপে ধরলো।

–“ছাড়েন দিহান ভাই। ”

–“আল্লাহ কবে না আমার মেয়ে আমাকে মামা ডাকা শুরু করে।তার থেকে কিছুই ডেকো না।”

রিনি ঠোঁট ফুলিয়ে বললো

–“আমি অন্য কিছু ডাকতে পারি নাহ।”

–“আচ্ছা ডেকো যা ইচ্ছা ডেক।তবে এখন না। আমার হর্নি হর্নিয়ার হর্নিয়েস্ট সব ফিল হচ্ছে প্লিজ স্টপ।আই উইল হিয়ার ফ্রম ইউ লেটার।”

–“কি সব পঁচা কথা।”

–“পঁচা উদ্যোগে পঁচা কথা বলা বাঞ্চনীয়।সব পঁচা হবে পঁচা পঁচা এবং পঁচা।

বলেই ফটাফট চুমু লাগাচ্ছে।রিনি লজ্জা পেলো।লজ্জা বাড়ছে তো বাড়ছেই।দিহান আরও লজ্জা দিতে ব্যস্ত।সর্বোচ্চ লজ্জায় ডুবালো তাকে।রিনির নিবারণ সরিয়ে ফেলো দিহান।ভালোবাসতে ব্যস্ত হয়ে গেলো। প্রত্যেকটা সকালের মতো মোহময় সকাল হবে তাদের আবার।আ

_____________

কাল নিশীর একবছর পূরণ হবে।দিহান সন্ধ্যায় বাসায় ফিরে এলো। ক্লান্ত চোখে মুখে পানি ছিটিয়েছে।দীপ্তি রিনি হাফসা সন্ধ্যার নাস্তা সাজিয়ে বসেছে।এমন সময় দরজায় নক পরলো।রিনি দৌড়ে দরজা খুললো।খুলে তব্দা হলো। কপালের চামড়া কুচকে একসাথ।গম্ভীর আওয়াজে বললো।

–“আপনারা কে? কাকে চাই?”

মুনির রেহানা মেয়ের কথায় ঘাবড়ে গেলো। কি বলবে না বলবে তা নিয়ে দ্বিধান্বিত । মেয়ের মুখ দেখেই বোঝা যাচ্ছে কিচ্ছু ভোলেনি।খাবার টেবিল চেয়ার ছেড়ে সবাই দাড়ালো। দিহান এগিয়ে এলো। রিনি যে কোনো কান্ড ঘটিয়ে বসতে পারে। এই মেয়ের রাগ তেজ সবটাই নাকের ডগায়।এই তেজের কারণেই আজ রিনি তার সংসারে,তার মনের সংসারে।এই তেজ টুকু না থাকলে কবেই তার বউ অন্যের ঘরে সংসার করতো। নিশ্বাস ফেলে রিনির কাধে হাত রাখলো।বোঝালো স্বাভাবিক হতে। মুনির রেহানাকে সালাম দিয়ে ঘরে আসতে বললো। রিনি বাধ সাধলো।

–“কেন তারা কে? এ ঘরে কেন আসবে?”

রিনি অপরিচিতদের মতো আচারণ করছে।

–“কি শুরু করছো রিনি? হচ্ছে কি এসব?আসতে দাও তাদের।”

রিনি চিৎকার দিলো।

–“পারবে না আসতে।কোন পরিচয়ে আসছে?”

রেহানা বললো

–“রিনি আমরা মাফ চাচ্ছি মা।তখন ভুল করেছি।”

–“কে মা?কার মা? আমার বাবা মা নেই কোনো। চলে যান আপনারা।”

দিহান ধমক দিলো এবার জোরে।

–“হচ্ছে কি এসব।কোন ধরনের অভদ্রতা এগুলো রিনি।”

–“আপনি চুপ করেন।আপনি মরে যাচ্ছিলেন আর এরা আমাকে বিয়ে দিচ্ছিলো।”রিনি রেহানা মুনিরের দিকে ফিরলো।বললো

–“কি গরীবের বাড়িতে আসলেন কেন?আপনাদের এখন স্টাটাসে লাগছে না?চলে যান। লোকে জানলে হাসবে আপনাদের উপর।চলে যান বলছি।”

দিহান দাঁত চেপে বললো

–“রিনি অভদ্রতার সীমা পার করছো।”

–“আমি একদম ঠিক করছি। আমি এই বিষয়ে আপনার কথাও শুনবো না।”

রেহানা কেদেই ফেললো। ফিরোজ হাফসা সবাই রিনির হয়ে মাফ চাচ্ছে।ঘরে ঢুকতে বলছে।রিনির জন্য কেউ পারছে না।সে কারো কথা মানতে নারাজ।

–“আচ্ছা তোর সন্তানটাকে একবার দেখতে দে।আমরা তারপর চলে যাচ্ছি। ”

–“আমার সন্তানেরও কাল জন্মদিন।দেড় বছ কেটে গেছে।অনেকটা দিন।অনেকগুলো দিন অপেক্ষা করেছিলাম আপনাদের জন্য।ভেবেছিলাম সন্তান জন্মের দিনটায় আসবেন।আসেন নি।এখন আর আশা রাখি না।আপনাদের মুখটাও মনে রাখতে চাই না।আমি আপনার চেহারার আদল পেয়েছি।ভাগ্যিস আমার মেয়েটা কিন্তু তার বাবার চেহারা পেয়েছে।আমার চেহারা পায় নি তাতেই আমি খুশি কারণ তাহলে আপনার মুখটা ভেসে উঠতো।নিজের চেহারা তো আর নিজের দেখতে হয় না।বেচে গেছি।”

–“একটা বার দেখতে দে মা।”

–“কেন খুন করতে এসেছেন আমার সন্তানকে?জন্মের সময় করতে পারেন নি সেজন্য তাই না?”

সবাই অবাক হয়ে গেলো।দিহান রিনিকে মারতে হাত তুললো।এতো দিনে এই প্রথম রিনিকে মারতে উদ্দ্যোত হয়েছে সে।রিনি চোখ খিচে ফেললো।তবুও জায়গা দিয়ে নড়লো না।দিহান হাত ফিরিয়ে নিলো।শক্ত গলায় বললো

–“ঘরে আসতে দাও ওনাদের। অসভ্যের মতো আর একটা ব্যবহার চাই না আমি।একটাও না।মানুষ মাত্রই ভুল।”

–“তারা ছোট্ট বাচ্চা ছিলো না যে ওমন ভুল করবে।তাদের মনটাই নিচু ছিলো।কিভাবে ভুলে যাচ্ছেন দীপ্তিকে পতিতা বলেছে ঐ মহিলা।”

দিহান গালে থাপ্পড় লাগালো।টানতে টানতে রুমে নিয়ে চলে গেলো।রিনি চিল্লাচ্ছে।বার বার বলছে “ওনারা ঘরে উঠলে আমি এই ঘর থেকে নেমে যাবো।”

হাফসা বললো

–“মাফ করবেন।মেয়েটা একটু পাগল,তেজী।যা মাথায় আসবে করবেই।আসুন আপনারা। ”

মুনির এতোক্ষনে কথা বললো। বিপন্ন স্বরে বললো

–“রিনির মেয়েটাকে একটু নিয়ে আসেন।আর ব্যাপার না, আমি রেহানা জানি আমাদের এই ব্যবহার প্রাপ্য । প্রস্তুত হয়েই এসেছিলাম আমি।গায়ে লাগেনি তেমন।”

মুনির শুকনো হাসি দিলো।দীপ্তির দিকে তাকিয়ে বললো

–“রিনিকেও একটু ডেকে দাও মা।”

ফিরোজ হাফসা ঘরে আসার জন্য বললেও আসলো না ভেতরে।দরজার গন্ডি আর পেরোলো না।রিনি চোখ মুছতে মুছতে এলো।পেছন পেছন দিহান এলো নিশীকে কোলে নিয়ে।সদ্য ঘুম দিয়ে উঠে ড্যাবড্যাব করে তাকাচ্ছে।ছোট্ট লাল ফ্রক গায়ে।রিনির মতো গায়ের রং। ঠোঁটের পাপড়ি পাতলা চিকন।দিহানের অনুরোধে রেহানা মুনির ঘরে ঢুকলো।দিহানের কোল থেকে মুনির বাচ্চাকে কোলে নিলো। কি নিষ্পাপ,ফুটফুটে। রেহানার তড় সইলো না। সে কোলে নিলো।সারা মুখে চুমু খেলো।নিশী খিলখিল করে হেসে উঠল। বার কয়েক দাদা দাদা করে ডাকলো।বয়স্ত মানুষ দেখলেই দাদা ডাকে সে।নানা শব্দ সে কখনও শোনে নি।ফিরোজের ডাকেই এই শব্দ রক্ত করেছে।মুনির পকেট থেকে দশ হাজার টাকা বের করলো।রিনি দেয়াল ঘেঁষে পাথর হয়ে দাঁড়িয়ে ছিলো। টাকা দিতে দেখেই বললো

–“খবরদার টাকা দেখাবেন না আমার মেয়েকে। একদম না। ”

রিনি টেনে নিয়ে চলে গেলো নিজের মেয়েকে।নিজের রুমে গিয়ে দরজা আটকে দিলো।যাওয়ার সময় মুনির দিহানের দিকে হেসে বললো।

–“আমার মেয়েটা ছোট বেলা থেকে খুব তেজী। যা চাই সেটা ওর চাই ই চাই। রিমিটা আমাদের বাধ্যগত ছিলো। তবে রিনি কখনোই না।যাই হোক।আসি।”

রিনি সারা রাত দিহানের বুকে মাথা রেখে কান্না করেছে।মুখে কিচ্ছু বলে নি।শেষ রাতে রিনির মাথায় হাত বুলিয়ে বললো

–“কেন জেদ নিয়ে আছো রিনি?অনেকগুলো দিন কেটে গেছে। তারা অনুতপ্ত । ”

রিনি দিহানের থেকে উঠে অন্যপাশ ফিরে শুলো।দিহান রিনিকে টেনে দূরত্ব ঘোচালো।

–“আমি বললেই দোষ।আচ্ছা বলবো না।আর তুমি কান্নাও করতে পারবে না।”

____________

পাঁচটা বছর কেটে গেছে।দিহান এখন ব্যাংকের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা। রিনি একটা সংস্থার সাথে যুক্ত আছে।দীপ্তি মেডিকেল ইন্টার্নি করছে।তনয় কলেজে শিক্ষকতা করছে দুই বছর যাবত।দিহান ঢাকাতেই ফ্লাট ক্রয় করেছে।দিহান আর রিনির সুখের অভাব হয় নি কখনও।রিনির বাচ্চামিতে আগে তেড়ে আসতে হলেও সেই রিনিটা এখন অনেক বড় হয়ে গেছে।মুখের বাচ্চা ভাবটা কেটে গেছে।পরিপূর্ণ মা লাগে।তবে সৌন্দর্যে কমতি নেই তার।দিহান চাপ দাড়ি এক ইঞ্চি পরিমাণে রাখে। বাচ্চাবেশ এখন আর চলে না।বয়সটা খুব বেশি নয়।কিন্তু জীবনের দায়িত্বটা কাধে শক্ত পোক্ত ভাবে পরলে এসব গ্লামার লুকে আর মন থাকে না।অবশ্য তার কখনো ছিলোই না।নিজেকে কেমন দেখায় ভেবেই দেখেনি।শুনেছে শুধু রিনির প্রশংসা।প্রায়ই রিনি তার মুখের সামনে এসে বলতো

–“কি আছে এই চেহারায়?এতো কেন টানে? এতো কেন সুন্দর! ”

দিহানের অবশ্য রিনির পরিবারের সাথে সম্পর্ক স্বাভাবিক।দিহান কেন ফিরোজ হাফসা সবার সাথেই সম্পর্ক স্বাভাবিক।শুধু দীপ্তি আর রিনির সাথে ঠিক নেই।দীপ্তি বুঝতে না দিলেও বেশ এড়িয়ে চলে তা বেশ বুঝতে পারে দিহান।তার জন্য কতো শক্ত কথা শুনতে হয়েছে তার বোনকে।বর্তমানে সে দীপ্তি আর তনয়ের বিয়ে নিয়ে ব্যস্ততা করছে।তনয় আর অপেক্ষা করতে পারছে না।কমিউনিটি সেন্টারে বিয়ে হবে।গ্রাম থেকে তো তনয়ের ফ্যামিলির ঢাকা আসা সম্ভব না একদিনেই তাই দিহানের অনুরোধে তারা দিহানের বাসাতেই উঠেছে।এতে অবশ্য তনয়ের চাপা খুশির শেষ নেই। নিশী ফুপির বিয়ে বিয়ে করে পড়াশুনো বাক্স ভরেছে। তার মতে বিয়েতে পড়তে নেই। বাচ্চাদের নিয়ে মেতে আছে।তনয় নিশীকে কোলে নিয়ে একটা চিঠি ধরিয়ে দিলো। কানে কানে ফিসফিস করে বললো

–“তোমার ফুপিকে দৌড়ে দিয়ে এসো।”

পাগলা ভক্তের তনয়ের কথা বলতে দেরি তো কাজে দেরি নেই।

_____________

দীপ্তি পা টিপে টিপে ছাদে গেলো।অবয়ব দেখে সেদিকে ধাবমান হলো।দীপ্তি রেলিংয়ে ঠেস দিয়ে দাড়ালো।ভনীতা করে বললো

–“বিয়ের আগের দিন প্রেমের চিঠি বাহ।”

তনয়ের দু পা এগিয়ে গেলো দীপ্তির দিকে। মোহময় কণ্ঠে বললো

“ঠিক আবছা আলোতেও বলতে পারবো, তোমার ফোলা উজ্জল গাল আর চোখের নিচের লেপ্টানো রাত জাগা কালি আমার ভালোবাসার চিহ্ন।আমি অধিক অন্ধকারেও এই চিহ্ন অনুভব করতে পারবো,দেখতে হবে না। হাজার বার ছুয়ে ছুয়ে দেখবো।একটা পাগল মেয়ে পড়ে পড়ে চোখের নিচে কালি ফেললো, খাওয়া দাওয়া জোর করে করলো কারণ কিনা তার প্রেমিক বলেছে!ভালোবাসা এতোটা মেইনটেইন করে হয়? একটু হেলাফেলা করা যায় নি?আমি এমনিই বিয়ে করতাম।একটা বাচ্চা মেয়েকে ভালোবাসতে বাসতে মেয়েটা সগুণ বেশি ভালোবাসা শিখিয়ে দিলো আমাকেই আবার?”

–“মাস্টার মশাইয়ের এই কণ্ঠে আমার কানে ঝিম লাগে।স্বাভাবিক ভাবে বলেন প্লিজ।”

তনয়ের আকুল করার মতো কণ্ঠে সর্বদাই মুগ্ধ দীপ্তি।আর রাতের পরিবেশে তার শরীরে ঝংকার তুলেছে যেন।নিশপিশ করে উঠছে হাত পা।

তনয় আরও দু পা এগিয়ে এলো।খপ করে টেনে এনে দূরত্ব ঘোচালো।দীপ্তি মুখোমুখি তাকাতে পারলো না।অন্যদিকে ফিরে আছে।

“সে ফিরতি চুমু আজও দেয় নি।মেইনটেইন করছিলো মানলান। তাই বলে এতো মেইনটেইনিং শাস্তিটা দেয়া কতটা যুক্তি সম্মত?শরীরি ভালোবাসাও তো ভালোবাসার একটা বিশেষ অধ্যায় নাকি?”

দীপ্তি কুকড়ে গেলো। লোকটার বয়স হচ্ছে আর মুখ পাতলা হচ্ছে।বিরবির করে বললো

–“বিয়ে হচ্ছে তো পরশু।”

–“উহু আমি প্রেমিক পুরুষ। প্রেমিক ট্যাগ ছাড়া এই পদ ছাড়বো না।ট্যাগ দিয়ে দাও।”

–“আপনি তো আমার কপালে, গালে চুমু খেয়েছেন।তাতে হয় নি?”

–“উহু একদম হয় নি।আমার কি কম যে ফিরতি চুমু পাবো না?তোমার তরফ থেকে আমি কিচ্ছু পাই নি।”

–“প্লিজ বাদ দেন আমার লজ্জা লাগছে।”

–“লজ্জা পাওয়ার সময় লজ্জা না পাওয়াটাই অস্বাভাবিক। ব্যাপার না । না দিলে ছাড়ছি না।বিয়েও পেছাবো যদি চুমু না খাও।”

দীপ্তি পায়ের পাতায় ভর দিয়ে উঁচু হলো।কপালে চুমু খেলো।স্বাভাবিক হয়ে দাড়ানোর আগেই তনয় ঠোঁট আকড়ে ধরলো । দীপ্তি হিম হয়ে গেলো।গা ছেড়ে দিয়েছে তার।পরে যেতে নিলে তনয় আকড়ে ধরে।

–“এতেই সেন্সলেস হয়োনা প্লিজ।নইলে বিয়ের পর সেন্সলেস হতে হতেই শেষ হয়ে যাবে। ”

শব্দ করে হাসলো।দীপ্তিকে কোলে তুলে নিয়ে সারা ছাদে হাটা শুরু করলো।একের পর এক গল্প বলে যাচ্ছে তনয়।দীপ্তি চুপ করে শুনছে।সে এখনো মোহনীয়তায় আটকে আছে।

____________

দিহানের মাথা ঝিম ঝিম ব্যাথা ব্যাথা করছে। রিনির কোলে মাথা দিয়ে শুয়ে আছে।রিনি মাথা বানিয়ে দিচ্ছে।আদুরে গলায় ডাকলো

–“ও নিশীর আব্বু, ও বর, ও দিহান ভাই।”

দিহান হালকা হেসে বললো

–“নতুন কোনো শাড়ি গয়না পছন্দ হয়েছে?”

–“নাহ তা না।”

দিহান ব্যর্থ হয়ে বললো

–“তাহলে!”

–“আমার আর একটা বেবি চাই।আমার কলিগের দুটো বেবি আরও একটা নিচ্ছে।”

–“বাহ এসব খবরও রাখো!”

রিনি দিহানকে হালকা ধাক্কা দিয়ে বললো

–“উহ মেয়েরা রাখে। দাও না একটা বেবি।এতোদিন দাও নি এবার আমার লাগবেই লাগবে। ”

–“তোমার কলিগের দশটা বাচ্চা হলে আমি তোমাকে বিশটা দেবো কারণ আমার বউ আমাকে তুমি করে বললো মাত্র। এখন তাকে আমি হেরে যেতে দেবো? একদম না।বাবা হয়ে গেছি তাতে কি বয়স তো আমার সাতাশ।কই আসো দেখি।বেবি দেই পাঁচ দশটা।”

রিনি চোখ বড় বড় করে বললো

–“আল্লাহ এতো গুলো?”

–“আরে কমই তো৷ আচ্ছা যাও আর কয়টা কমালাম।তবুও তুমি জিতবে।তোমার কলিগের জামাই নিশ্চয়ই বয়স্ক।সে হিসেবে আমি তাগ্রা যুবক।কম করে হলেও তার থেকে দশটা পাঁচটা বেবি বেশি হবে আমাদের।”

রিনি ঠোঁট উল্টায়। দিহানের মশকরা ধরতে পেরেছে সে।

–“ধুর আপনি মজা করছেন।”

দিহান শার্টের বোতাম খুলতে খুলতে বললো

–“একদম না।এখনই দেখবে তোমার জামাইয়ের কামাল।”

রিনি লজ্জায় গুটিয়ে গেলো।শুরু হলো পরিণয়ের প্রণয়।

ভালোবাসার শেষ নেই যেন।সত্যিকার অর্থে ভালোবাসা হলো ব্লাক হোল।অবশ্য ভালোবাসা ভালোবাসাই। তার মিথ্যাকার আর সত্যিকার নেই।মিথ্যা হলে সেটাকে ভালোবাসা বলেই না।ব্লাক হোলের মধ্যে প্রবেশ করলে যেভাবে কখনও ফিরে আসা যায় না। তেমনি ভালোবাসা স্থানে প্রবেশ করলেও ফিরে আসা সম্ভব না।মনের একটা জায়গা দখল করে মৃত্যুর আগ অব্দি তার বাস । তবে যারা ভালোবাসে তাদের ভাষ্যে মৃত্যুর পরেও এই ভালোবাসা থাকবে।এই ভালোবাসা নামক ব্লাক হোলের অন্তিম করে দিতে পারে মৃত্যু নামক শব্দটা সেটা মানতেও নারাজ আমাদের ভালোবাসা সম্প্রদায়।তাই আমরা জোর গলায় বলি মৃত্যুর পরের জীবনেও তোমায় আল্লাহর কাছে চেয়ে নেবো।

ব্লাক হলের মধ্যে ‘ইভেন্ট হরাইজন ‘নামের একটি স্থান আছে।যাকে বলা হয় ‘পয়েন্ট অব নো রিটার্ন’।এই স্থানে মহাকর্ষীয় শক্তি এতো যে এখান থেকে কারো ফিরে আসা সম্ভব না।তেমনি ভালোবাসলে মনের মাঝেও ইভেন্ট হরাইজন নামক জায়গার সৃষ্টি হয় আমার মতে।আর পরিণাম মৃত্যু অব্দি “পয়েন্ট অব নো রিটার্ন “।

আসলে প্রত্যেকটা সমাপ্তিই নতুন কিছুর শুরু।জীবন চলছে চলবে।ইহকাল শেষ হলে পরকাল বহমান হবে।এই জীবন সতত বহমান।

সমাপ্ত

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here