#প্রাণ_ভোমরা
#রোকসানা_রাহমান
পর্ব (১২)
শ্রাবণ বাসায় ফিরল রাত নয়টায়। তার হাতে বাদামী রঙের শপিং ব্যাগ। শাড়ি কিনে শপিংমল থেকে বেরিয়ে বুঝল,সন্ধ্যা রাতের বুকে হারিয়ে গিয়েছে অনেক্ষণ। সে কি অন্যায় করে ফেলল? রিধির প্রথম আবদারটা এভাবে হেলায়ফেলায় চলে গেল? মেয়েটা কি রাগ করেছে? অভিমানে গাল ফুলিয়েছে?নাকি ঝগড়া করার জন্য ওঁৎ পেতে আছে? শ্রাবণ বেশ খারাপ লাগা নিয়েই বাসার কলিংবেলে চাপ দিল। দরজা খুলল আশ্বিন। ভাইয়ের চোখে চোখ পড়তে ঠান্ডা গলায় বলল,
“আমি মাকে দেখলাম,ভাইয়া। আমাদের মা কি আবার ফিরে এসেছে?”
আশ্বিনের অমন শীতল প্রশ্ন শ্রাবণের অন্তর কাঁপিয়ে দিল। বিস্ময়ে চোখ দুটি স্থির হয়ে আছে। পাতা ফেলতে ভুলে গিয়েছে যেন! ক্ষণকাল নিঃশব্দে কাটিয়ে দিল দুই ভাই। হঠাৎ শ্রাবণ ছোট্ট করে উচ্চারণ করল,
“মা!”
আশ্বিন চমকে ওঠে। ভাইয়ের পরম মমতা ভরা ডাকটি তার হৃদয় ছুলো। চোখ সজল হয়ে ওঠে। সঙ্গে সঙ্গে সংযমী হয়। নিজের অনুভূতি লুকিয়ে নেয় সন্তর্পণে। তারপর মুচকি হেসে বলল,
“ভাবিকে দেখে আমার তাই মনে হলো। এক মুহূর্তের জন্য মনে হয়েছিল,আমাদের মা ফিরে এসেছে।”
এই পর্যায়ে শ্রাবণ কড়া চোখে তাকাল। তারমানে আশ্বিন তার সাথে মজা করছিল? এই ছেলেটা হুট করে এত বদলে গেল কী করে? শ্রাবণ চট করে ঘড়ির দিকে তাকায়, নয়টা বেজে আঠারো। এখন তো আশ্বিনের বইয়ে মুখ ডুবিয়ে থাকার কথা। শ্রাবণ ঠিক করল,আশ্বিনকে ধমক দিবে। বেশ জোরে দিতে হবে। যাতে ছেলেটা ভয়ে কেঁপে ওঠে। লাফিয়ে দুই কদম পিছিয়ে যায়। ভীত পা ফেলে দ্রুত তার সামনে থেকে পলায়ন করে। আর এই মজা করার নতুন অভ্যাসটা এখানেই সমাপ্ত ঘটে। শ্রাবণ ধমকের প্রস্তুতি নিতে,আশ্বিন বলল,
“ভাইয়া,তোর মনে আছে মা কী সুন্দর রবীন্দ্র সংগীত গাইতো? তুই আর আমি মায়ের পায়ের কাছে বসে শুনতাম। চোখ বন্ধ করে। আর বাবা? মায়ের পাশে বসে পান বানিয়ে দিত। সেই পান খেয়ে মায়ের ঠোঁট টকটকে লাল হয়ে উঠতো। কণ্ঠ আরো মিষ্টি হতো। তারপর গান শেষে দুই ভাই মায়ের আধ খাওয়া পান খাওয়ার জন্য বায়না ধরতাম। আমি তো তোর সাথে পারব না বুঝতে পেরেই কেঁদে দিতাম। আর মা আমাকে থামাতে সব পান আমাকে দিয়ে দিত। তুই রাগ করে রুম ছেড়ে চলে যেতি। আমি ভাবতাম আমাকে সব দিয়ে দেয়। কিন্তু না। মা তো তোর জন্য একটু রেখে দিত। আমাকে আড়াল করে তোকে দিত। তাই না?”
আশ্বিনের কথাগুলো যেন দুই ভাইকে স্মৃতিপটে ঘুরিয়ে আনছে। শ্রাবণ চোখের সামনে দেখতে পারছে,তার মা খাটের উপর পা মেলে বসে আছে। বাবা পাশেই পানের বাটা নিয়ে ব্যস্ত। একজন গান গাইছে,আরেকজন পান বানাচ্ছে।
“ভাইয়া,ভাবিও কি গান গায়তে পারে? আমার আজ গান শুনতে ইচ্ছে করছে। ভাবিও কি পান খায়? আমার পান খেতে ইচ্ছে করছে!”
শেষ কথাটা বলে আশ্বিন লজ্জা পেল। আবেগের বশে কী বলে ফেলেছে, ছি! আশ্বিন আর এক মুহূর্তও শ্রাবণের সামনে দাঁড়িয়ে থাকতে পারল না। দ্রুত পা চালিয়ে অন্য দিকে চলে গেল।
শ্রাবণ ভেতরে ঢুকে দরজা ভেতর থেকে লাগিয়ে দেয়। বসার রুম পার হয়ে নিজের রুমের দিকে এগুচ্ছে আর বিড়বিড় করছে,’রিধি কখনই তার মায়ের মতো পারে না। কখনই না! দুইজন দুই গ্রহের প্রাণী।’
দরজার কাছে পৌঁছুতে তার পা থমকে গেল। কানে মিষ্টিসুরের গান ভেসে এলো,
একটুকু ছোঁয়া লাগে,
একটুকু কথা শুনি।।
তাই দিয়ে মনে মনে,
রচি মম ফাল্গুনী।।
শ্রাবণ চোখ বন্ধ করে ফেলে। হৃদয়ে গানের সুর গেঁথে নিতে নিতে দরজার কাছে গিয়ে দাঁড়ায়। অজান্তেই চোখ পড়ে রিধির উপর। মিষ্টি রঙের ব্লাউজের সাথে ধূসর রঙের শাড়ি জড়ানো রমনীর উপর মুগ্ধ দৃষ্টি পড়তে বাধ্য। চুলগুলো বেনি করে বুকের একপাশে ফেলে রেখেছে,চোখে গাঢ় করে কাজল দেওয়া,ঠোঁট দুটো টকটকে লাল। শ্রাবণ নিজের কাছেই প্রশ্ন রাখল,রিধি কি পান খাচ্ছে? হঠাৎই গানের কথাগুলো হারিয়ে গেল। গানের সুর এখন নাকে গুনগুনিয়ে বাজছে। রিধি চোখ বন্ধ করে খোলা জানালার কাঁচে মাথা ঠেকিয়ে রেখেছে। হাতদুটো বেনির শেষপ্রান্তের খোলা চুলে আঁচড়ানোতে ব্যস্ত। বড্ড উদাসীন দেখাচ্ছে! শ্রাবণের মনে হলো এই গানের আড়ালে কেউ আছে। অদৃশ্য কেউ!
শ্রাবণের শরীর জ্বলে উঠল। মায়া ও মুগ্ধতা ত্যাগ করে রুমের ভেতর ঢুলে পড়ে। সোজা এসে দাঁড়ায় রিধির সামনে। রিধি বুঝতে পারে না। শ্রাবণের উপস্থিতি টের পায় না। শ্রাবণ আচমকা জানালার কাঁচ লাগিয়ে দেয়। রিধি চমকে ওঠে। কিছু বলার জন্য ঠোঁটদুটো কেঁপে উঠতে শ্রাবণ বলল,
“কেন এসেছেন?”
রিধি অবাক হয়। শ্রাবণের প্রশ্নটা বুঝতে চেষ্টা করে। কয়েক সেকেন্ড পর নিরুদ্বেগে জানালা থেকে সরে আসে। আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে বলল,
“আপনার মা এভাবে শাড়ি পরতেন, তাই না?”
শ্রাবণ উত্তর দেয় না। চোখ পড়ে রিধির শরীর প্যাঁচিয়ে রাখা শাড়িটিতে। হঠাৎই রিধির জায়গায় মাকে কল্পনা করে। মনে পড়ে,তার মা কিছু বিশেষ দিনে এমন কুঁচি ছাড়া বাঙালিয়ানা শাড়ি পড়ত। চুলে বেনি করত। সেই দিনগুলোতেই গান গাইত,পান চিবুতো! বাকি দিনগুলোতে চুলে চিড়নি লাগাতো নাকি সন্দেহ। হাত খোঁপা করে দিন-রাত পার করেছে।
শ্রাবণ ফুঁসে ওঠে। রিধির একদম কাছে এসে বলল,
“মায়ের শাড়ি পরলে,তার মতো সাজলেই মা হয়ে যাবেন? এখনি এই শাড়ি খুলবেন।”
শ্রাবণ হাতের শপিং ব্যাগটা বিছানায় ছুঁড়ে মারে। যার মানে এই-‘মায়ের শাড়ি খুলে,এইটা পড়ুন।’
রিধি বুঝেও না বুঝার ভান ধরে। শপিংব্যাগ থেকে কিছু অংশ বেরিয়ে আসা শাড়ি থেকে চোখ সরিয়ে বলল,
“কেন খুলব? আপনি দিয়েছেন? যার বউ সে দিয়েছে। উনি যদি বলেন তবেই খুলব।”
রিধি নিজের বক্তব্যে কতটা অটল তা বুঝাতেই যেন খাটের উপর আঁটসাঁট হয়ে বসল। মুখের ভাব বলছে,’ দেখি,শাড়ী কিভাবে খুলান।’
শ্রাবণের রক্তিম চোখ দুটো শান্ত হয়। সহজভাবেই রিধির সামনে দাঁড়ায়। নরম স্বরে পূর্বের প্রশ্নটাই জিজ্ঞেস করে,
“কেন এসেছেন,রিধি?”
“আপনাকে ব্যবহার করতে।”
রিধির উত্তরে শ্রাবণ আঘাত পায়। আহত চোখে তাকিয়ে থাকে কিছুক্ষণ। অতঃপর বলল,
“খুলে বলুন।”
রিধি বসা থেকে দাঁড়াল। শ্রাবণের দিকে চোখ রাখতে,সে চোখ নামিয়ে ফেলে। রিধির খারাপ লাগে। মনে দ্বিধা জাগে। কিন্তু উপেক্ষা করতে বাধ্য হয়। সহজ গলায় বলল,
“আমি বাড়ি যেতে চাই। আমার আত্মাপ্রিয় মানুষের সাথে দেখা করতে চাই,কথা বলতে চাই।”
“যান। কে মানা করেছে? আমি তো করিনি,এটা নিশ্চিত। বেধেও রাখিনি।”
রিধি চুপ। মানুষটা বদলেছে। তিন বছর আগে ফেলে যাওয়া মানুষটার সাথে এর মিল নেই। চেহারারও পরিবর্তন হয়েছে। চোখ দুটো গভীরে ঢুকে গেছে। সত্যিই কি তাই? সে তো কখনও শ্রাবণকে সেভাবে দেখেনি। তাহলে বুঝছে কী করে? কণ্ঠটা যে অনেক রুক্ষ আর রাশভারি হয়েছে এটাও তো বুঝতে পারছে। কিন্তু কিভাবে?
রিধি ছোট্ট নিশ্বাস টেনে বলল,
“সাহস পাচ্ছি না।”
শ্রাবণ চোখ তুলে তাকাল। রিধির মুখে অসহায়ত্বের ছাপ স্পষ্ট! চোখের কোণে নরম জলও উঁকি দিচ্ছে। শ্রাবণ শুকনো ঢোক গিলে। নরম সুরে সুধায়,
“কেন?”
রিধি সাথে সাথে বলল,
“বাবার জন্য। ভয় হচ্ছে ভীষণ! যদি বাসায় ঢুকতে না দেয়?”
শ্রাবণ মনে মনে বলল,’ সেই জন্যই বুঝি আমার কাছে ঘরের খোঁজ করতে এসেছিলেন?’ সামনাসামনি বলল,
“এখানে আমার করণীয় কী বুঝতে পারছি না। অন্যায় করেছেন,শাস্তি তো পেতেই হবে। আপনার বাবাকে আপনি চিনেন। কিভাবে মানাতে হবে সেটাও জানেন। উনার সাথে আমার অনেকবার আলাপ হয়েছে। আমার মনে হয় না আপনাকে…”
“সেটাই তো..”
রিধির হঠাৎ কথায় শ্রাবণ অবাক হয়। জিজ্ঞেস করে,
“সেটাই কী?”
“বাবা আপনাকে খুব পছন্দ করেন। আমার মনে হচ্ছে,একমাত্র আপনিই পারেন বাবাকে বুঝিয়ে বলতে।”
“কী বুঝাব?”
“এই যে আমি হঠাৎ কেন উধাও হয়ে গেলাম।”
“কেন হলেন?”
এই পর্যায়ে রিধি থেমে গেল। শ্রাবণের প্রশ্নটা উপেক্ষা করতে চাইল। কিন্তু সাহস হলো না। মিনমিনিয়ে বলল,
“কিছু একটা বলবেন।”
শ্রাবণ হতাশ হলো। ভেবেছিল এই সুযোগে রিধির হারিয়ে যাওয়ার কারণ জানতে পারবে। কিন্তু হলো না। অন্য দিকে ঘুরে বলল,
“আমি মিথ্যে বলতে পারব না।”
কথাটা শেষ হতেই রিধি শ্রাবণের ডান হাতটা আঁকড়ে ধরল। মিনতি করে বলল,
“প্লিজ!”
শ্রাবণ কিছুক্ষণ থমকে গেল। নিজের হাতের উপর চেপে থাকা হাতদুটোতে গভীর দৃষ্টি রেখে বলল,
“চলুন।”
“কোথায়?”
“আপনার বাবার কাছে।”
রিধি নিজের হাত সরিয়ে নেয়। অবাক হয়ে বলল,
“এত রাতে? আমার তাড়া নেই। আপনার সুবিধামতো..”
“আমার আছে।”
“কী?”
রিধির প্রশ্নের উত্তর দিল না শ্রাবণ। দরজার দিকে এগিয়ে বলল,
“বাইরে অপেক্ষা করছি। শাড়িটা পাল্টে আসুন।”
শাড়ি পাল্টে বাইরে এসেই রিধির প্রথম কথা ছিল,
“আমাকে তাড়িয়ে দিতে আপনার এত তাড়া?”
শ্রাবণ সামান্য হাসল। ম্লান হাসি। দূর থেকে ছুটে আসা বাসের দিকে তাকিয়ে বলল,
“যে থাকতে চায় তাকে বের করে দিলে বলে তাড়িয়ে দেওয়া। আপনি তো থাকতে আসেননি!”
বাস সামনে এসে দাঁড়ালে রিধিকে উঠার জন্য ইশারা করে শ্রাবণ। রিধি বাসের দিকে তাকিয়ে বলল,
“আমরা তো রিকশায় যেতে পারি। আমার বাসা খুব দূরে নয়।”
“ধরে নিন,দূরত্বটা কমাতে কিংবা আরো বাড়াতে বাসে উঠা।”
রিধি শ্রাবণের কথার ধার বুঝতে পারল না। অনেকটা অন্যমনস্কতায় বাসে উঠে বসল। ফাঁকা সিট দেখে বসে পড়ে। খেয়াল করল তার পাশের সিটটি ফাঁকা থাকা সত্ত্বেও শ্রাবণ অন্য সারিতে গিয়ে বসেছে।
চলবে
[কাল হয় তো গল্পটি দিতে পারব না। তাই আজকেই দিয়ে দিয়েছি। একদিন পর পর দেওয়ার নিয়মেই গল্পটি চলবে। তবে মাঝে মাঝে সারপ্রাইজ পর্ব দিব ইনশাআল্লাহ]#প্রাণ_ভোমরা
#রোকসানা_রাহমান
পর্ব (১৩)
সাদা রঙের নরম ও কোমল ফুলে নাক ডুবিয়ে ভ্রমর বলল,
“এই ফুলটার সুগন্ধ বেশ মিষ্টি! এটার নাম কী গো?”
হৃদ্য পাশেই অন্য একটি ফুল গাছের পরিচর্যায় ব্যস্ত ছিল। হঠাৎ থমকে যেতে বাধ্য হলো। মোহঘোর দৃষ্টিতে তাকাল ভ্রমরের দিকে। সেই দৃষ্টির ঘোর কাটতে চায় না,মোহ কাটতে চায় না। আজন্ম এভাবেই পলকহীন থাকতে চায়! ভ্রমর ফুল থেকে নাক সরাল। ঠোঁটের কোণে মিষ্টি হাসি। আলতো করে ফুলের পাপড়ি ছুঁয়ে পুনরায় বলল,
“চুপ করে আছো যে?”
এবার হৃদ্যের হুঁশ ফিরল। ভ্রমরের মায়া লাগা কথার নেশাময় শব্দটা যে কাট পড়েছে! ফিরে এসেছে সহজ ভাষায়। আচ্ছা একটু আগেও কি সহজ ভাষার প্রয়োগ করেনি? হয় তো করেছে। কিন্তু হৃদ্যের মনে ছুঁয়েছে বড্ড আদুরীভাবে।
হৃদ্য ভ্রমরের পাশে এসে বলল,
“বেলি ফুল। চিনিস না?”
ভ্রমর সংশয় নিয়ে বলল,
“চিনি তো। কিন্তু এটা আমার দেখা বেলি ফুলের মতো লাগছে না। একটু অন্য রকম।”
হৃদ্য সহজ হাসি হেসে বলল,
“বেলি ফুলেরই ভরিয়াচেলী প্রজাতি। এটাকে রাজবেলীও বলে। এই ফুল আকারে বড় হয়। গড়ন ও সুগন্ধ হয় মুগ্ধ করার মতো!”
ভ্রমর কৌতুহল চোখে তাকায়। আরো কিছু জানার ইচ্ছেপোষণ নিয়ে সুধায়,
“বেলি ফুলের কতগুলো প্রজাতি হয়?”
“চারটা।”
হৃদ্যের ছোট উত্তরে ভ্রমর খুশি হতে পারল না। দ্রুত জিজ্ঞেস করল,
“কী কী?”
হৃদ্য এবার ভ্রমরের দিকে তাকাল। চোখের দৃষ্টি গম্ভীর! তারপর হঠাৎ বিজ্ঞদের মতো বলল,
“রাইবেলী,খয়েবেলী,মতিয়াবেলী ও ভরিয়াচেলী। রাইবেলী ও খয়েবেলীর ফুলগুলো ছোট ও তীব্র গন্ধযুক্ত হয়। তবে রাইবেলীর পাপড়িগুলো বেশি সুসজ্জিত। আর মতিয়াবেলী,ভরিয়াচেলীর ফুলগুলো আকারে একটু বড় হয়। কিন্তু মতিয়াবেলীর থেকে ভরিয়াচেলীর গন্ধ বেশি মনোমুগ্ধকর। সাধারণভাবে দেখতে গেলে সবগুলো একি রকম লাগে। কিন্তু একটু সুক্ষনজরে দেখলেই পার্থক্য বুঝা যায়। এই যেমন তুই ধরতে পারলি।”
কথাটা শেষ করেই ভ্রমরের নাক টেনে দিল হৃদ্য। ভ্রমর ভ্রু কুঁচকে,চোখ সরু করে কপট রাগ নিয়ে বলল,
“তোমার কাছে আসলেই ব্যথা দেও। আর আসব না।”
ভ্রমর বা’হাতের তালু দিয়ে নাকের আগায় মর্দন করে অন্য দিকে মুখ ঘুরিয়ে নিল। হৃদ্য স্পষ্ট দেখল,ভ্রমরের নাকের আগা লালবর্ণে ঢেকে আছে। রাগে নাকি ব্যথায় সেটা বুঝতে পারছে না। হৃদ্য সেদিক থেকে চোখ সরিয়ে নিল। বলল,
“এলি কেন? আমি আসতে বলেছি? এই মাগরিবের আযান পড়বে বলে। এখনি তো বাড়ি যাওয়ার জন্য আমার মাথা খাবি। ‘আম্মু চলে আসবে’ বলে বলে আমার কান পুড়িয়ে ফেলবি। শেষে আমার নার্সারি ফেলে তোকে বাসায় দিয়ে আসতে হবে।”
ভ্রমর হৃদ্যের দিকে ঘুরতে চেয়েও ঘুরল না। সকালে কথায় কথায় হৃদ্যের মুখ থেকে শুনেছিল নার্সারি থেকে নাকি শতাধিক চারা অন্যত্র পাঠাবে। ফরমায়েশ এসেছে যে! ভ্রমরের দুঃখ হলো। দুঃখ কমাতে স্বচক্ষে সবগুলো চারা দেখবে,হাত দিয়ে ছুঁবে সেই ইচ্ছেয় হৃদ্যের নার্সারিতে যাওয়ার বায়না ধরেছিল। এদিকে পপি আপুকে যা-তা বুঝিয়ে ফেললেও মাকে তো বুঝানো যাবে না। তাই মায়ের আগেই তার বাড়ি পৌঁছাতে হবে। এর জন্য তাকে কথা শুনানো হচ্ছে? ভ্রমর উল্টোপথে পা ফেলে বলল,
“আমি একাই যেতে পারি। কারো সাহায্য লাগবে না।”
ভ্রমর অভিমানে পা সামনে ফেলতে থাকে। হাঁটতে হাঁটতে একটু থেমে হৃদ্যের অপেক্ষা করে। ভাবে,এই বুঝি হৃদ্য এসে তাকে থামাবে। হয় দুটো ধমক দিবে নাহয় দুটো আদুরী কথা বলবে। যেটাই বলুক। তার তো শুধু রাগ ভাঙালেই চলবে। এখন সেটা ধমকে হোক আর ভালোবেসে হোক। ভ্রমর থেমে থেমে হাঁটা শেষ করে। গেইটের কাছে এসে দাঁড়াতে দূর থেকে হৃদ্যের গলা ভেসে আসে,
“আজ ফুল নিবি না?”
ভ্রমর পেছন তাকাল। হৃদ্যকে সে যেখানে ফেলে এসেছিল,সেখানেই ঠাঁই দাঁড়িয়ে আছে। ভ্রমরের মন বিষন্নতায় ভরে গেল। অভিমানে ভরা গাঢ় কণ্ঠে জোর এনে বলল,
“না। আমি অন্যের ফুল নেই না।”
“অন্যের?”
ভ্রমর উত্তর দিতে পারল না। হৃদ্যের প্রশ্নটা এড়িয়ে রাস্তায় এসে দাঁড়াল। ভীত মনে আরেকবার উচ্চারণ করল,’আমি একা যেতে পারি!’
ভ্রমর রিকশায় উঠে পড়তে হৃদ্য সকল অর্ডার ক্যানসেল করে দিল। নতুন করে ম্যামো তৈরী করল,যার পুরো পৃষ্ঠায় অগণিতবার লেখা হলো ‘ভোমরা’।
________________________________
রাতের আকাশে বিশাল চাঁদ। তাকে ঘিরেই তারাদের মেলা। জ্বলছে-নিভছে। সেই সাথে শূভ্র মেঘের রসিকতা তো আছেই! যখন তখন দুষ্টু কথা দিয়ে চাঁদকে তার আড়ালে লুকিয়ে পড়তে বাধ্য করছে। মেঘের আর চাঁদের দুষ্টু খেলার মধ্যে এক অনন্য প্রেমকাহিনি লিখে চলছেন বিধাতা। দুটি মনে একটু একটু করে ভরে দিচ্ছেন অফুরন্ত ভালোবাসা। এই ভালোবাসার সাধুরস কোথায় গিয়ে গড়াচ্ছে? অনুভব করতে পারছে কি দুটি অবুঝ মন? জানালা গলে জোসনার ফিনকি পড়ছে সাদা বেলির পাপড়িতে। সেই পাপড়িতে অদ্ভুত ভঙ্গিতে কিছু লিখছে হৃদ্য। পরম যত্ন নিয়ে কলমের সুচালো অংশ বসাচ্ছে। ছিঁড়ে যাওয়ার কঠিন ভয় মনে! হৃদ্যের গভীর মনোযোগ বিগড়ে দিল রিধি। হঠাৎ হৃদ্যের রুমে উদয় হয়ে জিজ্ঞেস করল,
“কী করছিস ভাই?”
হৃদ্য ছিটকে ওঠে। সযত্নে ফেলা কলমের সুচালো অংশ পাপড়ির তলা ভেদ করে। ছিঁড়ে দু টুকরো! হৃদ্য আহত হয়,অপ্রস্তুতও হয়ে পড়ে। দ্রুত পাপড়ি হাত দিয়ে ঢেকে বলল,
“কিছু না। তুই এখানে?”
রিধি সন্দিগ্ধ পায়ে সামনে এগিয়ে আসে। লক্ষ্য করে হৃদ্যের পড়ার টেবিলের উপর একটি বড় কাঁচের পেয়ালা। তাতে গাঢ় গোলাপ আর সাদা বেলির পাপড়ি দিয়ে ভরা। সে অবাক হয়। ভারি আশ্চর্য হয়ে জিজ্ঞেস করল,
“এত পাপড়ি! কী করবি এগুলো দিয়ে? গোলাপী আর সাদা রঙের পাপড়ির সংমিশ্রণ বেশ লাগছে!”
রিধি কথার ফাঁকে পেয়ালায় হাত দিতে গেলে,হৃদ্য ছোঁ মেরে পেয়ালা নিতে যায়। কিন্তু কপাল খারাপ! দুজনের অসাবধানিতে পেয়ালা ধপাস করে নিচে পড়ে। সাথে সাথে কয়েক ভাগে পরিণত হয়। পাপড়ির ছড়াছড়ি চারপাশে। সেই সময় হাওয়ারানি মুক্ত হাওয়া ঠেলে দিল হৃদ্যের রুমে। ব্যস! শুরু হয়ে গেল পাপড়িদের উড়োউড়ি খেলা।
উড়তে উড়তে একটি পাপড়ি আটকে পড়ে রিধির কোমল বাহুতে। রিধি পাপড়ি হাতে নিতে খেয়াল করে তাতে কিছু লেখা। রিধি সেখানে চোখ রেখে বলল,
“পাপড়িতে এগুলো কী লেখা ভাই?”
রিধি গভীর পর্যবেক্ষণে নামতে হৃদ্য ছুটে আসে। পাপড়ি নিজের কাছে নিয়ে নেয়। অতঃপর বিপন্ন কণ্ঠে বলল,
“সব উড়ে যাচ্ছে,আপু! ফ্যান বন্ধ কর। জানালা বন্ধ কর।”
হৃদ্যের কথামতো রিধিও ছুটাছুটি করে। ফ্যান বন্ধ করে,জানালা বন্ধ করে। তারপর হৃদ্যের সাথে পাপড়ি কুড়ানোতে লেগে পড়ে। বেশ সময় নিয়ে হলেও দুজন সকল পাপড়িগুলো জড়ো করতে সক্ষম হয়। তন্মধ্যেই শায়লা হক হাজির। ছেলেমেয়ে দুজনের উদ্দেশ্যে বললেন,
“খাবার বাড়া হয়েছে। তাড়াতাড়ি আয়। তোদের বাবা অপেক্ষা করছেন।”
প্লেটে ভাত নিতে নিতে বাবার দিকে তাকাল রিধি। তার বাবা আজিজুক হক নিঃশব্দে খাবার খাচ্ছেন। ঠোঁটদুটো বিষন্ন। নাকের পাটা দুটোতে গভীর গাম্ভীর্য। চোখের মনি দুটো বড্ড অস্থিরতায় কাঁপছে। খাবার খাচ্ছেন খুব দ্রুত!
রিধি শুধু ভাত নিয়েই বসে থাকল। তার রাগ হচ্ছে,কান্না পাচ্ছে,কষ্টে বুক ভার হয়ে আছে। আজ দু মাস হলো বাড়ি ফিরেছে অথচ বাবার মুখ থেকে একটি শব্দও শুনার ভাগ্য করতে পারছে না। দেখা হলে চোখ ফিরিয়ে নেয়। আগ বাড়িয়ে কিছু বললে উপেক্ষা করছে। খুব প্রয়োজন পড়লে ভাববাচ্যে কথা বলছে। রিধি পাশে বসা ছোট ভাই হৃদ্যের এক হাত চেপে ধরল। সঙ্গে সঙ্গে চোখ গলে এক ফোটা পানি গড়িয়ে পড়ল!
___________________________________
ভ্রমর রাতের খাবারটা শেষ করেই বারান্দায় ছুটে যায়। এটা তার রোজকার অভ্যাস। ঘুমানোর আগে কিছু মুহূর্ত বারান্দায় কাটানো চাই-ই চাই। গাছের পাতার মরমর শব্দের মৃদু বাতাস গায়ে মাখবে,আকাশে চাঁদের জোসনা কিংবা আঁধার মেঘকে সঙ্গী করে হৃদ্যের সাথে গল্পগুজব করবে। চলবে ঘন্টার পর ঘন্টা মান-অভিমানের রঙঢং। সেই সাথে তার খুবই পছন্দের গিটারের টুংটাং সুর ও হৃদ্যের ঠোঁটের সাহায্যে তৈরি মিহি শিস ধ্বনি! কিন্তু আজ? ভ্রমর বার কয়েক মায়ের পাশের রুমটায় ঢুকল তবে বারান্দায় গেল না। দূর থেকে উঁকি দিয়ে রুম ছেড়ে বেরিয়ে এসেছে। মায়ের রুমে এসে ধুপ করে বিছানায় শুয়ে পড়ল। সেই সময় পেছন থেকে শরীফা বেগম ধমকে উঠলেন,
“বিছানা না ঝেড়েই শুয়ে পড়লি? নাম বলছি। জলদি।”
ভ্রমর নামতে চাইল না। নড়েচড়ে বলল,
“ময়লা নেই,আম্মু। আমি দেখেছি।”
মেয়ের কথা কানে নিলেন না শরীফা খন্দকার। মেয়েকে টেনে নিচে নামালেন। দাঁড় করিয়ে রেখে বিছানা পরিষ্কার করলেন। বিছানার চাদর টান টান করে নিলেন। পরপর দুটো বালিশ সুন্দর করে রেখে বললেন,
“তুমি যেমন অবস্থায় থাকো কখনও যত্ন করতে ভুলবে না। কেমন?”
ভ্রমর মাথা এক পাশে কাত করে আগের ন্যায় শুয়ে পড়ল। আম্মু পাশে শুতেই আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে ধরল। চোখ বন্ধ করে থাকল অনেক্ষণ। ঘড়ির কাঁটা ঘুরছে। এক মিনিট,দুই মিনিট করে ঘন্টা পার হচ্ছে। সেই সাথে গভীর হচ্ছে রাতে মায়া। কিন্তু ভ্রমরের চোখে ঘুমের দেখা নেই। উপরন্তু জোর করে চোখ বন্ধ করে রাখায় পাতা দুটো ব্যথা ও ক্লান্ত হয়ে পড়েছে । ছাড়া পাওয়ার জন্য ছটফট করছে। ভ্রমর তাদের ছটফটে পাত্তা দিল না। আজ সে ঘুমাবেই। ঘুম না আসলেও চোখ বন্ধ করে রাত পার করবে! ভ্রমরের দৃঢ় সংকল্পে ব্যঘাত ঘটল গিটারের টুংটাং সুরে। ভ্রমর ফট করে চোখ মেলে। সাথে সাথে গিটারের সুর ধারাল হয়ে কানে বাজছে। ভ্রমরের হৃদয় স্পন্দন বেড়ে যায়। ভয়ে শক্ত হয়ে আছে। শক্ত অবস্থায় মনিদুটো নাড়িয়ে আম্মুকে দেখার চেষ্টা করে। ইচ্ছে হয় তাঁর কানদুটো চেপে ধরে রাখতে। যদি জেগে যায়? ভ্রমরের মনে হলো সময়ের সাথে সাথে গিটারের শব্দ আরো জোরাল হচ্ছে। সে এই সুর আটকাবে কিভাবে? নানা পন্থা খুঁজতে থাকে। এই রুমের জানালাটি ভিন্ন পাশে হওয়ায় গিটারের শব্দ আসবে না। জানা থাকা সত্ত্বেও ভ্রমর বন্ধ জানালাকে ধাক্কিয়ে শব্দ রোধ করতে চায়। এক পর্যায়ে দরজার দিকে ছুটে যায়। নিচে অতিনগন্য ফাঁকটুকু বন্ধ করতে ব্যস্ত হয়ে পড়ে। নিজের সুতি ওড়না দিয়ে লম্বাভাবে ফাঁকার মধ্যে ঢুকিয়ে দিল। তারপর কান খাড়া করে শুনার চেষ্টা করে শব্দ আসছে নাকি। আসছে না। ভ্রমর হাঁফ ছেড়ে বাঁচে। বুকে ডান হাত রেখে জোরে নিশ্বাস ছাড়ে। অতঃপর শান্তিমনে বিছানায় উঠে পড়ে। সবে বালিশে মাথা লাগিয়েছে অমনি হৃদ্যের সেই মারাত্মক শিসধ্বনি ভেসে আসে। ভ্রমর শোয়া থেকে উঠে বসে। থম মেরে বসে থাকে কিছুক্ষণ তারপর একবার মায়ের দিকে তাকিয়ে ভোঁ-দৌড়। দরজা খুলে পাশের রুমে ঢুকে পড়ে হনহনিয়ে। বারান্দায় পা ফেলেই কাঁদোকাঁদো গলায় বলল,
“তুমি আমাকে ঘুমাতে দিচ্ছো না কেন? আমি ঘুমাব!”
প্রতিত্তোরে হৃদ্য শব্দ করে হেসে উঠল। যে হাসির একমাত্র মুগ্ধ দর্শক ভ্রমর।
______________________________________
দেখতে দেখতে আঠারোতে পা দিয়েছে ভ্রমর। সেই সুবাদে শরীফা খন্দকার সারাদিন বাড়িতে। তার বুটিক হাউজ বন্ধ আজ। সকল সহকারী ও কর্মচারীকে নিজ বাড়িতে দাওয়াত দিয়েছেন সন্ধ্যার মিলাদে। কিছু গরীব মানুষকেও দাওয়াত দেওয়া হয়েছে। রাতে ভালো-মন্দ রেঁধে খাওয়াবেন। রান্না নিয়ে ভীষণ শৌখিন তিনি। ব্যবসায়ের কাজে ব্যস্ত থাকা ফলেও বাড়ির রান্নাটা তিনি নিজেই করেন। কিন্তু সীমিত সময়ের জন্য মনমতো রাঁধতে পারেন না। মেয়ের জন্য দায়সারা রাঁধেন। আজ সময় নিয়ে রাঁধবেন। খুব যত্ন নিয়ে। শরীফা খন্দকার খুব খুশি। সাথে সাহায্যের জন্য পপি ও নীলা তো আছেই।
রান্নার কাজ শেষ করে শাড়ি পাল্টে নিলেন শরীফা খন্দকার। একটু পরেই ইমাম সাহেব ও কয়েকজন হুজুর আসবেন মিলাদ পড়াতে। এরমধ্যেই আশেপাশের হাতেগুনা কয়েকজন প্রতিবেশি চলে এসেছেন। শরীফা খন্দকার পপিকে সঙ্গে নিয়ে মোটামুটি পর্যায়ের আতিথ্যেয় পর্ব শেষ করতে এক অল্প বয়সের মেয়ে জিজ্ঞেস করল,
“আন্টি,ভ্রমর আপু কোথায়?”
শরীফা খন্দকার বিনয়ী হেসে বললেন,
“ভেতরে আছে। তোমরা বসো,আমি নিয়ে আসছি।”
শরীফা খন্দকার চোখের ইশারায় পপি ও নীলাকে কিছু বুঝিয়ে মেয়ের উদ্দেশ্যে হাঁটা ধরলেন। রুমে ঢুকতেই হৃদয়টা বিষাদে ছেয়ে গেল। ভ্রমর খাটের উপর মলিন মুখে বসে আছে। পরনে পুরোনো জামা,এলোমেলো চুল,চোখ দুটো ফোলা।
শরীফা খন্দকার চাপা কান্নাটা লুকিয়ে মেয়ের কাছে বসলেন। চুলে আলতো পরশ রেখে মোলায়েম গলায় বললেন,
“সোনামণি? নতুন জামা পরবে না?”
ভ্রমর ছলছল নয়নে মায়ের দিকে তাকাল। কিছু বলল না। কী মনে করে সাদা রঙের জামাটা তুলে নিল। নিঃশব্দে হাঁটা ধরল ওয়াশরুমে। শরীফা খন্দকার আঁচল মুখে চেপে ধরলেন। হঠাৎ মনে পড়ল,এত ব্যস্ততার মধ্যে ভ্রমরের জন্য উপহার কেনা হয়নি!
মেহমানদের বিদায় দিতে দিতে রাত প্রায় এগারটা। ভ্রমর ক্লান্ত মনেই মাকে সাহায্য করল কিছুক্ষণ। পরে মায়ের কথায় বাধ্য হয়ে রুমে শুতে আসে। নতুন জামা পাল্টানোর পূর্বে একবার ধীর পায়ে বারান্দায় যায়। সামনের বারান্দাটি শূন্য। একগাদা অন্ধকারে ডুবে আছে। ভ্রমর ঠোঁট উল্টে কেঁদে ফেলল। কাঁদতে কাঁদতে অস্পষ্ট কণ্ঠে বলল,
“হৃদ্য ভাইয়া। তুমি এবারও আমার জন্মদিন ভুলে গেছ! আমাকেও ভুলে গেছ। এই দিনটিতেই তুমি সব ভুলে যাও। একটিবারের জন্য চোখের দেখাও করো না। কেন এমন করো?”
কান্নাজড়িত কথাগুলো শেষ করে ভ্রমর আবার বলল,
“থুক্কু! হৃদ্য ভাইয়া না মি. প্রতিবেশি।”
ভ্রমর হাঁটু মেরে রেলিং ঘেষে বসে পড়ে। চোখের জল ফেলতে ফেলতে ভাবে, এই দিনটাতে তোমার কিসের এত ব্যস্ততা? আমার জানতে ইচ্ছে হয়,দেখতে ইচ্ছে হয়। তুমি তো বলো না। আমাকেই জানতে হবে। কিন্তু কীভাবে? আমি তো তোমার বাসাও চিনি না। কত জায়গায় নিয়ে যায়,শুধু নিজের বাসায় নিয়ে যায় না! ভ্রমরের আফসোস হয়,আবার কান্না আসে। তুমুলবেগে অশ্রু ঝরায় মগ্ন হতেই মায়ের গলা পায়। ভ্রমর দ্রুত চোখের পানি মুছে ফেলে। বারান্দা ছেড়ে রুমে আসতে মায়ের মুখোমুখি। শরীফা খন্দকার বিরক্ত গলায় বললেন,
“কখন থেকে ডাকছি। শুনতে পাস না?”
ভ্রমর উত্তর দিতে গিয়ে বুঝতে পারল গলা বসে গেছে। তাই চুপ থাকল। শরীফা খন্দকার আবার বললেন,
“বাইরে চল। একজন তোর সাথে দেখা করতে এসেছে।”
ভ্রমর চমকায়। জিজ্ঞেস করে,
“কে?”
শরীফা খন্দকার রহস্য করে বললেন,
“গেলেই তো দেখবি। চল।”
ভ্রমর মাকে ফেলেই দৌড়ে বসার রুমে চলে গেল। মনে তখন আশার আলো তীব্র হয়ে জ্বলছে। আশার আলো দুদিক থেকে দু রঙের জ্বলছে। ভ্রমর ভেবেই ফেলল হয় তার বাজান নাহয় হৃদ্য এসেছে। সারপ্রাইজ দেওয়ার নাম করে তাকে চমকে দেবে তাই।
চলবে