ব্লাক ডায়মন্ড পর্ব ৬

#ডার্ক ডায়মন্ড
#আফরিন ইভা
#পর্ব-০৬
_____________________

” মীরার হাত পা থরথর করে কাঁপছে, কি দেখছে এসব একদম তাজা রক্ত।
রক্ত আসলো কিভাবে আমার রুমে, কে রেখে গিয়েছে এসব ভাবতে ভাবতে ভয়ে মীরার চোখ লাল বর্ন ধারণ করতে লাগলো, কান দিয়ে ধোঁয়া বের হচ্ছে। ভয়ে মীরার কলিজা শুকিয়ে আসছে।

কাঁপা কাঁপা হাতে গ্লাস টা রেখে ওয়াশরুমে দৌড়ে চলে গেলো।
ওয়াশরুম থেকে বের হয়ে মীরা গ্লাসটা বেসিনে গিয়ে ধুয়ে ফেললো।
মীরা চায় না আবারও এই রক্তমাখা গ্লাসের দিকে চোখ পরুক।
মীরা ব্যালকনির হেলান দেওয়া চেয়ার খানায় আরাম করে বসে গম্ভীর মনে ভাবছে, মীরার জানা মতো রক্তের স্বাদ নুনতে হয় কিন্তু মীরার কাছে তা অমৃতের মতো লাগলো কেনো?
মীরা ভেবেই যাচ্ছে, ভেবে ভেবে এই অশান্ত মনকে আরো যেনো অশান্ত করে ফেলেছে।
ব্যাথাকাতুর হৃদয়ে ভয় এসে উঁকি দিচ্ছে।
চোখ বন্ধ অবস্থায় মীরার মনে একটা কথাই বার-বার জানান দিচ্ছে তাহলে কি মীরা মানুষ না, তাহলে কি মীরা……….

নাহ্ বলে মীরা চিৎকার করে চোখ খুললো।

মীরা আর এক মূহুর্তও এই বদ্ধ রুমে থাকবে না বলে ঠিক করেছে ।
মীরা খুব দ্রুত নিচে গেলো।
নিচে গিয়ে সবার সাথে বসে বসে গল্প করলো।
কাকে জিজ্ঞেস করবে এতকিছু, কে বলবে মীরার এতোসব রহস্য।
সবার সাথে মীরা গল্প করছে ঠিকই কিন্তু মন পড়ে আছে ঐসব রহস্যে।

– ইরা মীরার দিকে তাকিয়ে বললো, কিরে মীরা তোকে এতোটা বিচলিত দেখাচ্ছে কেনো?
রুদ্র ভাইয়ের সাথে কি আবারও রাগ করেছিস?

” রুদ্র নামটা শুনে মীরার বুক ধক করে উঠলো।
মীরা কিছুতেই কিছু বুঝতে পারছেনা, রুদ্র ভাই আমাকে এতোটা কষ্ট দেয়, তবুও কেনো উনার জন্য আমি টান অনুভব করি।
আমার বেহায়াপনা মন কি কখনো বুঝবে না, সে যে আমাকে চায় না, আমার ছায়া কে পর্যন্ত তাঁর সহ্য হয় না।
মীরা মনকে যতই বুঝাক না কেনো মন যে শুধু তাকে নিয়েই ভাবতে চায়, তাঁর রুদ্র ভাইকে নিয়েই পড়ে থাকতে চায়, তাঁকে শুধু ভালো বাসতে চায়।

মীরা নিজেও জানে সবকিছু যে শুধু আবেগ দিয়ে হয়না কিছু জিনিস বিবেক দিয়েও ভাবতে হয়।
বিবেক বলে দূরে সরে যা, আবেগ বলে ভালোবেসে যা।
চাইলেই কি সব ভুলা সম্ভব হয়তো সম্ভব নয়, মীরা এই ব্যাথিত মনেও রুদ্রের ভালোবাসায় নিজেকে জড়িয়ে রেখেছে।

“ইরা চিৎকার দিয়ে উঠলো কিরে মীরা কোথায় হারিয়ে গেলি?

” মীরা মুখে জোরপূর্বক হাসি ফুটিয়ে বললো, কোথাও না আপু।”

– ইরা আর কিছু না বলে গল্পে মনোযোগ দিলো।

– সবাই একসাথে খেতে বসেছে।
মীরার কেনো যানি মনে হচ্ছে মীরা আর বেশিদিন সবার সাথে একসাথে বসে খেতে পারবে না।
মীরা মা-বাবা আর ইরার দিকে এক নজর তাকালো।
মীরার চোখ গুলো যেনো ভিজে আসছে।
বুক ফেটে কান্না আসছে, চোখগুলো বার-বার জড়িয়ে যাচ্ছে।
চাইলেও কান্না আঁটকে রাখতে পারছেনা মীরা।
অনেক কষ্টে পায়ে পা চেপে কান্নাটাকে কোনো রকম আঁটকে অল্প খেয়ে উঠে চলে গেলো নিজের রুমে।

রুমে গিয়ে বেশ কিছুক্ষণ ফুপিয়ে ফুপিয়ে কাঁদতে লাগলো।
হেয় আল্লাহ তুমি কি আমায় কোনো কঠিন পরীক্ষা নিচ্ছো, না কি কোনো শয়তান আমার উপর ভর করেছে।
আমি তো কিছুতেই কিছু বুঝতে পারছিনা।

– আজ বড্ড কষ্ট হচ্ছে মীরার, কষ্টটা কেনো হচ্ছে কাউকে মুখ ফুটে বলতে পারছেনা।

মীরা আর কিছু না ভেবে ঘুমিয়ে পরলো, শরীরটা যেমন ক্লান্ত মনটাও খুব ক্লান্ত, তাই হয়তো আজ চোখে গভীর ঘুম নেমে এসেছে।

চাঁদনী রাতের জমকালো আলোতে কেউ একজন মীরার রুমে আস্তে করে প্রবেশ করলো, মীরার কাছে এসে বসলো , মীরার মাথায় পরম যত্নে আদর মাখা হাত বুলাতে লাগলো।
চোখে মুখে গভীর নেশা, কাঁপা কাঁপা ঠোঁটে মীরার কপালে ভেজা চুমু এঁকে দু-চোখ দিয়ে আজ অনেক দিন পর ক্লান্ত চোখে মীরা কে গভীরভাবে দেখছে উতলা বুকের ঝড় ঝাপ্টা থামাচ্ছে। প্রিন্সেস তুমি হয়তো জানো না কে তুমি, কী তোমার আসল পরিচয়? হয়তো সব ভুলে আছো , এটাও ভুলে আছো কতোটা ভালোবাসতে আমায়। এ বুকের উষ্ণ আদরের ছোঁয়া না পেলে তুমি যখন অভিমানে গাল ফুলাতে তখন তোমায় দেখতাম অপরূপ রুপে,হয়তো জানো না কতোটা তোমায় অপরূপ দেখাতো, সেই তোমার মায়া ভরা ঠোঁট, মায়া ভরা চোখের চাহনি আস্তে আস্তে তোমার মধ্যে আমার প্রিন্সেসের আগমন ঘটছে।
জানি তোমার সেই চঞ্চলতাটাই আর নেই, থাকবে কি করে তুমি যে এখনো তোমার প্রিন্সকে কেউ একজনের মধ্যে খুঁজে বেড়াচ্ছো সেটা আমি খুব করেই জানি।
কিন্তু কি করবো এখনো তো সময় আসেনি বলবার।

গোম্বস আমাকে বার-বার নিষেধ করা সত্বেও রাতে আমি তোমার কাছে আসি চুপিচুপি তোমার সাথে কথা বলি। প্রতিনিয়ত আসি আমি, তোমাকে ছাড়া যে, এক মূহুর্তও কাটে না আমার।
সেই ১১ বছরের বালক থাকতে তোমাকে চোখে চোখে রেখেছি আমি কিন্তু কিচ্ছুটি বুঝতে দেইনি।
যেদিন অনুভব করতে পারবে এই অবয়ব টাও তোমাকে ভালোবাসে ঐদিন আমি তোমায় আগের মতো করে ভালোবাসবো প্রিন্সেস।

অদৃশ্য অবয়ব টা চলে যেতে গিয়েও আবার ফিরে আসলো, হন্তদন্ত হয়ে মীরার হাতে গভীর চুমু খেয়ে বললো, যেদিন তুমি ২৫ বছরে পদার্পণ করবে জানি না শরীরের এই পরিবর্তন কিভাবে মেনে নিবে, অসহ্য যন্ত্রণায় চটপট যখন করবে বিশ্বাস করো তখন আমিও খুব বেশি চটপট করবো, একে-তো তোমার কষ্ট, আরেক তোমার কাছে আসতে না পারবার কষ্ট।
প্রিন্সেস আমি চাই খুব তারাতাড়ি তোমাকে আমাদের দেশে নিয়ে যেতে এখানে যে আমারও দম বন্ধ হয়ে আসে, রোদ একদম সহ্য হয় না আমারও, জানি তোমারও ইতিমধ্যে এর প্রকোপ দেখা দিয়েছে।
ভার্সিটি থেকে আসবার সময় তোমার পিছু নেই আমি। তুমি কিছুটা আন্দাজ করতে পারলেও খুব বেশি একটা বুঝতে পারোনা কে পিছু নেয় তোমার?
আমি যে তোমার সেই চঞ্চল, উচ্ছৃঙ্খল ভালোবাসার মানুষ, তোমাকে এক মূহুর্ত দেখে না থাকলে বাঁচেনা যাঁর প্রাণ।

অদৃশ্য অবয়বটা মীরাকে খুব গভীরভাবে জড়িয়ে ধরে দু’ফোটা চোখের জল ফেলে বললো, তোমার এ চোখের জল আমার কাছে মুক্তোর চেয়েও দামী, তোমার এলোমেলো ভালোবাসা আমার কাছে বড্ড বেশি দামী। প্রিন্সেস তুমি ছিলে থাকবে চিরকাল।
সকাল হয়ে যাচ্ছে ফজরের আযান হয়ে যাবে অদৃশ্য অবয়ব টা মীরার দিকে বেশ কিছুক্ষণ গভীর দৃষ্টিতে তাকিয়ে মীরার ঘন-কালো লম্বা চুল গুলোতে চুমু খেয়ে চলে গেলো।

_______________________

-মিনিট পাচেক পর এলার্মের শব্দে মীরা চোখ খুলে তাকালো।
ঘড়িতে তাকিয়ে দেখলো ৫টা বাজে।
মীরার মন কেমন যেনো এলোমেলো লাগছে।
কারো স্পর্শ যেনো মীরা অনুভব করতে পারছে।
মীরা নিজের হাত টা সামনে এনে বেশ কিছুক্ষণ তাকিয়ে দেখলো।
মনের ভ্রম্মান্ড ভেবে উড়িয়ে দিলো।সময় নষ্ট না করে মীরা সব চিন্তা ঝেড়ে দিয়ে ওজু করে নামাজ টা আদায় করে নিলো।
নামাজে বসে আল্লাহর কাছে দু-হাত তুলে দোয়া চাইলো, হে আল্লাহ তুমি দয়ার শিরোমণি, তুমি আমার জন্য যা করছো নিশ্চয়ই আমি ভালো মনে করে চলছি, বাকিটা তোমার হাতে, আমি জানি তুমি যা করবে নিশ্চয়ই আমার ভালো ভেবেই করবে, বাকিটা তোমার উপর ছেড়ে দিলাম আমি ।

মীরা কিচেনে গিয়ে সবার জন্য আজ নাস্তা বানিয়ে নিলো। মনটা আজ অনেক ফুরফুরে লাগছে।
রাতটা খুব গম্ভীরমুখে কেটে গেলেও সকাল টা বেশ ফুরফুরে লাগছে মীরার কাছে।

খুব ঠান্ডা মেজাজে মীরা সবার সাথে হাসি-হাসি মুখে কথা বলে যাচ্ছে।
ইরা মীরা কে বললো, কিরে তোকে ভূত প্রেতাত্মা কিছু আছড় করে নিতো?
দেখিস কিন্তু আবার।

মীরা মুখে দুষ্টু হাসি ফুটিয়ে বললো, চিন্তা করিসনা আপু, ভূত মশাইকে বলবো একবার বলো না শ্যালিকা, দুলাভাই বলা ছাড়া থাকতে পারিনা।

ইরা মীরার হাত শক্ত করে ধরে বললো, প্লিজ বোন, আমি এসবের মধ্যে নেই আমাকে মাফ কর পারলে তুই তোর বর বানিয়ে নে।

মীরা ইরার হাতে নিজের আরেকটা হাত রেখে বললো, ওঁকে কিন্তু…..
মীরা ইরার চোখের দিকে তাকিয়ে রহস্যময় হাসি দিয়ে বললো, আর একবার ভয় পেলে, আজ রাতে ওদেরকে তোমার রুমে পাঠাবো আমি।

ইরা ঢোক গিলে মীরার দিকে তাকালো।

মীরা দুষ্টু হাসি ফুটিয়ে বললো, এখন সোজা টেবিলে বসো, খেয়ে জানাও নাস্তা কেমন বানিয়েছি।

ইরা কাঁপা কাঁপা চোখে মীরার দিকে তাকিয়ে ঠিক আছে বলে চেয়ার টেনে বসে পরলো।

মীরা কারো সাথে দুষ্টমি না করলেও এই পাগলী বোন টার সাথে সেই ছোটবেলা থেকেই করে আসছে।
মীরাও সবার সাথে নাস্তা করে সবাইকে হাসিমুখে বিদায় জানিয়ে ভার্সিটি তে চলে আসলো।

“এদিকে ইরা ভেবে রেখেছে মীরা ভার্সিটি থেকে ফিরে আসলে মীরা কে বিশাল বড়ো এক সারপ্রাইজ দিবে।
মীরা হয়তো খুশিতে বেহুঁশ হয়ে যাবে।

ইরা ব্ল্যাক একটা শাড়ি হাতে নিলো, সোনালী পাড়ের কম্বিনেশনে চমৎকার একটা শাড়ি পড়ে নিলো।
ইরাও চমৎকার সুন্দরী, ফর্সা গায়ের রঙ একদম ধবধবে সাদা, মেচিং গহনা, গাঢ় কাজল রেখা চোখে এঁকে গোলাপি লিপস্টিক দিয়ে সাজটা কমপ্লিট করে নিলো। আয়নার দিকে একবার তাকিয়ে লাজুক হাসি হাসলো।

– ভার্সিটি থেকে আসবার পথে মীরার মনটা বেশ খারাপ হয়ে গেলো, একটা ছেলে মীরা কে খুব খারাপভাবে ইভটিজিং করেছে।
এদিকে রোদ মীরার একদম সহ্য হচ্ছে না মনে হচ্ছে গায়ের মাংস সব এখুনি গলে গলে খসে পরবে।
মীরার পুরো শরীর যেনো সেদ্ধ হয়ে যাচ্ছে।
মীরা ভাবছে আজ বাসায় গিয়ে বলবে একটা ডক্টর দেখাতে হবে।
ইদানীং মীরার কাছে মনে হচ্ছে রোদ একমাত্র শত্রু মীরার।
কোনো রকমে পায়ে হেঁটে অনেকটা রাস্তা পার হয়ে একটা রিকশার দেখা পেলো।
মীরা আর দেরি না করে রিকশায় হুঁট টা উঠিয়ে বাসায় চলে আসলো।

-বাসায় এসে কলিং বেল চাপলে মীরার আম্মা এসে দরজা খুলে দিলো।
মীরা কোনো দিক না তাকিয়ে উপরে চলে গেলো।
রুমে গিয়ে কোনো রকমে ব্যাগটা রেখে ওয়াশরুমে ঢুকে ঠান্ডা পানির নিচে একঘন্টা দাঁড়িয়ে থাকলো।
তবুও যেনো মাংস গুলো আলাদা হয়ে যাচ্ছে হাড্ডিগুলো থেকে।
কোনোরকমে গোসল সেরে নিচে গিয়ে যা দেখলো মীরার চোখ কপালে।
দু’চোখ বেয়ে জল গড়িয়ে পরছে মীরার, মীরা আজ বাকরুদ্ধ, কষ্টে বুক টা যেনো ফেটে যাচ্ছে মীরার, পৃথিবীটা ধূলিসাৎ মনে হচ্ছে মীরার কাছে।

মীরা সিঁড়িতে দাঁড়িয়েই সবকিছু পর্যবেক্ষণে ব্যাতিব্যাস্ত।
কী দেখছে মীরা এসব, রুদ্র ভাই কি তাহলে ইরা আপুকে …….

মীরা চোখ বন্ধ করে স্বপ্ন ভেবে আবার চোখ খুললো।
মীরা তাকিয়ে দেখলো সেই একই দৃশ্য।

-ইরা আপু রুদ্র ভাইয়ের দিকে খুব গভীরভাবে তাকিয়ে হাসছে।
এই হাসিতে লুকিয়ে আছে হাজারো বছরের জমানো ভালোবাসা।

#চলবে—–

বিদ্রঃ গল্পটা খুব রহস্য, এটা লিখতে আমার যেমন খুব কষ্ট হচ্ছে তেমনি আপনাদেরও অপেক্ষা করতে হচ্ছে। আশা করি আপনাদের খুবি ভালো লাগবে, আপনারা আপনাদের মন্তব্যগুলো বড়ো করে দিবেন, এতো ছোট করে দেন কেনো?
গল্প কিন্তু আজ আমি বড়ো করে লিখেছি
সো বাকিটা……..

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here