#ভালোবাসা_তুই
#পর্বঃ৫
#লেখিকা_নিদ্রানী_নিদ্রা
[ কপি করা নিষেধ ]
শুভ্র ভাই আম্মুকে বলল ,
” ফুপ্পি আমি কালকে এতো রাত করে এসেও কতো সকালে ঘুম থেকে উঠলাম । তোমাদের বাসায় আসলাম আর তোমার ছোট মেয়ের ঘুম থেকে উঠতে ৯ টা বাজে ।
ঘুম থেকে দেরি করে উঠার কারণে এমনিতেই আম্মুর কাছে বকা খেতাম। আম্মু একেবারে আগুন হয়ে ছিল। এখন তো শুভ্র ভাইয়ের কথা শুনে আগুনে ঘি ঢেলে দেওয়ার মতো হলো । আমি বুঝিনা আমি এই লোকটার কি এমন ক্ষতি করেছিলাম যে সব সময় আমার পিছনে লেগে থাকে। বেয়াদব লোক একটা । আমার সময় আসুক আমিও দেখিয়ে দিবো এই শুভ্রতা কি জিনিস । আম্মু আমার দিকে অগ্নি দৃষ্টিতে তাকিয়ে বললেন ,
” শুভ্রতা তোকে কতবার বলেছি সকাল সকাল ঘুম থেকে উঠতে । তুই কি করিস বেলা ৯ টায় ঘুম থেকে উঠিস । শুভ্র কে দেখ কত জার্নি করে রাতে বাসায় এসে সকালে ঘুম থেকে উঠে গেছে আর তুই কি করিস হ্যাঁ ।
শুভ্র ভাইয়ের জন্য আমাকে এতো গুলো বকা খেতে হলো । শুভ্র ভাই যদি আম্মুকে এই কথা গুলো না বলতো তাহলে আম্মু আমাকে বলতো ,,,, ” শুভ্রতা মা এত দেরি করে কেন ঘুম থেকে উঠলি । কালকে থেকে তাড়াতাড়ি ঘুম থেকে উঠে যাবি ” এখন শুভ্র ভাইয়ের জন্য আমাকে উনার সাথে তুলনা করল আম্মু ।
” আম্মু আজকেই তো দেরি করে ঘুম থেকে উঠলাম এত বকা কেন দিচ্ছো ।
আম্মু আমার কথা শুনে রাগী কন্ঠে বললেন,
” বকা দিবো না তো কি করবো তোকে ? আদর করবো …
” তুমি কেন আমাকে আদর করবে । তুমি তো তোমার আদরের ভাতিজা কে আদর করবে ।
আমার কথায় শুভ্র ভাই আম্মুকে বলল ,
” দেখেছো ফুপ্পি তোমার মেয়ে কতো হিংসুটে হয়ে গেছে। তুমি আমার ফুপ্পি আমাকে আদর করবে না তো কাকে আদর করবে।
” আপনার ফুপ্পি আর আমার কি ? আমার তো আম্মু আমাকে তো আপনার মতো এতো আদর করে না।
আমাদের কথা শুনে আম্মু ধমক দিয়ে বলল,
” এই ঝগড়া থামাবি তোরা । সব সময় খালি ছোটদের মতো ঝগড়া করতেই থাকিস ।
” ফুপ্পি আমি কোথায় ঝগড়া করেছি তোমার মেয়েই তো ঝগড়া করতে থাকে ।
” আমি একদম ঝগড়া করি না। আপনি সবসময় ঝগড়া করেন।
আম্মু আবার বলল ,
” এই তোরা থাম তো । শুভ্র কি যেন বলবি ? বল তো বাবা ।
” ফুপ্পি আম্মু বলছিল তৃষা, শুভ্রতা আর নিশি কে আমাদের বাসায় নিয়ে যেতে । তাই ওদের নিতে এসেছিলাম ।
আম্মু শুভ্র ভাইকে আমাদের নিয়ে যেতে বলে আমার দিকে তাকিয়ে বলল ,
” শুভ্রতা যা তো তৃষা আর নিশি কে নিয়ে আয় । নাস্তা করে তারপর সবাই একসাথে যাস।
আমি উপরে গিয়ে আপুকে আর নিশি কে নিয়ে আসলাম। তারপর নাস্তা করে সবাই বাসা থেকে বের হলাম। আমাদের বাসা থেকে শুভ্র ভাইদের বাসায় হেঁটে যেতে দশ মিনিট সময় লাগে। তাই সবাই হেঁটে যাচ্ছি।
শুভ্র ভাইদের বাসায় যাওয়ার সময় একটা ছেলে আমার দিকে তাকিয়ে ছিল। এটা দেখে শুভ্র ভাই আমাকে বলল,
” শুভ্রতা তোকে দেখতে একেবারে পেত্নির মতো লাগে। কিন্তু আমি বুঝিনা ছেলেরা তর দিকে এভাবে কেন তাকায়। জাদু করেছিস নাকি ওদের।
নিশি শুভ্র ভাইকে বলল ,
” শুভ্র ভাই আমাদের শুভ্রতা দেখতে অনেক সুন্দরী। আপনি কেন শুভ্রতা কে পেত্নি বলেন।
” নিশি শুভ্রতাকে দেখতে পেত্নির মতো লাগে তার জন্যই পেত্নি বলি ।
এভাবে কথা বলতে বলতে বাসায় গিয়ে পৌঁছালাম। বাসায় গিয়ে দেখি মামনি রান্না ঘরে । মামনি কে গিয়ে পিছন থেকে ঝরিয়ে ধরে বললাম,
” কেমন আছো মামনি ।
” ভালো । তুই কেমন আছিস।
” আমি তো সব সময় ভালো থাকি। আমাদের আসতে বললে কেন ?
” আজ তুষার , রনি , মিম আর শুভ্রর একটা ফ্রেন্ড আসবে। ওরা প্লেন করেছিল কালকে নাকি ঘুরতে যাবে। তুই ও তো আমাকে বলেছিলি অনেক দিন ধরে কোথাও ঘুরতে যাস না। তাই ভাবলাম তুই, তৃষা , নিশি ওদের সাথে গিয়ে ঘুরে আয় ।
তুষার হচ্ছে শুভ্র ভাইয়ের মামাতো ভাই। রনি হচ্ছে তুষার ভাইয়ার ছোট ভাই আর মিম তুষার ভাইয়ার ছোট বোন ।আপুর সাথে তুষার ভাইয়ার পারিবারিক ভাবেই বিয়ে ঠিক হয়েছে। তুষার ভাইয়া তার বাবার কম্পানিতে চাকরি করেন।
বিকেলে সবাই একসাথে বসে টিভি দেখছি আর চিপস খাচ্ছি। তখন হঠাৎ করে কলিং বেল বেজে উঠল। আমি নিশি কে বললাম,
” নিশি দেখ তো কে এসেছে ।
শুভ্রতার কথায় উঠে গেলাম দরজার কাছে। দরজা খুলে দেখি একটা ছেলে দাঁড়িয়ে আছে। কাঁধে একটা ব্যাগ । ছেলেটা দেখতে শুভ্র ভাইয়ের মতো এতো ফর্সা না হলে ও সুন্দর। চেহারাটা অনেক মায়াবী। আমি ঠিক ছেলেটাকে চিনতে পারছি না। আজকে তো তুষার ভাইয়াদের আসার কথা । আমি তো তুষার ভাইয়াদের চিনি । তাহলে এটা কে ? আর হ্যাঁ আজকে শুভ্র ভাইয়ের একটা ফ্রেন্ডের আসার কথা ছিল। এটা কি তবে শুভ্র ভাইয়ের ফ্রেন্ড ? আমি যখন এই কথা গুলো ভাবছিলাম তখন ছেলেটি বলল ,
” এটা কি শুভ্রর বাসা ?
আমি আমার ভাবনায় বিভোর ছিলাম। তাই ছেলেটির কথা শুনতে পাইনি। ছেলেটি আমার চোখের সামনে হাত নাড়িয়ে আবার বলল,
” এই যে শুনছেন । এটা কি শুভ্রর বাসা ?
আমি থতমত খেয়ে বললাম,
” জী । আমাকে কিছু বলছেন ।
#চলবে#ভালোবাসা_তুই
#পর্বঃ৬
#লেখিকা_নিদ্রানী_নিদ্রা
[ কপি করা নিষেধ ]
ছেলেটি আমাকে বলল,
” আপনি কি কানে শুনেন না নাকি ?
” আপনি কে ?
” আমি শুভ্রর ফ্রেন্ড । এটা শুভ্রদের বাসা না ?
” জী এটা শুভ্র ভাইয়াদের বাসা । ভিতরে আসেন ।
ছেলেটি ভেতরে গেল । শুভ্র ভাইয়ের আম্মুর সাথে কুশল বিনিময় করলেন। ছেলেটির নাম নিশাত । চট্টগ্রামে উনাদের বাসা । শুভ্র ভাই এবার উনাকে সবার সাথে পরিচয় করিয়ে দিলেন।
” নিশাত এটা হলো আমার ফুফাতো বোন তৃষা । আমার ফুপ্পির ভদ্র শান্ত- শিষ্ঠ একটা মেয়ে। আর তৃষার সাথে যে মেয়েটি বসে আছে ও হলো শুভ্রতা । তৃষার ছোট বোন । তৃষা যতটা শান্ত- শিষ্ঠ শুভ্রতা ততটাই অভদ্র, বিচ্ছু একটা মেয়ে।
শুভ্র ভাইয়ের কথায় শুভ্রতা বলে উঠলো ,
” নিশাত ভাইয়া আপনি বলুন তো আমাকে দেখে কি মনে হয় আমি বিচ্ছু । মানছি আমি আপুর মতো এতো শান্ত না। তাই বলে আমাকে শুভ্র ভাই অভদ্র বলবে । আমি শুভ্র ভাইয়ের থেকে যথেষ্ট ভদ্র, ভালো । উনি একমাত্র ব্যাক্তি যে আমাকে সব সময় এভাবে অপমান করে । আমার মতো একটা কিউট মেয়েকে এভাবে অপমান করা কি ঠিক বলুন ?
শুভ্রতার কথায় শুভ্র ভাই বললেন,
” এই তুই যেমন তোকে তো তেমনি বলবো । আর কি বললি তুই ? তুই কিউট একটা মেয়ে ? পেত্নী বলে পেত্নী নাকি কিউট ।
শুভ্র ভাইয়ের কথায় শুভ্রতা কিছু বলতে যাবে তার আগেই নিশাত ভাইয়া বলে উঠলো ,
” শুভ্র তুই শুভ্রতাকে পেত্নী কেন বলছিস । শুভ্রতাকে দেখতে মোটেও পেত্নীর মতো না । শুভ্রতাকে বিচ্ছু কেন বলছিস। আমার তো শুভ্রতাকে দেখে বিচ্ছু মনে হচ্ছে না ।
” নিশাত তুই আমার ফ্রেন্ড হয়ে শুভ্রতার পক্ষে কথা বলছিস ? এটা কিন্তু ঠিক না ।
শুভ্র ভাইয়ের কথায় শুভ্রতা বলে উঠলো ,
” আপনার ফ্রেন্ড হয়েছে বলে কি আপনার পক্ষে কথা বলা লাগবে নাকি ? যেই টা সত্যি সেইটাই তো বলবে । আপনার ফ্রেন্ড হয়েছে বলে কি মিথ্যা কথাটাকে সত্যি বলতে হবে ?
শুভ্র ভাইয়া কিছু বলার আগেই আমি বললাম ,
” ভাইয়া প্লিজ আপনি আর কিছু বলে আপনাদের বিখ্যাত ঝগড়া শুরু করবেন না । আপনাদের ঝগড়া শুরু হলে কখন শেষ হবে তার কোন ঠিক নেই।
” আমি মোটেও ওই ফাজিল টার সাথে ঝগড়া করি না। শুভ্রতাই ঝগড়া করে। যাই হোক , নিশাত এই যে কিউট মেয়ে টাকে দেখছিস এটা হলো নিশি শুভ্রতার চাচাতো বোন ।
নিশাত ভাইয়া আমার দিকে তাকিয়ে আনমনে বলে উঠলেন ,
” সত্যি একেবারে কিউটের ডিব্বা ।
” কি বললেন ?
” বলছিলাম এতো কিউট একটা মেয়ে কানে কম শুনে এটা কেমন দেখায় ?
” এই আপনি কি বলছেন কানে কম শুনি আমি ?
” আমার তো তাই মনে হয় ।
কিছু বলতে গিয়েও আর কিছু বললাম না । প্রথম দেখাতেই ঝগড়া কেমন লাগে বিষয়টা । তাই আর কিছু বললাম না । শুভ্র ভাই উনাকে নিয়ে উপরে চলে গেলেন।
*********************
সন্ধ্যায় তুষার ভাইয়া , রনি আর মিম চলে আসলো । মিম এসেই তৃষা আপুকে গিয়ে বলল ,
” কেমন আছো ভাবী ?
আপু ভাবী শব্দটা শুনে লজ্জা পেয়ে বলল,
” ভালো তুমি কেমন আছো ।
” ভালো ।
মিম এবার ইন্টার ফার্স্ট ইয়ারে পড়ে । খুব মিশুক একটা মেয়ে মিম । আমার আর নিশির দিকে তাকিয়ে বলল ,
” শুভ্রতা আপু , নিশি আপু কেমন আছো তোমরা ?
” আমারা তো ভালোই আছি । তুষার ভাইয়া, রনি ভাইয়া কোথায় ।
” ওরা তো শুভ্র ভাইয়ের রুমে গেছে । জানো শুভ্রতা আপু ভাইয়া সারাদিন ভাবীর সাথে ফোনে কথা বলে । এখন যখন বললাম ” চলো ভাইয়া আগে ভাবীর সাথে দেখা করে আসি ” ভাইয়া আমাকে কি বলল জানো ?
” কি বলছে ?
” ভাইয়া বলে ” তুই যা তৃষার সাথে কথা বলে আয় । আমার এতো শখ নাই দেখা করার ।
” কি ? এতো বড় কথা আপুর সাথে দেখা করার শখ নাই। পরে তো ঠিকই লুকিয়ে লুকিয়ে গিয়ে দেখা করবে । আমরা ও দেখবো তুষার ভাইয়া কিভাবে দেখা করে । হুঁ ।
রাতে সবাই একসাথে বসে আছি। সিদ্ধান্ত নেওয়া হলো কালকে সবাই নিলাচর যাবে । তাই সবাই তার তার জিনিস পএ গুছিয়ে নিচ্ছে ।
#চলবে