প্রেমালঘ্ন পর্ব -২৯+৩০

#প্রেমালঘ্ন
#লেখিকাঃনওশিন আদ্রিতা
#পার্টঃ২৯
,
,
,
,
স্টেজের উপরে পায়ের উপরে পা তুলে বসে আছে প্রিয়ন্তিকা নামের মেয়েটি। তার পাশেই হাস্যজ্বল চেহারায় আসফি বসে আছে। দুইজনার দুরুত্ব খুব বেশি নয়। দুইজনার ঠোঁট লাগাম হীন ভাবে নড়েইই চলেছে যেনো কতোদিনে কথা আটকে আছে তাদের ভিতরে।কথার মাঝেই শরীর দুলিয়ে হাসতে ভুলছেন না আসফি ভাই।সকাল অব্দিও এই হাসি দেখার জন্য কতো টাই না মনে মনে হা হুতাশ করলাম এখন সে হাসি চোখে পড়ছে কিন্তু সে হাসিটার কারন আমি নয় বরং অন্য কোন নারী ভাবতেই বুকের মাঝে চিন চিন করে উঠছে।

আসফি ভাই এর থেকে চোখ সরিয়ে দৃষ্টি দিলাম এবার প্রিয়ন্তিকা নামের মেয়েটির দিকে। মুখে বিদেশি একটা ভাব থাকলেও বিদেশিনী বলা চলেনা। পড়নে লাল কালো মিশ্রনের শাড়ি সুন্দর পরিপাটি করে পড়া।চুল গুলো বেধে খোপা করে তাতে ফুল দেওয়া।উজ্জ্বল ফর্সা মুখটাই মেক আপ এর ছোয়া অব্দি নেই।হয়তো প্রয়োজন পরে না। চোখের নিচে গাঢ় করে কাজল। কপালে ছোট টিপ কানে দুল। ঠোঁটে হালকা লাল রাঙা লিপস্টিক দেওয়া ঠিক যেমন টা আসফি ভাইয়ার পছন্দ।

আমি একবার তাকালাম আসফি ভাইয়ার দিকে নিশ্বাস টা আটকে আসতে নিলো।কি এক দম বন্ধকর অবস্থা।পারলাম না বসে থাকতে উঠে চলে গেলাম সেখানে যে আমার থাকাটা সম্ভব হচ্ছিলোনা এরই মাঝে সেখানে উপস্থিত হলো মার্জান মাইশা মারিয়া।আমাকে হাসফাস করতে দেখে মার্জান এসে জরিয়ে ধরলো আমাকে তার অস্থির কন্ঠ কানে এসে বারি খেলো

—কি হয়েছে আরু এমন করছিস কেন।

—আমার নিশ্বাস নিতে বড্ড কষ্ট হচ্ছে মার্জান মনে হচ্ছে আমি মারা যাবো দম আটকে কেন এমন হচ্ছে।মার্জান এই বার আমি বাচবোনা পারবোনা তাকে হারাতে পারবোনা

আমার ঢুকরে কান্নার আওয়াজে যেনো এবার তিনজনেই আৎকে উঠলো।মার্জান আর মাইশা অনবরত মাথায় হাত বুলিয়ে জিজ্ঞেস করতে লাগলো কি হয়েছে।কিন্তু আমার যেনো কথা গলায় আটকে গেছে কি করে বলি স্বামিকে হারানোর ভয় কুরে কাচ্ছে আমার মন টাকে।দ্বিতীয় ভালোবাসা সহযে হয়না কিন্তু একটাবার যদি দ্বিতীয় ভালোবাসা নামক রোগটা ধরে যায় তখন এটা প্রথম বারের চেয়ে বেশি ভয়ংকর হয়ে উঠে যেমন থাকে মাত্রাঅতিরিক্ত ভালোবাসা তেমন ই থাকে তার থেকে দ্বিগুন হারানোর ভয়।

—আসফি স্যার কে ডেকে আন মাইশা। আমার ভয় করছে

সাথে সাথে আমি বাধা দিলাম। কারন তিনি আমার এই অবস্থ শুনলে কোন কিছুর চিন্তা না করে ছুটে আসবেন যা সৌভনীয় হবেনা ওইখানে অনেক বড় বড় অতিথি বসে আছে।তাদের সামনে থেকে উঠে আসা অপমানজনক হবে।

—তাহলে বল কি হয়েছে কিসের জন্য এমন অস্থিরতা কেন এই অস্বাভাবিক আচরণ এর কারন টাই জানতে চায়

—দ্বিতীয় বার ভালোবাসা হারানোর অদ্ভুদ ভয় তাড়া করলে কিভাবে শান্ত থাকা যায় জানিনা রে। দেখ আসফি ভাইয়ের ঠোঁটের হাসিটা কি চমৎকার প্রান চ্ছল কিন্তু সে হাসিটা আমার জন্য না ভাবতেই সারা শরীরে অদ্ভুদ এক কাপুনি দিচ্ছে অদ্ভুদ এক ব্যাথায় বুকের বাম পাশটা জর্জরিত হয়ে উঠছে।

—আসফি স্যার তোকে প্রচন্ড ভালোবাসে সেটা তুই আমাদের চেয়ে ভালো জানিস

—আমি জানি উনার ভালোবাসার গভিরতা তবুও হারানোর ভয়টা যায় না রে উনার পাশে যে অন্য কাউকে আমার সহ্য হয়না। এই চোখ দিয়ে এইভাবেই দেখেছিলাম আলিফ ভাইয়ার পাশে ভাবিকে বধূ বেশে তখন যতোটা না কষ্ট হয়েছিলো তার চেয়ে বেশি এখন এই মহূর্তে হচ্ছে।

—তুই স্যারের সাথে কথা বল

—কি বলবো তাকে বিনাদোষেই অন্য কারো সাথে জড়িয়ে তার সহধর্মিণী নিজের মাঝেই গুমরে গুমরে মরছে বুঝবে সে উলটা ভুল বুঝে জেদ করে আমার ভয় টাকে সত্যি করত্র উঠে পরে লাগবে। তোরা রাগী আর গম্ভির আসফিকে দেখলেও জেদী প্রলয় কারী বিনাশক আসফির চেহারার সাথে অবগত নস।

—মানে

—১৪ বছরের এক ছেলেকে তার বন্ধু মেরেছিলো সে মার খেয়ে নিজের মায়ের কাছে আসতেই তার না তার গালে সাপটে চড় মেরে বলেছিলো “ওই তোকে মেরেছে তুই ও ওকে মেরেই ফিরবি তুই কেন না মেরে কান্না রত চেহারা নিয়ে আসবি আজকে তোর খাওয়া বন্ধ ভুলেও মুখে একটা দানা তুলেছিস তো আমার মরা মুখ দেখবি”
মহিলা টি রাগের বশেই কথাটা বলেছিলো আদরের ছেলের গালে কপালে মারের দাগ যে মায়ের মন টাকে ক্ষত বিক্ষত করে দিচ্ছিলো। কিন্তু ১৪ বছরের জেদী ছেলেটার জেদ এতোটাই ছিলো যে সারাদিন কেউ উনার মুখে একটা দানা তুলতে পারেনি আর না রক্তাক্ত জায়গায় মলম লাগাতে পেরেছিলো।পরেরদিন স্কুল থেকে কল আসে তার ছেলে নাকি এক সাথে ৩ জন কে মেরে রক্তাক্ত করে দিয়েছে।যে ছেলেটা তাকে মেরেছিলো তার হাতে নির্মম ভাবে আসতো কলম ঢুকিয়ে দিয়েছিলো অন্য জন বাধা দিতে আসলে বড় একটা পাথর তুলে বারি দিয়েছিলো শরীরের সমস্ত শক্তি দিয়ে। এতেই খ্যান্ত হয়নি তার রাগ তাদের সাথে থাকা আরেকটি ছেলেকে ধাক্কা দিয়ে কাটা দিয়ে ভর্তি জায়গায় ফেলে দিয়েছিলো।

যখন তাকে জিজ্ঞেস করা হয় সে কেন এমন করেছে তারা তো তার ই বন্ধু ছিলো তাহলে জানিস ছেলেটার জবাব কি ছিলো

—উহু(তিনজন একই সাথে মাথা নাড়িয়ে জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকালো।)

আমি হাসলাম দিয়ে বলতে শুরু করলাম

—”আমার বন্ধু ওরা পরিক্ষার খাতাই আমার ই দেখেছে আমার নকল করেই লিখেছে কিন্তু তবুও আমি টপ করেছি তারা করেনি সে রাগে তারা আমাকে মেরেছিলো আমি কিছু বলিনি শুধু কষ্ট পেয়ে কেদে ছিলাম তখন আমার জন্মদাত্রী মা আমাকে চড় মেরে আমাকে সজ্ঞানে এনেছিলো আমি বুঝেছিলাম দোষ টা আমার ছিলো কেন তারা সাহস পাবে আমাকে আঘাত করা কেন তাদের জন্য আমার সম্মানীয় জননীর মুখে মরার কথা বেরুলে। আমার জননীর চোখের পানি আমার রক্তের চেয়ে দামী ছিলো আমার জননীর কষ্ট হয়েছিলো আমাকে আঘাত প্রাপ্ত দেখে আমার আহারহীন রাত্রী কাটানোতেও তিনি কষ্ট পেয়েছিলেন ভিষন ভাবে সে ব্যাথা আমার সহ্য সীমার বাহিরে আমার রাগ উঠেনি উঠেছিলো জেদ আমার মায়ের অশ্রু যারা ঝরিয়েছিলো তাদের মেরে ফেলার জেদ”

—একটা বার ভেবেছিস নিজের মায়ের দুই ফোটা অশ্রুর জন্য শান্ত শিষ্ট গম্ভির ছেলে যে কি না বাসায় কারো সাথে উচু গলায় কথা বলতে দেখেনি সে ছেলে ৩ টা ছেলে এই ভাবে মেরে দিলো।

—ওমা আল্লাহ গো কি ভয়ংকর।১৪ বছরের বাচ্চা ছেলের কতোটা জেদ। বড় হয়ে না জানি কেমন হয়েছে আল্লাহ জানে নির্ঘাত গুন্ডা মাস্তান দিনে দুপুরে খুন করে

তিন জনার কথাই হাসলাম ইশারায় সামনে বসে থাকা পাঞ্জাবী পরিহিত পরিপাটি সুদর্শন পুরুষটিকে হাতের ইশারায় দেখিয়ে দিলাম

—আসফি স্যার

—হাম এই সে ১৪ বছরে আসফি যে কি না নিজের রাগ জেদ সব কিছু নিজের মাঝে লুকিয়ে রাখে কিন্তু যেদিন এই আবরণ সরবে সেদিন কি হবে সেটা জানা নাই কারো।

তিনজনেই চুপ হয়ে গেলো আমি পা বারালাম আসফি ভাইয়ার দিকে। আসফি ভাইয়ার এই কাহিনী অনেক বছর আগে বড় মা বলেছিলো যা মস্তিষ্ক থেকে যায়নি।

আমি আসফি ভাইয়ের দিকে তাকিয়ে দেখলাম উনি কিছু একটা খুজচ্ছেন নিজের চারপাশে প্রিয়ন্তিকার কথায় তার কোন ধ্যান নেই শুভ্র কপালে দান বেধেছে ঘাম।ঠোঁটের কোনের হাসি মিলিয়ে গেছে চোখ জোড়ায় অশান্ত হয়ে উঠেছে।যেনো মূল্যবান কিছু দূরে সরে গেছে তার থেকে। হঠাৎ তার চোখ যায় আমার উপরে দুইজনার দৃষ্টি দুইজনাতেই আবদ্ধ হয়ে রইলো।জোড়ে একটা নিশ্বাস নিয়ে নিজের ভারি শরীর এলিয়ে দিলো চেয়ারে।যেনো নিজের জান ফিরে পেলেন আমি এতো দূর থেকে বুঝতে পারছি তার চোখের সে তীব্র অশান্ত চাহনী হঠাৎ করে ম্যাসেজ টোন বেজে উঠতেই ঘোর কাটলো স্ক্রীনের দিকে তাকাতেই ঠোঁটের হাস চওড়া হয়ে উঠলো

—এই শ্যামাঙ্গিনী তুই কি জানিস না তোর এই প্রেমিক পুরুষ টা চোখে হারায় তোকে তবুও কোন সাহসে আড়ালে নিজেকে লুকিয়ে ফেলিস। আমার এই অশান্ত বুকটা তোর এই শ্যামারঙা শিতল চেহারা দেখে শান্ত হয় সেটা কি তোর জানা নেই।কেন এই ভাবে হৃদয় টাকে ছাড়াখার করে নিজেকে আমার নিষ্ঠুর হৃদয়হরনকারী হিসেবে প্রমান করতে ব্যাস্ত থাকিস। তোকে যে ওই চাদের মতো শীতল মানায় কেনো সূর্যের মতো মেঘের আড়ালে লুকিয়ে এই চোখের অশ্রুর বর্ষণ করাতে চাস।ভালোবাসি শ্যামাঙ্গিনী ইচ্ছা করছে এই মহূর্তে তোমার নরম দেহ খানি নিজের বুকের মাঝে পিসে ফেলে দেয় ওহে শ্যামাঙ্গিনী যে ঝড় তুমি এই হৃদয়ে তুলেছো সে ঝড় তোমাকে দিয়েই থামাবো এটা তোমার গম্ভির পাষান প্রেমিকের ওয়াদা।

শেষের লাইন পড়ে লজ্জায় লাল হয়ে উঠলাম ইচ্ছা করছে দৌড়ে যেয়ে ওই লজ্জাহীন ব্যাক্তিটার বুক পাজরের মুখ লুকিয়ে নিজের লজ্জা নিবারণ করি তাইতো দেরি করলাম না ছোট একটা ম্যাসেজ লিখে সেখান থেকে প্রস্থান করলাম।

আসফি ভাইয়ের ফোনের টোন বাজতেই তার চোখের সামনে স্পষ্ট গুটি কয়েক অক্ষর ভেসে উঠলো

—এই যে নিষ্ঠুর প্রেমিক আপনার শ্যামাঙ্গিনী আপনার জন্য অপেক্ষা করছে তার ও যে বড্ড ইচ্ছা করছে তার একান্ত ব্যাক্তিগত নিষ্ঠুর ব্যক্তিটার বুকে নিজের জায়গা করে নিতে আমার আবার ধৈর্য কম তাই তাড়াতাড়ি চলে আসেন।

আসফি ভাই হাসলেন আড়াল থেকে তার হাসিটা দেখে আমার বুকেও প্রশান্তির ঢেউ খেলে গেলো। খেলবেই না কেন এই ব্যক্তিটা যেমন আমার তার মুখের হাসিটার কারন ও যে আমাতেই সীমাবদ্ধ। #প্রেমালঘ্ন
#লেখিকাঃনওশিন আদ্রিতা
#পার্টঃ৩০
,
,
,
,
অন্ধকার রুমের ব্রেঞ্চের উপরে শুয়ে আছেন আসফি ভাই তার বুকের উপরটাই আসন পেতে শুয়ে আছি আমি।বুকের মাঝে বয়ে যাওয়া সকল তুফান যেনো নিমিষেই শান্ত হয়ে গছে।এই বুকে কি আছে জানা নেই আমার যখন কানে এই বুকটার ধুক ধুক আওয়াজ কানে আসে যেনো কোন ঘোরের মাঝে ডুবে যায়।

—আসফি ভাই

—হুম

—আপনার ভয় হয় আমাকে হারানোর

আমার কথার বিপরীতে উনি কিছু না বলে হাসলেন। হাসি টা আওয়াজ না হলেও উনার শরীর হালকা ঝাকুনি দিতেই টের পেলাম

—হঠাৎ করে এই প্রশ্ন কেন শ্যামাঙ্গিনী। হারানোর ভয় হচ্ছে বুঝি আমাকে।

আমি আরও শক্ত করে জড়িয়ে ধরলাম উনাকে যেনো ছেড়ে দিলেই উনি হারিয়ে যাবেন।হঠাৎ ই অজান্তে গরিয়ে পরলো দুই ফোটা অশ্রু গাল পেরিয়ে উনার বুকের উপরে।

—আমাকে হারানোর ভয়ে যদি এই আখি জোড়া ব্যাথিত হয়ে রক্ত কণার মতো অশ্রু ঝরায় তাহলে মুছে ফেলো শ্যামাঙ্গিনী এই বুকটা তোমার এই বুক পাজর শুধু তোমার জন্য বরাদ্দকৃত তোমার অনুপস্থিতিতেও এই জায়গা তোমার ছিলো সেখানে এখন এই জায়গায় তোমার মাথা রয়েছে তোমার মাথায় চিন্তা আসে কি করে আমাকে হারানো।এই আখি জোড়া যে প্রতিটা মুহূর্ত তোমাকে চায় ভীষণ ভাবে তোমার এই শ্যামা মায়াতে আবদ্ধ নূরানী চেহারা না দেখলে যে আমার এই বাম পাশটাই থাকা হৃদয় নামক বস্তু টা অনেক টাই অচল হয়ে যায়।মরার ন্যায় বেচে থাকে।যেনো শরীর টা দাঁড়িয়ে থাকলেও তাতে প্রান নাই।আমার সকল অনূভুতি হাসি কান্না সব টাই যে তোমাকে ঘিরে।

—হু তাহলে কোন দিন তো আমার সামনে ওইভাবে প্রানচ্ছল ভাবে হাসেন না তাহলে কেনো আপনার ওই বান্ধবীর কথায় হাসলেন কেন যে হাসিটা দেখার জন্য আমি মরিয়া হয়ে ছিলাম সে হাসিটা অন্য কাউকে কেন্দ্র করে আপনার ঠোঁটে ফুটে উঠবো।

আমার অভিমানী কন্ঠ শুনে চোট করে আমাকে সহ উঠে পরলেন আমাকে নিজের অনেক টা কাছে নিয়ে এলেন। উনার নিশ্বাস এসে আমার সারা মুখে বিচরণ করছে।অদ্ভুদ শিহরণ বয়ে যাচ্ছে যেনো শরির জুরে।

—তুমি জেলাস হচ্ছো প্রিন্সেস
—হুম আমার স্বামি আমার সামনেই অন্য কোন নারীর সাথে ঘেষে বসে হাসাহাসি করবে আর আমি সহ্য করে নিবো আমি ওতোটা অবলা না
—আপনি অবলা না আপনি আমার ঝাসির রানী আমার শ্যামাঙ্গিনী
—আপনার পাশে অন্য কাউকে আমার সহ্য হয়না আসফি ভাই। বুকের বাম পাশটাই ব্যাথা করে ঠিক এই জায়গায়(বুকের বাম পাশটাই ইশারা করে)আপনাকে হারানোর ভয়ে দুমড়ে মুচড়ে যায় এই হৃদয়। আমি জানি আপনি আমার তবুও যে মানতে চায়না এই মন আমি কি করবো আমাদের #প্রেমালঘ্নে চায়না আমি অন্য কারো ছায়া।

—কবে আমাকে এতোটা ভালোবেসে ফেললি রে। যে চোখে আমার জন্য ভালোবাসা দেখতে চেয়েছিলাম আজকে সে চোখের আমার ধারণার চেয়ে মাত্রাঅতিরিক্ত ভালোবাসা দেখতে পাচ্ছি আমার ভয় হচ্ছে রে। কথায় আছে না মাত্রা অতিরিক্ত কিছুই ভালোনা হোক না সেটা ভালোবাসা।

—এই বুকটা ছাড়া আমার যে আর জায়গা নাই আসফি এই বুকটা কোন দিন ও আমার থেকে কেড়ে নিয়েন না আসফি ভাই শেষ হয়ে যাবো আপনার কথা অনুযায়ী জীবন্ত লাশ।

—তোকে শক্ত হতে হবে উহু আমি ছেড়ে যাবো বা দূরে যাবো সে জন্য না যাতে তুই কাউকে না দেখাতে পারিস তোর দুর্বলতা।ভিতরটা ভেংগে গুরিয়ে গেলেও যেনো মুখে লেগে থাকে হাসি। নিজেকে শক্ত আবরণে আবদ্ধ করে নিতে হবে তোকে

—আপনি আছেন না আমার শক্ত আবরণ আমাকে আর কোন আবরণের দরকার নাই এই আয়রা আসফি রহমানের এর একটা মাত্রই দুর্বলতা সেটা হলেন আপনি আমার স্বামি আমার অর্ধাঙ্গ আমার গম্ভির প্রেমিক

—পাগলীটা আমার না তোর এই ভালোবাসা দেখে কি মনে হচ্ছে
—কি
—এখন ই একটা পিচ্চু এনে তোর কোলে নিয়ে আসি আমিও তো বুড়া হতে চলেছি নাকি এদিকে আমার ছোট ভাই বাবা হতে চলেছে আর আমি কি না এখনো বউরে কোলে নিয়ে বসে আছি নাতীনাত্রনী দের সামনে মান সম্মানের রফা দফা অবস্থা

—ওই ওই চুপ কি বলছে৷ এই সব পাগল হলেন নাকি

—পাগল তো হয়েছি সুন্দরী তাও তোমার প্রেমে। এখন তাড়াতাড়ি বাচ্চা আনার প্রিপারেশান নিতে হবে।আজকে থেকে মিশন বাচ্চা স্টার্ট
—ওই লোক চুপ চুপ মুখে লাগাম নাই।
—এরকুম সুন্দরী বউ থাকলে কি মুখে লাগাম টানা যায় রে সুন্দরী ইহা তো বিরাট ভাবনার বিষয়।সামনে সুন্দরী বউ থাকবে আর আমি মুখে কুলুপ এটে রাখবো ইহা অসম্ভব
—অসভ্য
—শুধু তোর জন্য রে বউ

আমি রেগে কিছু বলতে যাবো তার আগেই তুমুল আওয়াজে বেজে উঠলো আসফি ভাইয়ার ফোন। বিরক্তিতে কপাল কুচকে ফেললে।
স্ক্রীনের দিকে তাকাতেই দুইজনে চোখ আটকে গেলো স্ক্রীনে প্রিয় লিখাটা দেখে

আমি কটমট চোখ তাকাতেই ঢোগ গিললেন আসফি ভাই আমার বুঝতে বাকি না এই প্রিয় আর কেউনা বরং প্রিয়ন্তিকা

—বিশ্বাস কর শ্যামাঙ্গিনী আমি করি নাই এই কাজ প্রিয়ন্তিকা আমার ফোন নিয়ে নিজের নাম্বার সেভ করেছে আমি করি নাই

—ওই ফোন চাইলো আর আপনি দিয়েও দিলেন বাহ আমার এখনো মনে আছে ২০১৬ সালের ২৩এপ্রিল তারিখে রাত সাড়ে ৭টার কাছাকাছি আপনার ফোন চেয়েছিলাম গেম খেলবো দেখে ঝাড়ি মেরে তাড়িয়ে দিয়েছিলেন শুধু তাইনা ২০১৯ এর শেষের দিকে নভেম্বরের ১২ তারিখে সকাল ৯টার দিকে আপনার ফোন চায়েছিলাম ছবি তুলার জন্য আমি আরিফা কি বলেছেন আমি নাকি ফোন নষ্ট করে দিবো আরও অনেক আছে।আর উনি চাইলো আর দিয়ে দিলো বাহ

এক নিশ্বাসে কথা বলে থামলাম আমি আমার দিকে ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে আছেন আসফি ভাই সেদিকে আমার কোন ভ্রুক্ষেপ ই নাই রাগে আমার হাত পা জালা করছে।

—তুই কতো সালে স্কুলে ভর্তি হয়েছিলি

—জানিনা। একমিনিট আপনি এখন আমাকে অপমান করতে চায়ছেন বাহ খুব ভালোই। এখন অপমান ও করা হচ্ছে আপনি বুঝাতে চায়ছেন আমি কিছু মনে রাখতে পারিনা ভালো আরও কতো দোষ,,,,,,

আর বলতে পারলাম না তার আগেয় আমার ওষ্ঠদ্বয় চলে গেলো আসফি ভাইয়ের দখলে মুচরামুচরি করেও যখন লাভ হলোনা তখন শক্ত করে মুঠ ধরলাম উনার পাঞ্জাবীর কলার ওদিকে উনার স্পর্শ ধীরে ধীরে শাড়ি ভেদ করে উমুক্ত কোমড়ে এসে থেমেছে।

প্রায় মিনিট দুয়েক পরে আমাকে ছেড়ে আমার কপালে চুমু দিয়ে ঠোঁটের সাইডে লেপটে যাওয়া লিপস্টিক মুছে হেসে বেরিয়ে যেতে নিলেই ধরে ফেললাম উনার হাত

—কি শ্যামাঙ্গিনী আরও চায় কিন্তু আমাকে যেতে হবে সবাই ওয়েট করছে।

আমি উনার কথা বিপরিতে কিছু না বলে আলতো হাতে মুছে দিলাম উনার ঠোঁটের আশেপাশে লেগে থাকা লাল রাঙ্গা লিপস্টিক।পাঞ্জাবীর কলার ঠিক করে চুল গুলোও হাত দিয়ে সেট করে দিলাম

—এবার যেতে পারেন

—————
স্টেজের দিকে পা বারাতেই কানে বেজে উঠলো আসফি ভাইয়ের গলায় গাওয়া গানের সুর পা সেখানেই আমার আটকে গেলো

***ভালোবেসে যদি হাতটা ধরো
ছেড়ে দেবো যে সবই
কাছে এসে জড়িয়ে রাখো
ভুলে যাবো পৃথিবী

বুকের মাঝে চিনচিন করে
জানো না কি এ মন পুড়ে?
এভাবে দূরে থেকোনা
তোমার মাঝে ডুবি ভাসি
নিজের থেকে আরো বেশি
ভালোবাসি কেন বোঝোনা

প্রেম কি বলো এমনি?
নীরবে যে, গোপনেতে তারই শুধু
ভাবনাতে ঘুমহীন কাটে রজনী
প্রেম কি বলো এমনি?
নীরবে যে, গোপনেতে তারই শুধু
ভাবনাতে ঘুমহীন কাটে রজনী

বুকের মাঝে চিনচিন করে
জানো না কি এ মন পুড়ে?
এভাবে দূরে থেকোনা
তোমার মাঝে ডুবি ভাসি
নিজের থেকে আরো বেশি
ভালোবাসি কেন বোঝোনা

কান পেতে কি শোনোনি?
মনের কথা, আকুলতা সবই যেন
জমে আছে দেবো সঁপে, আশা ছাড়িনি
কান পেতে কি শোনোনি?
মনের কথা, আকুলতা সবই যেন
জমে আছে দেবো সঁপে, আশা ছাড়িনি

বুকের মাঝে চিনচিন করে
জানো না কি এ মন পুড়ে?
এভাবে দূরে থেকোনা
তোমার মাঝে ডুবি ভাসি
নিজের থেকে আরো বেশি
ভালোবাসি কেন বোঝোনা

প্রিয়ন্তিকা ম্যামের গলা টা কূর্ণগহরে গেলো না শুধু চোখ দুইটা আটকে ছিলো আমার আপন সে মানুষ টার মুখটার দিকে।তার চোখটাও যে আমার চোখেই নিবদ্ধ। তাতে যেনো ভালোলাগা টা আরও অধিক নাত্রাই বেরে গেলো।।।।কেন এতো মুগ্ধতা বিরাজ করে ভালোবাসার মানুষ টির মাঝে যার চেহারাতেও যেনো প্রশান্তির অদ্ভুদ ঢেউ।।

চলবে!

চলবে!

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here