একের পর এক বেল্টের আঘাতে ক্ষত বিক্ষত হয়ে যাচ্ছে সাবিহার শরীর।সাবিহা ব্যাথায় ছটফট করে কাঁদছে কিন্তু সেদিকে কাব্যর একদমই হুস নেই।দরজার বাইরে থেকে অনবরত সবাই বলছে সাবিহা কে ছেড়ে দিতে কিন্তু সেসব কিছুই কাব্যর কানে পৌঁছাচ্ছে না।সে ব্যাস্ত তার রাগ কমানোর জন্য,একসময় সাবিহা আর শয্য করতে না পেরে জ্ঞান হারায়।সেটা দেখে কাব্য সাবিহার গাল চেপে ধরে বলে উঠে,,,
“আমার কথা শুনিস নি,আমি যেটা করতে বারন করেছি সেটাই করেছিস।প্রতিশোধ নিলি ত তাই না।আমার জানকে কষ্ট দিয়ে প্রতিশোধ নিয়েছিস তুই,এবার বুঝ কেমন লাগে।সারাক্ষণ কানের কাছে বলেই চলিস ভালবাসি কাব্য ভাই,আমি বারন করার পরও শুনিস নি।আর আজ যখন আমার ভালবাসার মানুষকে দেখলি তখন শয্য করতে পারলি না তাই না।বলেছিলাম ইশার থেকে দূরে থাকবি কিন্তু শুনলি না তুই।আমার ভালবাসাকে কষ্ট দিলি,শয্য করতে না পেরে ইশাকে কষ্ট দিয়ে দিলি এভাবে।তকে আজ মেরেই ফেলব আমি।”
তারপর আবারও কাব্য অমানুষের মত মারছে,কাব্য থামছেই না অনবরত মেরেই চলেছে,এভাবে অনেকক্ষণ নিজের ইচ্ছে মত নির্যাতন করে যায়।একটা সময় কাব্য ক্লান্ত হয়ে পড়ে,তখন সাবিহাকে ছেড়ে দিয়ে দরজা খুলে বের হয়ে যায় ঘর থেকে।তখনই হুরমুরিয়ে ঘরে প্রবেশ করেন সবাই।এসে সাবিহাকে রক্তাক্ত অবস্থায় দেখে তাদের বুকের ভিতরটা মোচড় দিয়ে উঠল।তারা আর কিছু না ভেবে সাবিহাকে হসপিটালে নিয়ে যায়।
___________________________________
অন্যদিকে কাব্য অনেক জোড়ে গাড়ি ড্রাইভ করছে,তার পাশেই তার গার্লফ্রেন্ড ইশা হাতে ফু দিচ্ছে আর ন্যাকা কান্না কাদছে।কাব্য একবার অস্থির চোখে ইশাকে দেখছে ত আরেকবার সামনের দিকে তাকিয়ে ড্রাইভ করছে।ইশা এবার ন্যাকামি করে বলে উঠল,,,
“বেবি দেখো না হাতটা কত লাল হয়ে গেছে,খুব জ্বলছে আমার।”
“কিছু হবে না জান,সব ঠিক হয়ে যাবে।আরেকটুখানি পথই আমরা এখনই হসপিটালে পৌঁছে যাব।”
কিছুক্ষণ পর কাব্য ইশাকে নিয়ে হসপিটালে পৌঁছে যায়।কাব্য দৌড়ে ভিতর থেকে ডাক্তার আর নার্সকে ডেকে নিয়ে আসে।ডাক্তার আর নার্সরা আসার পর কাব্য তাদের ইশার হাত দেখতে বলে।ডাক্তার আর নার্স ইশার হাত দেখে একে অপরের দিকে তাকায়।তাদেরকে কাব্য এমনভাবে ডেকে এনেছে যেন খুব সিরিয়াস কোন রুগি কিন্তু এখানে এসে তার উল্টোটাই দেখছে।ডাক্তারকে কিছু করতে না দেখে কাব্য রেগে ডাক্তারের উদ্দেশ্য বলে উঠল,,,
“আপনারা এখনও চুপ করে দাড়িয়ে আছেন কেন?দেখতে পাচ্ছেন না আমার জান কষ্ট পাচ্ছে আপনারা তাড়াতাড়ি কিছু করুন।”
ডাক্তার অবাক হয়ে বলে উঠল,,,
“আপনি কী আমাদের সাথে ফান করছেন?হাতে ত কিছুই হয় নি,আর আপনি আমাদের এমন ভাবে ডেকে আনলেন যেন কত সিরিয়াস কিছু হয়ে গেছে।”
“এই ডাক্তার দেখতে পাচ্ছিস না আমার জান কষ্ট পাচ্ছে,আর তুই এখানে সিরিয়াস বিষয় খুঁজছিস।এখনি অর কষ্ট কমিয়ে দে নয়ত তোর কষ্ট বাড়িয়ে দিব আমি।”
কাব্য রেগে ডাক্তারের কলার ধরে বলে উঠল,ডাক্তার ভয় পেয়ে যায় তাই চুপচাপ ইশার হাতে মলম লাগিয়ে ব্যান্ডেজ করে দেয়।তখন কাব্য ইশার কাঁদে হাত রেখে নরম গলায় বলে উঠে,,,
“আমার জানের কী এখনও কষ্ট হচ্ছে?”
ইশা মুচকি হেঁসে মাথা দুই পাশে নেড়ে না জানাল,কাব্যর মুখেও হাসি ফুটে উঠল।ইশা বলে উঠল,,,
“বেবি যার জন্য আমি এত কষ্ট পেলাম তুমি কী তাকে কিছু করবে না?”
“কে বলেছে করব না হুম!আমার জানকে যে কষ্ট দিবে তাকে তার থেকে দ্বিগুন কষ্ট ফিরিয়ে দিব আমি।আমার জানের হাতে চা ফেলে দিয়েছে ঐ থার্ড ক্লাস মেয়েটা আর আমি তাকে এমনি এমনি ত ছেড়ে দিব না।আমি তাকে তার উপযুক্ত শাস্তি দিয়েই এসেছি।”
কাব্যর কথা শুনে ইশার মুখের হাসিটা চওড়া হল,কাব্যও মুচকি হেঁসে ইশাকে নিয়ে হসপিটাল থেকে বের হয়ে গেলো।
★ফ্লাসব্যাক★
কাব্য আর সাবিহা মামাত আর ফুপাত ভাই বোন।সাবিহা মধ্যবিত্ত পরিবারের মেয়ে।সাবিহা তার বাবা মায়ের দ্বিতীয় সন্তান,সাবিহার বড় একটা বোন আছে নাম শীলা।সাবিহা এবার ক্লাস টেনে পড়ে,আর শীলা অনার্স ৩য় বর্ষে।সাবিহার বাবা একজন কলেজ প্রফেসর।
অন্যদিকে কাব্য বড়লোক বাবার সন্তান।কাব্যরা তিন ভাই বোন,সবার বড় ভাই মেঘ,তারপর কাব্য,আর ছোট বোন হিয়া,হিয়া আর সাবিহা একসাথেই পড়াশোনা করে।কাব্য অনার্স ফাইনাল ইয়ারে পড়ছে এবার।আর মেঘ একজন ডাক্তার।
আজ মেঘ আর শীলার এনগেজমেন্ট ছিল,সেই সুবাদে আজ সবাই এক হয়েছে।আর উপস্থিত ছিল কাব্যর গার্লফ্রেন্ড ইশাও।কাব্য আর ইশার রিলেশনের কথা সবাই জানে তাই ইশাকেও ইনভাইট করা হয়েছে।কাব্য ইশাকে পাগলের মত ভালবাসে।সবাই তাদের রিলেশনে রাজি থাকলেও রাজি নয় মেঘ আর মেঘের মা মিসেস লতা।মেয়েটাকে মেঘ আর মিসেস লতা একদমই পছন্দ করে না।কেন করে না তা আস্তে আস্তে ক্লিয়ার হয়ে যাবে।সাবিহা আর হিয়া আজ মেরুন কালারের একটা গাউন পড়েছে।তার সাথে হালকা সাঁঝ তাতেই দুজনকে কোন পরীর থেকে কম লাগছে না।হিয়া আর সাবিহা একসাথে দাড়িয়ে কথা বলছিল তখন সাবিহার মা মিসেস হেনা এসে বলেন,,,
“সাবিহা যা ত তোর বাবাকে এই চা টা দিয়ে আয়,তোর বাবার নাকি মাথাটা ধরেছে।”
“আচ্ছা মা যাচ্ছি।”
কথাটা বলেই সাবিহা চায়ের কাপটা তার মায়ের হাত থেকে নিয়ে তার বাবার কাছে যাওয়ার জন্য পা বাড়ায়।সাথে সাথেই ধাক্কা খায় ইশার সাথে,আর চা টা গিয়ে পড়ে ইশার গায়ে।চা টা ততটাও গরম ছিল না,কারন সাবিহার বাবা বেশি গরম চা খান না।ইশা রেগে কিছু বলবে সাবিহাকে কিন্তু পরক্ষণেই ইশার চোখ যায় কাব্যর দিকে।আর ভ্যা ভ্যা করে কেঁদে ফেলে,সেটা দেখে কাব্য সহ সবাই এগিয়ে আসে।আর এসে দেখে ইশা হাত ধরে কাঁদছে আর সাবিহা অপরাধীদের মত মুখ করে দাঁড়িয়ে ইশাকে বারবার সরি বলছে।কাব্য সাবিহার দিকে অগ্নি দৃষ্টি নিক্ষেপ করে ইশার হাত ধরে উত্তেজিত হয়ে পড়ে।বরফ দেয় কিন্তু ইশার কান্না থামে না তখন সাবিহা মলম নিয়ে আসে আর বলে উঠে,,,
“সরি আপু আমি তোমাকে খেয়াল করি নি।এই মলমটা লাগিয়ে নাও দেখো একদম সেরে যাবে।”
সাবিহার কথা শুনে কাব্য রেগে সাবিহার হাত ধরে টেনে একটা রুমে নিয়ে যায়,তারপর কী হয়েছে সবাই জানেন।
★বর্তমান★
হসপিটালের বেডে শুয়ে আছে সাবিহা,পাশেই বসে আছে মেঘ আর শীলা।বাকি সবাইকে বাড়িতে পাঠিয়ে দিয়েছে অরা দুজন মিলে।সারা শরীরে বেল্টের দাগ হয়ে আছে যেটা খুব ভালো করেই ফুটে উঠেছে ফর্সা গায়ে।শীলা বসে বসে চোখের পানি ফেলছে সাবিহা আর মেঘ শীলাকে কান্না করতে বারন করছে,,,
“আজকের দিনে কত আনন্দ করার কথা ছিল আমার ছোট বোনটার।পরীর মত সেজে ছিল আজ কিন্তু এখন দেখো আমার বোনটা কীভাবে কষ্ট পাচ্ছে।কীভাবে অমানুষের মত মেরেছে আমার ছোট্ট বোনটাকে।”
“আপু তুমি কেঁদো না আমি ঠিক আছি এখন,আর ভুলটা ত আমারই তাই না।আমার জন্যই ত ইশা আপুর হাতটা ওভাবে পুড়ে গেলো।আমার ত শাস্তি পাওয়ার কথাই ছিল তাই না,আর সেটা কাব্য ভাই আমাকে দিয়েছে।যা আমার মনপ্রাণ ভরিয়ে দিয়েছে, ভবিষ্যতে কিছু করার আগে আজকের ঘটনা মনে করিয়ে দিবে।ভাইয়া তুমি আপুকে কাঁদতে না করো ত।কীভাবে কাঁদছে দেখো যেন আমি মরে গেছি।”
“একটা থাপ্পড় দিব তকে,এসব কেমন কথা হে?আরেকবার এমন কথা বললে দেখিস তোকে কী করি আমি।আল্লাহর কাছে এখন একটাই দোয়া করি তুই যাতে সুস্থ হয়ে উঠিস।এখন প্লিজ আর বাজে কথা বলিস না।”
“এত তাড়াতাড়ি মরব না গো,আমি মরলে ত মুক্তি পেয়ে যেতে সবাই তাই না।এত তাড়াতাড়ি মুক্তি দিচ্ছি না তোমাদের।”
“সাবিহা তুই কিন্তু অতিরিক্ত কথা বলছিস,এবার কানের নিচে একটা দিয়ে দিব সত্যি সত্যি।তুই এসব বাজে কথা বলছিস আর তোর বোন কান্না করে আমার হসপিটাল ভাসিয়ে দিচ্ছে।বইনেরা আমার অনেক কষ্টে হসপিটালটা বানাইছি পুরো তিন বছরের পরিশ্রম আমার এই হসপিটাল।এখন তরা দুই বোন মিলে একদিনেই আমার হসপিটালের তেরোটা বাজাইস না।”
“আমি কাঁদছি আর তুমি মজা করছো?তোমার সাথে বিয়ে ক্যান্সেল আমার।করব না তোমাকে বিয়ে,ডিভোর্স দিয়ে দিব তোমাকে।”
“আপু তরা থাম ত,চুপ কর এবার।”
“তোর বোনকে চুপ করা নয়ত এখনই তুলে নিয়ে বিয়ে করে ফেলব।তারপর বুঝাব বিয়ের আগে ডিভোর্স দেয়ার কথা ভাবার কী মজা!”
মেঘ বাঁকা হেঁসে শীলাকে কথাটা বলল,সেটা দেখে শীলা রাগে ফুঁসতে ফুঁসতে বলল,,,
“দেৎ থাকবই না এখানে,এখানে থাকলেই পচাবে আমাকে।”
কথাটা বলেই শীলা বের হয়ে যায় ঘর থেকে,সেটা দেখে আমি বলে উঠি,,,
“ভাইয়া আপুর সাথে যাও না একটু,দেখো না কই গেলো।”
“তোর বোনের মন ভালো করার জন্য মজা করলাম,উল্টো তোর বোন আমার সাথে রাগ দেখিয়ে চলে গেলো।এখন দেখব গিয়ে কোথাও হয়ত কাঁদছে,এত ইমোশনাল কেন তোর বোনটা?”
“আপু এমনই,আবার আমাকে খুব ভালওবাসে তাই আমার কষ্টটা শয্য করতে পারছে না।তুমি এবার প্লিজ যাও আর আপুর রাগ ভাঙ্গাও।”
“আচ্ছা,আচ্ছা যাচ্ছি আমি।তুই একটু রেস্ট নে কাল সকালে তোকে ডিসচার্জ করে দিব।”
আমি মাথা নেড়ে সম্মতি জানালে মেঘ ভাইয়া চলে যায়,আমি বেডে গা এলিয়ে দিয়ে দু ফোঁটা চোখের পানি বিসর্জন দিলাম।সন্ধ্যার কথা ভাবলেই বুকের ভিতরের ঝড় বয়ে যাচ্ছে।
_________________________________
রাত ১১ টা বেজে ১৭ মিনিট কাব্য ইশাকে তার বাড়িতে ড্রপ করে নিজে বাড়িতে আসে।আর এসেই দেখে ড্রয়িং রুমে অর মা,বাবা,ফুপা,ফুপি,বোন বসে আছে।কাব্যকে বাড়িতে ডুকতে দেখে কাব্যর বাবা ফায়াজ কাব্যর সামনে গিয়ে দাঁড়ায় আর শক্ত গলায় বলে উঠে,,,
“বাচ্চা মেয়েটাকে ছোট একটা কারনে এমন অমানুষের মত কেন মারলে কাব্য?”
“বাবা আমি অকারনে কিছু করি নি,আমার ইশার হাতে গরম চা ফেলে দিয়ে কষ্ট দিয়েছে।সেটা আমি কী করে মেনে নিব বলো!এটা মেনে নিলে আমার ভালবাসার সাথে অন্যায় করা হত।আর আমি সেটা হতে দিতে পারি না।”
কাব্যর কথা শুনে কাব্যর মা মিসেস লতা রেগে ফুঁসে বলে উঠল,,,
“কাব্য তুমি ভালবাসায় এতটাই অন্ধ হয়ে গেছো যে কোনটা ঠিক কোনটা ভুল সেই জ্ঞান হারিয়ে ফেলেছো।আর চা টা এতটাও গরম ছিল না যে তোমার ইশার হাত পুড়ে গিয়ে চামড়া খসে গেছে।তুমি হয়ত ভুলে যাচ্ছো তোমার ফুপা গরম চা খায় না,আর চা টা তোমার ফুপার জন্যই ছিল।দিক বিদিক না ভেবে ছোট মেয়েটাকে এমনভাবে মারলে যে সেন্সলেস হয়ে গেছে।”
এবার সাবিহার বাবা মনির সাহেব বলে উঠলেন,,,
“আপনারা শান্ত হন,আর কাব্য তুমি ঘরে যাও।আমার মেয়ের হয়ে তোমার কাছে আমি ক্ষমা চাইছি।আমার মেয়ে আর কখনও এমন ভুল করবে না।”
“ফুপা আপনি কেন ক্ষমা চাইছেন,আপনি ত কোন ভুল করেন নি।যা করার আপনার মেয়ে করেছে,আর ক্ষমা চাইলে আপনার মেয়েই চাইবে।”
“কাব্য তুমি একটু বেশিই করছো,তুমি একটু ঠান্ডা মাথায় ভেবে দেখো ত তুমি আজ ঠিক কী কী করেছো।আর এখন তোমার ফুপা তোমার কাছে ক্ষমা চেয়েছে কোথায় তুমি মাথা নত করবে তা না তুমি সাবিহার ভুলটা তুলে ধরে উঁচু আওয়াজে কথা বলছো এখনও?তোমাকে কী আমরা এই শিক্ষা দিয়েছি!”
“মা তুমি এভাবে,,,
” একদম চুপ আমার সাথে একদম কথা বলবে না,তোমার থেকে আমি এখন কিছু শুনতে চাই না ঘরে যাও।”
কাব্য আর কিছু না বলে মাথা নিচু করে ঘরে চলে যায়।
#ভালবেসে রাখব কাছে
#লেখিকাঃ সাদিয়া সিদ্দিক মিম
#পর্বঃ২
হসপিটালে হন্তদন্ত হয়ে দৌড়ে আসছে একটা ছেলে,রিসেপশনিস্টের থেকে কিছু একটা জানতে চেয়ে আবারও দৌড় লাগাল।ছেলেটা দৌড়ে এসে একটা কেবিনের ভিতরে ডুকল।
সকাল বেলা বেডে আধশোয়া হয়ে বসে ফোন টিপছিলাম তখন কোথা থেকে একজন এসে আমার সামনে দাড়াল।আমি চোখ তুলে সামনে তাকালে দেখতে পাই শীলা আপুর ফ্রেন্ড সাদাফ ভাইয়া।উনাকে দেখে খুব অবাক হই আমি,কারন উনি একটা কাজে সিলেট গিয়েছিল।কিন্তু পরক্ষনেই আমি নিজেকে সামলে উনাকে প্রশ্ন করলাম,,,
“ভাইয়া আপনি এখানে!”
“তোমাকে দেখতে এলাম।শীলাকে কল দিয়েছিলাম তারপর এসব জানতে পারলাম।এখন কেমন আছো তুমি?”
“এইত আল্লা রহমতে ভালোই আছি,কিন্তু আপনি না সিলেট গিয়েছিলেন পরশু।তার জন্যই ত আপুর এনগেজমেন্ট পার্টিতে থাকতে পারলেন না।”
“হ্যা মানে কাল রাতেই ফিরেছি।”
“আপনার না এক সপ্তাহ পর ফিরার কথা ছিল!”(সন্দেহ করে)
“কাজ শেষ হয়ে গেছে তাই কাল রাতেই ফিরে এলাম কিন্তু এসব কীভাবে হল সাবিহা?এমন অমানুষের মত মারল তোমার ভাই আর তোমরা এখনও চুপ করে আছো কেন?”
“ভাইয়া এসব বাদ দিয়ে আমরা অন্য কথা বলি!”
“কেন বাদ দিব সাবিহা,যে তোমাকে এত নির্মম ভাবে অত্যাচার করল ছোট একটা বিষয়ে তাকে তুমি এমনি এমনি ছেড়ে দিবে?আর তুমি আংকেল কে বারন করেছো কেন কাব্যকে কিছু বলতে?”(উত্তেজিত হয়ে)
“আপনাকে এসব কে বলল?আমি বাবাকে বারন করেছি এটা আপনাকে কে বলল?”
“তোমাকে এত কথা বলতে বলি নি সাবিহা,যেটা বলেছি সেটার উওর দেও!”(রেগে)
সাদাফের ধমকে সাবিহা কেঁপে উঠে,সাবিহা চুপ করে আছে।সেটা দেখে সাদাফ আবারও ধমকে বলে উঠে,,,
” সাবিহা আমি তোমাকে কিছু জিজ্ঞেস করেছি উওর দিচ্ছো না কেন?”
“ভাইয়া আপনি ঠিক করে কথা বলুন,আমার সাথে এভাবে রাগ দেখাতে পারেন না আপনি।”
“আমি রাগ দেখিয়ে কথা বললে তোমার সেটা শয্য হয় না আর তোমার ভাই যে তোমাকে এত নির্মম ভাবে আঘাত করল সেটা তোমার শয্য হয়ে গেলো তাই না!”
“ভাইয়া প্লিজ আপনি এখন আসুন,আমি এটা নিয়ে আর একটা কথাও বলতে চাই না।”
সাবিহার কথা শুনে সাদাফ আর এক মুহূর্তও দাঁড়ায় না।গড়গড়িয়ে কেবিন থেকে বের হয়ে যায় রাগে ফুঁসতে ফুঁসতে।
আমি বড় করে কয়েকটা শ্বাস নিয়ে ভাবতে থাকি কালকে সন্ধ্যার কথা,,,
★ফ্লাসব্যাক★
সন্ধ্যা বেলা সাবিহাকে হসপিটালে ভর্তি করার কতক্ষণ পরেই সাবিহার জ্ঞান ফিরে।তখন সাবিহাকে একে একে সবাই দেখে বের হয়ে যায় কেবিন থেকে কিন্তু থেকে যায় সাবিহার বাবা মনির সাহেব।মনির সাহেব সাবিহার কাছে গিয়ে সাবিহার মাথায় হাত বুলিয়ে নরম গলায় বলে উঠে,,,
“আমার ছোট্ট প্রিন্সেস এখন কেমন আছে?”
সাবিহা দুর্বল গলায় বলে উঠে,,,
“আমি ভালো আছি বাবা,কিন্তু তোমার চোখ এমন ফুলা লাগছে কেন?নিশ্চয়ই কেঁদেছ তুমি তাই না!”
মনির সাহেবের চোখ থেকে দুফোঁটা জল গড়িয়ে পড়ল সেটা দেখে সাবিহা অস্থির হয়ে বলে উঠল,,,
“বাবা তুমি কেঁদো না,তুমি কাঁদলে ত আমার খুব কষ্ট হয়।”
“আমি আমার প্রিন্সেসকে রক্ষা করতে পারি নি,একটা ছেলে আমার প্রিন্সেসকে এভাবে অমানুষের মত মারল কিন্তু আমি কিছুই করতে পারলাম না।ঘৃণা হচ্ছে নিজের প্রতি,ঘৃণা হচ্ছে যে আমি একজন বাবা হয়ে একটা অমানুষের হাত থেকে নিজের মেয়েকে বাঁচাতে পারলাম না।”
“বাবা তুমি প্লিজ শান্ত হও,তোমারই বা কী করার ছিল তখন।তোমরা যাতে কিছু করতে না পারো তার জন্যই ত উনি ওভাবে দরজা বন্ধ করে মেরেছে আমায়।তুমি এসব ভেবে কষ্ট পেও না বাবা,আমি এখন ঠিক আছি দেখো।”
“আমিও ঠিক আছি মামনি,তখন কিছু করতে পারি নি ত কী হয়েছে কিন্তু এবার আর কাব্যকে আমি ছেড়ে দিব না।কাব্যকে তার কর্মের ফল দিয়েই ছাড়ব আমি।”
“বাবা তুমি কিছু করবে না কাব্য ভাইকে।”
“মানেহ?”
“মানে হল তুমি কাব্য ভাইকে কিছু করবে না,উনাকে কিছু বলবেও না তুমি।”
“তুই এসব কী বলছিস?যে তকে এভাবে মারল তাকে আমি এমনি এমনি ছেড়ে দিব নাকি?অসম্ভব আমি এটা কিছুতেই হতে দিতে পারি না।”(রেগে)
“বাবা আমি তোমাকে কাব্য ভাইয়াকে ছেড়ে দিতে বলি নি।শুধু বলেছি তুমি উনাকে কিছু করবে না আর বলবেও না।যা করার আমিই করব,আমার সাথে যে অন্যায়,যে খারাপ আচরন এতদিন করে এসেছে তার প্রতিটা কনা পাথর দিয়ে ফিরিয়ে দিব।এতদিন ভালবাসার দাবী নিয়ে পাগলামি করেছি কাব্য ভাইয়ের সাথে।কিন্তু উনি প্রতিবারই আমার ছোট্ট হৃদয়ে প্রতিনিয়ত আঘাত করেছে।সেসব মনে ধরি নি কিন্তু আজ যা করেছে উনি আমার সাথে তা আমি কড়ায় গন্ডায় ফিরিয়ে দিব।”
“সাবিহা তুই এখনও অনেক ছোট,তুই কী করবি?তকে কিছু করতে হবে না যা করার আমিই করব।”
“বাবা আমি তোমাকে আমার কছম দিলাম তুমি কাব্য ভাইকে কিছু বলবে না আর করবেও না।আর আমি তায়কোয়ন্দো(মার্শাল আর্ট) শিখতে চাই।যেটা মাধ্যমে আমি নিজেকে শারীরিক ও মানসিক ভাবে প্রশিক্ষিত করে নিজের আত্মরক্ষা নিজেই করতে পারব।যাতে আর কোন কাব্য আমার উপর কোন নির্যাতন করতে না পারে।”
“আমার মামনিটা কবে এত বড় হয়ে গেলো বুঝতে পারি নি।মামনি তুই যা বলছিস তাই হবে কিন্তু আমার একটা শর্ত আছে।”
“কী শর্ত বাবা?”
“তোর মামার বাড়ির সাথে সব সম্পর্ক ছিন্ন করতে হবে।আমি ঠিক করেছি শীলার সাথে মেঘের বিয়েটা ভেঙ্গে দিব কারন যে পরিবারে কাব্যর মত একটা পশু আছে সে পরিবারে আমি আমার মেয়েকে বিয়ে দিব না।”
“বাবা তুমি এসব কী বলছো?মেঘ ভাইয়া আর শীলা আপু একে অপরকে খুব ভালবাসে।আর মেঘ ভাইয়া কাব্য ভাইয়ের মত নয়,আর মামার বাড়ির সাথে সব সম্পর্ক ছিন্ন করলে আমি আমার প্রতিশোধ নিব কীভাবে?”
“কিন্তু আমি,,,
” বাবা কোন কিন্তু নয় এখন যেভাবে চলছে সেভাবেই সবটা চলতে দাও।তুমি কাব্য ভাই+সবার সাথে ভালো আচরন করো।আমি সুস্থ হলে তায়কোয়ন্দো শিখব তারপর দেখাব ঐ কাব্য আহমেদকে।”
“ঠিক আছে তুই যখন বলছিস তবে তাই হবে।”
★বর্তমান★
সাবিহা আজ বাসায় ফিরবে সাবিহার বাবা আর শীলা এসেছে সাবিহাকে বাড়িতে নিয়ে যেতে।সাবিহা তৈরি হয়ে কেবিন থেকে বের হতে গেলে সামনে এসে দাঁড়ায় সাদাফ।
#চলবে…
(গত পর্বের কয়েকজনের কমেন্ট পড়ে আমি শিহরিত,প্রথম পর্ব লেখার পর এত ভালো ভালো কমেন্ট আশা করি নি আমি।আর গল্পে স্পষ্ট লেখা আছে দরজা বন্ধ করে কাব্য সাবিহাকে মেরেছে সেখানে কেউ উপস্থিত ছিল না।বাইরে থেকে সবাই কাব্য কে থামানোর জন্য চেষ্টা করেছে।সেটা আমি ক্লিয়ার করেছি।
এখন দয়াকরে কেউ বলবেন না যে দরজা ভেঙ্গে কেন বাঁচাল না সাবিহাকে?তবে তার জন্য আমার আগে থেকেই তৈরি করে রাখা উওর হলঃ সে গিয়ে দরজা ভেঙ্গে সাবিহাকে উদ্ধার করে নিয়ে আসুক🙃।
আর কাব্য সাইকো টাইপের রাগটা বেশি আর সাবিহাকে শয্যও করতে পারে না তাই ওভাবে মেরেছে।আর তার শাস্তি কাব্যকে সাবিহাই দিবে।
আর সাবিহার বাবা কেন কাব্য কে কিছু বলে নি সেটা আশা করি আজকের পর্ব পড়ে সবাই বুঝতে পেরেছেন!আশা করি সবার প্রশ্নের উওর পেয়ে গেছেন।
আর কোন বাবার সামনে তার মেয়েকে কেউ কিছু বললে সে এমনি এমনি ছেড়ে দিবে না।আর সেটা আপনাদের বুঝা উচিত ছিল।আর আমিও একটা মেয়ে আর মেয়ে হয়ে আমার গল্পে আর যাই হোক মেয়েদের ছোট করব না।আর আমার লেখা #সোনার সংসার গল্পটা পড়ার পরও আপনাদের বুঝা উচিত ছিল যে আমি আর যাই করি আমার গল্পে কোন মেয়েকে ছোট করব না।সে ভরসাটা করতে পারতেন,কিন্তু আপনারা ভরসা কী ধৈর্যই ধরতে পারেন নি।তাই আপনাদের কাছে রিকুয়েষ্ট বাজে কথা না বলে ধৈর্য নিয়ে গল্পটা পড়ুন।
আর ভেবেছিলাম রাতে আরেক পার্ট দিব কিন্তু আপনাদের কমেন্ট পড়ে সেটা করতে ইচ্ছে করছে না।আমার কথায় কারো খারাপ লাগলে Sorry)
#চলবে…
#ভালবেসে রাখব কাছে
#লেখিকাঃ সাদিয়া সিদ্দিক মিম
#পর্বঃ১