নিশ্বাস পর্ব ৫

#নিশ্বাস
#পর্ব_৫
#লেখক_Mohammad_Asad

রাতের ভাত তরকারি রান্না করে রুমের মধ্যে বসে আছে নিশাত। শরীলটা অনেক কালান্ত। কিছুক্ষণ পর ছাদিক বাসায় আসে। রুমের মধ্যে আসার পর দেখে নিশাত বিছানায় সুয়ে আছে।

ছাদিক অফিস থেকে ফিরে এসেছে অনেকটাই কালান্ত হয়ে। অফিসে আজকাল ঝামেলা চলছে। নিশাত চোখ মেলে দেখে ছাদিক দাঁড়িয়ে আছে। তাই জিজ্ঞেস করে!
-আপনি কখন আসলেন?
-এই তো আরেকটু আগে।
-তাহলে দাঁড়িয়ে আছেন কেন?

ছাদিক নিশাতের পার্শে বসে বলে।
-আমার শরীলটা অনেক কালান্ত হয়ে আছে গোসল করতে হবে।
-হুঁ তাহলে গোসল করে আসেন। আমি রুমের মধ্যে ভাত নিয়ে আসছি।
-আচ্ছা নিয়ে এসো। আব্বু আম্মু, ভাবি ভাত খাইছে?
-হুম খাইছে তো। আচ্ছা একটা কথা বলি।
-বলো।
-আচ্ছা আপনি আমাকে বউ মনে করেন?
-এটা কেমন প্রশ্ন নিশাত?
-বলুন না,
-হুম মনে করি,
-আচ্ছা বাবা-মা যদি বিয়ে দিয়ে দিতে চায় আপনার। তাহলে কি বিয়ে করবেন?
-কি বলছো নিশাত বাবা-মা আমার বিয়ে দিতে যাবে কেন?
-বাবা-মা আপনার বিয়ে ঠিক করেছে।

বাবা-মা আপনার বিয়ে ঠিক করেছে কথাটা বলার সঙ্গে সঙ্গে নিশাতের গালে পর পর তিনটা থাপ্পড় বসিয়ে দেয় ছাদিক। নিশাত গালে হাত দিয়ে মাথাটা নিঁচু করে বসে আছে। ছাদিক রেগে দাঁত কটমট করে বলে।
-কি বলছিস তুই! বাবা-মা আমার বিয়ে ঠিক করেছে। এই ছিলো তোর মনে! তুই বাবা-মাকে এতোটা খারাপ ভাবিস! হ্যাঁ, বাবা-মা যদি আমার বিয়ে ঠিক করে তাহলে সমস্যা কোথায় তোর? বাবা-মা যার সঙ্গে বিয়ে ঠিক করেছে তাকে বিয়ে করবো আমি। তুই কি ভেবেছিলিস তোকে নিয়ে সারাজীবন কেঁটে দিবো আমি। তোর মতো একটা কাজের মেয়ের সঙ্গে।

কথাগুলো বলে গোসল করতে যায় ছাদিক। মন থেকে কথাগুলো বলেনি বলায় যায়। এমনিতেই অফিসে কাজকর্ম নিয়ে অনেক চিন্তিত ছেলেটা তার মধ্যে এইসব কথাবার্তা। তাই রেগে কথাগুলো বলে।

নিশাত বিছানায় বসে কান্না করছে। ঠিকি তো আমি কাজের মেয়ে আমার কিসের স্বপ্ন। নিশাত রান্নাঘর থেকে ভাত তরকারি রুমে নিয়ে আসে। টেবিলে রেখে দেয়। তারপর রুমের বাইরে চলে যায়।

ছাদিক গোসল করে আসে। রাগটা সম্পূর্ণ ভাবে কমে গেছে। রুমে মেয়েটাকে না পেয়ে ছাদিক নিশাত নিশাত বলে ডাক দেয়। নিশাত দৌড়ে রুমে আসে। মনের মধ্যে ভয় আর কষ্ট জমে আছে মেয়েটার।

ছাদিক বুঝতে পারে নিশাতের মন খারাপ তাই মিস্টি কন্ঠে বলে।
-নিশাত,
-হুঁ
-মন খারাপ?
-নাহ্
-আচ্ছা ভাত খেয়েছিস?
-নাহ্
-তাহলে টেবিলে ভাত রেখে কোথায় গিয়েছিলিস?
-এই তো পার্শের রুমে।
-ওহ আচ্ছা ভাবির কাছে!
-হুঁ

নিশাত ভাত তরকারির বাঁটি গুলো মেঝেতে সাজিয়ে রাখে। মেয়েটা চোখ মুচতে মুচতে ছাদিকের প্লেটে ভাত দিচ্ছে। ছাদিক বুঝতে পারে নিশাত কান্না করছে।
-কিরে কান্না করছিস কেন?
-কই নাতো।
-আমার চোখকে ফাঁকি দিতে চাইছিস?
-“নিশ্চুপ”

ছাদিক একটু ভাত মুখে দিয়ে নিশাতের চোখের দিকে তাকায়। মেয়েটা মায়াবী দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। নিশাত নিজের মধ্যে ফিরে আসলে চোখের কোনায় আসা জলটুকু মুছে নেয়। ছাদিক মুচকি হেঁসে বলে।
-এই নিশাত ভাত খাবি কখন?
-আপনি আগে খেয়ে নেন, তারপর।
-আচ্ছা,
-হুঁ
-আচ্ছা আমার কাছে একটু এগিয়ে আসবি!
-কেন?
-আসতে বলছি তো।

নিশাত ছাদিকের কথা মতো পার্শে বসে। ছাদিক বলে।
-মুখটা একটু খোল তো!
“নিশাত কাঁপা কাঁপা কন্ঠে বলে”
-কেন?
-আমি বলছি তাই,
-হুঁ

ছাদিক নিশাতের মুখে এক লোকমা ভাত তুলে দেয়। নিশাত চোখের জল মুছে ভাতগুলো খেতে থাকে।
ছাদিক মিস্টি হেঁসে নিশাতের মুখের দিকে তাকিয়ে আছে।
-নিশাত তখন কষ্ট পেয়েছিস তাই না?
-“নিশ্চুপ”
-অফিসে কত কাজকর্ম করতে হয় আমাক, জানিস তো। তবে এমন কথা বলিস কেন?
-“নিশ্চুপ”
-তখন মাথা গরম ছিলো। তাই এতো খারাপ কথা শুনিয়েছি তোকে স্যরি।
-“নিশ্চুপ”

ছাদিক নিশাতের মুখে ভাত তুলে দেয়। নিশাত কান্না করছে আর ভাত গুলো খেয়ে নিচ্ছে। নিশাত কান্না করে বলে।
-আপনি আমাকে খাইয়ে দিচ্ছেন। আপনি ভাত খাবেন নাহ্?
-তুমি আগে খেয়ে নেও তারপর।

ছাদিক নিশাতের মুখে ভাত তুলে দিচ্ছে। আর নিশাত কান্না করে ভাতগুলো খেয়ে নিচ্ছে। ভাত খাওয়া শেষ হলে নিশাতের মুখে লেগে থাকা তরকারি মুছে দেয় ছাদিক।

দুজনের ভাত খাওয়া শেষে ছাদিক নিশাতের হাত ধরে আব্বু-আম্মুর রুমে নিয়ে যায়।
আব্বু আম্মু তখন ঘুমানোর জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে। রাত প্রায় ১১টা বেজে গেছে। বুড়ো বুড়ী দুইজন এই সময়ে ঘুমিয়ে যায়। ছাদিক আর নিশাত দুজনকে দেখে আব্বু বলে!
-আরে ছাদিক তুই এখানে! তোর সঙ্গে নিশাত আছে দেখছি।
-হ্যাঁ আব্বু।
-তা কিসের জন্য এসেছো তোমরা।
-আব্বু-আম্মু তোমরা নাকি আমার বিয়ে ঠিক করেছো!

আম্মু মিস্টি হেঁসে বলে,
-হ্যাঁ ঠিক শুনেছিস তোর বিয়ে ঠিক করেছি আমরা।
-আম্মু কিসব বলছো তুমি? তোমরা আমার বিয়ে দিবে মানে। আমার তো বিয়ে হয়েছে।
-কেন তুই কাজের মেয়ের সঙ্গে থাকতে চাস নাকি সারাজীবন।
-হ্যাঁ আম্মু আমি এই কাজের মেয়েটার সঙ্গেই থাকতে চাই সারাজীবন।

আম্মু চোখ বড় বড় করে বলে।
-আমি যার সঙ্গে বিয়ে ঠিক করেছি। তাকে বিয়ে করবি তুই বেশি কথা বলবি না একদম।
“ছাদিক চিৎকার দিয়ে বলে”
-আম্মু আমি এই বিয়ে করতে পারবো না।
-তাহলে বাড়ি থেকে বের হয়ে যা তুই।
-কি বলছো আম্মু? আমাকে তুমি বাড়ি থেকে বের হয়ে যেতে বলছো।
-হ্যাঁ তোকে আমি বাড়ি থেকে বের হয়ে যেতে বলছি। তুই যদি কাজের মেয়েকে নিয়ে থাকতে চাস তাহলে এই বাড়ি থেকে চলে যা।

“ছাদিকের আব্বু, বলে।
-আরে তুমি এইসব কি বলছো? ছেলেটাকে বাড়ি থেকে বের হয়ে যেতে বলছো কেন? ছেলেটা যদি নিশাতের সঙ্গে ভালো থাকে তাহলে থাক না। তুমি এমন করছো কেন?
“আম্মু বড় বড় চোখে রেগে বলে”
-তোমার জন্য এমন হয়েছে ছেলেটা। না হলে কি কাজের মেয়ের সঙ্গে বিয়ে দিতে হয়।

আব্বু, নিশাত ছাদিক দুজনকে বলে।
-নিশাত মা, তুমি আর ছাদিক দুজনে রুম থেকে যাও অনেক রাত হয়ে গেছে।
.
.
ছাদিক নিজের রুমে চলে আসে। তার সঙ্গে নিশাত মাথা নিঁচু করে রুমে আসে। রুমের মধ্যে আসলে দরজাটা ভিতর থেকে লেগে দেয় ছাদিক। নিশাত ভয় পেয়ে যায়। নিশাতের পার্শে দাঁড়িয়ে আছে ছাদিক। নিশাত মাথাটা নিঁচু করে আছে। ছাদিক নিশাতের ঠোঁটে বুড়ো আঙুল দিয়ে মিস্টি হেঁসে বলে।
-ভয় পেয়ো না। আমি কাওকে বিয়ে করবো না। আম্মুর একটু বয়স হয়েছে তাই এমন উল্টো চিন্তা করছে।
-হুঁ
-কি হয়েছে তোমার কান্না করছো কেন?
-কই কান্না করছি।

ছাদিক নিশাতের থুতনুনিটায় হাত দেয়। ছাদিকের চোখের দিকে তাকিয়ে আছে মেয়েটা। চোখ দিয়ে অঝোরে বৃষ্টি ঝরে যাচ্ছে। নিশাতের চোখে জলটুকু মুছে দেয় ছাদিক।
-আচ্ছা নিশাত একটা কথা বলি।
-জ্বি বলেন!
-তুমি এতোটা কান্না করতে পারো কিভাবে।

নিশাত এবার নিজের মাথাটা নিঁচু করে নেয়।
-কিভাবে এতোটা কান্না করো। আমাকে একটু শিখিয়ে দিবে প্লিজ।
“নিশাত এবার ফিঁক করে হেঁসে দেয় ছেলেটার কথা শুনে। কান্না কিভাবে করতে হয় এটা নাকি শিখাতে হবে। নিশাতের মুখে হ্যাঁসি দেখে ছাদিকও হেঁসে দেয়।

নিশাত দৌড়ে জানালার পার্শে দাঁড়ায় ছাদিক নিশাতের পিছু পিছু যায়। নিশাতের কোমড় জরীয়ে ধরে পিছন থেকে, ঘাঁড়ে নাক ঘঁসতে থেকে।
-এই আপনি কি করছেন হুম!
-কি আবার করছি আমার বউটাকে আদর করছি।
-উঁহু না।
-কি না হুম?

ছাদিক নিশাতের কোমড় জরীয়ে নিজের দিকে ঘুরিয়ে নেয়। নিশাতের হাত ছাদিকের বুকে লেগে আছে আল্ত ছোঁয়ায়। নিশাতের চোখের দিকে তাকিয়ে আছে ছাদিক। মেয়েটা লজ্জায় মুখটা লাল করে দিয়েছে।
-কি দেখেন এভাবে হুম।
-তোমাকে দেখি। এ দেখা কখনো শেষ হবার না। এই দেখায় কোন নোংরামি নেই। এই দেখা সম্পূর্ণ পবিত্র। আমার নিশাত রানী ভালোবাসি তোমায় অনেক ভালোবাসি।

“চলবে?”

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here