ভালোবাসা তুই পর্ব -০৯+১০

#ভালোবাসা_তুই
#পর্বঃ৯
#লেখিকা_নিদ্রানী_নিদ্রা

[ কপি করা নিষেধ ]

নীলাচলের একটা অন্যতম জায়গা হলো রোয়াদো রং । আমার সবাই এখন এখানে আছি । তৃষা আপু আর তুষার ভাইয়া আমাদের থেকে একটু দূরে দাঁড়িয়ে নিজেদের মতো করে সময় কাটাচ্ছে । মিম পিক তুলছে । পিক তুলা মিমের ফ্যাশন । একটু বেশি পিক তুলতে ভালোবাসে। রনি ভাইয়া ফোনে কথা বলছে । নিশাত ভাইয়া আমার কাছে এসে বলল ,

” এই কিউটি এখানে একা দাঁড়িয়ে কি করছো । সরি তুমি করে বলার জন্য। তুমি আর শুভ্রতা তো সেইম ইয়ারের তাই তুমি করে বললাম। যদি প্রবলেম থাকে তাহলে আপনি করেই বলবো ।

আমি মুচকি হেসে বললাম ,

” আমার কোনো প্রবলেম নেই। আপনি আমাকে তুমি করেই বলতে পারেন ।

” সবাই তো যার যার মতো করে ঘুরছে তুমি একা কি করে ?

” আমি কি করবো । আপু আর ভাইয়া নিজেদের মতো সময় কাটাচ্ছে । মিম পিক তুলায় ব্যস্ত আর রনি ভাইয়া ফোনে কথা বলছে। তাই এখানে দাঁড়িয়ে আছি । শুভ্র ভাই আর শুভ্রতা থাকলে ভালো হতো ।

” আসলেই ওরা থাকলে ভালো হতো । ওদের ঝগড়া গুলো দেখতে ভালোই লাগে ।

” হুম। সারাক্ষণ শুধু দুজন ঝগড়া করতেই থাকে ।
আচ্ছা শুভ্র ভাইয়া তো আপনার বেস্ট ফ্রেন্ড । উনি কি সব সময় এমন ঝগড়া করে ।

” আরে না। শুভ্র কারো সাথেই এমন ভাবে ঝগড়া করে না । শুধু ওর প্রেয়সীর সাথেই এমন করে ।

আমি ভ্রু কুঁচকে বললাম ,

” প্রেয়সী মানে ?

” মানে শুভ্রতা ।

” শুভ্র ভাই কি শুভ্রতাকে ভালোবাসে ?

” হ্যাঁ ।

” কিহহহহহহ ?

আমি একটু জোরেই কথাটা বললাম। তাই সবাই আমার দিকে তাকিয়ে আছে । তখন নিশাত ভাইয়া বলে উঠলো ,

” আরে এভাবে চেঁচিয়ে উঠলে কেন ? সবাই কি ভাববে ? আমি কি এমন বললাম ?

” আমার তো বিশ্বাস হচ্ছে না শুভ্র ভাই শুভ্রতাকে ভালোবাসে । উনি তো সব সময়ই শুধু শুভ্রতার সাথে ঝগড়া লেগেই থাকে। ওদের দেখে মনে হয় দুজন দুজনকে একদম সহ্য করতে পারে না ।

” তুমি হয়তো খেয়াল করো নি । সবাই জানে শুভ্র যে শুভ্রতা কে ভালোবাসে ।

আমি একটু দুঃখী-দুঃখী মুখ করে বললাম ,

” দেখেছেন সবাই কতো বেইমান। আমাকে একবার কেউ জানানোর প্রয়োজন বোধ করেননি । আমার তো এই দুঃখে মরে যেতে ইচ্ছে করছে

নিশাত ভাইয়া হেসে বললেন ,

” শুভ্র কাউকে জানাতে বারন করেছে। তাই হয়তো কেউ তোমায় জানায় নি ।

” শুভ্রতা কি জানে ?

” না শুভ্রতাও জানে না । আচ্ছা এইসব বাদ দাও । চলো আমরা একটু পাহাড়ের দিকে যাই । ঘুরতে এসে এখানে দাঁড়িয়ে কি করবো ?

” হুম চলো ।

আমি আর নিশাত ভাইয়া পাহাড়ের দিকে এসেছি । হঠাৎ করে নিশাত ভাইয়া বলে উঠলো ,

” নিশি তোমার কাছে প্রকৃতি কেমন লাগে ?

” অসাধারণ !!

” প্রকৃতি দেখতে ভালোবাসো ?

” অনেক ভালোবাসি । প্রকৃতি আমার খুব ভালো লাগে । আমাকে এক কথায় প্রকৃতি প্রেমী বলতে পারেন । আপনার প্রকৃতি ভালো লাগে না ?

” আমার কাছেও অসম্ভব ভালো লাগে প্রকৃতি ।

” একটা কথা জিজ্ঞেস করি ?

” হুম করো ।

” আপনার গার্লফ্রেন্ড দেখতে কেমন ?

উনি আমার কথায় হেসে উঠলেন ! নিশাত ভাইয়ার হাসি অনেক সুন্দর আমি এক দৃষ্টিতে উনার হাসি দেখতে লাগলাম । আমি উনার দিকে তাকিয়ে আছি দেখে উনি বললেন ,

” আবার কোথায় হারিয়ে গেলে তুমি ?

” কিছু না ! আপনি আমার প্রশ্ন শুনে হাসলেন কেন ? হাসার মতো কি বললাম আমি ?

” হাসবো না ? আমার গার্লফ্রেন্ড থাকলে তো বলবো দেখতে কেমন ।

” আপনার গার্লফ্রেন্ড নেই ?

” না ।

” সত্যি নেই ?

” তোমাকে মিথ্যে কথা কেন বলবো ? তোমার বয়ফ্রেন্ড দেখতে কেমন ?

” আমার তেমন কেউ নেই ।

” বিশ্বাস হচ্ছে না । তোমার মতো সুন্দরী একটা মেয়ের বয়ফ্রেন্ড নেই ?

” বিশ্বাস না হওয়ায় কি আছে ? আমি তেমন কাউকে পাইনি ।

” তা কেমন ছেলে চাও তুমি ?

” দেখতে এতো ফর্সা না হলেও চলবে । কিন্তু মুখটা মায়াবী হতে হবে । আমার অনেক কেয়ার করবে ! আমি কিছু বলার আগেই সে বুঝে যাবে আর আমাকে অনেক ভালোবাসবে ।

” আচ্ছা দেখি তোমার জন্য এমন কাউকে পাই কি না ।

” আচ্ছা। এখন চলুন আপুদের কাছে যাই একটু পরেই সন্ধ্যা হয়ে যাবে ।

” হুম চলো ।

আমারা আপুদের কাছে চলে আসলাম। রনি ভাইয়ার ফোনে কথা বলা শেষ । মিম ও ফোন টিপছে । আমি আপুর কাছে গিয়ে বললাম ,

” এই যে আপু অনেক তো কথা বলেছো । এখন চলো রিসোর্টে ফিরে যাই ।

তখন তুষার ভাইয়া বলে উঠলো ,

” নিশি ঠিকই বলেছে । একটু পরে সন্ধ্যা হয়ে যাবে । আমরা এখন বরং রিসোর্টে ফিরে যাই ।

তারপর আমরা সবাই রিসোর্টের উদ্দেশ্য হাঁটা ধরলাম

#চলবে#ভালোবাসা_তুই
#পর্বঃ১০
#লেখিকা_নিদ্রানী_নিদ্রা

[ কপি করা নিষেধ ]

সন্ধ্যায় সবাই রিসোর্টে ফিরে এলো। এখন ৮ টা বাজে । আমাদের রিসোর্টের বাহিরে অনেক সুন্দর বসার জায়গা আছে। আমারা সবাই এখন রিসোর্টের বাহিরে বসে আছি। নিশাত ভাইয়া বলে উঠলো ,

” আমরা শুধু শুধু বসে না থেকে চলো একটা খেলা খেলি । এভাবে বসে থাকতে বোরিং লাগছে ।

আমি উৎসাহ নিয়ে বললাম ,

” কি খেলা ভাইয়া ?

” ট্রুথ-ডেয়ার খেললে কেমন হয় ?

মিম লাফিয়ে বলল ,

” ইয়াহু ! অনেক মজা হবে ।

আমরা সবাই চেয়ারে গোল হয়ে বসে আছি । আর আমাদের সামনে রয়েছে একটা টেবিল । রনি ভাইয়া গিয়ে একটা বোতল আনল । বোতল টা টেবিলের মাঝখানে রাখল । তখন নিশাত ভাইয়া বলল ,

” যে ট্রুথ নিবে তাকে শুধু একটা প্রশ্ন করা যাবে ।মে ডেয়ার নিবে তাকে কিন্তু ডেয়ার পূরন করতে হবে! পরে চিটিং করা যাবে না । সবাই রাজি ??

সবাই একসাথে বলে উঠলো ,

” হুম আমরা সবাই রাজি ।

” তাহলে চলো খেলা শুরু করা যাক ।

নিশাত ভাইয়া বোতল ঘুরালো । বোতলটা ঘুরতে ঘুরতে আপুর দিকে গিয়ে থামল । নিশাত ভাইয়া আপুকে বললো ,

” তৃষা তুমি কি নিবে ট্রুথ না ডেয়ার ?

” ট্রুথ ।

তখন রনি ভাইয়া বলল ,

” ভাবীকে ট্রুথ আমি দিবো ।

নিশাত ভাইয়া বলল ,

” আচ্ছা দাও ।

রনি ভাইয়া আপুকে জিঙ্গেস করল ,

” ভাবী ভাইয়ার কোন জিনিসটা তোমার কাছে বিরক্তিকর মনে হয় ?

” তোমার ভাইয়ার বারবার কফি খাওয়াটা আমার কাছে বিরক্তিকর লাগে । সারাদিনে না হলেও ১০ বার কফি খাবে । আমার তো মনে হয় বিয়ের পর আমাকে কফি খেয়েই থাকতে হবে ।

তখন তুষার ভাইয়া বলে উঠলো ,

” আমার কফি খেতে ভালোবাসি তাই কফি খাই । তার জন্য তুমি আমাকে সবার সামনে অপমান করবে ?

” আরে এখানে অপমানের কি দেখলে ? আমার কাছে তোমার এই অভ্যাসটা বিরক্ত লাগে তাই তো বললাম ।

তুষার ভাইয়া কিছু বলার আগেই নিশাত ভাইয়া বলে উঠলো ,

” গাইস এখন ঝগড়া করা বাদ দাও । খেলা কনটিনিউ করো ।

আবার বোতল ঘুরানো হলো। এবার বোতল গিয়ে মিমের দিকে থামল । নিশাত ভাইয়া মিমকে জিঙ্গেস করল ,

” ট্রুথ না ডেয়ার ?

” ডেয়ার ।

তখন তুষার ভাইয়া মিমকে বলল ,

” আমরা কালকে পর্যন্ত নিলাচলে আছি । সো তুই এখানে যত পিক তুলবি একটা পিকও তোর আইডিতে পোস্ট করতে পারবি না ।

” ভাইয়া তুমি এইসব কি বলছো ? আমি এই ডেয়ার মানি না । এটা বাদে অন্য কোনো ডেয়ার দাও ।

” খেলার রুলস তো মানতে হবে বনু ।

” ওকে আমারও সময় আসবে । তখন আমি ও দেখে নিবো তোমায় ।

আবার বোতল ঘুরানো হলো । এবার বোতল গিয়ে নিশির দিকে থামল । নিশাত ভাইয়া নিশিকে জিঙ্গেস করল,

” নিশি তুমি কি নিবে ?

” ট্রুথ ।

এবার আমি নিশিকে জিঙ্গেস করলাম ,

” তর ক্রাশের নাম কি বল ?

নিশি মাথা নিচু করে বলল ,

” নিশাত ।

আমি চোখ বড়বড় করে তাকিয়ে বললাম ,

” আমাদের নিশাত ভাইয়া ??

” খেলার রুলস শুধু একটা প্রশ্ন করা তাহলে তুই কেন আবার প্রশ্ন করছিস ?

আমি আর কিছু বললাম না । আবার বোতল ঘুরানো হলো । এবার বোতল গিয়ে তুষার ভাইয়া দিকে থামল । নিশাত ভাইয়া তুষার ভাইয়াকে জিঙ্গেস করল ,

” ট্রুথ না ডেয়ার ?

” ডেয়ার ।

মিম বলল ,

” ভাইয়াকে ডেয়ার আমি দিবো । ভাইয়ার ডেয়ার হলো তুমি এখান থেকে যাওয়ার পর ১০ দিন ফোনে ভাবীর সাথে কোনো যোগাযোগ রাখতে পারবে না ।

” এটা কেমন ডেয়ার মিম ? অন্য কিছু দে ।

” খেলার রুলস তো মানতে হবে ভাইয়য়য়য়া ।

আপুর আর ভাইয়ার মুখটা একদম কালো হয়ে গেল । আবার বোতল ঘুরানো হলো । এবার বোতল গিয়ে নিশাত ভাইয়ার দিকে থামল । আমি ভাইয়াকে জিঙ্গেস করলাম,

” আপনি কি নিবেন ভাইয়া ?

” ট্রুথ ।

আপু ভাইয়া কে জিজ্ঞেস করল ,

” আপনার ফেভারিট গান কি ?

” আড়াল গান টা আমার ফেভারিট গান ।

আবার বোতল ঘুরানো হলো । এবার বোতল গিয়ে রনি ভাইয়ার দিকে থামল । রনি ভাইয়া ডেয়ার নিলো । নিশি রনি ভাইয়াকে বলল ,

” ভাইয়া আমাদের থেকে একটু দূরে একটা ছেলে আর মেয়ে দাড়িয়ে আছে । আপনি মেয়েটিকে গিয়ে জিজ্ঞেস করবেন ছেলেটি মেয়েটার কি হয় তারপর মেয়েটিকে প্রোপজ করবেন ।

নিশির কথা মতো রনি ভাইয়া মেয়েটির দিকে এগিয়ে গেল । তারপর মেয়েটিকে জিজ্ঞেস করল ,

” উনি আপনার কে হয় ?

” আমার হাজব্যান্ড ।

” সুন্দরী এটা তুমি কি করলে ? তুমি আমাকে এভাবে ধোঁকা দিতে পারো না । আমি প্রতিদিন রাতে তোমায় নিয়ে স্বপ্ন দেখি । তুমি কি করে এই লোকটাকে বিয়ে করলে । আমাদের এক মাসের রিলেশনের কথা কিভাবে ভুলে গেলে । আমি তোমাকে অনেক ভালোবাসি প্লিজ তুমি আমার কাছে ফিরে এসো ।

রনি ভাইয়ের কথা শুনে ছেলেটি মেয়েটিকে জিজ্ঞেস করল ,

” মাইশা কি বলছে উনি ? তোমাদের এক মাসের রিলেশন মানে ? এই ছেলেটি কে ?

” আরে তুমি কি আমাকে অবিশ্বাস করছো । আমাদের বিয়ে হলো দুই মাস এর মধ্যে আমি কি কখনো তুমাকে লুকিয়ে কারো সাথে কথা বলেছি নাকি ?

” ওই মিয়া আপনি আমাদের মধ্যে ঝগড়া বাধাচ্ছেন কেন ?

” সরি ভাইয়া এটা আসলে ডেয়ার ছিলো । প্লিজ কিছু মনে করবেন না ।

রনি ভাইয়া আমাদের কাছে এলো আবার বোতল ঘুরানো হলো এবার বোতল আমার দিকে থামল । আমি ডেয়ার নিলাম। শুভ্র ভাই আমাকে বলল ,

” তুই তোর আইডিতে তর একটা পিক পোস্ট করে ক্যাপশনে দে ” শুভ্রের শুভ্রতা ”

এই লোকটার জন্য আমি কোথাও শান্তি পাই না । এটা ক্যাপশনে দিলে সবাই কি ভাববে ? ডেয়ার পূরন করার জন্য আমাকে একটা পিক পোস্ট করে ক্যাপশনে শুভ্রের শুভ্রতা দিতে হলো আর সাথে সাথে কমেন্ট আসা শুরু হলো । সবাই কে এখন কি বলবো আমি ?
আবার খেলা শুরু হলো । এবার বোতল গিয়ে শুভ্র ভাইয়ের দিকে থামল । নিশাত ভাইয়া জিজ্ঞেস করল ,

” ট্রুথ না ডেয়ার ?

” ট্রুথ ।

” তর প্রেয়সীর কোন জিনিসটা তোকে মুগ্ধ করে ?

শুভ্র ভাই আমার দিকে তাকিয়ে বলল ,

” তার মুখের হাসি। যা প্রতিনিয়ত আমাকে মুগ্ধ করে । তার হাসিতে আমি বারবার তার প্রতি আকৃষ্ট হই ।

আমরা খেলা শেষ করে রিসোর্টের ভিতরে গেলাম। রাত তখন ১১ টা ৫৫ । শুভ্র ভাই আমাকে ফোন দিয়ে বলল ,

” শুভ্রতা রুমের বাইরে আয় ।

” আমি বাহিরে কেন যাব । এখন ঘুমাবো আমি পারবো না বাহিরে যেতে ।

” যা বলছি তাই কর। আমি রেগে গেলে কিন্তু ভালো হবে না ।

শুভ্র ভাইয়ের রাগ ভয়ঙ্কর। তাই না চাইতেও রুমের বাইরে গেলাম ।

#চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here