প্রেমজাল পর্ব ১৩+১৪

#প্রেমজাল
পর্ব ১৩
জান্নাতুল মাওয়া মাহিমুন

“হানিমুন” শব্দটা শুনতেই আমার বুকে হিমপ্রবাহ বইতে লাগলো। আমি থ মেরে দাঁড়িয়ে পরলাম। উনি আমার দিকে প্রশ্নসূচক ভাবে তাকাতেই আমি তার দিকে প্রশ্ন ছুড়লাম।

-“আ..আপনার মাথা ঠিক আছে তো? মদ খেয়েছেন নাকি?”

আয়ান মুচকে হেসে বললো,

-“না তবে তোমাকে খাবো”

এতোক্ষণে আমার অজ্ঞান হওয়ার উপক্রম। ছিঃ! কি অশ্লীল লোক! মনে হচ্ছে কানে অনরবত বেজে চলেছে ~ “আমি জ্ঞান হারাবো, আমি মরেই যাবো। বাচাতে যে পারবে না কেও”.

আকস্মিক ভাবে হাতের টান অনুভব করতেই দেখলাম আমার হাত উনার হাতের মুঠোয় আবদ্ধ করে হেটে চলেছে। হাটতে হাটতে মেঠো পথ পেরিয়ে ছনের দৌচালা ঘরগুলোর দিকে আসলাম। পাশাপাশি অনেক ঘর। একজন বয়স্ক লোক ঘরের সামনের ছোট্ট উঠানের রোয়াকে বসে একা একা কথা বলসে। আর কি যেনো বোতল থেকে ঢেলে ঢেলে খাচ্ছে। পরক্ষনেই মনে পড়ল। এটা গ্রামে খুব প্রচলিত পানীয় দ্রব্য। যা খাচ্ছে তা নাকি কি একটা ফল দিয়ে বানায়। খেতেও নাকি মজা আর খেলে মন মেজাজ ফুরফুরে হয়ে যায়। আমার মনে মনে খাওয়ার অনেক শখ জাগলো। কিন্তু শখ টা সুপ্ত রাখাই শ্রেয় মনে করলাম। যদি খেতে চাই নির্ঘাত এই ব্যাটা বজ্জাত ইয়া বড় রাম ধমক দিয়ে বসবে, হুহ।

হঠাৎ চোখের সামনে তীব্র আলোর আচ পেতেই আমি আমার ভাবনার সুতো ছিড়ে চোখ বন্ধ করে মুখ খিচে নিলাম।

-“এই মাইয়্যা কেডা? তোর বউ?”

আমি সরু করে আস্তে আস্তে চোখের পাতা প্রসারিত করলাম। ছাই রঙের সুতির কাপড় পরনে পাকা চুলের মহিলা হারিকেন উচু করে আমার দিকে প্রশ্নসূচক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। মনে হচ্ছে ভূত দেখেছে না হয় এর আগে মেয়ে দেখে নি। তার চাহনি এমনি অর্থ বহন করছে। আমি উনার দিকে একদৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলাম। বুড়ি হলে কী হবে? যৌবনে যে কোনো নায়িকা থেকে হয়তো কম ছিলো না। বৃদ্ধ বয়সেও যৌবনের সৌন্দর্য ধরা দিচ্ছে। চোখের মাংসপেশি কুচকিয়ে গেলেও চোখ এখনো টানা দেওয়া। নাকও খাড়া। পান খেয়ে ঠোট খানিকটা কালচে লাল বর্ণ ধারণ করেছে। গায়ের রঙও মন্দ নয়। চুল আধ-খোপা করা থাকলেও ঢের লম্বা যে বুঝা যাচ্ছে। দেখতে এখনো অনেক সাবলীল।

-“হুম। কেনো চিনতে পারো নি,দিদুন?” বলে স্মিত হাসলেন আয়ান।

-“এই মাইয়্যা দেখি মেলা পেত্নির মতো দেখতে হইয়া গেসে” মুখ টিপে বললেন বৃদ্ধ মহিলা।

মনটা আমার নিমিষে খারাপ হয়ে গেলো। মনে মনে বুড়িটাকে নায়িকার সাথে টক্কর দিলাম। কিন্তু ইনি তো আমাকে পেত্নির সাথে! ধ্যাত! ভাল্লাগেনা ভাল লাগে না। মাঝখান থেকে দি গ্রেট আয়ান চৌধুরী ফোড়ন কাটলো।

-“ছোটবেলা থেকেই পেত্নি ছিলো। এখন আরো ভয়ংকর পেত্নি হয়েছে। মাঝে মাঝে তো হার্ট-অ্যাটার্ক করাতে চায়। কতটা ভয়ংকর তুমি বুঝতে পারছো?”

এবার যেনো কাটা গায়ে নুনের ছিটা। শরীরটা জ্বলে ছারখার হয়ে যায় এই ব্যাটার কথা শুনলে আমার। আমি আর পেত্নি? সুপ্পু তো বলতো আমি নাকি ছোটবেলায় পুরাই গুলুমুলু পুতুল ছিলাম। কেও আসলে আমার কপালে, কানের লতিতে কালো কাজলের টিপ লাগাতো। কিন্তু এদের হাব-ভাব দেখে মনে হচ্ছে আমি রিনা খান টাইপ ছিলাম আর এখনো হয়েছি। আমি আয়ানের দিকে আড়চোখে তাকালাম। উনি ঠোঁট কামড়ে নিঃশব্দ হাসছে। মন চায় তো পাথর মেরে মাথা ফাটিয়ে দেই। পচা লোক একটা! আর কথাই বলবো না, হুহ! কখন কে চায় বুঝি না। বাড়ি যাওয়ার নাম করে কই নিয়ে আসছে আল্লাহ মাবুদ জানে। মেঘের তীব্র গর্জনে পুরো আকাশ কেপে উঠলো। আমি কিছুটা বিস্মিত হয়ে উনার হাত চেপে ধরলাম। আমার হাত উনার হাতে তখনো আবদ্ধ। বৃষ্টির বেগ বেশি না থাকলেও ফোটা ফোটা পানির কণায় আমাদের শরীর অনেকটা ভিজে গেসে। সাথে রাতের গভীরতায় ঠান্ডা আমেজেও বেড়েছে। আবার খোলা আকাশে মেঘের প্রকট ঘর্ষণে অনেকটা ভীতিকর অবস্থা আমার।

-“আমাদের কি সারারাত এখানেই দাড় করিয়ে রাখবে, দিদুন?” আদুরে গলায় বললো আয়ান।

এই “দিদুন” ডাক টা আমার বড্ড চিনা চিনা লাগলেও মনে করতে সক্ষম হলাম না। কোথাও হয়তো আগে শুনেছি। বৃদ্ধ মহিলাটা আমার দিকে তাকিয়ে ঠোঁট প্রসারিত করলো। যার অর্থ বোঝা আমার পক্ষে সম্ভব হলো না। আমি ফ্যাল ফ্যাল করে মহিলার দিকে তাকিয়ে রইলাম। পরক্ষণেই উনি কিছুটা জোরে জোরে ডাক লাগলো,

-“এই তিথি! তিথি!! তোর সতিন আইসে। ঘরে তুলবি না? তোর জামাই তো মরিয়া হইয়া উঠছে নুতন বউ এর লিগা”

সাথে সাথে অট্টহাসিতে মেতে উঠলো আয়ান। এদের কাহিনী “আই এফ এল” টাওয়ারের উচ্চতা দিয়ে আমার মাথার উপর দিয়ে যাচ্ছে। কেনো জানি হাত-পা ছিটিয়ে কান্না করতে ইচ্ছা করছে। বার বার কানের সামনে সতিন শব্দ টা ঝংকার দিতে লাগলো। এমনেই রিয়া আপু আবার আরেকজন আছে নাকি। এই তিথি টা কে আবার?

-“আরে আয়াননন…..…” বলে একখানা ঘর থেকে হ্যাংলা পাতলা একটা মেয়ে অতিদ্রুত বেগে আমাদের সামনে এগিয়ে আসলো। প্রায় আয়ানের গা ঘেষে দাড়ালো। পারলে হয়তো কোলেই উঠে যেতো। হায় আল্লাহ! আর কি কি দেখতে হবে আমার?

বৃদ্ধ মহিলাটি ঝাঝালো কণ্ঠে বললো,

-“ওদের আগে ভেতরে আন। পরে কথা কইতে পারবি” বলে বৃদ্ধ মহিলাটি ঘরের সামনের ঐ রোয়াকটায় গিয়ে পা তুলে আরাম করে বসলো।

তিথি নামের মেয়েটা মুখ ভার করে আম গাছ তলার সাথে একটা ঘর খুলে দিলো। হারিকেন জ্বালাতেই আধার ঘরটি আলোয় ছড়িয়ে পরলো। ঘরে একপাশে একটা চকি (খাটের মতো অনেকটা) আর আরেকটা আলনা, যেখানে দুটো কাপড় আর গামছা ভাজ করা। সাথে ছোট্ট একটা টেবিলে টিনের পাত্র দিয়ে মাটির কলস ঢাকা। আমাকে আলনা ইশারা করে বললো কাপড় পরিবর্তন করে নিতে৷ আমি নিজের দিকে তাকিয়ে দেখলাম আমার কাপড় আরো অনেকটাই ভিজে গেসে। তাই আমি আলতো হেসে ডান দিকে মাথা হেলিয়ে সম্মতি জানালাম। মেয়েটা দু’জনের উদ্দেশ্যে ঘরের বামদিকে হাত দিয়ে বললো,

-“অই দিকটায় কলপার। আমাদের টিউবওয়েল নেই অইখান থেকে পরিষ্কার হতে হবে” বলে চলে গেলো।

মেয়েটা চলে যেতেই আয়ান আমার পাশ কাটিয়ে গামছা নিয়ে কলপারের দিকে যেতে লাগলো। আমি কিছু না বলে হারিকেনের শিখা হালকা কমিয়ে নিলাম। তারপর আলনা থেকে একখানা কাপড় নিয়ে
আমি আমার পরনের শাড়ির আঁচল কাধে তুলে নিলাম। সেই কাপড়টা হাতে নিয়ে সেটার ভাজ খুলে কাপড়ের আগা-মাথা খুজে লাগলাম। কাপড়ের দিক পেয়ে সামনে তাকাতেই দেখি আয়ান আমার দিকে ফিরে একদৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। আমি উনার দিকে সন্দিহান চোখে তাকালাম। উনার দৃষ্টি আমি অনুসরণ করতে দেখলাম কোমড়ের বেশ খানিক অংশ উম্মুক্ত সেখানে তাকিয়ে আছে। আমি খনিকের মধ্যেই অনেকটা অপ্রস্তুত হয়ে চট করে শাড়ির আঁচল কাধে থেকে নামিয়ে কোমড় ঢেকে নিতেই উনি আমার কাছে এগিয়ে আসতে শুরু করলেন। আমি ভয়ে ভয়ে পিছ পা হয়ে হতে লাগলাম আর উনি এগিয়ে আসতে। পিঠের সাথে আলনা ঘেষে গেছে, তাও উনি এগিয়ে আসছেন। শুকনো একটা ঢোক গিললাম। আমি হাজার চেষ্টা করেও কিছু বলতে চেয়েও বলতে পারছি না। গলার মাঝে সব কথা কুন্ডলী পাকিয়ে থেমে যাচ্ছে।

আয়ান পুনরায় আমার শাড়ির আঁচল কাধে উঠিয়ে দিতেই চোখ মুখ বন্ধ করে ফেললাম। সাথে পায়ের আঙুল মুড়িয়ে আকড়ে নিলাম। দম ভারী হয়ে আসছে খুব। এমন বিব্রতকর অবস্থায় আমার কি করা উচিত? উনাকে ধাক্কা দিবো? সেটা দেওয়া কি আদৌ উচিত হবে? হঠাৎ আয়ান কোমরে…
#প্রেমজাল
পর্ব ১৪
জান্নাতুল মাওয়া মাহিমুন

সাথে পায়ের আঙুল মুড়িয়ে আকড়ে নিলাম। দম ভারী হয়ে আসছে খুব। এমন বিব্রতকর অবস্থায় আমার কি করা উচিত? উনাকে ধাক্কা দিবো? সেটা দেওয়া কি আদৌ উচিত হবে? হঠাৎ আয়ান কোমরে ছোয়ানোর সাথে শাড়ির খামচে ধরলাম। উনাকে সরানোর সাধ্য আমার নেই। যতই হোক উনি আমার লিগ্যাল হাজবেন্ট আফটার অল। উনি উনার বাম হাতে আমার কোমর চেপে কিছুটা সামনে টেনে আনলেন। আরেকহাতে উন্মুক্ত কোমড়ে গোজা অংশে হাতের ছোয়া লাগতেই অনেকটা ভড়কে গেলাম। না চাইতেও ক্ষণিকের মধ্যে ভেসে উঠলো আমার জীবনের স্মৃতির আড়ালে ঢেকে থাকা কালো অধ্যায়ের বিষাক্ত কিছু মূহুর্ত। প্লাবনের মতো আমার চোখ উপচে পরলো অশ্রু ধারা। আয়ানের এমন স্পর্শোদ্যগীতে ঘাবড়ে গিয়ে সজোরে উনার গালে থাপ্পড় বসিয়ে দিলাম।

ঘটনার আকস্মিকতায় উনি বুঝতে পারেনি আমি এমন একটা কান্ড করবো। যার সাপেক্ষে তার মুখ কিছুটা ঘুরে গেছে। আমার কোমর জরিয়ে থাকায় দূরে সরে না গেলেও বেশ লেগেছে গালে। তবে পর মুহূর্তেই রাগে চোখ মুখ শক্ত হয়ে এলো। উনার মুখমন্ডল হিংস্রতার ছাপ ফুটে উঠলো। তার চোখে যেন আগ্নেয়গিরি অগ্নি গোলা বিস্ফোরণ ঘটছে। নির্ঘাত এই আগুনে আমাকে পুড়িয়ে ভস্মীভূত করে দিবে! আজ অব্দি কারো সাহস হয় নি আয়ান চৌধুরীর সাথে এমন এলাহী কাজ করার। আর প্রয়োজন হয়নি বলেও অভ্যস্ত নন। আমার কোমর চেপে থাকলেও আমাদের মাঝে খানিকটা জায়গা ফাকা ছিলো। উনি এবার ডান হাত দিয়ে কোমর খামচে তার আরো কাছে টেনে নিলেন। তার মুখের ভাব কঠিন থেকে কঠিনতর হয়ে আসছে। যা আমি ছিমছিম আলোয় অবয়ব দেখতে পারছি। উনার নখের তীব্র চাপের প্রখরতায় চামড়া চিড়ে যাচ্ছে। হয়তো রক্তও বেরিয়েছে। ভয়ে চোখের কোণ বেয়ে পানির স্রোত বইতে শুরু করে দিয়েছে। এবার ব্যথা সহ্য করতে না পেরে শব্দ করেই কেদে দিলাম।

আমার সামনে এখনো সেদিনের অনাকাঙ্ক্ষিত মূহুর্ত অনবরত স্মৃতি চারণ হচ্ছে। আমাকে আমার অনিচ্ছা থাকার সত্ত্বেও ছোয়ার প্রয়াস, আমাদের মাঝে ধস্তাধস্তি, আমার ইজ্জত লুট করার জঘন্য আক্রমণ আমার চোখের সামনে ভেসে উঠেছে। আমি অতীত ভেদ করে বর্তমানে চেয়েও আসতে পারছি না। আমি চোখ বন্ধ করে কান্নাভেজা স্বরে আমার বাম দিয়ে উনার ডান বাহু সরানোর বৃথা চেষ্টা করতে লাগলাম। কিন্তু ফলাফল প্রতিবারে শূণ্য ছিলো। ছাড়াতে চেয়েও পেরে উঠি নি। না পেরে ডান হাত মুঠ করে আয়ানের বুকে আঘাত করতে করতে বললাম,

-“প্লিজ ছেড়ে দেন আমাকে। আমার সাথে এমন নোরাংমি করবেন না” বলতে বলতে বার দুয়েক আঘাত করার পর তৃতীয় বারের সময় সেই হাতটার কব্জি আয়ানের হাতের মুঠোয় খুব শক্তভাবে আবদ্ধ হয়ে গেলো।

-“তোমাকে আমি আমার করে নিতে চাইলে তোমার কি আদৌ কোনো কিছু করার জোয়ার আছে?” চোখ মুখ শক্ত করে দাতে দাত চেপে রাগের তীব্রতায় মৌনতা ভেঙ্গে জিজ্ঞেস করলো আয়ান আমাকে।

আমার কান পর্যন্ত গেলেও আমি যেনো কিছুই শুনতে বা বুঝতে পারছি না। আমি একমনে ফুপিয়ে ফুপিয়ে কাদতে কাদতে “প্লিজ প্লিজ” করতে লাগলাম। রীতিমতো পুরো শরীর ভয়ে থরথর করে কাঁপছে আমার। বাস্তবিক জ্ঞান যেনো শূন্য হয়ে পরেছে।

হঠাৎ আয়ান কি মনে করে আমার হাত ছেড়ে দিয়ে এবার উনি সামনে এগিয়ে উনার সাথে মিশিয়ে জরিয়ে ধরলেন। আমি অস্বাভাবিক ভাবে তখনি কাপছি। আমার দম বন্ধ হয়ে আসার উপক্রম। উনি আলতো ভাবে আমার চুলে হাত বুলিয়ে বুলিয়ে দিয়ে লাগলেন। উনি নিতান্ত আমাকে শান্ত করার চেষ্টায় ব্যস্ত। আমি উনার বুকে মুখ গুজে চোখ করে আছি৷ ভয়-ত্রাস আমাকে অদৃশ্য বেড়াজালে আটকে দিচ্ছে। আমি না পেরে উনার শার্ট খামচে গভীর ভাবে আকড়ে ধরলাম। উনার হৃদ স্পন্দনের দ্রিমদ্রিম আওয়াজ আমাকে প্রখর ভাবে টানছে। আমি বারবার প্রগাঢ় নিশ্বাস ফেলতে লাগলাম। উনি ধীরস্থায়ে আমার সামনের চুলগুলো কানের পিছনে গুজে দিয়ে বললো,

-“কিছু হয়নি আহুপরী। ডোন্ট বি প্যানিক। আমি ছাড়া কেও নেই। তোমার কিছু হবে না। আমি আছি না? আমি তোমাকে কিছু হতেই দিবো না”

আমি এবার কিছুটা স্বস্তি পাচ্ছি। বেশ কয়েকটা শুকনো ঢোক গিলে নিজেকে সামলানোর চেষ্টা করলাম। আস্তে আস্তে ট্রমা থেকে বেরোনোর চেষ্টা করলাম। উনার শার্ট ছেড়ে দিয়ে ধীর বেগে আয়ানের বুক থেকে মাথা তুললাম। নিজেকে যথেষ্ট স্বাভাবিক রাখার চেষ্টা করে অশ্রু নয়ন সিক্ত কাপাকাপা গলায় বললাম,

-“আ..আম..আমার আসলে অন্ধ..অন্ধকারে সে..সেদিনের ঘটনা….”

পুরো কথা শেষ না হতেই উনি আমার ঠোটে আঙ্গুল দিয়ে থাকিয়ে দিলেন।

-“ডোন্ট ওয়ারি! আমি বুঝতে পেরেছি। জাস্ট হেভ এ রিলেক্স। শান্ত হও” বলে উনি পাশে থাকা হারিকেনের শিখা বাড়িয়ে আমার কোমরের কাছে ধরলেন। আমার সংকুচিত চোখ আস্তে আস্তে নামিয়ে হারিকেনের আলোয় নিজের কোমড়ের দিকে তাকালাম। কোমড়ের নিচে অংশে শাড়ির জমিন বেয়ে পিল পিল করে একটা কাঠ পোকা বেয়ে চলেছে। নির্ঘাত এটা আম গাছের ডাল থেকে এসেছে। সাথে সাথে চোখ বড়সড় করে পর পর খানিকটা জোরে চিৎকার দিয়ে মানুষটার গলায় ঝুলে ইচ্ছেমতো পা ছোড়াছুড়ি করতে লাগলাম। কিন্তু পোকাটাও যেন জেদ ধরছে সরবে না। শাড়ি আকড়ে আছে।

-“হেই, তাড়াতাড়ি সরান এটাকে। প্লিজ সরান না। এই শুনছেন না? সরান। প্লিজ তাড়াতাড়ি”

আমার এতো চিল্লাপাল্লায়েও আয়ানের কোনো মুখোভাব দেখা গেলো না। উনি এখনো কোমর জরিয়ে আছে। বিন্দু মাত্র নড়চড় করলো না। আমি আবার বলতে শুরু করলাম।

-“এই যে? আমি এসবে ভয় পাই অনেক। আমার পা যদি খেয়ে টেয়ে ফেলে। প্লিজ তাড়াতাড়ি সরান”

এবার উনি মৌনতা কাটিয়ে থমথমে স্বরে বললো,

-“এখন কেনো? এতোক্ষণে তো কেদে কেটে বাণ বানাচ্ছিলে”

-“ধ্যাত! সরান তো” রেগে গিয়ে বললাম আমি।

-“পারবো না। আমি আবার তোমার মত সতী-সাবিত্রী টাচ করবো সামান্য পোকা ছাড়াতে?”

আমি কাদো কাদো হয়ে বললাম,

-“আপনি খুব পচা। সরান না। আপনার মায়া দয়া নেই নাকি?”

-“ঢের আছে। তবে শুধু মাত্র আমার বউ এর জন্য”

-“এখন তো রিয়া আপু নেই। যখন আসবে, তখন দেখিয়েন। এখন এটা থেকে বাচান”

আয়ান আমার কথায় সরু করে বললো,

-“কি নাম বললে? কে আসবে?”

আমার এবার টনক নরলো। ভয়ের চোটে কি বলতে গিয়ে কি বলে ফেললাম। এখন আদালতে দাড় নিশ্চিত করাবে। আমি কথা ঘুরানোর জন্য উনার পিঠে সরু ধারালো নখ বসিয়ে দিয়ে আবার পা ছোড়াছুড়ি শুরু করে দিলাম।

আয়ান একটা দীর্ঘ নিঃশ্বাস ফেলে শাড়ি থেকে পোকাটা ছাড়িয়ে দিলো।

-“আর কতোক্ষণ বাদরের মতো ঝুলে থাকার ইচ্ছা আছে? চিল্লাপাল্লায় অলরেডি আমার কানের ১৩ টা বাজলো” গম্ভীর গলায় বললো আয়ান।

আমি উনার গলা ছেড়ে দিয়ে সোজা হয়ে দাড়ালাম। উনি ছাড়া পেয়ে কিছুক্ষণ আমার দিকে গাকিয়ে চলে যেতেই আমি কাচুমাচু হয়ে জিজ্ঞেস করলাম,

-“কোথায় যাচ্ছেন আপনি?”

উনি ঘাড় ঘুরিয়ে বিরক্তি মিশ্রিত চাহনি নিয়ে ফিরে তাকালেন। পরক্ষণে ভালো মতো ঘুরে আমার দিকে ঠোঁট কামড়ে হাসলেন। উনার চোখ দু’টো দুষ্টু হাসির ছলে মেতে উঠেছে। কিন্তু কেনো তা আমি বুঝতে পারলাম না। আমি উনার দিকে ভ্রু সংকোচন করে প্রশ্নসূচক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলাম। যার অর্থ হলো উনার এভাবে আমার দিকে থাকার কারণ কি? উনি মিটমিট করে হাসতে হাসতে ভ্রু নাচালো। পরক্ষণে যা বলল আমার মুখ লাল নীল সবুজ হয়ে নাক কান দিয়ে ধোয়া ছুটার উপক্রম।

-“একচুয়েলি কোথায় যাবো? না গিয়ে তোমার শাড়ি পরা দেখা ভালো হবে বয়ে খারাপ হবে না, তাই না? দেন লেটস স্টার্ট সুইটহার্ট । তো শাড়ি তুমি খুলবে নাকি আমি খুলবো মিসেস আয়ান চৌধুরী?”

#চলবে…

[

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here