#বোবা_টানেল (অন্তিম পর্ব)
“এই আপনিই কি এসব ঘটিয়েছেন?”
অসিফার এহেন প্রশ্নে শিখন ঘুম ঘুম চোখে ডান দিকে ফিরে শুয়ে বলে ওঠে,
“মানে? আমি আবার কি ঘটাবো?”
“জয়কে ওভাবে মে’রে জেলে পাঠানোর পেছনে আপনারই হাত তাই না?”
এবার শিখন শোয়া হতে উঠে বসে বলে,
“আমাকে কি গু’ন্ডা মনে হয় নাকি তোমার? আমি কেন মা’রা’মা’রি করব। যার যা প্রাপ্য সে তো তা কোনো দিন না কোনো দিন পাবেই। বাই দ্যা ওয়ে, থ্যাংকিউ নিউজটা জানানোর জন্য।”
অসিফা ভাবুক দৃষ্টিতে কিছুক্ষণ শিখনের দিকে তাকিয়ে থেকে বাথরুমের দিকে চলে যায়। শিখন নিশ্চুপভাবে হাসতে থাকে। সে-ই যে কৌশল করে জাহিদ মির্জাকে বাধ্য করেছে জয়কে পুলিশের হাতে ধরিয়ে দিতে, এই রহস্য সে রহস্য হিসেবেই রেখে দিতে চায়।
কিছুক্ষণ বাদেই একটা কাপড় ভিজিয়ে এনে ভাজ করে শিখনের কপালে জলপট্টিস্বরূপ দিয়ে দেয়। এর মাঝেই নিলুফা বেগম রুটিও ডিম ভাজি নিয়ে হাজির হন।
“এটা শিখনকে খাইয়ে দিয়ে ঔষধটাও খাইয়ে দে। জ্বর মেপেছিস?” (নিলুফা বেগম)
“না।”
“দ্রুত মেপে দেখ কত আছে।”
“হ্যা মাপছি।” বলেই ড্রয়্যার থেকে থার্মোমিটারটা বের করে জ্বর মেপে দেখে ১০৩° ফারেনহাইটে জ্বর উঠে গেছে শিখনের। অসিফার সারা শরীর রীতিমতো কাপতে আরম্ভ করেছে। দ্রুত খাবার খাইয়ে শিখনকে জ্বরের ঔষধ খাইয়ে দেয় সে।
ক্ষানিকবাদেই শিখন বিছানা হতে নেমে দ্রুত বাথরুমে দৌড়ে চলে যায়।
“অসিফা দ্রুত শিখনের কাছে যা। ছেলেটা ব’মি করছে। কি যে হলো ছেলেটার বুঝতে পারছিনা।”
অসিফা বাথরুমের দিকে পা বাড়াতে নিলেই শিখন কাপতে কাপতে বাথরুম হতে বেরিয়ে আসে। মুহূর্তের মাঝে শরীরে ঝাকুনি উঠতেই শিখন ধপ করে মেঝেতে পড়ে যায়। অসিফা চিৎকার দিয়ে শিখনের কাছে ছুটে যায়।
“আম্মু আমার নেতা সাহেব এমন করছে কেন? দেখো না আম্মু কেন শরীর ঝাকাচ্ছে উনার। তুমি তাড়াতাড়ি আব্বুকে বলো না এ্যাম্বুলেন্স ডাকতে। এই আপনার কি হয়েছে আপনি এমন করছেন কেন?” কান্না করতে করতে অসিফা কথাগুলো বলে ওঠে।
আসিফ খন্দকার ও শিখনের কিছু বন্ধুরা মিলে শিখনকে এ্যাম্বুলেন্সে হসপিটালে নিয়ে যায়। অসিফা যাওয়ার অনেক চেষ্টা করলেও আসিফ খন্দকারের আদেশ আর অমান্য করতে পারেনি সে৷ নিলুফা বেগম নিশ্চুপ হয়ে মেয়েকে জড়িয়ে ধরে সোফায় বসে থাকেন যেন অসিফাকে ছটফট করতে না পারে।
—–
রাত আটটার দিকে ঘুমের ইঞ্জেকশনের প্রভাব কেটে যাওয়ায় ঘুম ভেংগে যায় শিখনের। কিছু টেস্ট করানো হয়েছে যার রিপোর্ট রাত ১০টার দিকে পাওয়া যাবে। শিখনের ঘুম ভেংগে যাওয়ায় দুজন নার্স এসে তাকে নিয়ে যায় সিটি স্ক্যান করানোর জন্য৷
এদিকে খবর পেয়ে অসিফাকে নিয়ে হসপিটালে হাজির হয়ে যায় নিলুফা বেগম। নিলুফা বেগম ভেতরে ভেতরে শঙ্কিত হয়ে উঠছেন বারবার। অসিফা আবার সেই আগের মতো ব্যবহার করা শুরু করেছে। তিনি বুঝে গিয়েছেন, তার এই মেয়েটার আসল সুখ ঠিক কিসে! এই দুজনকে যদি কখনো আলাদা করে দেওয়া হয় তবে হয়তো দুজনের একজনকেও বাঁচানো সম্ভব হবেনা। দুজনই যেন এক বৃন্তের দুটো ফুল।
সিটিস্ক্যান করিয়ে শিখনকে বেডে এনে রাখতেই অসিফা ছুটে যায় তার কাছে।
“আপনার কি হয়েছে নেতা সাহেব?”
“আমার কিছুই হয়নি অসিফা। সকালেই আমরা বাসায় চলে যাব। নিজের কি অবস্থা করেছ এই কয়েক ঘন্টায়? কিছু খেয়েছো তুমি?”
“আপনি চুপ করবেন? সবসময় আমার সব জিনিসের দিকে খেয়াল রাখতে গিয়ে নিজের দিকে হেলাফেলা করেন আপনি। এমন কেন আপনি? আপনার কিছু হলে আমার কি হবে বলুন তো?”
কিছু সময় চুপ করে থেকে শিখন বলে ওঠে,
“আমার সবটা জুড়েই শুধু তুমি অসিফা। তোমাকে ঘিরেই তো শিখনের সবকিছু।”
“তবে আপনার অসিফাকে বাঁচিয়ে রাখতে চাইলে নিজেরও তো সুস্থভাবে বাঁচতে হবে তাইনা?”
“হুম হুম। আমার বউ যে এতো কথা জানে আগে তো জানতাম না!”
“এখন তো জেনেছেন।”
শিখনের এক বন্ধু সব রিপোর্ট নিয়ে হাজির হয় কেবিনে। রিপোর্টে সবকিছু পজিটিভ আছে শুনে হাফ ছেড়ে বাঁচে সকলে৷ অসিফা সারা রাত শিখনের হাত ধরে তার মাথার পাশে বসে থাকে। সকালেই তারা বাসায় ফিরবে।
——-
কেটে গেছে একটা বছর। সময় চলছে তার নিজ গতিতে। অসিফার মুখে এসিড নিক্ষেপের দ্বায়ে জয়ের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড হয়ে গিয়েছে।
অসিফার আবদারে শিখন রোজ রাতে অফিস হতে ফিরে তাকে নিয়ে হাটতে বের হয়। আজও তার ব্যতিক্রম হয়নি।
রাস্তার এক পাশ হতে অসিফার হাত ধরে নিয়ে হাটছে শিখন। কিছুদূর যাওয়ার পরেই শিখন কেমন অদ্ভুত আচরণ করতে আরম্ভ করে। এটা যে নতুন তা নয়। এই এক বছরে শিখনের মাঝে এমন একটা পরিবর্তন আসতে শুরু করেছে। ইদানীং সে ঠিকঠাকভাবে কিছুই মনে রাখতে পারছেনা। এমনও হয়েছে যে সে সকালে ঠিক খেয়েছে তা কিছুক্ষণ বাদে আর স্মরণও করতে পারছেনা। সামনে যে এমপি নির্বাচন আসছে তার জন্যও শিখন কোনো মনোনয়ন পত্র সংগ্রহ করেনি। সকলেই শিখনের কার্যকলাপ দেখে অবাক হয়ে যাচ্ছে যেন ধীরে ধীরে৷
অসিফা শিখনের উদ্দেশ্যে বলে ওঠে,
“আপনি ঠিক আছেন? এমন ছটফট করছেন কেন?”
“হ্যা আমি ঠিক আছি। আমার একটা কাজ মনে পড়ে গেছে। চলো তোমাকে বাসায় পৌঁছে দিয়ে আসি। আমাকে একটু আবার অফিসে যেতে হবে।”
“একা যাবেন এত রাতে?”
“না আদিবকে নিয়ে যাব সাথে। দ্রুত চলো।
অসিফাকে বাসার গেটের সামনে পৌছে দিতেই আদিবও মোটরসাইকেল নিয়ে হাজির হয়ে যায় শিখনকে নিতে। শিখন মোটরসাইকেলে উঠে বসতেই আদিব মোটরসাইকেল স্টার্ট দিয়ে সাঁ সাঁ করে নিমিষেই অদূর দূরে চলে যায়। অসিফা কিছুক্ষণ সেদিকে তাকিয়ে থেকে সিড়ি বেয়ে তিনতলায় উঠে যায়।
সেইযে শিখন আদিবের মোটরসাইকেলের পেছনে উঠে চলে গেল। তারপর দুইমাস অতিক্রম হয়ে গেছে কিন্তু আর তার কোনো খোজ কেউ পায়নি। পা’গ’লে’র মতো কত খুজেছে সে শিখনকে কিন্তু কেউ তার খোজ দিতে পারেনি। আদিবকে কল করলে সে প্রতিবার একটা কথাই বলে, সেদিন রাতে কাজ শেষে সে শিখনকে বাসার সামনে নামিয়ে দিয়ে গিয়েছিল। তারপরে শিখন কোথায় গিয়েছে তা সে জানানেনা। থানায় জিডি ও করেছে অসিফা। মেয়ের অবস্থা ক্রমশ খারাপ হচ্ছে দেখে আসিফ খন্দকার ও নিলুফা বেগম তাকে জোর করে কুমিল্লাতে নিয়ে যান।
অসিফা বুঝে পায়না কেন তার নেতা সাহেব তাকে এভাবে ফেলে রেখে নিরুদ্দেশ হয়ে গেল। তবে সে যেটার ভয় পাচ্ছিল সেটাই কি ঘটে গেল? তার নেতা সাহেব কি অন্য কারও হয়ে গেল? অসিফার মাথা কাজ করা বন্ধ করে দেয়। শেষবারের মতো একটা চেষ্টা সে করতে চায়। তাই কাউকে না জানিয়েই কুমিল্লা হতে ঢাকায় চলে যায় সে। ঢাকায় পৌছে সোজা আদিবের বাসায় গিয়ে কান্নাকাটি জুড়ে দেয়। অসিফার পা’গ’লা’মি দেখে আদিব বাধ্য হয়ে তাকে সব বলে দেয়। শিখনের কাছে সে যে প্রতিজ্ঞা করেছিল তা আর রাখতে সক্ষম হয়না আদিব। অসিফাকে নিয়ে রওনা হয় মহাখালীর উদ্দেশ্যে।
মোটরসাইকেল এসে জাতীয় ক্যান্সার গবেষণা ইন্সটিটিউট ও হসপিটালের সামনে এসে থামতেই অসিফার গায়ের লোম খাড়া হয়ে ওঠে। কাঁপতে কাঁপতে আদিবের পিছু পিছু গিয়ে একটা কেবিনে প্রবেশ করে। সাদা ধবধবে বিছানায় শিখনকে শোয়া দেখে শরীর শীতল হয়ে আসে অসিফার। ছুটে গিয়ে শিখনের বেডের সামনে দাঁড়ায় অসিফা। অসিফাকে দেখে শিখন কটমট করে আদিবের দিকে তাকায়।
“দেখ ভাই রা’গ দেখাবিনা। তোদের দুজনকে এত ক’ষ্ট পেতে দেখা আমার দ্বারা সহ্য হচ্ছিল না। তোর এই বা’জে স্বভাবটা একটু বাদ দে শিখন। প্রিয় মানুষকে ভালো রাখার জন্য য’ন্ত্র’ণা নিয়ে দূরে চলে গিয়ে লাভটা হয় কি বল? সেই মানুষটা কি আদৌ ভালো থাকে বলে মনে হয় তোর?এই মেয়েটা পুরো পা’গ’ল হয়ে গিয়েছিল তোকে ছাড়া। জানো অসিফা সেদিন রিপোর্টের মাধ্যমে যখন জানা গেল ওর ব্রেইন ক্যা’ন্সা’র হয়েছে। ও আমাকে আগে থেকেই মানা করে দিয়েছিল যেন কাউকে এই সম্পর্কে না বলি। ওর যখন ব্রেইন টি’উ’মা’র ধরা পড়েছিল তখন কাউকে জানায়নি। ক্যা’ন্সারের কথাও জানাতো না যদি না সেদিন আমার হাতে রিপোর্ট আসতো সেদিন। লুকিয়ে লুকিয়ে ট্রিটমেন্ট নিতে থাকে ও। যেদিন বাসা থেকে বেরিয়ে এসেছিল ও সেদিন বিকালে টেস্ট করার পর জানা গিয়েছিল ওর ক্যা’ন্সার থার্ড স্টেজে পৌছে গেছে আরও আগেই। তুমি ক’ষ্ট পাবে ভেবে সেদিন নিরুদ্দেশ হয়ে গিয়েছিল ও। তারপর এই হসপিটালে ভর্তি হয়ে ট্রিটমেন্ট নিতে শুরু করে। কয়েকটা কেমোথেরাপি দেওয়া হয়েছে।৷ আমাকে দিয়ে প্রতিজ্ঞা করিয়েছিল যেন তোমাকে না জানাই। কিন্তু আজ যখন জানলাম ফোর্থ স্টেজে অলরেডি চলে এসেছে তখন তোমাকে না জানিয়ে পারলাম না। এখন তুমিই সামলাও একে।” বলেই চোখ মুছতে মুছতে কেবিন হতে বেরিয়ে যায় আদিব।
অসিফা কান্না করতে করতে শিখনের বেড ধরে মেঝেতে বসে পড়ে।
“তন্দ্রাহরণী কেঁদো না। আমি সুস্থ হয়ে যাব। দেখো তোমার নেতা সাহেব টাকু হয়ে হয়ে গিয়েছে।”
অসিফা চোখ গরম করর শিখনের দিকে তাকিয়ে বলে ওঠে,
“আপনি এত নি’ষ্ঠু’র কেন নেতা সাহেব? বলেছিলেন আমি ছাড়া আপনার কেউ নেই তাহলে কেন নিজের সব য’ন্ত্র’ণা নিয়ে একা ভেগে এলেন?”
“আমি তোমার ক’ষ্ট দেখতে পারতাম না অসিফা।”
“আপনি হারিয়ে যাবার পর বোধ হয় খুব সুখে ছিলাম আমি? যত য’ন্ত্র’ণা থাকুক, যত ক’ষ্ট থাকুক কিন্তু ভালোবাসা কাছে থাকলে তা কম অনুভূত হয় নেতা সাহেব। কিন্তু আপনি আমাকে ক’ষ্ট হতে মুক্তি দেবার জন্য দূরে এসে ম’র’ণ য’ন্ত্র’ণায় নিক্ষেপ করে গিয়েছিলেন। প্রতিটা রাত আমি আপনাকে ছাড়া ছটফট করে কাটিয়েছি। আপনার সাথে একটা দিন কাটাতে পারাও আমার কাছে অনেক কিছু। ডাক্তার বলেছে আপনি নাকি আর সাত মাস বাঁচবেন সর্বোচ্চ। আপনি বড্ড নি’ষ্ঠু’র নেতা সাহেব বড্ড নি’ষ্ঠু’র। আড়াইটা মাস আমার থেকে আপনি কেড়ে নিয়েছেন। আড়াই মাস আমি আপিনার বুকে মাথা রেখে ঘুমাতে পারিনি। আমার পৃথিবী অ’ন্ধ’কার হয়ে আসছে নেতা সাহেব। আপনার অনাগত সন্তানকে একটাবার দেখার জন্য হলেও বাচতে হবে আপনাকে নেতা সাহেব। প্লিজ!”
শেষ কথাটুকু শুনে বি’স্ফো’রিত নয়নে অসিফার দিকে তাকায় শিখন। অস্পষ্ট স্বরে বলে ওঠে,
“কত সপ্তাহ?”
অসিফা কান্নারত সুরর বলে ওঠে,
“সাত সপ্তাহ।”
একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে শিখন অসিফাকে টেনে বুকে নিয়ে চোখের পানি ছেড়ে দেয়।
“তোমার নেতা সাহেবের জীবনের সবচেয়ে খুশির খবর এটা অসিফা। আমাকে ক্ষমা করে দাও অসিফা। তোমাকে দূরে সরিয়ে দিয়ে আমি নিজেও দ্বিগুণ য’ন্ত্র’ণা ভোগ করেছি। প্রিয় মানুষ সাথে থাকলে যে শত য’ন্ত্র’ণা ও ক’ষ্টে’র মাঝেও অনেক খানি সুখ থাকে তা আমি এখন বুঝতে পারছি তোমাকে বুকে মাঝে নেওয়ার পর।”
কথা শেষ করে শিখন গুনগুন করে অনুপম রায়ের গাওয়া বোবা টানেল গানখানা গেয়ে ওঠে,
“ফিরে গেছে কত,
বোবা টানেলের গলা চিরে আলো
ইচ্ছেরা ছুটে চলে
সারাটা দিন জুড়ে,
তুমি আনাগোনা করেছ সেই সুরে
তার রঙ লেগে আছে
অবুঝের পেন্সিল
ভালোবাসা বাকি আছে তোমারও আমার কাছে
যা চেয়েছ দিতে আমি পারিনা
আমারও সময় ডালে ফুরিয়ে এসেছে পাতা
এত প্রেম কাছে এসে এলোনা
যদি কোনোদিন তুমি
দু’হাত দিয়ে ঝিনুক কোড়াও, নেই আমি
সেই অল্প ভাঙা গল্পগুলোয়, কার সাথে
বলো শব্দ ছুঁড়ে ফিরবো বাড়ী মাঝরাতে।
শিখন থামতেই অসিফা কেঁদে দিয়ে গেয়ে ওঠে,
“আমি তোমার কথা বলব কাকে?”
–
সাকলাইন খান ধীরে ধীরে পা ফেলে শিখনের বেডের কাছে এগিয়ে আসেন। সাকলাইন খানকে এগিয়ে আসতে দেখে অসিফা বেডের পাশের চেয়ারটা হতে উঠে গিয়ে তাকে বসতে দেয়। সাকলাইন খান চেয়ারে বসে সোজা ছেলের হাতখানা নিজের হাতের মাঝে নিয়ে ডুকরে কেদে উঠে বলে ওঠেন,
“আমি আসলেই বাবা হওয়ার যোগ্য না। নিজের হাতে তোমার মায়ের এবং তোমার জীবন বি’ষিয়ে দিয়েছি। ক্ষমা চাওয়ার সাহস আমার নেই। আমিই তোমার এই অবস্থার জন্য দ্বায়ী। তুমি সেদিন যখন আমাকে জড়িয়ে ধরে কেদেছিলে আমি তখন অনুভব করেছিলাম সন্তানকে বুকের মাঝে স্থান দিলে কেমন শান্তি লাগে। অনুতপ্ততা আমাকে প্রবলভাবে গ্রা’স করে ফেলেছে। জানি তুমি আমাকে ক্ষমা করবেনা কিন্তু একটা বার সুযোগ দাও আমাকে বাবা হবার। একটাবার প্লিজ আমাকে ‘বাবা’ বলে ডাকো। সিতারা এখন রোজ কাদে তুমি কখনো ওকে ক্ষমা করবেনা এটা বলে বলে। আমি কখনোই ওকে তোমার সামনে আনব না। কিন্তু প্লিজ তুমি আমাকে চলে যেতে বলো না।”
‘সিতারা বেগম কে তা ঠিক মনে করতে পারছেনা শিখন। সিলিং এর দিকে তাকিয়ে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে আস্তে করে বলে ওঠে, “বাবা।”
ওমনি সাকলাইন খান আরও শব্দ করে কেদে উঠে মাথা নামিয়ে ফেলেন।”
——–
“আম্মু আম্মু, এতিমখানা হতে বাচ্চারা চলে এসেছে। দাদাভাই আর নানাভাই তোমাকে ডাকছে।” (ওয়াসিক)
“আসছি আব্বু। তুমি নিচে গিয়ে দাদাভাই আর নানাভাইকে হেল্প করো। (অসিফা)
আজ শিখনের সপ্তমতম মৃ’ত্যু বার্ষিকী। ওয়াসিক শিখন আর অসিফারই ছেলে। ওয়াসিকের জন্মের তিন মাস পরে শিখন মারা গিয়েছিল। শিখন আজ নেই কিন্তু তার প্রায় সকল বৈশিষ্ট্যই সৃষ্টিকর্তা ওয়াসিকের মাঝে দিয়ে দিয়েছেন। ওয়াসিককে সকলেই তাই জুনিয়র শিখন বলে ডাকে। ছেলের জন্যই মূলত অসিফা ল’ড়া’ই করে বেঁচে আছে।
ওয়াসিক ছাদ থেকে নেমে যেতেই অসিফা দড়ি হতে কাপড় তুলতে তুলতে পুনরায় ফোনের অডিও রেকর্ডের লিস্টে থাকা একমাত্র রেকর্ডিং ভয়েসটা শুনতে আরম্ভ করে। রেকর্ডেড ভয়েসটা আর কারও নয় শিখনেরই। শিখনের কভার করা অনুপম রায়ের গাওয়া বোবা টানেল গান এটি। এই গানটা দ্বারা শিখন অসিফাকে তার মনে জমে থাকা কত হাহাকারকে বুঝিয়ে গেছে তা আজ বুঝতে পারছে অসিফা। আকাশের দিকে মুখ করে চোখ বন্ধ করে অসিফা বলে ওঠে,
” আপনার জীবনের শেষ দিনগুলোতে আমাকে পাশে রাখার জন্য ধন্যবাদ। আপনাকে আপনার তন্দ্রাহরণী অসম্ভব ভালোবাসে নেতা সাহেব।”
~সমাপ্ত
#আফিয়া_অন্ত্রীশা
[কেমন হয়েছে অবশ্যই গঠনমূলক মন্তব্য করে জানাবেন। আগামীকাল হতে আমার পরীক্ষা, দোয়া করবেন সকলে। ধন্যবাদ।🌸]